অসম্ভব নয় !, বেশ বলেছ, খাই খাই, বিষম চিন্তা

অসম্ভব নয় !

 

এক যে ছিল সাহেব, তাহার
গুণের মধ্যে নাকের বাহার ।
তার যে গাধা বাহন, সেটা
যেমন পেটুক তেমনি ঢ্যাঁটা ।
ডাইনে বললে যায় সে বামে
তিন পা যেতে দুবার থামে ।
চল্‌‌তে চল্‌‌তে থেকে থেকে
খানায় খন্দে পড়ে বেঁকে ।
ব্যাপার দেখে এম্নিতরো
সাহেব বললে, "সবুর করো-
মামদোবাজি আমার কাছে ?
এ রোগেরও ওষুধ আছে ।"
এই না ব'লে ভীষ্ণ ক্ষেপে
গাধার পিঠে বস্‌ল চেপে
মুলোর ঝুঁটি ঝুলিয়ে নাকে ।
আর কি গাধা ঝিমিয়ে থাকে ?
মুলোর গন্ধে টগবগিয়ে
দৌড়ে চলে লম্ফ দিয়ে-
যতই চলে ধরব ব'লে
ততই মুলো এগিয়ে চলে !
খাবার লোভে উদাস প্রাণে
কেবল ছোটে মুলোর টানে-
ডাইনে বাঁয়ে মুলোর তালে
ফেরেন গাধা নাকের চালে ।

বেশ বলেছ

 

এসব কথা শুন্‌‌লে তোদের লাগবে মনে ধাঁধা,
কেউ বা বুঝে পুরোপুরি, কেউ বা বুঝে আধা ।

কারে বা কই কিসের কথা কই যে দফে দফে,
গাছের 'পরে কাঁঠাল দেখে তেল মেখ না গোঁফে ।

একটি একটি কথায় যেন সদ্য দাগে কামান,
মন-বসনের ময়লা ধুতে তত্ত্বকথাই সমান ।

বেশ বলেছ, ঢের বলেছ, ঐখেনে দাও দাঁড়ি,
হাঁটের মাঝে ভাঙবে কেন বিদ্যে বোঝাই হাঁড়ি !

খাই খাই



খাই খাই কর কেন, এস বস আহারে-
খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে ।
যত কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে,
জড় করে আনি সব, -থাক সেই আশাতে ।
ডাল ভাত তরকারি ফলমূল শস্য,
আমিষ ও নিরামিষ, চর্ব্য ও চোষ্য,
রুটি লুচি, ভাজাভুজি, টক ঝাল মিষ্টি,
ময়রা ও পাচকের যত কিছু সৃষ্টি,
আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে-
খুঁজে পেতে আনি খেতে- নয় বড় সিধে সে !
জল খায়, দুধ খায়, খায় যত পানীয়,
জ্যাঠাছেলে বিড়ি খায়, কান ধরে টানিও ।
ফল বিনা চিঁড়ে দৈ, ফলাহার হয় তা,
জলযোগে জল খাওয়া শুধু জল নয় তা ।
ব্যাঙ খায় ফরাসিরা (খেতে নয় মন্দ) ,
বার্মার 'ঙাম্পি'তে বাপরে কি গন্ধ !
মাদ্রাজী ঝাল খেলে জ্বলে যায় কণ্ঠ,
জাপানেতে খায় নাকি ফড়িঙের ঘণ্ট !
আরশুলা মুখে দিয়ে সুখে খায় চীনারা,
কত কি যে খায় লোকে নাহি তার কিনারা ।
দেখে শুনে চেয়ে খাও, যেটা চায় রসনা ।
তা না হলে কলা খাও, চটো কেন বস না-
সবে হল খাওয়া শুরু, শোন শোন আরো খায়-
সুদ খায় মহাজনে, ঘুষ খায় দারোগায় ।
বাবু যান হাওয়া খেতে চড়ে জুড়ি-গাড়িতে,
খাসা দেখ 'খাপ্‌ খায়' চাপকানে দাড়িতে ।
তেলে জলে 'মিশ খায়', শুনেছ তা কেও কি ?
যুদ্ধে যে গুলি খায় গুলিখোর সেও কি ?
ডিঙি চড়ে স্রোতে প'ড়ে পাক খায় জেলেরা,
ভয় খেয়ে খাবি খায় পাঠশালে ছেলেরা ;

বেত খেয়ে কাঁদে কেউ, কেউ শুধু গালি খায়,
কেউ খেয়ে থতমত- তাও লিখি তালিকায় ।
ভিখারিটা তাড়া খায়, ভিখ্‌ নাহি পায় রে-
'দিন আনে দিন খায়' কত লোক হায় রে ।
হোঁচটের চোট খেয়ে খোকা ধরে কান্না,
মা বলেন চুমু খেয়ে, 'সেরে গেছে আর না ।'
ধমক বকুনি খেয়ে নয় যারা বাধ্য,
কিলচড় লাথি ঘুঁষি হয় তার খাদ্য ।
জুতো খায়, গুঁতো খায়, চাবুক যে খায় রে,
তবু যদি নুন খায়, সেও গুণ গায় রে ।
গরমে বাতাস খাই, শীতে খাই হিম্‌সিম্‌,
পিছলে আছাড় খেয়ে মাথা করে ঝিম্‌ঝিম্‌ ।
কত যে মোচড় খায় বেহালার কানটা,
কানমলা খেলে তবে খোলে তার গানটা ।
টোল খায় ঘটি বাটি, দোল খায় খোকারা,
ঘাবড়িয়ে ঘোল খায় পদে পদে বোকারা ।
আকাশেতে কাৎ হ'য়ে গোঁৎ খায় ঘুড়িটা,
পালোয়ান খায় দেখ ডিগবাজি কুড়িটা ।
ফুটবলে ঠেলা খাই, ভিড়ে খাই ধাক্কা,
কাশিতে প্রসাদ খেয়ে সাধু হই পাক্কা !
কথা শোন, মাথা খাও, রোদ্দুরে যেও না-
আর যাহা খাও বাপু বিষমটি খেও না ।
'ফেল্‌' ক'রে মুখ খেয়ে কেঁদেছিলে সেবারে,
আদা-নুন খেয়ে লাগো, পাশ কর এবারে ।
ভ্যাবাচ্যাকা খেও নাকো, যেয়ো নাকো ভড়কে,
খাওয়াদাওয়া শেষ হলে বসে খাও খড়্‌কে ।
এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা-
খাও তবে কচু পোড়া, খাও তবে ঘণ্টা ।

বিষম চিন্তা

 

মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার-
সবাই বলে, "মিথ্যে বাজে বকিস্‌নে আর খবরদার !"
অমন ধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব ?
বলবে সবাই, "মুখ্যু ছেলে", বলবে আমায় "গো গর্ধভ !"
কেউ কি জানে দিনের বেলায় কোথায় পালায় ঘুমের ঘোর ?
বর্ষা হলেই ব্যাঙের গলায় কোত্থেকে হয় এমন জোর ?
গাধার কেন শিং থাকেনা, হাতির কেন পালক নেই ?
গরম তেলে ফোড়ন দিলে লাফায় কেন তাধেই ধেই ?
সোডার বোতল খুললে কেন ফঁসফঁসিয়ে রাগ করে ?
কেমন করে রাখবে টিকি মাথায় যাদের টাক পড়ে ?
ভূত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয় ?
মাথায় যাদের গোল বেধেছে তাদের কেন "পাগোল" কয় ?
কতই ভাবি এসব কথা, জবাব দেবার মানুষ কই ?
বয়স হলে কেতাব খুলে জানতে পাব সমস্তই ।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম