এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব কোন কালেই কেউ ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করতে সক্ষম হবে না। কেউ এরকম কোন প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করে থাকলে তিনি নিঃসন্দেহে বোকার স্বর্গে বাস করছেন! আর এ জন্যই আগের প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল: এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস একটি অন্ধ-বিশ্বাস কিনা। জোরালো কিছু যুক্তির সাহায্যে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসকে কোন ভাবেই অন্ধ-বিশ্বাস বলা যেতে পারে না। পাশাপাশি এও দেখিয়ে দেয়া হয়েছে যে, স্রষ্টার অনস্তিত্বে বিশ্বাসই প্রকৃতপক্ষে একটি অযৌক্তিক, অমানবিক, ও অন্ধ-বিশ্বাস। এই লেখাতে নাস্তিকতার স্বপক্ষের বহুল প্রচলিত যুক্তিগুলোকে খণ্ডন করা হবে।
যুক্তি-১: স্রষ্টার পিতা – (ক) ঘড়ি বানায় ঘড়ির কারিগর। ঘড়ির কারিগরের পিতা আছে। (খ) মহাবিশ্ব বানিয়েছে মহাবিশ্বের কারিগর। মহাবিশ্বের কারিগরেও পিতা থাকতে হবে। (গ) অতএব, ঘড়ির যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেই কারণে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলেও কিছু থাকতে পারে না।
যুক্তি খণ্ডন: প্রথমত, এই মহাবিশ্বের কারিগরের পিতা থাকলে সেই পিতাই হবেন এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার। ফলে সমস্যাটা কোথায় তা তো বোঝা গেল না! দ্বিতীয়ত, সবকিছুরই যে পিতা-মাতা বা স্রষ্টা থাকতেই হবে – এই ধরণের উদ্ভট ও অবৈজ্ঞানিক কথা কে বলেছে? সংজ্ঞা অনুযায়ী স্রষ্টার কোন পিতা-মাতা বা স্রষ্টা থাকতে পারে না। এই ধরণের যুক্তি নিতান্তই শিশুসুলভ ও হাস্যকর শুনায়। যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি একটি অসম্ভাব্যতা। কারণ সবকিছুরই পিতা-মাতা বা স্রষ্টা খুঁজতে গেলে অসীম পর্যন্ত যেতে হবে, যেটি বাস্তবে অসম্ভব। তৃতীয়ত, সবকিছুরই স্রষ্টা থাকতে হলে এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের কোন অস্তিত্বই থাকতো না। কেননা সেক্ষেত্রে পরের স্রষ্টা তার আগের স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তো। যার ফলে কখনোই কিছু সৃষ্টি হতো না। চতুর্থত, বিবর্তনবাদ বা যে কোন ধর্মের আলোকে যদি পিতা-মাতা খুঁজতে খুঁজতে পেছন দিকে যাওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে যে প্রথম জীবের কোন পিতা-মাতা নেই। প্রথম জীব যদি কোন ভাবে একটি ঘড়ি বানাতে সক্ষম হতো তাহলে সেই ঘড়ির কারিগরের কোন পিতা-মাতা থাকতো না। অতএব, নাস্তিকদের এই যুক্তি একদমই ভুল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তো বটেই এমনকি বিবর্তনবাদ দৃষ্টিকোণ থেকেও নাস্তিকদের ‘স্রষ্টার পিতা’ যুক্তি কিন্তু সহজেই ধরাশায়ী হচ্ছে। পঞ্চমত, নাস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষই যদি স্বয়ম্ভু (?) হতে পারে তাহলে স্রষ্টার স্বয়ম্ভু হতে সমস্যা কোথায়! অতএব দেখা যাচ্ছে যে, তারা নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেরেছে। তাদের যুক্তি দিয়েই তাদেরকে খণ্ডন করা যাচ্ছে – যাকে বলে সেল্ফ্-রেফিউটেড।
যুক্তি-২: একাধিক স্রষ্টা – পৃথিবীতে বিভিন্ন জিনিসের যেহেতু আলাদা-আলাদা কারিগর আছে সেহেতু এই মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক বস্তুগুলোরও আলাদা-আলাদা স্রষ্টা বা কারিগর থাকতে হবে। অতএব, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলে কিছু থাকতে পারে না।
যুক্তি খণ্ডন: প্রথমত, এই যুক্তিও নিতান্তই শিশুসুলভ ও হাস্যকর। এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষই আছে যারা একই সাথে একাধিক জিনিসের কারিগর; একই সাথে একাধিক খেলায় পারদর্শী; একই সাথে একাধিক ভাষায় পারদর্শী; একই সাথে বিজ্ঞান, সাহিত্য, ও দর্শনে পারদর্শী। আর তা-ই যদি হয়, তাহলে সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের একজন মহান-কারিগরকে মেনে নিতে যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। একজন কারিগর সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের জন্য যথেষ্ট হলে একাধিক কারিগর কেন দরকার সেটা নাস্তিকদেরকেই ব্যাখ্যা করতে হবে। এমনকি অক্কামের রেজর ফর্মুলা দিয়েও নাস্তিকদের ‘একাধিক স্রষ্টা’ যুক্তিকে খণ্ডন করা যায়। সুতরাং এক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে যে, দর্শন শাস্ত্রের একটি ফর্মুলা নাস্তিকদের এই যুক্তিকে সহজেই খণ্ডন করলো। দ্বিতীয়ত, ‘কারিগর’ আর ‘স্রষ্টা’ আসলে এক জিনিস নয়। ‘কারিগর’ বলতে সাধারণত ‘কোন কিছু’ থেকে ‘অন্য কিছু’ তৈরীকারীকে বুঝানো হয়। যেমন কাঠ থেকে টেবিল-চেয়ার তৈরী। অন্যদিকে ‘স্রষ্টা’ বলতে মানুষের সাধ্যের বাহিরে কোন কিছু সৃষ্টিকারীকে বুঝানো হয়। যেমন: শূন্য থেকে প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব সৃষ্টি; জড় বস্তু থেকে প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সৃষ্টি; ইত্যাদি। তৃতীয়ত, একাধিক স্রষ্টার সম্ভাবনা থাকা মানে তো আর স্রষ্টা নাই হয়ে যাচ্ছে না! নাকি যাচ্ছে? তাহলে বারংবার কেন এই কু-যুক্তিকে টেনে নিয়ে আসা হয় তা মোটেও বোধগোম্য নহে। চতুর্থত, যারা একাধিক স্রষ্টার সম্ভাবনার কথা বলেন তাদের প্রথমে স্রষ্টার প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করেই তবে বিতর্কে নামা উচিত। কারণ এক্ষেত্রে স্রষ্টার প্রকৃত সংখ্যা এবং তারা একে-অপর থেকে স্বতন্ত্র কিনা – এরকম অনেক জটিল প্রশ্ন চলে আসবে। তাছাড়া কোন্ স্রষ্টা কী সৃষ্টি করেছেন – সেটাই বা কীভাবে জানা যাবে! এমনকি একাধিক স্রষ্টার ক্ষেত্রে কিন্তু ‘দুর্বল স্রষ্টা’ প্রশ্নও কিন্তু চলে আসবে! পঞ্চমত, ধরা যাক এই মহাবিশ্বের এক হাজার স্রষ্টা ধরে নিয়ে কেউ যুক্তি দিয়ে সবাইকে ‘নাই’ করে দিলেন। তারপর তিনি কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে আর কোন স্রষ্টা নাই? একাধিক স্রষ্টার ক্ষেত্রে নাস্তিকরাই কিন্তু মহা বিপদে পড়ে যাবেন। কারণ তারা কতগুলো স্রষ্টাকে যুক্তি দিয়ে ‘নাই’ করে দেবেন – সেটা তারা নিজেরাই জানেন না! অতএব ‘একাধিক স্রষ্টা’ একটি অখণ্ডনযোগ্য এবং সেই সাথে অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাস। সর্বোপরি, স্রষ্টার সংখ্যা এখানে কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। বরঞ্চ স্রষ্টা আছে কি নেই – সেটাই প্রাথমিক ও মূল বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত। কু-তর্কের খ্যাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় যে, এই মহাবিশ্বের সত্যি সত্যি একাধিক স্রষ্টা আছে – সেক্ষেত্রে কি নাস্তিকরা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে রাজি আছেন? উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে একাধিক স্রষ্টার প্রসঙ্গ নিয়ে আসাটা অযৌক্তিক এবং সেই সাথে বোকামীও বটে!
যুক্তি-৩: বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা – বিজ্ঞানীরা যেহেতু এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বকে বৈজ্ঞানিভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছেন সেহেতু এই মহাবিশ্বের কোন স্রষ্টা নাই বা থাকার দরকার নাই।
যুক্তি খণ্ডন: এই ধরণের ‘যুক্তি’ খণ্ডন করতে কারো মাথা ঘামানোর দরকার আছে বলে মনে হয় না। বিজ্ঞানীরা এই মহাবিশ্বকে বৈজ্ঞানিভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছেন কিনা – এই বিষয়টাকে একপাশে রেখেও যেটা বলা যায় সেটা হচ্ছে কোন একটি মেশিনের কার্যপ্রণালী বৈজ্ঞানিভাবে ব্যাখ্যা করতে পারা মানে এই নয় যে, সেই মেশিনের কোন নির্মাণকারী নেই! বরঞ্চ একটি মেশিনের কার্যপ্রণালী বৈজ্ঞানিভাবে ব্যাখ্যা করতে পারা মানে প্রমাণ হয় যে সেই মেশিনকে পরিকল্পিতভাবে তৈরী করা হয়েছে। কারণ উদ্দেশ্যহীনভাবে এমনি এমনি তৈরী হয়ে থাকলে সেই মেশিনকে গাণিতিক সূত্র ও বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেত না। এক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের কাছে ধরা!
যুক্তি-৪: The Argument from Evil – (1) Is God willing to prevent evil, but not able? Then he is not omnipotent. (2) Is he able, but not willing? Then he is malevolent. (3) Is he both able and willing? Then whence cometh evil? (4) Is he neither able nor willing? Then why call him God? (Epicurus)
যুক্তি খণ্ডন: প্রথমত, নাস্তিকরা স্রষ্টার বিশেষণগুলো কোথা থেকে পেলেন এবং ‘মন্দ’ বলতে তারা আসলে কী বোঝেন সেটা তাদেরকে আগে ব্যাখ্যা করতে হবে। অন্যথায় এভাবে ধরে নিয়ে কোন কিছু প্রমাণ করাকে দর্শন শাস্ত্রে বৃত্তাকার যুক্তি বলে। এমনও তো হতে পারে যে, ভাল ও মন্দ উভয়ই স্রষ্টার সৃষ্টি। সেক্ষেত্রে কিন্তু এই যুক্তির কোনই মূল্য থাকছে না। অনেকে ভাল ও মন্দ শব্দ দুটিকে আপেক্ষিকও বলে থাকেন। অর্থাৎ ভাল’র অনুপস্থিতিই হচ্ছে মন্দের উপস্থিতি এবং বিপরীতটাও সত্য। উদাহরণস্বরূপ, একটি চাকু যখন সার্জনের হাতে থাকে তখন সেটা ‘ভাল’, অথচ একই চাকু যখন খুনির হাতে থাকে তখন সেটা হয়ে যায় ‘মন্দ।’ ভাল ও মন্দকে যথাক্রমে আলো ও আঁধারের সাথেও তুলনা করা হয়। দ্বিতীয়ত, মন্দের উপস্থিতি যে কীভাবে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করে সেটাও তাদেরকেই ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ হরিণের কাছে বাঘ-সিংহ চরম মন্দ হিসেবে বিবেচিত হলেও বাঘ-সিংহের অনস্তিত্ব কিন্তু প্রমাণ হয় না! বরঞ্চ হরিণের কাছেই বাঘ-সিংহের অস্তিত্ব সবচেয়ে বেশী অনুভূত হয়! তৃতীয়ত, “The Argument from Evil” যুক্তির একটি পাল্টা যুক্তিও আছে। যেমন: (1) God does exist; (2) Gratuitous evils are incompatible with God; (3) Therefore, there are no gratuitous evils.
যুক্তি-৫: বুদ্ধিমত্তাশূন্য প্রকৃতি – প্রাকৃতিক বস্তুগুলোর উপর কারো হস্তক্ষেপ বা বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নেই। যেমন মানুষের চোখে যে সাদা স্পট আছে সেটি বুদ্ধিমত্তার চিহ্ণ বহন করে না। এমনকি মানুষের অ্যাপেন্ডিক্স এরও কোন কাজ নেই। অতএব, এই মহাবিশ্বের বুদ্ধিমান স্রষ্টা বলেও কিছু থাকতে পারে না।
যুক্তি খণ্ডন: এই ‘যুক্তি’ একই সাথে অবৈজ্ঞানিক ও হাস্যকরও বটে। প্রথমত, বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য সম্পূর্ণ মহাবিশ্বে বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব দেখানোর দরকার নেই। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু প্রমাণই যথেষ্ট। তাছাড়া ‘বুদ্ধিমান নকশা’ বললেই যে ‘শতভাগ বিশুদ্ধ নকশা’ হতে হবে, তারও কোন ধরা-বাধা নিয়ম নেই। এমনকি ‘বিশুদ্ধ’ শব্দের সার্বজনীন কোন সংজ্ঞাও নেই। দ্বিতীয়ত, ধরা যাক একদল জাপানিজ বিজ্ঞানী নাসা’র একটি ল্যাব ভিজিট করে সেই ল্যাবের মেশিনগুলোর গায়ে বা ভেতরে কিছু সূক্ষ্ম দোষত্রুটি বের করলেন। তার মানে কি প্রমাণ হবে যে, সেই মেশিনগুলোর কোন নির্মাণকারী নেই? এইটা আবার কেমন যুক্তি!
যুক্তি-৬: অলস স্রষ্টা – বিগ-ব্যাং এর অনেক পর যেহেতু জীব সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু স্রষ্টা থেকে থাকলেও সেই স্রষ্টাকে ‘অলস’ বলেই মনে হয়। আর ‘অলস স্রষ্টা’র কোন অস্তিত্ব থাকতে পারে না।
যুক্তি খণ্ডন: প্রথমত, স্রষ্টা প্রকৃতপক্ষে ‘অলস’ কিনা – তাতে আদৌ কিছু আসে যায় না। কারণ ‘অলস’ মানে কোন কিছুর ‘অনস্তিত্ব’ বুঝায় না! তাদের যুক্তিটা এরকম: (ক) রহিম একজন অলস ছেলে; (খ) সে প্রতিদিন অনেক দেরীতে ক্লাশে যায়; (গ) অতএব, রহিমের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নাই! অথবা: (ক) মিসেস জেনী সত্তর বছর বয়সে প্রথম সন্তান প্রসব করেছেন; (খ) অতএব, মিসেস জেনীর বাস্তবে কোন অস্তিত্ব থাকতে পারে না! দ্বিতীয়ত, স্রষ্টা যদি টাইম-স্পেস থেকে স্বাধীন হয় সেক্ষেত্রে ‘টাইম ইস্যু’ কিন্তু অবান্তর শুনায়।
যুক্তি-৭: স্রষ্টা একটি অতিরিক্ত শব্দ – ফিজিক্যাল ল্য দিয়েই যেখানে সবকিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব সেখানে স্রষ্টা একটি অতিরিক্ত শব্দ। (অক্কামের রেজর ফর্মুলা)
যুক্তি খণ্ডন: জ্বী না! শুধু ফিজিক্যাল ল্য দিয়ে এই মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করা যায় না। এক্ষেত্রে জিলিয়ন জিলিয়ন দৈব ঘটনাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। দিল্লী বহু দূর! তাছাড়া এটিকে বিজ্ঞানের ওজর দিয়ে প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়ারও প্রবণতা বলা হয়। প্রথমত, মানুষের তৈরী সসীম কিছু দিয়ে কোন ভাবেই অসীমকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, এই যুক্তি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য নয়। তৃতীয়ত, ফিজিক্যাল ল্য-ই বা কোথা থেকে ও কীভাবে এলো সে প্রশ্নে যেতেও তারা ইচ্ছুক নহে। তারা হয়ত মনে করেন সবকিছু আগে থেকেই রান্না-বান্না করা ছিল! তাছাড়া বিজ্ঞানের কোন সূত্রকে লঙ্ঘন না করে এই মহাবিশ্বকে কোন ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারলেই স্রষ্টা ‘নাই’ হয়ে যায় না! এটি বরং স্রষ্টা থাকারই সুস্পষ্ট একটি আলামত, যার ব্যাখ্যা উপরে দেয়া হয়েছে। কেননা ফিজিক্যাল ল্য দিয়ে দৈব ঘটনা ও উদ্দেশ্যহীন প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। স্রষ্টা থেকে থাকলে তিনিই তো ফিজিক্যাল ল্য থেকে শুরু করে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। ফলে তার সৃষ্ট ল্য দিয়ে তারই সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করতে পারার মধ্যে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। ব্যাপারটা বরং উল্টো হলেই নাস্তিকদের একটি ‘পয়েন্ট’ থাকতে পারতো। সুতরাং অক্কামের রেজর ফর্মুলা এক্ষেত্রে খাটছে না। অধিকন্তু, ফিজিক্যাল ল্য’র মধ্যে যেহেতু কোন সচেতনতা নেই সেহেতু ফিজিক্যাল ল্য নিজে কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। অচেতন বস্তু থেকে এমনি এমনি সচেতন কিছু সৃষ্টিও হয় না। অচেতন কোন বস্তুকে অসীম সময় ধরে ফেলে রাখলেও একমাত্র পাগল ছাড়া সেখানে থেকে রক্ত-হাড়-মাংসের দেহ বিশিষ্ট একটি সিংহ কেউ আশা করবে না! বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন ‘প্রকৃতি’র খোলসে নাস্তিকদের মাথা গোঁজার কারণটা বড়ই রহস্যপূর্ণ। তাছাড়া কেউ যদি বলেন নেচার-ই একটি অতিরিক্ত শব্দ, সেক্ষেত্রেই বা তারা কী জবাব দেবেন। প্রকৃতপক্ষে, অক্কামের রেজর ফর্মুলা অনুযায়ী, এই মহাবিশ্বের একক স্রষ্টাই সবচেয়ে সরল তত্ত্ব। কারণ এক্ষেত্রে জিলিয়ন জিলিয়ন দৈব ঘটনা এবং সেই সাথে বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রক্রিয়াকে বিবেচনায় নিতে হবে না।
যুক্তি-৮: The Argument from Multiverse – বিজ্ঞানীদের অনুমান অনুযায়ী এই মহাবিশ্বের মতো আরো অসংখ্য মহাবিশ্ব থাকতে পারে। অতএব, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা নেই বা থাকার কোন দরকার নাই।
যুক্তি খণ্ডন: বাহ্! দারুণ যুক্তি তো! মহাবিশ্বের সংখ্যা বেড়ে গেলে স্রষ্টা থাকার দরকার নাই! নাকি বিপরীতটাই সত্য হওয়ার কথা! তাদের যুক্তিটা এরকম: কোন ল্যাবে একটি মেশিন থাকলে তার নির্মাণকারী থাকার দরকার আছে কিন্তু অনেক মেশিন থাকলে সেই মেশিনগুলোর কোন নির্মাণকারী থাকার দরকার নাই! নাস্তিকদের এই ধরণের ‘জ্ঞানগর্ভ যুক্তি’ শুনে মাদ্রাসার ছাত্ররাও হেসে দেবে।
যুক্তি-৯: বিজ্ঞান ধীরে ধীরে একদিন সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করবেই (Science is working on it)!
যুক্তি খণ্ডন: সত্যি? যদিও অসম্ভব তথাপি কু-তর্কের খ্যাতিরে ধরেই নেয়া যাক যে কথাটি সত্য। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, যারা এমন আবেগী যুক্তি দেন তারা তো আর সেই সময় বেঁচে থাকবেন না! নাস্তিকদের ‘প্রকৃতি’ বড়ই বেরসিক! ফলে তারা কীভাবে জানবেন যে বিজ্ঞান একদিন সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছে? বিজ্ঞান যদি ব্যর্থ হয় তাহলে কী হবে! এমনও তো হতে পারে যে, বিজ্ঞানই একদিন স্রষ্টাকে আবিষ্কার করে ফেলেছে! তাহলে? আর বিজ্ঞান না থাকলে নাস্তিকরা কী বলতেন! অতএব, নাস্তিকরা কিন্তু অযৌক্তিক ও অন্ধ-বিশ্বাস নিয়েই পৃথিবীর বুক থেকে ‘চিরতরে’ বিদায় নিচ্ছেন!
স্রষ্টার প্রসঙ্গ এলে প্রফেসর ডকিন্স প্রায়ই বলেন, “Science is working on it!” কিন্তু বিজ্ঞানীরা কোথায় স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য কাজ করছেন সেটা কখনোই বলেন না! বিজ্ঞানের নামে অসচেতন লোকজনের মস্তক ধোলাই করার কৌশল আর-কি। প্রফেসর ডকিন্স কি বলতে চান যে, বিজ্ঞানীরা একদিন ল্যাব থেকে হঠাৎ করে বের হয়ে এসে ইউরেকা ইউরেকা করে বলবেন, “এই দেখ! বলেছিলাম না! এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলে কিছু নাই!” তাই কী? যাহোক, নাস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী বিজ্ঞান একদিন সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করবেই, যদিও বিজ্ঞান যে কীভাবে স্রষ্টার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করবে সেটা তারা জানেন না! তার মানে এটি তাদের একটি অন্ধ-বিশ্বাস।
যুক্তি-১০: এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা থেকে থাকলে সুনামি ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে কেন?
জবাব: প্রথমত, নাস্তিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করার কে! তারাই বা মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা করতে পারছেন না কেন! তাদেরই বা নিশ্চয়তা কোথায়! যে কোন মুহূর্তে তারাও তো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে পারেন! দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য তো নাস্তিকদের ‘প্রকৃতি গড’ দায়ী হওয়ার কথা! তারা তাদের গডকে দায়ী না করে অন্যান্য গডের উপর দোষ চাপিয়ে দেয় কেন? এ আবার কেমন ভণ্ডামী! তৃতীয়ত, পার্থিব জগৎ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব নয়। জগৎ পরিবর্তন করে একবার চেষ্টা করেই দেখুন না! সে সাহস আছে কী! চতুর্থত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ মারা যাওয়া মানে কোন ভাবেই প্রমাণ হয় না যে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা নাই। বরঞ্চ বিপরীতটাই সত্য হওয়ার কথা।
যুক্তি-১১: আমরা হোরাস, ওসিরিস, যেউস, থর, মিথরা, ভূত, ঘোড়ার ডিম, হাতির ডিম, পঙ্খিরার ঘোড়া, রামগরুদের ছানা, হাতুড়ী দেবতা, বাটালী দেবতা, জেহোভা, জিসাস, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, রাম, কৃষ্ণ, গনেশ, রাবণ, কালী, দূর্গা, মন্থরা, ঈশ্বর, ভগবান, আল্লাহ, ইউনিকর্ন, ইত্যাদি গডের মধ্যে কোনই পার্থক্য করি না। আমাদের কাছে এগুলো সবই মিথ। আমরা এগুলোর কোনটারই অনস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবো না! আস্তিকরাও এদের মধ্যে কারো অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবে না! অতএব, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলে কিছু নাই বা থাকতে পারে না। (This has been an oft-repeated ‘Argument’ of Richard Dawkins!)
জবাব: পাঠকদের বিনোদনের জন্য আপাতত এই ঘর খালি রাখা হলো! তবে এই সুযোগে আপনারা গুগল সার্চ দিয়ে হোরাস, ওসিরিস, যেউস, মিথরা, ভূত, জিসাস, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, রাম, কৃষ্ণ, গনেশ, রাবণ, কালী, দূর্গা, ইউনিকর্ন, ইত্যাদি গডের অস্তিত্ব স্বচক্ষে দেখে নিতে পারেন। নাস্তিকদের দাবি অনুযায়ী এই সকল গডের স্বপক্ষে নাকি কোনই প্রমাণ নাই! সারারাত ধরে রামায়ণ পড়ে সকালবেলা জিগায় সীতা কার দাদা!
যুক্তি-১২: এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অস্তিত্বের স্বপক্ষে সামান্যতমও কোন প্রমাণ নাই। আর প্রমাণ ছাড়া এই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে কোন কিছুতে কি বিশ্বাস করা যায়?
যুক্তি খণ্ডন: আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে এই পৃথিবীর সবাই এক-বাক্যে স্বীকার করবেন যে, কোন কিছুকে স্বচক্ষে দেখার চেয়ে বড় প্রমাণ আর দ্বিতীয়টি নেই। আর তা-ই যদি হয় তাহলে নাস্তিকদের একদম চোখের সামনে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও তার বিস্তারিত ঠিকানা সহ হাজির করা হচ্ছে। এখানে আর এইখানে থেকে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে স্বচক্ষে দেখুন। খুউব ভাল করে দেখুন। এই মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে নাস্তিকদের চোখের সামনে হাজির করেই তবে বিশ্বাস করার কথা বলা হচ্ছে। একদম চাক্ষুস প্রমাণ। অথচ নাস্তিকরা নাকি সারা দুনিয়া খুঁজে সামান্যতমও কোন প্রমাণ পায়নি! ব্যাপারটাকে বেশ রহস্যপূর্ণ বলেই মনে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে স্বচক্ষে দেখেও তারা এই গডে বিশ্বাস করে না কেন? তারা কখনো এই গডে বিশ্বাসীদের সাথে বিতর্ক করেছেন কিনা। না করলে কেন করেননি। একদম স্বচক্ষে দেখে ও বিস্তারিত জেনেও যদি তারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে না পারে তাহলে তারা আবার নতুন করে কী প্রমাণ চায়! তারা প্রতিনিয়ত ‘প্রমাণ নাই’ ‘প্রমাণ নাই’ বলে চিৎকার-চেঁচামেচি করে নিজেদেরকে যুক্তিবাদী, সংশয়বাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক, ইত্যাদি হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করেন কেন? তারা কি আদৌ স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে ইচ্ছুক? চাক্ষুস প্রমাণ দেয়া সত্ত্বেও মেনে না নেয়া মানে তো স্রেফ গোঁয়ারগোবিন্দপনা ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। এই প্রশ্নগুলোর যৌক্তিক জবাব তারা দিতে পারবেন কিনা।
বিজ্ঞান প্রকৃতপক্ষে নাস্তিকতা নাকি আস্তিকতার পক্ষে থাকবে?
আস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী একজন মহান স্রষ্টা যেহেতু এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন - সেহেতু বিজ্ঞান যা কিছুই আবিষ্কার করুক না কেন সেটা কোন ভাবেই আস্তিকতার বিরুদ্ধে যাবে না। বরঞ্চ যত বেশি নতুন নতুন আবিষ্কার হবে, আস্তিকরা ততই খুশী হবে। তার কারণ হচ্ছে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার যত বেশি হবে সেটা তত বেশি স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রতিই দিক নির্দেশ করবে, অনস্তিত্বের দিকে নয়। ফলে প্রত্যেকটি বিস্ময়কর আবিষ্কার স্রষ্টার অস্তিত্বের সাগরে একেকটি মূল্যবান বিন্দু। কেননা এই মহাবিশ্বে তথ্যের পরিমাণ যত বেশি হবে, সেটা তত বেশি একজন স্বজ্ঞাত সত্তার প্রতিই দিক নির্দেশ করবে, অকস্মিক ঘটনার দিকে নয়!
অপরদিকে বিজ্ঞানের ভয়ে নাস্তিকদেরকেই সব সময় চাপের মুখে থাকতে হবে। কারণ আজ যেটা তারা বিশ্বাস করে আগামীকাল সেটা ভুল প্রমাণিতও হতে পারে। যেমন বিগ-ব্যাং তত্ত্ব ইতোমধ্যে তাদের ‘চিরস্থায়ী মহাবিশ্ব’র বিশ্বাসকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। যদিও বিবর্তনবাদ তত্ত্ব কোনভাবেই স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করে না তথাপি বিজ্ঞান কিন্তু বিবর্তনবাদ তত্ত্বকেও ধীরে ধীরে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। সুতরাং বিজ্ঞান কিন্তু বারংবার নাস্তিকদের বিশ্বাসের ছিদ্রই পূরণ করবে, আস্তিকদের বিশ্বাসের ছিদ্র নয়। আস্তিকদের বিশ্বাসের মধ্যে যেহেতু কোন ছিদ্রই নেই সেহেতু ছিদ্র পূরণ করার প্রশ্নই তো অবান্তর! ছিদ্র থাকলেই না কেবল ছিদ্র পূরণ করার প্রশ্ন আসবে! ফলে আস্তিকদের উদ্দেশ্যে নাস্তিকদের সমালোচনামূলক বা হাস্যকর ‘God in gaps’ ফ্রেজটা একদমই অর্থহীন। বরঞ্চ নাস্তিকদের উদ্দেশ্যে আস্তিকরা নতুন করে ‘Chance and accident in gaps’ ফ্রেজ চালু করতে পারে।
নাস্তিকতার ভিত্তি বা রেফারেন্স বলে কিছু নেই এবং থাকার কথাও নয় – যেটি আসলে অবৈজ্ঞানিক। আস্তিকদের সামনে যেখানে পুরো মহাবিশ্ব আছে সেখানে নাস্তিকদের সামনে একটিই ‘যুক্তি’ আছে, আর সেটি হচ্ছে ‘মানি না’ বা ‘বিশ্বাস করি না।’ প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা থাকাটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক। যারা ‘নাই’ বলেন তারাই আসলে অন্ধ-বিশ্বাসী। নাস্তিকদের চিন্তাভাবনার পরিসীমাও অত্যন্ত সংকীর্ণ। তাদের জগৎ মোটামুটি পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ঘুরপাক খায়। এই ‘পঞ্চাশ বছর’ পরিসীমার বাহিরে তারা কিছু ভাবতেই পারে না!
নাস্তিকতার স্বপক্ষের বহুল প্রচলিত যুক্তি খণ্ডন
☼→
স্বর্ণলতা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: