ইসলামী সংগঠনের পরামর্শ
পরামর্শ নেয়া ও পরামর্শ দেয়া ইসলামী সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । আল্লাহ রব্বুল আলামীন সামষ্টিক কাজ কর্মে আসহাবে কিরামের সাথে পরামর্শ করার জন্য রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন :
আরবী
“কাজ-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর । কোন বিষয়ে তোমার মত সুদৃঢ় হয়ে গেলে আল্লাহর ওপর ভরসা কর ।” - আলে ইমরান : ১৫৯
মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,
আরবী
তাদর সামষ্টিক কাজ-কর্মে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সমপন্ন হয় ।”
-আশ শুরা : ৩৮
যেই বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির সুভিধা-অসুবিধা রয়েছে সেই বিষয়ে কোন একজনের এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এক ধরণের বাড়াবাড়ি ।কোন বিষয়ে যতো মানুষের স্বার্থ জড়িত আছে ততো মানুষের সাথে পরামর্শ করাই বাঞ্ছনীয় । সংশ্লিষ্ট লোকের সংখ্যা যদি খুব বেশি হয় তাহলে তদের প্রতিনিধি স্থানীয় ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক । কোন মানুষ সামষ্টিক ব্যাপারগুলোতে স্বেচ্ছাচারিতা চালানোর চেষ্টা হয়তো এই জন্য করে যে, সে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের অধিকার হরন করতে চায় অথবা সে নিজেকে বড় এবং অন্যকে ছোট মনে করে । এই দু,ধরণের মনোভাবই খারাপ । মুমিন চরিত্রে এই ধরনের মনোভাব যেন প্রবেশ করতে না পারে তারই জন্য ইসলাম পারস্পরিক জীবনের অপরিহার্য শর্ত বানিয়ে দিয়েছে । যেসব বিষয় অপরের স্বার্থ ও অধিকারের সাথে জড়িত সেগুলোর ফয়সালা করা অতি বড় দায়িত্ব । আখিরাতে জওয়াবদিহির অনুভূতি যার আছে তিনি এমন বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা তদের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করার চেষ্টা অবশ্যই করবেন যাতে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে অসতর্কভাবে কোন ত্রুটি ঘটলেও কোন এক ব্যক্তির উপর তার দায় দায়িত্ব না পড়ে ।
মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে লোকেরা পূর্ণ স্বাধীন হতে হবে । মানুষের মুখ বন্দ করে তাদের হত-পা বেঁধে তাদেরকে অন্ধকারে রেখে সামষ্টিক ব্যাপারসমূহ পরিচালনা করা বড়ো রকমের যুলম ।
ঐকমতের ভিত্তিতে যেই পরামর্শ দেয়া হয় অথবা যা অধিকাংশ ব্যক্তির মত হয় তা মেনে নেয়াই বাঞ্ছনীয় । কেননা কোন ব্যক্তি যদি সকলের মত পাওয়ার পর স্বেচ্ছাচারিতা অবলম্বন করে তাহলে পরামর্শ করার নীতি কার্যত: অর্থহীন হয়ে পড়ে । কেবল পরামর্শ নিলেই হয় না । পরামর্শের পর সর্বসম্মতভাবে অথবা অধিকাংশের মতের ভিত্তিতে যেই সিদ্ধান্ত হবে সেই অনুযায়ী ব্যাপারসমূহ সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন ।
আরো একটি মৌলিক কথা মনে রাখা দরকার । মুসলিমদের ব্যাপারসমুহ নিস্পন্ন করার ক্ষেত্রে মাজলিসে শুরা নিরঙ্কুস ক্ষমতার অধিকারী নয় । পরামর্শ দীন ইসলামের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই হতে হবে । মুসলীমগণ শারিয়াহের ব্যাপারে পরামর্শ করবে কোন বিধানের সঠিক তাৎপর্য বুঝার জন্য এবং কার্যকর করার লক্ষে সর্বোত্তম পন্থা নির্ধারণ করার জন্য । যেসব বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চূড়ান্ত ফয়সালা দিয়েছেন সেসব বিষয়ে মাযলিসে শুরা স্বাধীনভাবে কোন নতুন ফয়সালা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে পারে না ।
ইসলামী সংগঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
মাজলিসে শুরা বা পরামর্শ সভার সদস্যগণ মুক্ত মন নিয়ে সভায় সমবেত হবেন । তাঁরা পূর্ব প্রতিষ্ঠিত কোন ধারণা নিয়ে সভায় আসবেন না ।
পরামর্শ দাতাগণ নিজেদের ঈমান, ইলম ও নিরপেক্ষ চিন্তা-ভাবনা নিয়ে নিজেদের মত ব্যক্ত করবেন । কোন লোভে পড়ে, কোন ভয়ে ভীত হয়ে অথবা কোন্দলে পড়ে নিজের প্রকৃত মনোভাবের বিপরীত মত ব্যক্ত করবেন না । একে অপরের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনবেন এবং বক্তব্যের সঠিক অর্থ বুঝবার চেষ্টা করবেন ।
প্রত্যেক সদস্য নিজের অভিমত নি:সংকোচে ব্যক্ত করবেন । প্রত্যেক সদস্যই অধিকার উত্তম অভিমতের মুকাবিলায় নিজের অভিমত কুরবানী করতে প্রস্তুত থাকবেন ।
প্রত্যেকেই একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের দিকে এগুবার চেষ্টা চালাবেন ।
কখনো যদি এমনটি হয়ে যায় যে, মাজলিসে শুরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছে না, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অভিমতকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বুনিয়াদ বানাতে হবে ।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে যারা দ্বিমত পোষণ করবেন তারাও মাজলিসে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবেন এবং কোনভাবেই তাঁদের দ্বি-মত পোষণের কথা মাজলিসের বাইরের কাউকে জানাবেন না ।
ভিন্নমত পোষণকারীগণ আমীরের মাধ্যমে পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করার জন্য মাজালিসে শুরার অধিকাংশ সদস্য সিদ্ধান্ত বহাল রাখার পক্ষে মত ব্যক্ত করলে ভিন্ন মত পোষণকারীগণকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজেই মন দিতে হবে ।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের আলচনা এমন পর্যায়েও পৌছাতে পারে যখন আমীর কিছুতেই মাজলিসে শুরার অধিকাংশ সদস্যের মতের সাথে একমত হতে পারেন না । এমতাবস্থায় সিদ্ধান্ত মুলতবী রেখে আমীর বিষয়টি সদস্য মণ্ডলীর নিকট পেশ করবেন ।
সদস্য মণ্ডলী উভয় মত বিবেচনা করে যেটাকে অধিকতর উত্তম ও কল্যাণকর বলে রায় দেবেন আমীর এবং মাজলিসে শুরার সদস্যগণ বিনা দ্বিধায় তা মেনে নেবেন ।
ইসলামী সংগঠনে ইহতিসাব
এই যুগে কোন নবী নেই । নবীর গড়া কোন মানুষও নেই ।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদেরকেই আজ ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালাতে হচ্ছে ঈমানের দাবী পুরণের জন্য । কিন্তু আমাদের জীবনে আছে ভুলভ্রান্তি । কোন মুমিন সারা জীবন ভুল-ভ্রান্তির আবর্জনায় গড়াগড়ি দিতে থাক, এটা আল্লাহ চান না । তাই মুমিনদেরকে তাদের চিন্তা-ভাবনা, কথাবার্তা, লেন দেন ও যাবতীয় কাজ কর্মের তাযকিয়া কাজে মনোযোগী হতে উৎসাহিত করেছেন ।
মুমিনগণ যাতে একে অপরের ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দেয় তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
আরবী
“মুমিন মুমিনের আয়না ।” -সুনানু আবী দাউদ
আয়না যেভাবে একজন ব্যক্তিকে তার সাজগোছে কোথায় কোন ত্রুটি আছে তা দেখিয়ে দেয়, একজন মুমিনও সেভাবে আরেকজন মুমিনের জীবনে কোথায় কী ত্রুটি আছে তা দেখিয়ে দেবে ।
সাধারণত: অবচেতনভাবেই মানুষ ভুল করে । কেউ যদি এই ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তবেই সে সচেতন হয়ে তার জীবন থেকে ভুল-ভ্রান্তি দূর করার পদক্ষেপ নিতে পারে । একে অপরের ভুল ভ্রান্তি দেখিয়ে দেয়ার এই প্রক্রিয়ারই নাম ইহতিসাব ।
ভুল দেখিয়ে দেয়ার একটা বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি আছে । সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই জরুরী । তা না হলে হিতে বিপরীত হবার সমূহ আশঙ্কা ।ইহতিসাব ব্যক্তিগতভাবে
করাই বাঞ্ছনীয় । ব্যক্তিগতভাবে ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দেয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি নিজেকে শুধরাতে উদ্যোগী না হয় তাহলে সামষ্টিক ফোরামে আনা যাবে ।
ইহতিসাবের আগে ব্যক্তির মানসিক অবস্থা জেনে নেয়া বাঞ্ছনীয় । কঠিন সমস্যা-পীড়িত মানুষ কোন প্রকারের সমালোচনা বরদাশত করতে পারে না অথবা যথার্ত মেজাজে সমালোচনা গ্রহণ করতে পারে না । সেই জন্য ব্যক্তির মানসিক অবস্থা যাচাই করে নেয়া দরকার । ইহতিসাবের ভাষা হবে মোলায়েম । ভাষায় কোন তেজ থাকবে না । ক্ষোভের অভিব্যক্তি ঘটবে না ।
ইহতিসাব যে করবে তার চেহারা ও ভাব-সাবে রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ পাবে না । সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন বুঝতে সক্ষম হয় যে তার ত্রুটি দেখিয়ে দেয়ার লক্ষ্য, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয় বরং তার জীবনকে সুন্দর করা ।
ইহতিসাব মাথা পেতে নেয়া নিশ্চয়ই বাহাদুরি কাজ । কোন কাপুরুষের পক্ষে ইহতিসাবের মুকাবিলায় মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভবপর নয় । কিন্তু ইসলামী সংগঠনের কর্মীগণ এই ধরনের কাপুরুষতার শিকারে পরিণত হবেন, এটা কাম্য নয় । তাই ইসলামী সংগঠনের প্রতিটি কর্মীকে ইহতিসাবের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে । ইহতিসাবের কল্যাণকারিতা থেকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করতে হবে এবং সত্যকে অকাতরে মেনে নেয়ার মনোবৃত্তি রাখতে হবে ।
ইহাতিসাবের কল্যাণকারিতা সম্পর্কে যেই ব্যক্তি সচেতন সেই ব্যক্তিই ইহতিসাবকে খোশ আমদেদ জানাতে পারে । এমন ব্যক্তির কাছে থেকে ইহতিসাবের যে জবাব আসবে তা সংগঠনের সুস্থতা অক্ষুন্ন রাখবে এবং সংগঠনের কর্মীগণ আয়নার ভূমিকা পালন করার হিম্মত রাখতে পারবে ।
পরামর্শ নেয়া ও পরামর্শ দেয়া ইসলামী সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । আল্লাহ রব্বুল আলামীন সামষ্টিক কাজ কর্মে আসহাবে কিরামের সাথে পরামর্শ করার জন্য রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন :
আরবী
“কাজ-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর । কোন বিষয়ে তোমার মত সুদৃঢ় হয়ে গেলে আল্লাহর ওপর ভরসা কর ।” - আলে ইমরান : ১৫৯
মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,
আরবী
তাদর সামষ্টিক কাজ-কর্মে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সমপন্ন হয় ।”
-আশ শুরা : ৩৮
যেই বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির সুভিধা-অসুবিধা রয়েছে সেই বিষয়ে কোন একজনের এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এক ধরণের বাড়াবাড়ি ।কোন বিষয়ে যতো মানুষের স্বার্থ জড়িত আছে ততো মানুষের সাথে পরামর্শ করাই বাঞ্ছনীয় । সংশ্লিষ্ট লোকের সংখ্যা যদি খুব বেশি হয় তাহলে তদের প্রতিনিধি স্থানীয় ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক । কোন মানুষ সামষ্টিক ব্যাপারগুলোতে স্বেচ্ছাচারিতা চালানোর চেষ্টা হয়তো এই জন্য করে যে, সে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের অধিকার হরন করতে চায় অথবা সে নিজেকে বড় এবং অন্যকে ছোট মনে করে । এই দু,ধরণের মনোভাবই খারাপ । মুমিন চরিত্রে এই ধরনের মনোভাব যেন প্রবেশ করতে না পারে তারই জন্য ইসলাম পারস্পরিক জীবনের অপরিহার্য শর্ত বানিয়ে দিয়েছে । যেসব বিষয় অপরের স্বার্থ ও অধিকারের সাথে জড়িত সেগুলোর ফয়সালা করা অতি বড় দায়িত্ব । আখিরাতে জওয়াবদিহির অনুভূতি যার আছে তিনি এমন বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা তদের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করার চেষ্টা অবশ্যই করবেন যাতে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে অসতর্কভাবে কোন ত্রুটি ঘটলেও কোন এক ব্যক্তির উপর তার দায় দায়িত্ব না পড়ে ।
মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে লোকেরা পূর্ণ স্বাধীন হতে হবে । মানুষের মুখ বন্দ করে তাদের হত-পা বেঁধে তাদেরকে অন্ধকারে রেখে সামষ্টিক ব্যাপারসমূহ পরিচালনা করা বড়ো রকমের যুলম ।
ঐকমতের ভিত্তিতে যেই পরামর্শ দেয়া হয় অথবা যা অধিকাংশ ব্যক্তির মত হয় তা মেনে নেয়াই বাঞ্ছনীয় । কেননা কোন ব্যক্তি যদি সকলের মত পাওয়ার পর স্বেচ্ছাচারিতা অবলম্বন করে তাহলে পরামর্শ করার নীতি কার্যত: অর্থহীন হয়ে পড়ে । কেবল পরামর্শ নিলেই হয় না । পরামর্শের পর সর্বসম্মতভাবে অথবা অধিকাংশের মতের ভিত্তিতে যেই সিদ্ধান্ত হবে সেই অনুযায়ী ব্যাপারসমূহ সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন ।
আরো একটি মৌলিক কথা মনে রাখা দরকার । মুসলিমদের ব্যাপারসমুহ নিস্পন্ন করার ক্ষেত্রে মাজলিসে শুরা নিরঙ্কুস ক্ষমতার অধিকারী নয় । পরামর্শ দীন ইসলামের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই হতে হবে । মুসলীমগণ শারিয়াহের ব্যাপারে পরামর্শ করবে কোন বিধানের সঠিক তাৎপর্য বুঝার জন্য এবং কার্যকর করার লক্ষে সর্বোত্তম পন্থা নির্ধারণ করার জন্য । যেসব বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চূড়ান্ত ফয়সালা দিয়েছেন সেসব বিষয়ে মাযলিসে শুরা স্বাধীনভাবে কোন নতুন ফয়সালা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে পারে না ।
ইসলামী সংগঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
মাজলিসে শুরা বা পরামর্শ সভার সদস্যগণ মুক্ত মন নিয়ে সভায় সমবেত হবেন । তাঁরা পূর্ব প্রতিষ্ঠিত কোন ধারণা নিয়ে সভায় আসবেন না ।
পরামর্শ দাতাগণ নিজেদের ঈমান, ইলম ও নিরপেক্ষ চিন্তা-ভাবনা নিয়ে নিজেদের মত ব্যক্ত করবেন । কোন লোভে পড়ে, কোন ভয়ে ভীত হয়ে অথবা কোন্দলে পড়ে নিজের প্রকৃত মনোভাবের বিপরীত মত ব্যক্ত করবেন না । একে অপরের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনবেন এবং বক্তব্যের সঠিক অর্থ বুঝবার চেষ্টা করবেন ।
প্রত্যেক সদস্য নিজের অভিমত নি:সংকোচে ব্যক্ত করবেন । প্রত্যেক সদস্যই অধিকার উত্তম অভিমতের মুকাবিলায় নিজের অভিমত কুরবানী করতে প্রস্তুত থাকবেন ।
প্রত্যেকেই একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের দিকে এগুবার চেষ্টা চালাবেন ।
কখনো যদি এমনটি হয়ে যায় যে, মাজলিসে শুরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছে না, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অভিমতকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বুনিয়াদ বানাতে হবে ।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে যারা দ্বিমত পোষণ করবেন তারাও মাজলিসে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবেন এবং কোনভাবেই তাঁদের দ্বি-মত পোষণের কথা মাজলিসের বাইরের কাউকে জানাবেন না ।
ভিন্নমত পোষণকারীগণ আমীরের মাধ্যমে পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করার জন্য মাজালিসে শুরার অধিকাংশ সদস্য সিদ্ধান্ত বহাল রাখার পক্ষে মত ব্যক্ত করলে ভিন্ন মত পোষণকারীগণকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজেই মন দিতে হবে ।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের আলচনা এমন পর্যায়েও পৌছাতে পারে যখন আমীর কিছুতেই মাজলিসে শুরার অধিকাংশ সদস্যের মতের সাথে একমত হতে পারেন না । এমতাবস্থায় সিদ্ধান্ত মুলতবী রেখে আমীর বিষয়টি সদস্য মণ্ডলীর নিকট পেশ করবেন ।
সদস্য মণ্ডলী উভয় মত বিবেচনা করে যেটাকে অধিকতর উত্তম ও কল্যাণকর বলে রায় দেবেন আমীর এবং মাজলিসে শুরার সদস্যগণ বিনা দ্বিধায় তা মেনে নেবেন ।
ইসলামী সংগঠনে ইহতিসাব
এই যুগে কোন নবী নেই । নবীর গড়া কোন মানুষও নেই ।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদেরকেই আজ ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালাতে হচ্ছে ঈমানের দাবী পুরণের জন্য । কিন্তু আমাদের জীবনে আছে ভুলভ্রান্তি । কোন মুমিন সারা জীবন ভুল-ভ্রান্তির আবর্জনায় গড়াগড়ি দিতে থাক, এটা আল্লাহ চান না । তাই মুমিনদেরকে তাদের চিন্তা-ভাবনা, কথাবার্তা, লেন দেন ও যাবতীয় কাজ কর্মের তাযকিয়া কাজে মনোযোগী হতে উৎসাহিত করেছেন ।
মুমিনগণ যাতে একে অপরের ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দেয় তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
আরবী
“মুমিন মুমিনের আয়না ।” -সুনানু আবী দাউদ
আয়না যেভাবে একজন ব্যক্তিকে তার সাজগোছে কোথায় কোন ত্রুটি আছে তা দেখিয়ে দেয়, একজন মুমিনও সেভাবে আরেকজন মুমিনের জীবনে কোথায় কী ত্রুটি আছে তা দেখিয়ে দেবে ।
সাধারণত: অবচেতনভাবেই মানুষ ভুল করে । কেউ যদি এই ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তবেই সে সচেতন হয়ে তার জীবন থেকে ভুল-ভ্রান্তি দূর করার পদক্ষেপ নিতে পারে । একে অপরের ভুল ভ্রান্তি দেখিয়ে দেয়ার এই প্রক্রিয়ারই নাম ইহতিসাব ।
ভুল দেখিয়ে দেয়ার একটা বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি আছে । সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই জরুরী । তা না হলে হিতে বিপরীত হবার সমূহ আশঙ্কা ।ইহতিসাব ব্যক্তিগতভাবে
করাই বাঞ্ছনীয় । ব্যক্তিগতভাবে ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দেয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি নিজেকে শুধরাতে উদ্যোগী না হয় তাহলে সামষ্টিক ফোরামে আনা যাবে ।
ইহতিসাবের আগে ব্যক্তির মানসিক অবস্থা জেনে নেয়া বাঞ্ছনীয় । কঠিন সমস্যা-পীড়িত মানুষ কোন প্রকারের সমালোচনা বরদাশত করতে পারে না অথবা যথার্ত মেজাজে সমালোচনা গ্রহণ করতে পারে না । সেই জন্য ব্যক্তির মানসিক অবস্থা যাচাই করে নেয়া দরকার । ইহতিসাবের ভাষা হবে মোলায়েম । ভাষায় কোন তেজ থাকবে না । ক্ষোভের অভিব্যক্তি ঘটবে না ।
ইহতিসাব যে করবে তার চেহারা ও ভাব-সাবে রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ পাবে না । সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন বুঝতে সক্ষম হয় যে তার ত্রুটি দেখিয়ে দেয়ার লক্ষ্য, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয় বরং তার জীবনকে সুন্দর করা ।
ইহতিসাব মাথা পেতে নেয়া নিশ্চয়ই বাহাদুরি কাজ । কোন কাপুরুষের পক্ষে ইহতিসাবের মুকাবিলায় মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভবপর নয় । কিন্তু ইসলামী সংগঠনের কর্মীগণ এই ধরনের কাপুরুষতার শিকারে পরিণত হবেন, এটা কাম্য নয় । তাই ইসলামী সংগঠনের প্রতিটি কর্মীকে ইহতিসাবের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে । ইহতিসাবের কল্যাণকারিতা থেকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করতে হবে এবং সত্যকে অকাতরে মেনে নেয়ার মনোবৃত্তি রাখতে হবে ।
ইহাতিসাবের কল্যাণকারিতা সম্পর্কে যেই ব্যক্তি সচেতন সেই ব্যক্তিই ইহতিসাবকে খোশ আমদেদ জানাতে পারে । এমন ব্যক্তির কাছে থেকে ইহতিসাবের যে জবাব আসবে তা সংগঠনের সুস্থতা অক্ষুন্ন রাখবে এবং সংগঠনের কর্মীগণ আয়নার ভূমিকা পালন করার হিম্মত রাখতে পারবে ।
0 comments: