হিল্লা বিয়ে নিয়ে চিল্লাচিল্লি


ইসলামী আইন অনুযায়ী কোন স্বামী তার স্ত্রীকে চূড়ান্ত ভাবে ৩ তালাক দিয়ে দিলে সেই স্ত্রী তার স্বামীর জন্য আর বৈধ থাকেনা, হারাম হয়ে যায়। স্বামী চাইলেও সেই স্ত্রীকে আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে নেয়া ইসলামী আইনে সম্ভব হয় না। তবে এই মহিলাটির যদি স্বাভাবিক ভাবে আস্থা, ভালবাসা ও আজীবন বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহে অন্য এক পুরুষের সাথে ২য় বিয়ে হয়, এবং পরবর্তীতে সেই স্বামীর মৃত্যু বা তার কাছ থেকে সংগত কোন কারণে ঐ মহিলা তালাক প্রাপ্তা হয়ে যান বা পরবর্তীতে ২য় স্বামীর সাথে বনিবনা না হলে তার কাছ থেকে খুলা নেন। এরপর ইদ্দত কাল অতিবাহিত হবার পর পূর্বতন স্বামী-স্ত্রী নতুন ভাবে বিয়েতে আবদ্ধ হতে ইসলামী আইনে কোন বাঁধা থাকেনা।

কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় এক শ্রেণীর মূর্খ ও বক ধার্মিক লোকেরা, শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্বশালী আলেমদের কাছে না গিয়ে অল্প শিক্ষিত মোল্লাদের পরামর্শে তালাক প্রাপ্তা মহিলাকে তার পূর্বতন স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া বা হালাল করে দেয়ার জন্য হিল্লা বিয়ের আয়োজন করে এবং এইটিকে ইসলামের বিধান বলে চালিয়ে দেয়। যার ফলে বিতর্কিত এবং কলুষিত হচ্ছে ইসলামের সুন্দর বিধান ও মহান আদর্শ। আর ইসলামের শত্রুরা এটাকে তাদের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে পেয়ে, কুরআন ও ইসলামের কুৎসা রটনার ক্ষেত্রে তাদের কোন প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখছে না।

আমরা এই নিয়ে আলোচনায় যাবার আগে দেখি হিল্লা কাকে বলে-

অভিধানিক ভাবে- হিল্লা বলতে বুঝায়- উপায়, গতি, ব্যবস্থা, আশ্রয় ও অবলম্বন বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন -তোমার কি কোন হিল্লা হয়েছে? বা মেয়েটির কোন হিল্লা হয়েছে।

কিন্তু প্রচলিত পরিভাষায় হিল্লা বলতে ‘কোন স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দেবে, যেন সে পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে’।

এই হিল্লা বিয়ে শুধু বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আর ভারতে নয়, পৃথিবীর সব মুসলিম অধ্যুষিত দেশেই কম-বেশী প্রচলন আছে। আরবে এই হিল্লা বিয়েকে হাল্লালা বলে। হিল্লা শব্দটি আরবি حلة থেকে এসেছে। এর অর্থ বৈধতা/ বৈধ করণ। যদিও আরবি হালাল حلال শব্দের অর্থ হলো- ইসলামে অনুমোদনপ্রাপ্ত। কিন্তু হিল্লা বিয়ে মোটেই হালাল নয়।


যে তালাকের কারণে এই হিল্লা বিয়ের মতো এক অনৈতিক পালক গজিয়েছে ইসলামের গায়ে, সে তালাক নিয়ে কিছু আলোকপাত করার দরকার বোধ করছি। আল্লাহর কাছে তালাক একটি অপ্রিয় বৈধ কাজ বলে বিবেচিত হয়। পৃথিবীর সব ধর্মের মানবের বংশধারা বিকাশের জন্য নর এবং নারীর মধ্যে বিয়ে নামক প্রথা প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। তেমন করে ইসলামও বিয়ে প্রথাকে খুব গুরুত্বের সহিত পরিমাপ করে থাকে।


ইসলামে বিয়ের লক্ষ্য- বিবাহিত নর আর নারীর পবিত্র বন্ধন যেন সুখের হয়। বিয়ের কারণে যেন কোন মানব-মানবীর জীবন দুঃখের শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে সারা জীবন নষ্ট না হয়। সেই লক্ষ্যে অসুখী দম্পতিদেরকে অসুস্থ বন্ধন থেকে মুক্ত করতে ইসলাম তালাকের ব্যবস্থা রেখেছে। প্রাক ইসলামী যুগে আরবে তালাকের প্রথাও ছিল। তবে সেই প্রথা ছিল সম্পূর্ণ পুরুষের দয়ার উপর। নারী চাইলেও তালাক নিতে পারতোনা। এমন কি সে সময়ে স্বামী স্বৈরাচারের মত স্ত্রীর সাথে তালাক অস্ত্র নিয়ে নারীর বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিত। যেমন যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে বলত - আমি তোমাকে তালাক দিলাম, সে সময়েও আরবে তালাক বলার সাথে সাথে তালাক কার্যকর হত না। স্ত্রীকে তার মাসিকের পর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত। এমন অবস্থায় কোন অবিবেচক স্বামী স্ত্রীর মাসিক চলাকালে তার তালাক প্রত্যাহার করে নিত। এবং ঐ স্ত্রীকে ভোগ করে আবার তালাক দিত । আর এই ভাবে একের পর এক নাটক করে যেত, যার কারণে ঐ নারী তার অত্যাচারী স্বামীর থেকে কখনও মুক্তি পেতে পারতোনা। তাই নারীর প্রতি এই অমানবিক জুলুমকে প্রতিহত করে নারীকে মুক্তি দিতে বাধ্য করতে ইসলাম পুরুষকে সর্বমোট ৩ দফা তালাক দেয়া বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে আসে। প্রথম দু’বার ব্যবহারের পর ফিরিয়ে নেয়ার অবকাশ আছে। কিন্তু তৃতীয়বার আর সেই অবকাশ নেই। যাতে কেউ আর নারীকে নিয়ে তালাক তালাক খেল খেলতে না পারে। তাই ইসলামের তালাকের বিধান নারীর জন্য শাস্তি নয় নারীর জন্য রহমত বিশেষ।

পৃথিবীতে অনেক ধর্মেই এক সময় তালাক প্রথা ছিলনা। সে সব ধর্মের অনুসারীদের কাছে তালাক প্রথাকে অনৈতিক মনে হতো। তারা দাবি করত স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আজীবনের, এ বন্ধন ছিন্ন হবার মত নয়; হোক সে স্বামী নপুংসক কিংবা অত্যাচারী। কিন্তু সভ্যতার চরম এই লগ্নে এসে পৃথিবীর অন্য জাতি গোষ্ঠীও নারীকে মুক্তি দিতে তালাক প্রথাকে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা দিতে বাধ্য হয়েছে। যা আজকের পৃথিবীর মানুষের মূল্যবোধের কাছে নৈতিকতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়েছে, সেই নৈতিকতার বিপ্লব ইসলাম পনের শত বছর আগে দেখিয়ে এসেছে। ইসলাম এই কৃতিত্বের জন্য অবশ্যই গর্ব করতে পারে।


ইসলাম শুধু পুরুষদেরকে তালাক দেবার অধিকার দেয় নাই, নারীদেরকেও তালাক নেবার তিন ধরনের অধিকার দিয়ে রেখেছে। কিন্তু এককভাবে স্বামী কর্তৃক একত্রে তিন তালাক দেবার বিধান কোরআন নির্দেশ করে নাই। তবে মনে রাখতে হবে মানব স্বভাবজাত কোন আইনই বদ্ধ জলাশয়ের মত হতে পারেনা। তাই উপযুক্ত কারণ থাকলে স্বামী স্ত্রীর কল্যাণের জন্য একত্রে তিন তালাক দেবার নজির হাদিসে পাওয়া যায়। কোন স্বামী অসৎ উদ্দেশ্যে, হঠকারী সিদ্ধান্তে, স্ত্রীর জ্বালাতন বা অন্য কোন কারণে এক সাথে তিন তালাক প্রয়োগ করে থাকে। আর এই তালাক-কে ইসলামী শরিয়ার পরিভাষায় তালাকে বিদা বলে। এই তালাকে বিদা বৈধ কি অবৈধ, কার্যকর না অকার্যকর তা নিয়ে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মত বিরোধ আছে। তবে এই ধরণের তালাকে বিদার প্রথা নবী করিমের জীবিত কালে তেমন ছিলনা। নবী করিম (সাঃ) হিল্লাকে নিষেধ করতেন, যদি কোন অবিবেচক দ্বারা এমন ঘটনার ঘটনের কথা নবী করিম (সাঃ) শুনতে পেতেন, তাহলে সেই মুহালাল (২য় স্বামী) ও মুহালাল লাহু (১ম স্বামী) উভয়কেই অভিশাপ দিতেন। (২) আবার কতক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উভয়ের উপর লানত করেছেন, আবার কতক হাদিসে তিনি হিল্লাকারীকে ভাড়া করা পাঠার সাথে তুলনা করেছেন। (৩)



আর উমর (রাঃ)এর খেলাফতের আমলে তো উভয় অপরাধীকে ডেকে এনে বেত্রাঘাত করে শাস্তি দিতেন। ইতিহাস পাঠে জানা যায় যে- তালাকে বিদা রাসূল (সাঃ)এর আমল, খলিফা আবু বকর (রাঃ)এর আমল ও খলিফা উমর (রাঃ)এর আমলের প্রথম ২ বছরে প্রচলিত ছিলনা। তখন কোন স্বামী রাগের বশতঃ এক সাথে তিন তালাক দিয়ে দিলে তাকে এক তালাক হিসাবে গণ্য করা হত। (৪)

পরবর্তীতে খলিফা উমর (রাঃ) যখন দেখলেন কেউ কেউ প্রাক ইসলামী যুগের মত তালাকের অপব্যবহার শুরু করে দিয়েছে, নারী জালিম স্বামী কাছ থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা, তখন থেকে কেউ যদি মুখে এক সাথে তিন তালাক ঘোষণা করে ফেলত সেটিকেই চূড়ান্ত তালাক বলে গণ্য বলে ঘোষণা দেন। এবং বিদা তালাক দানকারী ব্যক্তিকে এক সাথে তিন তালাক দেবার অপরাধের বেত্রদণ্ড দিতেন। (৫) কারণ এই তিন তালাকের মত কঠোর প্রথা তো ইসলামে এসেছে যাতে কেউ তালাককে পুতুল খেলায় পরিণত না করতে পারে।

খলিফা উমর (রাঃ)এর আদেশে ৬৩৬ খৃঃ - একসাথে তিন তালাক-কে চূড়ান্ত তালাক বলে কার্যকর করায় ফলে সে সময়ের মানুষেরা তিন তালাকের পরিণাম সম্পর্কে জ্ঞান থাকার কারণে সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনদের আমলে এই তালাকে বিদা তেমন ভাবে দেখা যায় নাই। পরবর্তীতে আমলে মানুষ ধীরে ধীরে ধর্ম থেকে দূরে সরে আসার কারণে এই তালাকে বিদা মুসলিম সমাজে বেড়ে যাওয়ার ফলে এর সমাধানের জন্য এক শ্রেণীর মোল্লাদের দ্বারা হিল্লা বিয়ের মত কু-প্রথা সমাজে চালু হয়ে পড়ে। আর এর জন্য নিম্নের কোরআনের আয়াত ও হাদিসকে অপব্যবহার করা হয়। আর তারা তাদের স্বার্থে নিম্নের কোরআন ও হাদিছকে দলিল হিসাবে তুলে ধরে।

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। (কোরান ২:২৩০)

আসলে হয় ঐ সব মোল্লারা এই আয়াতের শানে নজুল জানে না বা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই আয়াতের অপব্যাখ্যা করে থাকে।

এবং বোখারী শরীফের এই হাদিস,

Narrated 'Ikrima: Rifa'a divorced his wife whereupon 'AbdurRahman bin Az-Zubair Al-Qurazi married her. 'Aisha said that the lady (came) wearing a green veil (and complained to her (Aisha) of her husband and showed her a green spot on her skin caused by beating). It was the habit of ladies to support each other so when Allah's Apostle came. 'Aisha said. "I have not seen any woman suffering as much as the believing women. Look! Her skin is greener than her clothes!" When 'AbdurRahman heard that his wife had gone to the Prophet he came with his two sons from another wife. She said. "By Allah! I have done no wrong to him but he is impotent and is as useless to me as this." holding and showing the fringe of her garment. 'Abdur-Rahman said. "By Allah. O Allah's Apostle! She has told a lie! I am very strong and can satisfy her but she is disobedient and wants to go back to Rifa'a." Allah's Apostle said to her. "If that is your intention then know that it is unlawful for you to remarry Rifa'a unless Abdur-Rahman has had sexual intercourse with you." Then the Prophet saw two boys with 'Abdur-Rahman and asked (him). "Are these your sons?" On that 'AbdurRahman said. "Yes." The Prophet said. "You claim what you claim (i.e. that he is impotent)? But by Allah these boys resemble him as a crow
resembles a crow." (Volume 7. Book 72. Number 715)

এই হাদিসকে তারা কাজে লাগাতে গিয়ে ভুলে যান যে - আব্দুর রহমান আল কুরাইজি কিন্তু এই মহিলাকে তার আগের স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য ঐ মহিলাকে বিয়ে করে নাই। তাদের বিয়ে কোন নাটক ছিলনা। আর কোন মহিলা যাতে এই ধরণের নাটক না করতে পারে তার জন্য রাসুল সাঃ রিফার তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে জানিয়ে দিলেন ইসলামে নাটকী বিয়ে বৈধ বিয়ে নয়। কাজেই বিয়ে যতক্ষণ বৈধ না হচ্ছে সে ক্ষেত্রে সেই বিয়ের দ্বারা তালাকও বৈধ হবেনা। কাজেই ফাঁক তালে গোল দেবার কোন সুযোগ ইসলাম রাখে নাই।


পাঠকদের একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, ইসলামের পুনঃ প্রচারকারী মুহাম্মদ সাঃ এঁর কাছে মুসা নবী (আঃ) এঁর মত এক দিনে গোটা কোরআন নাজিল হয় নাই। কোরআন নাজিল হয়েছে ক্রমান্বয়ে দীর্ঘ ২৩ বছর সময় নিয়ে, কাজেই ইসলামের পূর্ণতা প্রাপ্তির আগের মুসলিমরা প্রাক ইসলামী সমাজের প্রচলিত অনেক রীতিনীতিতে অভ্যস্ত থাকা স্বাভাবিক ছিল। যা অনেক হাদিসে উঠেছে এসেছে, কাজেই ঐ সকল আরবিয় প্রথা কখনও ইসলামীয় প্রথা হতে পারেনা। প্রাক-ইসলামি যুগের মুতা বিয়ের মতো অস্থায়ী বিয়ের প্রথা ছিল, এবং ইসলামী অনুশাসন পূর্ণতার আগে মুসলিমদেরকেও মুতা বিয়ের মত অস্থায়ী বিয়েতে অভ্যস্ত হতে দেখা যায় কিন্তু ইসলামি অনুশাসনের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে মুতা বিয়ে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। মুতা বিয়ে যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে কি ভাবে হিল্লা বিয়ের মত ক্ষণস্থায়ী বিয়ে ইসলাম অনুমতি দিতে পারে! যদি ১ম স্বামী, স্ত্রী ও ২ স্বামী এই তিন জনের মধ্যে কোন একজনের মনে এই চিন্তা আসে যে, এই বিয়ে তো অস্থায়ী; শুধু মাত্র ভেঙ্গে যাওয়া সংসারকে জোড়া লাগাবার নিয়তে এই বিয়ে হচ্ছে, তাহলে ইসলাম বলে এই বিয়ে বৈধ নয়। এবং ঐ স্ত্রীও তার প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ বলে বিবেচিত হবেনা। এই সব বিয়ের আয়োজক এবং অংশ গ্রহণকারীর উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হবে।


খলিফা উমর (রাঃ)এর আমলের পাঁচ শত বছর পর মুসলিম জাহানে কয়েক জন উদারপন্থী ইসলামি চিন্তাবিদের আবির্ভাব হয় তাদের মধ্যে প্রখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে রুশদ(রঃ) (৬) (১১২৬-১১৯৮) ছিলেন। তিনি হাদিস, কিতাব আর ইতিহাস বিশ্লেষণ করে মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে মনে করিয়ে দেন যে -সর্বক্ষেত্রে এক সাথে তিন তালাক বলে ফেললে তালাক বৈধ হয়ে যায় না। তালাক দেয়ার সময় তালাক দানকারীর নিয়তকে বিবেচনায় রেখে বুঝতে হবে কোনটি তালাক হিসাবে গৃহীত আর কোনটি গৃহীত নয়। ইবনে রুশদের মৃত্যুর ৬৫ বছর পর জন্ম নেয়া ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) (৭) (১২৬৩-১৩২৮) ও উনার যোগ্য ছাত্র ইবন আল কায়িম (রঃ), তালাক সম্পর্কে বেশীরভাগ কঠোর পন্থী উলামায়ে কেরামের বিপরীতে ইবন রুশদের মতবাদকে দুনিয়া ব্যাপী ছড়িয়ে দেন।


তালাকের অপব্যবহার রোধ করতে গিয়ে- তালাক আইনকে কঠোর করে ফেলে হয়তো তার অপব্যবহার পুরোপুরি রোধ করা না গেলেও প্রকোপ কমিয়ে রাখা হয়েছে তাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু এই কঠোরতার কারণেও যে হাজার মানুষের জীবন তছনছ হয়ে যায় নাই তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে অপরাধ রোধে কঠোর হতে নির্দেশ দিয়েছেন তেমনি নিরপরাধী মানুষের জীবন যাপন যেন কঠোর না হয়ে যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন। ব্যক্তি নিজের জন্য কঠোরতা বেছে নিলেও সমষ্টির জন্য নেয়া তো মানবিক হতে পারেনা। আমাদেরকে অবশ্য ইসলামের এই সুন্দর বিধানকে যাতে কেউ অপব্যবহার করতে না পারে তার জন্য আমাদেরকে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।


আজকের পৃথিবীতে মিশরের মত মুসলিম অধ্যুষিত দেশে হানিফি মাজহাবের আলোকে আইন প্রচলিত থাকলেও তালাকের আইন, ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ফতোয়ার আলোকে কার্যকর করা হয়েছে। তেমনি সিরিয়াতে তালাকের আইন চালু আছে। আমাদের দেশে সেই পাকিস্তানী আমল থেকে, ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ দ্বারা তালাকে বিদা নিষিদ্ধ এবং হিল্লা বিয়ের প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়ে। (৮) আশাকরি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশেও এই আইন কার্যকর হলে, হিল্লা বিয়ের মত অনৈসালামিক প্রথা চিরতরে ইসলামী সমাজ থেকে বন্ধ করা যাবে।


__________________________________________________________________________


সূত্রঃ-

১. http://en.wikipedia.org/wiki/Nikah_Halala

২. জামী তিরমিজী হাদিস নাম্বার ১১২০ এক. ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস :
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: " لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ ".قَالَ أَبُو عِيسَى: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
ইব্‌ন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।”

৩. ইমাম হাকেম তার মুসতাদরাক গ্রন্থে সাহাবি উকবা বিন আমের রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: " أَلا أُخْبِرُكُمْ بِالتَّيْسِ الْمُسْتَعَارِ؟ "، قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: " هُوَ الْمُحِللُّ "، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: " لَعَنَ اللَّهُ الْمُحِللَّ، وَالْمُحَلَّلَ لَهُ " هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الإِسْنَادِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ، ووافقه الذهبي.
উকবা ইব্‌ন আমের রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলব ?” তারা বলল : অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন : “হিল্লাকারী”, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “আল্লাহ হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন”।

৪. Imam al-Shaf’i, Imam Abo Dawud, Imam al-Daraqtuni relate that Ibn ‘Abbas said, “Rukah divorced his wife three times in one sitting. Thereafter he was extremely grieved and went to the Prophet [may the peace and blessings of Allah be upon him] and complained to him. The Prophet [may Allah’s peace and blessings be upon him] asked him, “How did you divorce your wife?” He responded, “I pronounced three divorces at once.” The Prophet [may Allah’s peace and blessings be upon him] responded, “Indeed, this type of divorce is only equal to one divorce.”

Some scholars questioned the strength of this hadith stating that it was mutarib such as Imam al-Bukhari. However, Ibn Kathir states, “However, Abu Dawod narrated it with a different chain and it is a good hadith inshallah.” See Bidyatul Mujtahid Dar al-Salam print volume 2 pg 1383.

In addition, Imam Ahmed adds that the Prophet [may Allah’s peace and blessings be upon him] said, “Return her if you like?” Ibn Abbas adds, “So he returned her” and Imam Ahmed considered this narration good.

al-Hakim relates that a man came to Ibn ‘Abbas and asked him, “Are you aware that three divorces during the time of the Prophet [may Allah’s peace and blessings be upon him] equaled one [divorce]?” Ibn Abbas responded, “Yes.” al-Hakim states that this hadith is sound

Dr. Abdullah al-’Uhad states, “There was a group of scholars who contended that one pronouncement of divorce could not follow another (meaning one said I divorce you! I divorce you! I divorce you! All at the same moment) but that, if it took place, it would only count as one divorce. This was related by Abu Musa as the opinion of Ali bin Abi Talib [may Allah be pleased with him], Ibn ‘Abbas, Tawus, ‘Ata, Jabir bin Zaid, al-Hadi, al-Qasim, al-Baqir, al-Nasir Ahmed bin ‘Esa and Zaib bin ‘Ali [may Allah be pleased with them all]

This was also the opinion of some of the later day scholars: Ibn Taymiyya, Ibn al-Qayyim and other critical scholars. This was also related to be the opinion of the scholars of Cordoba and is currently followed by a large body of Muslim scholars do to its ease and removal of hardship.” See Sharh Bidayatul al-Mujtahid pg. 1384

৫. মুসলিম শরিফ খণ্ড ৯ হাদিস নং ৩৪৯১

Ibn 'Abbas (Allah be pleased with them) reported that the (pronouncement) of three divorces during the lifetime of Allah's Messenger (may peace be upon him) and that of Abu Bakr and two years of the caliphate of Umar (Allah be pleased with him) (was treated) as one. But Umar b. Khattab (Allah be pleased with him) said: Verily the people have begun to hasten in the matter in which they are required to observe respite. So if we had imposed this upon them, and he imposed it upon them.

৬. http://en.wikipedia.org/wiki/Averroes

৭. http://en.wikipedia.org/wiki/Ibn_Taymiyyah
৮। http://www.abasar.net/UNIlaw_Bangladesh.htm

আপনাদের কারো যদি ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে কিছু পরামর্শ দিতে চান তাহলে munim2000@yahoo.com দয়াকরে জানাবেন। ধন্যবাদ

লিখেছেন :মুনিম সিদ্দিকী

2 comments:

মুসলিমাহ বলেছেন...

সালাম

সুন্দর লিখেছেন , আল্লাহ উত্তম প্রতিফল দিন । এ জাতীয় লেখা আরো বেশী করে লেখা ও প্রচার করা দরকার ।

mahmud বলেছেন...

It is very much necessary for us to know about the right path of islam. May Allah bless us all. Ameen.

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম