দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী ডন ক্যাম্প ২০০৮ সালে ঢাকা সফরকালে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের কাছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সদস্যদের নামের তালিকা চান। জবাবে জেনারেল মইন বলেন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে ‘সন্তোষজনক’ পারদর্শিতা দেখিয়েছে র্যাব। পূর্ববর্তী বছর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হ্রাস পাওয়া, ক্রসফায়ারে মৃত্যু বন্ধ হওয়া ও সন্ত্রাসবাদী ছয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়গুলোর ওপর জোর দেন মইন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ব্যাপারে মইন বলেন, অতীতের বিভিন্ন ঘটনার ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করতে পারবেন না। এ ছাড়া র্যাবের অন্যায় কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তদন্ত করার এখতিয়ার সেনাবাহিনীর নেই।
মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস সম্প্রতি এ তারবার্তা প্রকাশ করেছে।
তারবার্তায় বলা হয়, ২০০৮ সালের ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে ঢাকা যান ডন ক্যাম্প। সফরকালে তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান টেকসই সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল দায়িত্ব হিসেবে পুনরায় উল্লেখ করেন। ঢাকা সফরের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদসহ অন্যান্য উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডন ক্যাম্প। এক মধ্যাহ্নভোজে তিনি বাণিজ্য, দ্বিপক্ষীয় সহায়তা, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন। মধ্যাহ্নভোজ চলাকালে স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুল করিম একটি ফোন ধরেন। ওই ফোনে তাঁকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্যোগে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশের অধিকারকর্মী ও এনজিও কর্মকর্তা মেহেদী হাসান।
২০০৮ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দেন ক্যাম্প। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বিগত বছরগুলোতে মানবাধিকার সমস্যার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্রসচিবকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার-বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরির সময় এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পুলিশ ও র্যাবের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি স্বাগত জানান ক্যাম্প এবং অতীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার-সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। এ ছাড়া তিনি শেখ হাসিনার বিচার-প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষক পাঠানোর কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন। এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে এক বৈঠকেও তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনে র্যাবের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মার্কিন মন্ত্রী ক্যাম্প সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে গিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা স্বীকার করেন ক্যাম্প। মইন উ আহমেদ মার্কিন মন্ত্রীকে বলেন, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে মইন উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোতে সংস্কারের ঘাটতির ফলে এ কাজে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, দেশের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, তাঁদের শক্তিশালী ভাবমূর্তি রয়েছে এবং তাঁদের ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো আসলে তেমন কিছু করতে পারবে না। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে এ ধরনের সচেতনতা তৈরি হয়নি। তাই সংস্কার সম্ভব হচ্ছে না। সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়ায় সংস্কার হচ্ছে না বলে রাজনৈতিক দলগুলো যে অভিযোগ করেছে, মইন সেটিকে ‘খোঁড়া যুক্তি’ বলে মন্তব্য করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ক্যাম্প বলেন, বাংলাদেশে যদি সময়মতো নির্বাচন না হয়, তাহলে সবাই হতাশ হবে।Source
0 comments: