যে প্রতারণা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে

http://a4.sphotos.ak.fbcdn.net/hphotos-ak-ash3/c0.52.843.403/p843x403/540942_430492363640785_1542008371_n.jpg

সেক্যিউলারদের দাবী, তারা ধর্ম-বিরোধী নয়। তারা নিরপেক্ষ। এটি অসত্য এবং নিছক এক প্রতারণা। এটি তাদের মূল লক্ষ্যকে আড়াল করার কৌশল। একটি মুসলিম দেশে ইসলাম বিরোধী প্রকল্পের মূল কথাটি খোলাখোলি বলার সাহস নাই বলেই তারা এরূপ নিরপেক্ষতার ভান করে। রাজনীতির ময়দানে এমন ছলনাকে তারা জায়েজও মনে করে। মুসলমানের সকল কর্ম ও ধর্ম পরাকালমুখি। পথচলায় প্রতিটি পদক্ষেপই ফেলা হয় মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে। যে পূব দিকে যায় সে কখনই তাই পশ্চিমে পা রাখে না। তেমনি অবস্থা তাই জীবনের আসল পথচলাতেও। আখেরাতমুখী মানুষের জীবনটি এজন্যই ইহজাগতিক মানুষ থেকে তাই ভিন্নতর হয়। এখানে সার্বক্ষণিক কাজ পরকালে সফল হওয়ার চেতনা।
অথচ পরকালের সে চেতনা সেক্যিউলারদের রাজনীতি এবং শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অপ্রাসঙ্গিক। বরং তারা চায়, পরকালমুখি জীবনের সে গতিধারাকে ঘুরিয়ে দিতে। এভাবে সুস্পষ্ট ভাবে তারা একটি পক্ষ নেয়, অতএব তাদেরকে কি নিরপেক্ষ বলা যায়? আগুনকে তার উত্তাপ থেকে কখনই আলাদা করা যায় না। সেটি বিলুপ্ত হয় একমাত্র নেভানোর পর। তেমনি অবস্থা একজন মুসলমানেরও। যেখানেই সে যায় ঈমানকে সে সাথে নিয়েই যায়। তাই মুসলমানের ইবাদত-বন্দেগী ও পোষাক-পরিচ্ছদের পাশাপাশি তার রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির মাঝেও প্রকাশ পায় ঈমানের উত্তাপ। প্রকাশ পায় পরকালমুখিতা। কিন্তু সেক্যিউলারদের দাবী, মুসলমানকে রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, সাহিত্য, আইন-আদালত ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে হবে ইসলামের প্রচার বা প্রকাশ না ঘটিয়েই। কিন্তু সেটি কি সম্ভব? সেটি একমাত্র সম্ভব ঈমানের সে আগুনকে নিভিয়েই।
সেক্যিউলার রাজনীতিতে তাই মুসলমানের ঈমান বাঁচেনা। মুসলমানের রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি তো আজীবনের। জায়নামায বা মসজিদের মেঝেতে কি সেটিকে সীমাবদ্ধ করা যায়? বিদ্যুতের সুইচ অন-অফ করার ন্যায় সেটি বার বার জ্বালানো বা নিভানোর বিষয়ও নয় যে রাজনীতি থেকে জায়নামায এবং জায়নামায থেকে রাজনীতি এরূপ প্রতিবার অন-অফ করবে।

তাছাড়া সত্য-অসত্য, ন্যায়-অন্যায় এবং ইসলাম ও অনৈসলামের দ্বন্দ নিত্যদিনের। রাজনীতি, সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তি তথা সর্বক্ষেত্রে এর বিস্তার। এটি ঘটে কখনও সরবে, কখনও নীরবে, কখনও বা অতি সহিংস ভাবে। কথা হলো এত দ্বন্দের মাঝে কি নিরপেক্ষতা চলে? অন্যায়কে ন্যায়ের, অসত্যকে সত্যের সমকক্ষতা দিলে কাউকে কি সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ বলা যায়? চোখের সামনে হত্যা, সন্ত্রাস, ব্যাভিচারি হতে দেখে কি নিশ্চুপ থাকা যায়? অন্যায়ের সামনে এমন নিরপেক্ষতায় প্রশ্রয় পায় দুর্বৃত্ত। এবং পরাজিত হয় সত্যের পক্ষ। মুসলমান সূর্যকে সূর্য এবং আঁধারকে আঁধার যেমন বলবে তেমনি মিথ্যাকে মিথ্যাই বলবে। ইসলাম ও অনৈসলামের দ্বন্দে নিরপেক্ষতা কবীরা গুনাহ। মুসলমানের উপর ফরয শুধু এ নয় যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। বরং সাক্ষ্য দিবে সত্য বা হকের পক্ষে। এবং সেটি রাজনীতি, সংস্কৃতি, আইন-আদালত ও বুদ্ধিবৃত্তিসহ জীবনের প্রতিক্ষেত্রে। শাহাদতে হক হবে তার জীবনের মূল মিশন। নইলে সমাজে সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে কি করে? তাছাড়া নিরপক্ষতার খোলসে সত্যের বিরুদ্ধাচারন তো চিরকালের। এমন প্রতারণার কারণে অতীতে ইসলামের উপর্যোপরি পরাজয় বা গৌরবহানি হয়েছে। এবং আজও সে ষড়যন্ত্র চলছে। নিরপেক্ষতার গুরুত্ব রয়েছে ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ বিচার বিশ্লেষণে। এমনকি পবিত্র কোরআনেও নিরপেক্ষ নিরীক্ষণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলাম কবুলের পর মুসলমান আর নিরপেক্ষ থাকে না, সে তখন আল্লাহর পক্ষের শক্তি। কোরআনী পরিভাষায় হিযবুল্লাহ বা আল্লাহর দলভুক্ত। তখন বাঁচবার প্রধানতম লক্ষ্যে পরিণত হয় আল্লাহর দ্বীনের বিজয়। তখন বিলুপ্ত হয় নিরপেক্ষতার নামে ইসলামকে অন্য ধর্মের সম-পর্যায়ভূক্ত করার প্রবণতা। মুসলমান হওয়ার শর্তই হলো ইসলামকে আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্মরূপে কবুল করা এবং সর্ব ক্ষেত্রে ইসলামের পক্ষ নেয়া। ধর্ম গ্রহনে জবরদস্তি নেই। তবে ইসলাম কবুলের পর ইসলাম-অনৈসলামের দ্বন্দে নিরপেক্ষ থাকার অবকাশ নেই। সেনা বাহিনীতে যোগ দেওয়াটি ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়। কিন্তু যোগ দেওয়ার পর নিরপেক্ষ থাকার অনুমতি থাকে না, যু্েদ্ধ গিয়ে বরং স্বপক্ষে প্রাণও দিতে হয়। নইলে কোর্ট মার্শাল হয় এবং অবাধ্যতার শাস্তি পেতে হয়। নিরপেক্ষ লোকদের নিয়ে যেমন সেনাদল গড়া যায় না, তেমনি গড়া যায় না মুসলিম উম্মাহও। কোরআনে বর্ণিত ‘‘লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন’’ যার অর্থঃ ‘‘তোমাদের ধর্ম তোমাদের কাছে এবং আমার ধর্ম আমার কাছে’’ এটি কোন নিরপেক্ষতার কথা নয়, নয় আপোষমুখীতা। বরং এ আয়াতে ধ্বনিত হয়েছে নিজ ধর্মে সুদৃঢ় অবস্থান ও অঙ্গিকারবদ্ধতার কথা। সেক্যিউলারগণ সে সুদৃঢ় অবস্থান থেকে মুসলমানদের হটাতে চায়। অথচ ইসলামে ব্যক্তির এমন অঙ্গিকারহীন নড়বড়ে অবস্থান চিহ্ণিত হয়েছে মোনাফিকি রূপে। তাছাড়া পবিত্র কোরআনের এ আয়াতে দ্বীন বলতে যেটি বোঝানো হয়েছে সেটি প্রচলিত অর্থে ধর্ম বলতে যা বোঝায় তা নয়। এটির অর্থ নিছক নামায-রোযা বা হজ্ব-যাকাত নয়, বরং এমন এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা যা পুরাপুরি মেনে চলতে হয় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিক্ষেত্রে। নিছক ক্ষ্যক্তিজীবনে সেটি পালিত হলে দ্বীনের মূল লক্ষ্যই ব্যহত হয়।  

আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান বা বিশ্বাসের শর্র্ত্ব হলো অন্যসব উপাস্যকে অবিশ্বাস করা। ইল্লাল্লাহর পূর্বে তাই ’লা ইলাহ’ বলতে হয়। অন্যান্য ধর্মগুলোকে অবিশ্বাস করা মুসলমান হওয়ার পূর্বশর্ত। শুধু মুখের কথা‘য় নয়, কাজের মধ্য দিয়ে সেটির প্রকাশও ঘটাতে হয়। মুসলমান হওয়ার দাবী একজন দুর্বৃত্তও করতে পারে। অথচ কে কতটা মুসলমান বা ইসলামের পক্ষের সে বিষয়ে ব্যক্তির নিজস্ব রূপটি যতটা রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রকাশ হয় সেটি অন্যত্র হয় না। ঈমান অদৃশ্য, কিন্তু সেটিই নিখূঁত ভাবে প্রকাশ পায় ব্যক্তির রাজনীতির মধ্য দিয়ে। এটি এমন এক ক্ষেত্র যেখানে অতিশয় কপট মুনাফিকও তার কপটতাকে গোপন রাখতে পারে না। যে কপট বিশ্বাস মসজিদের জায়নামাযে ধরা পড়ে না, ধরে পড়ে না রোযা বা হজ্বে, সেটিই এখানে দৃশ্যমান হয়। এমনকি নবীর যুগেও বহু মুনাফিক তাদের কপট বিশ্বাসকে বছরের পর বছর লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু তাদের সে ভন্ডামি ধরা পড়েছিল রাজনীতি ও জ্বিহাদের ময়দানে। কার পক্ষে কে ভোট দিল, অর্থ দিল, লড়াই করলো বা প্রাণ দিল সেটি কি লুকানোর বিষয়? ব্যক্তির উপলদ্ধি বা বিশ্বাস তো এর মধ্য দিয়েই ধরা পড়ে। এখানে ব্যক্তি হাজির হয় তার নিজস্ব রং নিয়ে। তাই মানব জীবনে রাজনীতি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরিস্টটলের কাছে এটি এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তিনি পশু থেকে মানুষকে পৃথক করেছেন এ বিশেষ বৈশিষ্ঠটির কারণে। শুধু মানুষ হওয়ার জন্য নয়, মুসলমান হওয়ার জন্যও এটি জরুরী। ইসলামে এটি ফরয। ইসলামে রাজনীতি হলো ও রাষ্ট্রে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জ্বিহাদ। একাজে সে শুধু ভোটই দেয় না, অর্থ, শ্রম এমনকি প্রাণও দেয়। শহিদ হওয়ার প্রেরণা তাই ফ্যানাটিসিজম বা ধর্মান্ধতা নয়, এটিই তার ঈমান। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘‘ইন্নাল্লাহা আশতারা মিনাল মো’মিনিনা আনফুসাহুম ওয়া আমওয়ালাহুম বি আন্নালাহুমুল জান্নাহ, ইউকাতিলুনা ফি সাবিলিল্লাহি ফা ইয়াকতুলুনা ওয়া ইউকতালুন’’ অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা মুমিনের জান ও ধনসম্পদ জান্নাতের বিণিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে, অতঃপর (শত্র“দের যেমন) হত্যা করে তেমনি নিজেরাও নিহত হয়।’’ সুরা তাওবাহ, আয়াত ১১১। কোরআন পাকের এ ঘোষণার প্রতিফলন ঘঠেছে হাদিসপাকে। নবীজী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলমান রূপে পরিচয় দিল অথচ আল্লাহর উদ্দেশ্যে শহিদ হওয়ার (সর্বোচ্চ কোরবানী পেশের) ইচ্ছাও কোন দিন করলো না সে ব্যক্তি মুনাফিক।’’ ফল দাড়িয়েছিল এই, নবীজীর (সাঃ) এমন কোন সাহাবী বা সহচরই পাওয়া যাবে না যিনি শারিরীক ভাবে সুস্থ্য ছিলেন অথচ জিহাদে অংশ নেননি। এবং এটিই হলো সনাতন ইসলামি চেতনা। শত্র“দের হামলার মুখে মুসলমান ও ইসলামের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিছক বেতনভোগী সৈনিকের নয়, এ দায়িত্ব প্রতিটি মুসলমানের। এমন একটি চেতনার কারণেই মুসলমান মাত্রই রাজনীতির দর্শক যেমন নয়, তেমনি নিরপেক্ষও নয়। ধর্ম-ব্যবসাও নয়। বরং এটি তার উপর ফরয। এ কাজে সে বিণিয়োগ করে সমগ্র সামর্থের। অথচ সেক্যিউলারিষ্টগণ রাজি নয় ইসলামের এ ফরয পালনে। মুসলমানের জানমাল এ মহান কাজে বিণিয়োগ হবে তাতে এ শয়তানি শক্তির প্রচন্ড আপত্তি। বৃটিশ সরকার এ লক্ষ্যেই গোলাম আহম্মদ কাদিয়ানীকে ভন্ড নবী বানিয়ে তাকে দিয়ে জিহাদের আর প্রয়োজন নেই এ ফতওয়াও প্রচার করেছিল। একই লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে সেক্যিউলার পক্ষ। এরাই ইসলামপন্থিদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে তুরস্ক, মিশর, তিউনিসিয়া, আলজিরিয়া, সিরিয়াসহ বহু মুসলিম দেশে। সত্তরের দশকে নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশেও। ইসলামে যারা নিষ্ঠাবান তাদের সাথে সেক্যিউলারিষ্টদের মূল বিরোধ এখানেই। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর হুকুমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চায়। অথচ সেক্যিউলারণ ইসলামের এমন প্রয়োগের বিরোধী। ফলে তাদের সাথে সংঘাত অনিবার্য। মুসলমান যতই শান্তিবাদী হোক, এ লড়াই এড়িয়ে চলা অসম্ভব। এড়াতে পারেননি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তিবাদী নেতা শেষ নবী হযরত মহম্মদ (সাঃ)।

শুধু নামায-রোযার মাঝে ধর্মকে সীমাবদ্ধ রাখলে জিহাদের মত সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের প্রয়োজন হতো কি? প্রয়োজন হতো কি অসংখ্য যুদ্ধের এবং অধিকাংশ সাহাবীর প্রাণদানের? ইসলামের বিজয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)কে বহুবার যুদ্ধে নামতে হয়েছে, প্রতিটি যুদ্ধে মৃত্যৃর মুখোমুখী দাঁড়াতে হয়েছে। কিন্তু যারা ইসলামে অঙ্গিকারহীন তাদের কাছে এমন জ্বিহাদ গুরুত্বহীন। এমন যুদ্ধে তারা নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করতে চায় না। তাই জায়নামাযে অসংখ্য মুনাফিকের অনুপ্রবেশ ঘটলেও জিহাদের কাতারে সেটি ঘটেনি। সত্যিকার মুসলমান বাছাইয়ে জিহাদ এভাবে ফিল্টার বা ছাঁকনির কাজ করে। ‘ সংঘাতে নিরপেক্ষ হওয়াটি মহৎ গুন’ এরূপ কথায় বহু কপট মুসলমানই শান্তির অবতার সাজে। এভাবে এরা আড়াল করে নিজেদের ইসলামবৈরীতাকে। অথচ সুযোগ পেলেই এরা হালাকু-চেঙ্গিজ সাজে। নবীজী (রাঃ) ইসলাম-অনৈসলাম বা ন্যায়-অন্যায়্যের দ্বন্দে শুধু পক্ষই নেননি, যুদ্ধও করেছেন। যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জালেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী না হলে তাকে ঈমানদার দূরে থাক আদৌ কি সভ্য বলা যায়? পশুও হামলার মুখে ধেয়ে আসে। ইসলামের আগমন এজন্য ঘটেনি যে অনুসারি মুসলমানগণ প্রতিবাদহীন উদ্ভিদ-জীবন পাবে। ইসলাম এসেছে মানুষকে জান্নাতমুখী করতে। এসেছে আল্লাহর আনুগত্যপূর্ণ এক উন্নত সভ্যতার নির্মানে। সে লক্ষ্যে কোরআনভিত্তিক রাষ্ট্র-নির্মান অপরিহার্য। এটি না হলে সেখানে নির্মিত পায় জাহান্নামের পথ। এবং তাতে ব্যয় হয় জনগণের ট্যাক্সের অর্থ ও রাষ্ট্রের প্রশাসন। অনৈসলামিক রাষ্ট্রে মানুষ এভাবেই নিজ খরচে ধাবিত হয় মহাআযাবের পথে। শয়তানি শক্তি সেটিই চায়। কোন মুসলমান কি সেটি মেনে নিতে পারে? মেনে নিলে কি তার ঈমান থাকে? জান্নাতমুখি সভ্যতার নির্মানকাজে যেমন বিরোধীতা আছে, তেমনি সংঘাতও আছে। সে সংঘাতে মুসলমানেরা নিরপেক্ষ ভূমিকা নিবে সেটি কি ভাবা যায়? নবীজীর (সাঃ) আমলে মুসলমানতো দূরে থাক, মুনাফিকগণও নিজেদেরকে নিরপেক্ষ রূপে পেশ করার সাহস পায়নি। কারণ, এমন নিরপেক্ষতার অর্থই  ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। নিছক ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মুসলমানেরা যেখানে নিজ দেশ ও ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়, লাখে লাখে আহত ও নিহত হয়, সেখানে কি নিরপেক্ষতা চলে? পবিত্র কোরআনে ঈমানদারের গুলাবলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে ’আশাদ্দু আলাল কুফ্ফার ওয়া রুহামাও বায়নাহুম’ অর্থাৎ (ইসলামের প্রতিপক্ষ) কাফেরদের বিরুদ্ধে তারা কঠোর এবং পরস্পরের প্রতি রহমদিল তথা দয়াশীল। ফলে ইসলাম ও মুসলমানদের উপর হামলার মুখে কি নিরপেক্ষ হওয়া সাজে? তাছাড়া উম্মাদ ও মৃতরা ভিন্ন এ সমাজে কে নিরপেক্ষ? যে ব্যক্তির স্বার্থ আছে, তার একটি পক্ষও আছে। আর মুসলমান তো বাঁচে পরকালের স্বার্থ নিয়ে। তখন আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের স্বার্থটি অনিবার্য ভাবেই এসে যায়। ফলে এ সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ কোথায়? ইসলামের পক্ষে যারা নয়, তারা নিশ্চিত ভাবেই বিপক্ষে। ইসলামের সমগ্র ইতিহাসে ধর্মনিরপেক্ষতা বলে কোন শব্দ ব্যবহৃত হয়নি বস্তুত একারণেই। এ শব্দটি নিতান্তই আধুনিক কালের এক অভিনব আবিস্কার। সেটিও প্রতারণার স্বার্থে। এবং এর শুরু সেক্যিউলারিজম শব্দের বিকৃত তরজমার মধ্য দিয়ে।

‘মুসলিম’ শব্দটি নিজেই সুস্পষ্ট এক অর্থবহঃ পরিচয় বহন করে। শব্দটির অর্থ আত্মসমর্পনকারি। ফলে এটি তুলে ধরে ব্যক্তির বিশ্বাস, ধর্ম-কর্ম ও আচরণগত একটি বিশেষ অবস্থার। আত্মসমর্পনের মূল লক্ষ্য, ব্যক্তি তার প্রতিটি কর্মে বা সত্য-অসত্যের বাছবিচারে আল্লাহর নির্দেশের কাছে আত্মসমর্পন করবে। তাঁর প্রতিটি হুকুম মেনে চলবে। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হলেন আত্মসমর্পণের আদি মডেল। কি ইবাদত, কি হিযরত, কি দ্বীনের প্রচার, কি সন্তানের কোরবানী - মহান আল্লাহর প্রতিটি নির্দেশে তিনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন অতি সফল ভাবে। মুসলিম শব্দটিও তাঁরই দেওয়া। ফলে এমন আত্মসমর্পিত ব্যক্তি নিরপেক্ষ বা অন্য পক্ষে হয় কি করে? আল্লাহর প্রতিটি নির্দেশের প্রতি এমন আনুগত্যই হলো আত্মসমর্পনের মূল কথা। আল্লাহ চান তার কোরআনী বিধান সমগ্র জগতের উপর বিজয়ী হোক (’লি ইয়ুযহিরাহু আলা দ্বীনে কুল্লিহি’ - সুরা সাফ)। আত্মসমর্পনকারি রূপে মুসলমানের দায়িত্ব হলো, আল্লাহর সে ইচ্ছা পূরণে তারা আনছার বা সাহায্যকারি হয়ে যাওয়া। তাই মুসলমান হওয়ার অথর্, ইসলামের পক্ষে সে শুধু সাক্ষ্যই দিবে না, সেটির বিজয়ে ময়দানেও নামবে। কোন ব্যক্তি মুসলমান হয় তো নিছক ইসলামের পক্ষ নেওয়ার কারণেই। নইলে মুসলমান হওয়ার প্রয়োজন কি? কাজই বা কি? পাপাচারির জীবন থেকে পাপকে যেমন আলাদা করা যায় না, তেমনি ধার্মিকের জীবন থেকে আলাদা করা যায় না তার ধর্মকে। ধর্মীয় চেতনা তার মন, মনন ও অস্তিত্বের বিষয়। যেখানেই যায় সেখানেই সে তার এ চেতনাটিকেও সাথে নিয়ে যায়। তেমনি ধর্মহীন ব্যক্তিকে আলাদা করা যায়না তার চেতনা থেকে। ফলে সে যতই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলুক, সেটি নিছক ধোকাবাজী। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পেলে এ পক্ষটি ধর্মবিরোধী কর্মেরই ব্যপ্তি ঘটায়।

ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে কামাল পাশা ও তার অনুসারিরা তুরস্কে ইসলামের যেরূপ বিরোধীতা করেছে তা কাফের শাসকদের হাতেও ঘটেনি। আরবীতে আযান দেওয়া যেভাবে নিষিদ্ধ করেছিল সেটি কোন অমুসলিম দেশেও ঘটেনি। পানির ন্যায় অবাধ করেছে মদকে। বাণিজ্যরূপে প্রতিষ্ঠা করেছে বেশ্যাবৃত্তিকে। মুর্তি গড়েছে পথে ঘাটে। নিষিদ্ধ করেছে মহিলাদের স্কার্ফ পড়াকে। এবং উলঙ্গতাকে চালু করেছে আর্ট বা শিল্পরূপে। ইসলামী অনুশাসনের এমন উগ্র বিরোধীতার পরও তাদের দাবী তারা ধর্ম-নিরপেক্ষ। সেক্যিউলার এপক্ষটি যে দেশেই ক্ষমতায় গেছে সেখানেই ধর্মের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সত্তরের দশকে বাংলাদেশের পাঠ্যবই থেকে এরাই সরিয়েছিল পবিত্র কোরআনের আয়াত। রাস্তাঘাটে শুধু মুর্তিই গড়েনি, মুর্তির সামনে সন্মান প্রদর্শনের ন্যায় শির্ককে তারা সংস্কৃতিতে পরিণত করেছে। সংকুচিত করছে ইসলামী শিক্ষা। ইসলামী চেতনার নির্মূƒলে ব্যবহার করছে রেডিও, টিভি ও অন্যান্য প্রচারমাধ্যমকে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এরাই মৌলবাদ বলে বিষোদগার করে। এ পক্ষটি রাজনীতিকে যেমন ইসলামমূক্ত করতে চায় তেমনি জিহাদমুক্ত করতে চায় ইসলামকে। আর এরূপ পক্ষপাতদুষ্টতার নাম দিয়েছে নিরপেক্ষতা! এটি যে এক নিরেট প্রতারণা তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? অথচ বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশে প্রতারণার এ রাজনীতিই আজ প্রবল ভাবে বিজয়ী। বাংলাদেশের জন্য এটি কি কম ব্যর্থতা?

লেখা: ফিরোজ মাহবুব কামাল

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম