খুড়োর কলকল করেছেন আজব রকম চণ্ডীদাসের খুড়ো-সবাই শুনে সাবাস্ বলে পাড়ার ছেলে বুড়ো । খুড়োর যখন অল্প বয়স- বছর খানেক হবে- উঠ্ল কেঁদে 'গুংগা' বলে ভীষণ অট্টরবে । আর সবাই 'মামা' 'গাগা' আবোল তাবোল বকে, খুড়োর মুখে 'গুংগা' শুনে চম্কে গেল লোকে । বল্লে সবাই, "এই ছেলেটা বাঁচলে পরে তবে, বুদ্ধি জোরে এ সংসারেতে একটা কিছু হবে ।" সেই খুড়ো আজ কল করেছেন আপন বুদ্ধি বলে, পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা যাবে তিন ঘণ্টায় চলে । দেখে এলাম কলটি অতি সহজ এবং সোজা, ঘণ্টা পাঁচেক ঘাটলে পরে আপনি যাবে বোঝা । বল্ব কি আর কলের ফিকির, বলতে না পাই ভাষা, ঘাড়ের সঙ্গে যন্ত্র জুড়ে এক্কেবারে খাসা । সামনে তাহার খাদ্য ঝোলে যার যে রকম রুচি- মণ্ডা মিঠাই চপ্ কাট্লেট্ খাজা কিংবা লুচি । মন বলে তায় 'খাব খাব', মুখ চলে তায় খেতে, মুখের সঙ্গে খাবার ছোটে পাল্লা দিয়ে মেতে । এমনি ক'রে লোভের টানে খাবার পানে চেয়ে, উৎসাহেতে হুঁস্ রবে না চল্বে কেবল ধেয়ে । হেসে খেলে দু'দশ যোজন চলবে বিনা ক্লেশে, খাবার গন্ধে পাগল হ'য়ে জিভের জলে ভেসে। সবাই বলে সমস্বরে ছেলে জোয়ান বুড়ো, অতুল কীর্তি রাখল ভবে চণ্ডীদাসের খুড়ো । |
গানের গুঁতোগান জুড়েছেন গ্রীষ্মকালে ভীষ্মলোচন শর্মা-আওয়াজখানা দিচ্ছে হানা দিল্লী থেকে বর্মা ! গাইছে ছেড়ে প্রাণের মায়া, গাইছে তেড়ে প্রাণপণ, ছুট্ছে লোকে চারদিকেতে ঘুরছে মাথা ভন্ ভন্ । মরছে কত জখম হয়ে কর্ছে কত ছট্ফট্- বলছে হেঁকে, "প্রাণটা গেল, গানটা থামাও ঝট্ পট্ ।" বাঁধন-ছেড়া মহিষ ঘোড়া পথের ধারে চিৎপাত ; ভীষ্মলোচন গাইছে তেড়ে নাইকো তাহে দৃক্পাত । চার পা তুলি জন্তুগুলি পড়্ছে বেগে মুর্ছায়, লাঙ্গুল খাড়া পাগল পারা বল্ছে বেগে, "দূর ছাই" । জলের প্রানী অবাক মানি গভীর জলে চুপ চাপ, গাছের বংশ হ'চ্ছে ধ্বংস পড়্ছে দেদার ঝুপ্ ঝাপ্ । শুন্য মাঝে ঘূর্ণা লেগে ডিগবাজি খায় পক্ষী, সবাই হাঁকে, 'আর না দাদা, গানটা থামাও লক্ষ্মী ।" গানের দাপে আকাশ কাঁপে দালান ফাটে বিল্কুল্ ভীষ্মলোচন গাইছে ভীষণ খোশ্মেজাজে দিল্ খুল্ । এক যে ছিল পাগলা ছাগল, এম্নি সেটা ওস্তাদ, গানের তালে শিং বাগিয়ে মারলে গুঁতো পশ্চাৎ । আর কোথা যায় একটি কথায় গানের মাথায় ডাণ্ডা 'বাপরে' ব'লে ভীষ্মলোচন এক্কেবারে ঠাণ্ডা । |
ছায়াবাজিআজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা-ছায়ার সাথে কুস্তি ক'রে গাত্র হ'ল ব্যথা ! ছায়া ধরার ব্যাবসা করি তাও জানোনা বুঝি, রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, হরেক রকম পুঁজি ! শিশির ভেজা সদ্য ছায়া, সকাল বেলায় তাজা ! গ্রীষ্মকালে শুক্নো ছায়া ভীষন রোদে ভাজা, চিলগুলো যায় দুপুর বেলায় আকাশ পথে ঘুরে ফাঁদ ফেলে তার ছায়ার উপর খাঁচায় রাখি পুরে । কাগের ছায়া বগের ছায়া দেখ্ছি কত ঘেঁটে- হাল্কা মেঘের পান্সে ছায়া তাও দেখেছি চেটে । কেউ জানেনা এসব কথা কেউ বোঝে না কিছু, কেউ ঘোরে না আমার মত ছায়ার পিছুপিছু । তোমরা ভাব গাছের ছায়া অম্নি লুটায় ভূঁয়ে, অম্নি শুধু ঘুমায় বুঝি শান্তা মতন শুয়ে ; আসল ব্যাপার জান্বে যদি আমার কথা শোনো, বলছি যা তা সত্যি কথা, সন্দেহ নাই কোনো । কেউ যবে তার রয় না কাছে, দেখতে নাহি পায় গাছের ছায়া ফুটফুটিয়ে এদিক ওদিক চায় । সেই সময়ে গুড়গুড়িয়ে পিছন হ'তে এসে ধামায় চেপে ধপাস্ করে ধরবে তারে ঠেসে । পাৎলা ছায়া, ফোক্লা ছায়া, ছায়া গভীর কালো- গাছের চেয়ে গাছের ছায়া সব রকমেই ভালো । গাছ গাছালি শেকড় বাকল মিথ্যে সবাই গেলে, বাপ্রে বলে পালায় ব্যামো ছায়ার ওষুধ খেলে । নিমের ছায়া ঝিঙের ছায়া তিক্ত ছায়ার পাক, যেই খাবে ভাই অঘোর ঘুমে ডাকবে তাহার নাক্ । চাঁদের আলোয় পেঁপের ছায়া ধরতে যদি পার, শুঁকলে পরে সর্দিকাশি থাকবে না আর কারো । আম্ড়া গাছের নোংরা ছায়া কাম্ড়ে যদি খায় ল্যাংড়া লোকের ঠ্যাং গজাবে সন্দেহ নাই তায় । আষাঢ় মাসের বাদ্লা দিনে বাঁচতে যদি চাও , তেঁতুল তলার তপ্ত ছায়া হপ্তা তিনেক খাও । মৌয়া গাছের মিষ্টি ছায়া 'ব্লটিং' দিয়ে শুষে ধুয়ে মুছে সাবধানেতে রাখ্ছি ঘরে পুষে ! পাক্কা নতুন টাট্কা ওষুধ এক্কেবারে দিশি- দাম রেখেছি সস্তা বড়, চোদ্দ আনা শিশি । |
ঠিকানাআরে আরে জগমোহন- এস, এস, এস-বলতে পার কোথায় থাকে আদ্যানাথের মেসো ? আদ্যানাথের নাম শোননি ? খগেনকে তো চেনো ? শ্যাম বাগ্চি খগেনেরই মামাশ্বশুর জেনো । শ্যামের জামাই কেষ্টমোহন, তার যে বাড়ীওলা- (কি যেন নাম ভুলে গেছি), তারই মামার শালা ; তারই পিশের খুড়তুতো ভাই আদ্যানাথের মেশো- লক্ষ্মী দাদা, ঠিকানা তার একটু জেনে এসো । ঠিকানা চাও ? বলছি শোন ; আমড়াতলার মোড়ে তিন-মুখো তিন রাস্তা গেছে তারি একটা ধ'রে, চলবে সিধে নাকবরাবর ডানদিকে চোখ রেখে ; চল্তে চল্তে দেখবে শেষে রাস্তা গেছে বেঁকে । দেখ্বে সেথায় ডাইনে বাঁয়ে পথ গিয়েছে কত , তারি ভিতর ঘুরবে খানিক গোলকধাঁধার মত । তারপরেতে হঠাৎ বেঁকে ডাইনে মোচড় মেরে, ফিরবে আবার বাঁয়ের দিকে তিনটে গলি ছেড়ে । তবেই আবার পড়বে এসে আমড়াতলার মোড়ে- তারপরে যাও ঝেথায় খুশী- জ্বালিও নাকো মোরে । |
0 comments: