শহীদ গোলাম রাব্বানী (বিশ্বনাথ, সিলেট: ২০.০৩.২০১৩)


২০১৩ সালের ২০ মার্চ সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ভাইয়ের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সিলেট জেলায় হরতালের ডাক দেওয়া হয় জেলা ও মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে। আমাদের শাখায় কর্মসূচি আগের দিন হওয়ায় সকালে কোন কর্মসূচি ছিলনা তাই ফজরের নামাজ পরে ঘুমিয়ে পড়ি।

 সকাল ৮টার দিকে তৎকালীন জেলা (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি আজিজ ভাইয়ের ফোন, ভাই কোথায় আছেন? বিশ্বনাথে আমাদের মিছিলে পুলিশের হামলা ও গুলি হয়েছে, আমাদের বেশ কিছু ভাই গুলিবিদ্্‌ তাদেরকে ইবনে-সিনাতে আনা হচ্ছে।  রিসিভ করতে হবে, তারাতারি ইবনে-সিনা চলে যান।


তাৎক্ষনিক মুজাম্মিল ভাই ও ওমরকে সাথে নিয়ে ছুটে যাই ইবনে-সিনায়। সেখানে পৌছা মাত্র আমাদের আহত কিছু ভাইকে আনা হয়,  সাথে সাথে আমরা ইমার্জেনসিতে নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে অপারেশন থিয়েটারে পাঠাই।  জামায়তের রুকন আবুল কালাম ভাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে বসে আছি আর মহান মাবুদের কাছে সেই ভাইদের জন্য দোয়া করছি।  সেই মুহুর্তে তৎকালীন মহানগর সভাপতি টিপু ভাই ফোন দিলেন ভাইদের খোজ নেওয়ার জন্য। ভাইয়ের ফোন রাখতেই মোবাইলে জেলা সভাপতির মেসেজ এলো, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত আমাদের সকলের প্রিয় গোলাম রাব্বানী ভাই শাহাদাত বরন করেছেন।

কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। কান্না থামছে না, মুখ দিয়ে যেনো কথা বের হচ্ছে না। মাত্র কিছু দিন আগে শহীদ রাহাত ভাইকে হারিয়েছি, এর মধ্যে আবার একজন ভাইয়ের শাহাদাত। এখানে যারা ছিলাম সবাই মিলে দোয়া করলাম শহীদ ও আহত ভাইদের জন্য। আহত ভাইদের কেবিনে রেখে ছুটে গেলাম উনার বাড়িতে। সবাই কান্নাজর্জড়িত অবস্থায়, কার কান্না কে থামাবে।



পরের দিন আলীয়া মাঠে জানাজা শেষে উনার বাড়ির পাশের মাঠে ২য় জানাজার পর উনার দাফন শেষ হলো। একটা বিষয় বার বার অন্তরে নাড়া দিচ্ছে,   উনি শাহাদাত বরন করেছিলেন যে মিছিলে- সেই মিছিলের স্থান ছিলো বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে আর সেখান থেকে উনার বাড়ী প্রায় ৬-৭ কিঃমিঃ দূরে। তিনি সেখান থেকে ফজরের নামাজ পড়ে এতদূর পথ পায়ে হেটে গিয়ে মিছিলে অংশগ্রহন করেছিলেন। তখন সাহাবাদের সেই বিপ্লবী জীবনের কথা বার বার মনে পড়ছিলো , যাদেরকে দুনিয়ার কোন কিছু দিয়ে আল্লাহ দ্বীনের কাজ থেকে যেভাবে বিন্দু পরিমান পিছনে ফেলা যেত না।

সেই আমীর হামজার উত্তরসূরী শহীদ গোলাম রাব্বানী ভাইকেও কেউ সেই মিছিল থেকে থামাতে পারেননি।তিনি তার মাবুদের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন অনন্ত অসিম সুখের স্থান জান্নাতে।

মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে একটাই চাওয়া তিনি যেনো আমাদের সকলের প্রিয় শহীদ গোলাম রাব্বানী ভাইকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন-আমীন ছুম্মা আমীন। -
Aminul Islam
ভিডিও








জামায়াতের প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসীবাদী সরকার মানুষের জীবন নিয়ে যে খেলা শুরু করেছে----- জামায়াত





বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসীবাদী সরকার মানুষের জীবন নিয়ে যে খেলা শুরু করেছে তা দেশের মানুষ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেনা। পাখির মত গুলী করে মানুষ খুন করা কোন হৃদয়বান মানুষের কাজ নয়। পুলিশের যেসব সদস্যরা নিরীহ গোলাম রব্বানীকে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছেন তাদের ঘরে যদি সন্তান থাকেন তাহলে এর মর্ম তারা বুঝতে পারবেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করার জন্য রব্বানীকে শহীদ করা হল। অথচ পুলিশের সহায়তায় সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা দেশ জুড়ে লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করছে। জনগণের টাকায় পরিচালিত পুলিশ নামাজী সৎ ও নিষ্ঠাবান ছেলেদের গুলী করে হত্যা করবে আর চোরবাটপার সন্ত্রাসীদের লালন করবে তা জনগণ মানবেনা। অবিলম্বে গোলাম রব্বানী হত্যার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় রবিবার থেকে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেখানে গুলীর নির্দেশ দেননি। সেখানে কার নির্দেশে গুলী করা হলো সিলেটবাসী তা জানতে চায়। গুলী করে মানুষ খুন করে মুক্তিকামী জনতার আন্দোলন ঠেকানো যাবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে শহীদ গোলাম রব্বানীর জানাযা পূর্ব সংক্ষিপ্ত বিশাল সমাবেশে বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন। গত বুধবার মহানগর আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এর মুক্তির দাবীতে সিলেট বিভাগে হরতার পালিত হয়। হরতাল চলাকালে বিশ্বনাথে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলীবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন গোলাম রব্বানী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় শহীদের কফিন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আনা হলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ। সে সময় আলিয়া মাঠে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মাত্র ক’দিন পূর্বেই এই স্থানে শিবির নেতা শহীদ আলী আজগর খান রাহাতের জানাযা সম্পন্ন হয়। জানাযা শেষে শহীদের কফিন নিয়ে যাওয়ার সময় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। জানাযার পূর্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সিলেট মহানগর, জেলা দক্ষিন ও জেলা উত্তর জামায়াত নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ১৮ দলীয় জোট এর নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। জানাযা শেষে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও জেলা মহানগর নেতৃবৃন্দ শহীদের কফিন নিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়ীতে ২য় জানাজায় শেষে দাফন কার্যে অংশ নেন। জানাযায় ইমামাতি করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা দক্ষিণ আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত জানাযা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক দায়িত্বশীল অধ্যাপক ফজলুর রহমান, জেলা উত্তর আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান, মহানগর ভারপ্রাপ্ত আমীর ডা: সায়েফ আহমদ, মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিম হোসাইন, সহ-সভাপতি বদরুজ্জামান সেলিম, ইসলামী ঐক্যজোট সিলেট মহানগর সভাপতি মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী, আঞ্জুমানে হেমায়েতে ইসলাম সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হাই জেহাদী, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, বিশ্বনাথ উপজেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল কাইয়ুম, বিশ্বনাথ খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী, অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শামছুজ্জামান সমছু, সদর উপজেলা জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ, গোলাপগঞ্জ ফুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শাহান, গোলাপগঞ্জ বাদেপাশা ইউপি চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রায়হান, দক্ষিণ সুরমা জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা সুলাইমান হোসেন, ইসলামী ছাত্রশিবির মহানগর সেক্রেটারী আব্দুর রাজ্জাক, জেলা পশ্চিম শিবির সেক্রেটারী হাফিজ আব্দুল আজিজ প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর হাতীমুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা সাবেক আমীর সিরাজুল ইসলাম মতলিব, মহানগর নায়েবে আমীর হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, সেক্রেটারী সিরাজুল ইসলাম শাহীন, মৌলভীবাজার জেলা সেক্রেটারী ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, সিলেট জেলা উত্তর সেক্রেটারী মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, হবিগঞ্জ জেলা সেক্রেটারী মশাহিদ আহমদ প্রমুখ।


গ্রামের বাড়ীতে ২য় জানাযা শেষে শহীদ গোলাম রব্বানীকে সমাহিত করা হয়। সৎ ও পরোপকারী ছেলের এমন করুণ মৃত্যু এলাকার কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এলাকাবাসী এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে গোলাম রব্বানীর খুনের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবী জানান।



0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম