মহাপ্রলয় : পর্ব-০২

সংঘটিত হওয়া না হওয়ার বিবেচনায় কেয়ামতের নিদর্শনাবলীকে আমরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করতে পারিঃ
(ক) যেগুলো পরিস্কারভাবে ঘটে গেছে বলে প্রমাণিত। যেমন, নবী করীম সা.এর আবির্ভাব এবং ইন্তেকাল, মিথ্যা নবুওয়াত দাবীদারদের আত্মপ্রকাশ।
(খ) যেগুলোর সূচনা হয়েছে এবং ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন, দোকানপাট কাছাকাছি হয়ে যাওয়া, পুস্তক এবং লেখালেখি অত্যাধিক বেড়ে যাওয়া, হানাহানি-খুনাখুনি সীমাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া... ইত্যাদি।
(গ) যেগুলো এখন পর্যন্ত ঘটেনি, অচিরেই ঘটবে। যেমন, অদ্ভুত প্রাণীর আত্মপ্রকাশ, দাজ্জালের আবির্ভাব ইত্যাদি।
তৃতীয় মূলনীতিঃ কেয়ামতের নিদর্শনাবলীকে বাস্তবের সাথে মেলাতে গিয়ে ভুল ব্যাখ্যার শঙ্কা।
(১) স্বল্পজ্ঞান নিয়ে কথা বলা এবং অদৃশ্যের বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি-র পরিণাম স্মরণ।
কারণ, আপনি যখন দৃঢ়চিত্তে বলবেন যে, অমুক নিদর্শনটি তমুক সালে ঘটেছে, তবে এর পক্ষে আপনার যথাযথ শরয়ী প্রমাণ থাকা আবশ্যক। কোরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতিরেকে একজন মুমিনের জন্য এ বিষয়ে নাক গলানো সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনুচিত।
(২) বৈধ বিষয় থেকে বিমুখ হয়ে অবৈধ বিষয়ে মনোনিবেশের আশঙ্কা।
কিছু মানুষ ইমাম মাহদী সম্পর্কে লিখিত গ্রন্থাদী পড়েছে। লেখকের ধার্যকৃত সেই ইমাম মাহদীর প্রতীক্ষায় প্রহর গুণতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ ইমাম মাহদীর পক্ষে বৃহত্তম যুদ্ধে শরীক হতে এখন থেকেই ঘোড়া-তরবারী কিনে রেখে দিয়েছে। কেউ আবার -দাজ্জাল আবির্ভাব কাছিয়ে গেছে ভয়ে বিয়ে শাদী এবং ঘর নির্মাণের প্ল্যান মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে।
(৩) কখনো কখনো এ সকল বিষয়ে বাড়াবাড়ি -আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি মিথ্যারোপের মত জঘন্য বিষয়কে উস্কিয়ে দেয়।
মনে করুন নিশ্চিতভাবে প্রচার করা হল যে, এই লোকটি-ই ইমাম মাহদী। কিছুদিন পর দেখা গেল যে, সে মাহদী নয়। তাহলে ইমাম মাহদী সম্পর্কে হাদিসগুলোকে-ই তো এক কথায় সে অস্বীকার করে বসল।
এ সকল বিষয়ে মুখের চেয়ে চিন্তাশক্তিকে-ই আমাদের বেশি কাজে লাগাতে হবে।


* * *
কেয়ামতের নিদর্শনাবলী
মানে কি?
‘নিদর্শন-’ এমন কিছু বস্তুকে বুঝায়, যা নির্ধারিত বিষয়ের আগমন-সংকেত দেয়। কেয়ামতের নিদর্শন বলতে ঐ সকল সংকেত উদ্দেশ্য, যা কেয়ামত ঘনিয়ে আসার ইঙ্গিত বহন করে।
‘কেয়ামত’-’ হচ্ছে ঐ মহাপ্রলয়, যার প্রেক্ষিতে পৃথিবীর সমাপ্তি ঘটবে এবং সমস্ত সৃষ্টজীব মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে।
আরবীতে কেয়ামতকে ‘-‘الساعة-’ বলা হয়, যার অর্থ- মুহূর্ত। কারণ, কেয়ামত মুহূর্তের মধ্যে সংঘটিত হয়ে যাবে। এক নিনাদে সকল কিছুর প্রাণহানি ঘটবে।



* * *
কেয়ামতের নিদর্শনাবলীর
প্রকারভেদ
কেয়ামতের নিদর্শন-সমূহ দু’-ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম ভাগঃ ক্ষুদ্রতম নিদর্শন। এটা আবার দুই প্রকারঃ
(ক) দূরবর্তী নিদর্শন।
অর্থাৎ যে সকল নিদর্শন প্রকাশ হয়ে অতিবাহিত হয়ে গেছে। কেয়ামত থেকে বহু দূরে হওয়ার দরুন এগুলো ছোট নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত। যেমন,
o শেষনবী হযরত মুহাম্মদ সা.এর আবির্ভাব।
o চন্দ্র বিদারণ ঘটনা।
o মদীনায় বিশাল অগ্নিকুণ্ড প্রকাশ.. ইত্যাদি।

(খ) মধ্যবর্তী নিদর্শন।
অর্থাৎ যেগুলো প্রকাশ হয়েছে এবং শেষ না হয়ে দিনদিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সংখ্যা অনেক। এগুলোও ক্ষুদ্রতম নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত। যেমন,
o দাসীর গর্ভ থেকে মনিবের জন্ম।
o ঘরবাড়ী (বিল্ডিং) সুউচ্চ করতে আরবদের প্রতিযোগীতা।
o প্রায় ত্রিশ-জনের মত মিথ্যা নবুওয়ত দাবীকারী-র আত্মপ্রকাশ.. ইত্যাদি।
দ্বিতীয় ভাগঃ বৃহত্তম নিদর্শন।
অর্থাৎ যেগুলো ধারাবাহিক প্রকাশ হলে পরক্ষণে-ই কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। এর সংখ্যা প্রায় দশটি।
হযরত হুযায়ফা রা. বলেনঃ “আমরা পরস্পর আলাপ-রত ছিলাম, নবী করীম সা. এসে জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা কি আলোচনা করছিলে? সবাই বলল- কেয়ামত প্রসঙ্গে। তখন নবীজী বলতে লাগলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না তোমরা দশটি (বৃহত্তম) নিদর্শন প্রত্যক্ষ করঃ
(১) ধোঁয়া (ধূম্র)
(২) দাজ্জাল
(৩) অদ্ভুত প্রাণী
(৪) পশ্চিম দিগন্তে প্রভাতের সূর্যোদয়
(৫) মরিয়ম-তনয় ঈসা-র পৃথিবীতে প্রত্যাগমণ
(৬) ইয়াজূজ-মাজূজের উদ্ভব
তিনটি ভূমিধ্বস
(৭) প্রাচ্যে ভূমিধ্বস
(৮) পাশ্চাত্যে ভূমিধ্বস
(৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস
(১০) এবং সবশেষ ইয়েমেন থেকে উত্থিত হাশরের ময়দানের দিকে তাড়নাকারী বিশাল অগ্নি।

কতিপয় বর্ণনা-য় ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ, কাবা শরীফ ধ্বংস এবং মানুষের বক্ষ থেকে কুরআনুল কারীম উঠিয়ে নেয়া-র কথাও উল্লেখ হয়েছে।



* * *
ক্ষুদ্রতম নিদর্শন-সমূহ
প্রথম ভাগঃ যে গুলো ঘটে অতিবাহিত হয়ে গেছে-
(১) শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব
(২) নবী মুহাম্মদ সা.এর ইন্তেকাল
(৩) চন্দ্র বিদারণ ঘটনা
(৪) সাহাবা যুগের অবসান
(৫) বাইতুল মাকদিস (জেরুজালেম) বিজয়
(৬) ব্যাপক প্রাণহানি (ছাগ-ব্যাধি সদৃশ এক মহামারীতে)
(৭) একের পর এক ফেতনার আবির্ভাব
(৮) স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আবিস্কার
(৯) মুসলমানদের আভ্যন্তরীণ “সিফফীন” যুদ্ধের বাস্তব প্রতিফলন
(১০) ভ্রষ্ট খারেজী সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ
(১১) মিথ্যা নবুওয়াত দাবীদারদের আত্মপ্রকাশ
(১২) শান্তি, নিরাপত্তা এবং সচ্ছলতার জয়-জয়কার
(১৩) হেজায ভূমিতে বিশাল অগ্নি প্রকাশ
(১৪) তুর্কীদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ
(১৫) চাবুকে আঘাতকারী অত্যাচারী ব্যক্তিবর্গের আবির্ভাব
(১৬) হানাহানি, সংঘাত এবং ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ
(১৭) মানুষের হৃদয় থেকে -আমানতদারী তথা বিশ্বস্ততার বিদায়
(১৮) পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতির পদাংক অনুসরণ
(১৯) দাসীর গর্ভ থেকে মনিবের জন্ম গ্রহণ
(২০) স্বল্প কাপড় পরিহিত নগ্ন মহিলাদের আত্মপ্রকাশ
(২১) সুউচ্চ বাড়ীঘর নির্মাণে -নগ্নপদ আরব্য রাখালদের প্রতিযোগিতা
(২২) ব্যক্তি-বিশেষে সালাম প্রদান
(২৩) বাণিজ্য (বিজনেস) ব্যাপক আকার ধারণ
(২৪) স্বামীর সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসায় স্ত্রীর অংশগ্রহণ
(২৫) সারা বাজারে মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ীর প্রভাব
(২৬) ব্যাপকহারে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান
(২৭) ব্যাপকহারে সত্য সাক্ষ্য গোপন
(২৮) (দ্বীন সম্পর্কে) মূর্খতা -ব্যাপক আকার ধারণ
(২৯) ব্যয়কুণ্ঠতা ও কার্পণ্যতা ব্যাপক আকার ধারণ
(৩০) ব্যাপকহারে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করণ
(৩১) প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার
(৩২) অশ্লীলতা ব্যাপক আকার ধারণ
(৩৩) বিশ্বস্তকে বিশ্বাসঘাতক এবং ঘাতককে বিশ্বস্ত জ্ঞান
(৩৪) মর্যাদাবান ব্যক্তিদের বিলুপ্তি এবং অধীনস্থতা প্রকাশ
(৩৫) সম্পদ-অর্জনে হালাল হারাম বিবেচনার বিলুপ্তি
(৩৬) যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ জ্ঞান
(৩৭) আমানতের বস্তুকে খরচের বস্তু জ্ঞান
(৩৮) যাকাত আদায়কে জরিমানা জ্ঞান
(৩৯) আল্লাহর জ্ঞান ছেড়ে পার্থিব জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ
(৪০) মায়ের অবাধ্য হয়ে স্ত্রীকে সন্তুষ্টকরণ
(৪১) জন্মদাতা পিতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বন্ধু-বান্ধবকে কাছে আনয়ন
(৪২) আল্লাহর ঘর মসজিদে উচ্চ-স্বরে হৈ হুল্লোড়
(৪৩) গোত্রীয় সম্প্রদায়ে পাপিষ্ঠদের নেতৃত্ব দান
(৪৪) জাতির নেতৃত্বে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিদের আগমন
(৪৫) আক্রমণের ভয়ে মানুষকে সম্মান দেখানো
(৪৬) মেয়েদের সাথে অবাধ মেলামেশা বৈধ জ্ঞান
(৪৭) রেশমী কাপড়ের ব্যাপক ব্যবহার
(৪৮) মদ্যপান হালাল জ্ঞান
(৪৯) গান-বাদ্য ও নর্তকীর নৃত্য বৈধ জ্ঞান
(৫০) ফেতনার আধিক্যে মানুষের মৃত্যু কামনা
(৫১) সকালে মুমিন থাকবে বিকালে কাফের হয়ে যাবে -এমন কালের আগমন
(৫২) মসজিদগুলোকে অধিক সুসজ্জিত করার প্রতিযোগিতা
(৫৩) ঘরবাড়ী -ডিজাইন এবং রকমারি কারুকার্য করণ
(৫৪) অধিক হারে আকাশ থেকে বজ্র বর্ষণ
(৫৫) ব্যাপকহারে লেখালেখি এবং পুস্তক প্রকাশ
(৫৬) বাক-জাদুতে সম্পদ উপার্জন এবং চাঁপাবাজি প্রতিযোগিতা
(৫৭) কুরআন ছেড়ে অন্যান্য গ্রন্থাদীর প্রচার প্রসার
(৫৮) জ্ঞানী এবং দ্বীনের বাহকদের অভাব এবং কুরআন পাঠকের প্রভাব
(৫৯) ছোট ও স্বল্পজ্ঞানীদের কাছে এলেম অন্বেষণ
(৬০) আকস্মিক মৃত্যুর হার বৃদ্ধি
(৬১) নির্বোধ লোকদের নেতৃত্ব
(৬২) দ্রুত গতিতে সময় পার
(৬৩) বড় বিষয়ে নিচু লোকদের বাক-যুদ্ধ
(৬৪) দুনিয়ার সবচে সৌভাগ্যশীল ব্যক্তি- লুকা’ বিন লুকা’
(৬৫) মসজিদকে -যাতায়াত ও পারাপারের পথ হিসেবে ব্যবহার
(৬৬) মহরের মূল্য-বৃদ্ধি অতঃপর হ্রাস
(৬৭) অশ্বের মূল্য-বৃদ্ধি অতঃপর হ্রাস
(৬৮) বাজার ও দোকানপাট নিকটবর্তী হয়ে যাওয়া
(৬৯) মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সকল বিধর্মী রাষ্ট্রের একক অবস্থান
(৭০) নামাযের ইমামতিতে মুসল্লীদের ধাক্কাধাক্কি।
(৭১) মুমিনের সত্য স্বপ্ন
(৭২) মিথ্যা ব্যাপক আকার ধারণ
(৭৩) পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ প্রকাশ
(৭৪) ব্যাপকহারে ভূ-কম্পন সৃষ্টি
(৭৫) নারী জাতির আধিক্য
(৭৬) পুরুষ হ্রাস
(৭৭) অশ্লীলতা ও নোংরামি ব্যাপক ও খোলাখোলি
(৭৮) কোরআন পড়ে বিনিময় গ্রহণ
(৭৯) ব্যাপকহারে মানুষের দেহে মাংসলতা ও স্থূলতা বৃদ্ধি
(৮০) কামনা ছাড়াই সাক্ষ্য দিতে রাজী -লোকদের আত্মপ্রকাশ
(৮১) মানত করে পূর্ণ করে না -ব্যক্তিদের আত্মপ্রকাশ
(৮২) সমাজের উচ্চপদস্থ লোক কর্তৃক গরিবদের মালসম্পদ কৌশলে লুট
(৮৩) আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বাস্তবায়ন পরিত্যাগ
(৮৪) রোমান (খৃষ্টান) আধিক্য এবং আরব (মুসলিম) হ্রাস।

দ্বিতীয় ভাগঃ যে সকল নিদর্শন এখন পর্যন্ত ঘটেনি-
(৮৫) মানুষের হাতে হাতে প্রচুর ধন-সম্পদ
(৮৬) ভূমির আভ্যন্তরীণ খনিজ সম্পদ প্রকাশ
(৮৭) রূপ-বিকৃতির ঘটনা বৃদ্ধি
(৮৮) ভূমিধ্বস
(৮৯) অপবাদ প্রবণতা বৃদ্ধি
(৯০) এমন বৃষ্টি, যা সকল জনপদকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে
(৯১) ফসলহীন বৃষ্টি (বৃষ্টি হলেও ফসলে বরকত হবে না)
(৯২) সকল আরব দেশে ছড়িয়ে যাবে -এমন ফেতনা
(৯৩) মুসলমানদের সাহায্যে বৃক্ষকুলের কথন
(৯৪) মুসলমানদের সাহায্যে পাথরের কথন
(৯৫) ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সর্বশেষ যুদ্ধ
(৯৬) (ইরাকের) ফুরাত নদীতে স্বর্ণের খনি উন্মোচন
(৯৭) হারামে লিপ্ত হও, নয় বিদায় হও!’
(৯৮) আরব উপদ্বীপ সবুজ শ্যামল পরিবেশ এবং নদীনালায় পূর্ণ
(৯৯) “আহলাছ”-” এর ফেতনা প্রকাশ
(১০০) “সচ্ছলতা”-র” ফেতনা প্রকাশ
(১০১) “অন্ধকার-” ফেতনার আবির্ভাব
(১০২) একটি মাত্র সেজদা সারা দুনিয়া অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’তা লাভ
(১০৩) চন্দ্র-স্ফীতি
(১০৪) সকল মুসলমান শামে হিজরত করবে’ -এমন কালের আগমন
(১০৫) মুসলমান এবং রোমান (খৃষ্টান)দের মধ্যে বৃহত্তম যুদ্ধ
(১০৬) মুসলমানদের কনষ্ট্যান্টিনোপল (বর্তমান তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল) বিজয়। (সেনাপতি মুহাম্মদ ফাতেহ’-র নেতৃত্বে ইসলামের প্রথামিক যুগে একবার বিজয় হয়েছিল। তবে শেষ জমানায় ইমাম মাহদীর বাহিনী পূণরায় তা বিজয় করবে)
(১০৭) মীরাছ (ত্যাজ্য সম্পদ) বন্টনের সুযোগ থাকবে না
(১০৮) গণিমত (যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ) নিয়ে আনন্দ উল্লাসের সুযোগ থাকবে না
(১০৯) তীর-তলোয়ার এবং অশ্বের যুগ পুনঃ প্রত্যাবর্তন
(১১০) বাইতুল মাকদিসের আশপাশে (জেরুজালেমে) জনবসতি বৃদ্ধি
(১১১) বিনাশের সম্মুখীন হয়ে মদীনা -বসতি ও আগন্তুক শূন্য
(১১২) মদীনা থেকে সকল কাফের-মুনাফিকের নির্বাসন
(১১৩) পর্বতমালা-র স্থানচ্যুতি
(১১৪) ‘কাহতান-’ গোত্র থেকে এক মহান মাণ্যবর ব্যক্তির আবির্ভাব
(১১৫) ‘জাহজাহ-’ নামক ব্যক্তির আত্মপ্রকাশ
(১১৬) চতুষ্পদ জন্তু এবং জড়বস্তুর সাথে মানুষের বাক্যালাপ
(১১৭) লাঠির অগ্রভাগের সাথে মানুষের বাক্যালাপ
(১১৮) জুতার ফিতার সাথে মানুষের বাক্যালাপ
(১১৯) ঘরে কি হচ্ছে.. ঊরুর পেশি মানুষকে এর সংবাদ প্রদান
(১২০) কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে সকল মুমিনের মৃত্যু
(১২১) কাগজের পাতা এবং মানুষের অন্তর থেকে কুরআন উত্তোলন
(১২২) কাবা ঘরের দিকে (ইমাম মাহদীর বিরুদ্ধে) যুদ্ধ করতে আসা বিশাল নামধারী মুসলিম বাহিনী-র মাটির নিচে ধ্বস।
(১২৩) আল্লাহর ঘরের দিকে মানুষের হজ্ব ত্যাগ
(১২৪) কতিপয় আরব গোত্র মূর্তি পূজায় পুনঃ প্রত্যাবর্তন
(১২৫) কুরায়েশ বংশের বিলুপ্তি
(১২৬) একজন কালো হাবশী (বর্তমান ইথিউপিয়া) লোকের হাতে কাবা ঘর ধ্বংস
(১২৭) মুমিনদের রূহ ছাড়িয়ে নিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুবাতাস প্রেরণ
(১২৮) মক্কা নগরীর ভবনগুলো আকাশ-সম উঁচু করে নির্মাণ
(১২৯) পরবর্তী মুসলমান কর্তৃক পূর্ববর্তী মুসলমানদের গালমন্দ-করণ
(১৩০) নিত্যনতুন অত্যাধুনিক যান বাহন (গাড়ী, বাস, ট্রেন, প্লেন ইত্যাদি) আবিস্কার
(১৩১) ইমাম মাহদীর আবির্ভাব।


* * *







কেয়ামতের
ক্ষুদ্রতম নিদর্শন

ভূমিকা

পূর্বে-ই আলোচিত হয়েছে যে, কেয়ামতের কিছু নিদর্শন ক্ষুদ্রতম আর কিছু বৃহত্তম। এতদুভয়ের পার্থক্য করতে গেলে বলতে হবে যে, বৃহত্তম নিদর্শনাবলী প্রকাশের পরপরই কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। ভূ-পৃষ্ঠে কেয়ামতের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। সবাই তখন তা অনুভব করতে পারবে। আর ক্ষুদ্রতম নিদর্শনাবলী কেয়ামতের যথেষ্ট দূরবর্তী কাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে। স্থানে স্থানে এগুলোর প্রকাশ ও বিকাশ ঘটছে। অনেকে টের পাচ্ছে, অনেকে অলসতার বস্ত্র গায়ে গভীর নিদ্রায় অচেতন রয়েছে।
এই পরিচ্ছেদে কোরআন-হাদিসের আলোকে ক্ষুদ্রতম নিদর্শনাবলী নিয়ে বিস্তর আলোচনা-গবেষণা হবে। পাশাপাশি হাদিসের বর্ণনা-সূত্র সবল না দুর্বল, তা নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
(১)
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন
নবী করীম সা.এর ভাষ্য মতে- শেষনবী হিসেবে দুনিয়াতে তাঁর আগমন-ই কেয়ামতের প্রথম ক্ষুদ্রতম নিদর্শন।
হযরত ছাহল বিন সা’দ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি নবী করীম সা.কে দেখেছি- তিনি তর্জনী এবং মধ্যমাঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করে বলছেন- “আমার এবং কেয়ামতের মধ্যে এই দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তী ফাকা জায়গার ন্যায় ব্যবধান।”-” (বুখারী-মুসলিম)
অন্যত্র এরশাদ করেন- “কেয়ামতের প্রথম বাতাসে-ই আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।”-” (মুস্তাদরাকে হাকিম)
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন- “স্বয়ং নবীজী সা.-ই হচ্ছেন কেয়ামতের প্রথম নিদর্শন। কারণ, তিনি শেষনবী, শেষ কালের নবী। উনাকে প্রেরণের মাধ্যমে নবী আগমনের দ্বার চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। কেয়ামত অবধি আর কোন নবী পৃথিবীতে আসবেন না।
(২)
নবী মুহাম্মদ সা. এর ইন্তেকাল
নবী করীম সা.এর ইন্তেকাল -কেয়ামতের প্রাথমিক ক্ষুদ্রতম নিদর্শনাবলীর অন্যতম। প্রখ্যাত সাহাবী আওফ বিন মালেক রা.এর বর্ণনায়- “তাবুক যুদ্ধ চলাকালে একদা আমি নবী করীম সা.এর কাছে আসলাম, তিনি তখন পশমের তৈরি একটি তাবুতে (বসা) ছিলেন। আমাকে দেখে বলতে লাগলেন- “ছয়টি বিষয় আঙ্গুল দিয়ে গুণে রাখ! (কেয়ামতের নিদর্শন-স্বরূপ)
১) আমার ইন্তেকাল
২) বাইতুল মাকদিস বিজয়
৩) ছাগ-ব্যাধি সদৃশ এক প্রকার মহামারীতে তোমাদের ব্যাপক প্রাণহানি
৪) ধন সম্পদ বৃদ্ধি, এমনকি একশত দিনার দিতে চাইলে-ও প্রস্তাবিত ব্যক্তি ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠবে। (অর্থাৎ মানুষের হাতে হাতে টাকা-পয়সার জয়-জয়কার হবে। একশ-দু’শ কারো চোখেই পড়বে না, সবাই লাখ-কোটির চিন্তায় মত্ত থাকবে)।
৫) এমন ফেতনা, যা আরবের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে
৬) তোমাদের এবং রূমকদের (বর্তমান ইউরোপ-আমেরিকা) মাঝে একটি শান্তিচুক্তি সাক্ষরিত হবে। অতঃপর রূমকরা চুক্তি ভঙ্গ করে আশি-টি ঝাণ্ডাতলে সমবেত হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে। প্রতিটি ঝাণ্ডার অধীনে তাদের বার হাজার করে সৈন্য থাকবে।”-” (বুখারী)
নবী করীম সা.এর ইন্তেকালের মাধ্যমে-ই সবচে’ বড় ধাক্কাটি মুসলমানদের অনুভূত হয়। কেয়ামতের চিরন্তন নিদর্শন হয়ে লাখো সাহাবীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। উনার ইন্তেকালে ওহী আগমনের দ্বার চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। নানান ফেতনা মুসলমানদের গ্রাস করতে থাকে। আরবের লোকেরা ইসলাম ছেড়ে পৌত্তলিকা-য় ফিরে যায়। আল্লাহর অপার রহমতে সকল ফেতনা ও বাধার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে মুসলমানগণ আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নে সক্ষম হন।
(৩)
চন্দ্র বিদারণ

আল্লাহ তা’লা বলেন- “কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু।-” (সূরা ক্বামার ১-২)
হাফেয ইবনে কাছীর রহ. লিখেন- “সবল সূত্রে বর্ণিত একাধিক হাদিসে ঘটনাটি প্রমাণিত। সাহাবায়ে কেরাম এবং সকল ইমাম-উলামা এ ব্যাপারে একমত। ঘটনাটি নবী করীম সা.এর অলৌকিক মু’-জেযা সমূহের অন্যতম।
আনাছ বিন মালিক রা. বলেন- “মক্কাবাসী নবীজী-র দাওয়াত সত্যতা প্রমাণে কোন নিদর্শন দাবী করলে নবীজী তৎক্ষণাৎ চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করে দেখান।-” (বুখারী-মুসলিম)
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. বলেন- “একদা আমরা নবী করীম সা.এর সাথে মিনা প্রান্তরে ছিলাম। হঠাৎ চন্দ্র দু-ভাগ হয়ে গেল। এক ভাগ পাহাড়ের পেছনে চলে গেল, অপর ভাগ ও-পাশের পাহাড়ের পেছনে চলে গেল। নবী করীম সা. আমাদের লক্ষ করে বললেন- ভাল করে দেখে নাও!” (বুখারী-মুসলিম)
ইবনে আব্বাস রা. বলেন- “একদা মক্কার মুশরেক সম্প্রদায় নবী করীম সা.এর কাছে এসে বলতে লাগল- তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে আমাদের সামনে চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখাও! এক খণ্ড আবু কুবাইস পর্বতে, অপর খণ্ড কুআইকাআন পর্বতে নিয়ে আস! রাতটি ছিল পূর্ণিমার। মুশরেকদের কথা শুনে নবীজী আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এক খণ্ড আবু কুবাইস পর্বতে, অপর খণ্ড কুআইকাআন পর্বতের ওপারে গিয়ে পতিত হল। নবী করীম সা. আমাদেরকে লক্ষ্য করে বলছিলেন- “ভাল করে দেখে নাও!” (رواه أبو نعيم في دلائل النبوة)
(৪)
সাহাবা যুগের অবসান

নবীর পর সৃষ্টির সেরা মানব জাতি হচ্ছেন সাহাবায়ে কেরাম। আবূ মূছা রা. বর্ণিত হাদিসে নবী করীম সা. বলেন- “তারকারাজি -আসমানের নিরাপত্তা প্রহরী। তারাকারাজি বিলুপ্ত হলে আকাশের অন্তিম ঘনিয়ে আসবে। তদ্রূপ আমার সাথীদের জন্য আমি হলাম নিরাপত্তা প্রহরী। আমি চলে গেলে সাহাবাদের অন্তিম ঘনিয়ে আসবে। সাহাবাগণ আমার উম্মতের নিরাপত্তা প্রহরী। সাহাবা যুগের অবসান হলে উম্মতের অন্তিম ঘনিয়ে আসবে।-” (মুসলিম)
উপরোক্ত হাদিসেঃ
১) সাহাবা যুগের অবসানকে দু’টি নিদর্শনের সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে, তারকারাজি বিলুপ্ত হওয়া, উল্কা অবতীর্ণ হওয়া, নবী করীম সা.এর ইন্তেকাল।
২) অপর হাদিসে “সৎ নিষ্ঠাবান ব্যক্তিগণ একের পর এক বিদায় হয়ে যাবেন, সবশেষে দুশ্চরিত্র ব্যক্তিদের উপর কেয়ামত আপতিত হবে।”
(৫)
মুসলমানদের -বাইতুল মাকদিস (জেরুজালেম) বিজয়

নবী করীম সা.এর আগমনকালে বাইতুল মাকদিস সম্পূর্ণ রূমক খ্রিষ্টানদের অধিকারে ছিল। রূম ছিল তখনকার প্রতিষ্ঠিত পরাশক্তি। জীবদ্দশায় নবীজী মুসলমানদেরকে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের সুসংবাদ দেন এবং একে কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন বলেও আখ্যায়িত করেন। উপরে বর্ণিত আওফ বিন মালেক রা.-এর হাদিসে নবীজী ছয়টি নিদর্শনের মধ্যে “বাইতুল মাকদিস বিজয়” কথাটিও উল্লেখ করেন।
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মুমেনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর যুগে (১৬ হিজরী-৬৩৭ ইং) বাইতুল মাকদিস বিজয় হয়। সকল নবীর প্রত্যাবর্তন-স্থল খ্যাত এ ভূমিকে মুসলমানগণ কুফুরীর নোংরামী থেকে পবিত্র করেন।
ইসলামের ইতিহাসে দু’-বার বাইতুল মাকদিস বিজয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথমবার উমর বিন খাত্তার রা.-এর যুগে। দ্বিতীয়বার- আইয়ূবী শাসনামলে। সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহ. ৫৮৩ হিজরী - ১১৮৭ ইং সনে পুনরায় তা বিজয় করেন।
অচিরেই একদল নিষ্ঠাবান মুসলমানের নেতৃত্বে বাইতুল মাকদিস আবারো বিজয় হবে। এমনকি পাথর ও বৃক্ষকুল প্রতিটি মুসলমানকে ডেকে বলতে থাকবে- “ওহে আল্লাহর বান্দা মুসলিম! এদিকে এসো! আমার পেছনে ইহুদী লুকিয়েছে, তাকে হত্যা কর!” (মুসলিম শরীফ)
বাইতুল মাকদিস এবং ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের সর্বশেষ যুদ্ধ সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা আসবে ইনশাল্লাহ।
(৬)
ছাগ-ব্যাধি সদৃশ এক মহামারীতে ব্যাপক প্রাণহানি

প্লেগ বা মহামারী জাতিয় বড় ধরনের কোন সংক্রমণ-শীল ব্যাধি ছড়ানোর ফলে ব্যাপক প্রাণনাশ ঘটবে। দলে দলে মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হবে।
বর্ণিত আছে, ‘আমওয়াছ’-’ মহামারীতে এ-রকম ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছিল। শরীরের কোন স্থানে ফোলে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভূত হত, দেখতেই দেখতেই আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত।
‘আমওয়াছ-’ ফিলিস্তীনে জেরুজালেমের নিকটবর্তী একটি বসতির নাম।
আওফ বিন মালেক রা. বর্ণিত হাদিসে ছয়টি নিদর্শনের মধ্যে এটিও অন্যতম।
উমর বিন খাত্তাব রা.এর শাসনামলে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের দুই বৎসর পর ১৮ হিজরীতে ‘আমওয়াছ’ মহামারীর ঘটনা ঘটে। পঞ্চাশ হাজারের মত মুসলমান সেখানে মারা যায়। মুয়ায বিন জাবাল, আবু উবাইদা, শুরাহবিল বিন হাছানা, ফযল বিন আব্বাস বিন আব্দিল মুত্তালিব রা.-এর মত উচ্চপদস্থ সাহাবী সেখানে ইন্তেকাল করেন।
ছাগলের নাক বেয়ে রক্ত বা পানির মত কিছু প্রবাহিত হওয়ার ফলে এক প্রকার রোগের সৃষ্টি হয়, এ ধরনের রোগাক্রান্ত সব ছাগলই দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এ জন্যই ছাগলের ঐ ব্যাধির সাথে সেই মহামারীর তুলনা করা হয়েছে। মানুষের দেহের কোথাও ফোলে গিয়ে সেখান থেকে রক্ত বা পানি জাতিয় কিছু প্রবাহিত হতে থাকে। দেখতে দেখতেই আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যু পথের যাত্রী হয়ে যায়।
(৭)
নানান ফেতনার দ্রুত আবির্ভাব

বর্তমান কালে হাজারো ফেতনা মুসলমানদেরকে ঘিরে রেখেছে। প্রতিদিন ফেতনাগুলো রঙ-বেরঙ-য়ের চেহারায় নতুন রূপ নিয়ে আভিভূত হচ্ছে।
প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, ম্যাগাজিন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ফলে চোখের ফেতনা ব্যাপক-আকার ধারণ করেছে। টেলিফোন, মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিদিন কত রকমের নিত্যনতুন ভিডিও অভাবনীয় ডিজাইনে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এহেন মুহূর্তে আল্লাহর ভয়ে যে ব্যক্তি এ সকল ফেতনা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে, অবশ্যই আল্লাহ তা’লা তার অন্তরে ঈমানের মধুরতা সৃষ্টি করে দেবেন।
ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য মালের ফেতনা। আজকাল সুদ, ঘুষ, মদ ও হারাম পণ্য ব্যাপক হওয়ার ফলে দ্রুত মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা ছড়িয়ে পড়েছে।
হারাম পণ্য বক্ষকের দোয়া আল্লাহ কখনোই কবুল করেন না। পরকালে তার জন্য কঠিন শাস্তির ধমকি রয়েছে।
পুরুষ-মহিলা আজকাল একে অপরের সাথে তাল মিলিয়ে হারাম পোশাকের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে।
প্রতিটি ঈমানদারকে এগুলো থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. এরশাদ করেন- “অন্ধকার রাত্রির ন্যায় -ফেতনা আচ্ছন্ন হওয়ার পূর্বেই তোমরা দ্রুত নেক আমল করে ফেলো। তখন মানুষ সকালে মুমিন থাকবে, বিকালে কাফের হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভের আশায় নিজের ঈমানকে সে বিক্রি করে দেবে।-” (মুসলিম)
হাদিসের মর্মার্থঃ
চন্দ্রিমা নয়; বরং অমাবস্যার অন্ধকারের ন্যায় কালো ফেতনা একের পর এক প্রকাশ হতে থাকবে। না বুঝেই মানুষ ফেতনায় পতিত হয়ে যাবে। এমন কাল আসার পূর্বেই নবীজী উম্মতকে বেশি বেশি নেক আমল করে ফেলার আদেশ দিচ্ছেন।
এ ফেতনার সবচে’ ভয়াবহ দিক হচ্ছে, মানুষ তখন সকালে মুমিন থাকবে, বিকালে কাফের হয়ে যাবে। মুহূর্তের মধ্যে মানুষ নিজের অজান্তে ধর্মহীন হয়ে পড়বে। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন)


(৮)
স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আবিস্কার

লাখো ফেতনার ধারক-বাহক হয়ে পনের হাজারের-ও বেশি টিভি চ্যানেল বর্তমানে পৃথিবীর আকাশে ঢেও খেলছে। অমাবস্যার চেয়েও আঁধার-কালো আকৃতিতে পৃথিবীতে আজ ফেতনাসমূহ বর্ষিত হচ্ছে। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বর্তমান স্যাটেলাইটের ফেতনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
হুযায়ফা রা. বলেন- “অচিরেই আকাশ থেকে অনিষ্টকর বস্তু বর্ষিত হবে, এমনকি তা জনশূন্য সুদূর মরু প্রান্তরে-ও পৌঁছবে।-”
হাদিসে ব্যবহৃত- السماء (আকাশ) বলতে মাথার উপর থেকে নিয়ে আসমান পর্যন্ত পুরো মহাশূন্যকেই বুঝায়। আরবী ডিকশনারীগুলোতে তাই উল্লেখ রয়েছে।
আকাশে স্থাপিত প্রায় অর্ধশত স্যাটেলাইট ষ্টেশন থেকে প্রতি সেকেন্ডে লাখো ফেতনা টিভির পর্দা বেয়ে পৃথিবীতে নামছে। বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার জনক ডিশ এন্টেনাকে যদি সুদূর মরু প্রান্তরে-ও বসিয়ে দেয়া হয়, সহজে-ই সেখানে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। লোকালয় তো বটেই, আজকাল জনমানবহীন মরুভূমিও ফেতনার শঙ্কামুক্ত নয়।
(৯)
‘জঙ্গে সিফফীন-’ মুসলমানদের মধ্যকার সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ

কেয়ামতের নিদর্শনবাহী অনেক যুদ্ধ-বিগ্রহের ব্যাপারে নবী করীম সা. ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তন্মধ্যে এক-ই কালেমার পতাকাবাহী দু’-টি মুসলিম সেনাদলের মধ্যকার “সিফফীন” যুদ্ধের কথা একটু আলাদা করেই বলেছেন। উসমান বিন আফফান রা.-এর হত্যা-ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্বের ফলে প্রখ্যাত সাহাবীদ্বয় আলী এবং মুআবিয়া রা.-এর মধ্যে ৩৬ হিজরী সনে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়, যা কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন।
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. এরশাদ করেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না একই দাবীর প্রেক্ষিতে মুসলমানদের দু’টি বিশাল বাহিনী তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়।”-” (বুখারী-মুসলিম)

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম