বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানকে দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ওয়াশিংটনে প্রেরিত তারবার্তায় মন্তব্য করেন, খুব সম্ভবত বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যর্থতার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক সেনা কর্মকর্তা যে আপত্তি তুলেছিলেন তারই ফলে ফারুক খানকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফারুক খান একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। সেনানিবাসগুলোতে সে কারণেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে। মরিয়ার্টি আরও মন্তব্য করেন, ফারুক খানের আরেকটি পরিচয় তিনি প্রধানমন্ত্রীর এলাকা গোপালগঞ্জের একটি আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের একজন।
বিদ্রোহের সময় ‘ব্যক্তিগত সফরে’ যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ ওরফে সোহেল তাজ। সরকারের ও দেশের জন্য এমন বিপর্যয়কর একটি পরিস্থিতিতেও সেই ব্যক্তিগত সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে না আসায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সোহেল তাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ছিলেন। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তারবার্তায় তা জানা গেছে।
দেশে ফেরার পর সে সময়ের মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টিকে দেরিতে দেশে ফেরার ব্যাপারে সোহেল তাজ বলেন, একটি পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করতে পারেননি। তাঁর এক আত্মীয়ের হার্টের অপারেশন ছিল। তা ছাড়া নিজের চিকিৎসার কারণেও তাজ দেশে ফিরতে পারেননি বলে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান। সেই বৈঠকে সোহেল তাজকে কিছুটা অসুস্থ দেখাচ্ছিল বলেও ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় মরিয়ার্টি জানান।
মরিয়ার্টি তাঁর তারবার্তায় সেই বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের প্রসঙ্গও এনেছেন। তিনি ওয়াশিংটনকে জানান, বৈঠকের সময় সোহেল তাজ ও সাহারা খাতুন দুজনই উপস্থিত ছিলেন। বেশির ভাগ কথাই বলছিলেন সোহেল তাজ। তবে মরিয়ার্টি লক্ষ করেন, তাজের প্রায় সব কথাতেই যেন ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধিতা করছিলেন সাহারা।
বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানায় ঢুকেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি এক বৈঠকে তাঁর কাছে সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। সেই ব্যাপারটিও উঠে এসেছে উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া গোপন তারবার্তায়। সাহারা খাতুন বলেন, তিনি পিলখানায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত প্রায় সাত-আট শ বিদ্রোহকারীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। বারবার নির্দেশ দেওয়ার পর প্রায় শ খানেক বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ান তাঁর কাছে এসে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন। সাহারা খাতুন মরিয়ার্টিকে বর্ণনা দেন কীভাবে তিনি পিলখানার ভেতর থেকে সেনা কর্মকর্তাদের আটকে পড়া অসহায় পরিবারগুলোকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। সাহারা খাতুন বলেন, তিনি একজন বন্দী সেনা কর্মকর্তাকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসেন। বিদ্রোহীরা সেই সেনা কর্মকর্তাকে তাঁর হাতে তুলে দিতে চাচ্ছিল না। তাঁরা বলেছিলেন, এই সেনা কর্মকর্তা তাঁদের ওপর অতীতে অনেক অত্যাচার চালিয়েছেন। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিদ্রোহীদের ধমক দিয়ে বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন তার বিচার আমি করব, তোমরা নয়, তাঁকে ছেড়ে দাও।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিনি পিলখানার ভেতর থেকে যে পরিবারগুলোকে উদ্ধার করেছিলেন তাদের মধ্যে পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদের মেয়েও ছিলেন।Source
0 comments: