কামারুজ্জামান সাহেবকে যেমন দেখেছি - নিয়ামত মিয়া

কামারুজ্জামান সাহেবের সাথে আমার পরিচয় খুব বেশী দিনে হলেও ওত ঘনিষ্টভাবে মেশার সুযোগ আমার হয়নি নানা কারনে! শেরপুরের সন্তান হবার কারনে এই মহীরুহের যে সব গুণের কথা শুনেছি মানুষ হিসেবে তাঁর উচ্চতার কারনে তাকে শুধু সমীহই করে চলতে হয়েছে!
গরীবের সন্তান হিসেবে তাকে নাকি কৃষি পরিবারকে সাংসারিক কাজে সাহায্য করতে হয়েছে! গরু ছাগল চড়াতে গিয়ে নাকি সপ্তাহের পুরো পত্রিকাগুলো পড়ে নিতেন! ভাল ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন আমাদের অঞ্চলের ছাত্রদের আদর্শ! আমি তখন এইট নাইনে পড়ি, আব্বা বলতেন, মাঝে মধ্যে ডাঃ মমিনের দোকানে গিয়ে পত্রিকা পড়ে আসতে পারিস না! পত্রিকা পড়লে নাকি জ্ঞান বাড়ে! আমি ডাক্তার সাহেবের দোকানে গিয়ে পত্রিকা পড়তাম বাবার নির্দেশ পালন করতে! তখন দৈনিক পত্রিকা আসতো তিন দিন পরে ডাকে! কে জানতো এ পত্রিকা পড়াটাই কামারুজ্জামানের ভাগ্যের সাথে আমার ভাগ্যকে জুড়ে দেবে!



কামারুজ্জামান সাহেবকে আমি প্রথম দেখি শ্রীবরদী কলেজে! এক ইফতার মাহফিলে! অপ্রতাশিতভাবেই কলেজ ছাত্র হিসেবে দায়িত্ব পড়ে ওই সভা পরিচালনার! উদ্যোক্তাদের কাছে তার পরিচয় নিয়ে তাঁকে অনেকগুলো বিশেষনে পরিচয় করিয়ে দিলে, উনি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমার ছোট ভাই যে পরিচয় আমার দিয়েছে সেসব আমার পরিচয় নয়, আমার পরিচয় আমি আপনাদের ছেলে!

এরপর বহু দিন চলে যায়! বহু প্রত্যাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। বাবা আমার কোথা থেকে শুনে এসেছে, ওই সাবজেক্ট নাকি সবাই পড়ে! বাবার মনঃকষ্ট দেখে আমাকে অজ্ঞাত এক সাবজেক্ট চয়েজ করতে হয়! কয়েক মাস ক্লাস করার পর জানতে পারি এটা পড়লে নাকি সাংবাদিক হওয়া যায়! আমার বন্ধু জিয়া আমাকে সাথে করে সংগ্রামে নিয়ে যায়, পরিচয় হয় বাবর ভাইয়ের সাথে! তিনিই আমাকে পরিচয় করি‌য়ে দেন কামারুজ্জামান ভাইয়ের সাথে! একবার দেখলে কাউকে উনি ভুলেন না! এটাই নাকি তাঁর বৈশিষ্ঠ্য! সংগ্রামে আমার চাকরি হলো! আমি পেশা পেলাম: সম্বাদিক! লোকে বলত: কই মিয়া ক্যামারা কই?

মানুষকে গভীর সরলতায় আপন করার কী মোহনী‌য় ক্ষমতা তাঁর! কানের জেনা সংক্রান্ত শাহদাত ভাইয়ের শক্ত ওয়াজের বদলে কত সহজ তাঁর সমাধান! প্রশ্ন: পছন্দের? উত্তর: জ্বি! বিয়ে করলে হয় না! হয়, কিন্ত টাকা যে নাই! ব্যবস্থা হবে! কল্যান তহবিল থেকে টাকা নেবে! বাবা রাজি না। ওটা আমার ওপর ছাড়! তারপর বিয়ে হলো আমার! উকিল বাপ হলেন তিনি আমার বউয়ের! আমার সংসার হলো, মেয়ে হল! কয়তন পড়া মেয়েটাকে দেখে রেখে পুত্রবধু করে তুলে নিলেন অতুল মমতায়! শুধু কি আমি, কত অক্ষমকে তিনি বিয়ে দিয়েছেন, বাসর সাঁজিয়ে দিয়েছেন অনেককে! হাসপাতালে কত রোগিকে যে তিনি দেখেছেন, তার কোন ইয়ত্তা নাই!

রাজনীতি নি‌য়ে কথা হত মাঝে মধ্যে! বড় উদার মনের মানুষ! আওয়ামী লীগকে কটাক্ষ হয় বলে তিনি বলতেন “একটি দল”। শেখ মুজিবকে “বংগবন্ধু” বলতে তার কোন আপত্তি ছিলনা কোন কালেই! যে অবিধাটা শহীদ কাদের মোল্লা সব সময়ই বলতেন! ঢাকায় একবার দেখা হলে বললেন চল ওয়াজ শুনে আসি! বললাম আপনি ওয়াজ শুনতে যাবেন! রহস্যটা বললেন পরে! উনার গাড়ি দেখেই বক্তারা ডেকে নিলেন মন্চে! ওয়াজ শেষে, জনতার ‌উপস্থিতি দেখে অনেক বক্তাই অযাচিত ভারতকে আওয়ামী লীগকে গালিগালাজ করেন! আমি থাকলে মাহফিলে সংযত কথা হ‌য়! কি চমৎকার তাঁর নৈপূন্য!

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে কূটনীতিকদের সাথে মতবিনিময় জামায়াতকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন একটা উদারনৈতিক গনতান্ত্রিক দল হিসেবে, সরকারী সকল মদদ সত্বেও শাহরিয়ার কবীররা শত চেষ্ঠা করেও সেই ইমেজকে নষ্ট করতে পারেনি! এজনে্য জামায়াতের এক শ্রেনীর কোপমুন্ডুকরা তাকে ভারত আমেরিকার দালাল বলতেও ছাড়েনি! সে অবশ্য অন্য আলোচনা!

৭১ সালের পরে জেল খেটেছেন তিনি! তাকে ছেড়ে দিতে সুপারিশ করে শেখ কামাল নাকি বলেছিলেন: ওকে ছেড়ে দে, ওর চোঁখগুলো দেখ, অনেক বড় বড়, ও অনেক বড় নেতা হবে! সতিই কামারুজ্জামান অনেক বড় নেতা হয়েছেন! তার চেয়েও অনেক বড় হয়েছেন রাজনীতির শিষ্ঠাচারের শিক্ষক হিসিবে! আমি মাঝে মধ্যেই বলতাম: আপনার রাজনীতি করা উচিত ইউরোপে, বাংলাদেশে নয়! অহংকার ভরে বলতেন, দেখবা, আমদের দেশটাও ইউরোপের মত হবে! মালয়েশিয়ার মত সুন্দর হবে! ৫০ টি বছর বড়জোর লাগবে!

ইট পাথরে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার মত হলেও, আপনার মত সোনার মানুষ পাব কি আমরা, বিশেষ করে আমরা হতভাগা শেরপুরবাসীরা! আপনার মত সুন্দর মনের সোনার মানুষ, আর শহীদ কাদের মোল্লার মত সহজ সরল ক্ষণজন্মা নেতা সহজে জন্মায় না! প্রাণভরে দোওয়ার অর্ঘ ছাড়া আর দেবার আমদের যে কিছুই নাই, হে বীরেরা! আল্লাহ আপনাদের মর্যাদা শুধু বৃদ্ধিই করুন!

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম