শহীদ সাংবাদিক শেখ বেলাল

ইসলামি ছাত্রশিবির এর সাবেক কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক, খুলনা মহানগরীর সাবেক সভাপতি, খুলনা মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন এর সভাপতি,দৈনিক সংগ্রাম এর ব্যুরোচিপ, নির্ভীক সাংবাদিক শহিদ শেখ বেলালের আজ ১০তম শাহাদাত দিবস।

২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে খুলনার প্রেসক্লাব চত্তরে ঘাতকের রিমোর্ট কন্ট্রোল বোমার আঘাতে আগুনে পুড়ে তার সমস্ত শরীর ঝলসে যায়। তারপর উন্নত চিকিতসার জন্য ঢাকার সি,এম,এইচে নেওয়ার পর ১১ ফেব্রুয়ারি'০৫ তিনি শাহাদাত বরন করেন।


সাংবাদিকদের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ। সদাহাস্যোজ্জ্বল, মৃদুভাষী, সততা ও নির্ভীকতার কারণেই তিনি ছিলেন খুলনার সাংবাদিক সমাজের কাছে একজন আদর্শবান অভিভাবক। শুধু সাংবাদিকরাই নন, স্থানীয় রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধিসহ সব শ্রেণীর মানুষের কাছেই তিনি ছিলেন সমান প্রিয়।


শেখ বেলাল উদ্দিন ছিলেন পিতা-মাতার বড় সন্তান। শেখ বেলাল উদ্দিন ছিলেন খুলনা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি, দৈনিক সংগ্রামের খুলনা ব্যুরো প্রধান, সমাজ উন্নয়নের অগ্রসৈনিক, দক্ষ সংগঠক সেই সাথে একজন অপ্রতিদ্বনদ্বী সাংবাদিক নেতা। তিনি ১৯৫৭ সালের ৩ ডিসেম্বর খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সুগন্ধি গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের মাত্র ২৩ দিন পর তিনি খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানাধীন বয়রা রায়েরমহল এলাকার নিজ বাড়িতে আসেন এবং শাহাদাতের আগ পর্যন্ত তিনি পিতা-মাতা, ভাই-বোন স্ত্রী নিয়ে ওই বাড়িতেই বসবাস করতেন। ১৯৭২ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এর মধ্যে তিনি স্কুল জীবনেই তার বড় ভগ্নিপতি এরশাদ আলীর (মরহুম) হাতে ছাত্রসংঘের কর্মী হন। তারপর তিনি নগরীর দিবা-নৈশ্য কলেজে লেখাপড়া করেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। তখন তিনি তৎকালীন ছাত্রসংঘের সাথী ও পরে ছাত্রশিবিরের সর্বোচ্চ শপথ (সদস্য) নেন। তিনি খুলনার সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এসময়ে পর্যায়ক্রমে তিনি ১৯৮৩-১৯৮৪ ও ১৯৮৬-১৯৮৭ পর্যন্ত খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সংগঠনের কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন সেক্রেটারিয়েটে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৯১ সালে তিনি জাতীয় পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। এখানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি খুলনার স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক তথ্য ও যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক লোকসমাজেও কাজ করতেন। এখানে তিনি ইবনে আলী হিসাবে লেখালেখি করতেন। অনেক প্রতিবেদন পত্রিকার প্রধান শিরোনামেও প্রকাশিত হয়েছে। একসময় এসে তিনি শুধুমাত্র আদর্শের কথা বলা ও লেখালেখির উদ্দেশে স্থানীয় মানুষের উন্নয়ন ও দুর্নীতির কথা দৈনিক সংগ্রামকে সংগ্রামী জীবন হিসেবে বেছে নেন। কর্মজীবনে তিনি সর্বোচ্চ সিঁড়ি জাতীয় পত্রিকায় কাজ করার পাশাপাশি প্রেসক্লাব ও মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য হন। এখানে তার যোগ্যতা ও মাধুর্য দিয়ে ইউনিয়নে দুই দুই বার সাধারণ সম্পাদক ও দুই দুই বার সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি সকল সদস্যের বিপদের বন্ধু হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কে অসুস্থ, কার ঈদে নতুন জামা বা বাজার হচ্ছে না, তা ছিল তার যেন দায়িত্ব। হোক সে নিজের আদর্শের, আবার হোক সে অন্য ধর্মালম্বী, সকলের কাছে তিনি ছুটে যেতেন।

আমি দৈনিক জনবার্তার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করি ১৯৯৭ সালে। এর এক বছর পর এমন এক বন্ধু ও অভিভাবকের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। ১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর এক জনসভায় তৎকালীন জনবার্তার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার এইচএম আলাউদ্দিন এই অভিভাবকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। আলাউদ্দিন ভাই বেলাল ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এই আমাদের বেলাল ভাই'। এরপর থেকে যথারীতি আমি আমার কর্মস্থল দৈনিক জনবার্তায় কাজ করতে থাকি। হঠাৎ একদিন রাত সাড়ে দশটার দিকে তৎকালীন দৈনিক লোকসমাজের স্টাফ রিপোর্টার বর্তমানে দৈনিক মানবজমিনের ব্যুরো প্রধান রাশিদুল ইসলাম ভাই আমাকে ডেকে বলেছিলেন, বেলাল ভাই আপনাকে এই মুহূর্তে প্রেসক্লাবে আসতে বলেছেন। আমি ফোন পাওয়া মাত্র ছুটে যাই সেখানে। বেলাল ভাই তখন আমার এক কপি ছবি দিতে বলেন এবং এমইউজে খুলনার সদস্যের জন্য ডি ফরম পূরণ করতে বলেন। সে থেকেই আমার সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট সংগঠন এমইউজের সাথে জড়িত হওয়া। বর্তমানে আমি এই ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছি। এখানে বর্তমানে সবাই আছে, কিন্তু নেই সেই অভিভাবকটি। সব মিলিয়ে শেখ বেলাল উদ্দিন ছাত্রজীবনে ও কর্মজীবনে ইসলামী আন্দোলনের সর্বোচ্চ শপথ নেন। আবার কর্মক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বনদ্বী। এখানে সাবাদিকদের রুটি-রুজি ও তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনও করেছেন। তিনি যেন আন্দোলনকে বড্ড বেশী ভালো বাসতেন। সে জন্য তাকে জীবন দিয়ে শেষ পর্য়ন্ত আন্দোলন করতে হলো। তার এ আন্দোলন এখন আমাদেরই করতে হবে, পূরণ করতে হবে তার শেষ শপথ।

শেখ বেলাল উদ্দিনের সাথে দীর্ঘ ৫ বছর এক সাথে কাজ করতে গিয়ে যেটি দেখেছি, সেটি হলো কোনদিন তিনি আমার সাথে কেন কারো সাথেই গোমরা মুখে কথা বলেননি। সব সময় সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখে কথা বলতেন। বেলাল ভাইয়ের এ আচরণের কথা মনে হলে আজও আমি কষ্ট পাই, নিভৃতে কাঁদি। ছোট এবং বড় যে কেউ মনে কষ্ট পায় এমন কথা তিনি কখনই বলতেন না। যার সাথে যেভাবে কথা বললে তারা খুশী হতো তিনি তার সাথে সেভাবেই কথা বলতেন। ছোটদেরও তিনি অনেক সময় আপনি করে সম্বোধন করতেন। পরিচিত না হলে তিনি সকলকে আপনি বলে সম্বোধন করে কথা বলতেন। এজন্য আমার মনে হয় তিনি তার জীবদ্দশায় কাউকে মনে কোন কষ্ট দেননি। আর তাৎক্ষণিক যদি কেউ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন কিছুক্ষণ পরে তিনি আবার হেসে কথা বলে তাকে কাছে টেনে নিতেন। এটি ছিল সাংবাদিক হিসেবে বেলাল ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ। আমার মনে হয় ইসলামী আন্দোলনের শহীদেরা এ রকমই হয়।

বেলাল ভাইয়ের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ছিল সদাবিচরণ। তার সাথে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় পার্টিসহ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে সম্পর্ক ছিল খুব ভাল। বিভিন্ন সময় বেলাল ভাইয়ের কথা উঠলে আওয়ামী লীগের সভাপতি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক মেয়র তৈয়েবুর রহমান, বিএনপি'র সাবেক সভাপতি এম নূরুল ইসলাম দাদু ভাই, বর্তমান সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সদস্য এডভোকেট স ম বাবর আলী, সেকেন্দার জাফর উল্লাহ খান সাচ্চু, কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ফিরোজ আহমেদ, প্যানেল মেয়র আজমল আহমেদ তপন, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি বেগম ফেরদৌসী আলী, সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব লিয়াকত আলী, শেখ আবু হাসান, মকবুল হোসেন মিন্টু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহিদ হোসেন, সাহেব আলী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এসএম হাবিব ভাইসহ অনেকেই তার কথা নিয়ে মেতে ওঠেন। বেলাল ভাইয়ের স্মরণ সভায় এখনও সহকর্মীরাসহ অনেকেই তার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।

সেদিন ছিল ২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। দিনটিও ছিল আলো ঝলমলে। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই কালো অাঁধার ঘনিয়ে আসবে তা কে জানতো ! বিকেলে অফিসের কাজ সেরে সন্ধ্যায় খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাডমিন্টন খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যোগদেন বেলাল ভাই। অনুষ্ঠান শেষে সহকর্মী ও বন্ধু শেখ আবু হাসান ভাই ও বেলাল ভাই প্রতিদ্বনদ্বী জুটি জাহিদুল ইসলাম ও এরশাদ ভাইয়ের সাথে ব্যাডমিন্টন খেললেন। খেলা শেষে ফিরে আসেন প্রেসক্লাবে। এশার নামাজ শেষে রাত নয়টার দিকে আমি প্রেসক্লাবে গিয়ে বললাম, বেলাল ভাই বাসায় যাবেন না? তখন সেখানে ছিলেন বেলাল, হাসান, টুটুল, এরশাদ ও জাহিদ ভাই। কিছুক্ষণ পর বেলাল ভাইয়ের মোবাইলে মিস কল দিলেন তানজিলা ভাবী। বেলাল ভাই আমাকে তার বাসায় ফোন করতে বললেন। ডায়াল করার পর বেলাল ভাই রিসিভার তুলে বললেন, আমি এখনই রওনা হচ্ছি। এটাই ছিল সুস্থ শরীরে ভাবীর সাথে তার শেষ কথা। ফোন ছেড়ে তিনি টুটুল ভাইকে মোটরসাইকেল যোগে আবু হাসান ভাইকে বাসায় পৌঁছে দিতে বলে ক্লাবের ক্যান্টিন থেকে বের হলেন। সাথে ছিলেন আবু হাসান, টুটুল ও জাহিদ ভাই। বের হতেই দরজার সামনে রাখা তার মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে কিছু একটা ঝুলতে দেখে হাসান ভাইকে বলেন এটা কি? হাসান ভাই উত্তরে বললেন- বোমা-টোমা না তো! ওই সময় ছিল খুলনার সাংবাদিক, রাজনীতিক ও পুলিশসহ সাধারণ মানুষের কাছে চরম বোমা আতঙ্ক। তার কথা শেষ না হতেই ঘটে গেল ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা। বোমার বিকট শব্দ ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল প্রেসক্লাব অঙ্গন। ভয় ও আতঙ্কে অন্যরা যখন জীবন বাঁচাতে দৌড়াদৌড়ি করছে, বেলাল ভাইয়ের শরীর তখন বোমার আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে। এই অবস্থায় তিনি কালেমা পাঠ করছেন।

কিছুক্ষণ পর যখন আগুনের লেলিহান কমে যায় তখন আমি, প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি শেখ আবু হাসান, সমকালের ব্যুরো প্রধান মামুন রেজা, গ্রামের কাগজের ব্যুরো প্রধান কাজী শামীম আহমেদ, সাংবাদিক কামরুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের স্টাফ রুহুল আমিন ও আবুল বালি ছিটিয়ে আগুন নিভিয়ে একটি প্রাইভেট কারে করে বেলাল ভাইকে হাসপাতালে পাঠালাম। এরপর আমি নিউজটি দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, বার্তা সম্পাদক আব্দুল কাদের মিঞা, চিফ রিপোর্টার রুহুল আমিন গাজী ভাইকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে এলে দেখি আমি প্রেসক্লাবের পার্শ্বে অবস্থিত মিশু ক্লিনিকে। সেখানে টুটুল ও জাহিদ ভাইও রয়েছে। তখন তাড়াহুড়া করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে গেলাম। এখানে আমার প্রিয় মানুষটির মুখ, হাত, পা দিয়ে রক্ত ও পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। চারদিকে শুধু আওয়াজ হচ্ছে রক্ত লাগবে, রক্ত লাগবে। সবাই রক্ত নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। এর ফাঁকে সে ডাক্তার নিজ মুখে বলছে আমার রক্তের গ্রুপ ‘এ' পজেটিভ। আমাকে রক্ত দেন, আমি রক্ত শূন্য হয়ে পড়ছি। একথা শুনে আমি সালাম দিলাম। সালাম দেয়ার সাথে সাথে তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, রানা আমার মোটরসাইকেল, মোবাইল সেট এবং মূল্যবান কাগজপত্রের ব্যাগটির কি অবস্থা? আমি তখন সত্য কথা বলতে গিয়ে বললাম সবগুলো পুড়ে গেছে। এ কথা শুনে তিনি বললেন সব গেছে যাক, কিন্তু ব্যাগে অফিসের, ইউনিয়নের এবং সংগঠনের কিছু মূল্যবান কাগজপত্র রয়েছে। পাওয়া যায় কিনা দেখো। একথা বলেই তিনি চুপ হয়ে গেলেন। একথাই ছিল আমার সাথে শহীদ শেখ বেলাল উদ্দিনের শেষ কথা।

এর ছয়দিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদৎ বরণ করেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পূর্ব চত্বরে সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযমের ইমামতিতে নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। পরের দিন শনিবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ বিমানের বিএইচ-৭৯৭ নম্বর হেলিকপ্টারে শেখ বেলালের লাশ আনা হয় খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে। সেখান থেকে পিকআপ ভ্যানে করে নগরীর রায়েরমহলস্থ বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর আবার তার কর্মস্থল খুলনা প্রেসক্লাবে আনা হয় এবং এখান থেকে আবার সার্কিট হাউস ময়দানে নিয়ে দুপুর দুই টায় তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী ও আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ইমামতিতে স্মরণকালের উপস্থিতিতে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে শেখ বেলালের লাশের কফিনের সাথে বিশাল শোক র‌্যালি রায়েরমহল হাফেজী মাদ্রাসা ও মসজিদের সামনে যায় এবং আসরের নামাজ শেষে আবারও নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহীদের পারিবারিক কবরস্থানে বড় ভগ্নিপতি যার হাতে তিনি ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হন সেই এরশাদ আলী গাজীর (২০০৩ সালে ইন্তিকাল করেন) মাথার কাছে চির নিদ্রায় শায়িত হন।

বাংলাদেশে অনেকেই সাংবাদিকতায় একুশে পদকসহ বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছেন। কিন্তু শহীদ শেখ বেলাল উদ্দিন শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার কারণে তাকে কোন সম্মাননা বা পদকে ভূষিত করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি'র পেনসিলভেনিয়ার সংবাদপত্রের জাদুঘর ‘নিউজিয়ামে' সারা বিশ্বের নিহত সাংবাদিকদের সাথে শহীদ সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিনের জীবন বৃত্তান্ত সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিদিন নানা প্রান্তের অনেক পর্যটক এখানে বেলাল ভাইসহ ঘাতকের হাতে নিহত সাংবাদিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। স্মরণ করেন অকুতোভয় এই সব সাংবাদিককে।

(লেখক পরিচিতি-খুলনা ব্যুরো প্রধান, দৈনিক সংগ্রাম ও কোষাধ্যক্ষ, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা, যুগ্ম-মহাসচিব, প্রেসক্লাব খুলনা।)

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম