শহীদ আলগীর হোসেন সুমন (সিরাজগঞ্জ-১২.১২.২০১৩)

শহীদ আলমগীর ভাই

নামঃ আলগীর হোসেন সুমন।
পিতার নামঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন।
পেশাঃ রাজমিস্ত্রি।
মাতারঃ আছফুলি বেগম।
পেশাঃ গৃহিনী
বয়সঃ দশ বছর।
শ্রেণীঃ চতুর্থ।
ঠিকানাঃ গ্রাম- বহুলী, পোষ্ট- বহুলী, থানা- সিরাজগঞ্জ, জেলা- সিরাজগঞ্জ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ ছাব্বিশা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহুলী।
ভাইবোনঃ দুইভাই এক বোন, ভাইদের মধ্যে বড়।
ঘটনাস্থলঃ বহুলী বাজার, সিরাজগঞ্জ সদর।
তারিখঃ ৯ই ডিসেম্বর ২০১৩ইং।
সময়ঃ সকাল এগারোটা।
যাদের দ্বারা শহীদঃ পুলিশের গুলিতে।
সাংগঠনিক মানঃ সর্মথক।
বাবা-মার প্রতিক্রিয়াঃ “আমার নাবালক সন্তানকে যারা হত্যা করল পরকালে আল্লাহ যেন ওদের বিচার করে”।






সোমবার সকাল থেকেই পিকেটাররা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল। এ সময় হঠাৎ করে সকাল সাড়ে ৯টায় পুলিশ এসে ধাওয়া দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সূত্রপাত ঘটে। ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশ বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই আলমগীর হোসেন (সুমন) (১২) শহীদ হন। আনোয়ার হোসেন দুল্লা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সিরাজগঞ্জ সদর থানার একজন কর্মী এলাকাবাসীরা এখবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গ্রামে একটি মসজিদে ঘোষণা দিলে গ্রামের হাজার হাজার নারী পুরুষরা ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে পুলিশকে ধাওয়া করে। পুলিশ পিছপা হলে ক্ষুব্ধ জনতা এসময় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ২ টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। তারা জানায় পুলিশ শান্তিপূর্ণ অবরোধকারীদের বিনা কারণেই ধাওয়া দেয়। তাদের বাড়াবাড়ির কারণেই একটি তাজা প্রাণ অকালে হারালো।





সিরাজগঞ্জে শহীদের মিছিলে কিশোর সুমনকে দিয়ে শহীদের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০ জন

সিরাজগঞ্জ থেকে আবদুস সামাদ : ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঠিক ১ বছরে সিরাজগঞ্জ সদর থানার বহুলী ইউনিয়নের বহুলী গ্রামের অসহায় দিনমুজুর আনোয়ার হোসেনের কিশোর পুত্র সুমনকে দিয়ে শহীদের মিছিলে শহীদের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০ জন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর চৌহালী উপজেলার জামায়াত কর্মী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্মম আঘাতে ওয়ারেছ আলী, ২৮ ফেব্রুয়ারী চন্ডিদাসগাঁতীতে পুলিশ ও র‌্যাবের গুলিতে মুক্তার হোসেন (১৭), রুহুল আমিন (১৬), ২৯ শে মার্চ’ ১৩ তারিখে বেলকুচি উপজেলার জামায়াত কর্মী তাঁত শ্রমিক ফরিদুল ইসলাম (১৮), ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী ইউনুছ আলী (১৭), ২৭ নবেম্বর জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল জলিল (৫৫), ধুকুরিয়া বেড়া, শিবির কর্মী মোঃ মাছুম বিল্লাহ (২৪) সিরাজগঞ্জ সদর থানার চন্ডিদাসগাতিতে অন্য অজ্ঞাত এক সিএনজি চালক, ২৬ নবেম্বর ২০১৩ তারিখে সিরাজগঞ্জ সদর থানার মাছুয়াকান্দি গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক মোঃ ছাকমান হোসেন ও গত ৯ ডিসেম্বর সোমবার ২০১৩ বহুলী ইউনিয়নের কিশোর সমনসহশহীদের মিছিলে নাম লেখালো ১০ জন সাহসী সন্তানেরা।

শহীদের মিছিলে নাম লেখালো বহুলী গ্রামের কিশোর বালক আলমগীর হোসেন সুমন। বয়স কেবল ১২ বছর। বহুলী গ্রামের সরকারি প্রাথমিক স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র। ভাল, মন্দ কিছুই বুঝার বয়স হয়ে উঠেনি। ভয় কিংবা সাহস অর্জন করে উঠেনি। বাবার নাম আনোয়ার হোসেন ধুল্লা। সে একজন দিন মজুর। অসহায় আনোয়ার হোসেন রাজমিস্ত্রির ডেইলি লেবারের কাজ করে অতিকষ্টে অর্ধাহারে, অনাহারে অমানবিকভাবে দিনাতিপাত করে আসছিল। একবুক আশা নিয়ে স্ত্রী, ২ শহীদ আলমগীর হোসেন সুমন, খায়রুল আলম (৭), ১ মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (২) আর বৃদ্ধ মা আছফুন বেওয়া (৬০)কে নিয়ে তার সংসার চলছিল। গ্রামে বাড়ি হলেও তার পৈত্রিক কোন জমা-জমি নেই। এক চিলতে জমির ওপরেই ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস করছিল। নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে দিনে ২০০/২৫০ টাকা পায়। তাও আবার মাসে ১৫ দিন কাজ হয় আর ১৫ দিন বসে থাকতে হয়। গড়ে মাসে ৩/৪ হাজার টাকা আয়, এ দিয়েই চলে সাড়াটি মাস। কত যে কষ্টের, কত যে বেদনাদায়ক তার জীবন তা সে ছাড়া কেউ বুঝতে পারবেনা।

তার ভাষায় সে ভুয়াপুর ক্যান্টম্যান্টে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিল। দীর্ঘ ১২ দিন পর সে ৮ ডিসেম্বর’ ২০১৩ রাতে ভুয়াপুর থেকে অবরোধের মধ্যেও মায়ার টানে ছেলেমেয়েদের কাছে ফিরে আসে। আনোয়ার হোসেন বলে, “আমি একটা দিনের জন্য আমার ছেলেমেয়েকে ভাল মন্দ কিছু খাওয়াতে পারি নাই, পড়াতে পারি নাই। তাই পরের দিন ছেলেমেয়েকে খাওয়ানোর জন্য একটা মুরগি, একটু সেমাই কিনি বহুলী হাট থেকে। তাদেরকে সাথে নিয়ে একসাথে খাবো আমি দুচোখ মেলে দেখবো, তা আর আমার দেখার সুযোগ হলোনা। আমার ছোট ছেলেমেয়ের মাথার চুলগুলো বড় হয়েছে দেখতে খারাপ লাগছিল তাই আমি তাদেরকে বহুলী বাজারে নাপিতের দোকানে নিয়ে যাই, ছোট ২ ছেলেমেয়ের চুল কাটিয়ে সুমনকে নাপিতের দোকানে চুলকাটানোর জন্য রেখে আসি। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বহুলী বাজারে শুরু মহাপ্রলংকারী যুদ্ধ। পুলিশের বন্দুকের বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে অত্র এলাকা। সেই সাথে কেঁপে ওঠে আমার বুক। আমি আমার বুকের ধন সুমনকে খোঁজার জন্য বের হয়ে দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকি। পুলিশের গোলাগুলীর কারণে অত্র এলাকা থমথমে হয়ে পড়েছে, না পিকেটারতের মধ্যে আমার ছেলে নাই। তখনো ফুটছিল পুলিশের বুক কাঁপানো গুলীর পর গুলী। এর মধ্যে এক সাংবাদিক আমাকে বললো, দেখেনতো আপনি একে চেনন কি না ! আমি কাছে গিয়ে দেখি সে আমার বুকের মানিক সুমন।” সে আর কিছুই বলতে পারলোনা।

ক্ষমতা লোভী শেখ হাসিনার অবৈধ নির্দেশে আইনের রক্ষক পুলিশের নির্মম গুলীটি সুমনের গলায় লেগে মাটিতে লুঠিয়ে পড়ে। তার রক্তে রঞ্জিত হয়, বহুলীর সড়ক। সে রক্ত দেখে মানুষেরা শুধু কেঁপে কেঁপে চমকে উঠছে। সোমবার রাতে স্থানীয় বহুলীতে কিশোর শহীদ আলমগীর হোসেন সুমনের নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, সদর জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আতাউর রহমান, সদর বিএনপির ফিরোজ আহমেদ, বহুলী ইউনিয়নের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, ফাহাদ আহমেদ প্রমুখ। নামাযে জানাযায় অত্র এলাকার হাজার হাজার মুক্তি মানুষেরা অংশগ্রহণ করে।

এলাকার মানুষেরা প্রশ্ন করেন, পুলিশ কি দরিদ্র আনোয়ার হোসেনের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবেন? আপনারা কি থামাতে পারবেন তার মা-বাবার কান্না? আপনারাও তো বাবা, আপনাদেরও তো ছেলেমেয়ে আছে। বঙ্গকন্যাকে খুশি করার জন্য, তার সহানূভূতি পেতে, তার সু-নজর কাঁড়তে আর কত মায়ের বুক খালি করবেন? পুত্র আর স্বজন হারা মানুষেরা জানতে চায়। অকালে সন্তান হারা বাবা-মায়েরা আকুতি করে বলছে, “আল্লাহ তুমি সাহসী সন্তানদের উছিলায় গোটা জাতিকে মুক্তি দাও। অবৈধ সরাকারের এক গুয়েমিতা আর ক্ষমতা লোভীর কারণে আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়।”

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম