তারাবাঈ - প্রথম খন্ড

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

গভীর রাত্রি। জন-প্রাণীর সাড়াশব্দ নাই। আকাশে কৃষ্ণা পঞ্চমীর চন্দ্র কিরণধারায় সমস্ত পৃথিবীকে পুলকিত করিয়া রাখিয়াছে। নানা জাতীয় নৈশ-কুসুমের গন্ধ বাহিয়া মৃদুমন্দ গতিতে বায়ু বাহিয়া যাইতেছে। এমন সময় রায়গড়ের একটি বৃহৎ উদ্যানমধ্যস্থ ক্ষুদ্র অট্রালিকায় শিবাজী, তাঁহার পিতা শাহজী, শুরু রামদাস স্বামী, বলবন্ত রাও, মালজী প্রভৃতি মারাঠাপ্রধানগণ গুপ্ত পরামর্শের জন্য নিভৃতে সমবেত হইয়াছেন। সকলেই গভীর চিন্তামুক্ত-সকলেই নীরব। এই নৈশ গুপ্ত সভাধিবেশনের কথা আর কেহই অবগত নহে। রাজপুরীর আর কোনও নরনারী এসভার কোনও সংবাদ রাখে না এবং রাখিবারও কোনও প্রয়োজন নাই।

সকলেই নীরবে গৃহতলে সমাসীন। সকলেই গম্ভীর চিন্তায় নির্বিষ্ট। মৌনতা ভঙ্গ করিয়া সহসা শাহজী বলিলেন, “বৎস শিবা! অকারণে রাজ-বিদ্রোহিতা মহাপাপ। আমরা বিজাপুরের সোলতানের অধীনে বেশ আরাম ও স্বচ্ছন্দে দিন গুজরান করছি।
রাজ্যের সর্বত্র শান্তি বিশেষ রূপে প্রতিষ্ঠিত। চোর-দস্যুর উৎপাত একেবারেই নাই। ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্প-কৃষি অসাধারণ উন্নতি লাভ করেছে। জাতিবর্ণনির্বিশেষে সকলেই তুল্যভাবে শাসিত এবং পালিত হচ্ছে। মুসলমান শাসনে ব্রাহ্মণ শূদ্রের বিচারে কোনও পার্থক্য নাই। উচ্চ রাজকার্যে হিন্দু-মুসলমান সকলেরই সমান অধিকার। তারপর বিজাপুরের সোলতান, শুধু আমাদের রাজাই নহেন; আমাদের প্রভু এবং অন্নদাতা। আমি, যে রাজার একজন অমাত্যের মধ্যে গণ্য, সেই রাজার বিরুদ্ধাচরণ করা পাপ-মহাপাপ! ধর্ম এ পাপ কখনও সইবে না। এতে কেবল ধ্বংস ও অকীর্তিই আনয়ন করবে।

“প্রবলপ্রতাপ সোলতানের বিরুদ্ধাচরণ করা ছেলেমী এবং পাগলামী মাত্র। হঠাৎ আক্রমণ করে তাঁর দু'চারটি দুর্গ এবং দশ-বিশ খানা গ্রাম দখল করেছ বলে, সম্মূখ সমরে তার পরাক্রান্ত বাহিনীকে কোনও রূপে পরাজিত করতে পারবে, ও রূপ কল্পনা তুমি স্বপ্নেও পোশন করো না।

“সোলতান অত্যন্ত সরলচেতা এবং উদার প্রকৃতির লোক। তিনি যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং রক্তপাতের পক্ষপাতী নহেন। তাই আমাকে বিনা যুদ্ধে গোলযোগ মিটাবার জন্য পাঠিয়েছেন। বৎস, যদি তোমার পিতার জীবনকে বিপন্ন না করতে-অধিকন্ত নিজেকেও রক্ষা করতে চাও, তা’ হ’লে সোলতানের বশ্যতা স্বীকার করে, রাজভক্ত প্রজারূপে বাস করাই সর্বদা যুক্তিসঙ্গত। তুমি যেসমস্ত দুর্গ অধিকার করেছ, তুমিই তার অধ্যক্ষ নিযুক্ত থাকবে। এ অপেক্ষা মহামাননীয় সোলতানের নিকট আর কি অনুগ্রহ পেতে চাও? ইহা বাস্তবিক লোকাতীত মহানুভবতা। দেবতারাও ইহার অধিক অনুগ্রহ করতে পারে না।

“প্রিয় শিবা! সোলতান আমার বিলম্ব দেখলে নিশ্চয়ই সন্দিগ্ধ হবেন। তুমি সেনাপতি আফজাল খাঁর নিকটে আগামীকল্য বশ্যতা স্বীকার করলেই, সমস্ত অশান্তি ও গোলযোগ মিটে যায়। এ শুভকার্যে আর বিলম্ব করা উচিত নহে। চিন্তা, করে দেখ-সামান্য অবস্থায় সামান্য বংশে জন্মগ্রহণ করে এবং সামান্য লোক হয়ে বিজাপুরের সম্মনিত সামন্তের মধ্যে গণ্য হওয়া ভাল, কি জনসমাজ কুক্কর তুল্য ঘৃণিত দস্যু অভিহিত হয়ে সর্বদা বন-জঙ্গলে উৎকণ্ঠিতভাবে জীবনযাপন করা ভাল।”

পিতার কথায় শিবাজী ক্ষণকাল নীরব রহিলেন। তারপরে বলিলেন, “বাবা! আপনি যা” বললেন, তা’ উচ্চাকাঙ্খাবিহীন হীনচেতা ব্যক্তিদিগের নিকট নিতান্তই যুক্তিসঙ্গত বটে, যশোলোলুপ রাজ-পদাকাঙ্খী ব্যক্তিদিগের পক্ষে এ উপদেশ গ্রাহ্য হতে পারে না। রাজ্য কাহারও পৈতৃক বা বিধি-নির্দিষ্ট নিজস্ব বস্তু নহে। যে বাহুবলে অধিকার করতে পারে, তারই হয়ে যায়। সুতরাং রাজবিদ্রোহিতা কথাটার কোন মূল্য নাই। বিশেষত, ইহা যে কোনও পাপ কার্যের মধ্যে গণ্য, তা’ আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না।

“পৃথিবীর রাজপদ যখন সর্বশ্রেষ্ঠ পদ, তখন ছলে-বলে কলে-কৌশলে যে কোনও প্রকারে হউক, তা’ লাভ করাই আমার মতে পরম ধর্ম। যখন আমি সেই ধর্মে দীক্ষিত হয়েছি, তখন আর সোলতানের নিকট বশ্যতা স্বীকার করা আমার পক্ষে অসম্ভব।”
শাহজীঃ বৎস শিবা! তুমি যা’ বললে, তা’ অনেকটা সত্য বটে। কিন্তু তুমি কি বাহুবলে রাজ্য অধিকার করেছ? কিম্বা করতে সমর্থ? তুমি অত্যন্ত ভুল বুঝছ! তুমি যে বৃত্তি অবলম্বন করেছ, তা’ বীরপুরুষ বা রাজকর্মী ব্যক্তির বৃত্তি বলে কদাপি অভিহিত হতে পারে না, পূর্বেই বলেছি, ইহা অতি জঘন্য দস্যুবৃত্তি! দস্যু সকলেরই ঘৃণার পাত্র এবং শূল-দন্ডে বধ্য।

শিবাঃ কিন্তু এই দস্যুবৃত্তি ব্যতীত যখন অন্য কোনও উপায় অভীষ্ট সিদ্ধির সম্ভাবনা নাই, তখন এই দস্যুভাবেই আমাকে উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য সাধনা করতে হবে। আমি এই কর্তব্য হতে কিছুতেই আর এখন বিচলিত হতে পারি না। আপনি আর বিজাপুরে ফিরে যাবেন না। পর্বত ও অরণ্যসঙ্কুল দুর্গম কঙ্কন প্রদেশের দুর্গে যেয়ে সুখে বাস করুন। আপনার কেহ কেশও স্পর্শ করতে পারবে না। আমি এদিকে ছলে-বলে কলে-কৌশলে যে রূপেই হউক, সোলতানের আধিপত্য নষ্ট করে রাজ্যস্থানের জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করব। যদি কোনও বিপদ ঘটে, তা’ আমার প্রতিই ঘটবে। যদি কিছু অধর্ম হয়, তা আমারই হবে। সে জন্য আপনার কোনও চিন্তা নাই। আপনি আমার আর কোনও কার্যেরই আলোচনা করবেন না।

শিবাজীর কথা শুনিয়া একটু রুষ্ট হইয়া রুক্ষ স্বরে বলিলেন, “কি আশ্চর্য, তোমার পাপ কার্য-মহাপাপ কার্যেরও সমালোচনা করতে পারব না। আমি এমন রাজদ্রোহী দস্যু পুত্রের মুখ দেখতেও ইচ্ছা করি না! তোমার যা’ ইচ্ছা, তাই করতে পার, কিন্তু পরিণামে এই ঔদ্ধতা এবং পাপের জন্য তোমাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।” এই বলিয়া শাহজী নিতান্ত ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত অবস্থায় সেই নির্ভৃত গৃহ ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলেন।

শাহজী নির্ভৃত গৃহ হইতে বাহির হইয়া চলিয়া গেলে, শিবাজী এবং রামদাস স্বামী প্রভৃতি মিলিয়া যে পরামর্শ করিলেন, তাহা যার-পর-নাই ঘৃণিত এবং পাপজনক! আফজাল খাঁকে সহসা আক্রমণ করিয়া বধ করাই তাঁহাদের একমাত্র উদ্দেশ্য! তাঁহাকে বধ করিতে পারিলে, বিজাপুরাধিপের দক্ষিণ হস্ত ভগ্ন হইবে বলিয়া শিবাজীর দৃঢ় বিশ্বাস। কারণ আফজাল খাঁর ন্যায় এরূপ তেজীয়ান এবং মহাবীর সেনাপতি লাভ বহু ভাগ্যের কথা। শিবাজী অনেকবার বলিলেন যে, ‘আফজাল খাঁর ন্যায় বীর পুরুষের সাহায্য পাইলে তিনি দশ বৎসরের মধ্যে সমস্ত দাক্ষিণাত্যে জয়পাতাকা’ উড্ডীন করিতে পারেন।’ এহেন আফজাল খাঁকে কোনও রূপ নিহত করিতে পারিলে, তাঁহার উদ্দেশ্য সিদ্ধির পথ যে অনেকটা নিস্পণ্টক হয়, তদ্বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ নাই। সুতরাং আফজাল খাঁকে গুপ্তভাবে হত্যা করিবার জন্য আয়োজন চলিতে লাগিল।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

ঊষা তাহার অরুণিমা-জালের চাঁপা আঙ্গুলের কোমল স্পর্শে ঘন আঁধাররাশিকে তরল করিয়া নিদ্রিত বিশ্ববক্ষে নব চেতনার সঞ্চার করিতেছে। প্রভাতবায়ু কুসুম-গন্ধ হরণ করিয়া মৃদুমন্দ গতিতে স্বাস্থ্য ও স্নিগ্ধতা বিতরণ করিয়া প্রবাহিত হইতেছে। মধুরকণ্ঠে নানা ছন্দে সুললিত তানে বিশ্বপিতার মহিমা কীর্তন করিতেছে। ধীরে ধীরে মৃতবৎ জগৎবক্ষে কেন মনোহর ও মধুরভাবে নবজীবনে আবির্ভাব সূচিত হইতেছে।

এ হেন মধুর প্রভাতকালে অতি প্রত্যুষেই রায়গড়ের রাজপথের পার্শ্বে লোক সমাগম পরিদৃষ্ট হইতেছে। আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি, রায়গড় তখন অতি ক্ষুদ্র শহর।

এই ক্ষুদ্র শহর আজ বিজাপুরের সেনাপতি মহাবীর আফজাল খাঁর অভ্যর্থনাহেতু পরম রমণীয়ভাবে সজ্জিত হইয়াছে। পথের মধ্যে মধ্যে নানাস্থানে বিচিত্র তোরণসমূহ নির্মিত হইয়াছে! পতাকা, পুস্প এবং কদলী বৃক্ষে সমস্ত রাস্তা গোলজার করা হইয়াছে। মহারাষ্ট্রগণ যথাসম্ভব উৎকৃষ্ট বেশ-ভূষার সজ্জিত হইয়া সোৎসুকচিত্তে অপেক্ষা করিতেছে! মহারাষ্ট্র রমণীগণ পুস্পগুচ্ছে কুন্তল সাজাইয়া বিচিত্র ভঙ্গীতে কোঁচা ও কাছা দিয়া শাটী পরিয়া অট্টহ্স্যে এবং কোলাহলের গগণ-পবন মুখরিত করিয়া রাস্তার এক এক স্থানে জটলা পাকাইতেছে। বহু সংখ্যক বালক ইতস্ততঃ ছুটাছুটি করিতেছে।

এদিকে বাদ্যোদ্যমসহ মহারাষ্ট্রদিগের রাজা শিবাজী সহস্র সংখ্যক অশ্বারোহী সৈন্যসহ মুসলমান-পোষাকে উৎকৃষ্টরূপে সজ্জিত হইয়া সপারিষদ আসিয়া নগর তোরণের মূলে শ্রেণীবন্ধভাবে দন্ডায়মান হইলেন।

সহসা দূরে একটি তোপ গর্জন করিয়া উঠিল। সেই তোন গর্জনের সঙ্গেই সর্বত্র একটি অস্ফুট কলরব উত্থিত হইল। শিবাজী অশ্বারোহী সৈন্য এবং পারিষদগণকে সঙ্গে লইয়া বেগে অশ্ব ছুটাইলেন। নহবতে নহবতে শাহানার সুরে শানাই বাজিয়া উঠিল। রাস্তার পার্শ্বেই বাটী হইতে শঙ্খধ্বনি হইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে শিবাজী, বিজাপুরের সেনাপতি বীরবর আফজাল খাঁকে পরম সমাদরে এবং বিপুল আড়ম্বরে অভ্যর্থনা করিয়া রাজপ্রসাদের দিকে অগ্রসর হইলেন। শিবাজীর সৈন্যগণ পতাকা উড়াইয়া এবং বিগল বাজাইয়া অগ্রে অগ্রে গমন করিতে লাগিলেন। পশ্চাতে আফজাল খাঁ সহস্র সংখ্যক বীর পুরুষগণ বিপুল উৎসাহে নানাবিধ শ্রুতিমধুর বাদ্য বাজাইতে বাজাইতে অগ্রসর হইল। তৎপশ্চাতে বিপুল জনতা ও পদাতিক সৈন্যগণ চলিতে লাগিল। মারাঠা রমণীরা চতুর্দিক হইতে হুলুধ্বনি দিতে লাগিল।

আকাশে সূর্য উঠিয়াছে! তরুণ অরুণের লোহিত কিরণরাগে গগণ-ভুবন মনোমোহন সৌন্দর্যে ভূষিত হইতেছে। কিন্তু বিশ্বলোচন সবিতা-দেবের প্রতি আজ কাহারো দৃষ্টি নাই। যে সমস্ত হিন্দু সূর্যোদয় “জবা কুসুম সঙ্কাশ” প্রভৃতি স্তব আওড়াইয়া প্রত্যহ সূর্যের উপাসনা করিত, তাহাদেরও আজ সেই উপাস্য সূর্য-দেবতার দিকে নজর নাই। আজ সকলের দৃষ্টিই বিজাপুরের বীর সেনানী রূপবান ও তেজীয়ান আফজাল খাঁর প্রতি! আফজাল খাঁ অশ্বারোহণে চলিয়াছেন! তেজীয়ান অশ্ব নৃত্যশীল গতিতে ধীরে ধীরে কি বাঁকা ভঙ্গিমাতেই চলিয়াছে! আফজাল খাঁ রূপের ছটায় এবং বীর্যগরিমায় চারিদিক যেন আলো করিয়া চলিয়াছেন। কিবা কমনীয় কান্তি! কিবা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিব্যঞ্জন আয়ত লোচনযুগন! কিবা অঙ্কিত ভ্র! কিবা প্রশস্ত ললাট! কেমন বলিষ্ঠ ও পুষ্ট দেহ! মরি! মরি! কি তেজঃপুঞ্জ মূর্তি! কি বীরত্বব্যঞ্জক গোঁফ। যে দেখিল, সেই মুগ্ধ হইল। রমণীমহলে এই অপরূপ রূপের অস্ফুট স্বরে সমালোচনা উঠিল। সকলেই আফজাল খাঁর কোনও-না-কোনও অঙ্গের প্রশংসা করিতে লাগিল! তাঁহার সঙ্গীয় অশ্বারোহী সৈন্য এবং দেহরগিণেরই বা কি মনোরম গঠন-পারিপাট্য! কি বাঁকা ঠাম?

আফজাল খাঁর বাম পার্শ্বে শিবাজী চলিয়াছেন। শিবাজী মারাঠাদিগের মধ্যে সুশ্রী এবং সাহসী বীরপুরুষ বলিয়া প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। কিন্তু আজ মারাঠারা দেখিল-শিবাজীর শ্রী, চেহারার তেজঃ, গঠন-পারিপাট্য এবং পুষ্টি, আফজাল খাঁর তুলনায় কত নগন্য! চন্দ্রের নিকট তারকা তেমন, পদ্মের নিকট শাপলা যেমন, কর্পূর আলোর নিকট মৃৎপ্রদীপের আলো যেমন, ময়ূরের নিকটে পাতিহংস যেমন, আফজাল খাঁর নিকটে শিবাজীও সেইরূপ প্রতিভাত, হইতেছেন। শিবাজীও বিস্মিত দৃষ্টিতে এক একবার নেত্রকোণে আফজাল খাঁর কমনীয় কান্তি, রমণীয় গঠন এবং তেজঃপুঞ্জ মূর্তি দর্শন করিতেছেন, আর হৃদয়ে ঈর্ষার সর্প দংশনে জ্বলিয়া উঠিতেছেন! হায়! শক্রর এত রূপ! এত বীর্য! একি কখনও সহ্য হয়! তাঁহার স্বজাতীয় মারাঠাদিগের নিকট আজ যে তাঁহার সর্বপ্রকার হীনতাই সূচিত হইতেছে।

যাহা হউক, নগরের দৃশ্য দেখিতে দেখিতে অল্প সময়ের মধ্যেই শিবাজী আফজাল খাঁকে লইয়া রাজপ্রাসাদের সিংহদ্বারে উপনীত হইলেন।

এইখানে শিবাজীর আত্নীয়-স্বজন এবং তাঁহার গুরু রামদাস স্বামী অভ্যর্থনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আফজাল খাঁর উপস্থিতি মাত্রেই একশত এক তোপ সন্মখস্থ প্রান্তরে গর্জন করিয়া উঠিল! এই তোপ গর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই সহসা এক মহাবিপদের সঞ্চার হইল! শিবাজীর একটি প্রকান্ড হস্তী ভয়ে চঞ্চল হইয়া জনতার মধ্যে বেগে ছুটিতে লাগিল! মাহুত প্রাণপণে হস্তীটাকে থামাইবার চেষ্টা করিয়াও কিছুতেই কৃতকার্য হইতে না পারিয়া ভীষণে প্রহার করিতে লাগিল! ভীষণ ডাঙ্গশের প্রহারে হস্তীটি উন্মত্ত প্রায় হইয়া মাহুতকে সবলে স্কন্ধ দেশ হইতে আকর্ষণপূর্বক পদতলে নিষ্পেষিত করিয়া ফেলিল। ভীষণ পদাঘাতে এবং গুরুভারে মাহুত মুহূর্ত মধ্যেই মৃত্যুমুখে পতিত হইল।

মাহুতকে নিহত করিয়া আরও উন্মত্ত এবং ভীষণ হইয়া পড়িল। তাহার উন্মত্ততা এবং ভীষণতায় সেই সুসজ্জিত এবং সুশৃঙ্খল অগ্রভাগ একেবারেই বিশৃঙ্খল ও বিপর্যস্ত হইয়া পড়িল। সর্বত্র ভীতির কোলাহল পড়িয়া গেল। হস্তীর সম্মুখ হইতে সকলেই বেগে পলায়ন করিতে লাগিল। হস্তীটি বেগে ছুটিতে তাহার দক্ষিণ পার্শ্বের এক স্থানে, যেখানে মারাঠা স্ত্রীলোকেরা দাঁড়াইয়া মিছিল দেখিতেছিল, সেই দিকে ধাবিত হইল। স্ত্রীলোকেরা ভয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে পলায়ন করিতে লাগিল।

কিন্তু রত্নখচিত কৌষেয়বস্ত্র-সুসজ্জিত রাজকুমারী তারা পলায়ন করিতে যাইয়া মঞ্চে কাপড় আটকাইয়া পড়িয়া গেল। হস্তীটি এমন সময়ে বিকট চীৎকার করিয়া উঠায়, তারার দাসীগণ তারাকে ফেলিয়াই পলায়ন করিল। চতুর্দিকে ভীষণ আতঙ্কজনক উচ্চ কোলাহল উত্থিত হইল! এক পলকের মধ্যে হস্তী তারাকে পদ-বিমর্দিত করিবে! সকলেই হাহাকার করিয়া উঠিল।
শিবাজী-তনয়া তারার কোমল-দেহ-কুসুম কুঞ্জরপদতলে দলিত আর বেশি বিলম্ব নাই। হস্তী এক পা উঠাইয়াছে। সর্বনাশ! সর্বনাশ! সকলেই তারার মৃত্যু সম্বন্ধে নিশ্চিত হইয়া গেল।

কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার! সহসা কেন হস্তীটি ভীষণ আর্ত-চীৎকার করিয়া উঠিল। সকলেই বিস্ময়বিস্ফোরিত নেত্রে অবাক হইয়া দেখিল যে, উন্মত্ত হস্তীটি কপালে তীর বিদ্ধ হইয়া তারাকে ত্যাগ করিয়া অন্যদিকে ছুটিয়া যাইতেছে। তীর একহস্ত পরিমিত মস্তিস্কের মধ্যে বিদ্ধ হইয়াছিল। সুতরাং হস্তীটি কিয়দ্দুর যাইয়া ভূপতিত হইল। রক্তধারা প্রবাহিত হইয়া জমিন সিক্ত হইয়া গেল। দেখিতে দেখিতে হস্তীটি প্রাণ ত্যাগ করিল!

কে এই আসন্নবিপদ হইতে তারাকে রক্ষা করিল? কে এমন অব্যর্থ লক্ষ্যে ভীষণ তেজে তীর নিক্ষেপ করিয়া এই মহাবিপদের অবসান করিল? কাহার বাহুতে এমন দুর্জন শক্তি যে, হস্তীর মস্তকের মস্তিস্ক পর্যন্ত তীরে বিদ্ধ করিয়াছে?

সকলেই দেখিতে পাইল যে, বীরকুল-চূড়ামণি আফজাল খাঁই মুহুর্ত মধ্যে ধনুকে জ্যা আরোপণ করিয়া সবল ও নিপুণ হস্তের অব্যর্থ লক্ষ্যে রাজকুমারী তারাবাঈকে আকস্মিক মৃত্যুর হস্ত হইতে রক্ষা করিয়াছেন। চতুর্দিকে আফজাল খাঁর নামে জয়ধ্বনি হইতে লাগিল। সকলেই মুক্তকণ্ঠে আফজাল খাঁর সাহস এবং তেজের কথা আলোচনা করিতে লাগিল।

অতঃপর বিচ্ছিন্ন মিছিল আবার সুশৃঙ্খল করা হইল। শ্রেণীবদ্ধ হইয়া সৈনিকগণ তিনবার করিয়া কুর্ণিস করত আফজাল খাঁ এবং তাঁহার প্রভু বিজাপুরের সোলতানের দীর্ঘজীবন উচ্চকণ্ঠে কামনা করিল।

আফজাল খাঁ অশ্ব হইতে অবতরল করিলে সর্বপ্রথমে রামদাস স্বামী ধান্যদূর্বা দ্বারা আফজাল খাঁর মঙ্গলচর্না করিলেন। অতঃপর পুরুষ ও রমণীরা মিলিয়া আফজাল খাঁর শিরে ও সর্বাঙ্গে রাশি রাশি পূস্পবর্ষণ করিতে লাগিল। এত পুস্প বর্ষণ হইতে লাগিল যে, আফজাল খাঁ নিঃশ্বাস রুদ্ধ হইবার উপক্রম হইল। উপদ্রব দেখিয়া রামদাস স্বামী সকলকে ধমক দিলেন। কিন্তু যুবতীদিগের মধ্যে একটি রমণী নিষেধের পরও গোলাপের পাঁপড়ী আফজাল খাঁর মুখে বর্ষন করিতে লাগিল। রামদাস স্বামী তখন বিরক্তভাবে বলিয়া উঠিলেন, “কি তারা, কি ক’রছ! তোমার কি হুঁস নাই?” কিন্তু তারা তবুও আর এক মুষ্টি পুস্প বর্ষণ করিয়া ক্ষান্ত হইল তারার ভঙ্গী ও পুস্প বর্ষণ মত্ততা দেখিয়া আফজাল খাঁ ঈষৎ স্মিতহাস্য করিলেন।

অতঃপর পরম যত্নে সুসজ্জিত প্রাসাদ্যভ্যন্তরে আফজাল খাঁকে লইয়া রামদাস স্বামী এবং শিবাজীর পিতা শাহজী তাঁহার সেবায় ও পরিতোষ-বিধানে নিযুক্ত হইলেন। সৈনিক পুরুষদিগকেও যথাযোগ্য বাসস্থান এবং আহার প্রদান করা হইল। আদর-অভ্যর্থনা এবং সন্মান-সম্বর্ধনা পুরামাত্রায় চলিতে লাগিল।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথি। পূর্ণকলা শশধরের অমল-ধবল জ্যোৎস্না-লহরীতে গগন-ভবন সুখ-তরঙ্গে ভাসিতেছে। কৃষ্ণগড়ের দুর্গ-মধ্যস্থ মনোহর উদ্যানে নানা জাতীয় ফুল ফুটিয়া কৌমুদী-স্নাত হইয়া মৃদু মন্দ পবনে মধুর গন্ধ বিতরণ করিয়া হাসিতেছে, নাচিতেছে এবং খেলিতেছে। সরোবরে জলজ পস্পদাম প্রস্ফুটিত হইয়া মনোহারিণী শোভার সৃষ্টি করিয়াছে। নবপত্রপল্লাবসনে সুখে সমাসীন হইয়া কোকিল ও পাপিয়া সুধামাখা কুজনে অনন্ত শূণ্যবক্ষে যেন কি এক পীযূষ-স্রোত প্রবাহিত করিতেছে! জলে-স্থলে শূন্যে সর্বত্র জ্যোৎস্নার মধুর ও শান্তোজ্জ্বল বিকাশ! মলয়া হওয়ার অবিরাম সুখ-স্পর্শ মৃদু সঞ্চরণ। ফুলে ফুলে হাসির ঢলাঢলি! নীলিম গগন-পটে তারকাবলীর স্নিগ্ধোজ্জ্বল সমাবেশ! এ হেন মধু-যামিনীতে মালেকা আমিনা বানু প্রিয় সহচরী রোকিয়াকে সঙ্গে লইয়া উদ্যান মধ্যস্থ সরোবরে ঘাটে গালিচা পাতিয়া বসিয়া প্রকৃতির চিত্তবিনোদন দৃশ্য উপভোগ করিতেছিলেন।

মালেকা এবং রোকিয়া উভয়ে নীরব। কিছুণ পরে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া রোকিয়া বলিল, “মালেকা! এ মধু-যামিনী এমন করে একেলা ভোগে সুখ কি? হৃদয়-রাজ্যে প্রেমের জ্যোৎস্না না ফুটলে বাইরের জ্যোৎস্নায় কেবল অন্ধকারই বৃদ্ধি করে!”

মালেকাঃ কেন? এই ত তুমি আছ! তোমার সঙ্গেই মধু-যামিনীর জ্যোৎস্না-লহরী পান করছি।

রোকিয়াঃ ঠাট্টা রাখ। দুধের সাধ কি ঘোলে মিটে? এমন ক’রে যৌবন-জীবন যাপন করায় পল কি? বিবাহ করাই সঙ্গত।

মালেকাঃ কথা ত ঠিক্‌! কিন্তু যাকে-তাকে ত আর স্বামীত্বে বরণ করতে পারি না। বীরপুরুষ না হলে, কা’কেও বিবাহ করব না, এই সংকল্পই ত এখন বাধা হয়ে পড়ছে।

রোকিয়াঃ কেন, মোতামদ খান কি উপযুক্ত নন?

মাঃ মোতামদ খান একজন উপযুক্ত সেনাপতি ব্যতীত আর কিছুই নন। তাঁকে বীরপুরুষ বললে অন্যায় হয় না বটে, কিন্তু আমি যে শ্রেণীর বীরপুরুষ চাই, সে শ্রেণীর নহেন। মোতামদ খান যদি বাহুবলে রাজ্য সংস্থাপন করতে পারতেন অথবা কৃষ্ণগড়কে স্বাধীন করতে পারতেন, তা’ হ’লে তাঁকে বীরপুরুষ বলে স্বীকার করতাম।

রোঃ তবে শিবাজী?

মাঃ বটে! শিবাজী সাহসী পুরুষ এবং রাজ্য সংস্থাপনেরও চেষ্টা করছেন। কিন্তু অতি নীচ প্রকৃতি বিশিষ্ট। শিবাজীকে বীরপুরুষ বলা কিছুতেই সঙ্গত নহে, দস্যু বল। বীরপুরুষের মহত্ব ও বীরত্ব তাঁতে নাই। ‘পার্বত্যমূষিক’ উপাধিই তাঁর পক্ষে যথার্থ।

রোঃ কেন, আপনার প্রতি ত খুবই উদার ও সদয় ব্যবহার করেছেন।

মাঃ নিশ্চয়ই। কিন্তু তাঁর ভিতরে তাঁর মৎলব আছে।

মাঃ মৎলব ছাড়া দুনিয়ার কে কি ক’রে থাকে?

মাঃ তা’ বটে! কিন্তু মৎলবের মধ্যেও পার্থক্য আছে। নিজের স্বার্থসিদ্ধিই যার একমাত্র উদ্দেশ্য, সে মৎলব অতীব ঘৃণিত।

রোঃ শিবাজীর মৎলব ঘৃণিত কিসে?

তাঃ তাঁল এই সদয় ও উদার ব্যবহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাকে লুব্ধ ক’রে বিবাহ করা। কিন্তু তাঁর জানা উচিত যে, মুসলমান কখনও কাফেরকে পাণিদান করতে পারেন না।

রোঃ তিনি ত আপনার জন্য ইসলাম ধর্ম পর্যন্ত অবলম্বন করতে প্রস্তুত আছেন। আপনি বিবাহে স্থির-নিশ্চয় সম্মতি দিলে তিনি পৈতৃক হিন্দু ধর্ম ত্যাগ ক’রে পবিত্র ইসলাম ধর্ম অবলম্বন করবেন। এতে তাঁকে নানাবিধ অসুবিধা ও কষ্ট ভোগ করতে হবে বটে; কিন্তু তুবও তিনি আপনার জন্য সে সমস্ত সহ্য এবং বহন করতে প্রস্তুত আছেন। প্রেমের এমন আদর্শ এবং প্রেমের জন্য এরূপ স্বার্থত্যাগ নিতান্তই বিরল নহে কি?

মাঃ নিশ্চয়ই। এরূপ ভন্ডামী এবং এরূপ শয়তানী নিশ্চয়ই নিতান্ত বিরল!

রোঃ ভন্ডামী কিরূপ? হায়! একেই বলে ‘যার কি চুরি সেই বলে চোর!’

মাঃ ভন্ডামী না হয়ত, ষন্ডামী ত বটেই। সাত সাতটি স্ত্রী এবং কয়েক গন্ডা উপপত্নী থাকলেও যাঁর আমার জন্য ঘুম হয় না, সে যদি আদর্শ প্রেমিক হয়, তবে আদর্শ লম্পট এবং পিশাচ আর কে?

রোঃ যে ব্যক্তি যাকে তনুমন সমর্পণ করেছে, সে যদি তা’কে না পায়, তা’ হলে তার ঘুম না হওয়াই ত স্বাভাবিক। এ অবস্থায় ত বেচারা শিবাজীর প্রতি দয়া হওয়াই স্বাভাবিক।

মাঃ বটে, বলিস কি? তুই পাগল নাকি! এরূপ লোকের প্রতি যদি দয়া হয়, তা’ হলে, বাম পদাঘাত করবার প্রবৃত্তি হবে আর কা’কে?

রোঃ ছিঃ! ছিঃ! এমন কথা বলা কি সঙ্গত?

মাঃ যে ব্যক্তি নারী লাভের জন্য পৈতৃক ধর্ম ত্যাগ করতে প্রস্তুত তা’র প্রতি ইহা অপেক্ষা সদুক্তি আর কি হ’তে পারে? যদি শিবাজী আজ ধর্মের জন্যই ধর্ম পরিগ্রহ করতেন, তা’ হলে নিশ্চয়ই মুক্তকণ্ঠে তাঁর প্রশংসা কীর্তন করতাম। শিবাজী ইসলাম ধর্ম পরিগ্রহ করলেও কদাপি তাতে স্থিরতর থাকবেন না। কোনও রূপে আমার রাজ্য এবং আমাকে হস্তগত করবার জন্যই ইসলাম গ্রহণের ভাণ করা হচ্ছে। শিবাজী ইসলামের পরম শক্রু। তিনি মসজিদগুলি চূর্ণ এবং তাহা শূকর-রক্তে অপবিত্র ক’রে পরম আনন্দ লাভ করছেন। শিবাজীর ন্যায় নৃশংস দস্যু যদি দমিত না হয়, তা’ হলে ইসলামের সমূহ অমঙ্গল বুঝতে হবে। আমি এহেন অস্পৃশ্য পাষন্ড কাফেরের পাণিগ্রহণ করব, এরূপ আশা করা বাতুলের পক্ষেই শোভা পায়। বরং শিবাজী এবিষয়ে যতই চেষ্টা করবেন, আমার ঘৃণা ও অশ্রদ্ধা ততই বৃদ্ধি পাবে। আমি প্রাণান্তেও এমন ঘৃণিত দস্যু ও জাহান্নামী কাফেরকে কিছুতেই স্বামীত্বে বরণ করতে স্বীকৃত নহি। এমনকি, এ বিষয়ের আলোচনা করতেও আমি ঘৃণা এবং বিরক্তি বোধ ক’রে থাকি।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

শীত ঋতুর অবসান হইয়াছে। মলয় সমীরণের মধুর সঞ্চরণে উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের প্রাণে প্রাণে নব-জীবন এবং নব আনন্দের সঞ্চার হইয়াছে। নবীন পত্র-পল্লবে এবং মঞ্জরী-মৌলী-ভূষণে ভূষিত হইয়া নানা জাতীয় বৃলতা অপরূপ শোভা বিস্তার করিতেছে। অনন্ত আকাশের অনন্ত নীলিমা উজ্জ্বলতর হইয়া আল্লাহতালার অনন্ত মহিমা প্রকাশ করিতেছে! পাখীর কণ্ঠে ললিত ছন্দে নানাবিধ মধুর ও মনোহর কুজন স্ফুরিত হইয়া দিগদিগন্ত মুখরিত এবং পুলকিত হইয়া উঠিয়াছে। এমন মধুর ও মনোহরি বসন্তকালে শিবাজী দিগদিগন্ত মুখরিত এবং পুলকিত হইয়া উঠিয়াছে। এমন মধুর মনোহর বসন্তকালে শিজাবী আমিনা বানুকে বিশেষ সম্বর্ধনা পুর্বক রাজধানী রায়গড়ে বিশেষ পরামর্শের জন্য নিমন্ত্রণ করিয়া পাঠাইলেন।

মালেকা প্রথমে নিমন্ত্রণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিলেন, নানা প্রকার ওজুহাত দেখাইতে লাগিলেন। অবশেষে বহু সাধ্য-সাধন এবং অনুনয়-বিনয়ে বাধ্য হইয়া জননী হামিনা বানু, দুইশত সিপাহী এবং স্বকীয় সহচরীগণ সহ রায়গড়ে শুভাগমন করিলেন।
শিবাজী বিপুল আড়ম্বর ও ধুমধামে মালেকাকে অভ্যর্থনা করিলেন। ফলত শিবাজী দ্বারা মালেকা আমেনা বানুর আদর-অভ্যর্থনা যতদূর হওয়া সম্ভবপর, তাহার কিছুই ক্রটি হইল না। আমিনা, তাঁহার মাতা এবং সঙ্গীয় লোকজন সকলে। শিবাজীর ভদ্রতা, সৌজন্য ও শিষ্ট ব্যবহারে পরম প্রীতি লাভ করিলেন।

শিবাজী এই সময়ে কৌশলে আমিনা বানুর রূপ-লাবণ্য বিশেষরূপে দর্শন করিয়া যার-পর-নাই লুদ্ধ এবং মুগ্ধ হইয়া পড়িলেন। আমেনা বানুর ভাসা ভাসা পটল-চেরা ভুবন-মোহন-অক্ষিযুগল এবং সর্বাঙ্গম সুঠাম ও সৌন্দর্য দেখিয়া সকলেই প্রশংসা করিতে লাগিল। শিবাজী আলোকসামান্য সুন্দরী, অগ্নিতুল্য তেজস্বিয়নী এবং প্রখর রাজনীতিজ্ঞা, এই রমণীরত্নকে পত্নীরূপে লাভ করিতে পারিলে, সমগ্র ভারতের অধিপতি হইয়া আশাও পোষণ করিতে লাগিলেন। মুসলমান কখনও কাফেরকে কন্যা দান করিতে পারে না, শিবাজী এই চিন্তাতেই অস্থির হইতে লাগিলেন। সুতরাং অসম্ভব কার্যকে সম্ভব করিবার জন্য শিবাজী কাল্পনিক পন্থা উদ্‌ভাবনে ব্যস্ত হইলেন। অনেক চিন্তা করিলেন, কিন্তু কিছুই নির্ধারিত হইল না। মন ক্রমেই মাতিয়া উঠিতে লাগিল। ক্রমেই লালসা বায়ু-প্রাপ্ত বহ্নির ন্যায় অতীব প্রচন্ড হইয়া উঠিল।

শিবাজী মালেকার সৌন্দর্য-সুধার এমনি পিপাসু হইয়াছিলেন যে, ক্রমশ তাঁহার হিতাহিত জ্ঞান ও পরিনামদর্শিতা একেবারেই লোপ পাইল। মালেকাই তাহার ধ্যান-জ্ঞান-চিন্তাকে আশ্রয় করিয়া ফেলিল। অবশেষে তাঁহার পরামর্শদাতা শুরু রামদাস স্বামীর পরামর্শে, ভানপূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়া মালেকা বানুর পাণিগ্রহণের জন্য চেষ্টা করিতে বলিলেন। বিবাহ করিবার পরে সুবর্ণ-নির্মিত কৃত্রিম গাভীর গর্ভে প্রবেশ করিয়া প্রসব-দ্বার দিয়া নির্গত হইয়া সেই গরু ব্রাহ্মণদিগকে দান করিলেই প্রায়শ্চিত্ত হইয়া যাইবে। আবার তিনি হিন্দুত্ব লাভ করিতে পারিবেন। রাজা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, মোসলেম-ললনা পাণিপীড়ন করিতে পারেন, রামদাস স্বামী এরূপ ব্যবস্থাও দিলেন।

প্রথম পরিচ্ছেদ

বিজাপুরের সোলতানের অধীনে কৃষ্ণনগর পরগণার জায়গীরদার সরফরাজ খান নিরুদ্বেগ জায়গীর ভোগ করিতেছিলেন। যুদ্ধকালে সোলতানকে দুই হাজার পদাতিক এবং পাঁচশত অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে সাহায্য করিতে হইত। আর সোলতানের সৈন্যদের রসদের জন্য প্রতি বৎসর পাঁচ শত গো এবং এক হাজার মেষ ও ছাগল প্রদান করিতে হইত। ইহা ছাড়া একটি পয়সাও খেরাজ বা খাজনা স্বরূপ দিতে হইত না। সরফরাজ খান প্রায় ছয়শত সত্তর বর্গ মাইল পরিমিত রাজ্যে সাড়ে দশ লক্ষ প্রজা লইয়া স্বাধীনভাবে বাস করিতেন। শাসন ও বিচারের সমস্ত বন্দোবস্তই তাঁহার নিজের অধীনে ছিল। কেবল মৃত্যুদন্ড দিতে হইলে বিজাপুরের দারোল-এন্ছানফের অর্থাৎ হাইকোর্টের কাজী-উল-কোজ্জাত অর্থাৎ প্রধান জজের হুকুম লইতে হইত। মারাঠা দস্যুপতি শিবাজী সরফরাজ খানের সঙ্গে বরাবরই সদ্ব্যবহার করিয়া উভয়ের মধ্যে সদ্‌ভাবের সৃষ্টি করিয়াছিলেন। কিন্ত সলিমগড়ের মীর্জা ওবায়দুল্লাহ্‌ বেগের সহিত সরফরাজ খান কন্যা আমিনা বানুর বিবাহের অসম্মতি জ্ঞাপন করায়, পরস্পরের মধ্যে যখন মনোমানিল্যের সঞ্চার হইল, সেই সময় ওবায়দুল্লাহ বেগের নিকট হইতে প্রচুর অর্থবল এবং সৈন্যবল লাভ করিয়া শিবাজী সহসা কৃষ্ণগড় আক্রমণ করিয়া বসিলেন।

সরফরাজ খান এই আক্রমণ সম্বন্ধে একেবারেই কিছু অবগত ছিলেন না। সুতরাং সহসা আক্রান্ত হইয়া প্রথমত নিতান্তই অপ্রতিভ এবং উদ্বিগ্ন হইলেন। পরে সত্বরতা সহ প্রস্তুত হইয়া কৃষ্ণগড়ের পার্বত্য দুর্গে আশ্রয় গ্রহণপূর্বক ভীষণভাবে সমরাঙ্গনে অবতীর্ণ হইলেন। দুর্গ হইতে মধ্যে মধ্যে ধাওয়া করিয়া শিবাজীর বহু সৈন্য হতাহত করিতে লাগিলেন। কিন্তু শিবাজীর সৈন্য-সংখ্যা অনেক বেশি থাকায়, সরফরাজ খান বিশেষ কিছু সুবিধা করিয়া উঠিতে পারিলেন না। দুর্গের রসদ ক্রমে ফুরাইয়া গেল। অথচ বিজাপুর সোলতানের কোনও সৈন্যদল সাহায্যের জন্য আগমন করিল না।

সরফরাজ খান ক্রমশ হতাশ হইয়া পার-পর-নাই ভীষণ হইয়া উঠিলেন। তিনি অনাহারে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া অপেক্ষা সৈন্যদল ও একমাত্র বীরপুত্র আলী হায়দর খানকে সঙ্গে লইয়া শিবাজীর সৈন্যদলকে ভীষণভাবে, আক্রমণ করিলেন। প্রচন্ড আক্রমণে শিবাজীর সৈন্যদল রণক্ষেত্রে তিষ্ঠিতে না পারিয়া বহুদূরে হটিয়া গেল। শিবাজীর প্রচুর রসদ তোপ-বন্দুক এবং গোলাগুলী সরফরাজ খানের হস্তগত হইল। কিন্তু এই যুদ্ধে তাঁহার একমাত্র বীরপুত্র আলী হায়দর খান যুদ্ধ করিতে করিতে সমক্ষেত্রে পতিত হইলেন। এদিকে শিবাজী আরও মাওয়ালী ও মারাঠা সৈন্যদল সংগ্রহ করিয়া পুনরায় নবীন উদ্যম এবং বিপুল তেজে দুর্গ আক্রমণ করিলেন। আবার ভীষণ যুদ্ধ আরম্ভ হইল। দুর্গ-প্রাচীর ভগ্ন করিবার জন্য মারাঠা গোলন্দাজগণ অনবরত এক স্থান লক্ষ্য করিয়া গোলা নিপে করিতে লাগিল। সরফরাজ খান, তাঁহার সেনাপতি মোতামদ খান এবং কন্যা আমিনা বানু দুর্গের প্রচারের উপরে তোপ পাতিয়া শক্রসৈন্য সংহারের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তাঁহাদের জ্বলন্ত উৎসাহ এবং উত্তেজনাপূর্ণ সঞ্জীবণী বাণীতে কৃষ্ণগড়ের সৈন্যদলের মধ্যে প্রবল উৎসাহ ও বীরত্বের সঞ্চার হইল। কৃষ্ণগড়ের গোলন্দাজগণের অব্যর্থ লক্ষ্যে শিবাজীর সৈন্যদল যখন ছিন্ন-ভিন্ন হইয়া পড়িবার উপক্রম হইল, ঠিক সেই সময় একটি শেল আসিয়া বীরপুরুষ সরফরাজ খানের স্কন্ধদেশে পতিত হইল। সেই শেলের দারুণ আঘাতে তাঁহার দেহ একেবারে চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া উড়িয়া গেল। সৈন্যদলে ভীষণ হাহাকার ধ্বনি উত্থিত হইল। শক্রগণ যাহাতে সরফরাজ খানের নিধনবার্তা অবগত না হইতে পারে, তজ্জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বিত হইল।

গভীর রজনীতে পরামর্শ-সভা আহুত হইল। মোতামদ খান এবং অন্যান্য প্রধান প্রধান ব্যক্তিগণ নিরাশ হইয়া শিবাজীর সহিত সন্ধি করিবার প্রস্তাব করিলেন। সরফরাজ খানের পত্নী হামিদা বানুও সন্ধির প্রস্তাবে সম্মত হইলেন, কিন্ত বীর্যবতী কুমারী আমিনা বানু বলিলেনঃ “বিধমী ও বেঈমান কাফেরের সহিত সন্ধি অপেক্ষা যুদ্ধ করাই ভালো। আমাদের প্রেরিত দূত বিজাপুরে পৌঁছে থাকলে, নিশ্চয়ই এতদিনে সোলতান-বাহিনী আমাদের সাহায্যের জন্য রওয়ানা হয়েছে। এ সময় হীন শর্তে সন্ধি করলে, পরে পস্তাতে হবে। শিবাজী যেমন, যখন ইচ্ছা সন্ধি উল্লঙ্ঘন করতে দ্বিধাবোধ করেন না, স্বাভাবিক ধর্মভীরুতার জন্য আমাদের পক্ষে সেরূপ করা সম্ভব হবে না। সুতরাং ভবিষ্যতে আমরা শক্তিশালী হলেও এই বেইমান ও অসভ্য কাফেরদিগের অধীনে বহু হীনতা ও নীচতা স্বীকার করতে হবে। সুতরাং কমবখত মারাঠা কাফেরের সঙ্গে যুদ্ধ করাই সর্বতোভাবে সঙ্গত।

“যুদ্ধে যদি জয়লাভ করি, শক্রর নিপাত হবে। আর যদি মৃত্যুমুখে পতিত হই, তাহাও মহাসৌভাগ্যের কারণ হবে। কারণ, মহাপুরুষ হযরত মোহাম্মদ (দঃ) বলেছেন, ‘যুদ্ধ করতে করতে যে মৃত্যু, তাহাই শ্রেষ্ঠ মৃত্যু। এরূপ মৃত্যু মানুষকে বিনা হিসাবে বেহেশতে লয়ে যাবে।’ সুতরাং সকলে যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হউন। আমার বিশ্বাস, চরম বিক্রমে আক্রমণ করলে, শক্রগণ নিশ্চয় পর্যুদস্ত হয়ে পলায়ন করতে বাধ্য হবে।”

আমিনা বানুর উৎসাহ এবং যুদ্ধপ্রিয়তা সন্দর্শন করিয়া সকলেই যুদ্ধের জন্য আবার মাতিয়া উঠিলেন। সুতরাং দুর্গবাসী সকলেই প্রাণপণ যত্নে দুর্গ-প্রাচীরের ভগ্নস্থানগুলি রাতারাতি মেরামত করিয়া প্রভাতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইলেন। মোতমদ খান এবং কুমারী আমিনা বানু অশ্বারোহণে দুর্গের সর্বত্র পরিভ্রমণ করিয়া সকলকে উৎসাহিত এবং উদ্বোধিত করিতে লাগিলেন। সুর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কুমারী আমিনা বানু বর্মমন্ডিত অবস্থায় অস্ত্রশস্ত্রে সজিজ্জত হইয়া স্বয়ং সেনাপতির পদ গ্রহণপূর্বক ভীম বিক্রম এবং অটল সঙ্কল্পে গৈরিক প্লাবনের ন্যায় শিবাজীর বাহিনীর উপরে যাইয়া আপতিত হইলেন। ভীষণ প্রতাপে শিবাজীর ব্যূহ বিদীর্ণ হইয়া গেল। আমিনা বানু অনেক দূর পর্যন্ত মাওয়ালী ও মারাঠা সৈন্যের পশ্চাদ্ধাবন করিয়া দুর্গে ফিরিয়া আসিলেন। শিবাজীর সৈন্যের প্রচুর রসদ-পত্র তোপ-বন্দুক ও গোলাগুলী হস্তগত করিয়া কুমারী আরও বিক্রমশালিনী হইয়া উঠিলেন। মধ্যে মধ্যে দুর্গ হইতে ধাওয়া করিয়া মারাঠাদিগের ভীষণ মার দিতে লাগিলেন। শিবাজীর সৈন্যদল বহু উৎসাহ এবং পুরস্কারের প্রলোভনে উদ্বুদ্ধ এবং প্রলুব্ধ হইয়াও কুমারীর সহিত সম্মুখ-সংগ্রামে ব্যূহ বাঁধিয়া দাঁড়াইতে সমর্থ হইল না।

কুমারী আমিনা বানু যেমন বীর্যশালিনী, তেমনি অসাধারণ রূপবতী ছিলেন। বাল্যকাল হইতে সমর-শাস্ত্রে তাঁহার গভীর অনুরাগ ছিল। অশ্বারোহণে, অস্ত্র-সঞ্চালনে, ব্যূহ-বিন্যাস কৌশলে, তোপ পরিচালনায়, তিনি অসাধারণ দক্ষতা লাভ করিয়াছিলেন। এক্ষণে সমরক্ষেত্রে সাক্ষাৎভাবে তাঁহার বীরত্ব, প্রতাপ, সাহস ও কৌশল দেখিয়া সকলেই বিমোহিত হইল।

শিবাজী এই কুমারীর প্রতাপ ও সাহস দেখিয়া স্তম্ভিত হইয়া পড়িলেন। রমণীর রূপলাবণ্যের সহিত এই প্রকার বিস্ময়কর বীর্যশৌর্যের অপূর্ব সমাবেশ দেখিয়া শিবাজী এই রমণীরত্বকে হস্তগত করিবার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিছুদিনের জন্য যুদ্ধ লাভ করিবার জন্য উন্মক্ত হইয়া উঠিলেন। বলে পরাস্ত করিতে না পারিয়া কৌশল ও প্রলোভনে কুমারীকে বন্ধ রাখিয়া সন্ধির প্রস্তাব উত্থাপিত করা হইল। আমিনা বানুর অসাধারণ বীরত্ব ও কৌশলে শিবাজী নিতান্ত মুগ্ধ ও বিস্মিত হইয়াছেন, এইরূপ ভান করিয়া তাঁহার রাজ্য আক্রমণ করা সঙ্গত নহে বলিয়া প্রকাশ করিলেন। অতঃপর শিবাজী কৃষ্ণগড়ের অধিকারিণী আমিনা বানুর সহিত সন্ধি-বন্ধনে আবদ্ধ হইলেন। তিনি আর কখনও কৃষ্ণগড় আক্রমণ করা দূরে থাকুক, অন্য কেহ আক্রমণ করিলে, তিনি আততায়ীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিবেন বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন।

অতঃপর উভয়পক্ষ হইতে মিত্রতা স্বরূপ উভয় পক্ষকেই বিপুল আড়ম্বরে ভোজ প্রদান করা হইল। ভোজ শেষ হইলে, শিবাজী বহুমূল্য নানাবিধ বিলাস দ্রব্য, করাচী হইতে লুণ্ঠিত একজোড়া হীরকের কঙ্কণ এবং লক্ষ টাকা মূল্যের পারস্যসাগর-জাত একটি মুক্তামালা আমিনা বানুকে উপহার প্রদান করিলেন। সঙ্গে সঙ্গে শিবাজীর রূপ-গুণ যশঃবিক্রম প্রভৃতি তিলে তাল করিয়া বর্ণনা করিবার জন্য উপযুক্তরূপে শিক্ষিতা কতিপয় ধূর্ত স্ত্রীলোক দাসী-স্বরূপ প্রেরিত হইল। ইহাদের কর্তব্য ছিল-ক্রমশ শিবাজীর গুণকীর্তন করিয়া আমিনা বানুকে শিবাজীর প্রতি অনুরক্ত ও মুগ্ধ করা।

শিবাজীর উদারতা এবং মহত্ব দেখিয়া সকলেই ধন্য করিতে লাগিল। বীরঙ্গনার প্রতি এই প্রকার সন্মান ও দয়া প্রকাশ করায় দাক্ষিণাত্যের মুসলমানগণও শিবাজীর প্রশংসা কীর্তন করিতে লাগিল। অতঃপর যথাসময়ে বিজাপুরের প্রধানমন্ত্রী এবং যুবরাজ যাইয়া নির্দিষ্ট সময়ে আমিনা বানুকে রাজ্যাভিষিক্ত করিয়া ‘মালেকা’ অর্থাৎ রাণী উপাধি প্রদান করিলেন। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মুকুট পরাইয়া দিলেন। যুবরাজ বিজাপুরের হুকুমতের তরফ হইতে একখানি মূল্যবান তরবারি উপহার প্রদান করিলেন।

শেখ-উল-ইসলাম জামে মসজিদে যাইয়া আল্লাহ তালার মঙ্গল আশীর্বাদ মালেকা আমিনার জন্য প্রার্থনা করিলেন। শিবাজীও তাঁহাকে অনেক ভেটঘাট প্রদান করিয়া যথেষ্ট সম্বর্ধনা করিলেন। মালেকা আমিনা বানু রাজ্যাভিষেকের পরে বিজাপুরের সোলতানের হুজুরী-নজর স্বরূপ পাঁচটি উৎকৃষ্ট হস্তী, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা এবং ২৫টি বৃহৎ মুক্তা প্রেরণ করিলেন।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম