হিংসুটিদের গান, সাধে কি বলে গাধা !, তেজিয়ান

 হিংসুটিদের গান



আমরা ভাল লক্ষ্মী সবাই, তোমরা ভারি বিশ্রী,
তোমরা খাবে নিমের পাঁচন, আমরা খাব মিশ্রী ।
আমরা পাব খেলনা পুতুল, আমরা পাব চম্‌চম্‌,
তোমরা ত তা পাচ্ছ না কেউ, পেলেও পাবে কম কম ।
আমরা শোব খাট্‌ পালঙে মায়ের কাছে ঘেঁষটে,
তোমরা শোবে অন্ধকারে একলা ভয়ে ভেস্তে ।
আমরা যাব জামতাড়াতে চড়ব কেমন ট্রেইনে,
চেঁচাও যদি "সঙ্গে নে যাও" বল্‌ব "কলা এই নে" !
আমরা ফিরি বুক ফুলিয়ে রঙিন জুতোয় মচ্‌মচ্‌,
তোমরা হাঁদা নোংরা ছিছি হ্যাংলা নাকে ফঁচ্‌ফঁচ্‌ ।
আমরা পরি রেশমি জরি, আমরা পরি গয়না,
তোমরা সেসব পাওনা ব'লে তাও তোমাদের সয় না ।
আমরা হব লাটমেজাজি, তোমরা হব কিপ্‌টে,
চাইবে যদি কিচ্ছু তখন ধরব গলা চিপ্‌টে ।

সাধে কি বলে গাধা !


বললে গাধা মনের দুঃখে অনেকখানি ভেবে-
"বয়েস গেল খাটতে খাটতে, বৃদ্ধ হলাম এবে,
কেউ না করে তোয়াজ তবু, সংসারের কি রীতি !
ইচ্ছে করে এক্ষুনি দিই কাজে কর্মে ইতি ।
কোথাকার ঐ নোংরা কুকুর, আদর যে তার কত-
যখন তখন ঘুমোচ্ছে সে লাটসাহেবের মত !
ল্যাজ নেড়ে যেই, ঘেউ ঘেউ ঘেউ, লাফিয়ে দাঁড়ায় কোলে,
মনিব আমার বোক্‌চন্দর, আহ্লাদে যান গলে ।
আমিও যদি সেয়ানা হতুম, আরামে চোখ মুদে
রোজ মনিবের মন ভোলাতুম অম্নি নেচে কুঁদে ।
ঠাং নাচাতুম, ল্যাজ দোলাতুম, গান শোনাতুম সাধা-
এ বুদ্ধিটা হয়নি আমার- সাধে কি বলে গাধা !"

বুদ্ধি এঁটে বসল গাধা আহ্লাদে ল্যাজ নেড়ে,
নাচ্‌ল কত, গাইল কত, প্রাণের মায়া ছেড়ে ।
তারপরেতে শেষটা ক্রমে স্ফুর্তি এল প্রাণে
চলল গাধা খোদ্‌ মনিবের ড্রইংরুমের পানে ।
মনিবসাহেব ঝিমুচ্ছিলেন চেয়ারখানি জুড়ে,
গাধার গলার শব্দে হঠাৎ তন্দ্রা গেল উড়ে ।
চম্‌কে উঠে গাধার নাচন যেমনি দেখেন চেয়ে,
হাসির চোটে সাহেব বুঝি মরেন বিষম খেয়ে ।

ভাব্‌লে গাধা- এই তো মনিব জল হয়েছেন হেসে
এইবারে যাই আদর নিতে কোলের কাছে ঘেঁষে ।
এই না ভেবে এক্কেবারে আহ্লাদেতে ক্ষেপে
চড়্‌ল সে তার হাঁটুর উপর দুই পা তুলে চেপে ।
সাহেব ডাকেন 'ত্রাহি ত্রাহি' গাধাও ডাকে 'ঘ্যাঁকো'
(অর্থাৎ কিনা 'কোলে চড়েছি, এখন আমার দ্যাখো !')

ডাক শুনে সব দৌড়ে এল ব্যস্ত হয়ে ছুটে,
দৌড়ে এল চাকর বাকর মিস্ত্রী মজুর মুটে,
দৌড়ে এল পাড়ার লোকে, দৌড়ে এল মালী-
কারুর হাতে ডাণ্ডা লাঠি, কারু বা হাত খালি ।
ব্যাপার দেখে অবাক সবাই, চক্ষু ছানাবড়া-
সাহেব বললে, "উচিত মতন শাসনটি চাই কড়া ।"
হাঁ হাঁ ব'লে ভীষন রকম উঠ্‌ল সবাই চটে
দে দমাদম্‌ মারের চোটে গাধার চমক্‌ ছোটে ।

ছুটল গাধা প্রাণের ভয়ে গানের তালিম ছেড়ে,
ছুটল পিছে একশো লোকে হুড়মুড়িয়ে তেড়ে ।
তিন পা যেতে দশ ঘা পড়ে, রক্ত ওঠে মুখে-
কষ্টে শেষে রক্ষা পেল কাঁটার ঝোপে ঢুকে ।
কাঁটার ঘায়ে চামড়া গেল, সার হল তার কাঁদা ;
ব্যাপার শুনে বললে সবাই, "সাধে কি বলে গাধা !"



তেজিয়ান




চলে খচ্‌খচ্‌
ভুরু কট্‌মট্‌
দেখে বাঘ-রাগ
বয়ে লাফ ঝাঁপ
লাথি চার চার
মহা উৎপাত
ঝাড়ুবর্দার
তারি বালতিএ-
রেগে লালমুখে
মারে ঠন্‌ ঠন্‌
পায়ে কাল্‌সিটে
বুঝি ঠাং যায়
রাগে গজ্‌গজ্‌
ছড়ি ফট্‌ফট্‌
লোকে 'ভাগ্‌ ভাগ্‌'
বলে 'বাপ্‌ বাপ্‌'
খেয়ে মার্জার
ক'রে হুটপাট্‌
হারুসর্দার
দেখে ফাল্‌ দিয়ে
হেঁকে গাল রুখে
হাড়ে টন্‌ টন্‌
কেন বালতিতে
খোঁড়া ল্যাংচায়
জুতা মচ্‌মচ্‌ তানে,
লাথি চট্‌পট্‌ হানে ।
করে আগভাগ থেকে,
সরে হাবভাব দেখে ।
ছোটে যার যার ঘরে,
চলে ফুটপাথ্‌ পরে ।
ফেরে ঘরদ্বার ঝেড়ে,
আসে পালটিয়ে তেড়ে
মারে তাল ঠুকে দাপে
মাথা ঝন ঝন কাঁপে
মেরে চাল্‌ দিতে গেলে ?
দেখে ভ্যাংচায় ছেলে ।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম