জিহাদের উদ্দেশ্য-দ্বিতীয় অংশ
কাজেই আজ রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শাসন পদ্ধতির গোড়াতেই সর্বাত্মক আঘাত হানতে হবে৷ অর্থাৎ, মানুষের উপর থেকে মানুষের প্রভুত্ব ক্ষমতাকে নিমূর্ল করে তথায় একমাত্র আল্লাহ তা'আলার প্রভুত্ব ও আইন প্রণয়নের অধিকার স্থাপিত করতে হবে ৷
অতপর যারাই আল্লাহর প্রভুত্বের বুনিয়াদে হুকুমাত কায়েম করবে ও চালাবে তারা নিজেরা কখনই রাজাধিরাজ ও একচ্ছত্র প্রভু হয়ে বসতে পারবে না- আল্লাহকেই একমাত্র বাদশাহ স্বীকার করে তাঁর প্রতিনিধি হয়েই তাদেরকে রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালনা করতে হবে ৷ এ দায়িত্ব হলো তাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে অর্পিত মহান আমানত ৷ একথা তদের অবশ্যই মনে করতে হবে যে, শেষ পর্যন্ত একদিন না একদিন তাদের এ আমানতের হিসেব দিতে হবে সেই মহান আল্লাহর সমীপে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য- সবকিছুই জানেন ৷ রাষ্ট্রের বুনিয়াদী আইন হবে আল্লাহর দেয়া বিধান ৷ কারণ তিনি সবকিছুরই নিগূঢ় তত্ত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত- সকল জ্ঞানের উৎস একমাত্র তিনিই ৷ তাই তাঁর আইন ও বিধানের এক বিন্দু পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার ক্ষমতা বা অধিকার কারো থাকবে না ৷ তাহলেই তারা মানুষের মূর্খতা, স্বার্থপরতা এবং অবাঞ্ছিত পাশবিক লালসার অনধিকার চর্চা থেকে চিরকাল সুরক্ষিত থাকতে পারবে ৷ ইসলাম এ মূল সংশোধনের দায়িত্ব নিয়েই দুনিয়ায় এসেছে ৷ সমগ্র বিপর্যায়ের মূল উৎসকেই এটা এমনিভাবে সংশোধন করতে চায়৷ আল্লাহকে যারা নিজেদের বাদশাহ-কেবল মৌখিক আর কাল্পনিক বাদশাই নয়-প্রকৃত বাদশাহ বলে স্বীকার করবে এবং তিনি তাঁর নবীর মধ্যস্থতায় যে বিধান দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তাকে যারা বিশ্বাস করবে ইসলাম তাদের কাছে এ দাবী উত্থাপন করে যে, তারা যেন তাদের বাদশাহর রাজ্যে তার আইন ও বিধান জারি করার জন্য সচেষ্ট হয় ৷ সেই বাদশাহর যে সব প্রজা বিদ্রোহী হয়েছে এবং নিজেরাই রাজাধিরাজ হয়ে বসেছে তাদের শক্তি ক্ষুন্ন করতে হবে, আর আল্লাহর প্রজাবৃন্দকে অন্য শক্তির 'প্রজা' হওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করতে হবে ৷ আল্লাহকে 'আল্লাহ' এবং তাঁর আইনকে জীবন বিধান বলে কেবল স্বীকার করাই ইসলামের দৃষ্টিতে কিছুমাত্র যথেষ্ট নয়; বরং সেই সাথে এ কর্তব্যও আপনা আপনিই তাদের উপর আবর্তিত হয় যে, তোমরা যেখানেই বাস কর, যে দেশ বা রাজ্যেই তোমাদের বাসস্থান হোক না কেন সেখানেই মানুষের সংশোধন প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করতে হবে ৷ সেখানকার ভ্রান্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা বদলিয়ে সঠিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷ আল্লাহদ্রোহী নাস্তিক ও আল্লাহ্ নির্দিষ্ট সীমালংঘনকারী লোকদের হাত থেকে আইন রচনা ও দায়িত্ব নিজেদের হাতে গ্রহণ করে আল্লাহর বিধান অনুসারে পরকালে জবাবদিহির জাগ্রত অনুভূতি সহকারে আল্লাহকে 'আলেমুল গায়েব' মনে করেই রাষ্ট্রীয় কার্যসম্পন্ন কর ৷ বস্তুতঃ এই উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সাধনা করার নামই জিহাদ ৷
প্রভুত্ব ও রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার মূলতঃই অত্যন্ত জটিল, দায়িত্বপূর্ণ কাজ সন্দেহ নেই ৷ তা লাভ করার বাসনা কারো মনে জাগ্রত হলেই তার মধ্যে স্বভাবতই লালসার লেলিহান শিখা জ্বলে উঠে ৷ পৃথিবীর ধন-সম্পদ ও মানুষের উপর কর্তৃত্ব করার অধিকার লাভ হলেই মানুষের মধ্যে সুপ্ত লালসা জেগে উঠে, তখন মানুষের উপর নিরংকুশ প্রভুত্ব বিস্তারের স্পৃহা সৃষ্টি হয় ৷ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তগত করা খুব কঠিন কাজ নয়; কিন্তু তা লাভ করার পর নিজে আল্লাহ্ না হয়ে 'আল্লাহর অনুগত দাস' হিসেবে কর্তব্য পালন করা অধিকতর কঠিন ব্যাপার ৷ কাজেই এক ফির'আউনকে পদচ্যুত করে তুমি নিজে যদি সেখানে 'ফির'আউন' হয়ে বস, তাহলে আসলে লাভ কিছুই হলো না ৷ কাজেই এ বিরাট অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে ইসলাম তোমাকে সে জন্য সর্বতোভাবে তৈরী করে দেয়া অপরিহার্য মনে করে৷ স্বয়ং তোমার মন ও মগয থেকে স্বার্থপরতা ও আত্মম্ভরিতা দূর না হলে, তোমার মন ও আত্মা নির্মল না হলে, নিজের বা জাতীয় স্বার্থের খাতিরে লড়াই করার পরিবর্তে খালেস ভাবে আল্লাহর সন্তোষ লাভ ও বিশ্ব মানবের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে সাধনা ও সংগ্রাম করতে প্রস্তুত না হলে; উপরন্তু রাষ্ট্রশক্তি লাভ করার পর নিজের লোভ-লালসা ও দুষ্প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আল্লাহ্ হয়ে বসার পরিবর্তে প্রাণে ঐকান্তিক আগ্রহের সাথে আল্লাহর বিধান অনুসরণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করার যোগ্যতা না জন্মালে রাষ্ট্র শক্তি লাভের দাবী উত্থাপন করা এবং দুনিয়ার বাতিল শক্তির সাথে লড়াই শুরু করে দেয়ার কোন অধিকার কারো থাকতে পারে না ৷
কালেমা পড়ে ইসলামের সীমার মধ্যে প্রবেশ করলেই ইসলাম তোমাকে মানুষের উপর আক্রমন করার অধিকার বা অনুমতি দেয় না ৷ কারণ, তখন তুমিও ঠিক সেই দুষ্কার্য করতে শুরু করবে; যা করছে দুনিয়ার বর্তমান আল্লাহদ্রোহী ও যালেম লোকাগণ ৷ বরং এতবড় বিরাট দায়িত্ব গ্রহণ করার আদেশ দেয়ার পূর্বে ইসলাম তোমার মধ্যে সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার যোগ্যতা সৃষ্টি করতে চায় ৷
বস্তুতঃ ইসলামে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদাতসমূহ এ উদ্দেশ্যে প্রস্তুতির জন্যই নির্দিষ্ট হয়েছে ৷ দুনিয়ার সমস্ত রাষ্ট্রশক্তি নিজ নিজ সৈন্যবাহিনী, পুলিশ ও সিভিল সার্ভিসের কর্মচারীদের সর্বপ্রথম এক বিশেষ ধরনের ট্রেনিং দিয়ে থাকে ৷ সেই ট্রেনিং- এ উপযুক্ত প্রমাণিত হলে পরে তাকে নির্দিষ্ট কাজে নিযুক্ত করা হয় ৷ ইসলামও তার কর্মচারীদের সর্বপ্রথম এক বিশেষ পদ্ধতির ট্রেনিং দিতে চায়৷ তারপরই তাদের জিহাদ ও ইসলামী হুকুমাত কায়েম করার দায়িত্ব দেয়া হয় ৷ তবে এ উভয়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে৷ দুনিয়ার রাষ্ট্রসমূহ তাদের কর্মচারীদের যে কাজে নিযুক্ত করে থাকে তাতে নির্মল নৈতিক চরিত্র, মনের নিষ্কলুষতা ও পবিত্রতা এবং আল্লাহর ভয় সৃস্টির কোনই আবশ্যক হয় না ৷ এ জন্য তাদেরকে কেবল সুদক্ষ করে তোলারই চেষ্টা করা হয় ৷ আর সুদক্ষ হওয়ার পর সে যদি ব্যভিচারী হয়, মদ্যপায়ী হয়, বেঈমান ও স্বার্থপর হয় তবুও তাতে কোনরূপ আপত্তির কারণ নেই৷ কিন্তু ইসলাম তার কর্মীদের উপর যে কাজের দায়িত্ব অর্পণ করে তা আগা গোড়া সবই হচ্ছে একান্তভাবে নৈতিক কাজ৷ অতত্রব ইসলামে তাদের সুদক্ষ করে তোলার দিকে যতখানি লক্ষ্য দেয়া হয়, তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগিয়ে তোলা এবং তাদের মন ও আত্মাকে পবিত্র করার দিকে গুরুত্ব দেয়া হয় তদপেক্ষা অনেক বেশী ৷ ইসলাম তাদের মধ্যে এতখানি শক্তি জাগাতে চায় যে, যখন তারা দুনিয়ার বুকে আল্লাহর হুকুমাত কায়েম করার দাবী নিয়ে উঠবে, তখন যেন তারা নিজেদের এ দাবীর ঐকান্তিকতা ও সততা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রমাণ করে দেখাতে পারে৷ তারা যেন কখনই নিজেদের ধন-দৌলত, জমি-জায়গা, দেশ ও রাজ্য, সম্মান ও প্রভুত্ব লাভ করার জন্য লড়াই না করে৷ তারা যেন খাঁটিভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে লড়াই করে, আল্লাহর কোটি কোটি বান্দার জন্য লড়াই করে, আর একথা যেন কাজকর্মের ভেতর দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই প্রমাণিত হয় ৷ তারা বিজয়ী হলে যেন অহংকারী, দাম্ভিক ও আল্লাহদ্রোহী না হয়, তখনও যেন তাদের বিনয়াবনত মস্তক আল্লাহর সামনে অবনমিত থাকে ৷ তারা শাসক হলে মানুষকে যেন তারা নিজেদের দাসানুদাসে পরিণত না করে৷ বরং নিজেরাই যেন আল্লাহর গোলাম হয়ে জীবন যাপন করে৷ আর আন্যান্য মানুষকেও যেন একমাত্র আল্লাহর দাস বানাতে চেষ্টা করে৷ তারা রাষ্ট্রের ধনভাণ্ডার হস্তগত করে থাকলে তা যেন কেবল নিজের বা নিজের বংশের কিংবা জাতীয় লোকদের পকেট বোঝাই করার কাজে উজাড় করে না দেয়৷ তারা যেন অল্লাহর ধনভাণ্ডারকে তাঁরই বান্দাদের মধ্যে সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে বন্টন করে দেয় এবং একজন খাঁটি আমানতদারের ন্যায় একথা স্মরণ রেখে কাজ করে যে, এক অদৃশ্য চোখ তাকে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছে- ওপরে কেউ আছে, যার দৃষ্টি হতে সে কিছুতেই লুকিয়ে থাকতে সক্ষম নয় এবং তারই কাছে তাকে এক এক করে পয়সার হিসাব দিতে হবে৷
বস্তুতঃ মানুষকে এই উদ্দেশ্যে তৈরি করা ইসলামের নির্দিষ্ট এই ইবাদাতগুলো ছাড়া অন্য কোন উপায়ে সম্ভব হতে পারেনা ৷ আর ইসলাম মানুষকে এভাবে গঠন করে বলেঃ এখন তোমরা দুনিয়ার বুকে আল্লাহর নেক ও সালেহ বান্দাহ, তোমরা সামনে অগ্রসর হও লড়াই সংগ্রাম করে আল্লাহদ্রোহী লোকদেরকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব থেকে বিচ্যুত কর এবং সকল ক্ষমতা ও অধিকার নিজেদের হস্তগত করে নাও ৷
সহজেই বুঝতে পারা যায়, যেখানে সৈন্যবাহিনী, পুলিশ, আদালত, জেল ও কর ধার্য্যকরণ ইত্যাদি সকল সরকারী কাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীগণ আল্লাহভীরু হবে, পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার অনিবার্যতা সম্পর্কে সচেতন হবে, যেখানে রাষ্ট্র ও শাসন পরিচালনার সমস্ত নিয়ম-কানুন আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে রচিত হবে, সেখানে অবিচার ও অজ্ঞতার কোন অবকাশ নেই, যেখানে পাপ ও পাপানুষ্ঠানের সমস্ত পথ যথাসময়ে বন্ধ করে দেয়া হয়, সরকার নিজেই শক্তি ও অর্থ ব্যয় করে ন্যায়, পুণ্য ও পবিত্র ভাবধারার বিকাশ সাধনে সচেষ্ট হয়৷ তথায় মানবতা যে সর্বাঙ্গীন কল্যাণ লাভ করতে পারবে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকতে পারেনা৷ এ ধরনের সরকার যদি ক্রমাগত চেষ্টা-যত্নের সাহায্যে কিছুকাল পর্যন্ত লোকদের চরিত্র ও স্বভাব প্রকৃতি গঠন করতে নিযুক্ত থাকে, হারাম পন্থায় অর্থলাভ, পাপ, যুলুম, নির্লজ্জতা ও নৈতিক চরিত্রহীনতার সকল উৎস বন্ধ করে দেয়া হয়, ভুল-ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নীতি বন্ধ করে সুস্থ ও নিখুঁত শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা লোকদের মনোভাব ও চিন্তাধারা তৈরী করতে থাকে, তবে তার অধীনে সমাজে সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা, শান্তি, নিরাপত্তা, সচ্চরিত্র ও সৎপ্রকৃতির পবিত্র পরিবেশে মানুষ জীবন যাপনের সুযোগ লাভ করবে; তখন মানুষের আমূল পরিবর্তন সূচিত হবে৷ পাপিষ্ঠ ও আল্লাহদ্রোহী নেতৃত্বাধীনে দীর্ঘকাল বসবাস করার ফলে যে চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ধীরে ধীরে তা স্বতঃই সত্যদ্রষ্টা ও সত্যনিষ্ঠ হয়ে উঠবে৷ নৈতিক পঙ্কিলতার মধ্যে পরিবেষ্টিত থাকার দরুন যে অন্তর মসীলিপ্ত ও মলিন হয়ে গেছে; ধীরে ধীরে তা দর্পণের ন্যায় স্বচ্ছ হয়ে যাবে এবং সত্যের প্রভাব গ্রহণের যোগ্যতা জেগে উঠবে৷ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই যে সকলের একমাত্র রব, তিনি ছাড়া আর কেউ যে বন্দেগী পাওয়ার যোগ্য নয় এবং যে নবীজীর মারফত এ সত্যের পয়গাম লাভ হয়েছে, তিনি যে সত্য ও সত্যবাদী নবী -এ তথ্য গভীরভাবে হৃদয়ঙ্গম করা তখনকার পরিবেশে সকলের পক্ষে সহজ হবে৷ আজ যে কথা বুঝিয়ে দেয়া খুবই কঠিন মনে হয়, তখন তাই সকলের মগযে আপনা-আপনি স্থান লাভ করবে৷ আজ বক্তৃতা ও বই-পুস্তকের সাহায্যে যে কথা বুঝানো যায় না, তখনকার দিনে সেই কথা এতদূর সহজবোধ্য হবে যে, তাতে নামমাত্র জটিলতা অনুভূত হবে না ৷
মানুষের মনগড়া মত ও পথ অনুযায়ী কাজ-কর্ম সম্পন্ন হওয়া এবং আল্লাহ নিধার্রিত বিধান অনুযায়ী কার্য সম্পাদনের মধ্যে যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে তা যারা প্রত্যক্ষ করতে পারবে, আল্লাহর পরিপূর্ণ একত্ব (তাওহীদ) এবং তার পয়গাম্বরের সত্যতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন তাদের পক্ষে খুবই সহজ এবং তা অবিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে৷ বস্তুত, ফুল ও কাঁটার পার্থক্য জেনে নেয়ার পর ফুল আহরণ করা সহজ এবং কাঁটা সংগ্রহ করা কষ্টকর হয়ে থাকে৷ তখনকার দিনে ইসলামের সত্যতা অস্বীকার করা এবং কুফর ও শির্ককে আঁকড়ে থাকা বড়ই কঠিন হবে৷ সম্ভবতঃ খুব বেশী হলেও হাজারে দশজন লোকের মধ্যেই এতখানি গোঁড়ামী পাওয়া যেতে পারে; তার বেশী নয়৷
নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত যে কোন্ বৃহত্তর উদ্দেশ্যের জন্য ফরয করা হয়েছে, পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে আশা করি পাঠকগণ তা সুস্পষ্টরূপে বুঝতে পেরেছেন৷ যদিও আজ পর্যন্ত এগুলোকে নিছক পূজা অনুষ্ঠানের ন্যায়ই মনে করা হয়েছে এবং দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই ভ্রান্ত ধারণাই বদ্ধমূল করে রাখা হয়েছে৷ এটা যে একটি বিরাট ও উচ্চতর কাজের জন্য প্রস্তুতির উদ্দেশ্যেই বিধিবদ্ধ হয়েছে, তা আজ পর্যন্ত প্রচার করা হয়নি৷ এ কারণেই মুসলমানগণ নিতান্ত উদ্দেশ্যহীনভাবেই এ অনুষ্ঠান উদযাপন করে আসছে; কিন্তু মূল কাজের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কোন ধারণাই মনের মধ্যে জাগ্রত হয়নি৷ যদিও মূলতঃ এর জন্যই এ ইবাদাতসমূহ ফরজ হয়েছে; কিন্তু আমি একথা বলতে চাই যে, জিহাদের বাসনা না হলে এবং জিহাদকে উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ না করলে এ ইবাদাতসমূহ একেবারে অর্থহীন৷ এ ধরনের অর্থহীন অনুষ্ঠান পালন করে যদি আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব মনে করা হয়, তবে বিচারের দিন এর সত্যতা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হবে৷
0 comments: