পলাশী থেকে বাংলাদেশ
অতীতকে বাদ দিয়ে যেমন বর্তমানকে বুঝতে পারা যায় যে, তেমনি বর্তমানের বিশ্লেষণের ছাড়াও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় না।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে যে নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দুনিয়ার মানচিত্রে স্থান লাভ করল, তার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এখানে বিস্তারিত ইতিহাস আলোচনা উদ্দেশ্যে নয়। এজন্য প্রাচীন কাল থেকে আলোচনার অবকাশ এখানে নেই। তাই বৃটিশ শাসনের সূচনা থেকেই শুরু করছি।
উপমহাদেশে ইংরেজ রাজত্ব
১৭৫৭ সালে স্বাধীন বাংলার নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার সেনাপতি মীর জাফর ইংরেজের সহযোগিতায় নিজে নওয়াব যে কুমতলব করেছিল, তারই ফলে এদেশেই ইংরেজ রাজত্বের সূচনা হয়। যে ব্যক্তি নিজের ক্ষমতার জন্য আপন দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল, তাকে সংগত কারণেই ইংরেজারও বিশ্বাস করতে পারল না। এভাবেই মীর জাফরের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইংরেজ রাজত্ব কায়েম করা হলো।
১৮৫৭ সালে দিল্লীর শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইংরেজ রাজত্ব গোটা ভারত উপমহাদেশে মযবুত করা হলো। এবাবে উপমহাদেশে বৃটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করতে একশ’ বছর লেগে গেল। এভাবেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে পরাধীনতার যে বীজ বপন করা হয়েছিল, তা একশ’ বছরে বিরাট মহীরুহে পরিণত হলো।
১৮৩১ সালে পাঞ্জাব ও সীমান্ত প্রদেশের সীমানায় বালাকোটের যুদ্ধে সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী (র) ও শাহ ইসলামঈল (রা) এর নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতের প্রথম সত্যিকার ইসলামী আন্দোলনের পরাজয়ের পর ইংরেজদের শক্তি আরও বেড়ে গেল। কিন্তু এ ইসলামী আন্দোলনেরই ফলেই ১৮৫৭ সালে ইংরেজ বাহিনীতে নিযুক্ত মুসলমান সিপাহীরা বিদ্রোহ করার প্রেরণা লাভ করেছিল।
এর পরের ইতিহাস মুসলিম জাতিকে চিরতরে গোলমা বানাবার জন্যে ইংরেজদের জঘন্য ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। এ উপমহাদেশে প্রায় ৬০০ বছর মুসলিম শাসন চলেছে। তাদের হাত থেকে পূর্ণ ক্ষমতা কেড়ে নিতে ইংরেজদের ১০ বছর লেগেছে। তাই দিল্লী দখলের পর এদেশে ইংরেজ রাজত্ব স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ইংরেজরা মুসলামানদেরকে সকল ময়দান থেকে উৎখাত করে অমুসলিম জাতিগুলোকে শিক্ষা, সরকারি চাকরি, ব্যাবসা-বাণিজ্য ও জমিদারীতে এগিয়ে দিল। ফলে ৫০ বছরের মধ্যে এদেশের মুসলিম শাসক জাতি, দাস জাতিতে পরিণত হয়ে গেল। ইংরেজ লেখক উইলিয়াম হান্টারের “দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস” বইটি এ কথার বিশ্বস্ত সাক্ষী।
বাংলাদেশে ইংরেজ রাজত্ব
বাংলাদেশ থেকে ইংরেজ রাজত্ব শুরু হওয়ায় বাংগালী মুসলমানরা প্রায় দু’শ’ বছর ইংরেজের গোলামী করতে বাধ্য হয়। ইংরেজর মুসলিম দমন নীতির ফলে বাংগালী মুসলমানরা দু’ধরনের গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। একদিকে তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক দিয়ে ইংরেজের অধীন হয়ে পড়ল, অপরদিকে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এদেশেরই ঐ সব অমুসলিমের পদানত হতে বাধ্য হলো যারা ইত:পূর্বে মুসলমানদের প্রাধান্য মেনে চলত। অমুসলিম জমিদারদের অত্যাচারের ও সুদে টাকা লগ্নিকারীদের শোষণে মুসলমানদের যে কী দুর্দশা হয়েছিল। সে কথা একালের মুসলমানরা ধারণা করতেও অক্ষম।
0 comments: