কিছু ব্লগে কোরআনের সংখ্যাতত্ত্ব বা সাংখ্যিক মাহাত্ম্য নিয়ে বিভ্রান্তি
ছড়ানো হচ্ছে। অ্যান্টি-ইসলামিক সাইটের লেখা থেকে কোরআনের সংখ্যাতত্ত্বের
মধ্যে কিছু অসঙ্গতি দেখিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোরআনকে ভুল প্রমাণ
করারও চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে নীচের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো স্মরণ রাখতে
হবে:
-কোরআনের গবেষণালব্ধ সংখ্যাতত্ত্বের মধ্যে কিছু অসঙ্গতি বের হলেও কোরআন কিন্তু ভুল প্রমাণিত হচ্ছে না। তাতে শুধু এটুকুই প্রমাণিত হবে যে, সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার মধ্যে হয়ত কিছু গলদ আছে, যদিও আদৌ গলদ আছে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন।
-কোরআনের গবেষণালব্ধ সংখ্যাতত্ত্বের মধ্যে কিছু অসঙ্গতি বের হওয়া মানে কিন্তু পুরো গবেষণা বাতিল হয়ে যাওয়া নয়। প্রচুর গবেষণা ও পরিশ্রম করে কোরআনের সাংখ্যিক মাহাত্ম্য আবিষ্কার করা হয়েছে। স্রেফ অর্থহীন কোন কিছুর পেছনে কেউ এত সময় ব্যয় করবেন না নিশ্চয়। ফলে পুরো গবেষণাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়াটা হবে চরম বোকামী।
-উনিশ সংখ্যাতত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় এমনও অনেক কিছুই দাবি করা হয়েছে।
-সংখ্যাতত্ত্বের গবেষণা ছিল অ্যারাবিক কোরআনের উপর ভিত্তি করে, কোন অনুবাদের উপর ভিত্তি করে নয়। কিন্তু যারা ভুল-ভ্রান্তি বা অসঙ্গতি বের করার চেষ্টা করছেন তাদের কেউই অ্যারাবিকে পণ্ডিত নন। তারা আসলে অ্যান্টি-ইসলামিক লেখাকে বিশ্বাস করে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কারো দাবিকেই অভ্রান্ত হিসেবে ধরে নেয়া যাবে না।
-যেভাবে অন্যান্য ধর্মের অন্ধ-বিশ্বাস ও কুসংস্কারের সাথে গুলিয়ে ফেলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, কোরআনের সংখ্যাতত্ত্ব সে'রকম আলৌকিক বা অন্ধ-বিশ্বাস বা কুসংস্কার নয়। যা কিছু দাবি করা হয়েছে বা হচ্ছে তার সবকিছুই কোরআনের মধ্যে থেকে এবং বিষয়টি পুরোপুরি সংখ্যা নির্ভরশীল ও খণ্ডনযোগ্য।
এবার কিছু অজ্ঞতা বা অপপ্রচার প্রসঙ্গে আসা যাক।
১. কোরআনকে হেয় করার উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে যে, ইচ্ছে করলে যে কোন বই এর মধ্যে র্যাণ্ডম কিছু সংখ্যা দিয়ে ট্রায়াল-এন্ড-এরর পদ্ধতিতে সাংখ্যিক মাহাত্ম্য আবিষ্কার করা সম্ভব! আহ! এ যেন ছেলের হাতের মোয়া! তাদের এই যুক্তির স্বপক্ষে আবল-তাবল কিছু উদাহরণ দিয়ে পাঠকদেরকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কেউ র্যাণ্ডম পদ্ধতিতে অনেকগুলো সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করে ১৯ সংখ্যাকে বেছে নিয়েছেন কিনা? মোটেও না। এই ১৯ সংখ্যাটি সরাসরি কোরআন থেকে এসেছে (৭৪:৩০-৩১)। শুধু কোরআন থেকে এসেছে বললেও সঠিক বলা হলো না। প্রকৃতপক্ষে কোরআনের একটি আয়াত থেকে এসেছে যেখানে ১৯ সংখ্যা দ্বারা কিছু একটা বুঝাতে চাওয়া হয়েছে। এই যে কোরআনের একটি আয়াতে ১৯ সংখ্যা দ্বারা "কিছু একটা" বুঝাতে চাওয়া হয়েছে – কিন্তু ঠিক কী বুঝাতে চাওয়া হয়েছে এই অনুসন্ধিৎসু প্রশ্ন থেকেই গবেষণা শুরু। অতএব, ১৯ সংখ্যাকে র্যাণ্ডমলি বেছে নেয়া হয়নি। ফলে "যে কোন বই এর মধ্যে থেকে র্যাণ্ডম পদ্ধতিতে অনেকগুলো সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করে সাংখ্যিক মাহাত্ম্য আবিষ্কার করা সম্ভব" – এই অজ্ঞতা বা অপপ্রচার কিন্তু হালে পানি পাচ্ছে না।
এবার যারা এই ধরণের উটকো দাবি করেন তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ থাকলো, তারা যেন নির্দিষ্ট একটি বই এর মধ্যে উল্লেখিত অর্থপূর্ণ একটি সংখ্যা বেছে নিয়ে সেই সংখ্যা দ্বারা সাংখ্যিক মাহাত্ম্য আবিষ্কার করে বিভিন্ন সাইট ও ব্লগে প্রকাশ করেন। এমনকি র্যাণ্ডম সংখ্যা দিয়েও করতে পারেন। পাঠকদেরকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে ডজন ডজন উদাহরণ দিয়ে জঙ্গলের আশেপাশে পিটিয়ে কোন লাভ নাই। নির্দিষ্ট একটি বই থেকে উদাহরণ দিতে হবে এবং সেই উদাহরণ দ্বারা আসলে কী প্রমাণ করতে চাওয়া হয়েছে সেটাও বলতে হবে। বাকিটুকু পাঠকরা বিচার করবেন। নিজেকে নাস্তিক ও ফ্রী-থিংকার দাবি করে কোন ধর্মগ্রন্থকে হেয় করার জন্য এরকম আবল-তাবল অনেক কিছুই বলা যায়, “ওমুক ধর্মাবলম্বীরাও তো এই-সেই দাবি করেন। তমুক গ্রন্থেও তো এই-সেই আছে। ইত্যাদি। ইত্যাদি।” কিন্তু নির্দিষ্ট একটি গ্রন্থে বিশ্বাসী হয়ে এরকম দাবি ক’জন করতে পারে!
২. কোরআনের সংখ্যাতত্ত্ব বা সাংখ্যিক মাহাত্ম্য আবিষ্কারের শত শত বছর আগে থেকেই কোরআনকে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। এই বিশ্বাসের স্বপক্ষে ইতোমধ্যে অনেক যুক্তি-প্রমাণও উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে অতি সাম্প্রতিক সময়ে কোরআনের সাংখ্যিক মাহাত্ম্য একটি। ফলে গবেষণালব্ধ সংখ্যাতত্ত্বের মধ্যে কিছু অসঙ্গতি বের হলেও তাতে কোরআনের উপর কারো বিশ্বাস দুর্বল হবে না। প্রকৃতপক্ষে হাতে গোনা কিছু ইসলামে বিশ্বাসীই কেবল কোরআনের সাংখ্যিক মাহাত্ম্য সম্পর্কে অবগত।
৩. কোরআনের সাংখ্যিক মাহাত্ম্যকে খণ্ডন করার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করা হয়েছে বা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে প্রচুর লেখা ইন্টারনেটে ছড়ায়ে-ছিটিয়ে আছে। অন্যদিকে কোরআনকে হেয় করার উদ্দেশ্যে যে উদাহরণগুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলোকে খণ্ডন করার তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। তার মানে যারা কোরআনের সাংখ্যিক মাহাত্ম্যকে খণ্ডন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা খুব ভালভাবেই অবগত যে অন্যান্য দাবিগুলো আসলে ভূয়া অথবা সেগুলোর মধ্যে তথ্যপূর্ণ কিছু নেই। আর তথ্যপূর্ণ কিছু না থাকলে কোন পাগলেও সেগুলোকে খণ্ডন করার জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করবে না।
সর্বশেষে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হচ্ছে কোরআনকে হেয় করার উদ্দেশ্যে যে উদাহরণগুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলোর দ্বারা আসলে কী প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়? সেগুলো ভুল বা সঠিক প্রমাণ হওয়ার সাথে কিছু আসে যায় কিনা? উদাহরণস্বরূপ, কেনেডি ও লিঙ্কনের জীবনে কিছু কোইনসিডেন্স থাকলে তাতে কী আসে যায়! মধুসূদনের সনেটে কিছু মিল থাকলে তাতেই বা কী বা আসে যায়! আসলে কিছুই আসে যায় না! তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, হয় তারা নিজেরা বিভ্রান্ত অথবা অসচেতন পাঠকদেরকে বিভ্রান্ত করার ধান্দা।
0 comments: