১।বাংলাদেশে ভারত তার ইচ্ছেমত,তার পছন্দসই লোক দিয়ে পছন্দসই নেতৃত্ব পাঠিয়ে একটি সামরিক বাহিনী গঠন করবে।যার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আধাসামরিক বলে পরিচিত হবে,কিন্তু এদেরকে গুরুত্বের দিক থেকে ও সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের মূল সামরিক বাহিনী থেকে বড় ও তাৎপর্য পূর্ণ রাখা হবে। (ধারনা করা হচ্ছে এই বাহিনীই হচ্ছে রক্ষী বাহিনী।ভারতীয় সৈন্যের পোশাক,ভারতীয় সেনানী মন্ডলীর নেতৃত্ব ও ভারতের অভিরুচি অনুযায়ী বিশেষ শ্রেনীর লোককে শতকরা ৮০ জন এবং বিশেষ বাদ এর সমর্থক ২০জন করে নিয়ে এই বাহিনী গড়ে তোলা হবে।অস্ত্র,গাড়ী,পোশাক,সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে এই বাহিনী মূল বাহিনীকে ছাড়িয়ে যাবে।এ বাহিনীটি ব্যবহার করা হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। ভারত বিরুধী কোন সরকার ঢাকায় ক্ষমতায় বসলে ও এ বাহিনী দিয়ে তাকে উৎখাত করা হবে।বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত বিরুধী রাজনীতির সমর্থকদের এই বাহিনি দিয়ে ধমন করা হবে। এই বাহিনীর মধ্যে ভারত প্রেমীক বিশেষ শ্রেনীর লোকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় কোনদিন এদেরকে ভারতের বিরুদ্দে লাগানো যাবেনা।এদেশের জনগণ কোন দিন বিপ্লবে অবতীর্ণ হলে, রক্ষীবাহিনীর পোশাক গুনে ভারতীয় সৈন্যরা লাখে লাখে রক্ষীবাহিনী সেজে এদেশের অভ্যন্তরে জনগণকে দমন করতে পারবে।)
২।বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে যা সামরিক সাহায্য নিয়েছে তা পরিশোধ করতে হবে বিভিন্নভাবে
(ক) ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের কাছ থেকে বাংলাদেশ অস্ত্র কিনতে পারবেনা।মাঝে মাঝে ঘোষণা করতে হবে ভারত থেকে এত কোটি টাকার অস্ত্র কেনা হল।এর দাম ভারত ঠিক করে দিবে।সরবরাহ দেয়া হবে অর্ধেক অস্ত্র।সরবরাহকৃত অস্ত্রও ভারত ইচ্ছামত নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারবে।
(অর্থাৎ একই অস্ত্র বারবার দেখিয়ে ১৯৭১ এর পাওনা এবং ভারতের সম্পূর্ণ যুদ্দ খরচ আদায় করা হবে।অভ্যন্তরীন গোলযোগ দমনের জন্য সাধারন অস্ত্র ছাড়া কোন ভারী অস্ত্র সাজোয়া গাড়ী না ট্যংক বাংলাদেশকে দেওয়া হবেনা )
৩। বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্য ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।ভরতের অনুমতি ছাড়া কোন পন্য বিদেশে রফতানী করা যাবেনা।কোন পন্য কত দরে বাইরে রফতানী করতে হবে ভারত সেই দর বেঁধে দেবে। এই সব পন্য ভারত নিজেই কিনতে চাইলে বাংলাদেশ আর কারো সাথে সে পন্য বিক্রির কথা আলোচনা করতে পারবেনা।বাংলাদেশের আমদানী তালিকা ভারতের কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।( বাংলাদেশে বিদেশী পন্য আমদানীর ব্যপারে ভারত উদার থাকবে।যে সব পন্য ভারতকেও আমদানী করতে হয়-সেগুলী আমদানী করানো হবে বাংলাদেশকে দিয়ে।বাংলাদেশ তার বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল ভেঙ্গে বিদেশ থেকে যা সব সামগ্রী আমদানী করবে সেগুলী ভারত নিজে আমদানী করবে না। চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশ থেকে সেই মালগুলি ভারতীয় টাকায় যোগার করবে।বিলাতের সেভেন-ও-ক্লক ব্লেডের বেলায় এটা ঘটেছে।ভারত সেভেন-ও-ক্লক আমদানী করেনী।বাংলাদেশকে দিয়ে বিপুল পরিমানে অর্থাৎ দেড় কোটি ব্লেড আমদানী করিয়েছে।এখন ভারত বিনা খরচায় সেই ব্লেড পেয়ে গেছে)
৪।বাংলাদেশের বাৎসরিক ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলি ভারতকে দিয়ে অনুমোধন করিয়ে নিতে হবে।(বাংলাদেশ যেন স্বাবলম্বী হতে না পারে ভারত সেভাবে পরিকল্পনাগুলী কেটে ছিরে ঠিক করবে।আইয়ুবী আমলে বাংলাদেশে পরিকল্পনার অর্থ ব্যয় হয়েছে উৎপাদনশীল খাতে।ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নকে অনউৎপাদনশীল রেখে দিতে চায়। ইতিমধ্যে সরকার কর্তৃক ঘোষিত বাৎসরিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও বাজেটে একই অবস্তা দেখা গেছে।আগামী মহা পরিকল্পনা এখন ভারতের কাছে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তাতেও অনুতপাদনশীল খাত প্রাধান্য পাবে)
৫।বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অনুবর্তী রাখতে হবে।অভ্যন্তরীন রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারতের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে
৬। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চুক্তিগুলো বাংলাদেশ একতরফাভাবে অস্বীকার করতে পারবেনা।তবে ভারত এ চুক্তিগুলোর কার্যকারিতা অস্বীকার না করলে বৎসর বৎসরান্তে এ চুক্তিমালা বলবত থাকবে।
৭।ডিসেম্বর যুদ্দের অব্যবহিত পূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তিটিতে বলা হয়েছিল যে, ভারতীয় সৈন্যরা যে কোন সংখ্যায়,যে কোন সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে।এবং বাধা প্রদানকারী কোন মহলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবে। ভারতীয় বাহিনীর এ ধরনের অভিযানের প্রতি বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃতি দিচ্ছে।ভারত চুক্তিটি নাকচ না করলে বৎসর বৎসরান্তে এ চুক্তি বলবত থাকবে।
মুক্তিযুদ্দের ৯মাসে ভারত মোটামুটি এ ধরনের চুক্তিগুলি সম্পাদন করে।এ চুক্তিতে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন তাজুদ্দিন আহম্মদরা। বাংলাদেশকে বেকায়দা অবস্তায় পেয়ে ঠক ও শঠতাপুরন চুক্তিতে বাঁধা হয়েছিল।
সংগ্রহ -কে এম আমিনুল হকের কলাম থেকে
0 comments: