জাকাত নিয়ে স্বল্প পরিসরে কয়েকটি কথা

নির্ধারিত পরিমান সম্পদের মালিক হয়ে থাকলে যাকাত ফরজ হয়।কারো নিকট সাড়ে সাত ভরি (৮৫ গ্রাম) স্বর্ণ বা ৫২ তোলা রুপা বা ন্যুনতম তার সম পরিমান অর্থ এক বছর কাল যাবত থাকলে তার উপর যাকাত দেয়া ফরজ। বর্তমান বাজার মুল্যে ৫২ তোলা রুপার সম পরিমান অর্থ আনুমানিক ৩৩০০০ টাকা। অর্থাত এই পরিমান টাকা থাকলে তার উপর যাকাত দেয়া ফরজ। যাকাত যোগ্য সম্পদের উপর 2.5% হারে যাকাত দিতে হয়।



সম্পদের যথাযথ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। আনুমানিক থোক বরাদ্দের মত আন্দাজে একটি পরিমান নির্ধারন করা ঠিক নয়।

সাড়ে সাত ভরির কম সোনা থাকলে তার উপর কোন যাকাত নাই। সাড়ে সাত ভরির বেশি স্বর্ণ থাকলে পুরো পরিমানের উপর যাকাত দিতে হবে। অর্থাত দশ ভরি স্বর্ণ থাকলে দশ ভরির বিক্রয় মুল্যের উপর শতকরা আড়াই পার্সেন্ট হারে যাকাত দিতে হবে। তেমনি রুপার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম হবে।

আপনি যেদিন সম্পদের হিসাব করবেন সেদিন আপনার মালিকানাধীন পুরো সম্পদের হিসাব করতে হবে, যদিও কিছু সম্পদের বয়স হিসাবের দিন একবছর পূর্ণ নাও হয়। ধরুন আপনি যেদিন হিসাব করছেন সেদিন আপনার এক লাখ টাকা আছে, এর একটি অংশ হয়ত বিগত ৬ মাসের সঞ্চয়, যার এখনো এক বছর হয় নি। যদি আপনার নিসাব পরিমান অর্থ একবছর থেকে থাকে (৩৩০০০ টাকা) তাহলে পুরো এক লাখ টাকার উপর উপর যাকাত দিতে হবে।

আপনার ব্যাঙ্কে জমানো টাকা, সঞ্চয় পত্র-লাইফ ইন্সুরেন্স-শেয়ারে বিনিয়োগ বা অন্য কোন ব্যাবসায় বিনিয়গ করলে তার উপর যাকাত হিসাব করতে হবে। যাকাত হিসাবের দিন ঐ খাতে ক্যাশযোগ্য টাকা যাকাত যোগ্য সম্পদ হিসাবে গন্য হবে। ধরুন আপনার শেয়ার কেনা আছে, যাকাতের হিসাবের দিন ওই শেয়ারের বিক্রয়মুল্য আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবে গণ্য করেতে হবে। তেমনি আপনার ডিপিএস একাউন্ট আছে, যাকাত হিসাবের দিন ঐ একাউন্ট ভাংলে যে টাকা পাওয়া যাবে তা আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যোগ হবে।

ব্যাবসার উপকরনের উপর কোন যাকাত নাই। তবে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা মজুদ কাঁচামালের মুল্যের যাকাত দিতে হবে। ধরুন আপনার একটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রী আছে। এখানে বিল্ডিং করার জন্য, মেশিনারিজ কিনার জন্য যে টাকা খরচ করেছেন তার উপর কোন যাকাত নাই, যদিও এটি এখন আপনার সম্পদ। আপনার কাছে কাপড়/সুতা ইত্যাদি কাচামাল থাকে যা দিয়ে বিক্রয়যোগ্য প্রোডাক্ট তৈরি হবে, তাহলে ওই কাচামালের ক্রয়মুল্য আপনার যাকাত যোগ্য সম্পদ হিসাবে গন্য হবে।

বাড়ি-গাড়ি-জমি-আসবাব পত্র-পোষাক কিম্বা অন্য কোন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রাদির উপর যাকাত নেই।

আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স) দিলেও তা যাকাত থেকে বাদ যাবে না। উল্লেখ্য ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় ইনকামের উপর আর যাকাত দিতে হয় সঞ্ছিত সম্পদের উপর।

আপনি অন্যকে ঋণ দিয়ে থাকলে তা আপনার যাকাত যোগ্য সম্পদের হিসাবে গণ্য হবে। তবে যদি কোন ঋণ মন্দঋণে (অর্থাত টকা না পাবার সম্ভবণা থাকে) পরিণত হয় তা যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ দিতে পারেন।

আপনার ঋণ থাকলে তা যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে।
প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা যাকাত যোগ্য সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে না। যেহেতু এই টাকা আপনার ইচ্ছামত এনক্যাশ করার সুযোগ নেই।

যাকাত বিতরনঃ আলাহ বলেনঃ “ যাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষন করা প্রয়োজন তাদের, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তের জন্য, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য (যারা সফরে যেয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছে)—এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ-প্রজ্ঞাময়। সুরা তাওবাহ, আয়াত-৬০

এই আয়াতে নির্ধারিত আট টি খাতে যাকাতের টাকা ব্যয় করা যায়।
আপনার কাছের আত্মীয় স্বজন যারা আর্থিক ভাবে দুর্বল তারা আপনার যাকাতের বেশী হকদার।

১০০ জন কে খুচরা টাকা, শাড়ি-লুঙ্গি না দিয়ে একজন কে স্বাবলম্বী হবার মত ব্যাবস্থা করে দিতে পারলে (যেমন একটি দুধের গাভী কিনে দিলেন, দোকান করে দিলেন, অন্য কোন ব্যাবসার পুজি করে দিলেন) তা দারিদ্য বিমোচনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।

পিতা-মাতা-দাদা-নানা-স্ত্রী-সন্তান এদের কে জাকাত দেয়া যায় না। মসজিদ নির্মানে জাকাত দেয়া যায় না।

জাকাত রমজান মাসেই দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি আপনার সুবিধামত বছর নির্ধারন করে নিয়ে প্রতি বছর সে ভাবে হিসেব করে যাকাত আদায় করতে পারেন।

আমি যতটকু বুঝি তা লিখলাম, আল্লাহ ভাল জানেন।
আসুন আমরা যাকাত আদায় করি। যাকাত সম্পদ কে পবিত্র করে, সম্পদ বৃদ্ধি করে।পরিকল্পিতভাবে ব্যাবহার করতে পারলে যাকাত দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।

বিস্তারিত জানতে এই ওয়েব সাইট দেখতে পারেন: http://www.zakatguide.org



প্রশ্নঃ ধরেন আমার ব্যাংকে ১ লাখ টাকা আছে, আবার ১ লাখ টাকার ব্যাংক লোনও আছে যা (ধরেন ৫০০০ টাকা) মাসিক কিস্তিতে পে করা হয়। সেই ক্ষেত্রে প্লাস মাইনাস করে কি আমার জিরো ব্যালেন্স নাকি মাসিক কিস্তির টাকা মাইনাস করে ৯৫০০০ টাকার উপরে জাকাত ক্যালকুলেট করতে হবে?


উত্তরঃ  আপনি যেদিন যাকাত হিসেব করবেন, সেদিন মোট লোন কত অর্থাত সেদিন যদি আপনি লোন টা শোধ করতে চাইলে কত শোধ করতে হবে সেটি বিয়োগ হবে। অর্থাত কিসতি নয়, মোট লোন বিয়োগ হবে। আপনার এই ক্ষেত্রে যাকাত যোগ্য নিট সম্পদ হবে শুণ্য।

প্রশ্নঃ  স্বর্নের দাম কিভাবে ধরতে হবে? ক্রয়ের সময় বলে ২২ ক্যারেট, কিন্তু বিক্রয় মুল্য দোকানে গেলে কমে যাবে নিশ্চিত, তাহলে কোন দামে যাকাত দিতে হবে? জানালে খুশী হবো।


উত্তরঃ  স্বর্ণের দাম বিক্রয় মুল্য ধরতে হবে। অর্থাত বিক্রয় করতে গেলে যে দাম পাবেন সেই দামেই হিসাব করবেন।

প্রশ্নঃ যদি আমার ৯৯ হাযার টাকা থাকে, আর কয়েক ভরি সোনা থাকে, তাহলে কি যাকাত হয়? মানে এই দুইটারে যোগ কইরা হিসাব হবে? নাকি আলাদা আলাদা যাকাত হয় কিনা দেখতে হবে?  আর ভাই, প্রভিডেন্ড ফান্ডের উপর যাকাত নাই, এইটার সোর্স দিবেন একটু?

উত্তরঃ   আপনার সোনা যদি সাড়ে সাত ভরির কম হয় তাহলে শুধু সোনার হিসাব আর দরকার নেই, এর যাকাত লাগবে না। সে ক্ষেত্রে শুধু টাকার উপর যাকাত দিতে হবে (যদি তা নেসাব পরিমান হয়)।

আমি বিষয় গুলো বিভিন্ন জনকে জিগগেস করে করে জেনেছি, কাজেই সুস্পষ্ট সোর্স দেয়া আমার জন্য কঠিন। এটার ব্যাখাটা লেখায় দিয়েছি, প্রভিডেন্ড ফান্ডের উপর আপনার মালিকনা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।


যাকাত হবে ঐ দিন (যেদিন আপনি হিসাব করছেন) আপনার মালিকানাধীন নিট ক্যাশ অথবা ক্যাশযোগ্য সম্পদ। প্রভিডেন্ড ফান্ড (চাকরি না ছাড়া পর্যন্ত) আপনার ক্যাশযোগ্য সম্পদ নয়।


তবে কোন কোন আলেম দের মতে প্রভিডেন্ড ফান্ড যাকাতযোগ্য।

প্রশ্নঃ: ধরুন কারো কাছে যে টাকা আছে সেটা নেসাব পরিমান,অর্থাৎ যাকাত প্রযোজ্য । আবার তার কাছে যে স্বর্ণ আছে সেটা সাড়ে সাত ভরি নয় । তাহলে যাকাত হিসেব হবে কিভাবে । তিনি কি শুধু টাকার উপর যাকাত দিবেন নাকি টাকা+ স্বর্ণের দামের উপর যাকাত দিবেন ।  আরেকজন জানতে চাইল: তার যে টাকা আছে সেটা নেসাব পরিমান। কিন্তু তার ব্যাংক লোন আছে। লোনের টাকা সে আবার শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে । এখানে নিয়মটা কেমন হবে ??
 
উত্তরঃ   সে ক্ষেত্রে স্বর্ণ বাদ যাবে, শুধু টাকার উপর যাকাত দিতে হবে।


যাকাত হিসাবের দিন তার মালিকানাধীন শেয়ারের বিক্রয়মুল্য যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবে যোগ হবে। অপরদিকে ব্যাংকের কাছে ঐ দিন পরিশোধযোগ্য লোন যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বিয়োগ হয়ে নিট যাকাতযোগ্য সম্পদ বের করতে হবে।


প্রশ্নঃ ধরেন কোন ব্যবসায় আমার ১ লাখ টাকা ইনভেস্ট করা আছে, সেক্ষেত্রে এই টাকাটা কি ব্যক্তিগত যাকাতের হিসেবে যুক্ত হবে?

উত্তরঃ   সে ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচ্য:
যদি ঐ প্রতিষ্ঠান তার নিজের যাকাত বের করে নিয়ম মেনে তাহলে আপনার ঐ টাকার উপর জাকাত দিতে হবে না।

যদি প্রতিষ্ঠান জাকাত না দেয় তা হলে আপনাকে তা দিতে হবে যদি সেটি জাকাত যোগ্য হয়।

যেমন যদি ব্যাবসার উপকরণ কিনতে ব্যাবহৃত হয় (যেমোন গার্মেন্টের মেশিনারিজ কিনা হয়েছে) তার উপর যাকাত নেই। যদি কাচামাল কেনা থাকে তাহলে তার উপর যাকাত দিতে হবে।

প্রশ্নঃ আমি ৫ভরি গোল্ড কিন্তেছি কিস্তিতে। ১ বছর ধরে ম্যাক্সিমাম ৮০% টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আমাকে কি এর উপর যাকাত দিতে হবে?


লোন থাকলে কি সোনার উপর যাকাত দিতে হবে?

উত্তরঃ  সোনা যদি ইতিমধ্যে আপনার হস্তগত হয়ে থাকে তবে সোনার বিক্রয় মুল্য যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে আর কিস্তির বাকী টাকা লোন হিসাবে যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে, নিট ভ্যাল্যুর উপর যাকাত দিবেন।
আর যদি কিস্তির শর্ত এমন হয় যে সোনা আপনার হস্তগত হয়নি, কিস্তি শেষ করার পর তা আপনি হাতে পাবেন, তাহলে যাকাতযোগ্য হবেনা।



লোন থাকলেও সোনার উপর যাকাত দিতে হবে---তবে আপনার মোট যাকাতযোগ্য সম্পদ (সোনার বিক্রয়মুল্য সহ) থেকে লোন পরিমান বাদ দিয়ে আপনার নেট যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাব করতে হবে।





আসলে বিস্তারিত জানতে আরও অনেক পড়াশুনা করতে হবে। লিখায় দেয়া ওয়েবসাইটে দেখতে পারেন। আরও অনেক বই পাওয়া যায়।



আমি নিজেরটা হিসাব করতে গিয়ে যে জায়গাগুলিতে প্রশ্ন জেগেছে সেগুলি আমি জেনে নিয়েছি আমার এক কাজিনের কাছ থেকে যিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া-শুনা করে ও দেশের দাওয়া বিভাগে কাজ করছেন। সেই আলোকে এটি লিখতে চেষ্টা করেছি যাতে আগ্রহীগণ সহজ ভাবে বিষয়টি জানতে পারেন। (শরিফ নজমুল)



 জাকাত কাদের ওপর ফরজ এটা কীভাবে বের করবেন :

সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা সাড়ে ৭ তোলা সোনা অথবা উল্লিখিত রুপা/সোনার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ অথবা এ বছরে ৬৩ হাজার টাকা ব্যাংক/নগদ অর্থ থাকলে অথবা কিছু অর্থ থাকলে তার সঙ্গে রুপার দাম এবং সোনার বর্তমান মূল্য যোগ করে যদি ৬৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ হয় তবে ওই ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ। জাকাত ব্যক্তিগত আমল। সমষ্টিগত নহে। অর্থাৎ স্বামী এবং স্ত্রীর পৃথক পৃথক হিসাব করতে হবে। অনুরূপভাবে একজন সাবালক ব্যক্তির হিসাবও পৃথক করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ এক ব্যক্তির ২ ভরি/তোলা রুপা আছে, ১ ভরি সোনা আছে এবং একটি উচঝ আছে, সেখানে মাসে ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে এ পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৫০০ টাকা জমা হয়েছে, নগদ বর্তমানে হাতে ৯ হাজার টাকা আছে তার কি জাকাত হবে?

উপরের উদাহরণ থেকে বুঝতে পারলাম যে, সর্বসাকুল্যে ওই ব্যক্তির ৬৬ হাজার ৯০০ টাকা হয়েছে। চলতি বছর রুপা ও সোনার বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী তার ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে। তাহলে তার কত জাকাত দিতে হবে। আল্লাহপাক মাত্র ২.৫ শতাংশ জাকাত দিতে বলেছেন, সুতরাং ৬৬,৯০০Í২.৫% = ১৬৭৩ টাকা।

সোনা ও রুপা ব্যতীত ব্যবহৃত জিনিসের ওপর জাকাত দিতে হয় না। যেমন, বাসার সব ফার্নিচার, কাপড়চোপড়, ফ্রিজ, এসি, ব্যবহৃত গাড়ি-বাড়ি প্রভৃতি। তবে অ্যাকুরিয়াম, শোপিস, টেলিভিশনের বর্তমান মূল্যের ওপরও জাকাত দিতে হবে।

জাকাত প্রদান : যেসব ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে তারা ব্যতীত সবাই জাকাত গ্রহণ করতে পারবেন। জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি মি. জামিলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা কর্জ আনলেন, তাহলে কর্জ পরিশোধের জন্য যদি কামালকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন তাহলে আপনার কর্জ পরিশোধ হবে? পরিশোধ হবে না। কারণ যিনি পাওনাদার তাকেই পরিশোধ করতে হবে। তাই আল্লাহপাকের নির্ধারিত নিয়মে জাকাত পরিশোধ করতে হবে। প্রাথমিক ধারণার জন্য তথ্যগুলো প্রদান করে আপনাকে জানার, বোঝার এবং পালন করার ক্ষেত্রে উৎসাহী করতেই ক্ষুদ্রাকারে এ লেখা।

জাকাত প্রদান যে সহজ তার একটি নমুনা : আগে আপনি টাকা দান করতেন কিন্তু জাকাত দেননি, এবার একটু ভেবে দেখুন আপনি দান করেছেন ৫ হাজার টাকা কিন্তু আপনার জাকাত হয়েছে মাত্র ১৬৭৩ টাকা। তাহলে শুধু নিয়ত করে টাকা দান করলেই কিন্তু আপনার ৫ হাজার টাকার মধ্যে ১৬৭৩ টাকা জাকাত আদায় হয়ে গেল। বোঝার চেষ্টা করলে এবং মানার আগ্রহ থাকলে যে কোনো কাজই সহজ। আর আল্লাহর হুকুম তো কখনোই কারও ওপর জুলুম হতে পারে না।

যাদের জাকাত দেয়া যাবে না : বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, তাওই-মাওই এবং ছেলেমেয়ে, ছেলেমেয়েদের সন্তান এবং তাদের সন্তান এভাবে বংশক্রম। তাছাড়া যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে।



জাকাতের হিসাব করতে একটি সহজ ছক

ক) জাকাত আদায়যোগ্য সম্পদ

১। স্বর্ণ (গহনা অথবা যে কোনো আকৃতিতে নিজের মালিকানায় বিদ্যমান)

২। রৌপ্য (গহনা অথবা যে কোনো আকৃতিতে নিজের মালিকানায় বিদ্যমান)

৩। নগদ, নগদায়নযোগ্য অর্থ ও প্রাপ্য ঋণ (যে কোনো সূত্রে আপন মালিকানায় বিদ্যমানÑ যার নি¤েœাক্ত অবস্থা হতে পারে)।

ক) নিজ হাতে বা ব্যক্তি বিশেষের কাছে গচ্ছিত মজুদ অর্থ।

খ) ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা (হজ, বিবাহ, গৃহনির্মাণ, ইত্যাদি) বাস্তবায়নের জন্য জমাকৃত অর্থ।

গ) আপনার মালিকানায় বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার দেশীয় (টাকায়) মূল্যমান।

ঘ) ব্যাংক, সমবায় সমিতি বা অন্য যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (চলতি, সঞ্চয়ী, দীর্ঘমেয়াদি) যেকোনো ধরনের জমাকৃত অর্থ ও তার বৈধ মুনাফা উল্লেখ্য, ট্যাক্স ও সার্ভিস চার্জ কাটা গেলে তা হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে।

ঙ) ব্যাংক লকারে গচ্ছিত সম্পদের অর্থমূল্য।

চ) ফেরতযোগ্য বীমা পলিসিতে জমাকৃত প্রিমিয়াম।

ছ) যে কোনো বন্ড, ডিবেঞ্চার ও ট্রেজারি বিল ইত্যাদির ক্রয়মূল্য।

জ) ঐচ্ছিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের সমুদয় অর্থ এবং বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের স্বেচ্ছাপ্রদত্ত অর্থ।

ঝ) কাউকে ঋণ হিসেবে প্রদত্ত অর্থ (যদি ঋণগ্রহীতা তা স্বীকার করে এবং প্রাপ্তির আশা থাকে)

ঞ) পাওনা বেতন (প্রাপ্তির আশা থাকলে)।

ট) বিক্রীত পণ্যের মূল্য যা এখনও হস্তগত হয়নি বা বিল অব এক্সচেঞ্জ

ঠ) যে কোনো স্থাপনা ভাড়া দেয়ার সময় (জামানত হিসেবে) প্রদত্ত সিকিউরিটি মানি, অ্যাডভান্স মানি কিংবা ব্যাংক গ্যারান্টি মানি যদি তা ফেরতযোগ্য হয়। (যদিও তা গ্যারান্টি মেয়াদকালে উত্তোলন নিষিদ্ধ হোক না কেন)

উল্লেখ্য যে, শেষোক্ত চার ধরনের সম্পদের জাকাত তাৎক্ষণিক আদায় করা জরুরি নয়, বরং যখন ন্যূনতম ১০.৫ তোলা (১২২.৪৭ গ্রাম) রুপার মূল্য পরিমাণ পাওয়া যাবে, তখন আগের সব বছরের জাকাত আদায় করতে হবে। এজন্য প্রত্যেক বছরই অন্যান্য সম্পদের সঙ্গে এগুলোর জাকাত আদায় করে নেয়া উত্তম।

৪। ব্যবসা-পণ্যের মূল্য (যার নিম্নোক্ত অবস্থা হতে পারে)

ক) বিক্রয়যোগ্য মজুদ পণ্য

খ) পণ্য তৈরির জন্য মজুদ কাঁচামাল

গ) প্রক্রিয়াধীন পণ্য, প্যাকেটিং, প্যাকেজিং পণ্য

ঘ) লাভে বিক্রির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত যাবতীয় পণ্য (যেমন, জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, ধান, গম, আলু ইত্যাদি)।

ঙ) যৌথ কারবারে বিনিয়োগকৃত অর্থের নগদ অংশ, তা দ্বারা ক্রয়কৃত ব্যবসা-পণ্য ও জাকাতযোগ্য লভ্যাংশ

উল্লেখ্য, ব্যবসাপণ্যের ক্ষেত্রে সব পণ্যের একত্রে পাইকারি বিক্রয়মূল্য ধর্তব্য হবে। নিজ ক্রয়মূল্য বা খুচরা বিক্রয়মূল্য ধর্তব্য নয়।

চ) ক্রয়কৃত শেয়ার মূল্য (শেয়ার যদি মূল্য বৃদ্ধি পেলে বিক্রি করার উদ্দেশে ক্রয় করা হয়, তাহলে তার পূর্ণ বাজার দরের ওপর জাকাত আসবে। আর যদি কোম্পানি হতে বার্ষিক মুনাফা অর্জনের নিমিত্তে ক্রয় করা হয়, তাহলে কোম্পানির যে পরিমাণ সম্পদ জাকাতযোগ্য, শেয়ারপ্রতি তার আনুপাতিক হারের ওপর জাকাত আসবে যা কোম্পানির ব্যালেন্সশিট দেখে নির্ণয় করা যাবে। যদি জাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ জানা অসম্ভব হয় তাহলে সতর্কতামূলক পূর্ণ বাজারমূল্যে জাকাত দিতে হবে।)

৫। অন্যান্য ব্যক্তিগত সম্পদ

জাকাতযোগ্য সম্পদের মোট পরিমাণ =

খ) বিয়োগযোগ্য সম্পদগুলো

১। মৌলিক প্রয়োজনে নেয়া ঋণ (যেমন- চিকিৎসা, নিত্যব্যয় নির্বাহ, ইত্যাদি)।

২। প্রবৃদ্ধি বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে নেয়া এমন ঋণ যা দ্বারা জাকাতযোগ্য সম্পদ (কাঁচামাল, ব্যবসাপণ্য) ক্রয় করা হয়েছে

উল্লেখ্য, ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়মূলক লোন, জমি, বিল্ডিং, মেশিনারিজ দ্রব্য ক্রয়ে নেয়া ঋণ বিয়োগ হবে না।

৩। ক্রয়কৃত পণ্যের অপরিশোধিত মূল্য (যা এ বছরই আদায় করতে হবে)

৪। দেনমোহর, যা চলতি বছর আদায়ের ইচ্ছা আছে।

৫। বিভিন্ন স্থাপনা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে নেয়া ফেরতযোগ্য সিকিউরটি বা অ্যাডভান্স মানি

৬। অধীনস্থদের অনাদায়ী বেতন-ভাতা

৭। অনাদায়ী ট্যাক্স, বাড়ি/দোকান ভাড়া ও যাবতীয় সার্ভিস বিল

৮। অতীতের অনাদায়ী জাকাত

উল্লেখ্য, আগে একাধিক বছরে জাকাত আদায় না করে থাকলে সে বছরগুলোর আনুমানিক গড়স্থিতি বের করে ২.৫০ জাকাত হিসেবে আদায় করে দেবে। সন্দেহমুক্তির জন্য নিট হিসাব থেকে কিছু বেশি দেবে এবং ভুলত্রুটি ও বিলম্বের জন্য এস্তেগফার করবে।

৯। সুদ, অবৈধ মুনাফা, বন্ড-লটারি পুরস্কার ও হারাম পন্থায় অর্জিত সমুদয় অর্থ (এসব সম্পদ সম্পূর্ণই সওয়াবের নিয়ত ব্যতিরেকে দান করে দিতে হবে।)

মোট আদায়যোগ্য দেনা :

মূল-হিসাব

১। ‘ক’-শ্রেণীর মোট আদায়যোগ্য সম্পদ

২। ‘খ’-শ্রেণীর মোট আদায়যোগ্য দেনা

বিয়োগ-পরবর্তী অবশিষ্ট জাকাতযোগ্য সম্পদ

আদায়যোগ্য জাকাত-২.৫০ শতাংশ হারে।


0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

প্রিয়বই.কম → (19)123456 -► পরের পাতা
সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম