মহাপ্রলয় : পর্ব-১২ (পশ্চিমে সূর্যোদয় ও অন্যান্য)

বৃহত্তম নিদর্শন – (৯)


পশ্চিম দিগন্তে প্রভাতের সূর্যোদয়



ভূমিকা


কেয়ামত সন্নিকটে আসার বড় নিদর্শন হচ্ছে, মহাকাশ ব্যবস্থাপনার আকস্মিক পরিবর্তন।
প্রভাতে ঘুম থেকে উঠে মানুষ পূর্বদিগন্তে সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় থাকবে। কিন্তু পূর্বদিগন্তে নয়; পশ্চিম দিগন্তে সূর্যোদয় হবে। তখন-ই তওবার দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

পশ্চিম দিগন্তে সূর্যোদয়ের ব্যাপারে কোরআনের আয়াত
আল্লাহ পাক বলেন- “তারা শুধু এ বিষয়ের দিকে চেয়ে আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতা আগমন করবে কিংবা আপনার পালনকর্তা আগমন করবেন অথবা আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে। যেদিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে, সেদিন এমন কোন ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপন তার জন্যে ফলপ্রসূ হবে না, যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোনরূপ সৎকর্ম করেনি। আপনি বলে দিনঃ তোমরা পথের দিকে চেয়ে থাক, আমরা পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম।” (সূরা আন‘আম-১৫৮)
পশ্চিম দিগন্তে সূর্যোদয়ের ব্যাপারে হাদিস
o আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “তিনটি বৃহৎ নিদর্শন, প্রকাশ হলে -পূর্বে থেকে ঈমান না এনে থাকলে বা কোন সৎকর্ম না করে থাকলে কারো ঈমান তখন উপকারে আসবে নাঃ ১) পশ্চিম দিগন্তে সূর্যোদয় ২) দাজ্জাল ৩) অদ্ভুত প্রাণী।” (মুসলিম)
তওবার দরজা বন্ধ হওয়ার তাৎপর্যঃ মানুষের ঈমান অনেকাংশেই অদৃশ্য বিষয়াবলীর উপর নির্ভরশীল। সুতরাং পশ্চিম দিগন্তে সূর্যোদয় হলে গেলে ঈমান তখন চাক্ষুষ হয়ে যাবে, সকলেই তখন কেয়ামতের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। তখন আর ঈমান অদৃশ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সমুদ্রের মাঝখানে ডুবে যাওয়ার প্রাক্কালে ফেরাউন-ও ঈমানের দাবী করেছিল। কিন্তু অগ্রাহ্য হয়েছে।
o আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “পশ্চিম দিগন্তে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না। পশ্চিম দিগন্তে সূর্যোদয় হলে গেলে সকল মানুষ একবাক্যে ঈমান নিয়ে আসবে। কিন্তু পূর্ব থেকে ঈমান না এনে থাকলে কারো ঈমান সেদিন গ্রাহ্য হবে না। দু’জন ব্যক্তি কাপড়ের দাম করতে থাকবে, ক্রয়-বিক্রয় এবং ভাজ করার আগেই কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে। ঊটের দুধ দোহন করে বাড়ী ফিরবে, পান করার আগেই কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে। ঊটের আস্তাবলে খাবার দেবে, খাওয়া শুরুর পূর্বেই কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে। খাবারের গ্রাস মুখে উঠাবে, গলদ গড়নের পূর্বেই কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে।”
o আবু যর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “তোমরা কি জান- সূর্য প্রতিদিন কোথায় গিয়ে থামে!? সবাই বলল- আল্লাহ ও তাঁর রাসূল-ই ভাল জানেন! বললেন- সূর্য চলতে থাকে, চলতে চলতে আরশের নিচে নিজ গন্তব্যে গিয়ে সেজদায় পড়ে যায়। এভাবে সেজদায় পড়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত তাকে বলা হয়, উঠ! যে পথ দিয়ে এসেছিলে, সে পথ ধরে ফিরে যাও! অতঃপর সূর্য নিজ কক্ষপথ দিয়ে পুন-উদিত হয়। পরদিন আবার সূর্য নিজ গন্তব্যে গিয়ে সেজদায় পড়ে যায়। আবার তাকে নিজ কক্ষপথ ধরে ফিরে যেতে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত একদিন তাকে বলা হবে, অস্তাচল দিয়ে উদিত হও! ফলে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে উদিত হয়ে যাবে। পূর্ব থেকে ঈমান না এনে থাকলে বা সৎকর্ম না করে থাকলে কারো ঈমান সেদিন উপকারে আসবে না।
o আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “সর্বপ্রথম পশ্চিম দিগন্তে প্রভাতের সূর্যোদয় হবে। পূর্বাহ্নের প্রথম প্রহরে অদ্ভুত প্রাণী বের হবে। এতদুভয়ের একটা প্রকাশ হলে অপরটা কাছাকাছি সময়ে প্রকাশ হয়ে যাবে।” (মুসলিম)

প্রশ্নঃ এখানে প্রথম নিদর্শন প্রভাতের সূর্যোদয় বলা হয়েছে। অথচ অন্যান্য হাদিসে দাজ্জাল এবং মাহদীকে প্রথম নিদর্শন আখ্যা দেয়া হয়েছে। এতদুভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান সম্ভব?
উত্তরঃ ইবনে হাজার রহ. বলেন- “কেয়ামতের নিদর্শন সম্বলিত সকল হাদিস সামনে রাখলে বুঝা যায় যে, দাজ্জাল-ই কেয়ামতের সর্বপ্রথম বৃহৎ নিদর্শন। দাজ্জাল প্রকাশের মধ্য দিয়ে ভূ-পৃষ্ঠের সকল ব্যবস্থাপনা উলট-পালট হয়ে যাবে। ঈসা আ.-এর মৃত্যু পর্যন্ত এ পর্যায় অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে আসমানী ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন ঘটবে পশ্চিম দিগন্তে সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে। কেয়ামত শুরু না হওয়া পর্যন্ত এ পর্যায় অব্যাহত থাকবে। যেদিন সকালে পশ্চিমে সূর্যোদয় হবে, সেদিন-ই পূর্বাহ্নের প্রথম প্রহরে অদ্ভুত প্রাণী বের হবে। উপরের হাদিসে এ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।” (ফাতহুল বারী)

দ্রুত আমল করে নেয়ার তাগিদ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “ছয়টি বৃহৎ নিদর্শন প্রকাশ হওয়ার পূর্বে-ই দ্রুত আমল করে নাও! ১) পশ্চিম দিগন্তে প্রভাতের সূর্যোদয়। ২) ধূম্র ৩) দাজ্জাল ৪) অদ্ভুত প্রাণী ৫) মৃত্যু ৬) মহা প্রলয়।” (মুসলিম)
বৃহত্তম নিদর্শন – (১০)






হাশরের ময়দানের দিকে তাড়নাকারী
অগ্নি



ভূমিকা


কেয়ামতের সর্বশেষ বৃহত্তম নিদর্শন হচ্ছে, ইয়েমেন থেকে উত্থিত বিশাল অগ্নি যা মানুষকে হাশরের ময়দানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। হাশরের ময়দান হবে সম্পূর্ণ সাদা ও সমতল ভূমি। যেখানে উদ্ভিত বলতে কিছু থাকবে না।

o কি রকম হবে এই আগুন?
o কিভাবে বের হবে?
o কোত্থেকে বের হবে?
o এরপর কি ঘটবে?

হাদিসে এর বিবরণঃ
- হুযাইফা বিন উছাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা কেয়ামত প্রসঙ্গে আলোচনা করছিলাম, নবী করীম সা. এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আলোচনা করছ? বললাম- কেয়ামত প্রসঙ্গে আলোচনা করছি। বললেন, দশটি বৃহৎ নিদর্শন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে নাঃ
১) ধূম্র
২) দাজ্জাল
৩) অদ্ভুত প্রাণী
৪) পশ্চিম দিগন্তে প্রভাতের সূর্যোদয়
৫) মরিয়ম-তনয় ঈসার অবতরণ
৬) ইয়াজূজ-মাজূজের উদ্ভব
৭) ৮) ৯) তিনটি ভূ-ধ্বস। প্রাচ্যে, পাশ্চাত্যে এবং আরব উপদ্বীপে।
১০) সবশেষে ইয়েমেন থেকে উত্থিত হাশরের দিকে তাড়নাকারী অগ্নি।” (মুসলিম)
অপর বর্ণনায়- “ইয়েমেনের -আদন- এলাকার গহ্বর থেকে উত্থিত অগ্নি, যা মানুষকে হাশরের দিকে নিয়ে যাবে।” (মুসলিম)
o আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামতের পূর্বক্ষণে -হাজরামাউত- থেকে একটি অগ্নি বের হবে, যা মানুষকে হাশরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন- তখন আমরা কি করব হে আল্লাহ রাসূল! বললেন- তোমরা শামে চলে যেয়ো!” (মুসনাদে আহমদ)
o আনাছ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- “একদা আব্দুল্লাহ বিন সালাম (ইসলামপূর্ব ইহুদী পণ্ডিত) মদীনায় নবীজীর আগমনী সংবাদ পেয়ে নবীজীর কাছে আসলেন। নবীজীকে বলতে লাগলেন- আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করব, নবী ছাড়া যেগুলোর উত্তর কেউ জানে নাঃ
১) কেয়ামতের প্রথম সূচনা কি?
২) জান্নাতবাসীর প্রথম খাবার কি?
৩) সন্তান কখনো পিতা সদৃশ হয়, কখনো মাতা সদৃশ হয় -এর তাৎপর্য কি?
নবী করীম সা. উত্তরে বলতে লাগলেন- এই মাত্র জিবরীল আমাকে সব জানিয়ে গেল। আব্দুল্লাহ বললেন- ইহুদীরা একে মহাশত্রু মনে করে। নবীজী বলতে লাগলেন- “কেয়ামতের প্রথম নিদর্শন হচ্ছে সেই অগ্নি, যা মানুষকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য থেকে হাশরের দিকে নিয়ে যাবে। জান্নাতবাসীর প্রথম খাবার হচ্ছে মাছের কলিজার শ্রেষ্ঠাংশ। আর পুরুষ যখন নারীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়, তখন যার বীর্য জরায়ূতে আগে গিয়ে পৌঁছে, সন্তান তার-ই সদৃশ হয়। পুরুষের বীর্য আগে পৌঁছলে পিতা সদৃশ হয়, নারীর বীর্য আগে পৌঁছলে মাতা সদৃশ হয়। তখন আব্দুল্লাহ বলে উঠল- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, সত্যই আপনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল!!” (বুখারী)

এখানে কেয়ামতের নিদর্শন উদ্দেশ্য নয়; বরং কেয়ামতের সূচনা উদ্দেশ্য। মহা প্রলয়ের সূচনা হবে মহা অগ্নির মধ্য দিয়ে।
উল্লেখ্য- সপ্তম শতাব্দীতে মদীনার সন্নিকটে যে বিশাল অগ্নি প্রকাশিত হয়েছিল, এটি সে আগুন নয়।

যেভাবে মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মানুষকে তিনভাবে তাড়ানো হবে। কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেতে থাকবে। কেউ বাধ্য হয়ে আগুন থেকে বাঁচার লক্ষে চলতে থাকবে। একটি ঊটের উপর দু’জন, তিনজন, চারজন এমনকি দশজন করেও আরোহন করবে। অপর দলকে আগুনে তাড়াবে, বিশ্রামের সময় আগুন থেমে যাবে, রাত্রিযাপন কালে আগুন-ও পাশে (থেমে) থাকবে। মানুষের সাথে সকাল-সন্ধ্যা যাপন করবে।” (বুখারী)
আবু যর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মানুষকে তিন দলে বিভক্ত করে হাশরের মাঠে আনা হবে। কিছু স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবে। কিছু বস্ত্রাবৃত হয়ে আসবে। আর কিছু বাহনে করে আসবে। একদল- পদব্রজে (দৌড়ে) আসবে। অপরদল- ফেরেশতাগণ চেহারায় ধরে টেনে নিয়ে আসবে। এক ব্যক্তি বলল- মানুষ হেটে আসবে কেন? নবীজী বললেন- সেদিন কোন বাহন জন্তু থাকবে না, সব ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনকি মানুষ সুন্দরতর বিশাল বাগানের বিনিময়ে ছোট্ট ও দুর্বল একটি গর্দভ কিনবে। কিন্তু তাতে আরোহণ করতে পারবে না।” (নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ)

পরিশিষ্টি

আল্লাহর অপার অনুগ্রহে কিতাবটি পূর্ণ করতে পেরেছি। আল্লাহ সবাইকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দেন।
পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে সরল ও সাবলীল উপস্থাপনা বহাল রাখতে চেষ্টার কোন ত্রুটি করিনি; আশা করি পেরেছি।
হৃদয়টা আনন্দে ভরে যেত, যদি পাঠক/পাঠিকা বইটি পড়ে ছোট্ট একটি বার্তার মাধ্যমে কোন মন্তব্য, সুপরামর্শ, দিকনির্দেশনা বা দোয়া লিখে পাঠিয়ে দিতেন। সারা জীবন তার কাছে ঋনী হয়ে থাকতাম। অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করতাম।
আল্লাহ সবাইকে সরল পথে পরিচালিত করুন..!!

1 comments:

Zahid Hassan বলেছেন...

Assalamualaikum writer saheb, Allah apnar ceshta k sofolota dan koron....Ameen, apnar likhai j somosto nidorson (keyamoter)ar kotha bolechen.. bishesh kore "Dajjal", "Odvot prani", "Yajoz Majoz" oi golor kicho porichiti ba chehar kmon and character kmon janale amar bojhte ba onodhabon korte r o sohoj hoto. Allah apna k Islam er khedmot korar r o beshi toufiq dan koron. Ameen.... fi Amanillah.
Valo thakben.Dua korar somoi ama k mone rakben.
Allah Hafez..

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম