উইকিলিকস ► বাংলাদেশকে চাপে রাখতে ২০০৫ সালের সার্ক-শীর্ষ সম্মেলন পন্ড করেছে ভারত

কার্যত: সার্ক এখন একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান ছাড়া কিছুই নয়। এর কার্যকারিতা আনুষ্ঠানিকতা ও আঞ্চলিক পিকনিকে পর্যবসিত হয়েছে।
উইকিলিকস-তথ্য দিয়েছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষদিকে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকার সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেবার ঘোষণা দিয়ে দিল্লী বাংলাদেশের ওপর তার রাষ্ট্রীয় স্বার্থে চাপ প্রয়োগের কৌশল বাস্তবায়ন করেছে। নেপালের জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং ঢাকায় তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে যুক্তি দেখিয়ে সার্ক-শীর্ষ সম্মেলন বানচাল করে ভারত।
উইকিলিকস্-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে ভারতবিরোধী প্রচারণা, টাটার বিনিয়োগে অনাগ্রহ, ভারতকে ট্রানজিট-করিডোর-সমুদ্রবন্দর ইত্যাদি দিতে অস্বীকৃতির কারণে ক্ষুব্ধ ভারত বাংলাদেশ সরকারকে এর মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে চেয়েছিল।
সার্ক-সম্মেলন বানচাল করার ভারতীয় দুরভিসন্ধি ফাঁস করে উইকিলিক্স যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। ভারত সরকার বা তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিবাদ জানায়নি। উল্লেখ্য, দিল্লী ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয় এসব তথ্য ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব তথ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নিলম ডিয়ো, পরিচালক তরনজিত সন্ধুর সাথে মার্কিন কূটনীতিকদের কথোপকথনের রেকর্ড উদ্ধৃত করা হয়েছে। উইকিলিক্স জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশে বোমা বিস্ফোরণের কারণে সার্ক সম্মেলন বাতিল করা হয়নি। বরং বাংলাদেশে ভারত বিরোধী প্রচারণা তখন বেশ জোরেশোরে চলছিল এবং টাটার বিনিয়োগ বিষয়েও বাংলাদেশ বেঁকে বসেছিল। এসব কারণে বাংলাদেশকে বার্তা দেয়ার দরকার ছিল।’ উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা সফরে আসা মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র সচিব জন গ্যাস্টরাইটের সাথে ভারতের কূটনৈতিক যোগসাজশে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি যুথবদ্ধ কৌশল নেয়া হয়। তারা বাংলাদেশকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চাপে রাখে।সার্ক সম্মেলন বাতিলে সফল ভারতীয় কূটনীতিকরা মার্কিন কূটনীতিকদের সাথে এমন সব কথাবার্তা বলেছেন, তাতে বাংলাদেশের প্রতি তাচ্ছিল্য ও ঔদ্ধত্যের পরিচয় পাওয়া যায়।
সার্ক-সম্মেলন বাতিল করার ফলে বাংলাদেশে সৃষ্ট ক্ষোভ ও হতাশাকে নয়াদিল্লী বাংলাদেশের প্রাপ্য বলেই মনে করেছে এবং এটা নিরসনে তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি।
ভারতের কূটনীতিক তরণজিত বলেছেন : ‘ভারতের জন্য যে সব বিষয় উদ্বেগজনক’ সে বিষয়গুলো বাংলাদেশ উপেক্ষা করলে তা বাংলাদেশের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে’- এ বার্তাটিই তারা বাংলাদেশকে দিতে চেয়েছেন।ভারত যেন ইরান থেকে গ্যাস না নিয়ে বাংলাদেশের গ্যাস মজুদকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে চীন ও ইরানের ব্যাপারে মার্কিন ভীতি নিরসন করে ওয়াশিংটনের এ নিয়ে যথেষ্ট মাথাব্যথা ছিল।২০০৫ সালের ১৩ এপ্রিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটন একটি তারবার্তা পাঠানো হয়। ঐ তারবার্তার নম্বর ৩০৬৯৭। তাতে ঢাকায় সফররত মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র সচিব জন গ্যাস্টরাইটের সাথে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নিলম ডিয়োর কথোপকথন সূত্র উল্লেখ করে উইকিলিকস লিখেছে : ‘দিল্লীর আগ্রহে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট নজরদারি করছে এবং বাংলাদেশের সাথে এক সাথে কাজ করার একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে বোঝাতে চাচ্ছি, তাদের বিষয়ে আমরা যথেষ্ট মনযোগি।নিলমের মতে, অনেক বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে অভিন্ন বার্তা পাঠিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলার বিষয়ে উভয় দেশই বাংলাদেশকে অব্যাহত ছবক দান করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের অব্যাহত অনঢ় ভূমিকা তাদেরকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। এক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণের আইকন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসকে পর্যন্ত মার্কিনীরা ভারতের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে পাঠিয়ে ইন্দো-মার্কিন অক্ষের পক্ষে ওকালতি করিয়েছে।Source

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম