কুরআন রিচার্স ফাউণ্ডেশন প্রকাশিত সকল বইয়ের সারসংক্ষেপ

 
 ১. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য

অনেক মুসলিম মনে করেন আল্লাহ তা’য়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ, তাসবীহ-তাহলিল ইত্যাদি উপাসনা করার জন্য। অন্য অনেকে মনে করেন আল্লাহর দাস বা প্রতিনিধি হওয়ার জন্য সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ, তাসবীহ-তাহলিল ইত্যাদি মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য বিভাগের কিছু কাজ। এ ধারণার মূল উৎস হলো সূরা যারিয়াত/৫১ : ৫৬, আন’আম/৬ : ১৬৫ এবং বাকারা/২ : ৩০ এর প্রথম অংশ।

কিন্তু সূরা বাকারার/২ : ৩০, আলে ইমরান/৩ : ১১০, আশ্ শামস্/৯১ : ৭-১০, বাকারা/২ : ১৪৩, বাকারা/২ : ১৮২, হজ্জ/২২ : ৩৭, যারিয়াত/৫১ : ৫৬, আন’আম/৬ : ১৬৫ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে জানা যায় যে, মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায় কাজের বাস্তবায়ন ও অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করে মানুষের কল্যাণ করা।

মানুষের জীবনের অন্য তিন বিভাগ তথা উপাসনা, শরীর-স্বাস্থ্য গঠন ও পরিবেশ-পরিস্থিতি গঠন বিভাগের কাজগুলো হলো মানুষ সৃষ্টির পাথেয় তথা মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়।

২. রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) কে প্রেরণের উদ্দেশ্য এবং তাঁর সঠিক অনুসরণ বুঝার মাপকাঠি

অনেক মুসলিম মনে করেন যে, রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) কে প্রেরণের উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সুসংবাদ দেয়া ও সতর্ক করা। অন্যদিকে অধিকাংশ মুসলিম মনে করেন যে, রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা তা বুঝার মাপকাঠি হলো দাড়ি লম্বা হওয়ার মাত্রা, জামার কাটিং, সালাত কাজা না হওয়া, ছেলে মেয়েদের পরহেযগার হওয়া ইত্যাদি।

কিন্তু সূরা তাওবা/৯ : ০৯, ফাতহ্/৪৮ : ২৮, ইয়াসিন/৩৬ : ৩০, যুখরুফ/৪৩ : ০৭, বাকারা/২ : ২১৪ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common senseএর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে,রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) কে প্রেরণের উদ্দেশ্য হলো অন্য সকল জীবন ব্যবস্থার উপর ইসলামকে বিজয়ী করা। আর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) কে অনুসরণ করা সঠিক হচ্ছে কিনা তা বুঝার উপায় হলো ইসলামের শত্রুদের নিকট থেকে প্রতিরোধ আসা। সে প্রতিরোধ হতে পারে গালাগাল, অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন, নাগিরকত্ব হরণ, হত্যা ইত্যাদি।

৩. নামাজ (সালাত) কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে

আল-কুরআনের সূরা আনকাবুতের ৪৫ নং আয়াতের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, সালাতের উদ্দেশ্য হলো মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ থেকে অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজ দূর করা। কিন্তু এটি পরিস্কার যে বর্তমান মুসলিম সমাজে সালাতের এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর প্রধানতম কারণ হলো বর্তমান কালের মুসলিমদের ‘আকিমুস্ সালাত’ কথাটির সঠিক অর্থ বুঝতে না পারা।

বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিম বিশ্বাস করেন যে, ‘আকিমুস্ সালাত’ কথাটির অর্থ হলো- সালাতের অনুষ্ঠানটি নিয়ম-কানুন (আরকান আহকাম) মেনে নিজে সঠিকভাবে ও নিষ্ঠার সাথে আদায় করা এবং সমাজের সকলে যেন সালাতের অনুষ্ঠানটি সুন্দর ও সহজভাবে আদায় করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।

কিন্তু সূরা বাকারা/২ : ১৪৩, মায়েদা/৫ : ০৬, বাকারা/০২ : ১৭৭, জুম’য়া/৬২ : ০৯, মাউন/১০৭ : ৪-৬ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে,‘আকিমুস্ সালাত’ কথাটির অর্থ হলো-সালাতের অনুষ্ঠান নিয়ম-কানুন (আরকান আহকাম) মেনে নিষ্ঠার সাথে আদায় করা এবং প্রতিটি অনুষ্ঠান থেকে দিতে চাওয়া শিক্ষা মনে-প্রাণে গ্রহণ করা এবং সে শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠা করা।

৪. মু’মিনের এক নাম্বার কাজ ও শয়তানের এক নাম্বার কাজ

বর্তমান বিশ্বের যে সকল মুসলিম সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ ইত্যাদি ইবাদাতগুলো আদায় করেন তাদের অধিকাংশের গ্রহণযোগ্য পরিমাণ কুরআনের জ্ঞান নেই। এর কারণ হলো তারা মনে করেন কুরআনের জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ঐ সকল ইবাদাতগুলোর চেয়ে কম।

কিন্তু সূরা আলাক/৯৬ : ১-৫, আলে ইমরান/৩ : ১৬৪, বাকারা/২ : ১২৯ ও১৫১, জুম’য়া/৬২ : ০২, নাহল/১৬ : ৯৮, আন’আম/৬ : ১৪৪ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, মু’মিনের এক নাম্বার কাজ হলো কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা এবং শয়তানের এক নাম্বার কাজ হলো মানুষকে কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে সরানো।

৫. আমল কবুলের শর্তসমূহ

বর্তমান ধারণ হলো কোন আমলের (কাজ) অনুষ্ঠানটি সঠিকভাবে পালন করতে পারলে সেটি আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যাবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, বর্তমান ধারণা হলো সালাতের অনুষ্ঠানটি আরকান-আহকাম (নিয়ম-কানুন) মেনে সঠিকভাবে পালন করতে পারলে সালাত আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যাবে।

কিন্তু সূরা আন’আম/৬ : ১৬২, সোয়াদ/৩৮ : ২৭, বাকারা/২ : ১৭৭, হজ্জ/২২ : ৩৭, বাকারা/২ : ১৪৩, মায়েদা/৫ : ৬, মাউন/১০৭ : ৪-৭, বাকারা/২ : ৮৫, ৮৬ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, আমলের ধরণের উপর ভিত্তি করে আমল কবুলের শর্ত হলো চার থেকে আটটি। শর্তগুলো হলো-
১. আমলটি পালন করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি সর্বক্ষণ সামনে থাকা
২. আমলটির ব্যাপারে আল্লাহর কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য জানা এবং আমলটি পালন করার সময় সে উদ্দেশ্য সাধন হচ্ছে কিনা বা হবে কিনা তা সর্বক্ষণ খেয়াল রাখা
৩. আমলটির ব্যাপারে মহান আল্লাহর জানিয়ে দেয়া পাথেয়কে উদ্দেশ্য সাধনের মাধ্যম মনে করে পালন করা
৪. আল্লাহর জানিয়ে দেয়া নিয়ম-কানুন (আরকান-আহকাম) অনুসরণ করে আমলটির অনুষ্ঠানটি করা
৫. আনুষ্ঠানিক আমলের ক্ষেত্রে, প্রতিটি অনুষ্ঠান থেকে আল্লাহর দিতে চাওয়া শিক্ষাগুলো মনে-প্রাণে গ্রহণ করা
৬. আনুষ্ঠানিক আমলের অনুষ্ঠান পালন করে গ্রহণ করা শিক্ষাগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা।
৭. ব্যাপক কর্মকাণ্ডমূলক আমলের ক্ষেত্রে আল্লাহর জানিয়ে দেয়া মৌলিক বিষয়ের একটিও বাদ না দেয়া
৮. ব্যাপক কর্মকাণ্ডমূলক আমলে উপস্থিত থাকা বিভিন্ন বিষয়, আল্লাহর জানিয়ে দেয়া গুরুত্ব অনুযায়ী আগে বা পরে পালন করা

৬. ইসলামে Common sense-এর গুরুত্ব কতটুকু এবং কেন

বর্তমান বিশ্বের মুসলিমদের ধারণা হলো- ইসলামে জ্ঞানের উৎস হিসেবে Common sense-এর কোন মূল্য নেই। তাই দেখা যায় তারা এমন অনেক বিষয়কে ইসলামের শিক্ষা হিসেবে মেনে নিয়েছে, Common senseকে সামান্য গুরুত্ব দিলেও যা মানা সম্ভব ছিল না। যেমন- অর্থছাড়া কুরআন পড়লে প্রতি অক্ষরে ১০ নেকী, ওজু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে, কিন্তু ছোঁয়া যাবে না ইত্যাদি।
কিন্তু সূরা আশ্ শামস/৯১ : ৭-১০, আনফাল/৮ : ২৯, যারিয়াত/৫১ : ৫১, ইউনুস/১০ : ১০০, মূলক/৬৭ : ১০ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, Common sense হলো আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের একটি সাধারণ উৎস। আর আল্লাহ প্রদত্ত প্রমাণিত উৎস, কুরআন ও সুন্নাহর সাথে Common senseকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করলে ভুল জ্ঞান অর্জিত হবে।

৭. ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থছাড়া কুরআন পড়া গুনাহ না সওয়াব

অনারব মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশের ধারণা হলো অর্থছাড়া কুরআন পড়লেও প্রতি অক্ষরে ১০ নেকী। এ ধারণার মূল উৎস হলো একটি সহীহ হাদীসের অসতর্ক ব্যাখ্যা। আর এ ধারণার কারণে বর্তমান বিশ্বের অসংখ্যা মুসলিম কুরআন পড়ার পরও কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

কিন্তু সূরা বাকারা/২ : ১২১, মুহাম্মাদ/৪৭ : ২৪, জুম’য়া/৬২ : ৫, তোয়াহা/২০ : ১১৪ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-
• কুরআন বুঝে পড়লে প্রতি অক্ষরে ১০ নেকী
• আরবী ভাষা শিখার স্তরে বা কুরআন মুখস্থ করার (হেফজ করা) স্তরে না বুঝে পড়লে প্রতি অক্ষরে ১০ নেকী হবে
• ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থছাড়া কুরআন পড়া একটি নিষিদ্ধ বা গুনাহর কাজ ।

৮. ইসলামের মৌলিক বিষয় বা গুরুত্বপূর্ণ হাদীস কোন্ গুলো তা জানার সহজতম উপায়

বর্তমান বিশ্বের অনেক মুসলিমকে ইসলামের বহু অমৌলিক বিষয় নিষ্ঠার সাথে পালন করতে কিন্তু অনেক মৌলিক বিষয় পালন থেকে দূরে থাকতে দেখা যায়। এর একটি প্রধান কারণ হলো তাদের জানা না থাকা ইসলামের মৌলিক ও অমৌলিক বিষয় কোন্ গুলো এবং কোন্ গুলো বেশী ও কম গুরুত্বপূর্ণ হাদীস। আর তাদের এ অজ্ঞতার একটি প্রধান কারণ হলো এমন কিছু তথ্য পরিস্কার না থাকা যা দ্বারা ঐ বিষয়গুলো সহজে বুঝা বা নির্ণয় করা যায়।

কিন্তু সূরা নাহল/১৬ : ৮৯, মায়েদা/৫ : ৩, বাকারা/২ : ৮৫, মুহাম্মাদ/৪৭ : ২৫-২৮, বনী ইসরাইল/১৭ : ৭৯ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে- ইসলামের প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় জানার সহজতম উপায় হলো কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা। কারণ, ইসলামের সকল প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় কুরআনে উল্লেখ আছে। আর কুরআনের মূল বিষয়গুলো হলো সেই বিষয়সমূহ। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ হাদীসগুলো হলো সেই হাদীসগুলো যার বক্তব্য কুরআনের বক্তব্যের অনুরুপ অথবা সেগুলো যার বক্তব্য হলো কুরআনের মূল বিষয়ের বাস্তবায়ন পদ্ধতির মৌলিক বিষয়।

৯. ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করলে গুনাহ হবে কি হবে না

প্রচলিত ধারণা হলো ‘ওজু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করা যাবে না’। অর্থাৎ ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা গুনাহ কিন্তু পড়া গুনাহ নয়। আর ‘ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা গুনাহ’ এ ধারণার মূল উৎস হলো সূরা ওয়াকীয়ার ৭৯ নং আয়াতের অসতর্ক ব্যাখ্যা।

কিন্তু সূরা ওয়াকীয়া/৫৬ : ৭৭-৮১, নাহল/১৬ : ৯৮ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে- ওজু ছাড়া কুরআন পড়া বা স্পর্শ করা নিষেধ বা গুনাহ নয়। কিন্তু গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন পড়া ও স্পর্শ করা উভয়টি নিষেধ।

১০. আল-কুরআনের পঠন পদ্ধতি- প্রচলিত সূর না আবৃত্তির সূর?

পৃথিবীর প্রায় সকল মুসলিম কুরআন পড়েন একই ভঙ্গিতে শূর করে। অর্থাৎ তারা কুরআন পড়েন যেখানে যে ভাবপ্রকাশ করা হয়েছে সেখানে সে ভাবপ্রকাশ না করে। কিন্তু কুরআনের শব্দের ভাষাগত পর্যালোচনা, সূরা বাকার/২ :১২১, মুজ্জাম্মিল/৭৩ : ৪, কীয়ামাহ/৭৫ : ১৬-১৯ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-কুরআন আবৃতি করে পড়তে হবে। অর্থাৎ কুরআনের যেখানে যে ভাবপ্রকাশ করা হয়েছে সেখানে সে ভাবপ্রকাশ করে পড়তে হবে। যে আয়াতে প্রশ্ন করা হয়েছে সে আয়াত প্রশ্ন আকারে পড়তে হবে। যে আয়াতে আদেশ করা হয়েছে সে আয়াত আদেশের সূরে পড়তে হবে।

১১. যুক্তিসঙ্গত ও কল্যাণকর আইন কোনটি- মানুষ রচিত আইন না কুরআনের আইন?

পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে কুরআনের আইনের পরিবর্তে মানুষ রচিত আইন চালু আছে। এখান থেকে বুঝা যায় যে, প্রায় সকল দেশের মানুষেরা ধরে নিয়েছে যে মানুষ রচিত আইন কুরআনের আইনের চেয়ে অধিক যৌক্তক ও কল্যাণকর। কিন্তু নিম্নের ধারাগুলোর মাধ্যমে যাচাই করলে সহজে বুঝা যায় যে, কুরআনের আইন মানব রচিত আইন থেকে সকল দিক থেকে অনেকে বেশী যৌক্তিক ও কল্যাণকর।
• আইন প্রণেতার জ্ঞানের বিস্তৃতি :
ক. বিষয় ভিত্তিক বিস্তৃতি এবং
খ. স্থান-কাল ভিত্তিক বিস্তৃতি,
২. আইন প্রণেতার সংখ্যা,
৩. আইন প্রণেতার নিরপেক্ষতা,
৪. আইন প্রণেতা বা প্রয়োগকারী সত্তার শক্তি,
৫. আইন প্রণেতার স্থায়িত্ব,
৬. আইন প্রণেতা বা প্রয়োগকারী সত্তার কর্তৃত্ব স্থলের বিস্তৃতি,
৭. আইন প্রণেতা ও প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে সম্পর্ক,
৮. আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা,
৯. মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকে আইনের বিস্তৃতি ও তার আনুপাতিক হার,
১০. আইন অমান্য করাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করতে পারে এমন কোনকিছুর অনুমতি না থাকা,
১১. প্রণীত আইনসমূহ এবং তা মানা বা না মানার নিরীক্ষণ পদ্ধতি ও পরিণাম সকলকে জানানোর ব্যবস্থা,
১২. আইন মানা বা না মানার নিখুঁত নিরীক্ষণ (Monitoring) পদ্ধতি,
১৩. নিখুঁত বিচারব্যস্থার উপস্থিতি ও তার স্তরসমূহ,
১৪.বিচারকের বিচক্ষণতা, নিরপেক্ষতা এবং সকল ধরনের প্রভাবমুক্ততা,
১৫. জন্মগতভাবে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় আনা,
১৬. ওকালতি ও সাক্ষী প্রথার উপস্থিতি ও ধরণ,
১৭. শাস্তির উপস্থিতি ও ধরণ,
১৮. পুরস্কারের উপস্থিতি ও ধরণ এবং
১৯. দুনিয়ার বিচারের শাস্তির ধরণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি।

১২. নির্ভুল জ্ঞান অর্জনের জন্য কুরআন, সুন্নাহ ও Common sense ব্যবহারের নীতিমালা বা ফর্মুলা

প্রচলিত ধারণা হচ্ছে-
ক. ইসলামী জ্ঞানের উৎস হলো-কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস
খ. মুসলিমদের ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে হবে ফিকাহশাস্ত্র অধ্যয়ন করে। সরাসরি কুরআন, হাদীস অধ্যয়ন করে নয়।
কিন্তু সূরা বাকারা/২ : ১৮৫, হাশর/৫৯ : ৭, আশ্ শামস/৯১ : ৭-১০, আনফাল/৮ : ২৯, যারিয়াত/৫১ : ৫১, ইউনুস/১০ : ১০০, মূলক/৬৭ : ১০, নিসা/৪ : ৫৯, নূর/২৪ : ১৫-১৭ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে- জীবন সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত উৎসসমূহ হলো-
১. কুরআন (আল্লাহ প্রদত্ত মূল প্রমাণিত জ্ঞান)
২. সুন্নাহ (আল্লাহ প্রদত্ত প্রমাণিত জ্ঞান। এটি কুরআনের ব্যাখ্যা)
৩. Common sense (আল্লাহ প্রদত্ত সাধারণ জ্ঞান) আর এ তিনটি উৎস ব্যবহার করে নির্ভুল জ্ঞান অর্জনের নীতিমালা হলো- 

১৩. ইসলামী জীবন বিধানে বিজ্ঞানের গুরুত্ব কতটুকু এবং কেন

কাওমী মাদরাসার (এক ধরণের ধর্মীয় শিক্ষালয়) সিলেবাসে বিজ্ঞান বলে কোন বিষয় নেই। এখান থেকে বুঝা যায় যে, ইসলামে বিজ্ঞানের কোন গুরুত্ব নেই। মুসলিমদের বিশ্বাসে এ ধারণা অন্তর্ভুক্ত হওয়া বিশ্ব সমাজে বিজ্ঞানে তাদের শ্রেষ্ঠ অবস্থানটি হারানোর পেছনে থাকা একটি প্রধান কারণ।

কিন্তু কুরআনের ১/৬ অংশ বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তব্য হওয়া, কুরআনের ২য় আয়াতখানি বা প্রথম বিষয় ভিত্তিক আয়াত বিজ্ঞান বিষয়ক আয়াত হওয়া এবং সূরা আলে-ইমরান/৩ : ৭, আলে-ইমরান/৩ : ১৯০, আন’আম/৬ : ৭৫, বনী-ইসরাইল/১৭ : ১ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-ইসলাম বিজ্ঞানকে অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছে। আর গুরুত্ব দেয়ার পেছনে থাকা প্রধান কারণসমূহ হলো-
১. ঈমান দৃঢ় হওয়া
২. আল-কুরআনের সত্যতা প্রমাণিত হওয়া
৩. কুরআন বুঝা ও ব্যাখ্যা করা সহজ হওয়া
৪. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব হওয়া (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায় কাজের বাস্তবায়ন ও অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করে মানুষের কল্যাণ করা)।

১৪. মু’মিন ও কাফিরের সংজ্ঞা এবং শ্রেণীবিভাগ

মু’মিনের সংজ্ঞা
প্রচলিত ধারণা হলো-মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি যে কালেমা তৈয়েবা মুখে উচ্চারণ করে, অন্তরে বিশ্বাস করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে। কিন্তু সূরা আলে ইমরান/৩ : ১০৩, আনকাবুত/২৯ : ২, বাকারা/২ : ১৮৩, জুম’য়া/৬২ : ৯, বাকারা/২ : ১৭৮ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি যে কালেমা তৈয়্যেবার অর্থটি অন্তরে বিশ্বাস করে। আর একজন ব্যক্তি যখন কালেমা তৈয়্যেবার অর্থটি অন্তরে বিশ্বাস করে এবং সে অনুযায়ী কাজ আরম্ভ করে দেয় তখন সে মুসলিম বলে।

মু’মিনের শ্রণীবিভাগ

প্রচলিত ধারণ হলো মু’মিনগণ তিন ভাগে বিভক্ত-মুসলিম, মুত্তাকী এবং মুহসীন। কিন্তু কুরআন, সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে জানা যায় যে, মু’মিনগণ নিম্নোক্তভাবে বিভক্ত-

গ্রুপ-ক
• প্রকাশ্য
• গোপন

গ্রুপ-খ
• নেককার মু’মিন
• গুনাহগার মু’মিন

প্রকাশ্য এবং গোপন নেককার মু’মিন আবার নিম্নোক্তভাবে বিভক্ত-
• মুসলিম
• মুত্তাকী
• মুহসীন

প্রকাশ্য এবং গোপন গুনাহগার মু’মিন আবার নিম্নোক্তভাবে বিভক্ত-
• সগীরা গুনাহগার মু’মিন
• মধ্যম গুনাহগার মু’মিন
• সাধারণ কবীরা (বড়) গুনাহগার মু’মিন
• কুফরী ধরণের কবীরা (বড়) গুনাহগার মু’মিন

কাফিরের সংজ্ঞা
কাফির হলো সেই ব্যক্তি যে কালেমা তৈয়্যেবা অন্তরে মেনে নিতে অস্বীকার করে।

কাফিরের শ্রেণীবিভাগ
ক. সাধারণ কাফির
১. সাধারণ কাফির
২. তাগুত কাফির
খ. গোপন কাফির (মুনাফিক)

১৫. ‘ঈমান থাকলেই বেহেশত পাওয়া যাবে’বর্ণনা সম্বলিত হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা

প্রচলিত ধারণা হলো-‘ঈমান থাকলে একদিন না একদিন বেহেশত পাওয়া যাবে’। এ ধারণার উৎস হলো কিছু সহীহ হাদীসের অসতর্ক ব্যাখ্যা এবং কিছু হাদীস যা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আল-কুরআনের সূরা নাহল/১৬ : ৯৭, ত্বাহা/২০ : ১১২, আম্বিয়া/২১ : ৯৪, মায়েদা/৫ : ৯, আসর/১০৩ : ২, ৩ ইত্যাদি, অনেক শক্তিশালী সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-আলোচ্য বক্তব্য সম্বলিত সে সব সহীহ হাদীস যেখানে আমলের কথা উল্লেখ নেই তার ব্যাখ্যা হবে-‘ঈমান এবং ঈমানের দাবি অনুযায়ী আমল থাকলে বেহেশত পাওয়া যাবে’।

১৬. শাফায়াতের মাধ্যমে কবীরা গুনাহ ও দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কী?

প্রচলিত ধারণা হলো- পরকালে মু’মিন ব্যক্তির কবীরা গুনাহ (বড় গুনাহ) শাফায়াতের মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে। আবার যে সকল মু’মিনকে বিচারের পর দোযখে পাঠানো হয়েছে তারাও শাফায়াতেরল হলো কিছু সহীহ হাদীস।

কিন্তু আল-কুরআনের সূরা নিসা/৪ : ৩১, নাজম/৫৩ : ৩১ ও ৩২, শূরা/৪২ : ৩৬ ও ৩৭, ঝুমার/৩৯ : ১৯, বাকারা/২ : ৮০ ও ৮১, নিসা/৪ : ৪, মু’মেনুন/২৩ :১০২ ও ১০৩, বাকারা/২ : ২৭৫ ইত্যাদি, অনেক শক্তিশালী সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-কবীরা গুনাহ শাফায়াত দ্বারা মাফ হবে না এবং শাফায়াতের মাধ্যমে কেউ দোযখ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না। শাফায়াতের মাধ্যমে শুধু মধ্যম ও ছগীরা গুনাহ মাফ হবে।

১৭. ‘তাকদীর (ভাগ্য!)পূর্বনির্ধারিত’ তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা

বর্তমান মুসলিম সমাজে প্রচলিত ধারণা হলো সকল কাজের ভাগ্য আল্লাহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত। মানুষের পক্ষে কোনভাবে ঐ ভাগ্য পরিবর্তন করার কোন ক্ষমতা নেই। এ ধারণার উৎপত্তিস্থল হলো-ঈমানে মুফাসসালে থাকা তাকদীর বা কদরে বিশ্বাস কথাটি, কুরআনের কিছু আয়াত যেমন সূরা কদর/৯৭ : ১, কামার/৫৪ : ৪৯, ফুরকান/২৫ : ২ ইত্যাদি এবং এবং কিছু সহীহ হাদীসের অসতর্ক ব্যাখ্যা ।

কিন্তু আল-কুরআনের সূরা নাজম/৫৩ : ৩৯, কাহাফ/১৮ : ২৯, রা’দ/১৩ : ১১, রুম/৩০ :৪১, নিসা/৪ : ৭৯ ইত্যাদি, অনেক শক্তিশালী সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে- কোন কাজের পরিণতি নির্ণয়ে মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার বিরাট মূল্য আছে।

অন্যদিকে সূরা নিসা/৪ : ৮২ আল্লাহ বলেছেন যে, কুরআনে পরস্পর বিরোধী কোন বক্তব্য নেই। তাই ঈমানে মুফাসসালে থাকা তাকদীর বা কদরে বিশ্বাস কথাটি এবং অসতর্কভাবে ব্যাখ্যা করা কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীসগুলোর এমন ব্যাখ্যা করতে হবে যেন তা শেষে উল্লেখ করা কুরআনের আয়াতগুলোর সম্পূরক হয় এবং বিরোধী না হয়।

এটি খুবই সম্ভব যদি জানা থাকে যে, কদর বা তাকদীর শব্দের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হচ্ছে আইন (নীতিমালা বা প্রোগ্রাম) এবং ভাগ্য। যদি কদর বা তাকদীর শব্দের অর্থটি ভাগ্য না ধরে আল্লাহর তৈরী আইন তথা প্রাকৃতিক আইন ধরা হয় তবে সমস্যাটির সমাধান হয়ে যায়। এটি ধরলে যে সকল স্থানে বলা হয়েছে কদর বা তাকদীর পূর্বনির্ধারিত সেখানকার অর্থ হবে আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন পূর্বনির্ধারিত। ঐ আইন অনুসরণ করে মানুষকে সকল কাজ করতে হবে। মানুষের ঐ আইন পরিবর্তন করার কোন ক্ষমতা নেই তবে মহান আল্লাহ চাইলে তা পরিবর্তন করতে পারেন।

১৮.সওয়াব ও গুনাহ মাপার পদ্ধতি

প্রচলিত ধারণা হলো, শেষ বিচারের দিনে সওয়াব ও গুনাহ মাপা হবে ভরের ভিত্তিতে, দাঁড়িপাল্লায়। ঐ মাপের সময় সওয়াব রাখা হবে এক পাল্লায় এবং গুনাহ রাখা হবে অন্য পাল্লায়। যদি সওয়াবের ভর বেশী হয় তবে ব্যক্তি যাবে বেহেশতে। আর যদি গুনাহর ভর বেশী হয় তবে ব্যক্তি যাবে দোযখে। এ ধারণার উৎস হলো- আল-কুরআনের সূরা কারীয়া/১০১ : ৬-৯, আরাফ/৭ : ৮ ও ৯, ঝিলঝাল/৯৯ : ৭ ও ৮ এবং কিছু সহীহ হাদীস।

কিন্তু আল-কুরআনের সূরা মু’মিনুন/২৩ : ১০৩ ও ১০৪, নিসা/৪ : ৯৩, বাকারা/২ : ২৭৫, নিসা/৪ : ৩৮, বাকারা/২ : ৮৫, মুহাম্মাদ/২৫ : ২৫-২৮ ইত্যাদি, সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-সওয়াব ও গুনাহ মাপা হবে গুরুত্বের ভিত্তিতে। ঐ মাপে কারো আমলনামায় একটি মাত্র বড় গুনাহর উপস্থিত থাকলে তার সকল আমলের মাপের ফল শূন্য হয়ে যাবে।

১৯.সহীহ হাদীস বলতে নির্ভুল হাদীস বুঝায় কী?

বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম জানেন যে, সহীহ হাদীস বলতে বুঝায় নির্ভুল হাদীস। অর্থাৎ একটি সহীহ হাদীস হলো হাদীস যার বক্তব্য বিষয় নির্ভুল। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রের তথ্য এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে- হাদীসকে ‘সহীহ’ বলা হয় বর্ণনাধারা (সনদ) নির্ভুলতার ভিত্তিতে। বক্তব্য বিষয়ের (মতন) নির্ভুলতার ভিত্তিতে নয়। বিষয়টি সহজে বুঝা যায় সহীহ হাদীস সম্পর্কে হাদীস শাস্ত্রে উল্লেখ থাকা নিম্নের তথ্যগুলো থেকে-
১. সংজ্ঞা
২. সহীহ হাদীসের শ্রেণীবিভাগ (মুতাওয়াতির, মশহুর, আজিজ ও গরীব)
৩. রহিত হওয়া নীতিমালা (শক্তিশালী সহীহ হাদীস দুর্বল সহীহ হাদীসকে রহিত করে)
৪. কিছু বর্ণনাকারীকে গ্রহণ করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকা (প্রায় ৬২৫ জন বর্ণনাকারী আছেন যাদের ইমাম বুখারী বর্ণনাকারী হিসেবে গ্রহণ করেন নি কিন্তু ইমাম মুসলিম গ্রহণ করেছেন বা উল্টোটি হয়েছে)
৫. যারা হাদীস বর্ণনাকারীদের বাছাই করেছেন তাদের ঐ কাজে কোন ভুল হয় নি বললে শিরকের গুনাহ হবে।
৬. কিছু সহীহ হাদীস আছে যার বক্তব্য কুরআনের সরাসরি বিপরীত।

২০. কবীরা গুণাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিন দোযখ থেকে মুক্তি পাবে কিনা

প্রচলিত ধারণা হলো, একজন মু’মিন ব্যক্তি যদি পরকালে জাহান্নামে যায় তবে সে চিরকাল সেখানে থাকবে না। গুনাহর সমপরিমাণ সময় জাহান্নামে থাকার পর মুক্তি পেয়ে সে অনন্তকালের জন্য জান্নাত পেয়ে যাবে। এ ধারণার মূল উৎস হলো কিছু সহীহ হাদীস।

কিন্তু আল-কুরআনের সূরা নিসা/৪ : ৯২ ও ৯৩, বাকারা/২ : ২৭৫, বাকারা/২ : ৮০ ও ৮১, সোয়াদ/৩৯ : ১৯ ও ২০, নিসা/৪ : ৩১, নিসা/৪ : ১৭ ও ১৮ ইত্যাদি, বেশকিছু সহীহ হাদীস এবং Common senseএ-র আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে- যে সকল মু’মিন তাদের করা কবীরা গুনাহ (বড় গুনাহ), মৃত্যুর পূর্বে তাওবার মাধ্যমে মাফ করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের চিরকাল দোযখে থাকতে হবে।

২১. অন্ধ অনুসরণ (তাকলিদ) সকলের জন্য শিরক বা কুফরী নয় কী?

প্রচলিত ধারণা হলো, অন্ধ অনুসরণ ইসলামে শুধু অনুমোদিতই নয় কোন কোন অবস্থায় এটি প্রয়োজনীয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়, যে ব্যক্তি ইসলাম জানে না তার ইসলাম জানা কোন ব্যক্তিকে অন্ধ অনুসরণ করা ছাড়া উপায় নাই। এ ধারণার উৎপত্তি হলো প্রধানত কিছু আয়াতের অসতর্ক ব্যাখ্যা। যেমন- সূরা বাকারা/২ : ২৮৫, নূর/২৪ : ৫১, তাগাবুন/৬৪ : ১৬ ইত্যাদি।

কিন্তু আল-কুরআনের সূরা তাওবা/৯ : ৩১, আলে-ইমরান/৩ : ৬৪, আর-রহমান/৫৫ : ১১, বনী-ইসরাইল/১৭ : ৩৬, আশ্ শামস/৯১ : ৭ ও ৮, আনফাল/৮ : ২৯ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-আরবী/আল কুরআন ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) ব্যতীত অন্যকোন গ্রন্হ বা ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণ সকলের জন্য শিরক অথবা কুফরীর গুনাহ।

২২.গুনাহের সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ

প্রচলিত ধারণা হলো-
• নিষিদ্ধ কাজ করাকে গুনাহ বলে
• গুনাহ দুই প্রকার- বড় (কবীরা) এবং ছোট (ছগীরা)
• বড় ধরণের নিষিদ্ধ কাজ করলে বড় গুনাহ এবং ছোট ধরণের নিষিদ্ধ কাজ করলে ছোট গুনাহ হয়। কিন্তু আল-কুরআনের সূরা বাকারার/২ : ২৮, শূরা/৪২ : ৪১, মায়েদা/৫ : ৩, নাহল/১৬ : ১০৬, নিসা/৪ : ৯৭ ও ৯৮ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-
• নিষিদ্ধ কাজ করার পর গুনাহ হবে কি হবে না এবং হলে কি ধরণের গুনাহ হবে তা নির্ভর করে ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা উপস্থিত থাকা না থাকা এবং উপস্থিত থাকলে তার মাত্রার উপর।
• গুনাহ তিন প্রকার- বড়, মধ্যম ও ছোট
• একটি বড় নিষিদ্ধ কাজ করার পর গুনাহ হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে যে সকল অবস্থান হতে পারে-
• গুনাহ না হওয়া-বড় গুরুত্ব (জীবন বাঁচান) বা অনেক পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা অবস্থায় ছাড়লে কোন গুনাহ হবে না।
• ছোট গুনাহ হওয়া-প্রায় সমান গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ ছাড়লে ছোট (ছোট) গুনাহ হবে।
• মধ্যম গুনাহ হওয়া- মধ্যম-গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ ছাড়লে মধ্যম (না কবীরা না ছগীরা) গুনাহ হবে।
• সাধারণ বড় গুনাহ (কবীরা গুনাহ) হওয়া-প্রায় না থাকার মত ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ ছাড়লে কুফরী ব্যতীত অন্য কবীরা গুনাহ হবে।
• কুফরী ধরণের বড় গুনাহ হওয়া- কোন ধরনের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া তথা ইচ্ছাকৃতভাবে বা খুশী মনে ছাড়লে কুফরীর গুনাহ হবে।
• একটি ছোট নিষিদ্ধ কাজ করার পর গুনাহ হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে যে সকল অবস্থান হতে পারে-
• গুনাহ না হওয়া-ছোট গুরুত্ব বা অল্প পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা অবস্থায় ছাড়লে কোন গুনাহ হবে না।
• ছোট গুনাহ হওয়া-প্রায় সমান গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ ছাড়লে ছোট (ছোট) গুনাহ হবে।
• কুফরী ধরণের বড় গুনাহ হওয়া- কোন ধরনের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া তথা ইচ্ছাকৃতভাবে বা খুশী মনে ছাড়লে কুফরীর গুনাহ হবে।

২৩. অমুসলিম পরিবার বা সমাজে মানুষের অজানা মু’মিন ও বেহেশতী ব্যক্তি আছে কিনা

প্রচলিত ধারণা হল অমুসলিম পরিবার বা সমাজে কোন মু’মিন ও জান্নাতী ব্যক্তি নেই। কিন্তু আল-কুরআনের সূরা আলে-ইমরান/৩ : ১১০, ১১৩ ও ১৯৯, ফাতহ/৪৮ : ২৪ ও ২৫, বনী-ইসরাইল/১৭ : ১৫, আন’আম/৬ : ১৬৫, বাকারা/২ : ১৭৩ ইত্যাদি, সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-অমুসলিম পরিবার বা সমাজে এমন মানুষ আছে যারা মনে মনে ঈমান এনেছে কিন্তু গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে তার ঘোষণা দিতে পারে না এবং ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে কিছু ইসলামী আমল প্রকাশ্যে করতে পারে না। এ ধরণের ব্যক্তিগণ মু’মিন এবং পরকালে তারা বেহেশতে যাবে।

২৪. ‘আল্লাহর ইচ্ছায় সবকিছু হয়’ তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত অর্থ

আল-কুরআনের সূরা ইউনুস/১০ : ১০, তাকবীর/৮১ : ২৯, আন’আম/৬ : ৩৯, আলে-ইমরান/৩ : ২৬ ইত্যাদি এবং কিছু সহীহ হাদীসের বক্তব্য হলো মানুষের জীবনে ঘটা সকল ঘটনাসহ মহাবিশ্বে যত ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে তা সবই আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত হয়। এ সকল আয়াত ও হাদীসের অসতর্ক ব্যাখ্যা থেকে মুসলিম চালু হয়েছে যে, মহাবিশ্বের সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহ তা’য়ালার সরাসরি ইচ্ছায় ঘটে। মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার আল্লাহর ঐ ইচ্ছায় কোন পরিবর্তন আনতে পারে না।

কিন্তু আল-কুরআনের সূরা নাজম/৫৩ : ৩৯, কাহাফ/১৮ : ২৯, রা’দ/১৩ : ১১, রুম/৩০ : ৪১, নিসা/৪ : ৭৯ ইত্যাদি, সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, কার্যসম্পাদনের ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার বিরাট মূল্য আছে।

আবার সূরা নিসা/৪ এর ৮২ নং আয়াতে বলা হয়েছে আল-কুরআনে পরস্পর বিরোধী কোন বক্তব্য নেই। সুতারাং আমাদের এ উভয় বিভাগের আয়াতকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যেন তা পরস্পর সম্পূরক হয় এবং বিরোধী না হয়।

এটি খুবই সম্ভব যদি আমরা এ সত্যটি জেনে নেই যে, ইচ্ছা দুই প্রকার- তাৎক্ষণিক ইচ্ছা এবং অতাৎক্ষণিক ইচ্ছা। তাৎক্ষণিক ইচ্ছা প্রয়োগ করা হয় কার্য সম্পাদনের সময়। আর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছা প্রয়োগ করা হয় কার্য সম্পদনের অনেক আগে এবং প্রয়োগ করা হয় আইন, নীতিালা, প্রোগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে।

মহান আল্লাহ এ মহাবিশ্ব সৃষ্টির অনেকে আগে তথায় সঙ্ঘটিত সকল ঘটনা-দুর্ঘটনার নিয়ম, আইন, নীতিমালা বা প্রোগ্রাম তৈরী করে রেখেছেন। তাই এটি সহজে বলা যায় যে, ঐ নিয়ম, আইন, নীতিমালা বা প্রোগ্রাম অনুযায়ি মাহাবিশ্ব যা কিছু ঘটছে তা সবই ঘটছে আল্লাহর ‘অতাৎক্ষণিক ইচ্ছায়’। মানুষ শুধু ঐ নীতিমালা অনুসরণ করতে পারে। পরিবর্তন করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা তা পারেন।

তাই আল-কুরআনের যত স্থানে ‘আল্লাহর ইচ্ছা’ কথাটি এসেছে তার অধিকাংশ স্হানে এর অর্থ হবে আল্লাহর ‘অতাৎক্ষণিক’ ইচ্ছা। আর যখন মানুষ দ্বারা কোন কাজ সম্পাদিত হয় তখন এটি হয় দুই ধরণের ইচ্ছার মিলনের ফলে-মানুষের তাৎক্ষণিক ইচ্ছা এবং আল্লাহর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছা।

২৫.যিকির- প্রচলিত ধারণা ও সঠিক চিত্র

বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম জানে যে, যিকির করা অর্থ হলো, অর্থ না জেনে বা জেনে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বা কালেমা তাইয়্যেবা মনে মনে বা মুখে শব্দ করে উচ্চারণ করা। আবার প্রচলিত ধারণা হলো বেশী বেশী যিকির করার স্থান হলো মসজিদ।

কিন্তু আল-কুরআনের সূরা সোয়াদ/৩৮ : ১, নাহল/১৬ : ৪৪, জুম’য়া/৬২ : ৯, মুজ্জাম্মিল/৭৩ : ৮, নাসর/১১০ : ৩, আলে-ইমরান/৩ : ১০ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-
• যিকির দুই স্তর বিশিষ্ট- স্মরণ রাখার স্তর এবং বাস্তবায়নের স্তর
• অর্থসহ কুরআন পড়া, হাদীস, ইসলামী সাহিত্য, বিজ্ঞানের বই অধ্যয়ন করা, সালাত আদায় করা, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বা কালেমা তাইয়্যেবা অর্থ বুঝে মনে মনে বা মুখে শব্দ করে উচ্চারণ করা ইত্যাদি স্মরণ রাখার স্তরের যিকিরের অন্তর্ভুক্ত
• স্মরণ রাখার স্তরের যিকিরের শিক্ষাগুলো অনুসরণ করে বাস্তবে কাজ করা হলো বাস্তবায়ন স্তরের যিকির।
• বেশী বেশী যিকির করার স্হান হলো কর্মস্থান।

২৬. কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা (তাফসীর) করার সঠিক পদ্ধতি

বর্তমান বিশ্বের মুসলিমদের ইসলামী জ্ঞানকে কুরআনের শিক্ষার সাথে মেলালে যে কেউ সহজে দেখতে পাবে যে, তাদের অধিকাংশের জ্ঞান কুরআনের প্রকৃত শিক্ষার থেকে অনেক দূরে। প্রত্যেক মানুষ তার জ্ঞান অনুযায়ী কাজ করে। যেহেতু অধিকাংশ মুসলিমের জ্ঞান কুরআনের প্রকৃত শিক্ষার থেকে অনেক দূরে তাই তাদের আমলও কুরআনের প্রকৃত শিক্ষার থেকে অনেক দূরে। অধিকাংশ মুসলিম কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে তরজমা (অর্থ) ও তাফসীর (ব্যাখ্যা) পড়ে। তাই সহজে বুঝা যায়, কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা করার বর্তমান নীতিমালায় সমস্যা আছে। 

এ জন্য অধিকাংশ অর্থ বা ব্যাখ্যায় কুরআনের প্রকৃত শিক্ষা ফুটে উঠছে না। বর্তমান নীতিমালায় অযাচিত গুরুত্ব দেয়া হয় আরবী গ্রামারকে এবং কম বা শূন্য গুরুত্ব দেয়া হয় অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালাকে। আল-কুরআনের সূরা দুখান/৪৪ : ৫৮, ক্বামার/৪৪ : ১৭, আশ্ শামস/৯১ : ৭-১০, আলাক/৯৬ : ১-৫, বাকারা/২ : ২৬, নিসা/৪ : ৮২ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা করার গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালাসমুহ হলো- 

১. আরবী ভাষা ও গ্রামারের জ্ঞান থাকা, 

 ২. হাদীসের জ্ঞান থাকা, 

৩. Common sense কে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া, 

৪. বিজ্ঞান বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক জ্ঞান থাকা, 

৫. ইসলামী দর্শনের পরিস্কার ধারণা থাকা, 

৬. একটি আয়াতের অর্থ অবশ্যই অন্য আয়াতের বিরোধী হবে না, 

 ৭. ব্যাখ্যার জন্য উদাহরণকে ব্যবহার করা, 

৮. কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ঐ বিষয়ে আলোচনা থাকা সকল আয়াতকে পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করা, 

৯. যে কাজে পথপ্রদর্শন করার জন্য কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ থাকা, 

১০. শানে নুযুলের জ্ঞান থাকা, 

১১. সম্পাদনা পরিষদ থাকা, 

১২. কয়েক বছর পর পর সংস্করণ বের করা।

২৭. ‘মৃত্যুর সময় পূর্বনির্ধারিত’ তথ্যটির প্রকৃত ব্যাখ্যা

মুসলিম সমাজে প্রচলিত ধারণা হল- সকলের মৃত্যুর সময়, কারণ ও স্হান পূর্বনির্ধারিত। অর্থাৎ সকল মানুষে আয়ু পূর্বনির্ধারিত এবং মানুষ তা বাড়াতে বা কমাতে পারে না। এ ধারণার মূল উৎস হলো কুরআনের কিছু আয়াত যেমন সূরা মুনাফিকুন/৬৩ : ১০ ও ১১, আলে-ইমরান/৩ : ১৫৪ ইত্যাদির অসতর্ক ব্যাখ্যা।

আল-কুরআনের সূরা বাকারা/২ : ১৭৯, আন’আম/৬ : ২, ফাতির/৩৫ : ১১, হজ্জ/২২ : ৫, আলে-ইমরান/৩ : ১৪৫ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, মানুষের আয়ু দুই ধরণের। একটি নির্দিষ্ট এবং অপরটি অনির্দিষ্ট।‘নির্দিষ্ট আয়ু’ হলো সেটি যা বয়োবৃদ্ধির প্রাকৃতিক আইন (Natural aging process) অনুযায়ী নির্দিষ্ট হয়। কোন মানুষ যদি আয়ুর ঐ নির্দিষ্ট শেষসীমা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে তবে অবশ্যই তার মৃত্যু হবে। কোন রোগ না থাকলেও। আয়ুর ঐ নির্দিষ্ট শেষ সময়ের আগে অসংখ্য স্থানে মানুষ মারা যেতে পারে আবার নাও পারে রোগ এবং চিকিৎসার অসংখ্য ধরণের সমন্বয়ের উপর ভিত্তি করে। মানুষ যদি জীবনের কোন সময়ে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয় এবং তার যথাযথ চিকিৎসা দেয়া যায় তবে সে সুস্হ হয়ে উঠবে এবং জীবন চলতে থাকবে তার মৃত্যুর নির্দিষ্ট শেষ সময়ের দিকে। আর যদি ঐ রোগের যথাযথ চিকিৎসা না দেয়া যায় তবে তার ঐ বয়সে মৃত্যু ঘটবে।

২৮. সবচেয়ে বড় গুনাহ- শিরক করা না কুরআনের জ্ঞান না থাকা?

বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম জানে যে, শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ। এ ধারণার মূল উৎস হলো আল-কুরআনের সূরা লুকমানের ১৩ নং এবং সূরা নিসার ৪৮ নং আয়াতের অসতর্ক ব্যাখ্যা। অন্যদিকে অধিকাংশ মুসলিম মনে করে যে, সালাত , সিয়াম, হজ্জ ইত্যাদি পালন না করা, কুরআনের জ্ঞান অর্জন না করার চেয়ে অধিক বড় গুনাহ। তাইতো যে সকল মুসলিম সালাত , সিয়াম, হজ্জ ইত্যাদি পালন করেন তাদের অধিকাংশের কুরআনের জ্ঞান নেই বা প্রয়োজনীয় পরিমাণ জ্ঞান নেই।

কিন্তু আল-কুরআনের সূরা আন’আম/৬ : ৫০ ও ১৪৪, আনকাবুত/২৯ : ৬৮, তাওবা/৯ : ৩৯, নাহল/১৬ : ৯৮, নিসা/৪ : ১৭, ১৮ ও ৪৮, ফুরকান/২৫ : ৬৩-৭৩ ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, শিরক অতিবড় গুনাহ আর কুরআনের জ্ঞান না থাকা সবচেয়ে বড় গুনাহ।

২৯. ইসলামী বিষয়ে লেকচার, বক্তব্য বা ওয়াজ উপস্হাপনের ফর্মুলা

মুসলিম দেশগুলোতে বিশেষ করে পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশে প্রতিদিন হাজারো ইসলামিক বক্তৃতা (ওয়াজ) উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু এ বক্তৃতা তার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিতে পারছে না। এর প্রধানতম কারণ হলো বক্তৃতা উপস্হাপনের পদ্ধতিতে ত্রুটি থকা। ইসলামী বিষয়ে বক্তৃতা উপস্থাপন করার কুরআন, হাদীস ও Common sense সমর্থিত নীতিমালা ও ধারগুলো হলো নিম্নরূপ-

পূর্বশর্ত সমূহ
১. বক্তৃতা উপস্হাপককে প্রথমে উপস্থাপন করতে যাওয়া বিষয়টির সঠিকত্ব সম্পর্কে নিজস্বভাবে নিশ্চিত হতে হবে। আর এটি হতে হবে আল্লাহ প্রদত্ত উৎস কুরআন, সুন্নাহ ও Common sense ব্যবহারকারী ইসলাম সমর্থিত নীতিমালা অনুযায়ী।
২. শ্রোতাদের যদি ইসলামের মৌলিক বিষয়ের জ্ঞানে দুর্বলতা থেকে থাকে তবে অমৌলিক নিয়ে আলোচনা পরিহার করতে হবে।
৩. আলোচনা উপস্থাপকের আলোচনার বিষয়ের উপর নিজের আমল থাকতে হবে।

মূল আলোচনা
১. প্রথমে আলোচনা করতে চাওয়া বিষয় সম্পর্কে Common sense বা Science-এর তথ্য উপস্হাপন করে বিষয়টির পক্ষে নিয়ে আসতে হবে।
২. অতঃপর আলোচনার বিষয় সমর্থনকারী যতবেশী সংখ্যক সম্ভব কুরআনের আয়াত উপস্হাপন করতে হবে।
৩. অতঃপর বলতে চাওয়া বিষয় সমর্থনকারী যতবেশী সংখ্যক সম্ভব হাদীস উপস্হাপন করতে হবে।
৪. অতঃপর বিশেষজ্ঞদের বিষয়টি সমর্থনকারী বক্তব্য উপস্হাপন করা যেতে পারে
৫. এরপর বিষয়টি অনুসরণ করলে বা না করলে দুনিয়ার লাভ বা ক্ষতিসমূহ উপস্হাপন করতে হবে।
৬. সবশেষে বিষয়টি অনুসরণ করলে বা না করলে পরকালের লাভ বা ক্ষতি উপস্হাপন করতে হব

৩০. যে গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম জাতি ও বিশ্বমানবতার মূল জ্ঞানে ভুল ঢোকানো হয়েছে

মাত্র ৫০০ থেকে ৭০০ বছর পূর্বে মুসলিমগণ জীবনের সকল দিকে পৃথিবীর অন্য সকল জাতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল। এর কারণ ছিল আল-কুরআনের জ্ঞান ও আমল। এরপর আল-কুরআনের একটি অক্ষরও পরিবর্তন হয় নি। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম জাতি জীবনের প্রায় সকল দিকে অন্য অনেক জাতির চেয়ে অবিশাস্যরকমভাবে পিছিয়ে আছে। Common sense-এর আলোকে সহজে বলা যায় যে, এর একমাত্র কারণ হবে গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম জাতিকে কুরআনের মূল জ্ঞান থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নিম্নের ৫টি বিষয় একসাথে পর্যালোচনা করলে সহজে বুঝা যায় যে ষড়যন্ত্রকারীরা প্রধানত ৯ টি স্তরে কাজ করে মুসলিম জাতি ও বিশ্বমানবতাকে কুরআনের মূল জ্ঞান থেকে দূরে সরিয়েছে।

১.‘Confessions of a British spy’ (www.hakikatkitabevi.com) প্রতিবেদনের তথ্য
২. বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকা ইনকিলাবে ০২.০৪.৯৮ তারিখে প্রকাশিত ‘ব্রিটেনের মাটির তলায় খৃষ্টানদের গোপন মাদ্রাসা’ প্রতিবেদনের তথ্য
৩. বর্তমান ফিকাহশাস্ত্র
৪. বর্তমান হাদীসশাস্ত্র
৫. মুসলিমদের বর্তমান অবস্থা। ষড়যন্ত্রকারীদের কাজ করা সেই প্রধান ৯ টি স্তর হলো-
১. ইসলামী জ্ঞানের উৎস এবং নির্ভুল জ্ঞান অর্জনের নীতিমালার মধ্যে ভুল ঢুকিয়ে দেয়া,
২.মুসলিমদের কুরআনের প্রকৃত জ্ঞান থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া
৩. সূন্নাহর প্রকৃত জ্ঞার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া
৪. কুরআনের চেয়ে হাদীসকে বেশী গুরুত্ব দেয়া
৫. অভিনব উপায়ে ভুল তথ্য তৈরী করা
৬. ভুল তথ্যগুলো ফিকাহশাস্ত্র ও মাদ্রাসার সিলেবাসে ঢুকিয়ে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা
৭. কুরআন ও হাদীস বাদ দিয়ে ফিকাহশাস্ত্র থেকে ইসলামের জ্ঞান অর্জনকে উৎসাহিত করা
৮. ফিকাহশাস্ত্রে সংস্করণ বন্ধ করে ভুল তথ্যগুলোর সংস্কারের পথ বন্ধ করা
৯. ভুল তথ্যগুলো মুসলিমদের বিনাবাক্য ব্যয়ে মেনে নেয়ার ব্যবস্থা করা।

৩১. ‘আল-কুরআনে রহিত (মানসুখ) আয়াত আছে’প্রচলিত কথাটি কি সঠিক?

মাদ্রাসার (ধর্মীয় শিক্ষালয়) বইয়ে একটি অধ্যায় আছে যার নাম হলো ‘নাসিখ এবং মানসুখ (রহিতকারী এবং রহিত হওয়া)। ঐ অধ্যায়ের শিক্ষা হলো- 

১. কুরআনের ৫০০ (পাঁচশত) এর বেশী আয়াত সম্পূর্ণভাবে রহিত হয়ে গেছে (বর্তমান কুরআনে নেই),
২. বর্তমান কুরআনে অনেক আয়াত আছে যার তেলাওয়াত চালু আছে কিন্তু শিক্ষা চালু নেই,
৩. হাদীস কুরআনকে রহিত করতে পারে এ ধারণার মূল উৎস হলো প্রধানত সূরা বাকারার ১০৬ নং আয়াত। কিন্তু আল-কুরআনের সূরা হিজর/১৫ : ৯, বাকার/২ : ১০৬, কাহাফ/১৮ : ১ ও ২, বাইয়্যেনাহ/৯৮ : ১-৩, কীয়ামাহ/৭৫ : ১৬ ও ১৭, নিসা/৪ : ৮২, হাক্কাহ/৬৯ : ৪৪-৪৭ইত্যাদি, অনেক সহীহ হাদীসএবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে-
১. কুরআনের কোন আয়াত রহিত হয় নি,
২. কুরআনের সমস্ত আয়াতের শিক্ষা কিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে
৩. হাদীস কখনও কুরআনকে রহিত করতে পারে না।

৩২. কুরআনের তরজমা ও তাফসীর পড়ে সঠিক জ্ঞান লাভের নীতিমালা

বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম কুরআনের জ্ঞান অর্জন করেন অন্যের লেখা তরজম (অর্থ) বা তাফসীর (ব্যাখ্যা) পড়ে। সাধারণত ধরে নেয়া হয় যে অর্থ বা ব্যাখ্যায় কোন ভুল নেই। কুরআনের আরবী আয়াতে কোন ভুল নেই কিন্তু তরজমা বা তাফসীরে ভুল থাকতে পারে। অন্যদিকে একটিমাত্র মৌলিক ভুল জ্ঞান ও আমল মুসলিমের জীবনের সকল কাজকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। তাই কুরআনের তরজমা ও তাফসীর পড়ে ভুল জ্ঞান অর্জন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারার নীতিমালা প্রত্যেক মুসলিমের জনা থাকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নের কয়টি বিষয় মনে রাখলে একজন ব্যক্তি তা পারবে- 

১. ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ে Common sense-এর চিরন্তনভাবে বিরূদ্ধ কোন কথা কুরআনে নেই,
২. কুরআনে কোন পরস্পর বিরোধী বক্তব্য নেই,
৩.বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত তথ্যের বিরোধী কোন কথা আল-কুরআনে নেই,
৪. আল-কুরআনে এমন কোন বক্তব্য নেই যা থেকে বুঝা যায় আল্লাহ তা’য়ালা ন্যায়বিচারক বা দয়াশীল সত্তা নন।

৩৩. ফিকাহ শাস্ত্রের সংস্করণ বের করা মুসলিম জাতির জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় কী?

ফিকাহশাস্ত্রের বইগুলো সংকলিত হয়েছে ১৩০০-১৪০০ বছর পূর্বে তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ী স্তরের ব্যক্তিদের দ্বারা। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোন প্রকৃত সংস্করণ বের হয় নি। এর কারণ হলো ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের নামে প্রচারিত ‘ফিকাহশাস্ত্রের সংস্করণ নিষিদ্ধ’ কথাটি।

কিন্তু আল-কুরআনের সূরা নাহল/১৬ : ৪৪, মুহাম্মাদ/৪৭ : ২৪, বাকারা/২ : ২১৯ ইত্যাদি, সহীহ হাদীস এবং Common sense-এর আলোকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে- বর্তমান ফিকাহশাস্ত্রের সংস্করণ বের করা অবশ্যই সিদ্ধ। এটি বর্তমান মুসলিম জাতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং তা অনতিবিলম্বে করা দরকার। আর এটির কারণ হলো গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া যে, বর্তমান ফিকাহশাস্ত্রে নিম্নের তিন ধরণের বিষয় আছে- 

১. নির্ভুল বিষয়। এটির সংখ্যাই বেশী,
২. কিছু হলো মুসলিম বিশেষজ্ঞদের সঠিক না হওয়া ‘কিয়াস’। তৎকালিন সভ্যতার জ্ঞানের অভাব হলো এটির কারণ,
৩. কিছু হলো ইসলামের শত্রুদের তৈরী করা ও ঢুকিয়ে দেয়া ভুল তথ্য। 


 বইগুলো কিনতে চাইলে

১. প্রাপ্তিস্থান:
      বিক্রয় বিভাগ
      QRF অফিস,
      ইনসাফ বারাকাহ কিডনী এন্ড জেনারেল হাসপাতাল (৮ম তলা)
      ১১, শহীদ তাজউদ্দীন আহাম্মেদ স্মরনী, মগবাজার, ঢাকা-১০০০,
২. আহসান পাবলিকেশন্স, কাঁটাবন, মগবাজার, বাংলাবাজার, ঢাকা,
৩. তাসনিয়া বই বিতান, ৪৯১/১, ওয়ারলেস রেইলগেইট, বড় মগবাজার, ঢাকা-১০০০,
৪. ইসলাম প্রচার সমিতি, কাঁটাবন, ঢাকা-১০০০,

এছাড়া দেশের অভিজাত লাইব্রেরীসমূহে উক্ত বইগুলো পাওয়া যায়।

কুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন কোরআনের খেদমতে নিয়োজিত একটি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ।

আপনার যে কোন দান অনুদান বা যাকাত সাদাকাহ প্রদানের জন্য নিম্ন ঠিকানায় যোগাযোগ করুন:


কুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন
১১, শহীদ তাজউদ্দীন আহাম্মেদ স্মরনী
মগবাজার, ঢাকা-১০০০।
ফোনঃ ০২-৯৩৪১১৫০, মোবাইলঃ ০১১৯৯-৪৭৪৬১৭
Email – info@qrfbd.com
Web site: www. qrfbd.com

QRF এর একাউন্টসমুহঃ
ZAKAT A/C FOR QURAN RESEARCH FOUBDATION
এম.এস.এ-৭০৯,
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি:,
মগবাজার শাখা, ঢাকা।
DONATION A/C OF QURAN RESEARCH FOUBDATION
এম.এস.এ-৭১০,
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি:,
মগবাজার শাখা, ঢাকা।


0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম