আড়ি
বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষে ।
শেয়ালের সাড়া পেলে কুকুরেরা তৈরি,
সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরী !
আদা আর কাঁচকলা মেলে কোনদিন্ সে ?
কোকিলের ডাক শুনে কাক জ্বলে হিংসেয় ।
তেলে দেওয়া বেগুনের ঝগড়াটা দেখনি ?
ছ্যাঁক্ ছ্যাঁক্ রাগ যেন খেতে আসে এখনি ।
তার চেয়ে বেশি আড়ি আমি পারি কহিতে-
তোমাদের কারো কারো কেতাবের সহিতে ।
নাচের বাতিক
নাচ্ছে বুড়ো উল্টোমাথায়- ভাঙলে বুঝি মুণ্ডু ঘাড় !
হেঁইয়ো ব'লে হাত পা ছেড়ে পড়ছে তেড়ে চিৎপটাং,
উঠ্ছে আবার ঝট্পটিয়ে এক্কেবারে পিঠ সটান্ ।
বুঝিয়ে বলি, "বৃদ্ধ তুমি এই বয়েসে করছো কি ?
খাও না খানিক মশ্লা গুলে হুঁকোর জল আর হর্তকী ।
ঠাণ্ডা হবে মাথার আগুন, শান্ত হবে ছট্ফটি-"
বৃদ্ধ বলে, "থাম না বাপু, সব তাতে তোর পট্পটি !
ঢের খেয়েছি মশ্লা পাঁচন, ঢের মেখেছি চর্বি তেল ;
তুই ভেবেছিস আমায় এখন চাল্ মেরে তুই করবি ফেল ?"
এই না ব'লে ডাইনে বাঁয়ে লম্ফ দিয়ে হুঁশ ক'রে
হঠাৎ খেয়ে উল্টোবাজি ফেল্লে আমায় 'পুশ' ক'রে ।
"নাচ্লে অমন উল্টো রকম," আবার বলি বুঝিয়ে তায়,
"রক্তগুলো হুড়্হুড়িয়ে মগজ পানে উজিয়ে যায় ।"
বললে বুড়ো, "কিন্তু বাবা, আসল কথা সহজ এই-
ঢের দেখেছি পরখ করে কোথাও আমার মগজ নেই ।
তাইতো আমার হয় না কিছু- মাথায় যে সব ফক্কিফাঁক-
যতটা নাচি উল্টো নাচন, যতই না খাই চর্কিপাক ।"
বলতে গেলাম, "তাও কি হয়"- অম্নি হঠাৎ ঠাং নেড়ে
আবার বুড়ো হুড়মুড়িয়ে ফেললে আমায় ল্যাং মেরে ।
ভাবছি সবে মারব ঘুঁষি এবার বুড়োর রগ্ ঘেঁষে,
বললে বুড়ো, "করব কি বল্ ? এ সব করায় অভ্যেসে ।
ছিলাম যখন রেল-দারোগা চড়্তে হত ট্রেইনেতে
চলতে গিয়ে ট্রেনগুলো সব পড়ত প্রায়ই ড্রেইনেতে ।
তুব্ড়ে যেত রেলের গাড়ি লাগত গুঁতা চাক্কাতে,
ছিট্কে যেতাম যখন তখন হঠাৎ এক এক ধাক্কাতে ।
নিত্যি ঘুমাই এক চোখে তাই, নড়লে গাড়ি- অম্নি 'বাপ্-
এম্নি ক'রে ডিগবাজিতে এক্কেবারে শূন্য লাফ ।
তাইতে হল নাচের নেশা, হঠাৎ হঠাৎ নাচন পায়,
বসতে শুতে আপ্নি ভুলে ডিগ্বাজি খাই আচম্কায় !
নাচতে গিয়ে দৈবে যদি ঠাং লাগে তো পাঁজরাতে,
তাই ব'লে কি চটতে হবে ? কিম্বা রাগে গজ্রাতে ?"
আমিও বলি, "ঘাট হয়েছে, তোমার খুরে দণ্ডবৎ !
লাফাও তুমি যেমন খুশি, আমরা দেখি অন্য পথ ।"
অবুঝ
এক্কেবারেই হয় না ওতে বুদ্ধিশক্তির চালনা ।
দেখ্ ত দেখি আজও আমার মনের তেজটি নেভেনি-
এইবার শোন্ বলছি এখন- কি বলছিলেম ভেবেনি !
বলছিলেম কি, আমি একটা বই লিখেছি কবিতার,
উঁচু রকম পদ্যে লেখা আগাগোড়াই সবি তার ।
তাইতে আছে "দশমুখে চায়, হজম করে দশোদর,
শ্মশানঘাটে শষ্পানি খায় শশব্যস্ত শশধর ।"
এই কথাটার অর্থ যে কি, ভাবছে না কেউ মোটেও-
বুঝছে না কেউ লাভ হবে কি, অর্থ যদি জোটেও ।
এরই মধ্যে হাই তুলিস্ যে ? পুঁতে ফেল্ব এখনি,
ঘুঘু দেখেই নাচতে শুরু, ফাঁদ ত বাবা দেখনি !
কি বললি তুই ? সাতান্নবার শুনেছিস্ ঐ কথাটা ?
এমন মিথ্যে কইতে পারিস্ লক্ষ্মীছাড়া বখাটা !
আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধ্যি নেই কো পেরোবার
হিসেব দেব, বলেছি এই চোদ্দবার কি তেরোবার ।
সাতান্ন তুই গুনতে পারিস্ ? মিথ্যেবাদি গুনে যা-
ও শ্যামাদাস ! পালাস্ কেন ? রাগ করিনি, শুনে যা ।
কাজের লোক
প্রথম । | বাঃ- আমার নাম 'বাঃ', বসে থাকি তোফা তুলে পায়ের উপর পা ! লেখাপড়ার ধার ধারিনে, বছর ভরে ছুটি, হেসে খেলে আরাম ক'রে দুশো মজা লুটি । কারে কবে কেয়ার করি, কিসের করি ডর ? কাজের নামে কম্প দিয়ে গায়ে আসে জ্বর । গাধার মত খাটিস্ তোরা মুখটা করে চুন- আহাম্মুকি কাণ্ড দেখে হেসেই আমি খুন । |
সকলে । | আস্ত একটি গাধা তুমি স্পষ্ট গেল দেখা, হাস্ছ যত, কান্না তত কপালেতে লেখা । |
দ্বিতীয় । | 'যদি' বলে ডাকে আমায় নামটি আমার 'যদি'- আশায় আশায় বসে থাকি হেলান দিয়ে গদি । সব কাজেতে থাকত যদি খেলার মত মজা, লেখাপড়া হত যদি জলের মত সোজা- স্যান্ডো সমান ষণ্ডা হতাম যদি গায়ের জোরে, প্রশংসাতে আকাশ পাতাল যদি যেত ভরে- উঠে পড়ে লেগে যেতাম বাজে তর্ক ফেলে । করতে পারি সবি- যদি সহজ উপায় মেলে । |
সকলে । | হাতের কাছে সুযোগ, তবু 'যদি'র আশায় বসে নিজের মাথা খাচ্ছ বাপু নিজের বুদ্ধি দোষে । |
তৃতীয় । | আমার নাম 'বটে' ! আমি সদাই আছি চটে- কট্মটিয়ে তাকাই যখন, সবাই পালায় ছুটে । চশমা পরে বিচার ক'রে, চিরে দেখাই চুল- উঠ্তে বস্তে কচ্ছে সবাই হাজার গণ্ডা ভুল । আমার চোখে ধুলো দেবে সাধ্যি আছে কার ? ধমক শুনে ভূতের বাবা হচ্ছে পগার পার ! হাস্ছ ? বটে ! ভাবছ বুঝি মস্ত তুমি লোক, একটি আমার ভেংচি খেলে উল্টে যাবে চোখ । |
সকলে । | দিচ্ছ গালি, লোকের তাতে কিবা এল গেল ? আকাশেতে থুতু ছুঁড়ে- নিজের গায়েই ফেল । |
চতুর্থ । | আমার নাম 'কিন্তু', আমায় 'কিন্তু' বলে ডাকে, সকল কাজে একটা কিছু গলদ লেগে থাকে । দশটা কাজে লাগি কিন্তু আটটা করি মাটি, ষোল আনা কথায় কিন্তু সিকি মাত্র খাঁটি । লম্ফ ঝম্ফ বহুৎ কিন্তু কাজের নাইকো ছিরি- ফোঁস্ ক'রে যাই তেড়ে- আবার ল্যাজ গুটিয়ে ফিরি । পাঁচটা জিনিস গড়্তে গেলে, দশটা ভেঙে চুর- বল্ দেখি ভাই কেমন আমি সাবাস বাহাদূর ! |
সকলে । | উচিত তোমায় বেঁধে রাখা নাকে দিয়ে দড়ি, বেগারখাটা পণ্ডকাজের মূল্য কানাকড়ি । |
পঞ্চম । | আমার নাম 'তবু', তোমরা কেউ কি আমায় চেনো ? দেখ্তে ছোট তবু আমার সাহস আছে জেনো । এতটুকু মানুষ তবু দ্বিধা নাইকো মনে, যে কাজেতেই লাগি আমি খাটি প্রাণপণে । এমনি আমার জেদ, যখন অঙ্ক নিয়ে বসি, একুশ বারে না হয় যদি, বাইশ বারে কষি । হাজার আসুক বাধা তবু উৎসাহ না কমে, হাজার লোকে চোখ রাঙালে তবু না যাই দ'মে । |
সকলে । | নিষ্কম্মারা গেল কোথা, পালাল কোন দেশে ? কাজের মানুষ কারে বলে দেখুন এখন এসে । হেসে খেলে, শুয়ে বসে কত সময় যায়, সময়টা যে কাজে লাগায়, চালাক বলে তায় । |
0 comments: