শহীদ ইমরান খান : সত্যের আকাশে এক ধ্রুবতারা (১৪৩-চট্টগ্রাম)


 শেষ বিকেলের গৌধুলীতে দিপ্রহরের আদিত্য যেমন নিষ্প্রভ হয়ে আসে সেরকমই মলিন যাওয়া মন নিয়ে আজ আবার কলম ধরেছি। যার জন্যে লিখবো বলে অনেকদিন ভাবছি তার স্বপ্নের নীল প্রজাপতিটি পাখা মেলে এখন আর এ শহরে আসেনা। ভাবনার মুক্ত বিহঙ্গ ডানা মেলে অলিতে গলিতে কাউকে আর নামাজের জন্যে ডাকেনা। হঠাৎ চমকে ওঠার মতো তার সেই চেনা মমতামাখা কন্ঠস্বর এখন আর কেহ শুনেনা। মিছিলের নগরীতে সম্মুখে দাড়িয়ে “নারায়ে তাকবীর” শ্লোগান তার সেই বলিষ্ঠ কন্ঠে উচ্চারিত হয়না। কিংবা কলেজ থেকে ফেরার পর মাকে খুব আদর করে  বলেনা “ক্ষুধা লেগেছে তাড়াতাড়ি খেতে দাও”। 
পড়ন্ত বিকেলে খেলার মাঠে যাবার জন্যে বন্ধুরা এখন আর তার চিৎকার শোনেনা।
আমাদের শহীদ ইমরান। পুলিশ আর র‌্যাবের হৃদয়হীন পশুগুলোর  শর্টগান থেকে বের হওয়া বুলেটের আঘাতে যার বেঁচে থাকার ইচ্ছেগুলোকে মুহূর্তেই ম্লান করে দিয়েছে। স্তব্ধ করে দিয়েছে জীবন চলার পথকে । আর ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে তার স্বপ্ন গুলোকে ছড়িয়ে দিয়েছে লাখো সতীর্থের হৃদয়ে। 
আজ শহীদ ইমরানের আব্বু আমাদের মতো লাখো তরুনের আব্বু, ইমরানের আম্মু আমাদের সবার আম্মু । আর শহীদ ইমরান ইসলামকে বিজয়ী করার সম্মুখ যুদ্ধে একুশ শতকের ওহুদের ময়দানে রাসূল সা: এর আদর্শের দলে হযরত আবু দোজানা রা:-র মতো শহীদদের একজন। তাইতো শহীদ ইমরান আমাদের আত্মার আত্মীয়। শপথের নিত্য সঙ্গী। হৃদয়ের অতৃপ্ত বন্ধনে আবদ্ধ চির সাথী। বন্ধুত্বের শ্রেষ্ঠ দাবিদার। শহীদের সর্বোচ্চ চূড়ায় তার অবস্থান।
দুই ভাই, দুই বোনোর নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বাবা বাবুল খান একজন সরল মানুষ। পুরো পরিবারের তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম চাকুরীজীবী। মাসশেষে যা বেতন পেতেন পুরোটাই সন্তাদের ভরন পোষনে ব্যায় করতেন। ভবিষ্যতে ব্যাংক ব্যালেন্স করার মতো অতিরিক্ত কোনো আয়ও উনার ছিলোনা। সন্তানেরা বড়ো হয়ে মানুষের মতো মানুষ হবে এটাই ছিল উনার একমাত্র চাওয়া। তাইতো শহীদ ইমনানের  আব্বু বললেন :
“আমার অনেক  স্বপ্ন সন্তানদের  নিয়ে,  আমার  কোন  ব্যাংক-ব্যালেন্স   নেই, এ সন্তানেরাই আমার একমাত্র ব্যলেন্স”
শাহাদাতের সিঁড়ি বেড়ে প্রভূর সান্নিধ্যে যাবার ক্ষণ :

৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ ইং সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট আবৈধ বিচারালয় “আর্ন্তজাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল-২” এর কুখ্যাত বিচারক ওবায়দুল হাসানের নের্তৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এ্যসিস্টেন্ট সেক্রেটারী জনাব আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দেয়ার প্রতিবাদে তৌহিদী জনতা এ রায়কে অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করে। তৎক্ষনাৎ সারা দেশে শান্তিপূর্ন বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। চট্টগ্রামেও তারই ধারাবাহিকতায় ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরী দক্ষিণ দুপুর ১ টায় নগরীর অলংকার মোড়ে হাজারো কর্মীর একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলের শুরুতেই পাহাড়তলী থানার এস আই সালেক এর নির্দেশে পুলিশ ও র‌্যাবের মূহুর্মূহু গুলিবর্ষণ শুরু করে । পুলিশ ও র‌্যাবের গুলি থেকে বাঁচার জন্যে আমরা যখন বিভিন্ন অলিতে গলিতে ডুকে আশ্রয় নিচ্ছি তখন আমাদের প্রিয় সাথী শহীদ ইমরান পুলিশের গুলি থেকে পিছু না হটে হাতে একটি ইটের টুকরো নিয়ে পুলিশের দিকে সাহসের সাথে মোকাবেলার জন্যে দাঁড়িয়ে গেল, পুলিশ ভয়ে পিছু হটেছিল। ইমরানের মতো আমরা ১০০ জনশক্তি নিয়ে যদি  আমরা  রুখে দাড়াতাম তবে হয়তো পুলিশ পলিয়ে যাবারও পথ খুঁজে পেতোনা। কিন্তু ইমরান ছিল সবার সম্মুখে থাকা আমাদের কয়েকজনের অন্যতম। আর তাইতো হৃদয়হীন পুলিশের শর্টগানের ছোড়া বুলেটটি বিদ্ধ হলো ইমরানের বুকে। সাথে সাথেই অলংকার মোড়ে লুটিয়ে পড়ে আমাদের প্রিয় ইমরান শাহাদাত বরণ করে ।
পুলিশ আমাদেরকে লাশ নিতে না দিয়ে অত্যন্ত অমানবিকভাবে লাশ থানায় নিয়ে যায়। এর পর শহীদ ইমরানকে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেলের মর্গে পাঠিয়ে দেয়।  ইমরান  আব্বু, আম্মু, ছোটভাই ও  সাথী-কর্মী  সহ অন্য আত্মীয় স্বজনরা মেডিকেলের মর্গে ইমরানের  লাশ দেখতে পেয়ে শোকে বিহব্বল হয়ে পড়ে।। এভাবে সতীর্থদের সবাইকে শোকের সাগরে ভাষিয়ে মিছিলের সম্মুখে থাকা সদা চঞ্চল হাস্যজ্বোল শহীদ ইমরান চলে গেল না ফেরার দেশে।
প্রথম জানাজা  : 
এবার শুরু হলো প্রশাসনের কুখ্যাত দালালদের লাশ নিয়ে নাটকের আরেক পর্ব। লাশ নিতে আসা স্বজনদের হয়রানির যেন অন্ত নেই। অবশেষে ৬ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৩ টায় শহীদের পূর্বনির্ধারিত জনাজা নগরীর প্যারেড মাঠে অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রশাসন দিলেও বিকাল চারটা পর্যন্ত তারা লাশ দেয়নি। মাইকিং করতে নিষেধ আরোপ করে। পুলিশ, বিজিবি ও  র‌্যাব রায়োটকার সহ আধুনিক মারনাস্ত্র নিয়ে পুরো জানাজাস্থল ঘিরে রাখে মনে হচ্ছে যেন এটা ফিলিস্তীন বা ইরাকের কোনো যুদ্ধ ক্ষেত্র। অবশেষে শোকার্ত লাখো তৌহিদী জনতার উপস্থিতিতে গায়েবানা জানাজা  অনুষ্ঠিত হয়। 
দ্বিতীয় জানাজা  : 

অবশেষে সন্ধার সামান্য পূর্বে  প্রশাসন লাশ হস্তান্তর করলে ছোটপুল ব্রিকফিল্ড মাঠে প্রায় দুই হাজার শোকার্ত জনতা ও স্থানীয় জনগনের উপস্থিতিতে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জনাব মোমিনুল হক চৌধুরীর ইমামতিতে ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জানাজার পরে শহীদের লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়ার পালা। মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুলহক ভাই, ও শহীদ ইমরানের থানা সভাপতি মোহাম্মদ ফিরোজ, বন্দর থানার সভাপতি জামাল উদ্দিন,  ভাইয়ের নেতৃত্বে ইমরানের সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি রাকিব, ইমরানের সাথী আবু দাউদ ও সাঈদ এবং শহীদ ইমরানের আম্মু আব্বু ছোটো ভাই  সহ ইমরানের লাশবাহী গাড়ি ছুটে চললো গ্রামের ঠিকানায়। এদিকে পাবনায় শোকর্ত গ্রামবাসী ও সংগঠনের ভাইয়েরা ইমরানের জন্যে  প্রতিক্ষার প্রহর গুনছিল। প্রায় একদিনের মতো  সময় লাগলো লাশ পাবনায় পৌছাতে।   
তৃতীয় জানাজা  : 
''এটি ছিল অদ্ভুত জানাজা। ৭ ফেব্রুয়ারী ত্তার লাশ তার গ্রামে পৌছানোর সাথে সাথেই দেখলাম বিপুল জনতা অপেক্ষা করছে। অথচ কোথাও কোন মাইকিং হয়নি। গ্রামে প্রায় পনেরশত স্থানীয় তৌহিদী জনতার উপস্থিতিতে সেখানে ৩য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। 
চতুর্থ জানাজা : 
এখানেও সেই পশুবাহিনী (সরকারের পুলিশবাহিনী) তৎপর। নির্ধারিত স্থানে কলেজ মাঠে জানাজা পড়তে দিবেনা। নদীর অপর পাড়ে কবরস্থান। পুলিশ জানিয়ে দিল জানাজা পড়াতে হলে নদীর এ পাড়ে হবেনা। ওপাড়ে গিয়ে সবাই জনাজা পড়তে হবে। হায়রে পুলিশ শুধু হাসিনার গোলামী করতে জানে কিন্তু জানেনা আল্লাহর গোলামদের পরস্পরের প্রতি কেমন ভালবাসা থাকে। পুলিশ মনেকরেছিল ওপাড়ে জানাজা পড়তে বললে কেও আর কষ্ট করে জানাজা পড়তে যাবেনা। কিন্তু বাকশালী পুলিশ কে অবাক করে দিয়ে হাজার হাজার তৌহিদী জনতা যখন আগে থেকে থাকা ছোট্টদুটি নৌকায় করে এপাড় থেকে ও পাড়ে যাওয়া শুরু করলো তখন গ্রামের সকল মানুষ শহীদের জানাজা পড়ার জন্যে ছুটতে শুরু করলো। একটি নৌকা অত্যধিক মানুষ ওঠার কারনে  নদীর মাঝখানে ডুবে যায়। নৌকার আরোহিরা সাতার কেটে চলে এল। বাকি একটা নৌকাতে আসতে দেরী হবে দেখে অপর পাড়ের অন্যরা সবাই সাতার কেটে এসে ভিজা কাপড়ে জানাজায় অংশ নিল। এরপরেও শহীদের জানাজায় অংশ নেয়ার যে তৃপ্তি তা থেকে তারা নিজেকে বঞ্চিত করেনি। আর দৃশ্যমান এ জানাজা পুরো বাকশালী আওয়ামী পুলিশ বাহিনীকে হতবাক করে দিয়েছে। এখানে উপস্থিতি ছিল প্রায় দশ হাজার এরপরে আমরা কবরস্থ করতে নদী পার হলাম। দূর দূরান্ত থেকে এতো অধিক লোকের উপস্থিতি ছিল  অথচ এরা কেউই শহীদ ইমরানের আত্মীয় ছিলোনা। তারা শহীদকে কখনো দেখেনি। শহীদের মুখ একনজরে দেখার জন্যে গ্রামের শিশু কিশোর যুবক বৃদ্ধ  পুরুষ-মহিলা সবাই জড়ো হতে লাগলো। এদৃশ্য কখনো ভোলার নয়।

পঞ্চম জানাজা :  
কবরস্থ করার আগে কবরস্থানে এসে দেখা গেল আরো হাজার খানেক উপস্থিত হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে সবার অনুরোধে ৫ম জানাজা পরাতে হল।'' অসংখ্য অপরিচিতরা হরতালের মধ্যেও অনেক কষ্ট করে এসে একটা অজানা ছেলের জানাজায় অংশ নিচ্ছে, এমন ঘটনা পাবনার স্থানীয়  গ্রামের বাসিন্দারা জীবনে কোনদিন দেখেনি। জানাজায় অংশ গ্রহন কারী কারোর সাথে  শহীদ ইমরানের রক্তের সম্পর্ক নেই, আছে আত্মার সম্পর্ক। আছে স্বার্থ হীন দ্বীনি ভাইয়ের সম্পর্ক।
কবর : 
সকাল ১১টায় শহীদের লাশ দীঘলিয়া গ্রামের কেনাই তে পরিবারিক গোরোস্থানে দাফন করা হয়। শহীদের লাশ কবরে রাখার সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হলো। সবার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টির মতো অশ্রু ঝরছিল। সবার কান্নাই জানান দিল ইমরান তাদের কতো প্রিয় ছিল। ইমরানের সাথীদের আর গ্রামবাসীর কান্না দেখে পিতার মনে প্রশান্তি আসলো। তিনি ভাবছেন “আমার একছেলে আমি হারিয়েছি.. কিন্তু আজ আমি শত শত ছেলে পেয়েছি” আর ইরানের জানাজা পরবর্তী লাশ কবরে রাখার ঘটনা শোনার পর ছোটবেলায় আম্মুর শেখানো সেই কথাটি আমার মনে পড়ে গেল।

“যেদিন তুমি এসছিলে  ভবে,  কেঁদেছিলে  তুমি  হেসেছিল  সবে
এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরনে হাসিবে  তুমি  কাঁদিবে ভূবন”
আসলেই তো ইমরান এমন জীবন গঠন করেছিল, যে জীবনের বিদায়ান্তে সবাই তার জন্যে অশ্রু ঝরিয়েছিল। দুনিয়ার জীবনের বিদায়ান্তে এমন পরিবেশই আমাদের সবার একান্ত কাম্য। ইমরান তাইতো প্রেরনার নতুন অধ্যায়।
শহীদের লাশ কবরে রাখার রাখার পর দীর্ঘ মোনাজত করা হয়। হাজারো বান্দার মধ্য হতে ইমরানের শাহাদাতের কবুলিয়তের জন্যে মহান রাব্বলু আলামীনের কাছে শুকরিয়ার জ্ঞাপন করা হয় এবং ইমরানের হত্যার বিনিময়ে আল্লামা সাঈদী সহ নের্তবৃন্দের মুক্তি ও বাংলার জমীনে ইসলাম কায়েমের জন্যে দোয়া করা হয়। 
     
এবার আসি শাহাদাতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ইমরান কেমন ছিল। তার আচার আচরন তথা চরিত্রইবা কিরূপ ছিল। আমাদের মা-বাবা (ইমরানের আম্মু ও আব্বু), বন্ধু-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিদের আবেগ আর ভালবাসায় সিক্ত বর্ণনায় আমার কাছে উঠে আসে প্রত্যয়দীপ্ত এক সরল মনের তরুনের নাম আবিদ। সদা হাসি মুখ আর সবাইকে আপন করে নেবার মতো বিশাল মন এতো অল্প বয়সে সে অর্জন করে।  
প্রত্যয়ী ইমরান :
শাহাদাত দিবসের প্রত্যুষে সে দিয়েছিল যে প্রত্যয়
জীবনের  বিনিময়ে অপরাহ্নে তা রেখেছিল সত্যয়
শিবিরের ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের সাথী চট্টগ্রাম পলেটেকনিক ইনিস্টিটিউটের মেধাবী ছাত্র ইমরান। শাহাদাত দিবসের সকালে সাথী বৈঠকে মহানগরী থেকে মেহমান হিসেবে আমি ওদের প্রোগ্রামে যাই। প্রথমত যেতে চাইনি কারণ একদিন আগেই ওদের দায়িত্বশীল বৈঠকে আমি মেহমান ছিলাম। কিন্তু ওয়ার্ড সভাপতি শাফায়েত এর প্রেসারে অবশেষে যেতেই হলো। প্রোগ্রামে গিয়ে উপস্থিতি পর্যালোচনায় দেখলাম ইমরানের আসতে একটু দেরী হয়েছে। একটু বকা দিলাম, ও বললো আমার আর কখনো দেরি হবেনা। ইনশআল্লাহ। এরপর মেহমানের বক্তব্যে বরাবরের মতোই বল্লাম :
“ আন্দোলন সংগ্রামের এ সময়ে  কাউকে পিছপা হওয়া যাবেনা, এসময়ে যারা শরিয়তের ওজর ছাড়া ঘরে বসে থাকবে তারা ভবিষ্যতে মোনাফেক হিসেবে পরিগনিত হবে, উপস্থিত সকল সাথীর সাথে ইমরান ও তাই প্রতীজ্ঞা করলো এখন থেকে মিছিল মিটিং পিকেটিং সবকিছুতেই স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবো প্রয়োজনে শহীদ হবো।। ইমরান সেই প্রতীজ্ঞা নিয়ে সাথী বৈঠক শেষে বিদায় নিল। বাসায় গিয়ে মা-বাবা কাউকে কিছু না বলে ছোট ভাই সজীবকে নিয়ে যথাসময়ে  দুপুর একটায় মিছিলে চলে আসে। শাহাদাতের মুহূর্তটিতেও প্রিয় ছোটভাইটিকে সে নিজের সাথে রেখেছিল। ভাএক সাথে নিয়ে যুদ্ধে আসার এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়।

ছেটোবেলার ডায়েরি : ডায়েরিতো নয় যেন জীবন্ত ইতিহাস
ইমরান ছিল পৃথিবীর বাগানে সেরা ফুলগুলোর একটি কিন্তু সুবাস ছড়ানোর আগেই নির্মম ভাবে হত্যা করা হলো। বাগানের সেই সেরা ফুলটিকেই কবুল করা হলো। বাগানের সব চেয়ে সুন্দর ফুলটি সবাইকে আকর্ষন করে। যার  সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে মানুষ তাকে পেতে চায়। 
ব্যাক্তিগত ডায়েরি  খুঁজে পাই  ১৬.০৯.২০০৮  তারিখ থেকে । ইমরান তখন নাসিরাবাদ সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্র। তখনো ইমরান সংগঠনের দাওয়াত পায়নি। 
প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা জীবনের ডায়েরিতে কোনো কিছুই লুকোয়নি । জীবনের কারনে অকারনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে সে এমন ভাষায় সাজিয়ে লিখতো যেন বিখ্যাত কোনো উপন্যাসিক তার রোমাঞ্চকর কোনো উপন্যাস লিখছেন। হুমায়ুন আহমেদ রসায়নে পড়ে বিখ্যাত উপন্যানিক হয়েছেন। আমাদের ইমরান কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র। নবম শ্রেণীতে থাকাকালীল তার লেখা ব্যাক্তিগত জীবনের ডায়েরি হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলনের এর মতো কথা সাহিত্যিকদের লেখা রোমাঞ্চকর উপন্যাসের মান কেও ছাড়িয়ে গেছে। বড়ো হলে হয়তো বিখ্যাত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবার পাশাপশি একজন বিখ্যাত উপন্যাসিক হয়ে উঠতো।
১৬.০৯.২০০৮ ইং এ লেখা :  ডায়েরির পাতা থেকে হুবুহু তুলে ধরলাম:
“আমার নাম মো: ইমরান খান রাজিব। নাসিরাবাদ সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ের আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র। আমরা দুইভাই দুইবোন। বাবা একজন চাকুরীজীবী। মা গৃহিনী। আমার বাবার আয়ে আমাদের সংসার ভালই চলে। তবে বাবার আয় কম হলেও আমার বাবা আমাদের সবার চাহিদা পূরণ করেন। কোনো কিছু অপূর্ণ রাখেননা। আমার বিদ্যালয়ের জন্যে বাবা প্রতিমাসে অনেক টাকা খরচ করেন। তবে আমাদের বাসায় কোনো টিচার নেই । তাই আমি একটি কোচিং সেন্টারে পড়ি।  সেখানে লেখাপড়া মোটামুটি ভালই চলে। এখানে টিচাররা আমাদের খুবই বিশ্বাস করেন। আমরাও উনাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার চেষ্টা করি। কোচিংএ আমরা ১১ জন বন্ধু। ৭ জন ছাত্র ৪ জন ছাত্রী সবাই নবম শ্রেণীর। সবাই খুবই মিশুক। কেউ কারো সাথে কথা না বলে থাকতে পারিনা। মাঝে মাঝে যখন শিক্ষক আসেন না তখন আমরা সবাই মিলে দারুন আড্ডা মারি। আড্ডা মারার মজাটাই আলাদা। আগে আড্ডা  কি সেটাও জানতামনা। আড্ডার মজাটা পেয়েছি এ কোচিংএ এসে। আড্ডা মারার সময় আমরা খুবই ফ্রি মাইন্ডে থাকি।”
আমরা সবাই সবাইকে খুব বিশ্বাস করি। বিশেষ করে রিয়াদ ও আশিক আমাকে খুব বিশ্বাস করে, আমিও তাদেরকে খুব বিশ্বাস করি। রিয়াদ মাদ্রাসায় পড়ে তাই সে বেশির ভাগ সময় ইসলামিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। আমরা কোচিং এ একটা সংগঠন করেছি। সংগঠনটি একটা ইসলামিক সংগঠন। সংগঠনের প্রধান (সভাপতি) হচ্ছে রিয়াদ কারন ও খুব ভাল ছাত্র যেহেতু আমিও ওদের সাথে লেখাপড়ায় তাল মিলিয়ে চলতে পারি তাই আমি হলাম সহসভাপতি। এসব নির্বাচন করেছে ছাত্ররাই। ওদের অমতে কিছুই করা যায়না। সংগঠনে সবাই সবাইকে সম্মান করে তবে আড্ডা মারার সময় সবাই সমান।”
এভাবে এতা সুন্দরভাবে ইমরান তার ডায়েরি লিখতো। ওদের সংগঠনের নীতিমালাগুলো ওরা ঠিক করে :
১. পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে।
২. সৎভাবে চরিত্র গঠন করতে হবে।
৩. হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করতে হবে।
৪. রিপোর্ট ও বায়তুলমাল দিতে হবে।
৫. ভালব্যবহার করতে হবে।
বন্ধুদেরকে সে এতো ভালবাসতো যে বন্ধুদের জন্মতারিখ গুলো সে তার ডায়েরির পাতায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছিল। ডায়েরির পাতায় পাতায় উঠে এসছে বন্ধুদের প্রতি তার বিশ্বাস ও ভালবাসার সুনিপুন বিবরন। বন্ধুদের প্রেমের যে কাহিনী সে লিপিবদ্ধ করেছে তার নামগুলো পরিবর্তন করে উপন্যাস আকারে ছাপালে হেলেন/আফ্রোদিতির সাথে তাদের প্রেমিকের কাহিনী নিয়ে রচিত  উপন্যাসকেও ছাড়িয়ে যাবে। নবম-দশম শ্রেণীতে ভালবাসার যে রাগ-বিরাগ আর বিরহ বন্ধুদের জীবনে সে দেখেছে এমনকি তাদের রাগবিরাগ ভাঙ্গিয়েছেও বহুবার, আবার কখনো প্রেমকরা থেকে বন্ধুকে ফিরিয়েও এনেছে। অবাককরা বিষয় হলো এধরনের বন্ধদেও নিয়ে যে ইমরান সবসময় চলতো সে ইমরানই জীবনে প্রেম করা তো দুরে থাক একটিবার ভাবেও নাই। 
তার ডায়েরিতে নিজের ব্যাপারে সি লিখছে: 

“আসলে সত্য কথা হল “ আমি প্রেম করাকে খুবই ভয় পাই”।
 আমি চিন্তা করি আমি যদি প্রেম করি, তবে আমার মন সবসময় প্রেমিকার দিকে থাকবে । ঘরে, পড়া- লেখায়, কোনো কাজে তখন মন বসবেনা। তখন পড়ালেখার বারোটা বাজবে। এবং সবার থেকে বকা শুনতে হবে। মেয়েদের ফান্দে না পড়ার জন্যে আমি সবসময় প্রথম বেঞ্চে বসি।”
“আমার ওপর আমার বাবার রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। আমি তাদের বিশ্বাসকে ভাঙ্গতে চাইনা। তাই প্রেমের সাথেও জড়াতে চাইনা।”
তিন বিজ্ঞানী : 
কোচিংএ ইমরান, ও ইমরানের বন্ধু আশিক ও রিয়াদের নাম ছিল তিন বিজ্ঞানী। তিন শ্রেষ্ঠ বন্ধু। তবে ডায়েরির মাঝখানের পাতায় উঠে এসেছে ও সবচেয়ে প্রিয় এক সৎ বন্ধুর নাম “ সম্রাট” । 
সম্রাটের ব্যাপরে ও লিখেছে  ”সম্রাট লেখা পড়ায় খুব একটা ভল না হলেও ওর মনটা খুবই ভাল, তাই সে সবচেয়ে ভাল বন্ধু।

মেধাবীদের একজন ছিল ইমরান :
তার প্রাথমিক স্কুল ছিল সুলতান আল নাহিয়ান সরকারী  প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরবর্তিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নাসিরাবাদ বয়েজ হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে সেখান থেকেই জিপিএ ৪.৫৬ নিয়ে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করে। বাবার স্বল্প বেতনের কারনে প্রয়োজন থাকলেও প্রাইভেট পড়তে পারেনি।এরমধ্যে মা অসুস্থ থাকায় বার বার পড়ালেখায় ব্যঘাত ঘটে।
বাবা স্বল্প আয়ের চাকুরীজীবী ছিলেন বিধায় নিজের পড়ালেখা নিজে নিজেই চালিয়েছে। সেই সাথে ছোট ভাই-বোনদের সহজে পড়া বুঝিয়ে দেয়ার কাজটাও সেই করতো।
দেশকে নিয়ে ভাবনা :
তার ডায়েরিতে শুধু ব্যাক্তি ও পারিবারিক বিষয়ই ওঠে আসেনি, জাতীয় বিষগুলোতে তার মনোভাবও সে তার ডায়েরিতে তুলে ধরতো। বিডিয়ার কার্যালয়ে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ডের পর সে তার ডায়েরিতে লিখলো:
০৩.০৩.২০০৯
আজ পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। মুসলমানদের জন্যে খুবই খুশির দিন। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ সা: এদিন জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারিনাই যে আজ আমর চোখ দিয়ে পানি ঝরবে। কিছুদিন আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে বিডিয়ার কার্যালয়ে সেনা অফিসারদের উপর যে চরম হত্যাযজ্ঞ চালানো হলো এজন্যে। এ বিষয়ে আমি তেমন জানিনা তবে আমার মনে হয় সরকারের সাহযোগিতা না থাকলে এমন হত্যাকান্ড চালানো যেতোনা।”
প্রভূর দরবারে প্রার্থনা :
 নিজের জীবনের ভুলগুলোকে স্বীকার করে আল্লাহর কাছে তা ক্ষমা চাওয়া ও ভবিষ্যতে ভাল কজে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার মতো সরল মন তার ছিল। ০১.০১.২০১১ ইং তারিখে সে লিখলো : 
“ আজ ঘুমানোর আগে আমার একটাই প্রার্থনা যেন আগামী ফজরের নামাজটা আমি জামায়াতে আদায় করতে পারি , নতুন বছরের সকালটা যেন মসজিদে নামাজের মাধ্যমে শুরু হয়“
স্বপ্ন : নিজের জন্যে একটি কম্পিউটার কেনা
২০.০৭.২০১১ ইং চট্টগ্রাম পলেটেকনিক ইনিষ্টিটিউটে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তির পর ক্লাস শুরুর তারিখ ঘোষনা করা হয় ২২.১০.২০১১ ইং। মাঝখানে দুইমাস সময় তাই সে ঠিক করলো এই সময়ে গার্মেন্টেস এ চাকুরী করবে। পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্যে। তার ডায়েরীতে সে লিখলো:
“চিন্তা করছি ঈদের পর  আমি একমাসের জন্যে চাকুরিতে ঢুকবো। মূলত কম্পিউটার কেনার জন্যে। নিজের একটা কম্পিউটার কেনা আমার অনেকদিনের স্বপ্ন।”
জীবনের অন্যরকম পরিবর্তন শুরু :         
 এরই মধ্যে শান্ত  ইমরান ছাত্রশিবিরের বিপ্লবী দাওয়াত পায়। তার বাসার পাশেই থাকতো উপশাখার  সভাপতি রাকীবুল হাসান। স্থানীয় ভাইদের দাওয়াতে সে বিভিন্ন প্রোগ্রামে যাওয়া শুরু হলো। সংগঠনের ভাইদের সাথে মেলামেশায় আস্তে আস্তে পরিবর্তন আসতে শুরু করলো তার জীবনে।
২৬.০৮.২০১১ তারিখে সে ডায়েরিতে লিখলো :
“ইদানিং আমি ছাত্রশিবিরে যোগ দিয়েছি , এখনতো আমার ক্লাস আরম্ভ হয়নি তাই সেখানে মাঝে মাঝে সময় দিতে হয়। আমি বর্তমানে শিবিরের কর্মী এরপর আমি শিবিরের সাথী হতে চাই, শুনেছি শিবিরের সাথীদের অনেক সম্মান থাকে”
২০১১ সালের জুলাই মাসে ইমরান শিবিরের সাথী প্রার্থী হয়। সাথীপ্রার্থী হবার পর নিজের জীবন নিয়ে ডায়েরীতে লিখলো:
“আজ থেকে চিন্তা করলাম জীবনে একটা রুটিন বানাতে হবে। জীবনে  অনেকটা সময়ই নষ্ট করলাম । এবার একটা পরিকল্পিত রাস্তায় আসতে হবে। এ রাস্তায় আসতে হলে একটা পরিকল্পনা নেয়া খুবই জরুরী আর সেটা করার জন্যেই আজ বসলাম”
এমন দায়িত্বশীল খুজে পাওয়া যাবেনাঃ
২০১২ সালের  অক্টোবর মাসে সংগঠনের সাথী হিসেবে শপথ নেয়ার পর সদা শান্ত এই ছেলেটির সময় কেটে যেত আন্দোলনের মাঠে। নিজের টেবিলের সাথে লাগানো  সামনে দেয়ালে ক্যালেন্ডারের একটি পাতা নিয়ে উল্টোপীঠে বড়ো বড়ো করে লিখে রাখলো :
আমি
১. সবসময় চেষ্টা করবো , যেনো প্রতিটি সাংগঠনিক বৈঠকে ঠিক সময়ে যোগদান করতে পারি এবং অসুখ-বিসুখ বা শরয়ী ওযর ব্যাতিত কোনো বৈঠকে অনুপস্থিত না থাকি।
২. বিশেষ কারনে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে না পারলে পূর্বেই অনুমতি নেব।
৩. সবসময় দাওয়াতী বই সংগে রাখবো এবং প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দুইটি বই বিতরণ করবো।
৪. কমপক্ষে দুইজন লোককে কর্মী বানানোর চেষ্টা করবো। এবং তাদেও সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবো।
৫. প্রতিদিন দাওয়াতী কাজ ও সাংগঠনিক কাজের জন্যে সুনির্দিষ্ট কিছু সময় দেব এবং সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন দাওয়াত সম্প্রসারন ও কর্মীগঠনের কাজ করবো।
৬. আমার পরিচিত মহল থেকে মাসিক বা এককালীন সাহায্য আতদায় করার চেষ্টা করবো। এব প্রতিমাসে কমপক্ষে দুইজন শুভা বৃদ্ধি করবো।
 তার দায়িত্ব ছিল আগ্রাবাদের ছোট পুল এলাকার ইসলাম মিয়ার ব্রিক ফিল্ড উপশাখার সেক্রেটারী । তাকে দেখা যেত কখনো কর্মীদের বাসায়, কখনো শুভাক্কাংখিদের সাথে নম্র আলাপচারিতায়। কখনো কথায় বা আচরনে ভুল করে ফেললে মিস্টি করে হেসে সেই ভুল স্বীকার করতো। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও শান্ত হওয়ায় কর্মীরাও  ভীড় করতো তার চারপাশে।
একদিনের ঘটনা :
মাস শেষে বাইতুল মালের টাকা দায়িত্তশীল বৈঠকে জমা দিতে হবে। অথচ শুভাকাংখিদের বাসায় পাওয়া যায়নি বলে সব টাকা তোলা হয়নি। আব্বুকে জানাল সমস্যাটা। বাবা থেকে ১৫০ টাকা ধার নিয়ে। দায়িত্ত্বশীল বৈঠকে জমা দিল। দ্বীনের বিপদে অর্থনৈতিক বকেয়া করা যাবেনা, হিসাব-নিকাশেও স্বচ্ছ হতে হবে...এই ছিল তার মনোভাব।

রাজপথের সৈনিকঃ
আলী-খালিদ-কাসিমদের অনুসারিরা নির্ভিক সাহসী হবে এটাই স্বাভাবিক।শহীদ ইমরান ইসলামী আন্দোলন থেকে পিছু হটাকে কাপুরুষতা মনে করতো।শান্ত ছেলেটির লড়াকু মনোভাব ছিল বিস্ময়কর। ঠিক যেন মেলানো যায়না।আল্লাহ যাকে ভালবাসেন তাকেই শাহাদাতের মর্যাদা দাঁন করেন।এই দিক দিয়ে জয়ী হল ইমরান।আর নৈতিক ভাবে। পরাজিত হল তাগুতি শক্তি।
শহীদের মুখ নি:সৃত বানী ঃ
বন্ধু হানযালা কাওনাইনকে মিছিলের জন্যে ডাকতে গিয়ে বললো  '' ইসলামী আন্দোলনের কঠিন এ সময়ে আন্দোলনের মাঠে অনুপস্থিত থাকাটা মোনাফেকের লক্ষন- ''। 
এভাবে বন্ধু কাওনাইন ও ছোটভাই সজিবকে নিয়ে সে মিছিলে আসতো।
মা-বাবার ছোট ভাইবোনদের নিত্য সহযোগী :
''আমি দুই বারের অপারেশনের রোগী,বাসার কাজ গুলো করতে খুব কস্ট হতো।ইমরানই সব করে দিত।আমিই বরং তাকে সাহায্য করার চেস্টা করতাম।
আমরা মা-ছেলে হলেও আমাদের আচরন ছিল বন্ধুর মত। ঘটনার দিনও সে আমার নির্দেশমত ঘরের সব বাজারই করে দিয়েছিল... -জানালেন কান্নারত শহীদ ইমরানের মা''
দ্বীনের কাজে পাগল ছিল আমার ছেলে।বন্ধুর মত আমার কাছে সব কিছু শেয়ার করতো। ছোট-ভাইবোনদের সে নিজেই পড়াতো। আমার ঘরের অন্যান্য সব কাজে সে সহযোগিতা করতো। 
'আমার ছেলে অন্য অনেক ভাবেই মারা যেতে পারতো,কিন্তু সেটি গৌরবের বিষয় হতোনা।একটি বড় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যেয়েই আমার সন্তান শহীদ হয়েছে  বলে আমি গর্বিত।-শহীদ ইমরানের বাবা''
শেষ কথা : 
আজ শহীদ আব্দুল মালেকের মতো মেধাবী উত্তরসূরীরা বাতিলের কালো থাবায় অকালেই ঝরে পড়ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র এখানে খুনের নেশায় মত্ত। রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর হাত কঁচিকাচা তরুনদের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত। স্বদেশ যেন তাই পলাশীর প্রন্তর। বাতিলেরা হয়তো ভাবছে শহীদ করে তারা ইমরানকে পরাজিত করেছে । কিন্তু না, আজ ইমরান বুকের খুন ঝরিয়ে সবাইকে শোকের সাগরে ভাষিয়ে বদর আর ওহুদের শহীদদের কাতারে নিজেকে শামিল করেছে। দুনিয়ার বাগানে সুবাস ছড়ায়ে গিয়ে জান্নাতের বাগানের পাখি হয়েছে। ইমরান ! তোমার রক্তের কসম !  তোমার বুকের তাজা খুনের প্রতিশোধ এ জমীনে একদিন নেয়া হবে। সেদিন বাতিল পালানোর কোনো পথ খুঁজে পাবেনা। আর ইমরানের আব্বুকে কথা দিয়েছি যে নের্তবৃন্দের মুক্তির জন্যে ইমরান শহীদ হয়েছে, সে রাজাবন্দীদেও সবাইকে মুক্ত না করে মায়ের কোলে ফিরে যাবোনা। 
এক নজরেঃ
নাম  মহাম্মদ-  ইমরান খান রাজীব
জন্ম তারিখ- ১৬/১২/৯৪
শিক্ষা জীবন-
প্রাথমিক- সুলতান আল নাহিয়ান স্কুল
মাধ্যমিক- নাসিরাবাদ বয়েস উচ্চ বিদ্যালয়
এস এসসিতে জি পি এ- ৪.৫৬
সাংগঠনিক মান- সাথী
সর্বশেষ অধ্যয়ন কালীন প্রতিষ্ঠান- কম্পিউটার সায়েন্স,৩য় সেমিস্টার,চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
পিতা- বাবুল খান
পেশা- চাকুরীজীবী
মাতা- গৃহিনী
পরিবারের মাসিক আয়- ১৪ হাজার
বর্তমানে সম্পত্তি- গ্রামের বাড়ি পাবনায় ৩ শতক পরিমান ভিটে মাটির জায়গা আছে
গ্রামের ঠিকানাঃ কেনাই, পোস্ট- দিঘলিয়া, থানাঃফরিদপুর, জেলাঃপাবনা
বর্তমান ঠিকানাঃসুলেমান হাজীর ভাড়া ঘর,ইসলাম মিয়ার ব্রিক ফিল্ড,ছোট পুল চট্টগ্রাম।
মোবাইল-০১৮১৯৬০৮৫৮৮,০১৮৪০৭৪৫০৩৭
শহীদ ইমরান ছাড়াও তার অপর ভাই-বোনদের নামঃ
আরমান খান সজিব,এইচ এসসি,২য় বর্ষ,হাতে খড়ি স্কুল
সানজিদা খানম, ­,সারজন স্কুল এন্ড কলেজ
তানজিনা খানম ,­,সারজন স্কুল এন্ড কলেজ 
লেখক : কায়েস মাহমুদ কাজল
ছাত্রআন্দোলন সম্পাদক
চট্টগ্রাম মহানগরী দক্ষিণ


0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম