ফিলিপিনসে ঘোরাঘুরি... -(মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম)


এবারের কোরবানীর ঈদের ছুটিটা বেশ লম্বা থাকায় অনেক আগে থেকেই ঈদের ছুটিতে কাশ্মীর যাওয়ার একটা নিয়্যত ছিল। আমার দার্জিলিং-সিকিম যাওয়ার সংগী হালিমকেও সেভাবেই বলে রেখেছিলাম। কিন্তু, যাওয়ার আগে আরেক বন্ধু বাবু দৃশ্যপটে হাজির হল ! ও বলল, কাশ্মীরে নিরাপত্তার ইস্যু আছে, যেই টাকা খরচ করবা, তার সাথে আর কিছু যোগ করে চল আমরা ফিলিপিনস ঘুরে আসি, খুব সুন্দর নাকি সেই দেশ ! টাকা পয়সা যা লাগবে তার একটা আনুমানিক হিসেব যখন ওরা মুখে মুখে বলেও ফেলল, চিন্তা করলাম, ঠিক আছে কাশ্মীর না হয় পরে যাওয়া যাবে, এবার আরেকটু দূরে কোথাও ঘুরে আসি!


সারা দিন অফিস করে ২ নভেম্বর রাত ১০ টায় এয়ারপোর্ট গিয়ে হাজির আমরা দু’বন্ধু। আমি আর বাবু, হালিম এর মধ্যেই ঝরে পড়ে গেছে। ফ্লাইট ৩ নভেম্বর রাত ১ টা ৪০ মিনিট এ। আমাদের রুট হল, ঢাকা ~ – কুয়ালালামপুর, কুয়ালালামপুর –~ ম্যানিলা। আমার সাথে ভিসা প্লাটিনাম কার্ড ছিল। চেক ইন, ইমিগ্রেশন শেষ করে সেটার বদৌলতে দুই বন্ধু বলাকা ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকে সেখানকার খাদ্য এবং পানীয়ের সদ্বব্যবহার করতে লাগলাম ! ভিসা প্লাটিনাম কার্ড হোল্ডাররা নিজে ছাড়া আরো তিনজনকে নিয়ে বলাকা ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকতে পারেন।

৩রা নভেম্বর দুপুর ২ টা’র দিকে আমরা ম্যানিলা পৌছালাম। এয়ারপোর্টে নেমে কোন দিকে যাব চিন্তা করার আগেই এক মহিলার আবির্ভাব ! একটি ট্রাভেল এজেন্সির, আমাদের হোটেল এবং ট্যুর প্যাকেজ দেখাতে চান । কিছুক্ষণ ইতি উতি করে শেষ পর্যন্ত তাদের গাড়ী করে এয়ারপোর্টের পাশেই এক অফিসে গেলাম। আমাদের প্রাথমিক প্ল্যান ছিল আমরা পালাওয়ান এবং বুরাকাই এই দুটি দ্বীপে যাব। শেষের দিকে এক দিন ম্যানিলা এবং এক দিন লস ব্যানস এ ঘুরে ফিলিপিনস ভ্রমন শেষ করব। কিন্তু, দুই দ্বীপের জন্য যে বিমান ভাড়া চাইল আভ্যন্তরীন রুটে, তাতেই আমি প্রথম ধাক্কা খেলাম ! ওদের সাথে কথা বলে শেষ পর্যন্ত শুধু পালাওয়ান যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পালাওয়ানের টিকেট কেটে হোটেলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। ওই মহিলাই তার গাড়ী করে দু’একটা হোটেলে নিয়ে গেল আমাদের। পছন্দ হল না প্রথম দু’টো। শেষে যেটায় উঠলাম, তার ভাড়া এক রাতের জন্য ২৮০০ পেসো ! বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫২০০ টাকা ! বুঝলাম, মহিলা ভালই সিল দিল। কিন্তু কি আর করা, সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল, টায়ার্ড লাগছিল, উঠে পড়লাম, যদিও আহামরি কোন হোটেল ছিল না !

এলাকাটির নাম ছিল পাসাই সিটি, একেবারে এয়ারপোর্টের পাশেই। হোটেলের সামনেই দেখলাম এয়ারপোর্টের টার্মিনাল দেখা যায়। বিকেল বেলাতেই আকাশ মেঘ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। মনটা তখন একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিল, যদি এই রকম মেঘ আর বৃষ্টি থাকে তবে তো ট্যুরই মাটি ! রাতে যখন খাদ্যের সন্ধানে বের হলাম তখন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। কপাল ভাল, পাশেই আমাদের দেশের BFC/KFC স্টাইলের কিছু রেস্টুরেন্ট ছিল ! তো সেই রকম এক রেস্টুরেন্ট, নাম তার Jollibee, সেখানেই আমরা রাতের খাওয়া সারলাম। এদের ডিশে ভাত এর পরিমাণ খুব কম থাকে, কিন্তু সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকলাম। তখন বুঝিনি, এই Jollibee সারা ফিলিপাইন জুড়েই আমাদের সাথে থাকবে ! এর মানে এই নয় যে আমরা সব সময় Jollibee তেই খেয়েছি, বরং কোন রেস্টুরেন্টের এত শাখা থাকতে পারে, আমি আগে কখনো দেখিনি ! মোড় ঘুরলেই এই ধরণের চেইন রেস্টুরেন্ট এর শাখা ! ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি সবগুলোরই একই অবস্থা এবং এই ধরণের সব রেস্টুরেন্ট ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে !

খাওয়া দাওয়া শেষে উপায় না দেখে দুই বন্ধু দু’টো ছাতা কিনে ফেললাম। আর সেটা মাথায় নিয়েই বৃষ্টির মধ্যেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম। হাটতে হাটতে এক রাস্তায় যখন প্রবেশ করলাম, দেখি এক পাশে শুধুই বার, আর বারের সামনে সাজগোজ করা মেয়েরা সবাইকে বারে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ! ওই বারগুলোর আবার বিশেষ নাম আছে, KTV বার, মানে হল Karaoke বার! ওখানে ক্যারাওকেতে আপনি গান গাইবেন আর মদ খাবেন, সুন্দরী রংচং মাখা মেয়েরা আপনার সংগ দেবে, আপনি চাইলে ! যাই হোক, ওই অবস্থা দেখে আমরা আর রাস্তার ওই পাশটায় গেলাম না ! যেই রাস্তা ধরে গেলাম, সেই রাস্তা ধরেই ফিরে এলাম। পরদিন সকাল ১১ টায় আমাদের পালাওয়ানের উদ্দেশ্যে যাত্রা।

পালাওয়ান ম্যানিলা থেকে ১ ঘন্টার ফ্লাইট। টার্মিনাল ৩ আভ্যন্তরীন বিমানের জন্য। গিয়ে দেখি ওদের এই আভ্যন্তরীন টার্মিনাল আন্তর্জাতিক টার্মিনাল থেকে বহুগুন সুন্দর ! আসলে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অনেক পুরনো (ফেরার আগের দিন টিভিতে দেখছিলাম, ফিলিপিনস এর আন্তর্জাতিক টার্মিনাল নাকি বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত টার্মিনাল ! ) ।যাইহোক, দুপুর নাগাদ পালাওয়ান পৌছে দেখি সেখানেও টার্মিনালের ভেতরেই বিভিন্ন হোটেল এবং ট্যুর অপারেটরদের প্রতিনিধিরা আমাদের খেদমতে বসে আছে। পালাওয়ান না বলে বলা উচিত পুয়ের্তো প্রিনসেসা সিটি যেটা কিনা পালাওয়ানের অন্তর্গত। ডে লোরো ট্যুরস এন্ড ইন এর একটা প্যাকেজ আমাদের পছন্দ হয়ে গেল, সেটাই নিয়ে নিলাম।

৩ রাত ৪ দিনের প্যাকেজ,
১ম দিনঃ অর্ধেক দিন পুয়ের্তো প্রিনসেসা সিটি ট্যুর (মানে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত)
২য় দিনঃ হোন্ডা বে ট্যুর (সকাল ৬ টায় বের হতে হবে)
৩য় দিনঃ মাটির নীচের নদী ট্যুর

আমরা বাড়তি কিছু টাকা দিয়ে আরো এক দিনের হোটেল নিয়ে নিলাম, কিন্তু চতুর্থ দিনের কোন প্যাকেজ নেই নি। পরে অবশ্য ডস পালমাস আইল্যান্ড রিসোর্টে ৪র্থ দিন একটা প্যাকেজ নিয়েছিলাম, সেদিন ছিল ঈদের দিন !

হোটেলে উঠে একটু হাত মুখ ধুয়েই বেরিয়ে পড়লাম পুয়ের্তো প্রিন্সেসা শহর দর্শনে। প্রথমেই আমাদের নিয়ে গেল একটা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে। সেখানে ঢোকার মুখেই চোখে পড়ল ৬০ বছরের বেশী বয়সের এক কুমিরের বিশাল চামড়া !



ছোট এক শুকরের পা নিয়ে কুমির দলের কাড়াকাড়ি দেখতে ভালই লাগল।



এছাড়া পালাওয়ান এর ভাল্লুক বিড়াল (Palawan Bear Cat) দেখেও ভাল লাগল।


এই বিড়ালটি ব্লগার বড় বিলাইকে উৎসর্গ করা হল!

দুই বন্ধু পার্কে আর বেশী ঘোরাঘুরির ধৈর্য পেলাম না। এর পর একটা সাফারি পার্কে নিয়ে গেল, সেখানে জিপ লাইনিং করা যায়। জিপ লাইনিং হল, পাহাড়ের উচু থেকে কেবল বেয়ে দ্রুত নীচে নেমে আসা। সব শেষে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত হওয়া আমেরিকান সৈন্যদের এক স্মৃতিসৌধে নিয়ে গেল, তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। বলা বাহুল্য, ফিলিপিনস আমেরিকার খুব ভক্ত কারণ ওদের স্বাধীনতার পেছনে আমেরিকার ভূমিকা রয়েছে।



৫ নভেম্বর সকাল ৬ টায় আমরা হোন্ডা বে ট্যুর এর উদ্দেশ্য রওনা হলাম। পথে এক দোকান থেকে স্নরকেলিং ইকুইপমেন্ট আর কোরাল এ লেগে পায়ে যাতে ব্যাথা না লাগে সেজন্য রবারের জুতা ভাড়া নিতে হল। এদের নৌকাগুলোর ডিজাইন দেখে মজা পেলাম, নৌকার দুই দিকে বাশ দিয়ে নৌকা ব্যালেন্স করা আছে।



যাইহোক, প্রথমেই আমাদের নিয়ে গেল একটা স্নরকেলিং সাইটে। স্নরকেলিং হল, চোখে বায়ু এবং পানি রোধী চশমা আর মুখে পাইপ লাগিয়ে (শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার জন্য) পানির উপর ভেসে ভেসে পানির নীচের জগৎ দেখা ! এই অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছিল থাইল্যান্ডের ফুকেটে, কিন্তু এই জিনিসটা আমার সব সময়ই খুব ভাল লাগে, একেবারে অপার্থিব লাগে ! পানির নীচের ওই জগৎটাকে একেবারেই অন্যরকম লাগে, এত সুন্দর বলে বোঝাতে পারব না। রঙ বেরং এর প্রবাল আর মাছের মেলা, আর প্রবালের উপর আরো কত সামুদ্রিক জীব! আমার ক্যামেরা পানিরোধী না হওয়াতে ছবি তুলতে পারিনি।


সবাই পানির নীচের জগৎটাকে দেখতে ব্যস্ত !


পানির উপর থেকেও সুন্দর মাছ দেখা যায় !!

এরপর আরো এক দ্বীপে স্নরকেলিং এর জন্য নিয়ে গেল। সেখানে প্রচুর মাছ, আমাদের সাথে রুটি ছিল। রুটি ছড়িয়ে দিলেই ঝাকে ঝাকে মাছ কাছে এসে খায়, সে এক দেখার মত দৃশ্য। কিছু ছোট ছোট মাছ ছিল, যেগুলোর ঠোট ছিল ছুরির মত লম্বা ! হঠাৎ দেখলাম তাদেরই বিশাল সাইজের এক বড় ভাই আমার দিকে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে ! দেখে খুব ভাল লাগল, আবার চিন্তা করছিলাম যদি এক ঠোকর দেয়, খবরই আছে ! স্নরকেলিং শেষ করে স্নেক আইল্যান্ডে গেলাম। দুপুরের খাবারের আয়োজন সেখানেই ছিল। সাথে বিশাল সাইজের ডাব এর পানি এবং শ্বাস ! স্নেইক আইল্যান্ডেও স্নরকেলিং এর আয়োজন ছিল, কিন্তু মাথার ওপর কড়া রোদ থাকায় আমি আর নামলাম না !




স্নেক আইল্যান্ডের আশপাশ...

আমাদের পরদিন এর গন্তব্য Underground River



৬ নভেম্বর ২০১১। আজ আমরা যাব ভূগর্ভস্থ নদী দেখতে। পুয়ের্তো প্রিনসেসা শহর থেকে এটা প্রায় ২ ঘন্টার পথ। মূলত সাবাং নামক এক স্থানে গিয়ে স্থলপথের যাত্রা শেষ হয়, তারপর মিনিট বিশেক সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ওই ৮.২ কি.মি. দীর্ঘ নদীর প্রবেশ মুখে যেতে হয়। তবে পর্যটকদের জন্য ওই নদীর ১ কি.মি. পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি আছে। এটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান এবং প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য প্রতিযোগিতা বেশ ভাল অবস্থানে আছে। আরো জানতে এই লিংকদুটো দেখুনঃ উইকিপিডিয়া এবং অফিসিয়াল সাইট

বন বনানী আর পাহাড় ঘেরা পথ দিয়ে আমাদের গাড়ী চলতে লাগল। মার্বেল পাথরের পাহাড়ের দেখা পেলাম।



ভূ-গর্ভস্থ নদীতে প্রবেশের আগে আমাদের গাইড উগং রক কেইভিং এবং জিপ লাইনিং সাইটে নিয়ে গেল। কেউ যদি চায় তাহলে এই এডভেঞ্চার করতে পারে। আকাবাকা পাহাড়ের গুহার ভেতর দিয়ে উঠে গেলে সেখান থেকে কেবল বেয়ে ২১ সেকেন্ডে মাটিতে নেমে আসা, এই হল কার্যকলাপ। দুটো অপশন আছে, প্রথমে ২০০ পেসো দিয়ে কেইভিং এর জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়া যায়, উপরে উঠে যদি ইচ্ছে হয়, তবে আরো ২৫০ পেসো দিয়ে জিপ লাইনিং করে নীচে নেমে আসা যায় অথবা গুহা দিয়েই আবার ফিরতি পথে নেমে আসা যায়। তো এই কেইভিং এবং জিপ লাইনিং এর ব্যাপারে আমার বন্ধু বাবু’র কোন উৎসাহই নেই। সে মূলত জলজ প্রাণী। তাকে সারাদিন সমুদ্রে থাকতে দিলেই সে খুশী। এই প্রসংগে আগের পর্বের স্নরকেলিং সাইটের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। প্রথম যেখানে স্নরকেলিং করতে নিয়ে গিয়েছিল সেখানে নিয়ম কানুন খুব কড়া ! লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামলে এত পেসো জরিমানা, যদি কোরালের গায়ে পা লাগে তাহলে এত পেসো (কারণ, এক স্থানে কোরাল মাত্র দু’ফুট নীচে ) জরিমানা, হেন তেন। তারপর যে স্নরকেলিং ইকুইপমেন্ট আমরা ভাড়া করেছি সেটার ক্ষতি হলেও জরিমানা ! আমার দোস্ত বলল, এই প্রথম আমি লাইফ জ্যাকেট নিয়ে সমুদ্রে নামছি ! তো ঘটনা হল, সে তার স্নরকেলিং সরঞ্জাম এক পর্যায়ে আমার হাতে দিতে চেয়েছিল, আমি যেহেতু পানির নীচে দেখছিলাম, বুঝতে পারিনি। ব্যস ওর সরঞ্জাম সোজা পানির নীচে কোরালের উপর ! মনে মনে বললাম, গেল মনে হয় কতগুলো পেসো গচ্চা ! আমার বন্ধু ওর লাইফ জ্যাকেট খুলে এক ডুব দিয়ে নীচ থেকে স্নরকেলিং সরঞ্জাম তুলে নিয়ে আসল, হাফ ছেড়ে বাচলাম ! আমার এই জলজ বন্ধুর জন্য সত্যিই অনেক গর্ব হল !

মূল প্রসংগে ফিরে আসি। আমি টাকা দিয়ে কেইভিং এর জন্য তৈরী হচ্ছি, বাবু বলল, যাও তুমি করে আস, আমি এদিকেই আছি। ওমা একটু পরে দেখি সেও হাজির! বলে, “চল আমিও যাই”। মনে মনে মুচকি হাসলাম। গুহার ভেতরটায় চলতে গিয়ে ভালই বেগ পেতে হল, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা!



জিপলাইনিং সাইটে গিয়ে মনে হল, এই গুহাপথে ফেরত যাবার চেয়ে দড়ি বেয়ে নেমে পড়াই ভাল! ২১ সেকন্ড মাত্র !! জিপ লাইনিং এর অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম, অনুভূতিটা ভাল, শুধু মনে হয়েছে আরো একটু উচু থেকে একটু দীর্ঘ সময় ধরে নামতে পারলে একটু বেশী ভাল লাগত !



সাবাং পৌছে সেখানকার সৈকত দেখে মনে হল, আহা যদি একটু সুযোগ পেতাম এখানে গা ভেজানোর।



আমাদের দুপুরের খাবারের আয়োজন এখানেই, সৈকতের ধারে, মিনি বুফে ! খাওয়া দাওয়া সেরে সংক্ষিপ্ত নৌ ভ্রমন শেষে পৌছালাম নদীর প্রবেশ মুখে।



মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে তখন। প্রতি নৌকায় ৬ জন করে। নৌকায় একজন লাইট ম্যান দরকার হয়, যার হাতে থাকবে একটি বাতি, মাঝির নির্দেশনা অনুযায়ী সে সেই বাতি বিভিন্ন জায়গায় ফেলবে, এখানে মাঝিই হল আমাদের গাইড। তো লাইট ম্যানের দায়িত্ব আমার কাধেই বর্তাল, নৌকার একেবারে সামনে হল আমার স্থান।


নদীর প্রবেশ মুখ

প্রাকৃতিক এই নদীটাকে আসলে আমরা বলতে পারি আট কিলোমিটার লম্বা একটি গুহা ! কিন্তু এই গুহার মেঝে হল পানি যা কিনা কোন স্থানে ৮ মিটার পর্যন্ত গভীর। এক স্থানে গুহার উচ্চতা সর্বোচ্চ ৭০ মিটার পর্যন্ত ঠেকেছে ! (যদ্দূর মনে পড়ে)। নদীর পানি মিঠা এবং লবনাক্ত পানির মিশ্রণ।



নদীর চারপাশ পাথুরে, সেখানে খনিজ বস্তুর সমাবেশ ঘটার কারণে বিভিন্ন ধরণের Rock Formation হয়েছে। ওরাও এই formation গুলোকে আকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন নাম দিয়েছে।



লো প্রোফাইল ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে সব কিছুর ছবি তোলা সম্ভব হয় নি। কিন্তু বাতি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেছি আর অবাক হয়েছি ! সত্যি, এটা আল্লাহর এক আশ্চর্যজনক সৃষ্টি ! মনে মনে, বললাম, বাতি মানব হয়ে ভালই হয়েছে, যেদিকে খুশী সেদিকে বাতি ঘুরিয়ে দেখতে পারছি ! আবার, মাঝি বললে সেদিকে বাতি ধরছি। গুহাতে কিছু পাখির বসবাস, গুহার ওপরের দিকে থাকে ওরা। গুহার উপর থেকে প্রাকৃতিক ভাবেই চুইয়ে চুইয়ে উপর থেকে পানি পড়ে, কিন্তু মাঝি বলল, উপর থেকে ওই পানি ছাড়াও পাখিদের তরফ থেকেও কিছু আসতে পারে, তাই ওপরে তাকানোর ক্ষেত্রে সাবধান !!


আলোর পথে...


কিছু তথ্য...

নদী ঘুরে যখন ফিরে এলাম, তখন বৃষ্টি বিদায় নিয়েছে। সংক্ষিপ্ত সাগর ভ্রমন তাই অন্যরকম ভাল লাগল, চারিদিক স্নিগ্ধ, পাশের পাহাড়ে যেসব মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরতে পারে নি তারা বিশ্রাম নিচ্ছে ! পাহাড়ের সাথে মেঘের এই সখ্য আমার সব সময়ই ভাল লাগে, যেমনটা ভাল লেগেছিল নীলগিরি গিয়ে !



পুয়ের্তো প্রিন্সেসায় আমরা যেই হোটেলে থাকতাম, সেখান থেকে প্রায় ২ কি.মি. হেটে মূল রাস্তায় যেতাম, রাতের খাবার খেতে। বেশ ভাল কিছু রেস্টুরেন্ট ছিল। বিশেষ করে একটা রেস্টুরেন্টের ইন্টেরিয়র দেখে আমি অবিভূত হয়েছিলাম আর খাবারও অবশ্যই খুব সুস্বাদু ছিল। এটা প্রথম রাতের কথা, ক্যামেরা সাথে নেইনি দেখে আফসোস হয়েছিল। খাবারের তালিকায় স্থান নিয়েছিল টুনা, ব্লু মারলিন, লাপু লাপু মাছ ! চিংড়ি তো আছেই। আরেকটা জিনিস খেলাম, সেটা হল সামুদ্রিক আগাছা ! ভালই লাগল খেতে ! ঝিনুকের স্যুপ দিয়েছিল, বুঝতে পারিনি। একটা ঝিনুক খেয়ে ফেললাম, অদ্ভুত এক স্বাদ, আমার কাছে ভাল লাগল না ! ওই জিনিস এর পর আর খাই নি। ডেসার্ট দিয়েছিল, ডাবের খোলে করে, মূলত ফলের তৈরী। সব মিলিয়ে দারুণ একটা পরিবেশনা! রেস্টুরেন্টটি সাধারাণত সব সময় পরিপূর্ণ থাকে, তাই লোকজন আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখে। আমরা একটা চান্স নিয়েছিলাম এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে জায়গাও পেয়ে গিয়েছিলাম। রেস্টুরেন্টটির নাম কালুই ! এতই অভিজাত, যে রবিবার ওরা বন্ধ থাকে !

৭ নভেম্বর। ঈদের দিন। আমি এ পর্যন্ত তিনটি ঈদ দেশের বাইরে করেছি, এর মধ্যে তিনটিই কোরবাণীর ঈদ ! ঈদের দিনের মর্যাদা রাখতে আমরা বেছে নিয়েছিলাম ডস পালমাস আইল্যান্ড রিসোর্ট ট্রিপ। একটা ছোট্ট দ্বীপ, পুরোটাই একটা রিসোর্ট। সকালে রওনা দিয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত সেই দ্বীপে থাকা যাবে। দুপুরে বুফে খাবার, কায়াকিং এবং স্নরকেলিং এর ব্যবস্থাতো থাকছেই ! জেটির কাছাকাছি যেতেই বেশ ভাল লাগল, সুন্দর ছিমছাম ছবির মত একটা দ্বীপ।





পৌছানো মাত্রই ওয়েলকাম ড্রিংস দিয়ে আমাদের বরণ করা হল। প্রথমেই পুরো দ্বীপটা একটা চক্কর দিলাম, বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে।

 





এরপর চলে গেলাম স্নরকেলিং সাইটে। আকাশ একটু মেঘলা ছিল, মাঝে মাঝে একটু রোদের দেখা মিলছিল। আসলে রোদ যত বাড়বে, পানির ভেতরে আলো তত বেশী প্রবেশ করবে, অর্থাৎ আপনার স্নরকেলিংটা তত উপভোগ্য হবে। যাইহোক, এই ডস পালমাস দ্বীপের স্নরকেলিংটি আমার করা সেরা স্নরকেলিং। লোকজন অনেক কম ছিল, অনেক দূর জুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি আর উপভোগ করেছি সাগর তলের অপার সৌন্দর্য ! দেখেছি অপূর্ব প্রবাল আর নানা রঙের মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী!

স্নরকেলিং শেষে দুই দোস্ত মিলে এসে কিছুক্ষণ কায়াকিং করলাম। কায়াকিং হল ছোট্ট নৌকায় করে সমুদ্রে বৈঠা বাওয়া। মজাই লাগল। গোসল করে লাঞ্চ সারলাম। মেনু ভালই ছিল। মজা করে খেয়েছি। কাল রঙের ঝিনুকের স্যুপ ছিল, দেখেই বাদ দিলাম। তবে ডেজার্টটা বেশ উপভোগ করেছি। আহামরি কিছু ছিল না, তবে নতুন ধরনের খাবারের অভিজ্ঞতা নিতে বরাবরই আমার ভাল লাগে। পেট পুরে খেয়ে দু’বন্ধু মিলে সৈকতের ধার ধরে হাটা শুরু করলাম। সুন্দর সুন্দর ঝিনুকের খোল (Shell) কুড়াতে লাগলাম। যত আগাচ্ছিলাম, ততই ভাল লাগছিল, মনে হচ্ছিল এখানে প্রকৃতি অনেক বেশী তার আসল রুপে বিদ্যমান। অন্ততঃ ৭/৮ কেজি ওজনের একটা ঝিনুকের খোল বালু সরিয়ে বের করলাম। ইচ্ছে হচ্ছিল খুব সাথে নিয়ে আসি। কিন্তু এত ওজন !

বিকেল ৩ টা ৪৫ এ আমাদের ফিরতি ট্রলার ছাড়ল। হোটেলের যেসব কর্মী আমাদের সারাদিন খেদমত করেছে তারা সবাই জেটিতে দল বেধে কিছু বাদ্যযন্ত্র বাজানো শুরু করল। সুরটাতে বিরহের ছাপ ছিল, মনে হচ্ছিল আমাদের বিদায়ে তারা মর্মাহত ! মনে হল আমি যেন আফ্রিকার কোন উদ্ভট উপজাতির Ritual এ আছি !

পূয়ের্তো প্রিনসেসায় আমাদের শেষ দিন, ৮ নভেম্বর ২০১১। বিকেলে ফ্লাইট। আজ সারাদিন এই শহরেই থাকব। আমরা ছিলাম ডে লোরো হোটেলে। আমাদের হোটেলের ইন্টেরিয়র কিন্তু বেশ ছিল। একটা বিশাল সাইজের ঝিনুকের খোল দিয়ে ওরা বেসিন বানিয়েছে, চমৎকার আইডিয়া !



নাস্তা করে শহরে চলে এলাম। চাংগি চাংগে ! এটা হল স্যুভেনির মার্কেট। দুপুর পর্যন্ত সেখানেই কাটালাম। আমার দোস্ত বাবু ধুমায়া শপিং করল। আমিও হালকা পাতলা কেনা-কাটা করলাম। মূলতঃ কোরাল আর শেল এর তৈরী গহনা, কিছু হ্যান্ড ব্যাগ।


চাংগি চাংগে স্যুভেনির মার্কেট


ফিলিপিনো উদ্ভাবন, ট্রাইসাইকেল (মোটর সাইকেল এর রুপান্তর)

NCCC মল এ দুপুরের খাবার সেরে ব্যাগপত্র নিয়ে সোজা এয়ারপোর্ট... পালাওয়ান ভ্রমনের ইতি...

পরের পর্বে আপনাদের জানাবো ম্যানিলা আর লস বানস এর কথা




নিনো একুইনো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের আভ্যন্তরীন টার্মিনালে যখন পৌছালাম, তখন সন্ধ্যা প্রায় ৭টা। বাইরে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে চললাম মাকাতি শহরের উদ্দেশ্যে। ওখানে গিয়ে হোটেল খুজব। ম্যানিলা ফিলিপিনসের রাজধানী হলেও এটাকে ওরা বিভিন্ন শহরে ভাগ করেছে। ব্যাপারটা আমার কাছে উত্তরা, গুলশান, মোহাম্মদপুর এই জাতীয় মনে হয়েছে। ম্যানিলার মধ্যে অনেকগুলো শহর বা সিটি আছে। যেমন ম্যানিলা সিটি, মাকাতি সিটি, পাসাই সিটি, কুয়েজন সিটি, ইত্যাদি। একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের এক মহিলা আমাকে প্রায়ই মেইল করত ফিলিপিনস থেকে, সেই পরামর্শ দিয়েছিল, তোমরা মাকাতি সিটিতে থেকো, এটাই সিটি হার্ট ! পরে অবশ্য বুঝেছিলাম, এটাই হল একেবারে ব্যাবসা বাণিজ্য এবং অফিস আদালতের প্রাণকেন্দ্র ! মাকাতি এলাকায় পৌছে একটা হোটেলে উঠে পড়লাম। এবার ভাড়া কিছুটা কম, ১৭৯১ পেসো, হোটেলের মান বেশ ভাল। প্রথম যেই মহিলা আমাদের হোটেল এবং বিমান টিকেটের ব্যবস্থা করেছিল, তাকে ফোন করে বললাম, আমরা পরদিন একটা ম্যানিলা সিটি ট্যুর করতে চাই। মহিলার নাম মনে পড়েছে, "“নিডা”" !

কড়া রোদ, মনে হচ্ছে সূর্য এক হাত উপরে ! মাথার চান্দি গরম হয়ে যায় রোদে দাড়ালে। নিডা সকাল দশটায় একটা ভ্যান (মাইক্রোবাস) নিয়ে হাজির। বলল, গতকাল রাতে নাকি সে আমাদের জন্য এয়ারপোর্টে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করেছিল ! দুঃখ প্রকাশ করলাম, কারণ ভুলেই গিয়েছিলাম যে সে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে ! ২৫০০ পেসোতে দুপুর দুইটা পর্যন্ত সিটি ট্যুর ঠিক করলাম। আবার মনে মনে বললাম, ভালই হয়েছে তোমার সাথে দেখা হয় নি, তাহলে তুমি নিশ্চয় আমাদের আবার ৩০০০ পেসোর হোটেলে তুলতে !

ম্যানিলা, মাকাতি এই শহরগুলোর যে জিনিসটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে, তা হল পরিচ্ছন্নতা। নিজের দেশকে সুন্দর পরিচ্ছন্ন রাখার জাতিগত যে মানসিকতা সেটা দেখলে বাংলাদেশের জন্য আমার দুঃখই হয়।



কবে আমরা এমন সচেতন হব?? !! ফিলিপিনসে থাকা অবস্থায় কোথায় আমি এক ইঞ্চি রাস্তা ভাংগা দেখিনি, ধুলাবালিতো দূরের কথা ! ফুটপাথ অনেক চওড়া।

প্রথমেই আমাদের নিয়ে গেল জাতীয় বীর এর মূর্তি দর্শনে।



এরপর জাতীয় স্কয়ার, কনভেনশন সেন্টার, সিনেট ভবন, সুপ্রিম কোর্ট এসব দেখাল।


জাতীয় স্কয়ার

এরপর আমাদের নিয়ে গেল এক ফিলিপিনসের “"আড়ং"” এ ! গলাকাটা দাম ! তারপরেও কয়েকটা জিনিস কিনলাম।


এই শার্টগুলো বারং কাপড়ের, কলা গাছের তন্তু দিয়ে তৈরী

ইউনিভার্সিটি অফ সন্টো টমাস ! এশিয়ার সবচেয়ে পূরাতন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ক্যাম্পাস একটু ঘুরে ফিরে দেখলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রীদের ড্রেস থাকে এখানেই প্রথম দেখলাম !




ছাত্রীরা কোন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত

ড্রাইভারকে বললাম যে মাকাতির অফিস পাড়াতে একটু চক্কর দিয়ে আমাদের বাকলারান এলাকায় নামিয়ে দাও।


মাকাতি শহরে আকাশচুম্বী ভবন


এই হোটেলের এক্সটেরিয়র বেশ ভাল লেগেছে


ফিলিপিনস স্টক এক্সচেঞ্জ অফিস

বাকলারানে মূলত স্ট্রিট শপিং এর ব্যাবস্থা আর সাথে বংগবাজার স্টাইলের দোকানপাট আছে। তবে দোকানের জিনিসপত্রের কোয়ালিটি মাঝারি মানের এবং দামে কিছুটা কম বলে স্থানীয় লোকজনের ভালই ভীড় বাট্টা আছে। আসলে আমাদের হোটেল রিসেপশনের মেয়েটাই এই জায়গাটার কথা বলেছে।

আমাদের আরেকটি জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে, সেটা হল Mall of Asia বা সংক্ষেপে মোয়া ! বাকলারানে নেমে বুঝলাম সেটা মোয়ার কাছেই। বিকেল নাগাদ জিপনি চড়ে মোয়া চলে এলাম।



এস এম গ্রুপের মল অফ এশিয়া ম্যানিলা বে এর কোল ঘেষে বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরী, এটাই বোধহয় ফিলিপিনসের সবচেয়ে বড় মল। মলটি বে এর পাশে হওয়াতে এটা Hang Out এর জন্যও খুব ভাল জায়গা, অনেকটা আমাদের বসুন্ধরা সিটির মত !


এস এম মল থেকে ম্যানিলা বে


রাতের এস এম মল অফ এশিয়া

কিছু কেনাকাটা সেরে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সেদিনের মত হোটেলে চলে এলাম।

রাতের খাবারটা আমরা সারতাম হোটেলের কাছে Andok’'s রেস্টুরেন্টে। আমার খাবার ছিল মূলত বাংগুস মাছের ডিশ, সাথে একটা ডিম পোচ, এক কাপ ভাত, হালকা পেপে সিদ্ধ আর একটা অরেঞ্জ ড্রিংকস ! মাছটা আমার কাছে দারুন লাগত।



১০ নভেম্বর ২০১১। ফিলিপিনস ছাড়ার আগে আমাদের শেষ দিন। এদিন আমাদের গন্তব্য ম্যানিলা থেকে প্রায় ঘন্টা দেড়েকের দূরত্বের শহর লস ব্যানস। আমার বাবা ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষনা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) একজন বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা। অনেকে হয়ত জানেন, ফিলিপিনস এর লেগুনা এলাকার লস ব্যানস এ আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা প্রতিষ্ঠান বা IRRI এর সদর দপ্তর। এই ইরি’র সাথে ব্রি’র একটা কর্ম যোগাযোগ সব সময়ই আছে। আমার বাবা দু’বার গিয়েছিলেন ওখানে কোন সেমিনার বা সম্মেলনে যোগ দিতে। ইরির পাশ ঘেষেই আছে ইউনিভার্সিটি অফ ফিলিপিনস এর লস ব্যানস ক্যাম্পাস এবং গবেষনার জন্য এরাও ইরির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে। ব্রি থেকে অনেকেই UP তে পিএইচডি করতে যায়, যারা ইরিতেই গবেষনা করে থাকে। তেমনি একজন আমার ব্রি ক্যাম্পাসের ছোট বোন এবং ব্লগার আরমিন২৯ , যে কিনা ইরিতে একজন পিএইচডি স্কলার, সেই লস ব্যানসের আমাদের হোস্ট ! উদ্দেশ্য ওর সহযোগিতায় ইরি, ইউপি এবং লস ব্যানস এলাকাটা ঘুরে দেখব।

সকালে রওনা দিতে একটু দেরি হয়ে যাওয়াতে প্রায় দুপুর ১২ টা বেজে গেল ওর ওখানে পৌছাতে। দুপুরে কোরবানীর গোস্ত দিয়ে গরম ভাত, কত দিন পর দেশী খাবারের স্বাদ !! হাভাতের মত পেট পুরে খেলাম ! ইউপি আর ইরি’র অফিস ঘুরে আমরা একটা জিপনি ভাড়া করলাম, ম্যাগনেটিক হিল, ন্যাশনাল আর্ট ইনিস্টিটিউট এর যেটা কিনা পাহাড়ের চূড়ায়, এসব দেখব বলে। আমরা বলতে আমি, আমার বন্ধু বাবু, ব্লগার আরমিন এবং তার স্বামী রুবেল ভাই। রুবেল ভাইও ইউপি তে পিএইচডি করছেন। সেই রকম মেধাবী দম্পতি !!


আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটক


গবেষণার মাঠ


ইরি ল্যাব


ইরি অফিস

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক জিনিস দেখলাম ম্যাগনেটিক হিল এ ! একটা পাহাড়ী ঢালে যেকোন গাড়ী যদি ইঞ্জিন বন্ধ করে থেমে থাকে, সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওপরে উঠে যায় ! তবে ইন্টারনেট ঘেটে জানা গেল, ওটা আসলে একটা Optical Illusion ! তবে যাই হোক না কেন, ব্যাপারটায় খুব মজা পেয়েছি !

এরপর চলে গেলাম ন্যাশনাল আর্টস সেন্টারে, পাহাড়ের চূড়ায় ! খুব সুন্দর জায়গায় তৈরী করেছে ওরা। অসাধারণ লেগেছে চারপাশের পরিবেশ। ছেলে মেয়েরা ওখানে বিভিন্ন ইভেন্টের জন্য প্রাকটিস করছে।


আমাদের ভাড়া করা জিপনি, পেছনে ন্যাশনাল আর্টস সেন্টার

পাহাড়ের চূড়া থেকে মাউন্ট ম্যাকিলিং এর লাইং ল্যাডিকেও খুব ভালভাবে চোখে পড়ে। ছবি দেখুন, মনে হবে যেন একজন মহিলা শুয়ে আছে !



ঘোরাঘুরি শেষে আমরা লস ব্যানসের বিশেষ খাবার ‘বুকো পাই” খেলাম। বুকো হল ডাব। ডাবের ভেতরে যেই হালকা সাদা রঙের মজাদার আস্তরণ থাকে, সেটা দিয়েই পিজার সাইজের পিঠা তৈরী করে থাকে ওরা। পিঠার মাঝে ওই সাদা শ্বাসের আস্তরণটি থাকে। লস ব্যানসের এই একটি দিন অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ফিলিপিনস ট্যুর এভাবেই শেষ হল। প্রথম পোস্টে খরচ সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল। এখানে যতটুকু পারি বলছি।

# বিমান ভাড়াঃ ৫৩০০০ টাকা (মালয়শিয়া এয়ারলাইন্স)
# ভিসা ফিঃ ৩২০০ টাকা (পাচ দিন), ৪০০০ টাকা (দুই দিন)। বিস্তারিত এখানে
# হোটেল খরচঃ ১৫০০ পেসো থেকে শুরু, বাজেট হোটেল আছে, খোজ নিতে হবে। পালাওয়ানে ১০০০ পেসো থেকে হোটেল পাওয়া যাবে।
# আভ্যন্তরীন বিমান ভাড়া বেশী। ম্যানিলা ~ পালাওয়ান ৯০০০ পেসো, ম্যানিলা ~ বুরাকাই ৯০০০ পেসো। ১ পেসো = ১.৮৫ টাকা (আনুমানিক)
# মাকাতি/ম্যানিলাতে ১০০ থেকে ১৫০ পেসোতে খাওয়া যাবে। পালাওয়ানে একটু বেশী পড়বে। তবে জলিবি, এনডক্স এই জাতীয় রেস্টুরেন্টে ১০০ ~ ১৫০ তে খেতে পারবেন।
# ট্যাক্সিতে চলা ফেরা ব্যায়বহুল হবে। জিপনি/বাস ব্যাবহার করা ভাল। সবাই ইংরেজি বোঝে, সুতরাং সমস্যা হবে না। হাটাহাটি করে চলা ফেরার অনেক সুযোগ।
# ফিলিপিনস ত্যাগ করার সময় ইমিগ্রেশনের ঠিক আগে ৭৫০ পেসো টার্মিনাল ফি চেয়ে বসবে যেটাকে আমার কাছে একটা চরম ফাজলামো মনে হয়েছে। অতএব ৭৫০ পেসো আলাদা রেখে তারপর ফিলিপিনস ঘুরবেন। আমরা সব টাকা খরচ করে আসায় ডলার ভাংগাতে হয়েছিল! 

ব্লগার মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম এর ব্লগ থেকে লেখাটি কপি (লিংক) করা হয়েছে। লেখকের কোন রকম আপত্তি থাকলে এটি মুছে ফেলা হবে।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম