অধ্যায়-০৭ : ইসলামী সংগঠনের কর্মী পরিচালনা

কর্মী পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালককে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয় প্রধানত: তাকে বর্ণিত কাজগুলো করতে হয় :
(১)আদর্শের আলোকে মন মানসিকতা গঠন
স্রষ্টা, বিশ্বজাহান, পৃথিবীতে মানুষের কর্তব্য, অপরাপর মানুষের সাথে তার সম্পর্ক এবং জীবনের পরিণতি সম্পর্কে ইসলাম যেই দৃষ্টিকোণ পেশ করে তা কর্মীর চিন্তাধারায় সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে । ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনা, দারসুল কুরআন, দারসুল হাদীস, পাঠ চক্র, ইসলামী বই পুস্তক পড়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে ইসলামী জীবন দর্শন ও বিধান সম্পর্কে কর্মীকে ওয়াকিবহাল করে তুলতে হবে ।
(২)ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দান
ইসলামী আন্দোলনের একটি নিজস্ব মিজাজ, কর্মসূচী, কর্মনীতি ও কর্ম পদ্ধতি আছে।এর ক্রমবিকাশের একটা নিজস্ব ধারা আছে ।তেমনিভাবে ইসলামী সংগঠনও অনেকগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী । ইসলামী আন্দোরন ইসলামী সংগঠনের এসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কর্মীকে অবশ্যই উত্তমভাবে ওয়াকিবহাল করে তুলতে হবে ।
(৩)ইসলামের বুনিয়াদী নির্দেশগুলকে নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ

ফারজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদা সমূহের অনুশীলন, হালাল জীবিকা উপার্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে হারাম বর্জন করার এক দুরন্ত মানসিকতা কর্মীর মাঝে সৃষ্টি করতে হবে ।এগুলোর গুরুত্ব বুঝাবার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো লংঘনের ভয়াভহ পরিণতি সম্পর্কেও কর্মীকেও ওয়াকিবহাল করে তুলতে হবে । তদুপরি অনৈসলামী পরিবেশের প্রভাব উপেক্ষা করে ইসলামের অনুশাসনগুলো অনুসরণ করার জন্য যেই প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন তা জাগ্রত করে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে ।
(৪)মর্ম উপলব্ধি করে নিয়মিত আল কুরআন ও আল হাদীস অধ্যয়নে উদ্বুদ্ধকরণ
আল কুরআন ও আল হাদীস মহা জ্ঞান ভাণ্ডার । আল কুরআনের সর্বত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পরিচয়, তার মহাজ্ঞন ও মহাশক্তির বর্ণনা পরিবেশিত হয়েছে । যতোই পড়া যায় ততোই এগুলোর উপলব্ধি মনের গভীরে শিকড় গাড়তে থাকে । যেই ব্যক্তি আল্লাহর মহাশক্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে তার মাঝে এমন নির্ভীকতা সৃষ্টি হয় যার তুলনা আল কোথাও মেলে না । তদুপরি যেই জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে উত্থিত করা হয়েছে তার মূলনীতিগুলো আল কুরআনেই রয়েছে । আল কুরআন পড়েই সেগুলো আমাদের জানতে হবে । আল সেগুলোর  প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগতি লাভ করার জন্য প্রয়োজন ব্যাপকভাবে আল হাদীস অধ্যয়ন ।
আল কুরআনকে তার ভাষাতেই মানুষের সামনে পেশ করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মাতৃভাষায় তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হবে । ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মী আল কুরআন পড়েই যাতে তার অর্থ বুঝতে পারে এতটুকু ভাষাজ্ঞান লাভ করার জন্য চেষ্টিত হতে হবে । নিরক্ষর কর্মী দের জন্য একথা প্রযোজ্য নয় । কিন্তু শিক্ষিত যেই কোন কর্মী এই যোগ্যতা অর্জনের জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়া দরকার । এই ব্যাপারে কর্মীকে বিশেষভাবে করবেন ।
(৫)জামাতের সাথে সালাত আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করণ
জামাতের সাথে সালাত আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা । একাকী সালাত আদায়কারীর চেয়ে জামায়াতে সালাত আদায়কারীর মর্যাদা ২৭ গুন বেশি । সমষ্টিগতভাবে আল্লাহর নিকট মাথা নত করতে একটা আনন্দও আছে । প্রতিবেশীদের খোঁজ খবর নেবার এবং তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের চমৎকার সুযোগও মিলে মাসজিদে জামায়াতে শরীক হয়ে সালাত আদায়ের মাধ্যমে । তদুপরি সুশৃংখল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে তোলার ক্ষেত্রে জামায়াতে সালাত আদায় করা অতি উত্তম এক পন্থা । এগুলো ফায়দা হাসিলের জন্য কর্মীকে উৎসাহিত করা খুবই জরুরী ।
(৬)আত্ম-সমালোচনায় উদ্বুদ্ধকরণ
সাধারণভাবে মানুষের ভুল হয় । তদুপরি শাইতান তো মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য তার পেছনে লেগেই আছে । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবীদেরকে শাইতান থেকে মাহফুয রেখেছেন । তাই তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ । কিন্তু আপনাদের মতো সাধারণ মানুষের প্রতিদিন অনেক ভুল ভ্রান্তি হয়ে যেতে পারে । পূর্ণভাবে সচেতন না থাকরেই ভুল-চুক হয়ে যায়।
সেই জন্য প্রত্যেক কর্মী দিনের সব কাজ কর্ম শেষ করার পর ঘুমিয়ে পড়ার আগে নিবিষ্ট মনে নিজর সারা দিনের কাজ কর্ম, কথাবার্তা ও আচরণ পর্যালোচনা করে দেখা দরকার । পর্যালোচনায় যদি কোন ভুল ভ্রান্তির কথা মনে পড়ে তার জন্যে আল্লাহর নিকট মাগফিরাত চাইতে হবে এবং এই ভুলের যেন পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে তার জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে । এভাবে আত্ম-সমালোচনা করতে থাকলে একজন কর্মীর জীবন থেকে ধীরে ধীরে অনেক ভুল ভ্রান্তি দুর হয়ে যাবে । জীবনকে সন্দর করার এই উত্তম প্রক্রিয়ায় যাতে কর্মী অভ্যস্ত হয়ে ওঠে তার উৎসাহ যোগাবেন পরিচালক ।
(৭)দাওয়াতী কাজে উদ্বুদ্ধকরণ
“আদদাওয়াতু ইল্লাল্লাহ”-র গুরুত্ব সঠিকভাবে কর্মীকে বুঝিয়ে দিতে হবে । এই কাজ বাদ দিয়ে অন্যান্য যাবতীয় নেককাজ করলেও নবীরই রিসালাতের দায়িত্ব পালন হয় না বলে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন ।
আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন প্রত্যেক মুমিনের জন্য ফারয । আর দীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কাজই হচ্ছে দীনের দাওয়াত সঠিকভাবে মানুষের নিকট পেশ  করা । দাওয়াতী কাজের গুরুত্ব এবং দাওয়াত প্রদানকারীর নিকট মর্যাদা সম্পর্কে কর্মীকে পূর্ণভাবে সচেতন করে তুলবেন ।
(৮)দাওয়াতি কাজে সহযোগীতা দান
দাওয়াত প্রদানকারীর বেশ ভুষা, কথাবার্তা বলার ভঙ্গি, আচরণ, ভাষার মান, যুক্তি প্রদর্শন পদ্ধতি ইত্যাদি কেমন হবে সেই সম্পর্কে কর্মীকে প্রয়োজনীয় হিদায়াত দেওয়া প্রয়োজন । কোন সময় দাওয়াতী কাজের জন্য উপযুক্ত সেই সম্পর্কেও কর্মীকে ধারণা দেয়া প্রয়োজন । অনুপযুক্ত সময়ে কোন ব্যক্তির নিকটে গিয়ে তাকে বিরক্ত করে লাভবান হওয়া যাবে না ।
আবার বছরের বিভিন্ন সময়ে কিছু মওসুমী ইসলামী তৎপরতা চলে । সেই সময়ে লোকেরা ইসলামের দিকে অনেকটা মনোযোগী হয় । সেই মওসুমে দাওয়াতী তৎপরতায় বিশষভাবে আত্মনিয়োগ করার জন্য কর্মীকে উদ্বুদ্ধ করা পরিচালকের কর্তব্য ।
(৯)দাওযাতী কাজের রিপোর্ট গ্রহণ
কর্মীর টার্গেটকৃত ব্যক্তিরা কারা তা পরিচালকের জন্য থাকা দরকার । তাদের সাথে কতটুকু যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, কী বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে এবং কী কী বই তাদেরকে দেয়া হচ্ছে সেই সম্পর্কে পরিচালক অবহিত থাকলে পরিচালক কর্মীকে সঠিকভাবে পরামর্শ দিতে পারেন । দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে কর্মীকে যেসব জটিল প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সেগুলোর জওয়াবও তাকে সরবরাহ করা দরকার । প্রশ্নের জওয়াব দিতে না পারলে কর্মীকে দাওয়াতী কাজে উপরোল্লেখিত পন্থায় সহযোগীতা দান করবেন পরিচালক ।
(১০)ইনফাক ফী সাবীল্লিলাহ-র জন্য উদ্বুদ্ধকরণ
আল্লাহর পথে অর্থদান যে পথের পাশে হাত পেতে বসে থাকা ভিক্ষুককে দু,এক টাকা দান করার ব্যাপার নয়, এই বিষয়ে কর্মীকে সচেতন করে তুলতে হবে ।আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে হলে নানা খাতে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয় । ইবলীসী শক্তি যেই গতিতে অগ্রসর হচ্ছে তার মুকাবিলা করতে ইসলাম আন্দোলনের গতি তীব্রতর করতে হবে । গতির তিব্রতা বাড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক উপায়-উপকরণ ব্যবহার প্রয়োজন । আর এসব উপায়-উপকরণ প্রচুর ব্যয় সাপেক্ষ । এই অর্থের চাহিদা কর্মীদেরকে পূরণ করতে হবে ।
একজন কর্মী নিজে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ দান না করে অন্যদেরকে বেশি বেশি দান করার কথা বলতে পারে না । সেটা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত  অপছন্দনীয় পরামর্শও পরিচালক কর্মীদেরকে দেবেন ।
(১১)সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধকরণ
একজন জিবন্ত মানুষ হিসাবে কর্মীকে প্রতিদিন অনেক রকমের কাজের দিকে মনোযোগ দিতে হয় । হালাল জীবিকা উপার্জনের সংগ্রামে তাকে সময় দিতে হয় । পরিবারের বহুমুখী কাজ তার আঞ্জাম দিতে হয় । স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আব্বা, আম্মা ও অন্যান্য আপনজনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও তাকে ভূমিকা পালন করতে হয় । এসব কিছু সামলাবার সাথে সাথে তাকে তার সময়ের একটি বিরাট অংশ আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত করতে হয় । জীবনে যাদের শৃঙ্খলা নেই এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার অভ্যাস নেই তারা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে এবং জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই নানা সমস্যার জালে জড়িয়ে পড়ে । আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে প্রাধান্য দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দেয়ার মানসিকতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে পরিচালককে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে ।
(১২)সময়-সচেতনতা সৃষ্টি
মানুষের আয়ু বলতে বুঝায় একটি নিদিষ্ট মুহূর্ত থেকে আর একটি নিদিষ্ট মুহূর্ত পর্যন্ত নির্ধারিত সময় । এই সময় শেষ হয়ে গেলে বলে কয়ে দেন দরবার করে এই পৃথিবীর অঙ্গনে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার কোন সুযোগ নেই । সময় সীমিত, অথচ কাজ অনেক । সময়-সচেতন হলে অনেক কাজই আমরা সম্পন্ন করে ফেলতে পারি । জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কর্মময় করে তোলার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেই এই সীমিত সময়ে অনেক কাজ করা যায় । অলসতা ত্যাগ করে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার অভ্যাস সৃষ্টি প্রয়োজন । সময়ানুবর্তীতাই সময় বাঁচাবার একমাত্র উপায় । একটি কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করলেই আরেকটি কাজ সঠিক সময়ে করার সুযোগ পাওয়া যায় । তা না হলে কাজই এলোমেলো হয়ে যায় এবং কতগুলো কাজে একেবারে হাতই দেয়া যায় না । তাই কর্মীর মাঝে সময়-সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পরিচালকের প্রচেষ্টা চালানো দরকার ।
(১৩)পরিচ্ছন্ন মনের অধিকারী হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ
মনের পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য কর্মীর মন থেকে হিংসা বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, সন্দেহপ্রবনতা,পরনিন্দা প্রবণতা, দোষ অন্বেষণ প্রবণতা,অপছন্দনিয় কিছু দেখলেই খুঁত খুঁত করার প্রবণতা, তিলকে তাল করার প্রবণতা এবং কোন কথা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট অথবা যথার্থ ফোরামে না বলে এখানে ওখানে বলে বেড়ানোর প্রবণতা মন থেকে উপড়ে ফেরতে হবে । কর্মীকে খেয়াল রাখতে হবে যে নবী-রসূল ছাড়া কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নন । ভুল ভ্রান্তি মানুষের নিত্য সঙ্গী । তার আরো মনে রাখতে হবে যে অবচেতনভাবে সে নিজেও কোন না কোন ভুলচুক অবশ্যই করছে । করো কোন ভুল ভ্রান্তি স্বাভাবিকভাবে চোখে পড়লে তা এখানে ওখানে চর্চা না করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দেখিয়ে দিলেই ব্যক্তির প্রতি ইহসান করা হয় । কিন্তু সেই ব্যক্তির অজ্ঞাতে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট তার ভুল-ভ্রান্তি চর্চা করা তার প্রতি বড়ো রকমের যুলম ।
প্রকৃতপক্ষে মাছি যেমন ময়লার ওপর বসে ভন্ ভন্ করে মনের পরিতৃপ্তি প্রকাশ করে, একজন অপরিচ্ছন্ন মনের অধিকারী ব্যক্তিও অন্যের দোষ ত্রুটি চর্চা করে সেই রকম তৃপ্তি পায় ।
কর্মীর মনের এই অপরিচ্ছন্নতা দুর করার জন্য আল কুরআন এবং আল হাদীসের শিক্ষার সাথে তাকে পরিচিত করে তোলা পরিচালকেরই দায়িত্ব ।
(১৪)কাজের পরিকল্পনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দান
পরিকল্পনার লক্ষ্য, পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে করণীয় সম্পর্কে কর্মীকে সুস্পষ্ট ধারনা দেয়া প্রয়োজন । পরিকল্পনার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে না পারলে গৃহীত পরিকল্পনার প্রতি কর্মীর সঠিক দৃষ্টি ভঙ্গি গড়ে ওঠে না এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সঠিক ভূমিকাও সে পালন করতে পারে না । তাই কর্মীর নিকট পরিকল্পনা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত হওয়া দরকার ।
(১৫)সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পণ
সংগঠনের কাজের বিভিন্ন বিভাগ থাকে । কর্মীর নৈতিক, মানসিক এবং দৈহিক যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মবণ্টন করতে হয় । কর্ম বণ্টন করে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিকে তার করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হয় । সঠিকভাবে নিজের কর্তব্য চিহ্নিত করতে পারলে কর্মী সহজভাবে ও নি:সংশয় হয়ে কাজ করতে পারে । যেই কর্মীর ওপর কোন বিভাগের কাজ অর্পণ করা হয় না সে ক্ষেত্রে মূল কাজ অর্থাৎ দাওয়াতী কাজই যে তার কর্তব্য তাও তার নিকট সুস্পষ্ট থাকা প্রয়োজন । তা না হলে ভুল ধারণাবশত: সে নিজেকে বেকর কর্মী ভাবতে পারে । কোন বিভাগের দায়িত্ব যাকে দেয়া হয় তাকে কিন্তু দাওয়াতী কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় না, বরং দাওয়াতী কাজের ওপরে অতিরিক্ত কাজ চাপানো হয় । পুরা বিষয়টি সকল কর্মীর নিকট পরিষ্কার করে তোলা পরিচালকেরই কাজ ।
(১৬)দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধকরণ
শুধু কর্মবণ্টন করে দেয়াই যথেষ্ট নয় ।কাজের গুরুত্বটাও কর্মীর নিকট বিশ্লেষণ করা দরকার আর কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন হওয়ার ওপর যে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অনেকটুকু নির্ভরশীল এটা তাকে বুঝতে হবে । তদুপরি বর্তমান পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নই যে পরবর্তী পরিকল্পনার পটভূমি রচনা  করবে এই সম্পর্কেও কর্মীকে সচেতন করে তুলতে হবে আবার বর্তমানেই যে পরবর্তী পরিকল্পনাকে এক ধাপ নীচে সীমাবদ্ধ করে দেবে সেই ধারণাও তার থাকতে হবে ।
(১৭)কাজের তদারক করণ
নিদিষ্ট সময়ে অন্তর কর্মীর কাজের দেখাশুনা করা দরকার । কাজ সম্পাদনকালে কোন ভুলচুক হয়ে থাকলে তাদারকের সময় তা ধরা পড়ে এবং সেই মর্মে কর্মীকে পরামর্শ দেয়া সম্ভব হয় । এতে করে ভুলের মাত্রা বাড়তে পারে না । কাজের বরকতও বিনষ্ট হয় না । তদারকের এই দায়িত্ব পরিচালককেই পালন করতে হবে ।
(১৮)কাজের রিপোর্ট গ্রহণ
নিদিষ্ট মেয়াদের জন্যই করতে দেয়া হয় না । মিয়াদ শেষ হয়ে গেলে কাজ সম্পাদনের রিপোর্ট আদায় করতে হয় । কোন কর্মীর ওপর কোন কাজ  অর্পণ করে নিদিষ্ট সময়ে পরিচালক যদি কাজের রিপোর্ট আদায় না করেন তাহলে বুঝতে হবে যে পরিচালকের নিকটই সেই কাজ গুরুত্ব পায়নি । ছোট হোক বড় হোক প্রদত্ত সকল কাজের রিপোর্ট পরিচালক অবশ্যই আদায় করবেন ।
(১৯)রিপোর্ট পর্যালোচনা
কাজের রিপোর্ট আদায় করে তা ফাইলবন্দি করে রাখাতে ফয়দা নেই । কাজের যেই টার্গেট ছিলো তার সাথে কৃত কাজ তুলনা করে দেখতে হবে। এই তুলনার পর যেই ফল দাঁড়ায় তা সকলকে অবহিত করতে হবে । এভাবেই কর্মীদেরকে কাজের জন্য কমতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা এবং আরো বেশি কাজ করার জন্য তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে ।
(২০)সমাজ কর্মীরূপে ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধকরণ
রুগ্ন মানুষের সেবা, দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের আশু চিকিৎসার ব্যবস্থা, মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-সজনের খোঁজ খবর নেয়া, মৃত ব্যক্তির জানাযা ও দাফন কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন, মাসজীদের তত্বাবধানে, রাস্তাঘাট মেরামত, পুল নির্মাণ, মক্তব ইত্যাদি পরিচালনায় অংশগ্রহণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলতে ইসলামী পরিবেশ সৃষ্টির প্রায়াস, সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ সম্পর্কে পত্র-পত্রিকায় চিঠি প্রেরণ, অনৈতিক কার্যকলাপ বন্দের জন্য জনমত গঠন, ঝগড়া বিবাদ মীমাংসা, বিধবা ও ইয়াতীমের তত্বাবধান, বিয়ে শাদীর ব্যবস্থা, উদ্যোগী ব্যক্তিদেরকে স্বাবলম্বনে সহযোগীতা দান প্রভৃতি কাজের মাধ্যমে কর্মীকে সমাজকর্মীরূপে আত্মগঠনে উদ্বুদ্ধ করা পরিচালকের অন্যতম কর্তব্য ।
(২১)ব্যাপক পরিচিতি অর্জনে উদ্বুদ্ধকরণ
কর্মীগণ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের নিকট পরিচিত হওয়া দরকার । কর্মীকে দেখেই আসলে লোকেরা আন্দোলন ও সংগঠন সম্পর্কে তাদের মতামত গড়ে তোলে । কর্মীর বৈশিষ্ট্য দেখেই তারা সংগঠনের বৈশিষ্ট্য বুঝতে চেষ্টা করে ।
কর্মী অত্যন্ত সাধারণ ব্যক্তি হলেও তার মাঝে যদি আদর্শের সঠিক প্রতিফলন ঘটে তাহলে তার ব্যক্তিত্ব অন্যদের ওপর প্রভাব রাখতে সক্ষম হয় । ব্যক্তি চরিত্রকেই মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে হবে । এই জন্য প্রয়োজন কর্মীর সব মহলে যাতায়াত এবং পরিচিতি অর্জন । এ সম্পর্কে পরিচালক কর্মীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন ।
(২২)কর্মীকে সুবক্তারূপে গড়ন
এমন হতে পারে যে, এলাকার অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত অথবা অল্প শিক্ষিত । সেই কারণে ইসলামী সাহিত্য পড়া অথবা পড়ে তার মর্ম উপলব্ধি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় । অথচ তাদেরকে আদর্শিক জ্ঞান দিতেই হবে । বক্তৃতা ভাষণের মাধ্যমেই এই কাজ করতে হবে । তাই কর্মীকে সুবক্তা হতে হবে । আকর্ষণীয়ভাবে নিজের বক্তব্য লোকদের সামনে পেশ করার যোগ্যতা কর্মীর থাকা চাই । শ্রোতাদের সমঝশক্তির সাথে সংগতিশীল হতে হবে তার ভাষার মান । একজন ইসলামী কর্মীর সুবক্তা হওয়ার মানে এই নয় যে তার বাচনভঙ্গি ভালো । বাচন ভঙ্গির গুরুত্ব অবশ্যি আছে । তবে তার বক্তৃতায় আল কুরআন ও আল হাদীসের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাণীও উদ্ধৃত হওয়ার দরকার । পরিচালককে মনে রাখতে হবে যে তিনি যত বেশি সংখ্যক সুবক্তা তৈরি করতে পারবেন তাঁর সংগঠনের কাজ ততো বেশি গণ মানুষের স্থান করে নিতে সক্ষম হবে । যেই সুধারণা থাকে তা শিথিল হতে শুরু করে । সেই জন্য এই জতীয় বিষয়ে স্বল্পতম সময়র মধ্যে সংগঠনের বক্তব্য জেনে নিয়ে তা কর্মীকে জানিয়ে দেয়া পরিচালকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।
(২৬)নিষ্ক্রিয় কর্মীর সাথে যথাশীঘ্র যোগাযোগ স্থাপন
কোন করণে মনে খটকা সৃষ্টি হওয়া, কারো আচরণে রুষ্ট হওয়া, কোন প্রপাগাণ্ডায় প্রভাবিত হওয়া, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ভীত হওয়া, কোন অবাঞ্ছিত ঘটনায় ব্যথিত হওয়া, নিজের জীবনে কোন অপরাধ ঘটে যাওয়া, ব্যক্তিগত জীবনে কোন বড়ো রকমের সমস্যা সৃষ্টি হওয়া-এ ধরনের কোন কারণে একজন কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে । পরিচালক কোন কর্মীর এমন অবস্থার কথা শুনলেই শিগগির তার সাথে দেখা করে আসল কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন এবং এই অবস্থায় করণীয় বিষয়ে আল কুরআন এবং আল হাদিসের শিক্ষা সম্পর্কে তাকে ওয়াকিবহাল করে তুলবেন । বারবার সাহচর্য দান করে তাকে পূর্ব মানে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা চালাবেন । সংগঠনের একজন কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে সংগঠন নামক দেহের একটা অংশ অবশ হয়ে যাওয়া । অন্যদিকে ব্যক্তির জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক । এই দুর্ভাগ্যের হাত থেকে কর্মীকে উদ্ধার করার জন্য দরদ ভরা মন নিয়ে চেষ্টা চালাবেন পরিচালক ।
(২৭)পরামর্শ শ্রবণ
ইউনিট ভিত্তিক কাজের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরী হলে কর্মীদের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন । প্রত্যেক কর্মীর মাথাতেই কিছু চিন্তা থাকে । সবগুলো চিন্তা বিনিময় করে সংগঠনের ঐতিহ্যের আলোকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় । সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে কর্মীর কাছে পরামর্শ চাইলে সে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করে । এভাবে তার চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে । আর সংগঠনের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারলে সংগঠনের সাথে তার মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক আরো গভীর হয় ।
(২৮)অগ্রসর কর্মীকে সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ দান
অগ্রসর কর্মীকে মিটিং পরিচালনা, পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নথিপত্র সংরক্ষণ, হিসাব সংরক্ষণ ইত্যাদি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে তুলতে হবে । সম্ভব হলে তার পরিচালনাধীন নতুন কর্মী ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে ।
ইসলামী সংগঠনের কর্মীদের পরীক্ষা
ইসলামী সংগঠন কেবল নিষ্ঠাবান নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিরই অবস্থান করুক এটাই আল্লাহ চান । যারা নির্ভেজাল ঈমানের অধিকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ অর্জনকে কেন্দ্র করেই যাদের জীবনের সামগ্রীক তৎপরতা পরিচালিত, তারাই ইসলামী সংগঠনের পবিত্র অঙ্গনে বিচরণ করার উপযুক্ত ব্যক্তি । সমাজ অঙ্গনে ইসলাম বহির্ভূত ব্যক্তিদের প্রতিপত্তি ও ধন সম্পদের প্রাচুর্য দেখে যাদের মন-মানসিকতা প্রভাবিত হয় না ইসলামী সংগঠনের পবিত্র অঙ্গন তাদেরই জন্য । ব্যাধিগ্রস্ত কোন ব্যক্তি ইসলামী সংগঠনের চৌহদ্দীতে প্রবেশ করলেও ব্যাধি দুর না হলে কোন না কোন এক সময়ে তাকে সংগঠন চ্যুত হতেই হয় । ইসলামী সংগঠনের হিপাযাতের জন্য ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রভাব থেকে একে মুক্ত করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমন এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করেছেন যার কার্যকারিতা অতুলনীয় । এই প্রক্রিয়াকে ইসলামী সংগঠনের রক্ষাকবচ বলা যায় ।
 ইসলামী সংগঠনে যারা এলো তাদের মধ্যে কে ভেজালযুক্ত আর কে ভেজালমুক্ত তা স্পষ্ট করে তোলার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই সংগঠনে চলার পথ সুগম রাখেননি । এই পথ অতি দুর্গম । এই পথে আছে অনেক চড়াই উৎরাই  ।
যারা ভেজালযুক্ত দুর্গম পথের বাঁকে কাফিলা থেকে ছিটকে পড়ে যারা ভেজালমুক্ত তারা পথের দুর্গমতা উপেক্ষা করে দৃঢ় পদে সামনে এগুতে থাকে ।
 ইসলামী সংগঠনের কর্মীদেরকে প্রতিকূলতার মধ্যে ফেলে দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরীক্ষা করেন । এই পরীক্ষায় কেউ ফেল করে । কেউ আবার কৃতকার্য হয়ে উন্নত মানের মুমিনে পরিণত হয় । আল্লাহর ওপর যারা পরিপূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল করতে পারে না প্রতিকূল পরিবেশে তারা বিহ্বল হয়ে পড়ে । এদের সংখ্যাধিক্যের চাপ থেকে আল্লাহ সংগঠকে হিফাযাত করে থাকেন ।
তদুপরি যেই ব্যক্তি জীবনভর আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্যই তার সময়, শারীরিক শক্তি, চৈন্তিক যোগ্যতা এবং ধন সম্পদ ব্যয় করে তাকে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত-জন্নাত দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন । যাকে তিনি জান্নাত দেবেন সে যে সত্যিকারভাবেই তা পাবার উপযুক্ত তার প্রমাণ সে রেখে যাক, এটিই আল্লাহর অভিপ্রায় । পরীক্ষার অন্যতম কারণ এটাও । কে ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী আর কে সত্যবাদী নয়, কে জিহাদে আত্মনিয়োগ করতে প্রস্তুত আর কে প্রস্তুত নয় তা তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা এমনিতেই জানেন । কোন ব্যক্তির মনের আসল অবস্থা জানার জন্য তাঁকে পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর নির্ভর করতে হবে ব্যাপারটি মোটেই এমন নয় ।
আসলে আশশাহাদাহ বা সাক্ষ্যদানর দায়িত্ব কে পালন করছে আর কে পালন করছে না তা দুনিয়াবাসীর নিকট সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করাই আল্লাহর ইচ্ছা । আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণকারী যেই কোন ব্যক্তির এটা অবশ্য কর্তব্য যে সে তার কথাবার্তা ও কাজকর্মের মাধ্যমে সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে এবং কারো আল্লাহর নাফারমানিমূলক নির্দেশ পালন ও শাসন কর্তৃত্ব গ্রহণ তার পক্ষে সম্ভব নয় ।
যেই ব্যক্তি কেবল মৌখিক সাক্ষ্য দেয় অথচ তার অন্তরে খাঁটি ঈমান থাকে না তার জান্নাত পাওয়ার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না । তদুপরি মেকী ঈমান নিয়ে তার ইসলামী সংগঠনে অবস্থানও আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় নয় ।
ঝড় এলে যেভাবে গাছের শুকনো পাতা ঝরে পড়ে, চলার পথে সংকট বা বিপদ এসে পড়লে তারাও সেভাবে ঝরে পড়ে । ঝড় তুফানের ঝাপটা সহ্য করে যে পাতাগুলো টিকে থাকে সেগুলো জীবন্ত ও মজবুত । তেমনিভাবে বিপদ সংকটে ঝাপটা সহ্য করে যারা ইসলামী সংগঠনে টিকে থাকে তারা নিষ্ঠাবান মুমিন ।
বিপদ-সংকট তাই ইসলামী সংগঠনকে দুর্বল করে না, বরং তার মান উন্নত করে । ইসলামী সংগঠনের মান সংরক্ষণের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলাইমীনই এই বিজ্ঞান সম্মত প্রক্রিয়া প্রবর্তন করেছেন ।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম