অধ্যায় ০৯ : এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্ষক কারা?

বাংলাদেশ একটি পৃথক স্বাধীন দেশ হিসাবে কায়েম হবার দেড় যুগ পরেও যারা ’৭১-এর ভূমিকার কারণে যারা এদেশে ভারতবিরোধী ও ইসলামপন্থী হিসাবে চিহ্নিত, তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হবার পর এমন কোন কাজ হয়েছে কি, যা এদেশের স্বাধীনতার সামান্য বিরোধী বলে প্রমাণ করা যায়? একথা সবাই স্বীকার করতে বাধ্য যে, এদেশের স্বাধীনতার উপর যদি কোথাও থেকে আঘাত আসে, তা একমাত্র ভারত থেকেই আসতে পারে। দেশের চারপাশে যদি ভারত ছাড়া আরও কয়েকটি দেশ থাক, তাহলে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণের সুযোগ হতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের ভূমিকার কারণে যারা এ বাস্তবতা থেকে চোখ বন্ধ করে রাখতে চান, তারা জনগণ থেকে ভিন্ন চিন্তা করেন। জনগণকে বাদ দিয়ে দেশরক্ষা সম্ভব নয়। নি:সন্দেহে এদেশের জনগণ ভারত সরকারকে বন্ধু মনে করে না। তাদের কোন আচরণই বন্ধুসুলভ বলে প্রমাণিত নয়। এমনকি স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের ভূমিকাকেও এদেশের মংগলের নিয়তে পালন করা হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে না।
সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশ্যই হলো প্রতিরক্ষা বা ডিফেন্স। “ডিফেন্স এগেইনস্ট হুম” বা “কার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা” প্রশ্নটি আপনিই মনে জাগে। যেহেতু একমাত্র ভারত থেকেই আক্রমণের সম্ভবনা, সেহেতু এ প্রশ্নের জওয়াবও একটাই।
তাছাড়া শুধু সশস্ত্র বাহিনী দিয়েই দেশ রক্ষা হয় না। জনগণ যদি সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে না দাঁড়ায়, তাহলে সে বাহিনী কিছুতেই প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করতে পারে না। জনগণও একথা বিশ্বাস করে যে, এদেশের স্বাধীনতা তাদের হাতেই নিরাপদ, যারা ভারতকে আপন মনে করে না এবং ভারতও এদেশে যাদেরকে তার আপন মনে করে না। তাই ’৭১-এর ভূমিকা দ্বারা যারা এদেশে ভারতের বন্ধু নয় বলে প্রমাণিত, তারা জনগণের আস্থাভাজনই আছে। যারা বিশেষ রাজনৈতিক গরজে তাদের বিরুদ্ধে বিষাদগার করেছেন, তারা এ বিষয়ে জনগণের মধ্যে কোন সমর্থন যোগার করতে পারবেন না।
এদেশের জনগণ ভারত সরকারকে বন্ধু মনে করে না বলেই রাশিয়াকেও আপন মনে করে না। কারণ, রাশিয়ার নীতি সব সময়ই ভারতের পক্ষে দেখা গেছে। তাছাড়া, রুশ-দূতাবাসের কার্যকলাপ সম্পর্কে মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় যেসব খবর প্রকাশিত হয়, তাতে তাদের সম্পর্কে সুধারণা সৃষ্টি হওয়ার কোন কারণ নেই। বিশেষ করে আফগানিস্তানে রাশিয়ার নির্লজ্জ ভূমিকা গণমনে তীব্র ঘৃণাই সৃষ্টি করেছে।
এদেশে জনগণ ভারত সরকারকে বন্ধু মনে করে না বলেই রাশিয়াকেও আপন মনে করে না। কারণ, রাশিয়ার নীতি সব সময়ই ভারতের পক্ষে দেখা গেছে। তাছাড়া, রুশ-দূতাবাসের কার্যকলাপ সম্পর্কে মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় যেসব খবর প্রকাশিত হয়, তাতে তাদের সম্পর্কে সুধারণা সৃষ্টি হওয়ার কোন কারণ নেই। বিশেষ করে আফগানিস্তানে রাশিয়ার নির্লজ্জ ভূমিকা গণমনে তীব্র ঘৃণাই সৃষ্টি করেছে।
এদেশে কারা রাশিয়ার আগ্রাসী ভূমিকাকে সমর্থন করে এবং কারা ভারতের নিন্দনীয় ভূমিকাকে নীরব সমর্থন করে এবং কারা ভারতের নিন্দনীয় ভূমিকাকে নীরবে সমর্থন করে, তা কোন গোপনীয় ব্যাপার নয়। সুতরাং তারা যখন জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ’৭১-এর ভূমিকার দোহাই দিয়ে চিৎকার জুড়ে দেয়, তখন তাদের নিজেদের হীন মতলবই ফাঁস হয়ে পড়ে। তাদের এ চিৎকাররের অর্থ দেশপ্রেমিক জনগণের বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
এদেশের জনগণ একথা দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করে যে, ’৭১-এর যারা ভারতবিরোধী বলে প্রমাণিত হয়েছে, তারা কোন অবস্থায়ই ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উপর কোন হস্তক্ষেপ বরদাশত করবে না। আর যারা এদেশে ইসলামকে বিজয়ী দেখতে চায়, তারাই দেশরক্ষার জন্য প্রাণ দেবার বেলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সুতরাং ’৭১-এর ভূমিকার ভিত্তিতে তাদের দেশপ্রেমকে যারা কটাক্ষ করে, তারা প্রতিবেশী দেশের সম্প্রসারণবাদী সরকারের বন্ধু বলেই জনগণের নিকট বিবেচিত হবে।
আর একটা বাস্তবতা হলো এই যে, এদেশে কোন গৃহযুদ্ধ লাগলেও যারা ভারতের কোন আশ্রয় আশা করে না, তারাই এদেশকে রক্ষা করবে। যাদের আর কোথাও যাবার পথই নেই, তারাই মরিয়া হয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য এগিয়ে আসবে। কারণ, এছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই। তাদের জীবন ও মরণ এদেশেই নির্ধারিত যারা সব সময় ভারতের আধিপত্যবাদী ভূমিকার বিরোধী তাদেরকেই জনগণ এদেশে স্বাধীনতার প্রকৃত রক্ষক বলে মনে করে। দেশে কোন বড় রকমের রাজনৈতিক আশ্রয় পান, তারা কী করে আশ্রয়দাতা দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন? এদেশ ছাড়াও যাদের আশ্রয় আছে, তার কি এদেশের হিফাযত করতে পারবেন?
’৭১-এর রাজনৈতিক মতপার্থক্য এখন অবান্তর। তখন এমন এক দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যে, দেশপ্রেমিকদের মধ্যে দেশের কল্যাণ কোন পথে সে বিষয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়ে গেল। এক পক্ষ মনে করল যে, পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়া ছাড়া মুক্তি নেই। অপর পক্ষ মনে করল যে, পৃথক হলে ভারতের খপ্পরে পড়তে হবে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে “পাঞ্জাবের দালাল” আর “ভাতের দালাল” মনে করত। কিন্তু এসব গালি দ্বারা কোন পক্ষের দেশপ্রেমই মিথ্যা হয়ে যায় না। ঐ সময়কার দু:খজনক মতবিরোধকে ভিত্তি করে যদি এখনও বিভেদ জারী রাখা হয়, তাহলে জাতি হিসাবে আমরা ধ্বংসের দিকেই এগিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
শেষ কথা
দুনিয়ার মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কায়েম হবার পর সব ইসলামপন্থী দল ও ব্যক্তি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকার করে নিজেদের জন্মভূমিতে সাধ্যমত ইসলামের খেদমত করার চেষ্টা করছে। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবার ধ্বনি স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্তকে নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়। ১৯৭৭ সালে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ খতম করে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, আল্লাহর প্রতি ঈমান ও দৃঢ় আস্থা এবং সমাজতন্ত্রের ভিন্ন ব্যাখ্যা সংবিধানে সন্নিবেশিত করার পর জনগণ রেফারেন্ডামের মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানাবার ফলে ইসলামপন্থী দলগুলো বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য শাসনতান্ত্রিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। এভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এদেশের মুসলমানদের জন্য তাদের ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছেন।
বাংলাদেশ ভৌগোলিক দিক দিয়ে মুসলিম বিশ্ব সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একটা এলাকা। আর কোন মুসলিম দেশ এমন বিচ্ছন্ন অবস্থায় নেই। তদুপরি আমাদের এ প্রিয় জন্মভূমিটি এমন একটি দেশ দ্বারা বেষ্টিত, যাকে আপন মনে করা মুশকিল। তাই এদেশের আযাদীর হিফাযত করা সহজ ব্যাপার নয়। জনগণ এ ক্ষেত্রে একেবারেই বন্ধুহীন। আশপাশ থেকে সামান্য সাহায্য পাওয়ারও কোন আশা করা যায় না। এ দেশবাসীকে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজেদের শক্তি নিয়েই প্রতিরক্ষার কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে।
যে কোন জাতির আদর্শ ও বিশ্বাসই তার শক্তির উৎস হবে। সুতরাং এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনাদর্শ ইসলামই স্বাধীনতার আসল গ্যারান্টি। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামপন্থী সকলেই এ মহান উদ্দেশ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। তাই জনগনের নিকট তাদের চেয়ে বেশী আপন আর কেউ হতে পারে না।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম