শাহাদাতের সাক্ষী হয়ে রইল ফেসবুক!

https://fbcdn-profile-a.akamaihd.net/hprofile-ak-snc4/371498_100000230238592_1353686845_n.jpg 
৭ ফেব্রুয়ারী ২০১১, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফেসবুকে শিবিরের একজন সদস্য শিবিরসঙ্গীতের প্রথম দুই লাইন লিখে স্ট্যাটাস দিলেন,
“পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে আমরা শিবির গড়েছি
শপথের সঙ্গীন হাতে নিয়ে সকলে নবীজীর রাস্তা ধরেছি”
শিবিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুভ হোক।
প্রতিক্রিয়ায় একজন জবাব দিলেন, মাত্র ১৩১ জন (প্রকৃত সংখ্যা ১৩৬) শহীদ দিয়ে ইসলামী বিপ্লব সম্ভব নয়। শহীদের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। কতজন শহীদ দিয়ে বিপ্লব সম্ভব তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য হলো, কারো মতে বিপ্লবের সফলতার জন্য শহীদের সংখ্যা মূখ্য কোন বিষয় নয়।
অতপর, সেই সদস্য জবাব দিলেন,
“আল্লাহর কাছে দোয়া করি পরবর্তী জন বা ১৩৭তম শহীদ হিসেবে তিনি যেন আমাকে পছন্দ করেন, আমীন।”
জবাবে আরো একজন ছোটভাই ১৩৭তম শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করলে, সেই সদস্য কপট রাগে গর্জে উঠলেন,
“ঐ, আমার যায়গায় ভাগ বসাতে চাও কেন? তুমি ১৩৮ এর জন্য দোয়া করো।”
আর কি বিস্ময়কর ব্যাপার দেখুন, মহান রাব্বুল আ’লামীন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেই সদস্যের দোয়া সাথে সাথে কবুল করলেন, এর ঠিক একটি বছর পরে, ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী শিবিরের পরবর্তী শহীদ তথা ১৩৭তম শহীদ হিসেবে তাকে কবুল করে নিলেন, স্থান দিলেন তার সর্বাধিক প্রিয় বান্দাদের আসরে।
না, শুধু এই একটি স্ট্যাটাসই নয়, ২ বছরে মাত্র ২ শতাধিক স্ট্যাটাসে আরো বেশ কিছু স্ট্যাটাস তার শাহাদাতের সাক্ষ্য হয়ে রয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১১ সালে তিনি ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন,
“কে আছ বন্ধু যাবে আমার সাথে, যে পথ আল্লাহর, যে পথ রাসূলের (স:), যে পথ মিশে গেছে জান্নাতের সাথে।”
১৪ জুন ২০১১ তারিখে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে,
“যারা আল্লাহর পথে চলে
আল্লাহর কথা বলে
আল্লাহকে ভালোবেসে সঁপেছে জীবন
তাদের কিসের ভয়, কে করে পরাজয়
শহীদী তামান্নাতে নাচে তার মন।”
শাহাদাতের কামনায় তার আরেকটি স্ট্যাটাসটি পাওয়া যায় ১৬ নভেম্বর ২০১১ তারিখে। ফেসবুকে সেদিন তিনি স্ট্যাটাস দেন,
“হে আল্লাহ, তুমি আমাদের সকল গুনাহ, ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ পরে দিয়ে তোমার প্রিয় বান্দাদের মাঝে অর্ন্তভূক্ত কর। আমাদেরকে তোমার পথে লড়াই করে গাজী হওয়ার তৌফিক দাও। আর মরণ লেখা থাকলে তা যেন হয় শহীদী মরণ। আমাদের উপহার দাও তোমার দিদার ও জান্নাত।”
তার এ তীব্র শাহাদাতের তামান্না দেখে পিতা হয়েও মাওলানা হাবিবুর রহমান স্থির থাকতে পারেন নি। আগের দু’শোর মতো স্ট্যাটাসের জবাবে যেখানে হাবিবুর রহমানকে খুজে পাওয়া যায় নি, এ আবেগঘন স্ট্যাটাসে তিনি এই প্রথমবারের মতো জবাব দিলেন, শাহাদাত কবুল করার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, লিখলেন,
“আমীন”
কে না জানে, পিতার কাধে সন্তানের লাশের চেয়ে ভারী কোন বস্তু নেই পৃথিবীতে। কে না জানে, নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও সন্তানের সুখ কামনায় ভীজে ওঠে মা-বাবার চোখ, তারপরও সন্তান যখন আল্লাহর দরবারে শাহাদাতের জন্য দরখাস্ত করলো, পিতা হয়েও তিনি সন্তানের দরখাস্তে সুপারিশের দস্তখত দিলেন অবিচল হৃদয়ে। কারন, তিনি ঠিকই জানতেন, শহীদের মৃত্যু নেই, তারা অমর। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করেই ঘোষণা করেন,
“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না৷ তারা আসলে জীবিত নিজেদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা লাভ করছে৷”-সূরা আল-ইমরান, আয়াত ‌১৬৯।
তিনি শাহাদাতের কামনায় শুধু বিভোরই থাকেননি নিজেকে একজন্য সত্যিকারের শহীদ হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য পরিশ্রম করে গেছেন। নিজের ভুল-ভ্রান্তি শুধরে নিয়ে নিজেকে নিষ্পাপ বান্দা হিসেবে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার জন্য তিনি ছিলেন তৎপর। তাইতো ২০১১ সালের শেষ দিনটিতে তথা ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ সালে তাকে আল্লাহর দরবারে সিজদারত দেখতে পাই । তিনি স্ট্যাটাস দেন,
“হে আল্লাহ, গত বছরের সকল ভুল গুলো মাফ করে দাও। নতুন বছরটাকে আমাদের জন্য পুন্য কুড়াবার বছর হিসেবে কবুল কর। আমাদের জীবন আয়ু থেকে আরেকটি বছর চলে যাচ্ছে। জানিনা পরকালের জন্য কতটুকু প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। হে প্রভু, নতুন বছরে নিজেকে যেন জান্নাতের জন্য প্রস্তুত করতে পারি।
আমিন।”
তিনি সর্বদা শহীদ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। তার জীবনের সবকিছুই ছিল একমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্ঠি অর্জনের জন্য। তিনি কেন শহীদ হতে চান তার সুন্দর একটি ব্যাখ্যাও তিনি লিখে গেছেন ফেসবুকে। তিনি ২৪ নভেম্বর ২০১১ তারিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন,
“আপনার নিজের জিনিস কি আপনি আপনার নিজের দোকান থেকে কিনবেন?
অবশ্যই কিনবেন না।
অথচ আল্লাহ তায়ালা আপনার জীবনকে শ্রেষ্ঠ বিনিময় জান্নাতের বিনিময়ে কিনতে চান। যদিও এই জীবন তারই দেয়া।
আসুন নিকৃষ্ট দূনিয়ার জীবনের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট জান্নাত লাভ করার চেষ্টা করি।”
তিনি মনে করতেন, মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই মুসলমান হওয়া যায় না। মুসলমানিত্ব অর্জন করতে হয়। এ প্রসঙ্গে ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মাসুদ হাসান নামে একজন ফেসবুক বন্ধুর কমেন্টের জবাবে বলেন,
“শুধু নিজের নাম আব্দুল্লাহ এবং বাবার নাম আব্দুর রহমান হলেই মুসলিম হয় না । মুসলিম চৌধুরী, খন্দকার, খানের মতো কোন বংশ নয়, যে পিতা মুসলিম হলেই মুসলমান হওয়া যাবে। এটা অর্জন করতে হয়।”
হ্যা, ঠিক তাই। মুসলমান কোন উত্তরাধিকার সম্পত্তি নয়, নয় কোন বংশ বা পদবীর নাম। বরং এটি কষ্ট করে অর্জনের বিষয়, আল্লাহর সাথে জান ও মাল কুরবানীর চুক্তির বিষয়।  একজন মুসলমান তার জীবনকে সাজায় আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায়, মুসলমান রঙ্গীন হয় আল্লাহরই রঙ্গে। তাইতো তাদের জীবনে নিজের বলতে কিছু থাকতে পারে না, জীবনের সকল কিছুই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। আর তাইতো তার ফেসবুকে বেসিক ইনফরমেশনে তিনি লিখে রেখেছেন,
“আমি একজন মুসলিম, এটাই আমার প্রথম পরিচিতি, এবং এটাই আমার সর্বশেষ পরিচিতি।”
তিনি ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১১ এবং ৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে সবাইকে আল্লাহর বাণী স্মরণ করিয়ে দেন,
“বল আমার নামাজ,  আমার কুরবাণী,  আমার জীবন এবং আমার মরণ একমাত্র আল্লাহর জন্য।”
আল্লাহ ঘোষণা করেন, “আর তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে ,যে আল্লাহর দিকে আহবান করে এবং বলে নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত।”(হা-মীম সাজদাহ ৩৩)। আর তাইতো তিনি অপসংস্কৃতির এই যুগে জন্মেও ফেসবুককে ধারণ করেছেন দাওয়াতী অস্ত্র হিসেবে। তিনি যেমন নিজেকে একজন মুসলমান হিসেবে ফেসবুকে উপস্থাপন করেছেন, ঠিক তেমনি আল্লাহর পথে সবাইকে আহ্বান করে গেছেন শাহাদাতের পূর্ব পর্যন্ত। তাইতো দেখি, তিনি ৪ জানুয়ারী ২০১২ তারিখে সর্ববৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় স্ট্যাটাস দেন,
“Tidak ada tuhan, Tapi Allah. Kita harus berdoa untuk dia dalam semua tujuankami. (অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, আমাদের সকল প্রয়োজনীয়তা তার কাছেই চাওয়া উচিত)”
২১ ফেব্রুয়ারী ২০১০ তারিখে তিনি লেখেন,
“তুমি আল্লাহর জন্য হয়ে যাও, আল্লাহ তোমার জন্য হয়ে যাবেন।”
৩০ নভেম্বর ২০১০ তারিখে আরেকটি স্ট্যাটাস,
“কোরানের আলোকে জীবন গড়ে নিন।”
০৮ আগস্ট ২০১১ তারিখের আরেকটি স্ট্যাটাস,
“রাত কি কেটে যাবে ঘুমের অলসে?
তুমি কি জানবে না তোমার নিজেকে?
প্রভূকে?
সিজদায় নত হও অশ্রু ছাড়,
আল্লাহর স্মরণে হৃদয় গাঢ়”
১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে পরকালের স্মরণে আরেকটি স্ট্যাটাস,
“পরকালের প্রস্তুতি কি?”
১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইস ডে,তে যখন বিশ্বের লক্ষ কোটি তরুণ-তরুণী নিজেদের ইজ্জতকে বিকিয়ে দেয়ার জন্য উন্মাতাল ঠিক তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রেমে মাতোয়ারা। কারন তিনি জানতেন মুমিনের ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহরই জন্য হয়ে থাকে। রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তির ভালোবাসা ও শত্রুতা,দান করা ও না করা নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই হয়ে থাকে,  তিনিই পূর্ণ ঈমানদার”। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রটিও ছিলেন সত্যিকারের একজন ঈমানদার। তাইতো তিনি ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১১ তারিখে তথাকথিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে স্ট্যাটাস দিলেন,
”আল্লাহ এবং তার রাসূলের (সা:) ভালোবাসার থেকে অন্য কারো প্রতি ভালোবাসা যদি বেশী হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার বা আমার ঈমানে ঘাটতি আছে”।
কি আশ্চর্য বিষয়, যেখানে আজ ফেসবুককে পৃথিবীব্যাপী ব্যবহার করা হচ্ছে অনৈতিক কাজের হাতিয়ার হিসেবে, ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতারণা কাজে, সেখানে তিনি প্রতিনিয়ত ফেসবুককে ব্যবহার করেছেন আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণার মঞ্চ হিসেবে, ব্যবহার করেছেন রাসূলের ভালোবাসা প্রচারের মজলিস হিসেবে। তাইতো তার মাত্র ২ শতাধিক স্ট্যাটাসে হাতে গোনা মাত্র দু’ একটি স্ট্যাটাস পাওয়া যায় যেখানে ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ পেয়েছে, অথচ সেসব ক্ষেত্রেও তিনি আল্লাহকে ক্ষণকালের জন্যও ভুলে থাকেন নি।  ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১১ তারিখে তিনি স্ট্যাটাস দেন,
“দারুন মজা হচ্ছে রাঙ্গামাটিতে, কাপ্তাই লেকে করে রাঙ্গামাটি থেকে শুভলং নৌকা ভ্রমন। জটিল সব দৃ্শ্য। আলহামদুলিল্লাহ, সবই আমার রব আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার দান”।
২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১১ তারিখের আরেকটি স্ট্যাটাস,
“কি বিপুল সৃষ্টি তোমার, দেখে নয়ন মুগ্ধ হলো,
সেন্ট মার্টিন আমার রবের এক অপার দান। তোমার সৃষ্টির রূপ দেখে বারবার সিজদায় লুটিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে।”
নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘‘যার আজকের দিন গতকালের চেয়ে উন্নত হল না সে অভিশপ্ত।’’ আর তাইতো তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন নতুন দিনে পুরনো দিনের চেয়েও বেশী বেশী আমল করতে। ২৪ নভেম্বর ২০১০ তারিখের আরেকটি স্ট্যাটাস,
“হে প্রভু আমার আগামী দিনটা যেন আজকের চেয়ে ভালো হয়।”
আল্লাহর এই প্রিয় বান্দা এতটাই তার প্রেমে মশগুল ছিলেন যে তার প্রতি সিজদাবনত হওয়াই যেন তার ধ্যান-জ্ঞান ছিল। পারিবারিক আনন্দমুখর পরিবেশেও তিনি আল্লাহর স্মরণ থেকে নিজেকে গাফেল করেন নি। ২৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখের একটি স্ট্যাটাসে তার সাক্ষ্য মেলে,
“সারা রাত গায়ে হলুদ প্যাকেজ প্রোগ্রাম করে ৪:৩০ এ ঘুমালাম, ৫:৫০ এ উঠে ফজর নামাজ পড়ে আআআআর ঘুমাতে পারলাম না”
যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনৈতিক প্রেম-ভালোবাসা, দেহ দেয়া-নেয়ায় মগ্ন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে প্রেম ভালোবাসার জন্য রয়েছে প্রাকৃতিক অপরূপ পাগলকরা পরিবেশ, সেখানে আল্লাহর এই প্রিয় বান্দা নিজেকে সঁপে দেন তাঁরই ইবাদতে। জীবনের শেষ রমজান মাসে তাই বাবা-মা ভাই-বোনকে দূরে রেখে কেবল আল্লাহকে খুশী করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থেকে যান রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফে আল্লাহর সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিতে। রমজানে ফেসবুকে দেয়া তার কয়েকটি স্ট্যাটাস,
“রোজা রাখা ফরজ, আপনি রোজা রেখেছেন কি?”
“মাগফেরাতের ১০ দিন শুরু হলো। এ-ই সময় আমাদের গুণাহগুলো মাফ করিয়ে নেয়ার। আসুন আমরা আমাদের অতীতের ভুলগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে আবার নিষ্পাপ জীবন যাপন করি।”
“সূবর্ণ সুযোগ! সূবর্ণ সুযোগ!! সূবর্ণ সুযোগ!!!
গোনাহগার বান্দাদের জন্য গোনাহ মাফ করার সূবর্ণ সুযোগ। রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফেরাতের। এই ১০ দিনে আপনিও পারেন আপনার গোনাহগুলো মাফ করিয়ে নিতে।
তাহলে আর দেরী কেন?
আজই শুরু করুন আল্লাহর দরবারে ধর্ণ দেয়া।”
“আমরা সারা বছর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারি না। কিন্তু রমজান মাসে তা খুবই সহজ। আমরা যখন সেহরী খেতে ঘুম থেকে জাগি, তখন ২/৪ রাকাত বা তার বেশী নামাজ পড়ে নিতে পারি। মাত্র ১০ মিনিটে আমরা আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভ করতে পারি। আসুন আমরা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে চেষ্টা করি।”
“আফসোস!!! আজ মুসলিম হয়ে এই রমজান মাসেও ক্রিকেট খেলা!!! কি জবাব দিবে তারা আল্লাহর কাছে? নামাজ নাই, রোজা নাই, রহমত কিভাবে আসবে? তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এভাবে গো-হারাটা আমার কাছে স্বাভাবিক।”
“আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস। এই দিনে ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে বদর প্রান্তরে মুসলিমদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে কাফেরদের বিশাল ১০০০ লোকের বাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলমানদের ৩১৩ জনের ক্ষুদ্র বাহিনীকে আল্লাহ তায়ালা বিজয়ী করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় ইসলামের জয়যাত্রা।
২১ শতকের এই তাগুতদের বিরুদ্ধে সেই বদর প্রান্তরের মুজাহিদদের হাতিয়ার আবার গর্জে উঠুক। জেগে উঠুক মুসলিম, মুক্তি আসুক এই জাতির।”
“বদরের প্রান্তরে যে প্রভূ
মুমিনের পাশে ছিল অবিচল
হাজার বছর পরে রহম করণে
সেই প্রভূ আজো আছে অবিকল”
আমি জানিনা, তিনি তার শাহাদাতের সুসংবাদ আগেই পেয়েছিলেন কি না। তবে তার ওয়ালে ২ ফেব্রুয়ারী লেখা তার বাবার দাওয়াত ” মাসুদ আব্বু কেমন আছ? ফেব্রুয়ারী ১২তে বাড়ী আসবে কি?” এর কোন জবাব তিনি দেন নি। কেন? তিনি কি তার বাবাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলেন, বেহেস্তের সুসংবাদ নিয়ে তিনি নির্ধারিত তারিখের ৪ দিন আগেই বাড়ীতে পৌঁছে তাকে চমকে দিতে চেয়েছেন?

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিন “স্বপ্নিল প্রান্তর” এ “অদৃশ্য শত্রুর মুখোশ উন্মোচন” নামে একটি ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস লেখেন, যে উপন্যাসের নায়ককে তিনি শহীদ হিসেবে উপস্থাপন করার ব্যাপারে তার বোনের সাথে আলোচনা করেন। তিনি কি নিজেকেই তার উপন্যাসের নায়কের ভূমিকায় উপস্থাপন করে স্বাক্ষ্য রেখে গেলেন তার শাহাদাতের? তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করার ইচ্ছে না থাকলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ২০০৬ সালের ১৬ ডিসেম্বরেই ইন্তেকাল করাতে পারতেন। ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে তার দেয়া স্ট্যাটাস যেন এরই সাক্ষী,
“২০০৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমার জীবনের একটা স্মরণীয় দিন।
ঐ দিন ফজরের নামাজ পড়ে একা একা ঘুরতে বের হয়েছিলাম। ক্রিসেন্ট রোড দিয়ে ফেরার সময় আচমকা ৫/৬ জন ছিনতাইকারী আমার উপর হামলা করে। তারা আমাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাথারী কোপাতে থাকে এবং কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমার মোবাইল নিয়ে চলে যায়। তারা আমাকে প্রায় ১৫টি কোপ দিয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঐ দিন থেকে আমার আবার নতুন জীবন শুরু।”
হ্যা, আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শোকর যে তিনি আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তিনি শুধু আপনাকে নতুন জীবনই দেননি, দিয়েছেন অফুরন্ত জীবন, যার শুরু আছে, শেষ নেই, যে জীবনের নাম শাহাদাত। হে আল্লাহ, আমরা ফেসবুকের বন্ধুরা সাক্ষী দিচ্ছি তিনি তোমার পথে জীবন দিয়ে অমর হয়েছেন। হয়েছেন বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। না, তাকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি। তার পরিচিত জনেরা জানেন তার অনেককিছুই, তারাই স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন তার শাহাদাতের। আমি শুধু তাকে দেখেছি ফেসবুকে। ফেসবুকে তার প্রতিটি স্ট্যাটাস উজ্জল নক্ষত্রের মতো সাক্ষী দিচ্ছে তিনি শহীদ হয়েছেন। হে প্রভূ, পরকালে শহীদের প্রথম সারিতেই তাকে আমরা দেখতে চাই।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে আপনাদের কারো বুঝতে বাকী নেই যে আল্লাহর সেই প্রিয় বান্দা আর কেউ নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সেক্রেটারী ও ১২১ নম্বর রুমের আবাসিক ছাত্র মাসউদ বিন হাবিব এর কথাই এতক্ষণ তুলে ধরেছি। এক সময় ১২১ নম্বর হলটি গুরুত্ব পেয়েছিল বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঐ হলের প্রাক্তন ছাত্র হওয়ায়, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ১২১ নম্বর রুমটিকে ধন্য করলেন মাসুদের পবিত্র রক্তে, যে রুম থেকে সদা হাস্যোজ্জল মাসুদ মোবাইলে জবাব দিতেন, ” ১২১ থেকে আমি মাসউদ বিন হাবিব বলছি। বলুন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি।” হ্যা মাসুদ ভাই, তুমি আমাদেরকে সর্বোত্তম সাহায্য করেছ, আমাদেরকে জানিয়ে গেছ, বাতিলের মোকাবেলায় দৃঢ়তার সাথে লড়াই করে কিভাবে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায়, কিভাবে শাহাদাতের মাধ্যমে অফুরন্ত জীবন লাভ করা যায়।

মাসউদ বিন হাবিব, শিবিরের ১৩৭তম শহীদই শুধু নন, জামেয়া কাসেমিয়া নরসিংদীর সাবেক জিএস মাসুদ জামেয়ার ছাত্রদের মাঝে সর্বপ্রথম শাহাদাতের সৌভাগ্য অর্জনকারী। আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার কুমারহাটী গ্রামের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা হাবিবুর রহমান ও মোছা: হনুফা বেগমের ৫ম ছেলে মাসুদ ছিলেন পরিবারের সকলের প্রাণের স্পন্দন। মাসুদের অন্যান্য ভাই, খালেদ বিন হাবিব, সাইদুর রহমান, ইংল্যান্ড ইউরো বাংলা পত্রিকার ম্যানেজার মওদুদ বিন হাবিব, ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমান তুফায়েল এবং দু’বোন  মোছা: ফেরদৌসী আক্তার ও মোছা: তামান্না আক্তার। আজ মাসউদ কেবল তাদেরই ভাই নয়, দেশের কোটি তৌহিদী জনতার প্রাণপ্রিয় ভাইয়ের আসন অলঙ্কৃত করে আছেন তিনি। এক সন্তানের শাহাদাতের বিনিময়ে হনুফা বেগম লক্ষ কোটি সন্তানের গর্বিত মায়ের সম্মান পেয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন ধন্য হয়েছে বেহেস্তী ফুল-ফলে সুশোভিত হাবিবুর রহমানের পরিবারকে পেয়ে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন হাবিবুর রহমানের বেহেস্তী বাগানের মতো লাখো বাগান সুগন্ধ ছড়াবে বাংলাদেশের সবুজ ময়দানে। আর সেদিনই হবে কাঙ্খিত ইসলামী বিপ্লব।

(লেখাটি কপি করা হয়েছে  শাহরিয়ারের স্বপ্নবিলাস থেকে)

3 comments:

Mnizam বলেছেন...

Allah onake kobul kore nin. amin!

নামহীন বলেছেন...

Allah kobul korun.

Md. Sahedul Islam বলেছেন...

Hey Allah!! Tomi Amar Ei Vaier Shadath Kobol Koro abong Bangladeh- e- Islam Kay Bijoy Koron. Amin!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম