প্রিয়নবীর সর্বশেষ ভাষণ - ইসলামী জীবনব্যবস্থার আন্তর্জাতিক মেনিফেষ্টো

http://mw2.google.com/mw-panoramio/photos/medium/40217734.jpg
রাসুলুল্লাহ সাঃ তার সর্বশেষ ভাষণ দুটো প্রদান করেন আরাফাত ও মিনায় । এ ভাষণ দুটো ছিলো রাসুল সাঃ এর সবচেয়ে বড় ইসলামী সমাবেশে ভাষণ ।


আন্তর্জাতিক মেনিফেষ্টো হিসেবে এদুটি ভাষণে রাসুল সাঃ যা বর্ণনা করেছেন, তা মানবীয় চিন্তা ও কল্পনার অতীত । এতে আল্লাহর একত্বের বিপ্লবী আকীদা ঘোষণা করা হয়েছে । আল্লাহর আনুগত্যকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলিক চালিকাশক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে । পরস্পরের জানমাল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে-হত্যাকান্ডের শাস্তি মৃত্যুদন্ড অপরিহার্য করা হয়েছে ।

সুদখোরির বিধ্বংসী রীতি উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিশোধের অব্যাহত ধারার অবসান করা হয়েছে । স্বামী-স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত করে পারিবারিক ব্যবস্থার ভিত্তি মজবুত করা হয়েছে ।

আল্লাহর একত্ব ও মানবজাতির আদি-পিতার একত্বের ভিত্তিতে মানবীয় ঐক্যের ধারনা দিয়ে সকল প্রকার ভৌগলিক ও বংশীয় ভেদাভেদকে নিশ্চিহ্ণ করা হয়েছে ।

যখনই এবং পৃথিবীর যে স্থানেই ইসলামী আন্দোলন চলবে এবং ইসলামী ব্যবস্থা চালু হবে , তার ভিত্তি এই মতাদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে । এ মেনিফেষ্টো ইসলামের মৌলিক মেনিফেষ্টো-মানবজাতির মুক্তির মহাসনদ । এ মেনিফেষ্টোর বিপরীত যেকোন জীবনব্যবস্থা অনৈসলামীক এবং অবশ্যই বিশ্বজাহানের একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আলমীনের নিকট অগ্রহনযোগ্য ।


প্রিয় নবীর এ সর্বশেষ ভাষণ অনন্তকাল ধরে অনাগত মুসলমানদের জন্য অর্পিত দায়িত্বস্বরুপ । রাসুল সাঃ এ ভাষণের প্রতিটি অংশ বলার পরেপরেই বলেছিলেন উদাত্তকণ্ঠে , আমি আল্লাহর বানী পৌছে দিয়েছি । একথাটা জানার পরে প্রত্যেক মুসলমানের সতর্ক হয়ে যাওয়া দরকার ।

যে উদ্দেশ্য সফল করার জন্য রাসুল সা এত কষ্ট - এত নির্যাতন সহ্য করেছেন-যে অপরিসীম ধৈর্য ও সহিষ্ণুতারকোন নজীর পৃথিবীতে নেই... প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সেই উদ্দেশ্য সফল করার কাজে এগিয়ে আসা ।

আরাফাতের ভাষণ

-সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্য । আমরা শুধু তারই প্রসংশা করি। তারই কাছেই সাহায্য চাই । .. ..

-আমি ঘোষণা করছি, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই । তিনি এক ও একক । তার কোন শরীক নেই । মুহাম্মদ সাঃ তার বান্দা ও রাসুল ।

-হে আল্লাহর বান্দারা , আমি তোমাদেরকে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি ও উৎসাহিত করছি ।

-আমি কল্যানময় কথা দ্বারা আমার বক্তব্য শুরু করছি ।

-হে জনতা , তোমরা আমার কথাগুলি মনোনিবেশ সহকারে শোন । আমি তোমাদেরকে বুঝিয়ে বলছি । কেননা এবছরের পরে আর তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে বলে মনে হয়না ।

-হে জনমন্ডলি, তোমাদের একের জীবন ও সম্পদ অপরের জন্য নিষিদ্ধ । তোমাদের প্রভুর কাছে পৌছে যাওয়াতক এ বিধান মেনে চলবে । তোমাদের এই মাস এই শহর এবং তোমাদের এই দিন যেমন পবিত্র ঠিক তেমনি ।

-জেনে রেখো , আমি তোমাদের কাছে কথা পৌছে দিয়েছি । হে আল্লাহ, তুমি স্বাক্ষী থেকো !

-যার হাতে কারো কোন আমানত রক্ষিত আছে সে যেন তা তার মালিকের নিকট পৌছে দেয় । 

-জাহেলিয়াত যুগের সুদগুলো বাতিল করা হলো । সর্বপ্রথম আমি আমার চাচা আব্বাসের সুদ রহিত করলাম ।

-জাহেলী যুগের সমস্ত খুনের বদলার দাবী রহিত করা হলো । সর্বপ্রথম আমি আমের বিন রবীয়ার খুনের দাবী রহিত করলাম। জাহেলিয়াত যুগের সমস্ত পদ-পদবী ও সম্মান বাতিল করা হলো । কেবল কাবা শরীফের তত্বাবধায়কের পদ ও হাজীদেরকে পানি সরবরাহের পদ বহাল থাকবে..

-ইচ্ছাকৃত হত্যাকান্ডের শাস্তি মৃত্যুদন্ড । অনিচ্ছাকৃত হত্যার বদলি ১০০ উট । যে এর বেশি দাবী করবে তা হবে জাহেলী রীতি ।

-হে জনমন্ডলী, ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর শয়তান আর এ আশা করেনা যে এই ভুখন্ডে তার আনুগত্য করা হবে । কিন্তু তোমরা যে গুনাহগুলোকে হালকা মনে করো, তাতে যদি শয়তানের আনুগত্য করো তাতেই সে খুশি ।

-নিশ্চয়ই আবর্তনের পথ ধরে মহাকাল আজ তার সেই প্রারম্ভিক বিন্দুতে প্রত্যাবর্তন করেছে , যেখানে সে আল্লাহ কর্তৃক পৃথিবী সৃষ্টির দিন ছিলো । .. .. .. ..

-জেনে রেখ আমি কথা পৌছে দিয়েছি, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো ।

-হে জনতা, তোমাদের নারীদেরকে তোমাদের ওপর কিছু অধিকার দেয়া হয়েছে । তোমাদেরও তাদের ওপর কিছু অধিকার প্রাপ্য রয়েছে । তোমরা পছন্দ করোনা এমন কোন ব্যক্তিকে তোমাদের অনুমতি ছাড়া বাড়িতে ঢুকতে দেয়া তোমাদের স্ত্রীদের পক্ষে অনুচিত। কোন নির্লজ্জ ও অশ্লীল কাজ করা উচিত নয়। যদি তারা তা করে তবে তোমাদেরকে আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন, তাদের সংশোধনের জন্য তাদের কাছ থেকে সাময়িক বিচ্ছিন্ন থাকতে পারো । এরপর তারা অনুগত হয়ে চললে তাদেরকে নিয়মিত ভরনপোষণ করানো তোমাদের দায়িত্ব । নিশ্চয়ই মহিলারা তোমাদের অধীন। তারা নিজেদের কল্যানের জন্য নিজেরা কিছু করতে পারছে না । তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে নিজেদের সাথী বানিয়েছো । কাজেই নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় তাদেরকে শিক্ষাদীক্ষা দান করো ।

-হে জনতা, মুসলমানরা পরস্পরের ভাই ভাই। একভাইয়ের সম্মতি ছাড়া তার সম্পদ অন্য ভাই কর্তৃক গ্রহন করা বৈধ নয়।

-সাবধান , আমি কথা পৌছে দিয়েছি । হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থেকো ।

-আমার পরে এই ইসলামী ভার্তৃত্ব পরিত্যাগ করে তোমরা কাফের সুলভ জীবন গ্রহন করে একে অপরের গলা কাটতে শুরু করোনা ।

--আমি তোমাদের নিকট এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা মেনে চললে তোমরা বিপথগামী হবেনা । তা হলো আল্লাহর কিতাব ।

-সাবধান আমি কথা পৌছে দিয়েছি। হে আল্লাহ, তুমিও সাক্ষী থেকো ।

-তোমাদের কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে । বল তোমরা কি বলবে ? জনতা সমস্বরে বলে উঠল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি বানী পৌছে দিয়েছেন । এবং উম্মতের শুভকামনায় যা কিছু করা উচিত ছিলো তা করেছেন । সত্যের ওপর থেকে সমস্ত পর্দা তুলে দিয়েছেন এবং আল্লহর আমানতকে আমাদের নিকট পৌছে দিয়েছেন ।

-হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো ।

-যারা এখানে উপস্থিত আছে, তারা যেন এই কথাগুলো অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌছে দেয় । হয়তো কিছু অনুপস্থিত লোক কিছু উপস্থিত লোকদের চেয়ে একথিগুলি বেশি ভালোভাবে মনে রাখবে ।

-হে জনতা, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর জন্য স্থায়ী অংশ নিদৃষ্ট করে দিয়েছেন । । এক তৃতীয়াংশের বেশি সম্পদ ওসিয়ত করা বৈধ নয় ।

মিনার ভাষণ


-হে জনমন্ডলী, আমার পর আর কোন নতুন নবী আসবে না। তোমাদের পরও কোন নতুন উম্মত জন্ম নেবেনা । সুতরাং মনোযোগ দিয়ে শোন , এবং আপন প্রতিপালকের দাসত্ব করো । পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো , রমযানে রোজা রাখো, সম্পদের যাকাত সাগ্রহে দিতে থাকো । হজ্জ আদায় করো এবং আপন নেতা ও দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করো । যাতে তোমরা আল্লাহর জান্নাতে যেতে পারো




সংযোজন

অধ্যায় ১৯ : বিদায় হজ্জ্ব ও ভাষণ (আদর্শ মানব)
অধ্যায় ১৫ : বিদায় হজ্জ্ব ও ভাষণ (বিপ্লবী জীবন)

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম