১. সেই দিন এই মাঠ + তোমরা যেখানে সাধ + বাংলার মুখ আমি

০১.
সেই দিন এই মাঠ

সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি-
এই নদী নক্ষত্রের তলে
সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন-
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
আমি চ’লে যাব ব’লে
চালতাফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে
নরম গন্ধের ঢেউয়ে ?
লক্ষ্ণীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্ণীটির তরে ?
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!

চারিদিকে শান্ত বাতি- ভিজে গন্ধ- মৃদু কলরব;
খেয়ানৌকাগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে;
পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে র’বে চিরকাল ;-
এশিরিয়া ধুলো আজ – বেবিলন ছাই হয়ে আছে।

০২.

তোমরা যেখানে সাধ

তোমরা যেখানে সাধ চ’লে যাও- আমি এই বাংলার পারে
র’য়ে যাব ; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;
দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে
ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে
নেচে চলে- একবার- দুইবার- তারপর হঠাৎ তাহারে
বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে নিয়ে যায় হৃদয়ের পাশে;
দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ- শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে
শঙ্খের মতো কাঁদে : সন্ধ্যায় দাঁড়াল সে পুকুরের ধারে,

খইরঙা হাঁসটিরে নিয়ে যাবে যেন কোন কাহিনীর দেশে-
‘পরণ- কথা’র গন্ধ লেগে আছে যেন তার নরম শরীরে,
কলমীদামের থেকে জন্মেছে সে যেন এই পুকুরের নীড়ে-
নীরবে পা ধোয় জলে একবার- তারপর দূরে নিরুদ্দেশে
চ’লে যায় কুয়াশায়,- তবু জানি কোনোদিন পৃথিবীর ভিড়ে
হারাব না তারে আমি- সে যে আছে আমার এ বাংলার তীরে।

০৩.
বাংলার মুখ আমি

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে ব’সে আছে
ভোরের দয়েলপাখি- চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম- বট- কাঁঠালের- হিজলের অশথের ক’রে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে!
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল- বট- তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ

দেখেছিল : বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে-
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জ্যোস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায়-
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বথ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিল- একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম