শিক্ষায়-দীক্ষায়, ধনে-দৌলতে, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে অমুসলিম জাতিগুলো অগ্রসর হবার পর ইন্ডয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্ররিচালনায় ও অমুসলিম নেতৃত্বে যখন দেশকে ইংরেজের গোলামী থেকে স্বাধীন করার আন্দোলন শুরু হলো তখন অর্ধমৃত অবস্থায়ও মুসলিম জাতি তাতে সাড়া দিল। ইংরেজ বিদ্বেষ তাদের মজ্জাগত ছিল। কারণ তাদের হাত থেকেই ইংরেজরা ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল।
কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই মুসলিম নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারলেন যে, এ স্বাধীনতা দ্বারা ইংরেজের অধীনতা থেকে মুক্তি পেলেও মুসলমানদেরকে অমুসলিমদের অধীন হয়েই থাকতে হবে। গোটা ভারত তখন ৪০ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ১০ কোটি মুসলমান ছিল। তাই গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম হলেও সংখ্যালুঘু মুসলমানরা চিরদিনই অমুসলিমদের অধীন হয়েই থাকতে বাধ্য হতো।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে বৃটিশ সরকার যখন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা কায়েম করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে স্বায়ত্ব শাসনের নামে আংশিক ক্ষমতা তুলে দেবার ব্যবস্থা করল, তখন মুসলমারা পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা আদায় করে কিছুটা আত্মরক্ষার বন্দোবস্ত করল। মুসলিম জনগণের প্রতিনিধি যাতে শুধু মুসলিমদের ভোটেনিবর্বাচিত হতে পারে, সে ব্যবস্থার নামই পৃথক নির্বাচন। যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্তায় মুসলিম ও অমুসলিমদের মিলিত ভোটে নির্বাচন হলে কংগ্রেসের অমুসলিম নেতাদের মরযী অনুযায়ী কিছু সংখ্যক মুসলিম আইনসভায় নির্বাচিত হলেও জাতি হিসাবে মুসলিমদের কোন পৃথক সত্তা থাকবে না আশংকা করেই মুসলমনার পৃথক নির্বাচন দাবি করেছিল।
১৯৩৫ সালের ঐ আইন অনুযায়ী ১৯৩৬ সালে যে নির্বাচন হয়, তাতে ভারতের ৭টি প্রদেশে কংগ্রেসের শাসন কায়েম হয়। পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু ছিল ৭টি প্রদেশে কংগ্রেসের শাসন কায়েম হয়। পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু ছিল বলে অবিভক্ত বাংলাসহ ৪টি প্রদেশে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি থাকায় আনুপাতিক হারে এ চারটি আইনসভায় মুসলিশ সদস্য সংখ্যা অমুসলিমদের চেয়ে বেশি হয়।
মি. জিন্নহ মুসলিম জাতির নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর মুসলমানরা তাঁকে কায়েদে আযম (শ্রেষ্ঠ নেতা) হিসাবে বরণ করে নেয়। তাঁরই নেতৃত্বে এবং মুসলিম লীগের উদ্যোগে ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে লাহোরে ঐতিহাসিক মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শেরে বাংলা ফজলুল হকই ঐ সম্মেলনে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগুরু প্রদেশগুলো নিয়ে ভারত থেকে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রপুঞ্জ গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন, যা সর্বসম্মতভাবেই গৃহীত হয। ঐ প্রস্তাবটিই ইতিহাসে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে বিখ্যাত হয়ে আছে।
১৯৪৫ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা ও ১৯৪৬ সালে প্রাদেশিক আইন সভাসমূহের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে, তাতে মুসলিম লীগ ঐ পাকিস্তান প্রস্তাবকেই নির্বাচনী ইস্যু বানায়। সারা ভারত মুসলিমগণ একটি পৃথক জাতিসত্তার মর্যাদা সহকারে ঐ নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয় লাভ করে। পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি না থাকলে এ বিজয় কিছুতেই সম্ভবপর হতো না। এ বিজয়ের ফলে বাধ্য হয়ে ইংরেজ সরকার পাকিস্তান দাবী মেনে নেয় এবং ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারত ও মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম হয়।
0 comments: