ডাউনলোড |
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
কর্মপদ্ধতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
ভূমিকা
আল্লাহর এই জমীনে সকল প্রকার জুলুম ও নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ করে আল-কুরআন ও আল-হাদীসের আলোকে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর এক আদর্শ ইসলামী সমাজ গড়ে তোলার মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। চমক লাগানো সাময়িক কোন উদ্দেশ্য হাসিল এর লক্ষ্য নয়।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য তাই চিরন্তন, শ্বাশ্বত। সমাজের প্রতিটি অন্যায়,জাহেলিয়াত ও খোদাদ্রোহিতার বিরুদ্ধে রয়েছে এর বলিষ্ঠ ভূমিকা। বলাই বাহুল্য, আধুনিক জাহেলিয়াতের যুগে এর চলার পথ হবে সংগ্রামমূখর। এ কঠিন ও সংগ্রামী পথ স্বাভাবিকভাবেই দাবী করে বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিভিত্তিক বাস্তব পদক্ষেপ। তাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মসূচী রচিত হয়েছে এর উদ্দেশ্য, মর্যাদা, বৈশিষ্ট্য ও আন্দোলনের মেজাজকে সামনে রেখে। আর এই কর্মসূচীকে বাস্তবায়নে জন্য গ্রহণ করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি।
কর্মপদ্ধতি বা কর্মকৌশল (Strategy) ছাড়া কোন আন্দোলন সফলকাম হতে পারে না। একটা আন্দোলন বা সংগঠনের সফলতার জন্য প্রয়োজন এর কর্মশক্তি, জনশক্তি ও জনসমর্থনের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার। ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, চিন্তাশক্তি, আন্দোলনের পিছনের জনসমর্থন-সবকিছু আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। আর এসব উপাদানকে ফলপ্রয়সূ এবং কার্যকর খাতে কাজে লাগানোও এক বিরাট আমানত। বাতিলের পর্বতপ্রমাণ ঐশ্বর্য এবং কুসংস্কারের উত্তাল তরঙ্গের সামনে মুষ্টিমেয় মর্দে মুমিনের বিজয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের খাছ রহমতেই সম্ভব- একথা সত্য। কিন্তু সঠিক কর্মপদ্ধতি অবলম্বন না করে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করলে তা যে আমানতের সুস্পষ্ট খিয়ানত এতেও কোন সন্দেহ নেই। তাই একটি বৈজ্ঞানিক এবং বাস্তবসম্মত কর্মপদ্ধতি ইসলামী আন্দোলনের জন্য অপরিহার্য।
ইসলামের সাথে অন্যান্য বাতিল মতাদর্শের পার্থক্য শুধুমাত্র দর্শনগত বা তাত্ত্বিক নয়-পদ্ধতিগত দিকেও রয়েছে এক বিরাট পার্থক্য। ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত পথেই বাতিলের অপসারণ ইসলামের কাম্য। এ ব্যাপারে বাতিলের সাথে আপোষের কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই ইসলামকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার পদ্ধতিও অন্যান্য আন্দোলনের কর্মপদ্ধতি থেকে ভিন্ন। এই চরম সত্যটা আমাদের ভুললে চলবে না। অন্যান্য আন্দোলনের কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে আপাততঃ সাফল্যের প্রবণতা যেন আমাদের মগজকে আচ্ছন্ন করতে না পারে। আমাদের অন্তরে এ কথা গেঁথে নিতে হবে যে, ইসলামী আন্দোলনের কর্মপদ্ধতির ভিত্তি ও অন্যান্য আন্দোলনের ভিত্তি কখনও এক হতে পারে না। পর্যালোচনার মাধ্যমে কিছু কৌশলগত দিক হয়তো আমরা গ্রহণ করতে পারি, কিন্তু সবসময় সজাগ থাকতে হবে যেন এই গ্রহণের সময়ও ইসলামী আন্দোলনের মৌলিক ভিত্তি ও নীতিবোধের উপর কোনরূপ আঘাত না আসে।
ইসলামী আন্দলনের কর্মপদ্ধতি একমাত্র রাসূলে খোদা(সঃ)-এর অনুসৃত পদ্ধতি। যুগে যুগে ইসলামী রেঁনেসার ইতিহাস লব্ধ অভিজ্ঞতা এই কর্মপদ্ধতিকে করেছে সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী।আর এই অভিজ্ঞতার পটভূমিতে সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী ঐতিহ্য। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শাহাদাতের পবিত্র রক্তের যোজনায় সৃষ্টি হয়েছ নতুন ইতিহাস। ইসলামি ছাত্রশিবিরের বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতিও ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্বাভাবিক ফলশ্রুতি।
কর্মপদ্ধতির কতগুলো কৌশলগত দিক রয়েছে। এই কর্মকৌশল পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পরিবর্তনশীল। তাই এই কর্মকৌশল স্থায়ীভাবে উল্লেখ সম্ভব নয় আর এটা অবাস্তবও। নির্দিষ্টভাবে কর্মপদ্ধতিএ মোটামুটি দিকগুলো পরিবেশিত হলো। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকে কর্মীদের মাধ্যমে এবং সর্বোপরি হেকমতের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে এইসব কৌশলগত দিকও রপ্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পাঁচ দফা কর্মসূচী ও তার বাস্তবায়ন
সংগঠনের একজন আদর্শ কর্মী হতে হলে যেমন প্রয়োজন মজবুত ঈমান, খোদাভীতি, আদর্শের সুস্পষ্ট জ্ঞান, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, কর্মস্পৃহা ও চারিত্রিক মাধুর্য তেমনি প্রয়োজন এর কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতির যথার্থ অনুধাবন। কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি সংক্রান্ত অজ্ঞতা বা জ্ঞানের স্বল্পতা যাবতীয় প্রচেষ্টা নিস্ফল করে দেয়। ইসলামী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবিরেরও রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবমুখি কর্মসূচী এবং তা বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে একটি বিজ্ঞানসম্মত কর্মপদ্ধতি।
তাই এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে এই কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি জানতে হবে, অনুধাবন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন বার বার অধ্যয়নের। প্রয়োজন চিন্তা, গবেষণা ও অধ্যবসায়ের প্রয়োগ। কর্মপদ্ধতির সাথে সক্রিয় কাজের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। শুধু তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্য দিয়ে কর্মপদ্ধতির সবকিছু পরিষ্কার হওয়া সম্ভব নয়। সক্রিয় ও বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা কর্মপদ্ধতির প্রাণশক্তি। তাই আলোচনা পর্যালোচনার সাথে সাথে কর্মপদ্ধতিকে বুঝতে হবে- স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করতে হবে।
ইতিহাসলব্ধ জ্ঞান কর্মপদ্ধতিকে করে মার্জিত, সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য যুগে যুগে আন্দোলনের যে মেজাজের জন্ম দিয়েছে তা কর্মীদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।
তাই ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী ইতিহাসের পটভূমিতে এর কর্মপদ্ধতি অধ্যয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। নিম্নে আমাদের পাঁচ দফা কর্মসূচীর বিশ্লেষণ ও তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো। যারা এ সংগঠনের সাথে সংস্লিষ্ট থেকে সংগঠণের কর্মী হিসাবে নিজ দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে চান তাদেরকে এটা বুঝতে হবে এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে।
প্রথম দফা কর্মসূচীঃ দাওয়াত
“তরূণ ছাত্র সমাজের কছে ইসলামের আহ্বান পৌঁছিয়ে তাদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং জীবনে ইসলামের পূর্ণ অনুশীলনের দায়িত্বানুভুতি জাগ্রত করা।”
এ দফায় তিনটি দিক রয়েছেঃ
প্রথমতঃ- তরূণ ছাত্র সমাজের কাছে ইসলামের আহ্বান পৌঁছিয়ে দেয়া অর্থাৎ ইসলমের ব্যাপক প্রচার।
দ্বিতীয়তঃ- ছাত্রদের মাঝে জ্ঞান অর্জনের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।
তৃতীয়তঃ- ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার জন্যে ছাত্রদের মধ্যে দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।
এ তিনটি দিকের কাজ হলেই আমাদের বুঝতে হবে প্রথম দফার কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে।
সংক্ষেপে এ দফাকে ‘দাওয়াত’ বলা হয়। নিম্নে এ দফার করণীয় কাজগুলো উল্লেখ করা হলঃ
o ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার ও সম্প্রীতি স্থাপন
o সাপ্তাহিক ও মাসিক সাধারণ সভা
o সিম্পোজিয়াম, সেমিনার
o চা-চক্র, বনভোজন
o নবাগত সংবর্ধনা
o বিতর্ক সভা, রচনা প্রতিযগিতা ও সাধারন জ্ঞানের আসর
o পোষ্টারিং, দেয়াল লিখন, পরিচিতি ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সাময়িকী বিতরন।
o ক্যাসেট, সিডি ভিসিডি প্রভৃতি বিতরণ
ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার ও সম্প্রীতি স্থাপন
দাওয়াতী কাজের সর্বোত্তম পন্থা হলো ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস, গ্রাম ও মহল্লা থেকে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে এ পন্থায় কাজ করতে হবে। এরই নাম টার্গেট নির্ধারন। ছাত্র বেছে নেবার সময় নিম্নোক্ত গুনাবলীর প্রতি নজর রাখা উচিৎ।
- মেধাবী ছাত্র
- বুদ্ধিমান ও কর্মঠ
- চরিত্রবান
- নেতৃত্বের গুনাবলী সম্পন্ন
- সমাজে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালী।
ব্যক্তিগত সাক্ষাতকারের জন্যে নিম্নোক্ত পন্থা অবলম্বন করা উচিৎঃ
ক) পরিকল্পনা
টার্গেটকৃত ছাত্রকে অগ্রসর করে নেয়ার জন্য একটি বাস্তব পরিকল্পনা থাকা চাই। তা প্রয়োজন অনুযায়ি অল্প অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য হতে পারে। পরিকল্পিত কাজ করলেই সাক্ষাতকারী একজন ছাত্রের চিন্তার পরিশুদ্ধির জন্য যথার্থ চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পায়। অনেকগুলো ছাত্রকে একসাথে টার্গেটের আওতায় না এনে সুযোগ এবং সামর্থ অনুযায়ী কমসংখ্যক ছাত্রের উপর অত্যন্ত ধৈর্য ও আন্তরিকতার সাথে নিয়মিত কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
খ) সম্প্রীতি স্থাপন
ব্যক্তিগত সাক্ষাতকারের মাধ্যমে যার কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে হবে তাঁর সাথে পূর্বেই সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। এমন এক আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেন সে সাক্ষাতকারীকে তাঁর শুভাকাংখী হিসাবে বিশ্বাস করতে পারে।
গ) ক্রমধারা অবলম্বন
প্রথম দেখাতেই মূল দাওয়াত পেশ না করে ক্রমান্বয়ে এ কাজ সুসম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে বন্ধুত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে এমন এক পর্যায়ে আনতে হবে যাতে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপিত হয়। একে অন্যের কল্যাণকামী হয়। প্রথমতঃ টার্গেটকৃত ছাত্রের মন-মগজে প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে যাবতীয় ভুল ধারণার অসারতা বুদ্ধিমত্তার সাথে তুলে ধরতে হবে। দ্বিতীয়তঃ আখেরাত তথা পরকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে এবং যাবতীয় সমস্যার সমাধানে ইসলামের সুমহান আদর্শের কার্যকারীতা তুলে ধরতে হবে। ইসলাম সংক্রান্ত যাবতীয় ভুল ধারণা দূর করে এর প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করতে হবে। ইসলামের অনুশাসনগুলোর(ইবাদত) প্রতি পরোক্ষ, কোন কোন সময় প্রত্যক্ষভাবে সজাগ করতে হবে।তৃতীয়তঃ তাঁকে ইসলামী আন্দোলনের ও সাংগঠনিক জীবনের প্রয়জনীয়তা উপলব্ধি করাতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জীবন, সাহাবায়ে কেরামদের জীবনের ঘটনাবলি, যুগে যুগে ইসলামি আন্দোলনের সৃষ্টিকারী মহৎ ব্যক্তিদের জীবনীর মাধ্যমে তাকে আন্দোলন ও সংগঠনের প্রয়জনীয়তা বুঝাতে হবে। এ পর্যন্ত কৃতকার্য হলে পরবর্তি পর্যায়ে এরপর তাকে প্রত্যক্ষভাবে সংগঠনে অংশগ্রণ করার আহ্বান জানাতে হবে। দাওয়াতি কাজের এটাই স্বাভাবিক পন্থা।
ঘ) যোগাযোগকারীর বৈশিষ্ট্য
যোগাযোগকারীকে নিম্নলিখিত বৈশিষ্টের অধিকারী হতে হবে। কম কথা বলবেন। অত্যাধিক ধৈর্যের পরিচয় দিবেন। বেশি কথার পরিবর্তে চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে প্রভাব সৃষ্টি করবেন। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও স্পষ্ট ধারণা রাখবেন। কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে ব্যক্তিত্ব অক্ষুন্ন রেখে সময় নিবেন। গোজামিলের আশ্রয় নিবেন না। যার সাথে সাক্ষাত করা হচ্ছে তাঁর মন মানসিকতার দিকে লক্ষ্য রাখবেন।যোগাযোগকৃত ছাত্রের রোগ দূর করার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ন্যায় কাজ করবেন। তাঁর দুর্বলতার সমলোচনা না করে সৎ গুনাবলি বিকাশে সহযোগিতা করবেন। ব্যবহারে অমায়িক হবেন। তাঁর সুখ-দুঃখের অংশীদার হবেন। মনকে অহেতুক ধারণা থেকে মুক্ত রাখবেন। সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একসংগে ভ্রমণ, একত্রে নাস্তা করা, খাওয়া, নিজ বাসায় নিয়ে আসা, তাঁর বাসায় যাওয়া, উপহার দেয়া ইত্যাদি উপায় অবলম্বন করতে হবে।
ঙ) ক্রমান্বয়ে কর্মী পর্যায়ে নিয়ে আসা
একজন ছাত্রকে শুধু আদর্শ, আন্দোলন ও সংগঠনের দাওয়াত দিলেই চলবে না। তাকে ক্রমান্বয়ে কর্মী পর্যায়ে আনতে হবে। আমাদের সংগঠনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য চাই কর্মীর। একজন সমর্থককে কর্মী রূপে গড়তে হলে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছাড়াও নিম্নোক্ত উপায় গুলো কাজে লাগাতে হবেঃ
- সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আগ্রহি করতে হবে।
- সাধারণ সভা, চা চক্র ও বনভোজনে শামিল করতে হবে।
- ছাত্রদের জ্ঞান বুদ্ধি, আন্তরিকতা, মানসিকতা ও ঈমানের দৃঢ়তা লক্ষ্য করে পরিকল্পিত ভাবে বই পড়াতে হবে।
- বিভিন্ন ইবাদতের প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে হবে।
- সময় সময় মন মানসিকতা বুঝে তাকে ছোট খাট কাজ দিতে হবে।
এছাড়াও মসজিদে, ক্যান্টিনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সাহিত্য সভা, বিতর্ক সভা ইত্যাদি সমাবেশে ছাত্রদের মধ্যে দাওয়াত দানে সচেতন থাকতে হবে। অর্থাৎ দাওয়াত কখোনো সরাসরি হবে, কখোনো হবে পরোক্ষভাবে।
মুসলমান একটি মিশনারি জাতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলমান জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর দ্বীনের পথে মানুষকে ডাকার জন্য। মুসলমানদের জীবনের এটাই একমাত্র মিশন। যতদিন মুসলমানরা দুনিয়ার বুকে এ দায়িত্ব পালন করেছিল ততদিন তারাই ছিল দুনিয়ার বুকে নেতা, আর যখনই তারা এ দায়িত্ব পালনে গাফেল হয় তখনই তাদের উপর নেমে এল লাঞ্ছনা। তাই আল্লাহর জমীনে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বকেই আমাদের জীবনের মিশন হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।
সাপ্তাহিক সাধারন সভা
নিয়মিত কাজের মধ্যে সাপ্তাহিক সাধারন সভা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে এক জায়গায় জমায়েত হওয়ার মাধ্যমে ইসলামী জ্ঞানার্জন ছাড়াও পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। সপ্তাহে প্রতিটি কর্মী যতজন ছত্রের সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষৎকারের মাধ্যমে সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছায় তাদেরকে এ সভায় দাওয়াত দিতে হয়। এ সভাগুলো হচ্ছে প্রচারধর্মী। এগুলো সমষ্টিগত ভাবে দাওয়াতি কাজ করার ফোরাম হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এ ছড়াও সভায় বক্তৃতা ও কুরআনের অংশ বিশেষ অর্থসহ পেশ করার মাধ্যমে কর্মীদের যোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। সাপ্তাহিক সাধারন সভায় কর্মসূচি নিম্নরুপ হওয়া উচিৎঃ
o অর্থসহ কুরআন তেলোয়াত
o বিষয়ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা
o সভাপতির ভাষণ/ বক্তব্য
মাসিক সাধারন সভা
প্রতিমাসে একটি করে মাসিক সাধারণ সভার আয়োজন করাও আমাদের নিয়মিত দাওয়াতি কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। সংগঠনের প্রাক্তন কোন কর্মী, অভিজ্ঞ যে কোন কর্মী বা ব্যক্তি, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর এতে আলোচনা পেশ করবেন।
এর কার্যসূচি হবে নিম্নরুপঃ
o ব্যাখ্যা সহ কুরআনের তেলোয়াত
o নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বক্তৃতা
o সংগঠনের পরিচয় পেশ
o সভাপতির বক্তব্য
o পরিচিতি বিতরণ
এ সভায় বেশীসংখ্যক নতুন ছাত্র উপস্থিত করার চেষ্টা করা প্রত্যেক কর্মীর দায়িত্ব।
সিম্পোজিয়াম
ঊর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমতিক্রমে কোন উপলক্ষকে সামনে রেখে সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা যেতে পারে। কোন হলে বা অডিটরিয়ামে যে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একজন বিশিষ্ট বক্তার দ্বারা বক্তৃতার আয়োজন করা যেতে পারে। সিম্পোজয়ামকে আকর্ষণীয় অ সুশৃংখল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এতে ছাত্র ছড়াও উৎসাহী যে কোন ব্যক্তিই থাকতে পারেন। সিম্পোজিয়ামের কার্যসূচী সাধারণতঃ নিম্নরূপঃ
o ব্যাখ্যাসহ কুরআন তেলোয়াত
o নির্দিষ্ট বিষয়ে বক্তৃতা
o প্রশ্নোত্তর
o সংগঠনের পরিচয়
o সভাপতির ভাষণ
সেমিনার
কেন্দ্রীয় সংগঠনের অনুমতিক্রমে বছরে একবার অথবা দুইবার উপযুক্ত পরিবেশ ও সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা, রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর জীবন, বিভিন্ন সমস্যার ইসলামী সমাধান ইত্যাদি বিষয়ের উপর সেমিনার করা যেতে পারে। একটি বিষয়ের বিভিন্ন দিকের উপর কয়েকজন বক্তা এসে বক্তৃতা করবেন। এজন্য চিন্তাশীল ও সুযোগ্য বক্তা প্রয়োজন। সেমিনারে এক বা একাধিক অধিবেশন হতে পারে। ইসলামী প্রজ্ঞা সম্পন্ন কোন ব্যক্তিকে সভাপতি মনোনীত করতে হবে।
চা চক্র
দাওয়াতী কাজের জন্য এটা একটা আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম। অনুষ্ঠানের বৈচিত্র ও আনন্দঘন পরিবেশে ছাত্রসমাজের কাছে আন্দলনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়। টার্গেটকৃত ছাত্রদেরকে এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রত্যেক কর্মীকে চা-চক্রের খরচ নির্বাহের জন্য নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে হয়। আমন্ত্রিতদের কেউ আগ্রহ করে চাঁদা দিতে চাইলে নেয়া যেতে পারে। চা-চক্রের জন্য নিরিবিলি কোন জায়গা বেছে নেয়া প্রয়োজন। স্মরণ রাখতে হবে নতুন ছাত্রদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যেই চা-চক্রের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল ব্যক্তির আগমন উপলক্ষেও চা-চক্রের আয়োজন করা যেতে পারে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্র সংসদ কর্মকর্তাদেরকেও এরূপ চক্রে দাওয়াত দেয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পরিবেশ গুরু-গম্ভীর হয়ে না পড়ে অথবা মাত্রারিক্ত হালকা না হয়। চা-চক্রের কার্যসূচী নিম্নরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয়ঃ
o তেলোয়াতে কুরআন
o পারস্পরিক পরিচয়
o কবিতা আবৃত্তি, হামদ, নাত, শিক্ষণীয় কোন ঘটনার উল্লেখ ইত্যাদি
o প্রশ্নোত্তর
o সভাপতির বক্তব্য
o আপ্যায়ন
o সমাপ্তি ঘোষণা
বনভোজন
ছাত্রদের পাঠ্য জীবনের একঘেঁয়েমি দূর করার জন্য এ ধরনের কর্মসূচীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বনভোজনে আনন্দ লাভের সাথে সাথে ইসলামী পরিবেশও উপভোগ করা যায়।
বনভোজনের জন্য শহরের উপকন্ঠে অথবা ঐতিহাসিক কোন স্থানে যাওয়ার প্রোগ্রাম নিতে হবে। পূর্বাহ্নেই বনভোজনের তারিখ, বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব বণ্টন, চাঁদার হার, একত্রিত হবার সময় ও স্থান, রওনা হবার সময় ইত্যাদি নির্ধারণ করে নিতে হবে। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে কর্মসূচী জানিয়ে দিতে হবে। কর্মসূচীর মধ্যে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, রশি টানাটানি, সাঁতার কাটা, গ্রুপ ভ্রমন, বিভিন্ন শিক্ষামূলক আসর থাকবে। মনে রাখতে হবে উদ্যোক্তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে পরিবেশকে আনন্দময় সুশৃঙ্খল এবং শিক্ষামূলক করে তোলার উপরেই প্রোগ্রামের সাফল্য নির্ভর করে।
বিতর্কসভা, রচনা এবং বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ও সাধারণ জ্ঞানের আসর
ছাত্রদের সাহিত্য ও সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের জন্য এসব প্রোগ্রাম নিতে হয়। আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুর উপর প্রতিযোগিতা রাখতে হবে। প্রতিযোগিতায় পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকাটা উত্তম। প্রতিযোগিতার নিয়ম-কানুন পূর্বেই জানিয়ে দিতে হবে।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত আক্রমণ, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ ও যেনতেন প্রকারে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার মনোভাব পরিত্যাজ্য এবং প্রতিপক্ষের উন্নত যুক্তির নিকট নিজের যুক্তি সমর্পনের মানসিকতা থাকতে হবে।
পোস্টারিং, দেয়াল লিখন, পরিচিতি ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সাময়িকী বিতরণ
সময় সময় বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে শিবিরের বৈশিষ্ট্য, কর্মসূচী ও দাওয়াতের উপর পোস্টারিং ও দেয়াল লিখন হতে পারে। এসব দাওয়াতী পোস্টারিং ও দেয়াল লিখন সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে লেখা প্রয়োজন।
ভর্তি ও পরীক্ষার সময় নবীনদের উদ্দেশ্যে অভিনন্দনপত্র এবং পরিচিতি প্রভৃতি ছাত্রদের নিকট বিতরণ করা প্রয়োজন। মাঝে মাঝে গ্রুপে সমষ্টিগত দাওয়াতী কাজ করার স্পময় পরিচিতি বিতরণ অভিযান চালান যেতে পারে। শুভাকাঙ্খী শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী মহলেও পরিচিতি পৌঁছান দরকার।
সংগঠন থকে বিভিন্ন সময় সাময়িকী স্মারক ও পত্রিকা প্রকাশ এবং সুষ্ঠু বিতরণের মাধ্যমেও আমাদের দাওয়াত ছাত্রদের কাছে পৌঁছানো যায়। তবে এ ধরনের কিছু প্রকাশ করতে হলে কেন্দ্রীয় সংগঠনের অনুমোদন প্রয়োজন।
এছাড়াও দাওয়াতী কর্মসূচী সমূহ
গ্রুপ দাওয়াতী কাজঃ
উপশাখারসমূহের গ্রুপ দাওয়াতী কাজ পরিচালিত হবে। এসব দাওয়াতী গ্রুপে কমপক্ষে একজন থাকবেন যিনি কুরআন হাদিসের আলোকে লোকদের নিকট গ্রহণযোগ্য উপায়ে সংগঠনের আহ্বান পৌঁছাতে সক্ষম হবেন।
দাওয়াতী গ্রুপ প্রেরণঃ
কাজ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল এলাকায় বিভিন্ন শাখা থেকে সুবিধাজনক সময়ে এক বা একাধিক দাওয়াতী গ্রুপ প্রেরিত হবে। যে এলাকায় গ্রুপ প্রেরণ করা হবে পূর্বেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামের আয়োজন করা হবে।
দাওয়াতী সপ্তাহ ও পক্ষঃ
বছরের সুবিধাজনক সময়ে কেন্দ্র থেকে এই সপ্তাহ বা পক্ষ ঘোষিত হয়। সাধারণ ও স্কুল দাওয়াতী সপ্তাহ হিসাবে পৃথক পৃথক সপ্তাহ বা পক্ষ ঘোষণা হয়ে থাকে। একযোগে সকল শাখা পূর্ব-পরিকল্পিত উপায়ে এই সপ্তাহ বা পক্ষ পালন করবে। কোন শাখা নির্দিষ্ট সময়ে সপ্তাহ পালনে অপারগ হলে কেন্দ্র থেকে অনুমতি নিয়ে নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে এ কর্মসূচি পালন করতে হবে। এ সপ্তাহে এলাকার সকল ছাত্রের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর পরিকল্পনা নিতে হবে। দাওয়াতী সপ্তাহ উপলক্ষে শাখাসমূহে প্রয়োজনীয় দাওয়াতী উপকরণ কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করবে।
মোহররামদের মাঝে কাজ
ইসলামী আন্দোলনের কাজকে মজবুত করার লক্ষ্যে কর্মী ভাইয়েরা তাদের মা-বোন এবং অন্যান্য মোহররমা আত্মীয়দের মাঝে পরিকল্পিত উপায়ে দাওয়াতী কাজ করবেন। মোহররমাদের মাঝে কাজের রিপোর্ট আলাদা ভাবে প্রদান করতে হবে।
মসজিদ ভিত্তিক দাওয়াতী কাজ
এলাকার মসজিদকে কেন্দ্র করে শাখা বা উপশাখাসমূহ দাওয়াতী কাজ করবে। পাঠাগার তৈরী, হাদীস পাঠ, বিভিন্ন দিবস পালন ইত্যাদি কর্মসূচীর মাধ্যমে মসজিদভিত্তিক দাওয়াতী কাজকে ফলপ্রয়সু করা যেতে পারে।
এছাড়া যে কোন পরিস্থিতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে কর্মীদের যোগ দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে করে উক্ত কর্মীর পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে এবং সংগঠন সম্পর্কে সাধারণ ছাত্রদের উৎসুক্য বৃদ্ধি পাবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, জ্ঞান ও বুদ্ধির জগতে আমাদেরকে শীর্ষ স্থানীয় হতে হবে। এজন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভাসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে হবে।
দ্বিতীয় দফা কর্মসূচীঃ সংগঠন
‘যে সব ছাত্র ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিতে প্রস্তুত তাদেরকে সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ করা।’
সংক্ষেপে এ দফাকে আমরা ‘সংগঠন’ বলি। যে কোন আন্দোলনেই সংগঠনের প্রয়োজন। সংগঠন বা সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া কোন আন্দোলনই সফল হতে পারে না। বিশেষ করে সংঘবদ্ধ জীবন ছাড়া বিচ্ছিন্ন হয়ে সত্যিকারের মুসলমান থাকাটাই সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন ‘ তোমরা সংঘবদ্ধ ভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (আল ইমরান ১০২) রাসূলে করীম (সঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামায়াত থেকে বের হলো সে ইসলাম থেকে দূরে সরে গেল।’ ইসলামী আন্দোলনের গোড়া থেকেই আমরা সংগঠনের অস্তিত্ব দেখতে পাই। আজকের এ পঙ্কিল পরিবেশ বাতিলের সর্বগ্রাসী ও চতুর্মুখী হামলার মোকাবেলায় এর প্রয়োজনীয়তা আরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বস্তুতঃ সংগঠন ছাড়া ইসলাম হতে পারে না। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)- এর উদ্ধৃতি এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন ‘লা ইসলামা ইল্লা বিল জামায়াত।’ অর্থাৎ সংগঠন ছাড়া ইসলাম নেই।
ইসলামের দাওয়াত পেশ করার পর যে সব ছাত্র আমাদের সাথে এর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে প্রস্তুত হয়, তাদেরকে আমাদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে। অন্তর্ভুক্তির পূর্বে ইসলামী আন্দোলনের সংগঠন হিসেবে শিবিরকে অবশ্যই বুঝতে হবে। অর্থাৎ সংগঠনের উদ্দেশ্য, কর্মসূচি, কর্মপদ্ধতি ও সংবিধান সম্পর্কে তাঁর প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে।
আমাদের সংগঠনের সদস্যপদ পার্থিব কোন সম্পদের বিনিময়ে লাভ করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন সংগঠনকে জানা, বুঝা এবং ঐকান্তিকতার সাথে অংশগ্রহন করা।
তাই আমাদের সংগঠনের কাঠামো সম্পর্কে যে কোন ছাত্রেরই ধারণা থাকা দরকার। শিবিরের সংবিধান অনুযায়ি এতে ‘সদস্য’ ও ‘সাথী’ এই দুই স্তরের কর্মী আছে। তবে সাথী হওয়ার পূর্বে একজন ছাত্রকে আরও দুইটি পর্যায় অতিক্রম করে আসতে হয় তা হলো সমর্থক এবং কর্মী।
কর্মীঃ
যে সমর্থক সক্রিয়ভাবে দাওয়াতীকাজ করেন, কর্মী সভায় নিয়মিতভাবে যোগদান করেন, বায়তুলমালে এয়ানত দেন এবং ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখেন তাঁকে আমরা কর্মী বলে থাকি। একজন কর্মী সাধারণতঃ নিম্নলিখিত কাজগুলি করবেনঃ
- কুরআন ও হাদীস নিয়মিত বুঝে পড়ার চেষ্টা করবেন।
- নিয়মিত ইসলামী সাহিত্য পড়বেন।
- ইসলামের প্রাথমিক দাবীসমূহ মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
- বায়তুল মালে নিয়মিত এয়ানত দিবেন।
- নিয়মিত ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখবেন ও দেখাবেন।
- কর্মীসভা, সাধারন সভা প্রভৃতি অনুষ্ঠানসমুহে যোগদান করবেন।
- সংগঠন কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।
সাথীঃ
একজন কর্মীকে সংবিধানের ৯ নং ধারায় বর্ণিত শর্তাবলী পূরন করে ‘সাথী’ হতে হয়। শর্তাবলী হচ্ছেঃ
- সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে ঐক্যমত পোষণ করা।
- সংগঠনের কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতির সাথে সচেতনভাবে একমত হওয়া।
- ইসলামের প্রাথমিক দায়িত্বভার পালন করা।
- সংগঠনের সামগ্রিক তৎপরতায় পূর্ণভাবে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া।
‘সাথী’রা হচ্ছেন সংগঠিনের একটি পরিপূরক শক্তি। উপরে বর্ণিত দায়িত্বসমূহ নিষ্ঠার সাথে সুচারুরূপে পালন করে সংগঠনের প্রথম সারিতে (সদস্য পর্যায়ে) পৌঁছা একজন সাথীর নৈতিক দায়িত্ব। সাথী হতে হলে ‘সাথী’ হওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় এবং তা কেন্দ্রীয় সভাপতি অথবা তার নিযুক্ত প্রতিনিধির নিকট পাঠাতে হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি বা তার প্রতিনিধি উক্ত কর্মী ‘সাথী হওয়ার উপযুক্ত বিবেচনা’ করলে তখন তাঁকে সাথী করে নেবেন।
সদস্যঃ
যখন কোন শিক্ষার্থী আমাদের এ সংগঠনের মাদ্যমে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পন করেন, যখন তিনি তার গোটা সত্ত্বাকে সংগঠনের সাথে মিশিয়ে দেন অর্থাৎ সংবিধানের ৪নং ধারার বর্ণিত শর্তসমূহ যথাযথভাবে পূরণ করেন তখন তাঁকে ‘সদস্য’ বলা হয়। সংবিধান অনুযায়ী শর্তসমূহ নিম্নরূপঃ
- সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করা।
- সংগঠনের কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতির সাথে পূর্ণ ঐক্যমত পোষণ করা এবং তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।
- সংবিধান মেনে চলা।
- ফরয ও ওয়াজিবসমূহ যথাযথভাবে পালন করা।
- কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা।
- শিবিরের লক্ষ্য ও কর্মসূচীর বিপরীত কোন সংস্থার সাথে সম্পর্ক না রাখা।
এছাড়াও একজন ‘সদস্য’কে অলিখিত বা ঐতিহ্যগত নিয়ম-শৃঙ্খলাসমূহ মেনে চলতে হয়। সদস্যরাই সংগঠনের মূল শক্তি। একটা ইমারত যেরূপ তার ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে, ভিত্তির মজবুতির উপর নির্ভর করে তদ্রুপ গোটা সংগঠন সদস্যদের সম্মিলিত শক্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের মধ্যে শিথিলতা আসলে গোটা সংগঠনের উপর স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতিক্রিয়া তড়িৎবেগে ছড়িয়ে পড়ে। সদস্যগণই হচ্ছে সংগঠনের আসল প্রতিনিধি। তাদের পরিচয়ই সংগঠনের পরিচয়। ঈমানের অত্যুজ্জ্বল আলোকে তাদেরকে উদ্ভাসিত হতে হয়। খোদাভিতির শক্তিতে তাদেরকে বলীয়ান হতে হয়। আখেরাতের সীমাহীন ও অমূল্য পুরস্কারের আকর্ষণে তাঁদের জীবনটাই হয় গতিশীল ও দুর্নিবার। তাঁদের চারিত্রিক মাধুর্যের মহৎ প্রভাবে সমাজে সৃষ্টি হয় আলোড়ন। সংগঠনের নির্দেশ যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হয়, ত্যাগ-তিতিক্ষায় অগ্রগামী থেকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হয়, জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় আল কোরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি হিসেবে।
‘সদস্য’ হওয়ার পদ্ধতি সংবিধানের ৫নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে। ‘সদস্য’ হওয়ার জন্য আবেদনপত্র কেন্দ্রীয় সভাপতি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। কোন কর্মী ‘সদস্য’ হওয়ার আবেদনপত্র পূরণ করলে স্থানীয় সভাপতি বা এলাকার দায়িত্বশীল তাঁর মন্তব্যসহ কেন্দ্রীয় সভাপতির নিকট পাঠিয়ে দেন। আবেদনপত্র পূরণ করে পাঠানোর কিছুদিন পর কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্দিষ্ট একটি ‘প্রশ্নমালা’ আবেদনকারীর নিকট পাঠান। আবেদনকারী তা পূরণ করে স্থানীয় সভাপতি বা এলাকার দায়িত্বশীলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সভাপতির নিকট পাঠিয়ে দেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি আবেদনকারীর আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে সংগঠনের সদস্যভুক্ত করেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সাংগঠনিক সুবিধার জন্যই জনশক্তিকে এরূপ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। এটি কোন শ্রেণী বিভাগ নয় বরং আদর্শ কর্মী তৈরির বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মাত্র।
দ্বিতীয় দফা কর্মসূচীকে বাস্তবায়িত করার জন্য যে সমস্ত কাজ করতে হয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হল-
কর্মী বৈঠকঃ
মাসে প্রতিটি উপশাখায় একটি কর্মী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কর্মীদের ব্যক্তিগত মান উন্নয়ন এবং সংগঠনের উন্নতি ও গতিশীলতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে কর্মী বৈঠক করতে হয়। কর্মী বৈঠকের সর্বোচ্চ সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। কর্মী বৈঠকের কার্যসূচী নিম্নরুপঃ
কার্যসূচীঃ
- অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত --- ১০ মিনিট
- ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ, মন্তব্য ও পরামর্শ --- ২৫ মিনিট
- পরিকল্পনা গ্রহন --- ২০ মিনিট
- কর্ম বণ্টন --- ১০ মিনিট
- সভাপতির বক্তব্য ও মুনাজাত --- ৫ মিনিট
সাথী বৈঠকঃ
সাথী শাখাসমূহে প্রতি মাসে একবার সাথী বৈঠক করতে হবে। মাসের শুরুর দিকে বৈঠক করলে ভাল হয়। সাথী বৈঠকের সর্বচ্চ সময় ৩ ঘণ্টা। সাথী বৈঠকের কার্যসূচী নিম্নরূপ হবেঃ
- দারসে কুরান/দারসে হাদীস --- ২০ মিনিট
- ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা, মন্তব্য ও পরামর্শ --- ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট
- শাখার মাসিক রিপোর্ট পেশ, ও পর্যালোচনা --- ২০ মিনিট
- শাখার পরিকল্পনা গ্রহন --- ১৫ মিনিট
- বিবিধ আলোচনা --- ২০ মিনিট
- এহতেসাব, সমাপনী/মুনাজাত --- ১০ মিনিট
সদস্য বৈঠকঃ
সদস্য শাখাগুলোতে নিয়মিতভাবে মাসে একবার সদস্য বৈঠক করতে হবে। মাসের প্রথমের দিকে বৈঠক হওয়া প্রয়োজন। বৈঠক নিরিবিলি জায়গায় ও প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে করতে হবে। এক্ষেত্রে অযথা সময়কে দীর্ঘায়িত করা অথবা সময়ের কার্পণ্য প্রদর্শন ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেহেতু সদস্যরাই হচ্ছেন সংগঠনের প্রাণ সেহেতু ‘সদস্য বৈঠক’ সুচারুরূপে যথার্থ মেজাজে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিয়ে করার উপর কাজের গতিশীলতা নির্ভরশীল। সদস্য বৈঠকের কার্যসূচী নিম্নরূপঃ
কার্যসূচীঃ
- দারসে কুরআন/দারসে হাদিস।
- বিগত মাসের রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা, মন্তব্য ও পরামর্শ।
- বিশেষ সমস্যা থাকলে আলোচনা।
- মাসিক পরিকল্পনা প্রণয়ন।
- ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা।
- এহতেসাব।
- সভাপতির বক্তব্য।
দায়িত্বশীল বৈঠকঃ
থানা শাখা, সাথী শাখা, সদস্য শাখা জেলা শাখা সমূহ প্রতি মাসে একটি দায়িত্বশীল বৈঠক করবে। দায়িত্বশীল বৈঠকের সর্বোচ্চ সময় ২ ঘণ্টা হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ বৈঠকের কার্যসূচী নিম্নরূপ হবেঃ
কার্যসূচীঃ
-অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত --- ১০ মিনিট
-বিগত মাসের রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা ও পরামর্শ দান --- ১ ঘণ্টা
-মাসিক পরিকল্পনা গ্রহন --- ৪০ মিনিট
-বিবিধ আলোচনা --- ৩০ মিনিট
-সমাপনী ও মুনাজাত --- ১০ মিনিট
কর্মী যোগাযোগঃ
কর্মীদের মধ্যকার সম্পর্ক গভীর করা, একে অন্যকে জানা, নিষ্ক্রিয় কর্মীকে সক্রিয় করা, সক্রিয় কর্মীকে আরও অগ্রসর করা, ভুল বুঝাবুঝি দূর করা প্রভৃতি উদ্দেশে কর্মী যোগাযোগ করতে হয়। কর্মী যোগাযোগ শিবিরের কার্যাবলীর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। এজন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। নিম্নে ইহা উল্লেখ করা হলঃ
(ক) পরিকল্পনাঃ দিনে, সপ্তাহে বা মাসে কোন কোন কর্মীর সাথে যোগাযোগ করা হবে তাঁর পরিকল্পনা থাকতে হবে।
(খ) স্থান ও সময় নির্বাচনঃ যার সাথে যোগাযোগ করা হবে তিনি কখন সময় দিতে পারেন, আলোচনার জন্য কোন ধরনের স্থান পছন্দ করেন তা জেনে সময় ও স্থান নির্ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, কাউকে কোন কথা বলতে হলে বা কোন কথা শুনতে হলে তিনি যে ধরনের পরিবেশ পছন্দ করেন তা সৃষ্টি করতে হবে।
(গ) ঐকান্তিকতাঃ যার সাথে যোগাযোগ করা হবে তাঁর ব্যাপারে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। তিনি যখন বুঝতে পারবেন যে, যোগাযোগকারী তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী তখন তিনি প্রতিটি কথার গুরুত্ব দিবেন। নির্ভেজাল ঐকান্তিকতাই এ ধরনের মানসিকতা সৃষ্টিতে সহায়ক।
(ঘ) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা আলোচনাঃ প্রথমে তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার প্রতি নজর দিতে হবে। সম্ভব হলে তা সমাধান করতে হবে। কমপক্ষে সঠিক পরামর্শ দিতে হবে এবং সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রকাশ করতে হবে।
(ঙ) সাংগঠনিক আলোচনাঃ এরপর তাঁর সাথে সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
(চ) সার্বিক আন্দোলনের আলোচনাঃ কর্মীর চিন্তার ব্যাপকতা ও দায়িত্বানুভুতি বৃদ্ধির জন্যে আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
(ছ) সালাম ও দোয়া বিনিময়ঃ পরিশেষে পারস্পরিক সালাম ও দোয়া বিনিময় করে বিদায় নিতে হবে।
বায়তুল মালঃ
সংগঠনের কাজ পরিচালনার জন্যে প্রতিটি শাখায় বায়তুলমাল থাকতে হবে। কারণ, বায়তুলমাল সংগঠনের মেরুদন্ড। আপনা-আপনি বায়তুলমাল গরে উঠবে না। কর্মীদের ত্যাগ ও সক্রিয় প্রচেষ্টার বিনিময়েই তা গড়ে ওঠে। বায়তুলমালের আয়ের উৎস প্রধানতঃ দুটি।
প্রথমতঃ সংগঠনের কর্মীদের এয়ানত। প্রত্যেক কর্মীকে নির্ধারিত হারে প্রতিমাসে বায়তুলমালে নিয়মিত এয়ানত দিতে হয়। এয়ানতের হার কর্মী নিজেই নির্ধারন করবেন। আর্থিক কুরবানীর জন্যে ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর আহবানকে সামনে রেখেই এ হার নির্ধারণ করতে হবে।
শুভাকাংখীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত চাঁদা আয়ের দ্বিতীয় উৎস। একদিকে দিন দিন শুভাকাংখীদের সংখ্যাবৃদ্ধির প্রতি নজর দিতে হবে, অপরদিকে কেউ যেন অর্থের বিনিময়ে কোন স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
এছাড়াও যাকাত এবং ওশর বায়তুলমালের আয়ের উৎস হতে পারে। তবে এসব আদায় করার পূর্বে কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিতে হবে। এ খাতের আয় ব্যয়ের হিসাব স্বতন্ত্রভাবে রাখতে হবে। প্রত্যেক অধঃস্তন শাখাকে নিয়মিতভাবে নির্ধারিত হারে উর্ধ্বতন সংগঠনের মাসিক এয়ানত দিতে হবে। তারপর অন্য কাজ। উর্ধ্বতন সংগঠনকে দুর্বার করে যত কাজই করা হোক না কেন তাতে ফল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
মাসিক কর্মী সভায় নিয়মিতভাবে বায়তুলমালের রিপোর্ট পেশ করতে হবে। প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি যে কোন সভায় বায়তুল মালের যাবতীয় রেকর্ড পরিদর্শন করবেন বা করাবেন।
সাংগঠনিক সফরঃ সংগঠনের কাজকে ভালভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে কোন সাংগঠনিক সমস্যা বা জটিলতা দূর করার প্রয়োজনে এবং স্থানীয় কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্যে উর্ধ্বতন সংগঠন থেকে অধঃস্তন শাখাগুলোতে সফর করা হয়। সফরের ব্যয়ভার সফরকৃত শাখাগুলোকেই বহন করতে হয়।
পরিচালক নির্বাচনঃ
সদস্য শাখা ও সাথী শাখায় প্রতি সেশনের শুরুতে নতুন করে সভাপতি নির্বাচন করতে হয়। নির্বাচনের সময় সংবিধানের ৩৪ নং ধারায় বর্ণিত পরিচালকের গুনাবলীর প্রতি নজর রাখতে হবে। সভাপতি নির্বাচিত হবার পর কাজের সুবিধার জন্য কর্মীদের পরামর্শক্রমে বিভিন্ন দায়িত্বশিল ব্যক্তি নিযুক্ত করবেন। যেমনঃ
- সাধারন সম্পাদক
- বায়তুল মাল সম্পাদক
- অফিস সম্পাদক
- পাঠাগার সম্পাদক
- প্রচার সম্পাদক
- প্রকাশনা সম্পাদক
শাখার অধীনে উপশাখার পরিচালক কর্মীদের পরামর্শক্রমে সভাপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।
পরিকল্পনাঃ
পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাজ করা মজবুত সংগঠনের পরিচয়। পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক নজর রাখতে হবে।
- জনশক্তি (শ্রেণী বিন্যাসসহ)
- কর্মীদের মান
- কাজের পরিধি ও পরিসংখ্যানমূলক তথ্য
- অর্থনৈতিক অবস্থা
- পারিপার্শ্বিক অবস্থা
- বিরোধী শক্তির তৎপরতা
কর্মী, সাথী বা সদস্যদের বৈঠকে তাদের পরামর্শক্রমে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। মোট কথা পরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শকে প্রাধান্য দিতে হবে আর উর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমোদনের পরই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত হবে। অধঃস্তন শাখাগুলো মাসিক, দ্বিমাসিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।
রিপোর্টিং: পরিকল্পনা অনুমোদন হওয়ার পর কাজের সুষ্ঠু পর্যালোচনার জন্যে নিয়মিত প্রণয়ন অপরিহার্য। রিপোর্টের উপর সামষ্টিক পর্যালোচনা বাঞ্ছনীয়। অধঃস্তন সংগঠনগুলো নিয়মিতভাবে উর্ধ্বতন সংগঠনে রিপোর্ট প্রেরন করবে।
তৃতীয় দফা কর্মসূচীঃ প্রশিক্ষণ
“এই সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ ছাত্রদেরকে ইসলামী জ্ঞান এবং আদর্শ চরিত্রবানরূপে গরে তুলে জাহেলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”
অর্থাৎ সংঘবদ্ধ ছাত্রদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা। একদল ছাত্রকে শুধু সংঘবদ্ধ করলেই আমাদের কাজ শেষ হয় না। প্রকৃতপক্ষে এখানেই আমাদের কাজ শুরু। যারা আমাদের সাথে সংগ্রাম করার প্রতিশ্রুতি দিলেন তাদেরকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও জাহেলিয়াতের তুলনামূলক জ্ঞানার্জনে সাহায্য করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। তাদেরকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে তার জাহেলিয়াতের যাবতীয় চ্যালেঞ্জ সাহসিকতা ও যুক্তি প্রয়োগে মোকাবিলা করতে পারেন। এমন প্রশিক্ষণ দেয়া যেন তারা ইসলামকে একমাত্র বাস্তব আদর্শ হিসাবে বুঝতে পারেন এবং পেশ করতে পারেন। তাদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন তারা অনুপম চারিত্রিক মাধুর্যের অধিকারী হতে পারেন। প্রত্যেকে যেন আল-কুরানের আলোকে নিজেদেরকে গড়ে তুলে জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্যতা অর্জন করতে এবং বৃহত্তর ইসলামি আন্দোলনে ফলপ্রয়সূ ভূমিকা পালন করতে পারেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শত বাধা বিপত্তির ভিতর দিয়েও যেন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে থাকতে পারেন।
এছাড়াও শরিরচর্চা, খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদমূলক প্রোগ্রামের আয়োজন করে সংঘবদ্ধ ছাত্রের দৈহিক ও মানসিক শক্তিসমূহের বিকাশ ঘটাতে হবে। এ দফার সাফল্যজনক বাস্তবায়নের উপরই সংগঠনের শক্তি, সাংগঠনিক মজবুতি, কর্মী ও নেতা তৈরী নির্ভরশীল। নিম্নোক্ত কাজগুলো এ দফায় অন্তর্ভুক্ত।
- পাঠাগার প্রতিষ্ঠা।
- ইসলামী সাহিত্য পাঠ ও বিতরণ।
- পাঠচক্র, আলোচনা চক্র, সামষ্টিক অধ্যয়ন ইত্যাদি।
- শিক্ষাশিবির, শিক্ষাবৈঠক।
- স্পিকারস ফোরাম।
- লেখকশিবির।
- শববেদারী বা নৈশ ইবাদত।
- সামষ্টিক ভোজ।
- ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ।
- দোয়া ও নফল ইবাদত।
- এহতেছাব বা গঠনমূলক সমালোচনা।
- আত্মসমালোচনা।
- কুরআন তালিম/ কুরআন ক্লাস।
(ক) পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
আমাদের সংগঠন জ্ঞানের রাজ্যে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়। যেহেতু এটা একটা আদর্শবাদী আন্দোলন, সেহেতু আদর্শের যথার্থ জ্ঞানের প্রতি প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। এ কারণেই যেখানেই সংগঠন রয়েছে কর্মীদের নিজেদের ও অন্যান্যদের চাঁদায় একটি পাঠাগার স্থাপন করতে হয়। বই-পত্রের যথার্থ হিসাব, পাঠ্য ও ইস্যুকৃত বইয়ের হিসাব সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে হবে। একজন সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে পাঠাগার পরিচালিত হয়। পাঠাগার ক্রমান্বয়ে মজবুত করার জন্য প্রতিমাসেই পরিকল্পনার ভিত্তিতেই বই-পত্র কিনতে হয়।
(খ) ইসলামী সাহিত্য পাঠ ও বিতরণ
ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উপর বা এর কোনদিক যথাঃ নামায, রোযা, ঈমান, তাকওয়া, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়কে কুরআন ও হাদিসের উপর ভিত্তি করে যে সাহিত্য রচিত হয় তা ইসলামী সাহিত্য। আবার ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে যে আন্দোলন সে আন্দোলন সংক্রান্ত যাবতীয় সাহিত্যও ইসলামী সাহিত্য। পাঠাগার থেকে নিয়মিত বই কিনে কর্মীদের পড়তে হয়।
প্রত্যেক কর্মীর নিকত দাওয়াতী কাজের বইগুলো থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়। যে কোন কর্মীকে বই বিতরণের পূর্বে বইটি নিজে পড়ে নিতে হয় যেন যার নিকট বিতরণ করা হল তা সাথে উক্ত বই সম্পর্কে সঠিকভাবে আলোচনা করা যায় এবং তার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হয়। মনে রাখা দরকার যে, জ্ঞানই মানুষের চিন্তার পরিশুদ্ধি আনে। তাই যত বেশী নিজে পড়া যায় ও অন্যদের পড়ানো যায় ততই বেশী কর্মী তৈরি হয়। পাঠকের মানসিকতা না বুঝে বই বিতরণ করলে উলটো ফল হওয়ার আশংকা থাকে।
(গ) পাঠচক্র
পাঠচক্র মানে কয়েকজন মিলে কোন বই বিষয় আলোচনা করে গভীরভাবে বুঝবার চেষ্টা করা এবং পরস্পরের চিন্তার বিনিময় করা। মানুষের চিন্তা ও গ্রহণশক্তি সীমাবদ্ধ। কোন একটি বই বা বিষয় একা একা পরে হৃদয়াঙ্গম করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন মানুষের চিন্তা শক্তির সংমিশ্রণ। পাঠচক্র থেকে আমরা এ উপকার পেতে পারি। পাঠচক্র চিন্তা ও গবেষণাসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়। এতে যুক্তি ও বুদ্ধির দীপ্তি বৃদ্ধি পায়। অপরকে বুঝানোর উৎসাহ ও যোগ্যতা বাড়ে। প্রত্যেক শাখায় পাঠচক্রের আয়জন একান্ত জরুরী। এ ক্ষেত্রে পূর্বাহ্নে কেন্দ্রের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। যথার্থ নিয়মনীতি মেনে না চললে পাঠচক্রে তেমন কোন কাজ হয় না। এ জন্য চক্রের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়মাবলী মেনে চলতে হয়।
(১) চক্রের সদস্য সংখ্যা পূর্বনির্ধারিত থাকবে।
(২) প্রতিটি চক্র কমপক্ষে ৩ মাস চালু রাখতে হবে।
(৩) চক্রের মাসে অন্ততঃ একটি অধিবেশন হবে।
(৪) অধিবেশন দেড় ঘণ্টা থেকে দুই ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে।
এছাড়াও প্রয়োগ পদ্ধতি হিসেবে নিম্নোক্ত শর্তসমূহ মেনে চলা আবশ্যক।
(ক) সদস্য নির্দৃষ্টকরণঃ প্রতিটি চক্রের জন্য সমমানের কর্মী বাছাই করতে হবে। প্রত্যেকে যেন ঈমান, জ্ঞান, তাকওয়া ও সাংগঠনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমমানের হয়
(খ) পরিচালক নির্ধারণ।
(গ) বিষয়বস্তু নির্ধারণ।
(ঘ) লক্ষ্য নির্ধারণঃ পূর্বেই লক্ষ্য কি তা ঠিক করে নিতে হবে। পাঠচক্র চলাকালে লক্ষ্যের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে যেন চক্রশেষে লক্ষ্যে পৌঁছা যায়।
(ঙ) অধ্যয়নঃ পাঠচক্রের জন্য অধ্যয়ন বিশ্লেষণমূলক হতে হবে।
(চ) নোটঃ চক্রের সদস্যগণ বই বা বিষয়বস্তুর উপর নোট রাখবেন। এক-যে বই বা বিষয়বস্তু অধ্যয়ন করা হল তার শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ। দুই- অধ্যয়নকালে যে সমস্ত প্রশ্ন মনে জাগে।
(ছ) সময়ানুবর্তিতা।
(জ) মনযোগঃ চক্র চলাকালে মনযোগ সহকারে শ্রবণ করা ও সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য পেশ করা প্রয়োজন।
(ঝ) সক্রিয় সহযোগিতাঃ শুধু পরিচালক প্রশ্ন করলেই চলবে না। সদস্যদেরকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রশ্ন করতে হবে। গোটা চক্রকে কার্যকারী করার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
কার্যসূচীঃ
o উদ্বোধন --- ৫ মিঃ
o নির্ধারিত বিষয়ের উপর আলোচনা --- ১ ঘন্টা
o পূর্বনির্ধারিত বিষয়ের উপর দেয়া কাজ আদায় --- ২০ মিঃ
o শেষ কথা --- ৫ মিঃ
আলোচনা চক্র (কর্মীদের)
বাছাইকৃত কর্মীদের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয় ও বইয়ের উপর একজন পরিচালকের অধীনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য নিয়ে আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হবে। আলোচোনাচক্রের সর্বোচ্চ সময় হবে ৪৫ মিঃ। এতে নিম্নোক্ত কার্যসূচী থাকবেঃ
কার্যসূচীঃ
উদ্বোধন --- ৫ মিঃ
নির্ধারিত বই বা বিষয়ের উপর আলোচনা --- ৩০ মিঃ
প্রশ্নোত্তর --- ১০ মিঃ
আলোচনা চক্র (সাথীদের)
সাথীদের মানোন্নয়ন, কোন বিষয় বা বই অনুবাধন ও পারস্পরিক মত বিনিময়ের মাধ্যমে চিন্তার ঐক্যসাধনের লক্ষ্যে বাছাইকৃত সাথীদের আলোচনা চক্র অনুষ্ঠিত হবে। একজন পরিচালকের অধীনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য নিয়ে নির্দিষ্ট বই বা বিষয়ের উপর আলোচনা চক্র হবে।
চক্রের সর্বোচ্চ সময়- দুই থেকে আড়াই ঘন্টা হতে পারে।
কর্মসূচীঃ
উদ্বোধন --- ৫ মিঃ
নির্ধারিত বিষয়ের উপর আলোচনা --- ১ ঘন্টা
নির্ধারিত বিষয়ের উপর দেয়া কাজ --- ২০ মিঃ
শেষ কথা --- ৫ মিঃ
সামষ্টিক অধ্যয়নঃ
কুরআনের, হাদীস, কোন একটি বই বা তার অংশ বিশেষ সমষ্টিগত পালাক্রমে পাঠ ও আলোচনা করা মানেই সামষ্টিক অধ্যয়ন। এতে কোন বই বা বইয়ের অংশ বিশেষ সহজভাবে বুঝা যায়। ৭/৮ জন সদস্য মিলে অধ্যয়ন করতে হয়। এর কোন ভিন্ন ভিন্ন অধিবেশন হয় না। নতুন কর্মী ও সক্রিয় সমর্থকদের নিয়ে সামষ্টিক অধ্যয়ন করা বেশী প্রয়োজন।
সামষ্টিক অধ্যয়নে সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা সময় নেয়া যায়। এর কার্যসূচী নিম্নরুপ।
কার্যসূচীঃ
অর্থসহ কুরআন তেলোয়াত --- ৫ মিঃ
নির্দিষ্ট বিষয় বা বইয়ের উপর আলোচনা --- ৪০ মিঃ
বিবিধ বিষয় আলোচনা --- ১৫ মিঃ
(ঘ) শিক্ষা শিবির
জনশক্তির চরিত্র ও স্বভাব সংশোধন, ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি, ইসলামী জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা, নেতৃত্বের দক্ষতা, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, কৌশলগত যোগ্যতা বৃদ্ধি, ভারসম্যপূর্ণ জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ করা, কোন বিশেষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলা ইত্যাদির লক্ষ্যে সময় নিয়ে যে কর্মসূচী তাই শিক্ষাশিবির। আমাদের সাংগঠনিক জীবনে এরূপ শিক্ষাশিবিরের গুরুত্ব অত্যাধিক।
শিক্ষাশিবিরের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করতে হয়। নির্বাচিত জনশক্তিই এতে অংশগ্রহণ করবে। এতে একসংগে থাকা। খাওয়া, নামায পড়া, আলোচন শুনা প্রভৃতি কাজের উপর পরিবেশ প্রয়োজন শিক্ষা শিবিরের জন্য পূর্বেই উর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমতি নিতে হয়। এর কার্যসূচী সংগঠনের অনুমোদনের পরই চূড়ান্ত হয়।
শিক্ষা শিবিরের ধরনঃ
১) দায়িত্বশীল শিবির -- ৫ থেকে ১০ দিন -- অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ ৫০
২) দক্ষতা উন্নয়ন শিক্ষাশিবির -- ৭ থেকে ১৫ দিন -- অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ ১৫-২৫
৩) সাধারণ শিক্ষাশিবির (সদস্য/সাথী) -- ৩ দিন -- অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ ১০০ জন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৪) কর্মী শিক্ষা শিবির
ক) স্কুল কর্মীদের (৪৮ঘন্টা) শিক্ষার্থী সর্বচ্চো ১০০ জন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
[বৃহস্পতিবার বাদ আসর শুরু- শনিবার সকাল ৭টার মধ্যে শেষ]
(খ) অগ্রসর কর্মী শিক্ষাশিবির পূর্ণ ২ দিন – ১০০ জন শিক্ষার্থী হওয়া বাঞ্ছনীয়।
শিক্ষা বৈঠকঃ
কর্মী বা সক্রিয় কর্মীদের কাছে ইসলামের যথার্থ পরিচয় তুলে ধরা, ইসলামী আন্দোলনের সঠিক ধারনা ও গুরুত্ব পরিস্কার করা, কোন বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি বা পরিষ্কার করার লক্ষ্যে ৪ থেকে ৫ ঘন্টার কর্মসূচীই শিক্ষাবৈঠক। নির্দিষ্ট সংখ্যক নির্ধারিত কর্মী এতে যোগদান করেন। যেখানে কর্মী বেশী সেখানে একাধিক শিক্ষাবৈঠক হতে পারে। সম্ভব হলে প্রতিমাসেই শিক্ষাবৈঠক হওয়া প্রয়োজন।
শিক্ষাশিবির ও শিক্ষা বৈঠকের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর নজর রাখা প্রয়োজনঃ
- শিক্ষাশিবির ও শিক্ষাবৈঠকের শিক্ষার্থী নির্বাচনে মানের সমতার প্রতি নজর রাখা। (মেধা, অভিজ্ঞতা, বয়স, সাংগঠনিক মান)
- প্রশিক্ষক নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা, অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষণী শক্তি, বক্তব্য উপস্থাপনে কৌশলগত দক্ষতা, সময় ও পরিবেশ অনুধাবনের ক্ষমতা ইত্যাদি গুণের প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয়া দরকার।
- শিক্ষাশিবির বা শিক্ষাবৈঠকে আলোচনা প্রধান না করে কর্মশালা, ব্রেইনস্টর্ম ও গ্রুপ আলোচনা জাতীয় হাতে কলমে কর্মসূচীর সাথে সামঞ্জস্যশীল করতে হবে।
- শিক্ষাশিবিরে আলোচনার সংখ্যা কমিয়ে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা প্রদানের ব্যবস্থা থকতে হবে।
- শিক্ষাশিবির ও বৈঠক আলোচনা বক্তাকেন্দ্রিক না হয়ে অংশগ্রহণধর্মী হওয়া প্রয়োজন। আলোচনা কালে শিক্ষার্থীদের অবদান রাখার সুযোগ দিতে হবে।
- কমপক্ষে ৩মাস পূর্বে শিক্ষাশিবির ও ২ মাস পূর্বে শিক্ষাবৈঠকের বিস্তারিত পরিকল্পনা হয়ে যাওয়া দরকার। শিক্ষাশিবিরের কমপক্ষে ২মাস পূর্বে বক্তা, স্থান, ইত্যাদি নিশ্চিত হওয়া, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় বিষয় অবহিত করা ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
- শিক্ষাশিবির ও শিক্ষাবৈঠকে পারতপক্ষে ওভারহেড প্রজেক্টর, ক্লিপ চার্ট ইত্যাদি আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা দরকার।
- বিশেষ করে শিক্ষাশিবিরে আলোচনা, আলোচক, শিক্ষার্থী এবং সামগ্রিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উপর মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- প্রশিক্ষকগণ প্রশিক্ষণকালে শিক্ষার্থীদের সাথে সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরী করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা নিঃসঙ্কোচে মত প্রকাশ ও প্রশ্ন করতে পারে।
- আলোচনা/প্রশিক্ষণের বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে দ্বীনি বিষয়ের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন বাস্তব ও সমকালীন বিষয়সমূহ রাখা
- বিগত প্রোগ্রামের ত্রুটি বিচ্যুতিকে সামনে রেখে পরবর্তী প্রোগ্রামের মানোন্নয়ন করা।
(ঙ) স্পীকারস ফোরামঃ
বক্তা তৈরীর উদ্দেশ্যেই গঠিত হয় স্পীকারস ফোরাম। কয়েকজন মিলে একটি ফোরাম তৈরী করতে হয়। ফোরামের অধিবেশন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক বা মাসিক হতে পারে। প্রয়োজনবোধে একই সপ্তাহে দু’তিন অধিবেশনও হতে পারে। ফোরামের একজন সভাপতি থাকবেন। তিনি সদস্যদের মধ্য থেকেও হতে পারেন। তবে বক্তৃতায় অভিজ্ঞ হতে হবে। নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর সদস্যরাও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বক্তৃতা করবেন। সভাপতি ভুল-ত্রুটি উল্লেখ করে দেবেন এবং পরামর্শ দেবেন। স্পিকার্স ফোরামের মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে বক্তৃতা শিল্প সম্পর্কে জ্ঞান জন্মে।
(চ) লেখক শিবিরঃ
আমাদের সংগঠন যুব সমাজের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশ সাধনে সদা তৎপর। এ কারণে সাহিত্যমোদী ছাত্রদের লেখকশিবির করা যেতে পারে। স্বরচিত কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, ইত্যাদির আসর জমানো এ শিবিরের কাজ। সমকালীন সাহিত্যের গতিধারা , ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠানও এর কাজ। লেখক শিবিরের তরফ থেকে দেয়াল পত্রিকা, পত্রিকা, সাময়িকী ইত্যাদি প্রকাশ করা যেতে পারে। তবে এর পূর্বে উর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমোদন নিতে হবে।
(ছ) শববেদারী বা নৈশ ইবাদতঃ
আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহ আমাদের একমাত্র আশা-ভরসা ও শক্তির উৎস। আর আল্লাহর সাহায্য বেশী বেশী পাওয়া যায় তাঁর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠার ভিতর দিয়ে। প্রতিটি কর্মে প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর ভয়ে হৃদয়মন কম্পিত থাকা প্রয়োজন। তাঁর স্মরণে অন্তর সর্বদা জাগ্রত থকা চাই। এজন্য বিশেষ বিশেষ ইবাদত অনুষ্ঠানের প্রয়োজন। রাতের নিবিড় পরিবেশে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে , সবাই বিশ্রাম ও আরামের কোলে নিবিষ্ট হয়ে থাকে, তখন আপনি উঠুন। আপনি আপনার হৃদয়-মন দিয়ে রাব্বুল আলামিনের অতি নিকটে, তাঁর সান্নিধ্যে চলে যান। হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে বলে উঠুন- “ আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া বেকা আসামতু, ওয়া ইলাইকা হাকামতু” হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে আত্মসমর্পন করলাম, তোমার উপর আস্থা স্থাপন করলাম, তোমার উপর ভরসা করলাম, তোমার দিকে আমার মনকে সম্পূর্ণ নিবিষ্ট করলাম, তোমার জন্য সংগ্রাম, সাধনা ও আমার আন্দোলন এবং তোমারই কাছে আমার ফরিয়াদ।শত জটিল বাঁধা অতিক্রম করে আমাদের এ কণ্টকাকীর্ণ পথে চলতে হয়। সে জন্যে খোদার সান্নিধ্যে আসা প্রয়োজন। আল কুরআনে মুমিনদের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ বলেছেন- “ওরা সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, বিনয়ী, আল্লাহর পথে খরচ করে এবং রাত্রীর শেষভাগে মাগফেরাতের জন্য কাঁদে।” (আলে-ইমরান)
এদিকে লক্ষ্য রেখেই কর্মীদের মধ্যে খোদাভীতির সৃষ্টি এবং তার উৎকর্ষ সাধনের জন্য আমাদের সংগঠনে শববেদারীর ব্যবস্থা রয়েছে। এতে নির্বাচিত কর্মীরা যোগদান করেন। যোগদানকারীর সংখ্যা খুব কম অথবা খুব বেশী হওয়া ঠিক নয়। শববেদারী কোন মসজিদে সারা রাত বা রাতের শেষ তিন-চার ঘন্টার জন্য হবে। এতে এক ঘণ্টাব্যাপী দরসে কুরআন অথবা দরসে হাদীস,একটি আলোচনা, তাহাজ্জুদের নামায, দোয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে।
এ প্রোগ্রাম সাধারণতঃ এশার নামাযের পর থেকে শুরু হয়। মাঝখানে একটু ঘুমিয়ে আবার শেষ রাতে উঠতে হয়। শববেদারীতে আলোচনার বিভিন্ন বিষয়-খোদাভীতি, আল্লাহর আজাব নাজিলের বিধি, তওবা, দোয়া, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অগ্নিপরীক্ষা প্রভৃতি সম্পর্কিত হতে হয়। শববেদারীতে সাংগঠনিক বা অন্য কোন প্রোগ্রাম থাকা ঠিক নয়। এতে শববেদারীর পরিবেশ পরিবেশ নষ্ট হয়।
শববেদারীতে নিম্নোক্ত কর্মসূচী থাকতে পারেঃ
কার্যসূচীঃ
o উদ্বোধন --- ৫ মিঃ
o দারসে কুরআন/হাদীস --- ১ ঘন্টা
o বিশ্রাম --- ২ ঘন্টা
o ব্যক্তিগত নফল ইবাদত --- ১ ঘন্টা
o শেষ রাতে একটি আলোচনা --- ১ ঘন্টা
o সমাপনী/মুনাজাত --- ১ ঘন্টা
(জ) সামষ্টিক ভোজনঃ
মাঝে মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর করার জন্য সামষ্টিক খাওয়ার ব্যবস্থা করা যাতে পারে।এতে প্রত্যেক কর্মীর নিজের খাওয়া নিয়ে আসবে অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিয়ে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং সকলে মিলে একত্রে বসে খাবে। খাওয়ার আগে বা পরে বক্তৃতা বা আলোচনা চলবে। এ প্রগ্রামে যথেষ্ট আনন্দ ও শিক্ষণীয় বিষয় আছে “বুনইয়ানুম মারছুছ” (সীসা ঢালা প্রাচীর) এর ন্যায় পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হবে।
(ঝ) ব্যক্তিগত রিপোর্টঃ
সংগঠনের প্রত্যেক কর্মীকে কর্মীসভাসমূহে নির্ধারিত প্রোগ্রাম অনুযায়ী ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ করতে হয়। এ রিপোর্ট কর্মী তৈরীর গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যে কর্মীর রিপোর্ট যত উন্নত, সে তত উন্নত কর্মী। রিপোর্ট কর্মীদের যোগ্যতা বাড়ায়, নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করে। রিপোর্ট হচ্ছে আয়না যা জীবনের ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো প্রত্যেকের সামনে তুলে ধরে। প্রত্যেক কর্মীকে ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ করতে হয়, তবে পরিস্থিতি ও পরিবেশ অনুযায়ী সংরক্ষণের পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়। মাঝে মাঝে পূর্বের রিপোর্টের সাথে বর্তমান রিপোর্টের তুলনা করে দেখতে হয়। এতে উন্নতি অবনতি বা স্থবিরতা ধরা পড়ে। রিপোর্ট শুধু সংরক্ষণ করলে চলে না। নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী সভাপতিকে দেখাতে হয়। সভাপতি রিপোর্টের উপর মন্তব্য এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। তবে কর্মী সভায় সভাপতি ব্যক্তি বিশেষের উপর মন্তব্য না করে সাধারণ মন্তব্য পেশ করেন। ইসলামী আন্দোলনের আদর্শ কর্মী হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ ও দেখানো অতি প্রয়োজনীয়।
ব্যক্তিগত রিপোর্টের ব্যাখ্যাঃ
নিম্নে ব্যক্তিগত রিপোর্টের বিষয়সমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা হল-
কুরআন অধ্যয়নঃ
ইসলামী জ্ঞানের মূল উৎস হল আল-কুরআন। তাই দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী বিধান মেনে চলার জন্য পবিত্র কুরআনের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন অপরিহার্য। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রত্যক্ষ্যভাবে কুরআনের আলোকে জীবন যাপনে অভ্যস্ত করে তোলার উদ্দেশ্যেই নিয়মিত কুরআন অধ্যয়নের প্রতি উৎসাহিত করা হয়। এর লক্ষ্য হল আল-কুরআনের মূর্ত প্রতীকরূপে নিজের জীবনকে গড়ে তোলার মাধ্যমে খোদার মনোনীত ও অমনোনীত কাজ সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকা। সুতরাং কুরআন অধ্যয়ন দ্বারা খোদার পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় কাজের তালিকা প্রস্তুত করে নিয়ে তাঁর পছন্দনীয় কাজে আত্মনিয়োগ এবং অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করে চলতে হবে। প্রত্যহ সাকালে ফযরের নামাযের পরের সময়টা কুরআন অধ্যয়নের সর্বোত্তম সময়। তাছাড়া নিয়মতান্ত্রিকতা ও ধারাবাহিকতার প্রতিও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
হাদীস অধ্যয়নঃ
হাদীস ইসলামী জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস। কুরআনকে বুঝতে হলে হাদীস অধ্যয়ন অপরিহার্য। কারণ কুরআনের ব্যাখ্যাই হচ্ছে হাদিস। তাই প্রত্যহ কুরআন অধ্যয়নের সাথে সাথে হাদীস অধ্যয়নের দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। হাদীস অধ্যয়নের সময় পঠিত হাদীসের সাথে নিজের জীবনকে দেখতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে হাদীসে আলোকে নিজের জীবনকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। প্রত্যহ কমপক্ষে দু’তিনটি করে হাদীস নির্দিষ্ট সময়ে অধ্যয়ন করা উচিৎ।
ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নঃ
যে কোন আদর্শবাদী আন্দোলনের কর্মীদের স্বীয় আদর্শের জ্ঞান লাভ করা,আদর্শের প্রতি অটুট বিশ্বাস স্থাপন করা ও আদর্শমাফিক চরিত্র গঠন করা একান্ত অপরিহার্য। ইসলামী আন্দোলনের যোগ্য কর্মী হবার জন্যে ইসলামী আদর্শের পর্যাপ্ত জ্ঞানের সাথে সাথে সমকালীন বিশ্বের যাবতীয় মতাদার্শ সম্পর্কেও পূর্ণভাবে ওয়াকিফহাল হওয়া প্রয়োজন। ইসলাম ও অনৈসলামের মৌলিক পার্থক্য এবং ইসলামী আদর্শের শ্বাশ্বতরূপ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ না করে এ আন্দোলনে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে কেবল গদবাঁধা কতগুলো মুখস্থ বুলি শিখে নেয়া যথেষ্ট নয় এবং গভীর অধ্যয়ন ও অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের মধ্যে চিন্তার মৌলিকত্ব সৃষ্টি করা অপরির্য। নিয়মতান্ত্রিকতা লক্ষ্য করে অধ্যয়ন করাই এর অন্যতম সহায়ক।
পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নঃ
আন্দোলনের দাবী অনুযায়ী ভাল ছাত্র এবং ভাল মুসলিমরূপে গড়ে ওঠাই আমাদের মৌলিক কাজ। ছাত্রত্বকে বাদ দিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির কল্পনাও করা যায় না। সুতরাং শিবির কর্মীদের নিয়মিত ক্লাসে যোগদান এবং পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে অধিক তৎপর হতে হবে এবং এটাকে আন্দোলনেরই একটা অপরিহার্য কাজ মনে করতে হবে। অন্যান্য কাজের ন্যায় পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে শিবির নিয়মতান্ত্রিকতার উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। যারা নিজের দোষে বা অমনযোগিতার কারনে ক্লাশের পড়ালেখার প্রতি ক্ষতি সাধন করে তারা পক্ষান্তরে শিবিরেরই ক্ষতি করে। যারা ব্যক্তিগত পড়াশুনা, পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে ভারসম্য রক্ষা করে চলে তারাই শিবিরের দৃষ্টিতে আদর্শ কর্মী।
জামায়াতে নামাযঃ
আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শিত হয় নামাযের মাধ্যমে। আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের এটাই সর্বোত্তম পন্থা। জামায়াতে নামায পড়াকেই ইক্বামতে সালাত বলা হয়েছে। মুমিনের জীবনকে সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তোলার এ এক উৎকৃষ্ট পন্থা। যার নামায যত উন্নত সে আল্লাহর কাছে ততই মর্যাদাসম্পন্ন। বস্তুতঃ নামায ধাপে ধাপে বান্দাকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছিয়ে দেয় বলেই বলা হয়েছে- ‘আসসালাতু মেরাজুল মুমিনীন’ ক্রমান্বয়ে এই নামাযকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে একে রিপোর্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জামায়াতে নামায আদায়ের মাধ্যমে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিককে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে তোলা এর মূল লক্ষ্য।
কর্মী যোগাযোগঃ
আন্তরিক পরিবেশে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একে অপরকে আন্দলনের কাজে উৎসাহিত করা, একে অপরের সমস্যা সাধনের চেষ্টা করা, পারস্পরিক পরামর্শ ও সমালোচনার মাধ্যমে ব্যক্তিগঠন ও সংগঠনের সামগ্রিক উন্নতি বিধানে তৎপর হওয়াই এর প্রধান লক্ষ্য। বিশুদ্ধ নিয়ত ও স্বচ্ছ আন্তরিকতা ছাড়া এটা ফলপ্রয়সু হতে পারে না। কর্মী যোগাযোগ পরিকল্পনাবিহিন বা উদ্দেশ্যবিহীন সাক্ষাতের নাম নয়।
প্রত্যেক শাখার প্রতিটি কর্মীকে একটা টার্গেট তৈরী করে কর্মী যোগাযোগ করতে হয়। অনগ্রসর কর্মীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাকে হেকমতের সাথে অগ্রসর করা এবং অগ্রসর কর্মীর সাথে যোগাযোগ করে নিজেকে তার মানে উন্নীত করার চেষ্টা চালানোই কর্মী যোগাযোগের মূল উদ্দেশ্য। এ অনুভূতি নিয়ে যেখানে কর্মী যোগাযোগ হয় না সেখানে কর্মীদের মধ্যে চিন্তার ঐক্য স্থাপিত হতে পারে না, পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হতে পারে না এবং সংগঠন কখোনো হতে পারে না গতিশীল। এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কর্মী যোগাযোগ কোন কর্মীর দোষ অনুসন্ধানের জন্য নয় বরং তার সংশোধনের জন্যই করা হয়। এ জন্য যার সাথে আপনি যোগাযোগ করবেন তার ছিদ্রান্বেষণ না করে তার গুনগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিন এবং মধ্যে তার মধ্যে যে সকল দোষ ত্রুটি আছে সেগুলো দূর করার জন্য তার সামনে আপনার নিজের চরিত্র, কর্মজীবন, আচার-আচরণ ইত্যাদিকে বাস্তব আদর্শ হিসাবে তুলে ধরুন।
বন্ধু যোগাযোগ ও বই বিতরণঃ
আমাদের কুরআনে বর্ণিত হেকমত অনুযায়ী দাওয়াতী কাজ আঞ্জাম দিতে হবে এবং এ উদ্দেশ্যেই বন্ধু যোগাযোগ করতে হয়।কারো সাথে শিবির সম্পর্কে দু’চার মিনিট আলাপ করলেই দাওয়াত পৌঁছানো হয় না বরং কমপক্ষে তিন/চারজন বন্ধু ঠিক করে প্রতি সপ্তাহে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা দরকার। এখানেও বিশুদ্ধ নিয়ত এবং অকৃত্রিম আন্তরিকতা আবশ্যক। মনে রাখবেন কৃত্রিমতা, অভিনয়সূচক আচরণ বা সাময়িক লোভ লালসার মাধ্যমে কাঊকে কোনদিন ইসলামী আন্দোলনের কর্মী করা যায় না। পক্ষান্তরে নিজে ইসলামী চরিত্র সৃষ্টির কাজে আত্মনিয়োগ করে নিছক আল্লাহর জন্য মানুষকে জানালে তা ফলপ্রয়সু না হয়ে পারে না। ছাত্রদের মগজে পুঞ্জীভূত আবর্জনা পরিস্কার করে তাদের ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য পাত্র বুঝে পুস্তক পরিবেশন দাওয়াতী কাজের উত্তম হাতিয়ার। প্রকৃতপক্ষে ইসলামী আন্দলনের প্রধান বাধা হচ্ছে অজ্ঞতা। টার্গেটকৃত বন্ধুদেরকে বই বিতরণ ও পড়ানো ছাড়া দাওয়াতী কাজ ফলপ্রয়সূ হতে পারে না। কোন ব্যক্তিকে বই দেয়ার আগে তার মনে পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি; পড়বার পর ঠিকমত বুঝলো কিনা সে খবর নেয়া এবন্দ সুযোগমত আন্দোলনের দিকে টেনে আনাই আমাদের কাজ।
সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনঃ
উপরে বর্ণিত কাজগুলো ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীকে নিজের এবং অন্যের জীবন গঠনের জন্য অবশ্যই করতে হয়। সাথে সাথে প্রত্যেক কর্মীকে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং তার জন্য নিয়মিত কিছু সময় ব্যয় করতে হয়। প্রত্যেক জেলা, শাখা ও উপশাখা সভাপতির সাংগঠনিক দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে সভাসমূহ পরিচালনা, পরিকল্পনা তৈরী, কর্ম বণ্টন ও কর্মী পরিচালনা, বিভিন্ন বিভাগের কাজের তদারকি, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কর্মীদের এগিয়ে আনা, কর্মীদের ব্যক্তিগত রিপোর্ট দেখা এবং উর্ধ্বতন সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।
এছাড়া প্রত্যেক কর্মীর দাওয়াতি কাজ, কর্মী যোগাযোগ এবং সাংগঠনিক অনুষ্ঠানে যোগদান এবং সংগঠন কর্তৃক দৈনন্দিন যে সব দায়িত্ব অর্পিত হয় সেগুলোও সাংগঠনিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
পত্র পত্রিকা পাঠঃ
চলমান বিশ্বের খবরাখবর রাখার জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীর সাথে সম্পর্ক রাকা অপরিহার্য। একজন ছাত্র হিসাবে, সচেতন নাগরিক হিসাবে সর্বোপরি একটি প্রাণবন্ত আন্দোলনের কর্মী হিসাবে পত্র-পত্রিকার সাথে ওয়াকিফহাল হওয়াই যথেষ্ট নয়; বরং এ সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার মত যোগ্যতা অর্জনও অত্যাবশ্যক।
আত্মসমালোচনাঃ
আত্মসমালোচনা বলতে নিজ নিজ কাজের সামগ্রিক খতিয়ান নেয়াকেই বুঝায়। বস্তুতঃ কোন ব্যক্তি নিয়মিত নিজস্ব কাজের খতিয়ান নিলে তার জীবন ক্রমাগত উন্নত না হয়ে পারে না। বিশেষ করে যারা খোদাকে হাজির নাজির জেনে নিজ নিজ কাজের পর্যালোচনা করে তারা দ্বীনি দায়িত্ব পালনে কোন অবস্থাতেই শৈথিল্য দেখাতে পারে না। আখেরাতের সাফল্য যাদের একমাত্র কাম্য ,খোদার সন্তুষ্টি আশা এবং অসন্তোষের ভীতির মাঝ পথে যারা দন্ডায়মান, তাদের জীবনে আত্মসমালোচনার জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নেয়া ভাল। আত্মসমালোচনার সময় নিজের মনে এ অনুভূতি সৃষ্টি করতে হবে যেন রোজ কেয়ামতে পরম পরাক্রমশালী হাকিমের সামনে নিজের আমলের পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
(ঞ) নফল এবাদত ও দোয়াঃ
বাতিলের সয়লাবে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসাবে মান রক্ষা করা দুরূহ কাজ। মান ঠিক রাখার জন্য কর্মীদের অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। ফরয, ওয়াজিবসমূহ আদায় করে দু’একটা ভাল কাজ সম্পন্ন করা এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। আল্লাহর পছন্দনীয় কাজে সবসময় জড়িত থেকেই এটা করা যেতা পারে। অর্থাৎ এজন্য প্রয়োজন নফল ইবাদতের। নফল ইবাদতের ভিতর সর্বোতকৃষ্ট হচ্ছে নফল নামায। নফল নামাযের ভিতর তাহাজ্জুদের গুরুত্ব সর্বাধিক। মাঝে মাঝে ব্যক্তিগতভাবে রাত জেগে কর্মীরা তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতে পারেন। ইসলামী আন্দলনের কর্মীদের জন্যে তাহাজ্জুদ নামাযের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমাদের নেতা রাসূলে মকবুল (সঃ) নামাযের গুরুত্ব বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন। অন্যান্য ওয়াক্ত নামাযের সময় যে নফল নামায প্রচলিত রয়েছে সেদিকেও কর্মীদের মনোযোগ দেয়া উচিৎ। এরপরেই রয়েছ নফল রোজার গুরুত্ব।আমরা যুবক। এ বয়সে চুপ করে বসে থাকা যায় না। ভাল কাজ না পেলে খারাপ কাজে আত্মনিয়োগ করাটাই স্বাভাবিক। এ বয়সে দৈহিক চাহিদাও বেশী। এগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে বিপর্যয় অনিবার্য। নফল রোযা কর্মীদেরকে এক্ষেত্রে সাহায্য করবে। এ কারনে রাসূলুল্লাহ(সঃ) যুবকদের প্রতিমাসে দু’টি করে রোযা রাখার উপদেশ দিয়েছেন। রোযা একদিকে যেমন দৈহিক চাহিদা নিয়ন্ত্রিত ও স্তিমিত করে অপরদিকে তেমনি আত্মাকেও পবিত্র করে তোলে।
আল্লাহর নেয়ামতের শোকর করা, প্রতিটি কাজের শুরু ও শেষে নির্ধারিত দোয়া করা, সফরে, বিশ্রামে, পারস্পরিক দেখা সাক্ষাতে, ওজুতে, জায়নামাজে, সুখে-দুঃখে রাসুলুল্লাহ(সঃ) যে সমস্ত দোয়া পড়তে বলেছেন, সেগুলো অভ্যাস করার প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ। দোয়া অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা দূর করে, হৃদয়ে এনে দেয় প্রশান্তি।
(ট) এহতেছাব বা গঠন্মূলক সমালোচনাঃ
ইসলামী আন্দোলনের এক কর্মী অপর কর্মীর আয়নাস্বরূপ। তাই প্রত্যেক কর্মীকে অপর কর্মীর ত্রুটি বিচ্যুতি সংশোধন এবং দুর্বলতা থেকে হেফাযত করার চেষ্টা করতে হবে। ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করার উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মীর সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে হবে এবং দুর্বলতাগুলোকে জানিয়ে দিতে হবে। কারো দোষ দেখানো বড় কঠিন কাজ। এজন্য সময়, মেজাজ, মনোভাব ইত্যাদি বিবেচনা করে নেহায়েত একজন শুভাকাঙ্খী হিসেবে তার দোষ ত্রুটি তাকে জানাতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে প্রচেষ্টা চালানোর পর সংশোধন না হলে কর্মী, সাথী বা সদস্য বৈঠকে এহতেছাবের সময় তা তুলে ধরতে হবে। মন রাখতে হবে সমালোচনা গঠনমূলক হতে হবে। কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা বা কারও ত্রুটি শুধু শুধু তালাশ করা শুভ লক্ষণ নয়। যার দোষ তুলে ধরা হবে তার কর্তব্য হচ্ছে ত্রুটির স্বীকৃতি দেয়া, সংশোধনের জন্য দোয়া কামনা করা এবং প্রচেষ্টা চালানো। কোন কর্মীর ত্রুটি না থাকা সত্ত্বেও কারও মনে ভুল ধারণা থাকতে পারে, তাই সংশ্লিষ্ট কর্মী যখন কারন দর্শাবেন বুঝিয়ে দেবেন তখন তা ঐকান্তিকতার সাথে মানে নেওয়া এবং ভুল ধারণা অন্তর থেকে মুছে ফেলা কর্তব্য।
আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে ভালবাসার সম্পর্ক। ভালবাসা বা ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠা সম্পর্কে ‘ভীতি’ প্রশ্রয় পেতে পারে না। এহতেছাব যখন স্তিমিত হয়ে যাবে, তখন গোটা আন্দোলন তার গতিশীলতা হারিয়ে ফেলবে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা কৃত্রিমতা আসবে। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস কমে যাবে। অতএব মেজাজ ও নিয়ম-নীতি অনুযায়ী এটা চালু রাখা জরুরী।
(ঠ) আত্মসমালোচনাঃ
একজন কর্মীর জীবনকে গতিশীল রাখার জন্য আত্মসমালোচনা বা আত্মবিশ্লেষণ অপরিহার্য। এর চর্চা সৃষ্টি হলে মনে অহংকার সৃষ্টি হতে পারে না। কোন কাজ করার পর প্রদর্শনেচ্ছা জন্মাতে পারে না। জীবন থেকে ত্রুটি বিচ্যুতি ক্রমান্বয়ে দূর হতে থাকে। তাই হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) যথার্থই বলেছেন- ‘আল্লাহর কাছে হিসেব দেয়ার আগে নিজেই নিজের হিসেব নাও’। আত্মসমালোচনার সময় ভুলের জন্য তওবা করতে হয়। তওবা ব্যতিরেকে আত্মসমালোচনার ফল পাওয়া যায় না। আত্মসমালোচনার যেরুপ নির্দিষ্ট সময় রয়েছে তদ্রুপ তওবার জন্যও নিয়ম রয়েছে। তাই প্রথমে তওবার নিয়মাবলী উল্লেখ করা হচ্ছে।
তওবার নিয়মঃ
o সর্বপ্রথম ঐকান্তিকতার সাথে নিজ ভুলের স্বীকৃতি দেয়া। এটা সহজ কাজ নয়। মানুষ বড় একটা পাপ করেও তা জাস্টিফাই করতে চায়।
o ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
o দ্বিতীয়বার ভুল না করার জন্য ওয়াদা করা এবং ওয়াদাকে কার্যকরী করার বাস্তব চিন্তা করা।
o নামায, রোযা, বা আর্থিক কুরবানীর বিনিময়ে ভুলের কাফফারা আদায় করা।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে একবার তওবা করার পর তা ইচ্ছাকৃত ভঙ্গ করলে তার কাফফারা আদায় করা ওয়াজেব। আর উপরে যে কাফফারার কথা বলা হয়েছে তা তওবার পূর্ণতা জন্যে।
আত্মসমালোচনার পদ্ধতিঃ
সময় নির্বাচনঃ আত্মসমালোচনা করার ভাল সময় হচ্ছে শোয়ার পূর্ব মুহূর্ত। এর চেয়ে ভাল সময় হচ্ছে ফযর নামাযের পর।
o প্রথম পর্যায়ে আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে জায়নামাজে বসুন। মনে এ চিন্তার উদ্রেক করুন যে আল্লাহ আপনাকে দেখছেন। আপনি সেই রাব্বুল আলামীনের সামনে বসে আছেন, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর হাতেই আপনার জীবন ও মৃত্যু। তিনি রহমান, রহীম ও কাহহার। আপনার অন্তরের নিভৃত কোণের খবরও তিনি রাখেন। মস্তিষ্ক দিয়ে আপনি কি চিন্তা করছেন তা তিনি ভালভাবে জানেন। তিনি ইনসাগফার। আপনার উপর তিনি কখোনো জুলুম করেন না।
o দ্বিতীয় পর্যায়ে আপনি আপনার সারা দিনের কর্মব্যস্ত সময়ের কথা চিন্তা করুন। আপনি যে সমস্ত ভাল কাজ করেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন এবং যে ভুল করেছেন তার জন্য তওবা করুন।
o তৃতীয় পর্যায়ে আজকে আপনি যে সব ফরয, ওয়াজিব আদায় করেছেন তা চিন্তা করুন। এসব আদায়কালে আপনার মনোযোগ ও আন্তরিকতা যথার্থই ছিল কিনা চিন্তা করুন
o চতুর্থ পর্যায়ে আজকে আপনি আপনার সাংগঠনিক কাজ নিয়ে চিন্তা করুন। যে দায়িত্ব আপনার উপর ছিল তা কি পালন করেছেন? এজন্য আপনার সময় ও সামর্থ যা ছিল আপনি কি তা পুরোপুরি ব্যয় করেছেন?
o পঞ্চম পর্যায়ে আপনি আপনার আজকের ব্যবহারিক জীবন (মুয়ামেলাত) সম্পর্কে চিন্তা করুন।
o শেষ পর্যায়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। ইনশাআল্লাহ এভাবে আত্মসমালোচনা কর্মীদের মান বৃদ্ধি পাবে এবং জীবন তাদের পুত-পবিত্র হয়ে উঠবে।
চতুর্থ দফা কর্মসূচীঃ ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র সমস্যা
“আদর্শ নাগরিক তৈরীর উদ্দেশ্যে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষাবুবস্থার পরিবর্তন সাধনের দাবীতে সংগ্রাম এবং ছাত্র সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান”।
এ দফার দুটি দিক রয়েছে-
(ক) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এবং
(খ) ছাত্র সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান।
নিম্নে এ দুটি কাজের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করা হল-
(ক) ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামঃ
আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। তাই এ সমাজে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের কাজ রাতারাতি হওয়া সম্ভব নয়। এ কাজ ক্রমিক পর্যায়ে হতে হবে। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতার সাথে কিভাবে ক্রমান্বয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে হবে তা নিম্নে বর্ণিত হলঃ
আমাদের কর্মীদের প্রথমত জেনে নিতে হবে
(ক) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে কি বোঝায়।
(খ) ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য কি কি।
(গ) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে প্রবর্তন করা যায়
(ঘ) বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার দোষ-ত্রুটি কি কি।
(ঙ) এর সুদূরপ্রসারী ফল কি।
(চ) বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক গলদ কোথায় ইত্যাদি।
এ জন্য আমাদের প্রকাশিত ও অন্যান্য ইসলামী চিন্তাবিদদের বইগুলো পাঠ করতে হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আমাদেরকে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জনমত সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক, চিন্তাশীল নাগরিকদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার কুফল অবগত করিয়ে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজনিয়তা বুঝাতে হবে। এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে আলোচনা, পুস্তক সাময়িকী, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি বিতরণ করতে হবে। এছাড়া গ্রুপ মিটিং, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন আবস্থা বুঝে করা যেতে পারে।
তৃতীয় পর্যায়ে অনুকূল পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতায় দু’মাসে বা প্রতিমাসে শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে পোস্টারিং, পত্রিকায় বিবৃতি, পত্রিকায় চিঠিপত্র কলামে লেখা, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার দাবীতে দিবস ও সপ্তাহ পালন প্রভৃতি করা যেতে পারে। বিভিন্ন সভা সমিতিতে প্রস্তাব পাশ করিয়ে পত্রিকায় দিতে হবে। প্রত্যক্ষভাবে সম্ভব না হলে পরোক্ষভাবে কাজ করা যেতে পারে।
চতুর্থ পর্যায়ে আমাদের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদদের নিকট আবেদন করতে হবে ইসলামীকরনের পরিকল্পনা পেশ করার জন্য। ইসলামী মনোভাবাপন্ন শিক্ষাবিদদেরও আহ্বান করতে হবে, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, বই ইত্যাদির মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার রূপ ছাত্রসমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের সামনে তুলে ধরার জন্য।
পঞ্চম পর্যায়ে আমাদের কর্মীদের লিখিত প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা সহকারে শিক্ষাব্যবস্থার উপর বিশেষ সংকলন বের করার চেষ্টা করতে হবে। সংকলন বার করার পূর্বে কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই এ কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনই আমাদের আসল উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য পৌঁছার হাতিয়ার মাত্র। আমাদের চিরস্থায়ি উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।
(খ) ছাত্র সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানঃ
অর্থাৎ ছাত্রদের যুক্তিসংগত দাবী-দাওয়া পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা ও তাদের অভাব-অভিযোগ দূরীকরণে এগিয়া আসা। এক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।
ছাত্র বলেই ছাত্রসমাজের প্রতি আমরা অমনোযোগি থাকতে পারি না। ছাত্রদের যাবতীয় ন্যায়সংগত সমস্যা সমাধানে আমাদের অগ্রণী হতে হবে। সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। এক সমস্যার সমাধান করতে যেয়ে আরও দশটি সমস্যার সৃষ্টি করা আমাদের কাজ নয়। আমরা নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচীর মাধ্যমে গঠণমূলক প্রচেষ্টার পরিবর্তে ধ্বংসাত্মক কোনপন্থা অবলম্বনে বিশ্বাসী নই।
আমরা ছাত্র সমস্যাকে দু’ভাবে ভাগ করতে পারি-
(১) ব্যক্তিগত
(২) সমষ্টিগত
(১) ব্যক্তিগত সমস্যাঃ
ব্যক্তিগত সমস্যার যেগুলো বেশীরভাগ অর্থনৈতিক, সেগুলো সমাধানের জন্য স্বাবলম্বন পন্থা অবলম্বন করি। অর্থাৎ নিজেরাই এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। ছাত্রদের লজিং না থাকা, বেতন দানে ও পরীক্ষার ফি দিতে অক্ষমতা, বই কেনার অসামর্থ্য ইত্যাদি দূরীকরণার্থে আমরা আমাদের ছাত্রদের কল্যাণ বিভাগের মাধ্যমে সামর্থ্য অনুযায়ী নিম্নোক্ত কাজ করে থাকি।
- লজিং যোগাড় করে দেয়া।
- স্টাইপেন্ড চালু করা
- লেন্ডিং লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা।
- ফ্রী কোচিং ক্লাস চালু করা
- বিনা মূল্যে প্রশ্নপত্র বিলি।
লেন্ডিং লাইব্রেরীঃ গরীব ছাত্রদেরকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরাবরাহ করার জন্য লেন্ডিং লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমাদের কর্মীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন ফাইনাল পরীক্ষায় পাশ করেন, তারা তাদের পাঠ্য বই শিবিরের লেন্ডিং লাইব্রেরীতে দান করতে পারেন। শুভাকাঙ্খীদের দানও আমরা সানন্দে গ্রহণ করতে পারি। এতে অনেক ছাত্রের শিক্ষা লাভের পথ সুগম হয়।
লেন্ডিং লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা পদ্ধতিঃ
পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে কর্মীদেরকে পরীক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে আমাদের লেন্ডিং লাইব্রেরীতে বিনামূল্যে বই প্রদান করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্য পূর্বাহ্নে একটা বিজ্ঞাপনও পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেয়া যেতে পারে।
এভাবে কর্মীদের দেয়া বই ও ছাত্রদের থেকে সংগ্রহ করা বই দিয়ে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করতে হয়। বই গরীব ও উপযুক্ত ছাত্রদের দিতে হয়। এক মাসের জন্য বই ইস্যু করা হয়, এজন্য কার্ড তৈরী করে নিতে হয়। বইয়ের তালিকা বিতরণ রেজিস্ট্রার রাখতে হয়। লেন্ডিং লাইব্রেরীর জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মনীতি থাকে। একজন পরিচালকের তত্ত্বাবধানে এ লাইব্রেরী পরিচালিত হয়।
এ লাইব্রেরীর জন্য বিভিন্ন পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশকের নিকট থেকেও বই নেয়া যেতে পারে। এজন্য বিশেষ অভিযান চালানো প্রয়োজন।
কোচিং ক্লাশঃ পরীক্ষার কয়ে মাস পূ্বে বিনা পারিশ্রমিকে কোচিং ক্লাস করার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। সে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাদির মাধ্যমে ছাত্রদেরকে কোচিং ক্লাসের খবর জানিয়ে দিতে হবে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা সুবিধাজনক স্থানে সকালের দিকে অথবা রাত্রে এ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সেখানে ক্লাস করার অনুমতি নিতে হবে। আমাদের মনোভাবাপন্ন শিক্ষক অথবা মেধাবী কর্মীরা এতে শিক্ষকতা করবেন। ছাত্রদের জন্য অংক, ইংরেজী অথবা জটিল কোন বিষয়ের কোচিং ক্লাসে ব্যবস্থা করতে হয়।
ভর্তি সহায়িকা প্রকাশঃ
প্রশ্নপত্র বিলিঃ বিগত বছরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যোগাড় করে ফটোকপি করে অথবা ছেপে ছাত্রদের নিকট অতি কম মূল্যে অথবা বিনামূল্যে বিতরণ করা যেতে পারে। কলা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন বিভাগের প্রশ্ন পত্র পৃথক পৃথক পুস্তিকায় ছাপিয়ে বিক্রি করা যায়। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে বিক্রয় করা সহজ। কারণ, এসব শ্রেণীতে ছাত্র বেশী থাকে।
স্টাইপেন্ডঃ যাকাতের টাকা সংগ্রহ ও বিভিন্ন শিক্ষানুরাগী ধনী ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে গরীব ছাত্রদের জন্য বৃত্তি বা স্টাইপেন্ডের বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। অনেকে আছেন যারা সংগঠনের বায়তুলমালে টাকা দিতে রাজী নন। কিন্তু গরীব ছাত্রদের জন্যে টাকা দিতে আগ্রহী, তাদের সাহায্য এ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কর্জে হাসানাঃ নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কাউকে বিপদের আর্থিক সাহায্য দেয়ার জন্যে কর্জে হাসানা চালু করা যেতে পারে। এখান থেকে কাউকে কর্জ দিতে হলে লিখিত চুক্তি হয়ে যাওয়া উচিৎ।
(২) সমষ্টিগত সমস্যাঃ
উপরে ছাত্রদের ব্যক্তিগত সমস্যার উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ছাত্রদের অনেক সমস্য রয়েছে যা সমষ্টিগত। যেমন ভর্তি ও আসন সমস্যা, শিক্ষকের অভাব, পাঠাগারের অভাব, মসজিদ না থাকা, ক্যান্টিনের সমস্যা, নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা, পাঠ্য বই এর মূল্য ও বেতন বৃদ্ধি প্রভৃতি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্যে আন্দোলন প্রয়োজন। আন্দোলনের নামে কোন স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়াও আমাদের উদ্দেশ্য নয় এজন্য এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের কর্মসুচী নিম্নরূপ-
(ক) আমরা প্রথমে সমস্যার কারন নির্ণয় করতে চেষ্টা করব। গোড়ায় গলদ থাকলে শাখা-প্রশাখা নিয়ে হৈ-চৈ করে লাভ নেই। কারণ নির্ণয়ের পর যথাসম্ভব মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট ডেলিগেট প্রেরণ, স্মারকলিপি প্রদান, পারস্পরক আলাপ-আলোচনা, স্বাক্ষর অভিযান চালিয়ে কর্তৃপক্ষকে সমস্যা সমাধানের যৌক্তিকতা ও পন্থা বুঝতে চেষ্টা করব। আমাদের বিশ্বাস, বেশীরভাগ সমস্যাই এভাবে সমাধান করা যায়।
(খ) যদি উপরোক্ত উপায়ে সমস্যা সমাধানের কোন ব্যবস্থা না হয় তাহলে প্রতিবাদ সভা, নিন্দা প্রস্তব গ্রহণ, পোস্টারিং, পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান প্রভৃতি উপায়ে আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা করব।
(গ) উপরোক্ত দু’উপায়ের পরও যদি কর্তৃপক্ষ অনমনীয় থাকেন, তখন আমরা প্রতীকি ধর্মঘট পালন ও সুশৃঙ্খল আন্দোলনের মাধ্যমে এসব দাবি আদায়ের চেষ্টা করব।
আমরা নিশ্চিত যে, উপরোক্ত তিনটি পর্যায়ে চেষ্টা করলে কোন সমস্যা সমাধান ছাড়া থাকতে পারে না। যদি না হয় তাহলে বুঝতে হবে কর্তৃপক্ষ গঠণমূলক আলোচনা চান না অথবা সমষ্টির স্বার্থে ব্যক্তি বা কতিপয় লোকের স্বার্থ ত্যাগ করতে নারাজ।এহেন মুহূর্তে অবস্থার দাবী অনুযায়ী আমাদেরকে আরো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
সংসদ নির্বাচনঃ
অসৎ নেতৃত্বের অপসারন ও সৎ নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা ছাড়া দুনিয়াতে ইসলামী সমাজ বিনির্মান সম্ভব নয়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চত্বরেও আমাদের অনৈসলামিক নেতৃত্ব অপসারণের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। আমাদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে স্কুল, কলেজ, মা্দ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে ভূমিকা নিতে হবে। কারণ, নির্বাচনে কোন ভূমিকা না থাকা মানেই সংগঠনের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ জাগানো।
দ্বিতীয়তঃ নেতৃত্বের ব্যাপারে আমাদের কোন বক্তব্য না থাকার অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের কোন প্রভাব না থাকা।
সন্যাসী বা বৈরাগির মত সাধারণতঃ আমরা ভোটদান থেকে বিরত থাকতে পারি না। আমাদেরকে ভোট দিতে হবে। কিন্তু কাকে ভোট দিব? যেহেতু আমরাও আন্দোলন করছি তাই আমাদেরকে হয় নিজেদেরকে কর্মী প্রার্থী করাতে হবে নতুবা অপেক্ষাকৃত ভাল ব্যক্তিকে সমর্থন দিতে হবে।
সংসদ নির্বাচনে আমাদের নীতিঃ
(ক) আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের মূল কাজের পরিমাণ যাচাই করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। অর্থাৎ কর্মী সংখ্যা, সমর্থক সংখ্যা,বায়তুল মালের আয়, বই বিতরণের মাসিক পরিমাণ ও পাঠকের সংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনা করে আমাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
(খ) শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণ আমাদের কাজ নয়। নির্বাচনের আগেও আমাদেরকে মৌলিক বা বুনিয়াদী কাজ করতে হবে।
(গ) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিতে হবে।
(ঘ) সভাপতি বা দায়িত্বশীল কর্মীগণ কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি ছাড়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
মনে রাখতে হবে মূল কাজের ক্ষতি সাধন করে নির্বাচনে অযথা জড়িয়ে পড়ার পরিণতি মারাত্মক।
পঞ্চম দফা কর্মসূচীঃ ইসলামী সমাজ বিনির্মান
“অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং সাংস্কৃতিক গোলামী হতে মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামী সমাজ বিনির্মানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো”।
এখানে অবশ্য মনে রাখতে হবে আমরা ছাত্র। ছাত্র সমাজ নিয়েই আমাদের আন্দোলন। তাই ছাত্রত্বকে বিসর্জন দিয়ে আমরা কোন তৎপরতা চালাতে প্রস্তুত নই। একটি দায়িত্বশীল ছাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমসাময়িক রাজনৈতিক তৎপরতার সাথে আমাদের তৎপরতাকে একাকার করে দিতে পারি না। তাই বলে জাতীয় সংকটের মুহূর্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে আমরা বিরত থাকতে পারি না। এর অর্থ এই নয় যে সাধারণ অবস্থায় আমরা জাতীয় সমস্যা থেকে দূরে থাকি। আত্মসচেতনতার সাথে আমরা জাতীয় সমস্যা অবলোকন করি এবং তা দূর করতে বলিষ্ঠ ও গণমুখী ভূমিকা পালন করি। সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইসলামী পরিবেশ তৈরী করার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। এ ব্যাপারে সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কমটি কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে বাস্তব এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। দু’ভাবে আমরা এ দফার কাজ করে থাকি।
(১) প্রথমতঃ
ইসলামী সমাজ বিনির্মান মুখের কথায় বা স্লোগানের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী গঠন।
(ক) ক্যারিয়ার তৈরীঃ আমাদের প্রত্যেককে Career সৃষ্টির ব্যাপারে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই ক্যারয়ারকে ক্ষতিগ্রস্থ করা যাবে না। আসলে আমাদের সংগঠনে যে সমস্ত কাজ রয়েছে তা সম্পন্ন করতে গিয়ে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ করার প্রয়োজন হয় না। শুধু প্রয়োজন বাস্তব অনুভূতি, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অক্লান্ত পরিশ্রম। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যতিক্রম হলে তা বিশেষ পরিস্থতিতেই হয়। বস্তুতঃ ক্যারিয়ারকে অক্ষুন্ন রেখে যে সংঠনের কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে করতে সক্ষম সেই ভাল কর্মী। এ ধরণের কর্মীই আমাদের কাম্য।
(খ) নেতৃত্ব তৈরীঃ সঠিক নেতৃত্বের অভাবেই জাতি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। ইসলামী সমাজ বিনির্মান সাধন তো দূরের কথা জাতির সাধারণ কোন কাজও সঠিক নেতৃত্ব ব্যতিরেকে সুসম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এজন্য নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন কর্মীদেরক সংগঠনের যাবতীয় তৎপরতা ও বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় ক্ষেত্র যেমন- প্রশাসন, প্রকৌশল, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, পার্লামেন্ট ইত্যাদির প্রতিটি ক্ষেত্রে যথার্থ পরিচালক প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদী ও বাস্তবমুখি পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদেরকে এ প্রয়োজন পূরন করতে হবে। তাই কর্মী নিজে অথবা সংগঠনের পরামর্শে যে কোন একটি বিভাগকে টার্গেট করে নেবে। তারপর উক্ত বিভাগের একজন এক্সপার্ট সিসেবে গড়ে ঊঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। মোটকথা, আমরা সত্যিকার মুসলিম চিকিৎসক, মুসলিম প্রশাসক ইত্যাদি তৈরী করতে চাই।
(গ) কর্মী তৈরীঃ ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা ও ইসলামী সমাজ বিনির্মান সাধনের জন্য একদল সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনি প্রয়োজন। এ সংগঠন তার যাবতীয় তৎপরতার মাধ্যমে উপরোক্ত প্রয়োজন পূরন করতে চায়। অতএব সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম যথার্থভাবে মেনে চলাই এক্ষেত্রে আমাদের কাজ।
(ঘ) জ্ঞান অর্জনঃ রাজনীতি অর্থনীতি, শাসনতন্ত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার পরিবর্তে এতদসংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করাকেই আমরা প্রাধান্য দিয়ে থাকি। নিম্নোক্ত দিকগুলোকে সামনে রেখে আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
সর্বপ্রথম চরিত্র সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান আমাদের থাকতে হবে। জাতীয় চরিত্রের বর্তমান বিপর্যস্ত অবস্থার অন্তর্নিহিত কারন আমাদের উদঘাটন করতে হবে এবং সমাধানের সঠিক পথ জানতে হবে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারনা থাকতে হবে। ইতিহাস, ঘটনাপ্রবাহ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে বর্তমান রাজনৈতিক গতিধারার উৎস খুঁজে বের করতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে সমস্ত দল সক্রিয় আছে তাদের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য জানতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তাদের কোনটা কল্যাণকর আর কোনটা ক্ষতিকর তা বুঝতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যার সঠিক সমাধান কি, এ সমাধান কোন পথে আসতে পারে তার প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে। অর্থনৈতিক সমস্যার গতিধারা ও রূপরেখা জানাও আমাদের প্রয়োজন। বর্তমানে যে ধরনের অর্থনীতি চালু আছে মূলব্যবস্থাদি সংক্রান্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে সঠিক পথ ও পন্থা ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা চাই।
সাংস্কৃতিক গোলামীর ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের বাস্তবমুখী জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কি কি ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালু আছে তার উৎস, রূপ ও ব্যাপকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক। কোথায় কোন পদ্ধতি কোন নীতিমালার উপর ভিত্তি করে আঘাত হানলে সাংস্কৃতিক গোলামী থেকে আমরা মুক্তি পাব তা যথার্থ জ্ঞানের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে হবে।
মোট কথা, বাতাসের উপর ভিত্তি করে আমরা চলতে চাই না। ইসলামী সমাজ বিনির্মান নামে মরিচীকার পিছনে ছুটতে আমরা নারাজ। আমাদের আবেদন, আমাদের যাবতীয় তৎপরতা হবে যুক্তিনির্ভর ও বুদ্ধিভিত্তিক। ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে চারত্রিক প্রতিফলনই হবে আমাদের কাজের মূল হাতিয়ার।
(২) দ্বিতীয়তঃ
বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ- এ ক্ষেত্রে দু’ধরনের কাজ আমাদেরকে করতে হবে।
(ক) সহযোগিতাঃ ইসলামী আন্দোলনের যে কোন বৃহত্তর প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা আমরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। তবে তা আমরা করে থাকি সংগঠনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে।
(খ) পরিবেশ সৃষ্টি ও চাপঃ চারত্রিক মাধুর্য দিয়ে জাতীয় জীবনে একটা পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টির তৎপরতা চালাতে হবে। এ তৎপরতা যখন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছাত্রদেরকে সংশ্লিষ্ট করতে পারবে তখন সমাজ ও জাতীয় জীবনে তা একটি শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করবে। আর এহেন চারিত্রিক শক্তি দিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বদ্ধপরিকর।
এছাড়াও আমরা আমাদের ৫ম দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য সময় সুযোগ ও সামর্থ অনুযায়ী জনগণের অংগনে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়ে জনমত সংগ্রহ করতে চাই। সভা, মিছিল, ধর্মঘট ইত্যাদি প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং গঠণমূলক পন্থায় করে থাকি।
উপরোক্ত কাজগুলোই হলো আমাদের সংগঠনের পাঁচ দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নের সঠিক পন্থা। যিনি আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করতে চান তাঁকে এ কাজগুলো ক্রমান্বয়ে আঞ্জাম দিতে হবে।
পরিশিষ্ট
আলোচনার বিষয়
এখানে সভাসমূহে আলোচনার জন্য কিছু বিষয় উল্লেখ করা হল। এছাড়া প্রয়োজন ও সময়োপযোগী বিষয় নিজেরা নির্ধারণ করে নিতে হবে।
o ইসলাম- একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান।
o কালেমা তায়্যিবার তাৎপর্য।
o ইবাদতের সঠিক অর্থ ও তাৎপর্য।
o ইসলামের মৌলিক পাঁচটি প্রত্যয় ও তাৎপর্য।
o ঈমানের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি।
o তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাত।
o রেসালাত ও তার তাৎপর্য।
o পরকাল, যুক্তি ও বাস্তবতার দাবী।
o আল-কুরআন কি ও কেন?
o মুসলমান কাকে বলে বা সত্যিকার মুসলমান।
o মানবতার মুক্তির দিশারী ইসলাম।
o ইসলাম মানবতার একমাত্র মুক্তিপথ।
o ইসলামই মানবতার একমাত্র ভবিষৎ।
o ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।
o ইসলামী জ্ঞান অর্জন ও অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা।
o একজন মুসলিম যুবকের কাছে ইসলামের দাবী।
o চরিত্র গঠনের প্রয়োজনীয় উপাদান।
o আদর্শ নাগরিক গঠনের প্রকৃত উপায়-ইসলাম।
o মানবীয় চরিত্র গঠনের একমাত্র উপায়-ইসলাম
o যে শিক্ষা পাচ্ছি- আর যে শিক্ষা চাই।
o আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ ও তার প্রতিকার।
o সহ-শিক্ষার কুফল।
o ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা
o ইসলামের নৈতিক দৃষ্টিকোণ।
o ছাত্রশিবির কি চায়? কেন চায়? কিভাবে চায়?
o আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
o ছাত্র শিবির একটি গঠণমুখী ছাত্র আন্দোলন।
o ছাত্র সমস্যা সমাধানে শিবিরের ভূমিকা।
o আমাদের পাঁচ দফা (বৈজ্ঞানিক কর্মসূচী ঈমানের দাবী) ।
o ইসলামের প্রচার (দাওয়াত) মুমিন জীবনের মিশন।
o ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় একজন মুসলিম যুবকের ভূমিকা।
o ইসলামী দাওয়াতী কাজের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা।
o ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ মুসলমানের দায়িত্ব।
o ইসলামী আন্দোলন কি এবং কেন?
o ইসলামী আন্দোলন ঈমানের দাবী।
o ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা।
o ইসলামী আন্দোলন একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজন।
o ইসলামী সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা।
o ইসলামী আন্দোলনে যুব শক্তির ভূমিকা।
o উপমহাদেশে ইসলামী আন্দোলন-একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা।
o বর্তমান বিশ্বে ইসলামী আন্দোলনঃ সাফল্যের সম্ভাবনা।
o বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন ও শিবিরেরে আবির্ভাব।
o বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের ইতিহাস।
o বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোতে ইসলামঃ একটি পর্যালোচনা।
o আমাদের সমাজে কুসংস্কার ও বিদআতের অনুপ্রবেশ।
o মুসলিম জাতির উন্নতির প্রকৃত পথ।
o মুসলিম বিশ্বের মৌলিক সমস্যা ও তার সমাধান
o মুসলিম জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্য।
o মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের মূল সূত্র- ইসলাম।
o ইসলামী রাষ্ট্র বনাম মুসলিম রাষ্ট্র।
o ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও রাজনীতি।
o ইসলামী রাষ্ট্রই সত্যিকার কল্যাণ রাষ্ট্র।
o শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা একমাত্র ইসলামেই সম্ভব।
o ইসলাম ও পুঁজিবাদ।
o ইসলাম ও সমাজতন্ত্র।
o ইসলাম ও সাম্প্রদায়িকতা
o গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ইসলাম।
o ইসলাম ও প্রগতি।
o ইসলাম প্রতিক্রিয়াশীলতা।
o ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব।
o তাওহীদ ও বস্তুবাদের দ্বন্দ্ব।
o মানবতার মৌলিক সমস্যা কি?
o মানবতার মূল সমস্যা কি অর্থনৈতিক?
o বস্তুবাদ নাস্তিকতারই অপর নাম।
o বিজ্ঞান নিস্তিকতা ও বস্তুবাদকে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণিত করেছে।
o শ্রেণী সংগ্রাম- ‘সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বই পৃথিবীর ইতিহাস’
o সর্বহারার একনায়কত্ব নয়- খোদায়ী প্রভুত্বই মুক্তির একমাত্র পথ
o মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্বই-সব জুলুমের মূল কারণ।
o মার্কসীয় সাম্যবাদ-অবাস্তব কল্পনা।
o ধর্ম ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব বিকৃত খ্রীষ্টবাদের পরিণতি
o ‘ধর্ম আফিমস্বরুপ’-একটি প্রতিক্রিয়াশীল ধারণা।
o শ্রেণী হিংসা নয় মানবীয় মূল্যবোধ উজ্জীবনই কল্যানের প্রকৃত পথ।
o মার্কসীয় অর্থনীতি একটি অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।
o পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র দু’টি প্রতক্রিয়াশীল প্রান্তিক ধর্মীয় মতবাদ
o মার্কসবাদ বাস্তবতার সংঘাত।
o ইসলাম ও বিজ্ঞান একটি পর্যালোচনা
o যুগ- জিজ্ঞাসার দাবী- ইসলাম।
1 comments:
মাশাআল্লাহ
ভালোবাসার প্রিয় সংগঠন #বাংলাদেশ_ইসলামী_ছাত্রশিবির