নাম : মো. জোবায়ের হোসেন
পিতার নাম : মাস্টার রহমতুলস্নাহ
মাতার নাম : মোসাম্মাত্ জরিনা খাতুন৷
সাংগঠনিক মান : সদস্য৷
দায়িত্ব : বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অফিস সম্পাদক
সর্বশেষ লেখা পড়া : এমএসএস (শেষ বর্ষ), অর্থনীতি৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : চট্টগ্রাম বিশ্ববিবদ্যালয়৷
শিক্ষায় বিশেষ কৃতিত্ব : ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি, এসএসসি ৩ বিষয়ে লেটারসহ ১ম বিভাগ, এইচএসসি ১ম বিভাগ৷
জীবনের লক্ষ্য ছিল : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়া
আহত হওয়ার স্থান : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের পিছনে
শহীদ হওয়ার স্থান : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগরে পিছনে
আঘাতের ধরন : গুলি
যাদের আঘাতে শহীদ : মুজিববাদী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৫.০৫.১৯৯৯
পিতা : জীবিত (প্রাইমারি স্কুলের শিৰক)
মাতা : জীবিত (গৃহীনি)
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম+ পেস্ট- চৌবাড়ীয়া, থানা- টাঙ্গাইল সদর, টাঙ্গাইল৷
ভাইবোন : ৪ ভাই ৩ বোন (সর্বকনিষ্ঠ তিনি)
শহীদের স্মরণীয় বাণী : পিতা-মাতাকে বলেছিলেন; '৯৯ জন শহীদ হয়েছে, আমাকে দিয়ে যেন ১০০ হয়৷' ঈদুল আযহার পর বাড়িতে ফজর নামাজ পড়ে পিতাকে নিয়ে নামাজ আদায় করে মুনাজাতে বলেন, 'আমি যেন শহীদ হই৷' পিতা বললেন; আমীন৷
শাহাদাতে শহীদের পিতার প্রতিক্রিয়া : 'আমি আর কোনো ছেলের জন্য আমীন বলবো না৷'
শহীদ যোবায়ের হোসাইন
চৌবাড়ীতে ঘুমিয়ে আছে শহীদ জোবায়ের
তাকে দেখিনি কোনো দিন তবু তিনি আমার আপন৷ তার ভালবাসা পাওয়ার সুযোগ হয়নি কোনোদিন তবু তিনি আমার ভালবসার অবলম্বন তার সাথে কানো কেনো প্রহর তারপরও তিনি আমার স্মৃ্িতর মনিকোঠায় সদা বিদ্যমান৷ একত্রে দ্বীনের কাজ করিনি কোনো দিন তবুও তিনি আমার উত্সাহদানকারী৷ শহীদী মিছিলে তারসাথে সস্নাগান দিই নি কোনো দিন তবুও তিন আমার অনুপ্রেরণা৷ আমি শিবিরের শত শহীদ জোবায়ের ভাইয়ের কথা বলছি৷ যার শাহাদাতের সংবাদ শুনে ব্যাকুল হয়েছিল আমার হৃদয়, থেমিছল ভাষা চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছিল দু'ফোটা অশ্রম্ন৷
যা ঘটেছিল সে দিন
১৫ মে ১৯৯৯ সাল৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ছোট্ট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দুপুরে নীরবতা ভেঙ্গে আক্রমণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বিশ্রামরত শিবিরের কমর্ীদের উপর৷ আক্রমণের পরও তাদের প্রশুত্ব বিবৃত হয়নি তারা খুঁজতে থাকে নেতবৃন্দদের৷ আর সেই সময ক্লাস থেকে হলে একা একা ফিরছিল শিবিরে বিশ্বববিদ্যালয় শাখার অফিস সম্পাদক জোবায়ের ভাই৷ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত ব্যাংকের কাছ থেকে তুলে নিয়ে যায় প্রিয় ভাই জোবায়েরকে৷ এই অপহরণ করার ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরকে জানানো হলেও তারা প্রশসানের চেয়ারে বসে ছাত্রলীগের কমর্ীরা ভূমিকা পালন করে৷ শহীদের সাথীরা সারা ক্যাম্পাস খুঁজে ও পেল না জেবায়ের সাথীরা৷ অতঃপর মাগরিবের আজান, আর ফরেসি্্র ছাত্র বারে পেছনে একটি গুলি শব্দ৷ কিছুৰণ পর সংবাদ এল, শহীদের তালিকায় লেখা হল আরেকটি নাম৷ জেবায়ের হোসেন৷
ছোট থাকব না মোরা চিরদিন, বড় হব নিশ্চয় একদিন৷
বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল শহীদ জোবয়ের ভাইয়ের৷ আর সেই স্বপ্নে ভীত গড়ে দিলেন জেবায়ের ভাইয়ের মা৷ তিনি তার আদরে সনত্মানকে বলতেন তোমরা একট করে বই পড়বে ত আরতার বিনিময়ে আমি তোমাদের দশটি করে টাকা দেব৷ মায়ের উদ্দেশ্য ছিল সনত্মানেরা টাকার আশায় বেশি করে বই পড়বে আর তার ফলে তা জ্ঞানে রাজ্যে বিকশিত হবে৷ সত্যি ই জ্ঞানী হয়েছিল শহীদ জেবায়ের৷ তার শিৰা জীবনের দিকে তাকালেই তার সত্যতা পাওয়া যায়৷ নিজে গ্রাম চৌবাড়ীয়া চকদই প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হয়ে সব শ্রেণীতে প্রথম হন তিনি৷ প্রাইমারি ও অষ্টম শ্রেীতে বৃত্তিলাভ এবং অনেহলা স্কুল শিৰক মহোদয়য়গণ তার সুচত্রি, সত্যবাদীতা, ন্যায়নীতি পরায়নতা ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে তাকে একটি রৌপ্য পদক দিয়ে ভূষিত করে৷ এসএসসি এবং এচি এসসিতে লেটার মার্কসহ ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিল৷ শুধু তাই নয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীৰায় ফার্স্ট হয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন৷
তাকাওয়া :
শহীদ জোবায়ের শিশুকাল থেকেই ছির সহজ সরল৷ আলস্নাহ ও রাসুলে প্রতি ছিল অকৃত্রিম বিশ্বাসও ভালবাসা৷ জোবায়ের ভাইয়ের বাবার কাছ থেকেই শুনি সে কথা 'শৈশব কাল থেকেই একটা সুন্দর অভ্যাস ছিল তার৷ আমাকে নামাজ পড়তে দেখেলে আমার ডান পাশে দাঁড়িয়ে যেত৷ আমি একদিন বারান্দায় চৌকির উপর নামাজ পড়ছি এমন সময় জোবায়ের আমার ডান পাশে দাড়াল৷ আমি ওযই জমিনে সিজদায় গিয়েছি, জেবায়েরও আমার সাথে সিজদা দিল কিন্তু ওর কপালটা চৌকির উপর না ঠেকার কারণে ধাপস করে পড়ে মাঠিতে পড়ে গেল৷ আমি নামাজ ছেড়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম৷ কিছুৰণ পর জোবায়ের বলল বাবা! নামাজ শেষ হয়েছে? না, বলে আমি আবার নামাজে দাঁড়ালাম লোজায়েরও আমার সাথে দাড়িয়ে নামাজ পড়ল ৷ নামাজ শেষে বলল বাবা জোবায়ের ব্যাথা পেয়েছে? জোবায়ের হাসি দিল বলল নামাজ পড়তে কি মানুষ ব্যাথা পায়৷
রমজানের চাঁদ উঠেছে পশ্চিম আকাশে৷ রমাজনের চাঁদ দেখেই যেন ঈদের আনন্দ পাচ্ছে শিশুরা আমার জেবায়ের দৌড়ে আসল তার মায়ের কাছে৷ বয়স তখন ৪ বছর ৷ বলল মা আমি রোজা রাখ৷ ওর মা কোনো উত্তর দিল না৷ আমার সেহরী খেয়ে শুয়ে পড়লাম৷ হঠাত্ জোবায়ের উঠে বলল মা তোমরা ভাত খেয়েছে? আমি বললাম হ্যা, খেয়েছি৷ জোবায়ের মন খারাপ করে শুয়ে পড়ল৷ সকালে তার মা তাকে খাবার দিলে সে খেল না ওর মা খাওয়ানো জন্য ওকে ছয়বার গোসল করালো৷ তুবও জোবায়ের খেল না রোজা ও ভাঙলো না৷
আমার জোবায়ের কখনো টেলিভিশন দেখতো না৷ তবে সাংবাদ শুনতো৷ আর ঘরে ভেতর সবাই টেলিভিশনে সংবাদ শুনতাম৷ আর আমার জোবায়ের ঘরের কাঠখড়ির বেড়ায় পাশে দাড়িয়ে খবর শুনতো৷ আমি বলতাম জেবায়ের তুমি সংবাদ দেখনা কেন? সে বলতে বাবা যে ময়েটি সংবাদ পেিড় তাকে দেখলে আমার চোখের পর্দা নষ্ট হতে পারে৷ এই হল আমার জোবায়ের, আমার গর্ব, আমার অহংকার, আমার বিশ্বাস আমার ভালবাসা৷
শাহাদাতের তামান্না : মরতেই হবে যখন শহীদি মরণ দিও আমকে এই গানটি জোবায়র ভাই কখনো গেয়েছিল কিনা আমি জানি তবে শুনেছিল অবশ্যই৷ এই গান যেমন প্রেরণা দেয় শাহাদাতের তেমনি রাসুলের হাদিসও প্রেরণা দেয় আমাদের ৷ হয়তো শহীদ জোবায়ের এই হাদীসটি জানতো 'রাসুল (সা) বলেছেন, আলস্নাহ নিকট শহীদের জন্য ছয়টি পুরস্কার রয়েছে সেগুলি হল : ১৷ প্রথম রন্তু বিন্দু ঝরতেই তাকে মাফ করা৷
একদিন ফজরের নামাজের ইমামতি করছেন ছেলে জোবাযের আর মুক্তাদি হিসেবে আছেন পিতা মাস্টা রহমতুলস্নাহ৷ নামাজ শেষে মোনাজাতরত অবস্থায় কাতরকন্ঠে জোবায়ের ভাই বলছেন হে আলস্নাহ!আমাকে তুমি শাহাদাতেরমৃতু্য দিও৷ মুক্তদি হিসেবে কোনো চিনত্মা ভাবনা ছাড়াই বৃদ্ধ পিতা বললেন আমিন৷ পিতার আমিন বলার চলিস্নশ দিন পর ছেলে শহীদী কফিন উপহার হিসেবে পেেেয়ছিলেন বৃদ্ধ পিতা৷
জোবায়ের ভাইয়ের আব্বা বলেন যে দিন জোবায়ের বাড়ি হতে শেষবারের মতো যায় তখন আমি বলেছিলাম, জোবায়ের! বাংলাদেশের দূর-দুরানত্মর হতে শিবিরের ছেলেরা এসেলেখাপড়া করে, অনেক সময় ছাত্রীগের শয়তানের তোমাদের মেরে ফেলে৷ সমসত্ম ৰতিগ্রসত্ম ছেলে পিতা-মাতা কিভাবে খবর পায়৷ সে বলল বাবা আলস্নাহ পাকের রহমতে শিবিরে ভাইয়েরা সমসত্ম ব্যবস্থা করে থাকেন৷ এ পর্যনত্ম ৯৯ জন দ্বীনি ভাই শহীদ হয়েছেন৷ ওর কথা শেষ না হতেই আমি বললাম তুমি কি একশজন পুরণ করতে চাও? এই কথাবলার সাথে সাথে আমার অনত্মর কেপে উঠল, আমি জোবায়েররের মুখের দিকে তাকিয়ে দিলাম ও মিষ্টি সুরে বলল আলস্নাহ পাক দয়া করে কবুল করলে৷
সংগঠনের প্রতি শহীদ পরিবারের চাওয়া :
শত শত শহীদের মা বলেছেন জোবায়ের আমার ত্রিশ বছরের সাধনায় সত্, সাহসী, উদ্যমী, পরোপকারী, ও ভালবাসার হৃদয়ের অধিকারী একজন প্রকৃত মানুষ হয়েছিল৷ আজ ৩৪ বছরে টগবগে যুবকের নাম হচ্ছে ইসলামী ছাত্র শিবির৷ এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কি পেরেছে সত্, দৰ ও দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেরেদকে গড়ে তুলতো? যদি না পারে তবে আমাদের চাওয়া অনেক বাকী৷ গত ১৪.০৪.২০১১ টাঙ্গাইল শহর শাখার সেক্রেটারি রাসেল আহমেদ ভাইকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম শহীদ জোবায়ের ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে ও পরিবারে লোকজনের সাথে সাৰাত করতে৷ শহীদ জোবায়ের ভাইয়ের শ্রদ্ধেয় পিতা মাতাকে যদিও আমারা পাইনি কিন্তু পেয়েছিলাম তার বড় ভাই জাকির হোসেনকে৷ তিনি জানালেন ৯০ বছর বয়সের বৃদ্ধ পিতা এখনো বুকভারা আশা নিয়ে বেঁচে আছেন৷ দ্বীনে বিজয় দেখতো, এখনো দু'চোখের অশ্রম্ন বিসর্জনে দিয়ে আলস্নাহর কাছে দোয়া করে সংগঠনের জন্য৷ শহীদ জোবায়েরের মতো লৰ লৰ সনত্মানের প্রতি তাকিয়ে আছেন বৃদ্ধ মা কখনে তারা এই বাংলার সবুজ জমিনে নারায়ে তাকবীর শেস্নগান দিবে৷ তার জিজ্ঞাসা কার কত রক্ত দিয়ে এদেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হত্যার রাজনীতি বন্ধ হবে, মা হারানো তার সনত্মানকে, ভাই তার বোনকে, সেদিন করবে আসবে? নাকি এই স্বপ্ন দেখে দেখেই শহীদ জোবায়ের ভাইয়ের পিতামাতাও ঘুমিয়ে যাবে চৌবাড়ীরয়ার কবরসত্মানে যেখানে ঘুমিয়ে আছে শিবিরের শতশত শহীদ জোবায়ের হোসেন৷
পিতার নাম : মাস্টার রহমতুলস্নাহ
মাতার নাম : মোসাম্মাত্ জরিনা খাতুন৷
সাংগঠনিক মান : সদস্য৷
দায়িত্ব : বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অফিস সম্পাদক
সর্বশেষ লেখা পড়া : এমএসএস (শেষ বর্ষ), অর্থনীতি৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : চট্টগ্রাম বিশ্ববিবদ্যালয়৷
শিক্ষায় বিশেষ কৃতিত্ব : ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি, এসএসসি ৩ বিষয়ে লেটারসহ ১ম বিভাগ, এইচএসসি ১ম বিভাগ৷
জীবনের লক্ষ্য ছিল : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়া
আহত হওয়ার স্থান : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের পিছনে
শহীদ হওয়ার স্থান : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগরে পিছনে
আঘাতের ধরন : গুলি
যাদের আঘাতে শহীদ : মুজিববাদী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৫.০৫.১৯৯৯
পিতা : জীবিত (প্রাইমারি স্কুলের শিৰক)
মাতা : জীবিত (গৃহীনি)
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম+ পেস্ট- চৌবাড়ীয়া, থানা- টাঙ্গাইল সদর, টাঙ্গাইল৷
ভাইবোন : ৪ ভাই ৩ বোন (সর্বকনিষ্ঠ তিনি)
শহীদের স্মরণীয় বাণী : পিতা-মাতাকে বলেছিলেন; '৯৯ জন শহীদ হয়েছে, আমাকে দিয়ে যেন ১০০ হয়৷' ঈদুল আযহার পর বাড়িতে ফজর নামাজ পড়ে পিতাকে নিয়ে নামাজ আদায় করে মুনাজাতে বলেন, 'আমি যেন শহীদ হই৷' পিতা বললেন; আমীন৷
শাহাদাতে শহীদের পিতার প্রতিক্রিয়া : 'আমি আর কোনো ছেলের জন্য আমীন বলবো না৷'
শহীদ যোবায়ের হোসাইন
চৌবাড়ীতে ঘুমিয়ে আছে শহীদ জোবায়ের
তাকে দেখিনি কোনো দিন তবু তিনি আমার আপন৷ তার ভালবাসা পাওয়ার সুযোগ হয়নি কোনোদিন তবু তিনি আমার ভালবসার অবলম্বন তার সাথে কানো কেনো প্রহর তারপরও তিনি আমার স্মৃ্িতর মনিকোঠায় সদা বিদ্যমান৷ একত্রে দ্বীনের কাজ করিনি কোনো দিন তবুও তিনি আমার উত্সাহদানকারী৷ শহীদী মিছিলে তারসাথে সস্নাগান দিই নি কোনো দিন তবুও তিন আমার অনুপ্রেরণা৷ আমি শিবিরের শত শহীদ জোবায়ের ভাইয়ের কথা বলছি৷ যার শাহাদাতের সংবাদ শুনে ব্যাকুল হয়েছিল আমার হৃদয়, থেমিছল ভাষা চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছিল দু'ফোটা অশ্রম্ন৷
যা ঘটেছিল সে দিন
১৫ মে ১৯৯৯ সাল৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ছোট্ট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দুপুরে নীরবতা ভেঙ্গে আক্রমণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বিশ্রামরত শিবিরের কমর্ীদের উপর৷ আক্রমণের পরও তাদের প্রশুত্ব বিবৃত হয়নি তারা খুঁজতে থাকে নেতবৃন্দদের৷ আর সেই সময ক্লাস থেকে হলে একা একা ফিরছিল শিবিরে বিশ্বববিদ্যালয় শাখার অফিস সম্পাদক জোবায়ের ভাই৷ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত ব্যাংকের কাছ থেকে তুলে নিয়ে যায় প্রিয় ভাই জোবায়েরকে৷ এই অপহরণ করার ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরকে জানানো হলেও তারা প্রশসানের চেয়ারে বসে ছাত্রলীগের কমর্ীরা ভূমিকা পালন করে৷ শহীদের সাথীরা সারা ক্যাম্পাস খুঁজে ও পেল না জেবায়ের সাথীরা৷ অতঃপর মাগরিবের আজান, আর ফরেসি্্র ছাত্র বারে পেছনে একটি গুলি শব্দ৷ কিছুৰণ পর সংবাদ এল, শহীদের তালিকায় লেখা হল আরেকটি নাম৷ জেবায়ের হোসেন৷
ছোট থাকব না মোরা চিরদিন, বড় হব নিশ্চয় একদিন৷
বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল শহীদ জোবয়ের ভাইয়ের৷ আর সেই স্বপ্নে ভীত গড়ে দিলেন জেবায়ের ভাইয়ের মা৷ তিনি তার আদরে সনত্মানকে বলতেন তোমরা একট করে বই পড়বে ত আরতার বিনিময়ে আমি তোমাদের দশটি করে টাকা দেব৷ মায়ের উদ্দেশ্য ছিল সনত্মানেরা টাকার আশায় বেশি করে বই পড়বে আর তার ফলে তা জ্ঞানে রাজ্যে বিকশিত হবে৷ সত্যি ই জ্ঞানী হয়েছিল শহীদ জেবায়ের৷ তার শিৰা জীবনের দিকে তাকালেই তার সত্যতা পাওয়া যায়৷ নিজে গ্রাম চৌবাড়ীয়া চকদই প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হয়ে সব শ্রেণীতে প্রথম হন তিনি৷ প্রাইমারি ও অষ্টম শ্রেীতে বৃত্তিলাভ এবং অনেহলা স্কুল শিৰক মহোদয়য়গণ তার সুচত্রি, সত্যবাদীতা, ন্যায়নীতি পরায়নতা ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে তাকে একটি রৌপ্য পদক দিয়ে ভূষিত করে৷ এসএসসি এবং এচি এসসিতে লেটার মার্কসহ ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিল৷ শুধু তাই নয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীৰায় ফার্স্ট হয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন৷
তাকাওয়া :
শহীদ জোবায়ের শিশুকাল থেকেই ছির সহজ সরল৷ আলস্নাহ ও রাসুলে প্রতি ছিল অকৃত্রিম বিশ্বাসও ভালবাসা৷ জোবায়ের ভাইয়ের বাবার কাছ থেকেই শুনি সে কথা 'শৈশব কাল থেকেই একটা সুন্দর অভ্যাস ছিল তার৷ আমাকে নামাজ পড়তে দেখেলে আমার ডান পাশে দাঁড়িয়ে যেত৷ আমি একদিন বারান্দায় চৌকির উপর নামাজ পড়ছি এমন সময় জোবায়ের আমার ডান পাশে দাড়াল৷ আমি ওযই জমিনে সিজদায় গিয়েছি, জেবায়েরও আমার সাথে সিজদা দিল কিন্তু ওর কপালটা চৌকির উপর না ঠেকার কারণে ধাপস করে পড়ে মাঠিতে পড়ে গেল৷ আমি নামাজ ছেড়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম৷ কিছুৰণ পর জোবায়ের বলল বাবা! নামাজ শেষ হয়েছে? না, বলে আমি আবার নামাজে দাঁড়ালাম লোজায়েরও আমার সাথে দাড়িয়ে নামাজ পড়ল ৷ নামাজ শেষে বলল বাবা জোবায়ের ব্যাথা পেয়েছে? জোবায়ের হাসি দিল বলল নামাজ পড়তে কি মানুষ ব্যাথা পায়৷
রমজানের চাঁদ উঠেছে পশ্চিম আকাশে৷ রমাজনের চাঁদ দেখেই যেন ঈদের আনন্দ পাচ্ছে শিশুরা আমার জেবায়ের দৌড়ে আসল তার মায়ের কাছে৷ বয়স তখন ৪ বছর ৷ বলল মা আমি রোজা রাখ৷ ওর মা কোনো উত্তর দিল না৷ আমার সেহরী খেয়ে শুয়ে পড়লাম৷ হঠাত্ জোবায়ের উঠে বলল মা তোমরা ভাত খেয়েছে? আমি বললাম হ্যা, খেয়েছি৷ জোবায়ের মন খারাপ করে শুয়ে পড়ল৷ সকালে তার মা তাকে খাবার দিলে সে খেল না ওর মা খাওয়ানো জন্য ওকে ছয়বার গোসল করালো৷ তুবও জোবায়ের খেল না রোজা ও ভাঙলো না৷
আমার জোবায়ের কখনো টেলিভিশন দেখতো না৷ তবে সাংবাদ শুনতো৷ আর ঘরে ভেতর সবাই টেলিভিশনে সংবাদ শুনতাম৷ আর আমার জোবায়ের ঘরের কাঠখড়ির বেড়ায় পাশে দাড়িয়ে খবর শুনতো৷ আমি বলতাম জেবায়ের তুমি সংবাদ দেখনা কেন? সে বলতে বাবা যে ময়েটি সংবাদ পেিড় তাকে দেখলে আমার চোখের পর্দা নষ্ট হতে পারে৷ এই হল আমার জোবায়ের, আমার গর্ব, আমার অহংকার, আমার বিশ্বাস আমার ভালবাসা৷
শাহাদাতের তামান্না : মরতেই হবে যখন শহীদি মরণ দিও আমকে এই গানটি জোবায়র ভাই কখনো গেয়েছিল কিনা আমি জানি তবে শুনেছিল অবশ্যই৷ এই গান যেমন প্রেরণা দেয় শাহাদাতের তেমনি রাসুলের হাদিসও প্রেরণা দেয় আমাদের ৷ হয়তো শহীদ জোবায়ের এই হাদীসটি জানতো 'রাসুল (সা) বলেছেন, আলস্নাহ নিকট শহীদের জন্য ছয়টি পুরস্কার রয়েছে সেগুলি হল : ১৷ প্রথম রন্তু বিন্দু ঝরতেই তাকে মাফ করা৷
একদিন ফজরের নামাজের ইমামতি করছেন ছেলে জোবাযের আর মুক্তাদি হিসেবে আছেন পিতা মাস্টা রহমতুলস্নাহ৷ নামাজ শেষে মোনাজাতরত অবস্থায় কাতরকন্ঠে জোবায়ের ভাই বলছেন হে আলস্নাহ!আমাকে তুমি শাহাদাতেরমৃতু্য দিও৷ মুক্তদি হিসেবে কোনো চিনত্মা ভাবনা ছাড়াই বৃদ্ধ পিতা বললেন আমিন৷ পিতার আমিন বলার চলিস্নশ দিন পর ছেলে শহীদী কফিন উপহার হিসেবে পেেেয়ছিলেন বৃদ্ধ পিতা৷
জোবায়ের ভাইয়ের আব্বা বলেন যে দিন জোবায়ের বাড়ি হতে শেষবারের মতো যায় তখন আমি বলেছিলাম, জোবায়ের! বাংলাদেশের দূর-দুরানত্মর হতে শিবিরের ছেলেরা এসেলেখাপড়া করে, অনেক সময় ছাত্রীগের শয়তানের তোমাদের মেরে ফেলে৷ সমসত্ম ৰতিগ্রসত্ম ছেলে পিতা-মাতা কিভাবে খবর পায়৷ সে বলল বাবা আলস্নাহ পাকের রহমতে শিবিরে ভাইয়েরা সমসত্ম ব্যবস্থা করে থাকেন৷ এ পর্যনত্ম ৯৯ জন দ্বীনি ভাই শহীদ হয়েছেন৷ ওর কথা শেষ না হতেই আমি বললাম তুমি কি একশজন পুরণ করতে চাও? এই কথাবলার সাথে সাথে আমার অনত্মর কেপে উঠল, আমি জোবায়েররের মুখের দিকে তাকিয়ে দিলাম ও মিষ্টি সুরে বলল আলস্নাহ পাক দয়া করে কবুল করলে৷
সংগঠনের প্রতি শহীদ পরিবারের চাওয়া :
শত শত শহীদের মা বলেছেন জোবায়ের আমার ত্রিশ বছরের সাধনায় সত্, সাহসী, উদ্যমী, পরোপকারী, ও ভালবাসার হৃদয়ের অধিকারী একজন প্রকৃত মানুষ হয়েছিল৷ আজ ৩৪ বছরে টগবগে যুবকের নাম হচ্ছে ইসলামী ছাত্র শিবির৷ এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কি পেরেছে সত্, দৰ ও দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেরেদকে গড়ে তুলতো? যদি না পারে তবে আমাদের চাওয়া অনেক বাকী৷ গত ১৪.০৪.২০১১ টাঙ্গাইল শহর শাখার সেক্রেটারি রাসেল আহমেদ ভাইকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম শহীদ জোবায়ের ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে ও পরিবারে লোকজনের সাথে সাৰাত করতে৷ শহীদ জোবায়ের ভাইয়ের শ্রদ্ধেয় পিতা মাতাকে যদিও আমারা পাইনি কিন্তু পেয়েছিলাম তার বড় ভাই জাকির হোসেনকে৷ তিনি জানালেন ৯০ বছর বয়সের বৃদ্ধ পিতা এখনো বুকভারা আশা নিয়ে বেঁচে আছেন৷ দ্বীনে বিজয় দেখতো, এখনো দু'চোখের অশ্রম্ন বিসর্জনে দিয়ে আলস্নাহর কাছে দোয়া করে সংগঠনের জন্য৷ শহীদ জোবায়েরের মতো লৰ লৰ সনত্মানের প্রতি তাকিয়ে আছেন বৃদ্ধ মা কখনে তারা এই বাংলার সবুজ জমিনে নারায়ে তাকবীর শেস্নগান দিবে৷ তার জিজ্ঞাসা কার কত রক্ত দিয়ে এদেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হত্যার রাজনীতি বন্ধ হবে, মা হারানো তার সনত্মানকে, ভাই তার বোনকে, সেদিন করবে আসবে? নাকি এই স্বপ্ন দেখে দেখেই শহীদ জোবায়ের ভাইয়ের পিতামাতাও ঘুমিয়ে যাবে চৌবাড়ীরয়ার কবরসত্মানে যেখানে ঘুমিয়ে আছে শিবিরের শতশত শহীদ জোবায়ের হোসেন৷
0 comments: