তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল সরকারি দলের কয়েকজন নেতার। চারদলীয় জোট সরকারের একজন মন্ত্রী মার্কিন দূতাবাসকে এ কথা জানান বলে উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।
র্যাব প্রতিষ্ঠার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এ বাহিনীর মূল্যায়ন করতে গিয়ে মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তায় বিভিন্ন তথ্য ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
২০০৫ সালের মার্চ মাসের ওই তারবার্তায় বলা হয়, সম্প্রতি একজন মন্ত্রী মার্কিন দূতাবাসকে জানান, তাঁর দলের কয়েকজন নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে র্যাব ভেঙে দিতে চান। কারণ, তাঁদের ভয়, দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর তখন চড়াও হবে র্যাব। বার্তায় মন্তব্য করা হয়, র্যাব ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ এবং ওই মন্ত্রীও তা স্বীকার করেছেন।
তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ২০০৪ সালের জুন মাস থেকে কার্যক্রম শুরু করে র্যাব। এতে র্যাবে নিযুক্ত সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘সহিংস অপরাধ ও পুলিশের দুর্নীতি থেকে দরিদ্র জনগণকে রক্ষা’ করাই র্যাবের লক্ষ্য। প্রথমদিকে লক্ষণীয় সাফল্যের জন্য জনগণ ও গণমাধ্যমের বেশ সমর্থন পায় আধাসামরিক এই বাহিনী। তবে বহু ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনা ও দুর্নীতির অভিযোগের কারণে এই বাহিনী বিতর্কিত হয়ে ওঠে।
মার্কিন তারবার্তায় বলা হয়, কয়েক মাস ধরে মূলত ইংরেজি দৈনিকগুলো র্যাবের কথিত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর র্যাবের সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রতিমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর বিভিন্ন অপরাধের জন্য র্যাবের অন্তত ১০৯ জন সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়। তাঁদের অনেকে চাকরিচ্যুত হন। কাউকে কাউকে কারাগারে যেতে হয়। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ক্রসফায়ারে হত্যার জন্য কারও শাস্তি হয়নি। তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়, সরকার প্রায় খোলাখুলিভাবে র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে বলে তাদের মধ্যে বিচারের আওতাবহির্ভূত থাকার বোধ প্রসারিত হয়েছে। কাজেই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এ পর্যন্ত বেশ কিছু বড় ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে।
তারবার্তায় আরও বলা হয়, র্যাবের ক্রসফায়ারে কুখ্যাত অপরাধীরা নিহত হওয়ায় তা জনপ্রিয় হয়েছে—এ যুক্তিতে এর পক্ষে কথা বলে সরকার। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের অনেকেই মার্কিন দূতাবাসকে বলেন, র্যাবের সদস্যরা আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালান। যারা নিহত হচ্ছে, তারা অপরাধী। তাদের পরিণতি এটাই হওয়া উচিত।
এই পরিবেশে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো র্যাবের সমালোচনায় অনাগ্রহী বলে মার্কিন তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র ব্যতিক্রম। ২০০৫ সালের জুন মাসে সংগঠনটি র্যাবকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করে। এতে র্যাব ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাস’ করছে বলে উল্লেখ করা হয়।
মার্কিন তারবার্তায় বলা হয়, বিএনপি সরকার দৃশ্যত র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মোটের ওপর ইচ্ছামতো কমাতে বা বাড়াতে পারে। এ বক্তব্যের পক্ষে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়ার পর ২০০৫ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে ক্রসফায়ারের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে আসে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ও তা চলাকালে ক্রসফায়ারের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে কম ছিল। Source
0 comments: