উইকিলিকস ► রাবি শিবিরের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের গোপন বৈঠক

২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি মার্কিন দূতাবাসের একটি দল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ে ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে। এসংক্রান্ত একটি একইবছর ৫ মার্চ ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়।

তারবার্তায় বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাবশালী ইসলামী ছাত্র সংগঠন শিবিরের ব্যাপক কার্যক্রম রয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ক্যাম্পাসে শিবিরের ভয়ে কথাও বলতে চায় না। তাদের মতে, শিবির নেতাকর্মীরা ছাত্রত্ব শেষে বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতাসহ নানা পেশায় ঢোকেন। ক্যাম্পাসে তারা ক্ষমতার দাপটই দেখায় না, জামায়াতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখে চলে।

ঢাকার মার্কিন দূতাবাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ওই বৈঠক সম্পর্কে তারবার্তায় বলা হয়, শিবিরের মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক ও অহিংস উপায়ে জাতীয় জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। তবে তাদের দাবির ব্যাপারে অন্যদের সন্দেহ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের উচিৎ শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া। কারণ বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব ধরে রেখেছে।

শিবিরকে ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলোর নেতাকর্মীর একদমই পছন্দ করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরকে কখনোই সংগঠিত হতে দেয়নি এসব দল। যদিও শিবির দেশের অনেক ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়টি শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের কথা হয় দূতাবাসের। এসময় দেলোয়ার হলুদ স্ট্রিপের শার্ট ও বাদামি রঙের জ্যাকেট পরেছিল। শৌখিন কালো চুল বেশ কেতা করে ছাঁটা। তার ভাষায়, শিবির জাতীয় জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চায়। তিনি জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘তারা সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাচ্ছে।’ এর কিছুদিন আগে জেএমবি রাজশাহীতে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়।

ক্যাম্পাসে শিবিরের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দেলোয়ারের বক্তব্যের সঙ্গে যোগ করে বলেন, আমরা জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ও তালেবানের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমেরও বিরোধিতা করি। শিবির নেতারা জানান, গত আগস্টের সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা শিবির সদস্যদের তা থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেওয়া হয়। নেতারা মার্কিন দূতাবাসের কাছে এও দাবি করে, তারা জামায়াত থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র সংগঠন। তাদের এ দাবি একেবারেই বিশ্বস্ত না। কারণ এক বৈঠকে দূতাবাসকে জামায়াতের নেতারা জানায়, তাদের সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

রাজশাহীর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার মতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সংযত ও অহিংস কার্যক্রম চালায় বলে পরিচিত না। তবে রাজশাহীর স্থানীয় একজন সাংবাদিক দূতাবাসকে বলেন, শিবির কর্মীরা প্রায়ই সহিংস তৎপরতা চালায়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার ছাত্রের শিবিরের সদস্য রয়েছে ৭০০ জন। জামায়াতের দাবি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডিতে তাদের আধিপত্য রয়েছে।

তারবার্তায় দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি লেখেন, শিবির নেতারা অত্যন্ত সংগঠিত এবং ইসলামের বিস্তারে তারা মনোযোগী। তাদের প্রধান কাজ সহপাঠীদের কোরান এবং নবী হযরত মোহাম্মদের (সা.) কথা ও কর্মের (হাদিস) শিক্ষা দেওয়া।

তারবার্তায় গীতা পাসি মন্তব্য করেন, শিবির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এটা স্পষ্ট হওয়া সম্ভব হয়নি যে, তারা কী ধরনের পরিবর্তন চায়। কী ধরনের ইসলামি সমাজ চায় জিজ্ঞাসা করা হলে দেলোয়ার হোসেন ও তার সহকর্মীরা অস্পষ্ট কথাবার্তা শুরু করে। তবে তারা যা বিশ্বাস করে তাতে মার্কিন নাগরিকদের ভালো লাগবে না।
সূত্র: বি.নিউজ

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম