সংক্ষিপ্ত ভ্রমন, সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী। গেন্টিং হাইল্যান্ড গমন, Ra.One সিনেমা দেখা আর কিছু কেনা কাটা করে বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন!
গেন্টিং হাইল্যান্ডস –সিটি অফ এন্টারটেইনমেন্ট ! কুয়ালালামপুর থেকে মাত্র ১ ঘন্টার দূরত্বে ১৮৬০ মিটার উচ্চতায় তৈরী এই সিটিতে আছে রিসোর্টস এবং থিম পার্ক। বাস থেকে নেমে ৩.৩৮ কিমি. স্কাই ওয়ে পেরিয়ে ওখানে যেতে হয় (স্কাই ওয়ে বাই পাস করে সরাসরিও ওখানে যাওয়া যায়)। স্কাই ওয়ের যাত্রা পথ আর নৈসর্গিক দৃশ্য
অসাধারণ, অবর্ণনীয় ! বাংলাদেশ থেকে মালয়শিয়া বেড়াতে গিয়েছেন আর গেন্টিং হাইল্যান্ডস যান নি এমন কাউকে খুজে পাওয়া কঠিন হবে!
গেন্টিং হাইল্যান্ডস এর প্রোটোটাইপ
কুয়ালালামপুরে আবহাওয়া গরম এবং কিছুটা আর্দ্র। কিন্তু ১ ঘন্টার ব্যাবধানে আপনি যখন গেন্টিং হাইল্যান্ডস এ তখন সেখানে শীতকাল, সবার গায়ে জ্যাকেট। অধিকাংশ সময় মেঘে ঢাকা থাকে। এর আগে আরো দুবার ওখানে গিয়েছি কিন্তু মেঘ বৃষ্টির জ্বালায় ঠিকমত উপভোগ করতে পারিনি, কারণ বৃষ্টি এলে রাইডগুলো বন্ধ থাকে।
গেন্টিং স্কাইওয়েতে প্রবেশ পথ
সকালে যখন গেন্টিং স্কাই ওয়েতে চড়ছি, তখন পুরো পথ মেঘে ঢাকা।
পাহাড়ে মেঘের খেলা আমার সব সময়ই পছন্দ। কিন্তু পার্কে ঢুকে যখন দেখি সেই মেঘগুলো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়ে ঝরছে, তখন মেজাজটা একটু খারাপই হল ! ৪৭ রিংগিত দিয়ে টিকেট কেটে এসে কোন রাইডে না চড়েই যদি ফিরে যেতে হয় তবে দুঃখটাতো প্রবলই হবে, তাই না? বৃষ্টির মধ্যেই পার্কে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম।
হঠাৎ আল্লাহ মুখ তুলে চাইলেন! মেঘেরা মনে হয় আমার কথা চিন্তা করেই সরে পড়ল, বৃষ্টিও নেই ! মনে মনে বললাম, আলহামদুলিল্লাহ ! দেখতে পেলাম, স্টাফরা রাইডগুলো মুছে চালুর জন্য তৈরী করছে।
স্পেস শট... ভয়ংকর এক রাইড !!
আমার জীবনে চড়া সবচেয়ে ভয়ংকর এবং Exiting রাইড “"Space Shot”"। শুরুতেই সেখানে লাইন দিলাম। ২০০৬ এ প্রথম চড়ি এই রাইডে। এই রাইডটাকে আমি নাম দিয়েছি, “"Heart Stopper"” রাইড ! কারণ, আমার মনে হয় এই রাইডে যখন ওপর থেকে ফেলে দেয়া হয়, ক্ষণিকের জন্য হৃদ স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, শরীরের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না, মাথাটা আস্তে নুয়ে যায় যখন একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় ফেলে আবার পরক্ষণেই উপরে তুলে নেয়া হয়। ১৮৫ ফুট উচু থেকে ৬৭ কিমি./ ঘন্টা বেগে ফেলে দেয়া হয়। আর এই রাইডে চড়ার আরেকটা সুন্দর দিক হল, এটা যেহেতু অনেক উপরে তোলে, সেখান থেকে চারপাশের অসাধারণ পাহাড়ী সৌন্দর্য দেখা যায়! আপনি যখন পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, মনের সুখে, ঠিক তখনই আপনাকে এমন এক বেগে ফেলে দেয়া হচ্ছে, যাতে আপনি ওজনহীনতা অনুভব করছেন, এক ভয়ানক অনুভূতি। ওয়েব সাইটে রাইডটি সম্পর্কে যা লেখা আছে, “"Space Shot is a rapid vertical ascent and descent amusement ride. It lifts up to 12 people into the air, providing an exciting G-force on the way up and a feeling of weightlessness on the way down."
কর্ক স্ক্রু
এরপর গেলাম “"Cork Screw"” রাইডে। এটা মূলতঃ একটা রোলার কোস্টার যাতে ২ টি ৩৬০ ডিগ্রী টার্ণ আছে। এই রাইডটিরও একটি সুন্দর দিক হল, এটা যখন আপনাকে প্রথম উপরে ওঠাবে, যেহেতু ট্র্যাকটি একেবারে পাহাড় চূড়ার ধার ঘেষে তৈরী তাই আশ পাশের পাহাড়ের খুব সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। আর ওই সুন্দর দৃশ্য অবলোকন করার পরই শুরু হবে দেড় মিনিটের এক তান্ডব ! সত্যিই খুব মজার!
মনোরেল থেকে দেখা কর্ক স্ক্রু
আরেকটা মজার রাইড আছে, বাচ্চাদের রাইডও বলা যায়, কিন্তু চড়ে সত্যিই মজা পাওয়া যায়। নাম তার "“Spinner"”। উপরে উঠিয়ে যখন ঘোরায় আর উপর নীচ করে তখন সত্যিই একটা মজার অনুভূতি হয় ! ছবি দেখুন, তাহলেই বুঝতে পারবেন।
ওদের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া স্পিনার এর ছবি
আরেকটা weirder রাইড আছে, নাম তার “Flying Coaster”। পার্কের পুরো দিনের এন্ট্রি ফি’র বাইরে আরো ১০ রিংগিত অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয় এই রাইডে চড়ার জন্য। এই রাইডে আপনাকে এমনভাবে ঝাকাঝাকি করা হবে, যে আসলে কি ঘটছে সেটা অনুভব করার মত ফুরসৎ মস্তিষ্ক পাবে কি না সন্দেহ। মানে আমার ক্ষেত্রে অন্ততঃ তাই হয়েছিল, আমি চোখই বন্ধ করে ফেলেছিলাম!
ফ্লাইং কোস্টার !! বিশ্রী এক রাইড !!
এদের ওয়েব সাইটে ফ্লাইং কোস্টার সম্পর্কে বর্ণনাটা এরকমঃ “The unique positioning of the passengers - four riders "fly" together, side by side - is a new way of experiencing drops, spirals and swooping turns from the "front seat." The flyer will experience a constant change of acceleration throughout from negative 1G to 3.6G on the vertical movements and 1G on a lateral movement.”
এরপর আরো কিছু সাধারণ রাইডে চড়লাম, “Pirate Ship”, আমাদের দেশেও আছে এটা।
মনোরেল চড়ে পুরো পার্ক দেখলাম, আশ-পাশের পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করলাম।
আমার এবারের গেন্টিং হাইল্যান্ডস থিম পার্ক গমন পুরোই সফল। এর আগে বৃষ্টির জ্বালায় অনেক কিছুই মিস করেছিলাম। কেবল কার এ করে যখন বাস স্টেশনে ফিরছি, তখন বিকেল ৩ টা। মেঘমুক্ত পথ, তীর্যক সূর্যের আলো, এ আরেক রকম সৌন্দর্য!
বাস থেকে KL Sentral নেমে KTM কম্যিউটার ট্রেন ধরে চলে এলাম মিড ভ্যালি মেগা মল এ Ra.One দেখব বলে। দুপুরের খাওয়া তখনো হয় নি। টিকেটের জন্য লাইন দিলাম, যখন আমার পালা এল তখন টিকেট অবিক্রিত আছে মাত্র ২ টি ! টানা আড়াই ঘন্টা “ছাম্মাক ছাল্লো” দেখে মালয়শিয়ার সংক্ষিপ্ত কিন্তু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচীর বাস্তবায়ন করলাম।
যারা ভবিষ্যতে মালয়শিয়া যাবেন, গেন্টিং হাইল্যান্ডস এবং লাংকাউই অবশ্যই যাবেন, দুটোই খুব সুন্দর জায়গা...
ব্লগার মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম এর ব্লগ থেকে লেখাটি কপি (লিংক) করা হয়েছে। লেখকের কোন রকম আপত্তি থাকলে এটি মুছে ফেলা হবে।
0 comments: