মহাপ্রলয় : পর্ব-০৬

(৮৪)
রোমক আধিক্য এবং আরব হ্রাস
রোমক বলতে বর্তমান ইউরোপ-আমেরিকা উদ্দেশ্য। আসফার বিন রূম বিন ঈসু বিন ইসহাক বিন ইবরাহীম আ.-এর নামানুসারে এদেরকে রোমক বলা হয়। হাদিসে এদেরকে “-বনুল আসফার- বলেও সম্বোধন করা হয়েছে।
মুস্তাওরাদ ফাহরী থেকে বর্ণিত, একদা তিনি আমর ইবনুল আস রা.-এর সামনে বলতে লাগলেন- কেয়ামতের পূর্বমূহূর্তে রোমক সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। আমর ইবনুল আস বললেন- ভেবে চিন্তে কথা বল! মুস্তাওরাদ বললেন- নবী করীম সা. থেকে আমি যেমন শুনেছি, তেমন-ই বলছি। তখন আমর বলতে লাগলেন- তবে এটাও শুনে রাখ! রোমকদের মধ্যে চারটি ভাল গুণ-ও রয়েছেঃ
(১) পতনের পর দ্রুত উঠে আসে
(২) দরিদ্র, মিসকীন এবং দুর্বলদের সহায়তায় তারা আগেভাগে এগিয়ে আসে
(৩) ফেতনার সময় তারা দৃঢ় অবিচল থাকে
(৪) রাজা-বাদশাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।
শেষোক্তটি সর্বোৎকৃষ্ট।-” (মুসলিম)
উম্মে শুরাইক রা. নবী করীম সা.কে বলতে শুনেছেন- “দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার লক্ষে মানুষ দূরের পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিবে। উম্মে শুরাইক বললেন- আরব-জাতি সেদিন কোথায় থাকবে হে আল্লাহর রাসূল? উত্তরে বললেন- তারা তো সেদিন যৎসামান্য..!!” (মুসলিম)
রোমকদের সংখ্যাধিক্যের ব্যাখ্যায় অনেক উলামায়ে কেরাম বলেন- ইউরোপিয়ান ভাষা (ইংরেজী) বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। আরবী ভাষার প্রতি মানুষের অনিহা সৃষ্টি হবে।
আরব-জাতির ব্যাখ্যায় কোন কোন আলেম বলেন- আরবীতে কথা বলতে জানে -সবাইকে আরবী বলা হবে। মরুভূমিতে থাকে -সবাইকে বেদুইন বলা হবে।

(৮৫)
ধন সম্পদের প্রাচুর্য
নবী করীম সা.এর যুগে মুসলমানগণ অতি কষ্টে জীবন যাপন করতেন। দুর্ভিক্ষ, অভাব-অনটন ছিল নিত্য দিনের সাথী। মাসের পর মাস চলে যেত, রাসূলের ঘরে চুলায় আগুন জ্বলত না। কৃষ্ণদ্বয় খেজুর ও পানি খেয়ে কোন মতে দিনাতিপাত করতেন।
নবী করীম সা. প্রায়ই সাহাবাদেরকে অভাব-অনটন দূর হয়ে যাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী শুনাতেন। বলতেন- “কেয়ামতের সন্নিকটে ধন সম্পদের প্রাচুর্য ঘটবে, এক পর্যায়ে যাকাত গ্রহণের লোক পাওয়া যাবে না। কাউকে যাকাত নিতে বললে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠবে।-”
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে ধন সম্পদের প্রাচুর্য ঘটে, তখন সাদাকা দেয়ার উদ্দেশ্যে কেউ কাউকে আহবান করলে সে বলবে যে, আমার কোন টাকার দরকার নেই।-” (বুখারী-মুসলিম)
আবু মুছা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “এমন এক জমানা আসবে, যখন সাদাকার স্বর্ণ নিয়ে মানুষ ঘুরাঘুরি করবে, কোন গ্রাহক পাবে না।-” (মুসলিম)
নিদর্শনটি প্রকাশ হয়েছে কি না- এ নিয়ে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছেঃ
(১) কেউ বলেছেন যে, সাহাবা যুগে অধিক পরিমাণে যুদ্ধ বিজয়ের ফলে মুসলমানদের মধ্যে ধন সম্পদের হিড়িক পড়ে যায়। পারস্য এবং রোমের সকল রত্ন-ভাণ্ডার মুসলমানদের হস্তগত হয়।
অতঃপর খলীফা উমর বিন আব্দুল আজীজের যুগেও সম্পদের প্রাচুর্য ঘটে। মুসলমানদের মধ্যে কেউ তখন সাদাকা গ্রহণে রাজী ছিল না।
(২) অনেকেই বলেছেন যে, কেয়ামতের অতি সন্নিকটে এমনটি হবে। ইমাম মাহদীর জমানায় সম্পদের আধিক্য ঘটবে। ভূ-পৃষ্ঠের সকল রত্ন-ভাণ্ডার তখন উন্মোক্ত হয়ে যাবে। দু-হাত ভরে তিনি মানুষের মাঝে স্বর্ণ-রূপা বিলি করবেন। নির্দ্বিধায় নিঃসংকোচে মানুষকে সম্পদ প্রদান করবেন।
সাঈদ আবু নাযরা রা. বলেন- আমরা জাবের রা.-এর কাছে বসা ছিলাম। তিনি বলতে লাগলেন যে, নবী করীম সা. বলেছেন- “আমার শেষ উম্মতের মাঝে একজন খলীফা হবে, নিঃসংকোচে দু-হাত ভরে সে মানুষের মাঝে সম্পদ বিলি করবে।” বললাম- খলীফা উমর বিন আব্দুল আজীজ কি সেই ব্যক্তি? জাবের রা. বললেন- না!” (মুসলিম)

(৮৬)
ভূ-পৃষ্ঠের সকল রত্ন-ভাণ্ডার উন্মোচন
ধনৈশ্বর্যের প্রাচুর্যের পাশাপাশি ভূ-পৃষ্ঠ-ও সকল খনিজ সম্পদ এবং রত্ন-ভাণ্ডার প্রকাশ করে দেবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “ভূ-পৃষ্ঠ -স্বর্ণ-রূপার সুবিশাল স্তম্ভ-সদৃশ গচ্ছিত সকল রত্ন-ভাণ্ডার উন্মোচন করে দেবে। খুনি বলবে- একে পাওয়ার জন্যই আমি খুন করেছি। সম্পর্কচ্ছেদকারী বলবে- একে পাওয়ার জন্যই আমি সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। চুর বলবে- এর জন্যই আমার হাত কাটা গেছে। এভাবেই পরস্পর ঝগড়া করতে থাকবে। কেউ কিছু নিতে পারবে না।-” (মুসলিম)

(৮৭) (৮৮) (৮৯)
ভূমিধ্বস, রূপ-বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের শাস্তি
শেষ জমানায় এ ধরনের শাস্তি কতিপয় ব্যক্তিদের উপর আবর্তিত হবে। ইমরান বিন হুছাইন রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, রূপবিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের শাস্তি ঘটবে। এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বলল- এরকম শাস্তি কখন আসবে? নবীজী বললেন- যখন গান-বাদ্য এবং অশ্লীল নর্তকীদের আবির্ভাব হবে।-”
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ হ্রাস পাওয়ার ফলে মাত্রাতিরিক্ত হারে অপরাধ-বিস্তার ঘটবে। আর তখনই উল্লেখিত শাস্তিগুলো ঘটতে থাকবে।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “শেষ জমানার উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, রূপবিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের শাস্তি আবর্তিত হবে। বললাম- সৎ মানুষ থাকতেও আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? নবীজী বললেন- অপরাধ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে তাই হবে।-” (তিরমিযী)
তকদীরে অবিশ্বাসী একদল নাস্তিক এবং কুসংস্কারী কিছু যিন্দীক-এর উপরও উপরোক্ত তিন ধরনের শাস্তি আবর্তিত হবে বলে নবী করীম সা. ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন।
নাফে’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা আমরা আব্দুল্লাহ বিন উমর রা.এর কাছে বসা ছিলাম। এক ব্যক্তি এসে বলল- অমুক (শামের একজন ব্যক্তি) আপনাকে সালাম জানিয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন উমর বললেন- শুনেছি, সে নতুন কোন কুসংস্কার আবিস্কার করেছে। যদি তাই হয়, তবে তাকে গিয়ে আমার সালাম বলবে না। নবী করীম সা.কে আমি বলতে শুনেছি- “কুসংস্কারী যিন্দীক এবং তকদীরে অবিশ্বাসী ব্যক্তিদের উপর ভূমিধ্বস এবং পাথর বর্ষণের শাস্তি আবর্তিত হবে।-” (মুসনাদে আহমদ)
অপর হাদিসে- কাবা শরীফে আশ্রিত(ইমাম মাহদী)র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসা বিশাল নামধারী মুসলিম বাহিনীকে-ও পুরোপুরি মাটির নিচে ধ্বসে দেয়া হবে।
বুকাইরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি নবী করীম সা.কে মিম্বরে দাড়িয়ে বলতে শুনেছি- “বিশাল কোন বাহিনী আশপাশে কোথাও ধ্বসে গেছে বলে যখন সংবাদ পাবে, (মনে রেখো!) তখন কেয়ামত সন্নিকটে এসে গেছে।-” (মুসনাদে আহমদ)
অর্থাৎ মদিনা-র সন্নিকটেই ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটবে। উক্ত বাহিনীর আলোচনা সামনে আসবে ইনশাল্লাহ।
পাপিষ্ঠ এবং নীরবতা অবলম্বনকারীদের উপরই এ ধরনের শাস্তি আপতিত হবে। সকল মুসলমানকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক।

(৯০)
সকল জনপদকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় -এমন বৃষ্টি
কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে -এমন বর্ষণ, যা মাটি ও পাথরে নির্মিত সকল স্থাপনা ভাসিয়ে নেবে। তবে উটের জন্য নির্মিত কাপড়ের ছোট তাঁবু নিস্তার পেয়ে যাবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না আকাশ থেকে এমন বৃষ্টি বর্ষিত হয়, যা থেকে চাদরে নির্মিত ঘর (তাঁবু) নিস্তার পেলেও পাথর নির্মিত সুবিশাল ঘরবাড়ী নিস্তার পাবে না।” (মুসনাদে আহমদ)
(৯১)
ফসলহীন অতিবৃষ্টি
কেয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে- ফসলাদি উৎপন্ন করে না -এমন প্রবল বর্ষণ।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে আকাশ থেকে অবিরাম বর্ষণ হবে, কিন্তু তা থেকে সামান্য ফসল-ও অঙ্কুরিত হবে না।” (মুসনাদে আহমদ)
কোন সন্দেহ নেই- ভূ-পৃষ্ঠের বরকত নিঃশেষ হয়ে যাওয়ায় এরকম ঘটবে। যেমনটি নবী করীম সা. বলেছেন- “বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়া দুর্ভিক্ষ নয়; বরং অবিরাম বর্ষণ সত্তেও জমিনে ফসল না ফলানো দুর্ভিক্ষ।” (মুসনাদ আহমদ)

(৯২)
পুরো আরব বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে -এমন ফেতনা
কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে- পুরো আরব বিশ্বে এমন ভয়াবহ সংঘাতের সৃষ্টি হবে, যদ্দরুন মাত্রাতিরিক্ত হত্যা-ঘটনা ঘটতে থাকবে।
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “এমন ফেতনা সৃষ্টি হবে, যা পুরো আরব বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। নিহত সকলেই জাহান্নামে যাবে। তরবারীর তুলনায় মুখের কথা তখন বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হবে।-” (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা)
পার্থিব অর্জন কিংবা ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে লড়াই করে নিহত হয়েছে বলে সকলেই জাহান্নামে যাবে।
যে কোন সংগ্রামের ক্ষেত্রে -আল্লাহর দ্বীন উঁচু করা, অত্যাচারীর পতন বা সত্যের সহায়তার নিয়ত থাকতে হবে। বিশৃঙ্খলা, সংঘাত কিংবা ক্ষমতার লোভে সংগ্রাম করলে জাহান্নাম-ই হবে তার একমাত্র ঠিকানা।
ফেতনার সময় বিধর্মীদের প্রচারিত কোন তথ্য বিশ্বাস করা কিংবা আগত তথ্যকে বিনা যাচাইয়ে অন্যের কাছে বর্ণনা করা থেকেও সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
(৯৩) (৯৪) (৯৫)
ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাথর ও বৃক্ষকুল মুসলমানদের সাহায্যে কথা বলবে
শেষ জমানায় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সর্বশেষ মরণ-যুদ্ধ সংঘটিত হবে। আল্লাহ পাক মুসলমানদেরকে মহা-বিজয় দান করবেন। ইহুদীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকবে। পাথর ও বৃক্ষকুল মুসলমানদের ডেকে বলবে- হে মুসলিম! এদিকে এসো! আমার পেছনে ইহুদী লুকিয়েছে। তাকে এসে হত্যা কর!
আল্লাহর ইচ্ছায় সব কিছুই মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এভাবেই আল্লাহ পাক মুসলমানদেরকে পুনর্বিজয় দান করবেন।
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “ইহুদীদের সাথে তোমাদের লড়াই হবে। তাদেরকে তোমরা ছত্রভঙ্গ করে দিলে পাথর ও বৃক্ষকুল তোমাদের ডেকে বলতে থাকবে- ওহে মুসিলম! আমার পেছনে ইহুদী লুকিয়েছে, এসো! একে হত্যা কর!” (বুখারী-মুসলিম)
পাথর ও বৃক্ষকুলের বাক্যালাপ -কেয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম নিদর্শন। তবে গারকাদ বৃক্ষ -ইহুদীদের রোপিত হওয়ায় কোন কথা বলবে না।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে ইহুদীদেরকে হত্যা করা হবে। কোন ইহুদী পালিয়ে -গাছ বা পাথরের পেছনে আত্মগোপন করলে সেই গাছ বা পাথর মুসলমানকে ডেকে বলতে থাকবে- ওহে মুসলিম! ওহে আল্লাহর বান্দা! আমার পেছনে ইহুদী লুকিয়েছে, এদিকে এসো! একে হত্যা কর! তবে গারকাদ বৃক্ষ একথা বলবে না। কারণ, তা ইহুদীদের বৃক্ষ।-” (মুসলিম)
হ্যাঁ...। বাস্তবেই বৃক্ষ সেদিন কথা বলবে। আল্লাহ পাক জড়বস্তুদের দিয়ে কথা বলাবেন। এটাই কেয়ামত ঘনিয়ে আসার নিদর্শন।
নাহিক বিন ছুরাইম রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মুশরেকদের সাথে তোমরা অবশ্যই যুদ্ধ করবে। তোমাদের অবশিষ্ট বাহিনী সেদিন জর্ডান নদীর তীরে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তোমরা পূর্বদিকে আর দাজ্জালবাহিনী পশ্চিম-দিকে থাকবে।-”
বর্ণনাকারী নাহিক বলেন- প্রথম যেদিন রাসূলের মুখ থেকে হাদিসটি শুনেছিলাম, সেদিন -জর্ডান কোথায়- জানতাম না।
উপরোক্ত হাদিসে নদী বলতে -জর্ডান এবং অধিকৃত ফিলিস্তীনের মধ্যবর্তী উপসাগর উদ্দেশ্য।

(৯৬)
ফুরাত নদী থেকে স্বর্ণের খনি প্রকাশ
ইরাকের বক্ষ দিয়ে প্রবাহিত নদীদ্বয়ের মধ্যে ফুরাত অন্যতম। এক সময় এতে প্রচুর পানি ছিল। এখনও আছে, তবে ক্রমেই নিম্নে চলে যাচ্ছে। নবী করীম সা. বলেছেন- ফুরাত-নদী শুকিয়ে বহন-পথ পরিবর্তন হয়ে যাবে। অতঃপর স্বর্ণের খনি উন্মোচিত হবে। সকল পরাশক্তি স্বর্ণ-দখলে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। সেখানে অজস্র লোকের মরণ হবে।
স্বর্ণের খনি প্রকাশকালে -সেখানে যাওয়া কিংবা স্বর্ণের লোভে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া থেকে নবী করীম সা. কড়া ভাষায় নিষেধ করে গেছেন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ফুরাত নদী থেকে স্বর্ণের খনি প্রকাশ হবে। স্বর্ণ দখলের লোভে সবাই সেখানে যুদ্ধ করতে থাকবে। ৯৯% যোদ্ধা-ই সেখানে নিহত হয়ে যাবে। বেঁচে থাকা প্রত্যেকেই -আমি-ই শুধু বেঁচে আছি- মনে করবে।-” (মুসলিম)
অপর বর্ণনায়- “তোমাদের মধ্যে যারা তখন বেঁচে থাকে, কেউ যেন ওখান থেকে কিছু গ্রহণ না করে।-” (বুখারী-মুসলিম)
উবাই বিন কা’ব রা. বলেন- দুনিয়ার পেছনে মানুষ সবসময় ছুটাছুটি করবে। নবী করীম সা.কে আমি বলতে শুনেছি- “অচিরেই ফুরাত নদীতে স্বর্ণের ভাণ্ডার প্রকাশ পাবে, শুনা মাত্রই সবাই সেখানে চলে যাবে। স্থানীয় লোকেরা বলবে- ব্যবস্থা না নিলে সবটুকু স্বর্ণ-ই মানুষ দখল করে নিয়ে যাবে। ফলে তারাও সেখানে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। ৯৯% যোদ্ধা-ই সেখানে নিহত হয়ে যাবে।-” (মুসলিম)
সম্ভবত বহন পথ পরিবর্তনের ফলে ফুরাত নদীর পানি কমে যাবে। এভাবে কমতে কমতে-ই হয়ত স্বর্ণের খনি প্রকাশ পাবে। মুসলমানদের মধ্যে যারাই তখন জীবিত থাকবে, তাদের উচিত- সেখানে না যাওয়া বা স্বর্ণ-দখলের কোন চেষ্টা না করা। কারণ, নবী করীম সা.-ই বলে গেছেন- ওখানে যারা যাবে, তাদের ৯৯%-ই নিহত হবে।
ফেতনাটি এখনো অপ্রকাশিত। কবে নাগাদ হবে, আল্লাহই ভাল জানেন।
ফুরাত নদীর পানি অধিকাংশ-ই তুরস্ক এবং সিরিয়া থেকে আসে। বর্তমানে তুরস্ক এবং সিরিয়া ফুরাত নদীর উপর অনেকগুলো বাঁধ স্থাপন করেছে। বড় বড় ফ্যাক্টরী নির্মাণ করেছে। ফলে পানির প্রবাহ বহুলাংশে-ই হ্রাস পেয়েছে। এটাই হয়ত পরবর্তীতে স্বর্ণ-প্রকাশে মূল ভূমিকা হিসেবে কাজ করবে।
(৯৭)
হারাম কাজ কর, নয়ত বিদায় হও
আমাদের কোম্পানীর এটাই নিয়ম, তোমার একার জন্য তো আর সংবিধান পরিবর্তন করা যাবে না। চাকুরীর ইচ্ছা থাকলে কোম্পানীর নিয়মানুসারেই কর, নয়ত বিদায় হও!
শুধু কোম্পানীই নয়; অফিস, আদালত, ব্যাংক, বিজনেস, পুলিশ, সেনবাহিনী ইত্যাদি যে কোন ডিপার্টমেন্টে-ই হালাল পন্থায় কাজ করতে যাবেন, উপরের কথাটি-ই আপনাকে শুনিয়ে দেয়া হবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে, কেয়ামতকে আমরা জোর করে ঘরের উঠানে টেনে আনতে চেষ্টা করছি। সেই সাড়ে চৌদ্দশত বৎসর আগে নবী করীম সা. বলে গেছেন, আর এখন এগুলোর বাস্তবায়ন ঘটছে। সত্যনবীর সত্য ভবিষ্যদ্বাণী, বাস্তবায়ন যে ঘটবেই।
উপরোক্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে নবী করীম সা. -হারাম কর্ম ত্যাগ করে বিদায় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেনঃ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেছেন- “এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষকে হারাম কিংবা বিদায়- কোন একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করা হবে। তোমরা যারা সেদিন বেঁচে থাকো, বিদায়কে হারামের উপর প্রাধান্য দিয়ো!” (মুসনাদে আহমদ)
এয়ারপোর্টে চাকুরী করতে হলে বুরকা পরা যাবে না- এ্যারাবিয়ান বিমানবন্দরে-ও আজকাল এই শর্তারোপ করা হচ্ছে। পুলিশে চাকুরী করতে হলে দাড়ি মুণ্ডন করতে হবে। ব্যাংকের চাকুরী বাঁচিয়ে রাখতে হলে সুদী লেনদেন অব্যাহত রাখতে হবে। এ সকল বিষয় আজ মুসলিম বিশ্বকে হেস্তনেস্ত করে ছেড়েছে।
((প্রথমবার যখন আরব কান্ট্রিতে পা রাখি, বাংলাদেশ থেকে বিমানে উঠার পর এ্যারাবিয়ান এক তরুণীকে ইংরেজদের মত শর্ট ড্রেস পরে যাত্রীদের সেবা করতে দেখি। প্রথমে চোখ পড়ার পর স্বভাবতই অবাক হয়ে যাই, একজন আরবী তরুণী এভাবে...!! পরে পেছনে গিয়ে তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, সে যা বলল, তা শুনে রীতিমত আমার মাথা ঘুরে যায়...!! সে যে একজন কোরআনের হাফেজা!! পর্দার কথা জিজ্ঞেস করলে নিজের বুরকাটি ড্রয়ার থেকে বের করে দেখিয়ে বলল- চাকুরীর সময় বুরকা পরা নিষেধ। ডিউটি শেষ হলেই বুরকা পরে নিই। _অনুবাদক))

(৯৮)
আরব উপদ্বীপ সবুজ শ্যামল পরিবেশ এবং নদীনালায় পূর্ণ হয়ে উঠবে
আরব উপদ্বীপের প্রায় ৭০% এলাকা-ই হচ্ছে তৃণ-বিহীন মরুভূমি। নবী করীম সা. বলে গেছেন- কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে আরব উপদ্বীপ বৃক্ষলতা ও নদীনালায় পূর্ণ হয়ে উঠবে। চারিদিকে গাছ-পালা, শস্য-শ্যামল ও উদ্ভিতপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, -যতক্ষণ না আরবের ভূমি বৃক্ষলতা এবং নদীতে ভরে উঠবে। -যতক্ষণ না সুদূর ইরাক থেকে মক্কা নগরী পর্যন্ত মানুষ ভ্রমণ করবে, পথিমধ্যে পথ হারানো ব্যতীত কোন ভয় থাকবে না। -যতক্ষণ না সংঘাত বেড়ে যাবে। সংঘাতের অর্থ জিজ্ঞেস করা হলে নবীজী বললেন- হত্যাযজ্ঞ।-” (মুসনাদে আহমদ)
একই বর্ণনাকারীর অপর হাদিসে নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, -যতক্ষণ না ধন-সম্পদ ছেয়ে যাবে। যাকাত দিতে গেলে গ্রহিতা পাওয়া দুস্কর হবে। -যতক্ষণ না আরব্য ভূমি বৃক্ষলতা ও নদীতে ভরে উঠবে।-” (মুসলিম)
মুয়ায বিন জাবাল রা. বলেন- তাবুক যুদ্ধের বছর আমরা নবী করীম সা.এর সাথে বের হলাম। (ভ্রমণকালে) নবীজী দুই নামাযকে একত্রে পড়তেন। জুহর-আসর এবং মাগরিব-এশা একত্রে পড়ে নিতেন। যথারীতি বের হয়ে নবীজী জুহরের নামায কিছুক্ষণ দেরী করে জুহর-আসর একত্রে পড়ে নিলেন। মাগরিবের সময় হলে মাগরিব-এশা একত্রে পড়ে নিলেন। অতঃপর বললেন- আগামীকাল ইনশাল্লাহ তোমরা তাবূকের (ঐতিহাসিক) ঝর্ণার কাছে পৌঁছে যাবে। প্রভাত-রবি উদ্ভাসিত হওয়ার আগে সেখানে পৌঁছতে পারবে না। আমি না পৌঁছা পর্যন্ত ঐ ঝর্ণার পানি তোমরা পান করো না! অতঃপর যথাসময়ে আমরা ঝর্ণার কাছে এসে পৌঁছালাম। আমাদের আগেই দু-জন এসে পৌঁছেছিল। ঝর্ণাটি জুতার ফিতার ন্যায় সরু ছিল। খুব-ই স্বল্প পানি সেখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নবীজী এসে “-তোমরা কেউ পানি স্পর্শ করেছো?” জিজ্ঞেস করলে ঐ দু’জন বলল- জ্বি হ্যাঁ..!! নবীজী তখন রাগত-স্বরে তাদেরকে কিছু কটু কথা বললেন। অতঃপর সবাই ঝর্ণা থেকে অঞ্জলি ভরে একটু একটু করে পানি এনে এক-পাত্রে জমা করলেন। নবীজী পাত্রের পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে পানিকে পুনরায় ঝর্ণার প্রবাহ-পথে রেখে দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবল স্রোতের মত পানি আসতে লাগল। আমরা সকলেই সেখান থেকে পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করলাম। অতঃপর নবী করীম সা. বললেন- ওহে মুয়ায! আয়ু থাকলে ভবিষ্যতে এই স্থানকে তুমি বাগ-বাগিচায় পূর্ণ দেখতে পাবে।-” (মুসলিম)
আবহাওয়াবীদগণ সম্প্রতি তুষারপাতের প্রবাহ আরব উপদ্বীপের দিকে ধেয়ে আসছে বলে জানান। ফলে সামনের দিনগুলোতে আরব দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি ও শীতল আবহাওয়ার সম্ভাবন রয়েছে। তাই যদি হয়, তবে কোন সন্দেহ নেই- আরব বিশ্ব সবুজ-শ্যামল পরিবেশ এবং নদীনালায় পূর্ণ হয়ে উঠবে। নিদর্শনটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। অচিরেই হবে।
কেউ কেউ বলেছেন, আরব বিশ্বের চিরাচরিত সেই ধূ ধূ মরু-চেহারা এখন আর অবশিষ্ট নেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পুরো আরব বিশ্ব আজ সবুজ শ্যামল প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বড় বড় শহর নির্মিত হয়েছে। বিশ্বের অত্যাধুনিক মহা সড়ক, মহা নগর এবং সুউচ্চ টাওয়ার এখন আরব বিশ্বে। গাড়ীতে করে আপনি পুরো আরব বিশ্ব ঘুরতে পারবেন। এটাই কেয়ামত ঘনিয়ে অন্যতম নিদর্শন।
বৃহত্তর কৃষি প্রকল্পের আওতায় তাবূক প্রান্তরে আজ বিশাল বিশাল ফলের বাগিচা গড়ে উঠেছে।

(৯৯) (১০০) (১০১)
আহলাছ, সচ্ছলতা এবং অন্ধকার ফেতনা
ভয়াবহ তিনটি ফেতনা -মুসলমানদেরকে গ্রাস করবে বলে নবী করীম সা. সতর্ক করে গেছেনঃ
আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. বলেন- “আমরা নবী করীম সা.এর দরবারে বসা ছিলাম। নবীজী অধিক হারে ফেতনাসমূহের বিবরণ শুনাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে আহলাছের ফেতনার কথা বললেন। এক ব্যক্তি বলল- হে আল্লাহর রাসূল! আহলাছের ফেতনা কি? নবীজী বললেন- পলায়ন আর যুদ্ধ-বিগ্রহের ফেতনা। অতঃপর সচ্ছলতার ফেতনা, যার ধূম্র আমার পরিবারস্থ দাবীকারী ব্যক্তির পদনিচ থেকে সৃষ্টি হবে। মনে মনে ভাববে, সে আমার খুব কাছের। অবশ্যই নয়। শুধু খোদাভীরুগণ-ই আমার বন্ধু। অতঃপর পাঁজরের হাড় যেমন নিতম্বের দিকে ঝুকে পড়ে, তেমনি সবাই একজন ব্যক্তির দিকে ঝুকে পড়বে (নেতা হিসেবে মেনে নেবে)। এরপর অন্ধকার ফেতনা। ফেতনাটি প্রতিটি মুসলমানের গালে চপেটাঘাত করবে। যখনি বলা হবে- শেষ, তখনি আরো বেড়ে যাবে। সে কালে সকালে ব্যক্তি মুমিন থাকবে আর বিকালে কাফের হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত মানুষ দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে যাবেঃ (১) ঈমানের দল, যাতে কোন কপটতা থাকবে না। (২) নেফাকের দল, যেখানে কোন ঈমান থাকবে না। এরকম ঘটতে দেখলে ঐ দিন বা পরের দিন দাজ্জাল প্রকাশের অপেক্ষা কর।-” (আবু দাউদ)
أحلاس শব্দটি حلس এর বহুবচন। উটের পিঠে কাষ্ঠের নিচে যে চাদর নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া হয়, সেটাকে আরবীতে حلس বলা হয়। সব সময় তা উটের পিঠে দেয়া থাকে। ঠিক তেমনি ফেতনাটিও সদা মানুষের সাথে লেগে থাকবে। কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না।
সচ্ছলতার ফেতনা বলতে এখানে ধনৈশ্বর্যের আধিক্য উদ্দেশ্য। প্রাচুর্যের মোহে পড়ে মানুষ নানান অপরাধে লিপ্ত হয়ে যাবে। হারাম কাজে সম্পদ ব্যয় করবে।
ধূম্র (ধোঁয়া) বলতে এখানে ফেতনার সূচনা উদ্দেশ্য। ধূম্র যেমন আগুন থেকে বের হয়ে উপরে উঠতে থাকে, ফেতনাটিও তেমন প্রকাশ হয়ে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে!!
নিতম্বের সাথে তুলনা করার অর্থ হচ্ছে- পাঁজরের হাড় যেমন ভারী নিতম্বকে সামলাতে পারে না। তেমনি বিরোধের পর মানুষ এমন একজনকে নেতা হিসেবে মেনে নেবে, স্বল্প-জ্ঞানসম্পন্ন হওয়ায় যার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী থাকবে না। বিচারব্যবস্থা পরিচালনার যোগ্যতা থাকবে না।
অন্ধকার ফেতনাটি সবার গালে চপেটাঘাত করবে। অর্থাৎ ফেতনার প্রতিক্রিয়া সবার ঘরে পৌঁছে যাবে।
মনে হচ্ছে ফেতনাটি এখনো অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। (আল্লাহই ভাল জানেন)
আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন।

(১০২)
একটি-মাত্র সেজদা সারা দুনিয়া অপেক্ষা উত্তম হবে
ঈসা বিন মারিয়াম আ.-এর জমানায় বরকত-পূর্ণ পরিবেশ বিরাজিত হবে। সকল ফেতনার চির অবসান হবে। সর্ব-দিক দিয়ে রহমত নাযিল হবে। মেঘমালা বৃষ্টি বর্ষণ করবে। জমিন তার ফসল-ভরা যৌবন প্রকাশ করবে। সাপ-বিচ্চু থেকে বিষ উঠিয়ে নেয়া হবে। সে কালে একটি সেজদা-ই সারা দুনিয়া অপেক্ষা উত্তম হবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! অচিরেই ঈসা বিন মারয়াম -ন্যায়বান শাসকরূপে তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন। ক্রোশকে ভেঙ্গে দেবেন। শুকর হত্যা করবেন। জিযয়া(টেক্স)-র বিধান রহিত করবেন। তাঁর জমানায় চারিদিকে ধন-সম্পদের জয়-জয়কার হবে। একটি মাত্র সেজদা তখন সারা দুনিয়া অপেক্ষা উত্তম হবে।-”
অতঃপর আবু হুরায়রা নিম্নোক্ত আয়াতটুকু পাঠ করলেনঃ “আর আহলে-কিতাব (খৃষ্টান)দের মধ্যে যত শ্রেণী রয়েছে তারা সবাই ঈমান আনবে ঈসার উপর তাদের মৃত্যুর পূর্বে।-” (সূরা নিসা-১৫৯)
জিযয়া (টেক্স)র বিধান রহিত করার তাৎপর্য হল- ঈসা আ.-এর জমানায় অন্য সকল ধর্ম নিঃশেষ হয়ে যাবে। ইহুদীবাদ মুসলমানদের হাতে নিশ্চিহ্ন হবে। খৃষ্ট সম্প্রদায় ঈসা আ.-এর উপর ঈমান এনে পূর্ণ মুসলমান হয়ে যাবে। বিধর্মী না থাকায় টেক্সের বিধান নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে।
ঈসা আ.-এর জমানায় নামায এবং অন্যান্য এবাদতের দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাবে, নও-মুসলিমরা নব উদ্যমে আল্লাহর উপাসনায় লিপ্ত হবে। কেয়ামত সন্নিকটে জেনে কেউ কাউকে কষ্ট দেবে না। কেউ কারো অধিকার হরণ করবে না। নিরবে নিশ্চিন্তে প্রশান্ত মনে সবাই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে উদ্যমী হবে।

(১০৩)
চন্দ্র-স্ফীতি
স্বভাবত আরবী মাসের প্রথম দিনে চন্দ্রের জন্ম হয়। অতঃপর আস্তে আস্তে বড় হয়ে অর্ধমাসে গিয়ে পূর্ণিমার আকার ধারণ করে। আবার কমতে কমতে মাসের শেষ দিকে এসে নিঃশেষ হয়ে যায়।
কেয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম নিদর্শন হল- চন্দ্র স্ফীত হয়ে যাবে। নব উদিত প্রথম দিনের চাঁদ দেখে মানুষ বলতে থাকবে- “আরে.. এতো দুই দিনের চাঁদ মনে হচ্ছে..!”
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “চন্দ্র-স্ফীতি -কেয়ামত ঘনিয়ে আসার নিদর্শন। এক দিনের চাঁদ দেখে মানুষ “-“এতো দুই দিনের চাঁদ মনে হচ্ছে..!” বলতে থাকবে।-”
নিদর্শনটি এখনো অপ্রকাশিত মনে হচ্ছে। তবে যারা নিয়মিত চাঁদের খোঁজখবর রাখেন, তারাই বিষয়টি ভাল বুঝবেন।

(১০৪)
সকল মুসলমান শামে চলে যাবে
নবী করীম সা.এর যুগে -বর্তমান লেবানন, জর্ডান এবং অধিকৃত ফিলিস্তীন সমন্বিত রাষ্ট্রকে একবাক্যে -শাম- বলা হত। শাম নবীদের ভূমি, শাম পুনরুত্থানের ভূমি, শামের মুসলমানদের জন্য আভিজাত্যের কথা বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম সা. বলেন- “শামবাসী যখন বিনাশের সম্মুখীন হবে, তখন উম্মতের জন্য কোন কল্যাণ বাকী থাকবে না। আমার উম্মতের একদল লোক সর্বদায় বিজয়ী থাকবে, কেয়ামত অবধি বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কোন-ই ক্ষতি করতে পারবে না।-” (তিরমিযী)
এ কারণেই নবীজী শামে বসবাসের ফযীলত বর্ণনা করেছেনঃ আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “বিশ্বযুদ্ধকালে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠাংশ শামের দামেস্ক শহরের আল-গুতা প্রান্তরে থাকবে।-” (মুসনাদে আহমদ)
হাদিসে বিশ্বযুদ্ধ বলতে মুসলমান এবং খৃষ্টানদের মধ্যকার সর্বশেষ বৃহৎ যুদ্ধ উদ্দেশ্য।
বর্তমানে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের প্রসিদ্ধ একটি শহরের নাম হচ্ছে আল-গুতা।
বিশ্বযুদ্ধটি ইমাম মাহদীর কিছু পূর্বে, মাহদীর জমানায় বা তৎপর-বর্তী কালেও সংঘটিত হতে পারে। এক সাহাবী হিজরতের পরামর্শ চাইলে নবীজী শামের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন।
বাহয বিন হাকীম, তার পিতা-পিতামহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কোন দিকে হিজরতের আদেশ দিবেন? নবীজী বললেন- ওই দিকে!! (হাত দিয়ে শামের দিকে ইশারা করলেন)” (তিরমিযী)
কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে অধিকাংশ মুসলমান হিজরত করে শামে চলে যাবে।
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “এমন এক কাল আসবে, যখন সকল মুমিন-মুসলমান শামে গিয়ে মিলিত হবে।-” (ইবনে আবি শাইবা)

(১০৫) (১০৬)
মুসলমান এবং খৃষ্টানদের মধ্যে বৃহৎ যুদ্ধ, কনষ্ট্যান্টিপোল বিজয়
মুসলমানদের সাথে খৃষ্ট-সংঘাতের ইতিহাস অনেক চড়াই উৎরাইয়ের সম্মুখীন হয়েছে। কখনো শান্তিচুক্তি, কখনো যুদ্ধ, কখনো সংঘাত আবার কখনো আপোস। সম্প্রতি খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের বাহ্যিক স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করলেও অদূর ভবিষ্যতে এক যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। নবী করীম সা. একে বিশ্বযুদ্ধ বলে ব্যক্ত করেছেন। সে যুদ্ধে মুসলমানদেরকে আল্লাহ মহা-বিজয় দান করবেন। অতঃপর মুসলিম বাহিনী -কনষ্ট্যান্টিনোপল অভিমুখে রওয়ানা হবে। শুধু -আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে তারা পুরো কনষ্ট্যান্টিনোপল বিজয় করে নেবে। এর পরপর-ই দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
মুয়ায বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “জেরুজালেমে স্থাপত্য গড়ে ওঠা মদীনা বিনাশের নিদর্শন। মদীনার বিনাশ মানে বিশ্বযুদ্ধের সূচনা। বিশ্বযুদ্ধের সূচনা মানে কনষ্ট্যান্টিপোল বিজয়। কনষ্ট্যান্টিনোপল বিজয় মানে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ।-” (আবু দাউদ, তিরমিযী)
নবী করীম সা. বলেন- “তোমরা -রোমক (খৃষ্টানদের) সাথে এক শান্তিচুক্তি করবে। অতঃপর তোমরা এবং খৃষ্ট সম্প্রদায় মিলে পেছনের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করবে। সেখানে বিজয়ী হয়ে তোমরা প্রচুর যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদের অধিকারী হবে। গণিমত বন্টন শেষে প্রত্যাবর্তন কালে উঁচু টিলাবিশিষ্ট উপত্যকায় এসে পৌঁছুলে -খৃষ্টানদের একজন তখন ক্রোশ উঁচু করে “-ক্রোশের বিজয় হয়েছে- বলতে থাকবে। এক মুসলমান তখন রাগান্বিত হয়ে ক্রোশকে ভেঙ্গে দেবে। খৃষ্ট সম্প্রদায় তখন চুক্তি ভঙ্গ করে মহাযুদ্ধের জন্য সমবেত হয়ে যাবে।-”
অপর বর্ণনায়- “মুসলমান-ও তখন অস্ত্র বের করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। মুসলমানদের ঐ দলটিকে আল্লাহ শাহাদতের সুমহান মর্যাদায় ভূষিত করবেন।-” (আবু দাউদ)
পরিস্থিতির বিস্তারিত বিবরণ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না রোমক (খৃষ্ট) সম্প্রদায় আ’মাক (মতান্তরে দাবেক) প্রান্তরে (শামের প্রসিদ্ধ হালব শহরের সন্নিকটে একটি স্থান, সেখানে-ই মহাযুদ্ধটি সংঘটিত হবে) এসে একত্রিত হবে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দামেস্ক শহর থেকে একদল শ্রেষ্ঠ মুসলমান বের হবে। উভয় বাহিনী মুখোমুখি হলে রোমক সম্প্রদায় বলবে- তোমরা সরে যাও! ধর্মত্যাগীদেরকে আমরা হত্যা করতে এসেছি (বুঝা গেল, এর পূর্বে মুসলিম-খৃষ্ট আরো কতিপয় যুদ্ধ সংঘটিত হবে। মুসলমান সেখানে বিজয়ী হয়ে কিছু খৃষ্টানকে বন্দি করে নিয়ে আসবে। পরবর্তীতে বন্দি খৃষ্টানরা মুসলমান হয়ে মুজাহিদদের কাতারে শামিল হয়ে যাবে) মুসলমান তখন বলবে- (দ্বীনী) ভাইদেরকে আমরা কস্মিনকালেও তোমাদের হাতে তুলে দেব না। ফলে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। এক-তৃতীয়াংশ (মুসলমান) পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাবে, এদের তওবা আল্লাহ কখনো কবুল করবেন না। এক-তৃতীয়াংশ নিহত হয়ে যাবে, আল্লাহর কাছে তারা শ্রেষ্ঠ শহীদের মর্যাদা পাবে। অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশকে আল্লাহ মহা-বিজয় দান করবেন, কখনোই ফেতনা তাদের গ্রাস করতে পারবে না। সামনে এগিয়ে তারা কনষ্ট্যান্টিনোপল বিজয় করবে। তরবারীগুলো বৃক্ষের সাথে ঝুলিয়ে যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ বন্টন করতে থাকবে, হঠাৎ শয়তান তাদের মাঝে ঘোষণা করবে- “দাজ্জাল তোমাদের পরিবারগুলোকে ধাওয়া করেছে-”। ঘোষণাটি মিথ্যে হলেও মুসলমানগণ -সকল যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ মাটিতে ফেলে দিয়ে স্বদেশ অভিমুখে রওয়ানা হবে। তারা যখন শামে ফিরে আসবে, তখন ঠিক-ই দাজ্জাল বের হয়ে আসবে।-”
অপর বর্ণনায়- “দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য মুসলমান সারিবদ্ধ হতে থাকবে। হঠাৎ ফজরের নামাযের ইকামত-কালে ঈসা বিন মারিয়াম আসমান থেকে অবতরণ করবেন।-” (মুসলিম)
যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ”
নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে ত্যাজ্য ও যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ বন্টনের সুযোগ থাকবে না। অতঃপর শামের দিকে হাতে ইশারা করে বলতে লাগলেন- “ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে শত্রুসেনা সমবেত হবে। মুসলমান-ও তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হবে।” ইবনে মাসঊদ শত্রুসেনা বলতে রোমক উদ্দেশ্য করেছেন। প্রচণ্ড যুদ্ধ বেধে যাবে। কেউ-ই ফিরে যেতে প্রস্তুত নয়। মুসলমান আত্মঘাতী বাহিনী পাঠাবে, শর্ত করবে- বিজয় না নিয়ে ফিরে আসা যাবে না। রাত অবধি যুদ্ধ করতে করতে বাহিনী শেষ হয়ে যাবে। কোন পক্ষেরই বিজয় হবে না। দ্বিতীয় দিন মুসলমান আরেকদল আত্মঘাতী বাহিনী পাঠাবে। তারাও সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যাবে। এবার-ও কোন পক্ষের বিজয় হবে না। তৃতীয় দিন-ও এরকম হবে। চতুর্থ দিন সাকুল্য মুসলিম বাহিনী আল্লাহর নাম নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে। তুমুল যুদ্ধ হবে, ইতিপূর্বে কখনো এমন যুদ্ধ ঘটেনি। শত্রুবাহিনীকে আল্লাহ পরাজিত করবেন। নিহতের সংখ্যা এত অধিক হবে যে, উড়ন্ত পাখি -লাশের দীর্ঘ স্তুপ অতিক্রম করতে গিয়ে নিজেই লাশ হয়ে পড়ে যাবে। একশ সন্তানের জনক মাত্র একজনকে ফিরে পাবে, নিরানব্বই জন-ই সেখানে মারা যাবে। এহেন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ কিংবা ত্যাজ্য-সম্পদ নিয়ে আনন্দ উল্লাসের সুযোগ থাকবে না। মুসলিম বাহিনী ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে বিশ্রামে থাকবে, হঠাৎ মহা-বিপদের ধ্বনি ভেসে আসবে- “দাজ্জাল তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের ধাওয়া করছে।-” শুনা মাত্র-ই সকল সম্পদ মাটিতে ফেলে দিয়ে মুসলিম বাহিনী স্বদেশ অভিমুখে যাত্রা করবে। পরিস্থিতি যাচাই করতে দশজন অশ্বারোহীকে তারা অগ্রে প্রেরণ করবে। নবীজী বলেন- “আমি ঐ দশজনকে তাদের নাম, পিতার নাম এমনকি অশ্বের ধরন সহ চিনি। তারা-ই সে কালের সর্বশ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী।-” (মুসনাদে আহমদ, মুসলিম)
যুদ্ধকালে মুসলিম বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি থাকবে আল-গুতা প্রান্তরে।
আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “বিশ্বযুদ্ধের সময় মুসলিম বাহিনী শামের প্রসিদ্ধ শহর দামেস্কের আল-গুতা প্রান্তরে অবস্থান করবে।-”
কনষ্ট্যান্টিনোপল বিজয়ে মুসলমানদের যুদ্ধ করতে হবে না। ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়েই তারা শহরের প্রধান স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে দেবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “একপ্রান্ত জলে, অপর প্রান্ত স্থলে- এমন শহরের কথা তোমরা শুনেছ? সবাই বলল- হ্যাঁ..! নবীজী বললেন- কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে বনী ইসহাকের সত্তর হাজার মুসলমান সেখানে যুদ্ধ করবে। তীর-তরবারী ব্যবহার করবে না; বরং -“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার-” ধ্বনির সাথে সাথে শহরের এক প্রান্ত ধ্বসে পড়বে (ছাউর বিন ইয়াযিদ বলেন- ঠিক স্মরণে নেই আমার, সম্ভবত স্থলভাগের শহরটি প্রথমে ধ্বসে পড়বে)। দ্বিতীয়বার -“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার-” ধ্বনি দিলে অপর প্রান্ত ধ্বসে পড়বে। তৃতীয়বার -“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার-” উচ্চারণ করলে শহরের প্রধান ফটক উন্মোক্ত হয়ে যাবে। মুসলিম বাহিনী শহরে প্রবেশ করে যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ বন্টনে ব্যস্ত থাকবে, এমন সময় বিপদের ধ্বনি ভেসে আসবে- “দাজ্জাল বের হয়ে গেছে”। সংবাদ শুনা মাত্রই তারা সবকিছু মাটিতে ফেলে রেখে চলে আসবে।-” (মুসলিম)
মুসলিম শরীফের একক বর্ণনায় “-বনী ইসহাক- শব্দ এসেছে। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে “-বনী ইসমাঈল”। কারণ, হাদিসে আরব মুসলিম বাহিনী উদ্দেশ্য। শহর বলতে এখানে কনষ্ট্যান্টিনোপল (বর্তমান তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল) বুঝানো হয়েছে।
বিশ্বযুদ্ধে যে সকল মুসলিম রোমকদের সাথে যুদ্ধ করবে, তারাই পরে গিয়ে শহরটি বিজয় করবে।

(১০৭) (১০৮)
ত্যাজ্য ও যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ বন্টনের সুযোগ থাকবে না
শেষ জমানায় খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের অধিক সংঘাতের ফলে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে ত্যাজ্য ও যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ বন্টনের সুযোগ থাকবে না।-” কথাটি বলার সময় তিনি শামের দিকে হাতে ইশারা করেছিলেন।
বিস্তারিত বিবরণ পূর্বোক্ত হাদিসে গত হয়েছে।

(১০৯)
তীর-তলোয়ার এবং অশ্বের যুগ পুনঃ প্রত্যাবর্তন
পূর্বোক্ত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, “মুসলিম বাহিনী ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে বিশ্রামে থাকবে, হঠাৎ মহা বিপদের ধ্বনি ভেসে আসবে- “দাজ্জাল তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের ধাওয়া করছে।” শুনা মাত্রই সকল সম্পদ মাটিতে ফেলে দিয়ে মুসলিম বাহিনী স্বদেশ অভিমুখে প্রত্যাবর্তন করবে। পরিস্থিতি যাচাই করতে দশজন অশ্বারোহীকে তারা অগ্রে প্রেরণ করবে। নবীজী বলেন- “আমি ঐ দশজনকে তাদের নাম, পিতার নাম এমনকি অশ্বের ধরন সহ চিনি। তারা-ই সে কালের সর্বশ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী।-”

(১১০) (১১১)
জনবসতিতে জেরুজালেম আবাদ, বসতি শূন্য হয়ে মদীনার বিনাশ
মুয়ায বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “জেরুজালেমে স্থাপত্য গড়ে ওঠা মদীনা বিনাশের নিদর্শন। মদীনার বিনাশ মানে বিশ্বযুদ্ধের সূচনা। বিশ্বযুদ্ধের সূচনা মানে কনষ্ট্যান্টিপোল বিজয়। কনষ্ট্যান্টিনোপল বিজয় মানে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ।” অতঃপর নবীজী সাহাবীর ঘাড়ে হাত মেরে বললেন- তুমি এখানে বসে আছ যেমন সত্য, এগুলোর বাস্তবায়ন তেমন-ই সত্য।-” (আবু দাউদ)
বিনাশ বলতে এখানে -মদীনায় বসতি ও পর্যটক শূন্যতা উদ্দেশ্য।
অপর বর্ণনায় নবী করীম সা. বলেন- “বিশ্বযুদ্ধ, কনষ্ট্যান্টিনোপল বিজয় এবং দাজ্জাল প্রকাশ। তিনটি ঘটনা সাত মাস অন্তরন্তর ঘটে যাবে।-” (তিরমিযী)
একটা শেষ হতে না হতেই অপরটা শুরু হয়ে যাবে। একটার সাথে অপরটা উতপ্রোতভাবে জড়িত। জেরুজালেম তথা বাইতুল মাকদিসের আশপাশে প্রচুর জনবসিত গড়ে ওঠবে। এর পরপরই মদীনা -অধিবাসী শূন্য হয়ে যাবে। বর্তমানে আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি, মদীনায় দিন দিন বসতি কমে যাচ্ছে। উন্নত শহরগুলোর দিকে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে।
হাদিসে এসেছে- “সর্বোত্তম নগরী হওয়া সত্তেও মানুষ মদীনা ছেড়ে চলে যাবে। এমনকি মদীনার মসজিদে কুকুর-শেয়াল ঢুকে পেশাব করবে, পরিস্কার করার কেউ থাকবে না। সাহাবায়ে কেরাম বললেন- তাহলে মদীনার ফসল-ফলাদী কে ভোগ করবে হে আল্লাহর রাসূল? নবীজী বললেন- পশু পাখি।-” (মুআত্তা মালিক রহ.)
জেরুজালেম আবাদ বলতে শেষ জমানায় সেখানে মুসলিম খেলাফত প্রতিষ্ঠা-ও উদ্দেশ্য হতে পারে। যেমনটি আব্দুল্লাহ বিন হাওয়ালা রা. এর হাদিসে এসেছেঃ
তিনি বলেন- নবী করীম সা. আমাদেরকে পদব্রজে যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ আনতে পাঠালেন। আমরা কিছু না পেয়ে খালী হাতে ফিরে এলাম। নবীজী আমাদের চেহারায় কষ্টের ছাপ দেখে দাড়িয়ে বলতে লাগলেন- হে আল্লাহ! এদের সার্বিক দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করবেন না! আমি অপারগ। এদের নিজেদের উপর-ও করবেন না! তারা-ও অপরাগ। সর্বসাধারণের উপর-ও ন্যস্ত করবেন না! আত্মসাৎ করে ফেলবে! অতঃপর নবীজী আমার মাথার উপর হাত রেখে বলতে লাগলেন- ওহে ইবনে হাওয়ালা! জেরুজালেমে যখন খেলাফত প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাবে, (মনে রেখো!) তখন ভূ-কম্পন, বিপদাপদ এবং বৃহৎ নিদর্শনগুলো কাছিয়ে গেছে। কেয়ামত তখন তোমার মাথা থেকে আমার হাত অপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী।-” (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ)
অর্থাৎ কোরআনের শাসন চালু হওয়ার পর সকল মুসলমান বাইতুল মাকদিসে চলে যাবে। শামের দিকে মুসলমানদের হিজরতের বিষয়টি পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। এভাবেই মদীনা বসতি-শূন্য হয়ে পড়বে।

(১১২)
মদীনা থেকে সকল মুনাফিক নির্বাসন
মদীনা বিনাশের সাথে সাথে সকল মুনাফিক-ও মদীনা থেকে বের হয়ে যাবে। নবী করীম সা.-এর যুগে মদীনা মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ইসলামের প্রধান রাজধানী হওয়ায় সময়ের সাথে সাথে সেখানে জনবসতি বাড়তে থাকে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ মদীনার দিকে হিজরত করতে থাকে। কিন্তু কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে মদীনা থেকে মানুষের আগ্রহ উঠে যাবে। কেউ আর মদীনায় আসতে চাইবে না।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “এমন এক সময় আসবে, যখন মদীনার লোক নিকটাত্মীয়কে ডেকে বলতে থাকবে- চল! উন্নত শহরে চলে যাই! আধুনিক নগরীতে গিয়ে বসবাস করি!- অথচ মদীনা-ই তাদের জন্য সর্বোত্তম স্থান ছিল। আল্লাহর শপথ করে বলছি- মদীনা-বিরাগী হয়ে যখন-ই এখান থেকে কেউ চলে যাবে, আল্লাহ তার চেয়ে উত্তম মানুষ দিয়ে মদীনা আবাদ করে দেবেন। মদীনা একটি পবিত্র ভূমি, কপট বিশ্বাসীদের এখানে কোন স্থান নেই। কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না মদীনা সকল অনিষ্টকে বের করে দেবে, ঠিক যেমন কামারের হাপর লোহার আবর্জনাকে বের করে দেয়।-” (মুসলিম)
বর্ণিত আছে, উমর বিন আব্দুল আজীজ রহ. যখন মদীনা থেকে বের হয়ে যান, তখন মুযাহিমের (কৃতদাস) দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন- “ওহে মুযাহিম! মদীনা কি আমাদের নির্বাসনে দিয়ে দিল?!!”
মদীনা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে বসতি করলে-ই মুনাফিক হয়ে যাবে, এমনটি আবশ্যক নয়। সাহাবায়ে কেরাম-ও দাওয়াত এবং জিহাদের লক্ষে মদীনা ছেড়ে গিয়েছিলেন।
বসবাসের উপযোগী সত্তেও অধিবাসীগণ মদীনা ছেড়ে দেবেন। অথচ মদীনার ফসল-ফলাদী বরকতময়। বসবাস স্বাচ্ছন্দ্যকর। কিন্তু শেষ জমানায় নানান ফেতনা মানুষকে মদীনা ছাড়তে বাধ্য করবে। এক পর্যায়ে সকল ঘরবাড়ী বিরান পড়ে থাকবে। শেয়াল-কুকুর মসজিদে ঢুকে মিম্বরে পেশাব করবে, পরিস্কার করার কেউ থাকবে না।

(১১৩)
পর্বতমালা স্থানচ্যুত হয়ে পড়বে
পৃথিবীকে প্রতিনিয়ত বসবাস উপযোগী রাখতে আল্লাহ পাক স্থানে স্থানে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে পাহাড়-পর্বত স্থানচ্যুত হয়ে পড়বে।
(১) অধিক হারে বজ্র এবং ভূমিধ্বসের ফলে বাস্তবেই হয়ত এমন ঘটবে।
(২) পাহাড় কেটে ঘরবাড়ী এবং বড় বড় ফ্যাক্টরী নির্মাণের দরুন পর্বতের স্থানচ্যুতি ঘটবে। পর্বত-বহুল দেশগুলোতে বর্তমানে এমনটি-ই ঘটছে।
(৩) অথবা প্রস্তর -খণ্ডাকারে ভাঙতে ভাঙতে এক সময় পর্বত বিলীন হয়ে যাবে।
ছামুরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না পর্বতমালার স্থানচ্যুতি ঘটে। অদেখা বড় বিপদাপদ তখন তোমরা স্বচক্ষেই দেখতে পাবে।-” (তাবারানী)

(১১৪)
ক্বাহতান- গোত্র থেকে এক মান্যবর ব্যক্তির আবির্ভাব
কেয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, আরবের প্রসিদ্ধ “ক্বাহতান” গোত্র থেকে এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির আবির্ভাব হবে, একবাক্যে সবাই তাকে নেতা বলে মেনে নেবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ক্বাহতান গোত্র থেকে একজন নেতার আবির্ভাব হবে। লাঠি দিয়ে সকল মানুষকে সে চালিয়ে নেবে।-” (বুখারী-মুসলিম)
লাঠি দিয়ে চালানোর অর্থ হচ্ছে, তার নেতৃত্বে সবাই সরল পথে চলবে। একবাক্যে তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেবে। এখানে কেবল-ই উদাহরণ দেয়া হয়েছে; লাঠি ব্যবহার উদ্দেশ্য নয়। বুঝাই যায়- খুব-ই কঠোর হবে।
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত অপর বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, তিনি সৎ ও নিষ্ঠাবান হবেন।
তিনি স্বাধীন হবেন, “জাহজাহ-”এর মত কৃতদাস নয়।

(১১৫)
“জাহজাহ-” নামক ব্যক্তির আবির্ভাব
শেষ জমানায় নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের অধিকারী অনেক ব্যক্তির-ই আবির্ভাব ঘটবে। তন্মধ্যে কয়েকজনের নাম নবীজী বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। জাহজাহ তাদের অন্যতম।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “দিন-রাত শেষ হবে না, যতক্ষণ না “জাহজাহ” নামক এক কৃতদাস নেতৃত্বে আসবে।”
অপর বর্ণনায়- “জাহজাল-”

(১১৬) (১১৭) (১১৮) (১১৯)
চতুষ্পদ জন্তু, জড়বস্তু, চাবুকের অগ্রভাগ, জুতার ফিতা মানুষের সাথে কথা বলবে,
বাড়ীতে কি হচ্ছে- ঊরুর মাংস মানুষকে এর সংবাদ দেবে
আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেছেন- ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না চতুষ্পদ জন্তু, চাবুকের অগ্রভাগ এবং জুতার ফিতা -মানুষের সাথে কথা বলবে। বাড়ীতে পরিবার কি করছে, ঊরুর মাংস মানুষকে এর সংবাদ দেবে।-” (তিরমিযী)
নিদর্শনগুলো এখন পর্যন্ত অপ্রকাশিত।
কতিপয় গবেষক এর মাধ্যমে সম্প্রাতিক বহুল ব্যবহৃত বাণী প্রেরকযন্ত্র -মোবাইল, টেলিফোন এবং ইলেক্ট্রনিক চিপ উদ্দেশ্য বলেছেন।
চতুষ্পদ জন্তুর সাথে কথা বলার ঘটনা নবীযুগেই ঘটেছিলঃ
আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- মদীনার পাশে জনৈক বেদুইন মেষপাল চরাচ্ছিল। হঠাৎ এক শিয়াল মেষপালের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে একটি ছাগল ছানা ধরে ফেলে। বেদুইন দৌড়ে বহু চেষ্টা করে ছানাটি শেয়ালের হাত থেকে ছুড়িয়ে নেয়। বেদুইন গোস্বায় শেয়ালকে অনেক গালমন্দ করতে থাকে। কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে শেয়াল এক স্থানে এসে লেজ বিছিয়ে বসে বলতে থাকে- আল্লাহর দেয়া রিযিক তুমি আমার মুখ থেকে কেড়ে নিয়েছ? বেদুইন বলল- কি আশ্চর্য- শেয়াল কথা বলছে!! শেয়াল বলল- এর চেয়েও আশ্চর্যের সংবাদ আছে আমার কাছে! বেদুইন জিজ্ঞেস করল- কি সেটা? শেয়াল বলল- দুই উপত্যকার মধ্যবর্তী স্থানে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল আছেন। তিনি পূর্বাপর সকল সংবাদ মানুষের কাছে বর্ণনা করছেন। শেয়ালের কথা শুনে বেদুইন দ্রুত মেষপাল নিয়ে মদীনায় চলে আসল। নবীজীর ঘরের দরজায় স্বজোরে আঘাত করতে লাগল। নবীজী তখন নামাযে ছিলেন। নামায শেষে নবীজী ঘর থেকে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- রাখাল বেদুইন কোথায়? বেদুইন দাড়িয়ে গেলে -নবীজী তাকে বললেন- যা শুনেছ, যা দেখেছ, সবার কাছে বর্ণনা কর! বেদুইন শেয়ালের কাহিনী সবাইকে শুনালে নবীজী বললেন- সে সত্যই বলেছে- কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে কতিপয় নিদর্শন প্রকাশ পাবে। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না মানুষ ঘর থেকে বের হবে, জুতার ফিতা, চাবুক বা লাঠি তাকে সংবাদ দেবে যে, ঘরে তার অনুপস্থিতিতে পরিবার কি করছে!” (মুসনাদে আহমদ)
তেমনি ষাঁড়ের সাথে কথা বলার ঘটনাও নবীযুগে ঘটেছিলঃ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “জনৈক ব্যক্তি ষাঁড়ের কাঁধে মাল বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছিল। ষাঁড় লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল- আমার সৃষ্টি কৃষি কাজের জন্য, মাল বোঝাই-য়ের জন্য নয়! তা দেখে লোকেরা বলতে লাগল- বাহ! ভারী আশ্চর্য তো!! ষাঁড় কথা বলছে দেখছি!! নবীজী বললেন- আমি, আবু বকর এবং উমর তা বিশ্বাস করি।-” (মুসলিম)
আল্লাহ পাক বলেন- “তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা যোগ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।-” (সূরা ফাতির-১)

(১২০) (১২১)
কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ইসলাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে
কাগজের পাতা এবং মানুষের অন্তর থেকে কোরআন উঠিয়ে নেয়া হয়
কেয়ামত ঘনিয়ে আসার প্রসিদ্ধ নিদর্শন হচ্ছে, ইসলাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। অধিক ফেতনার কবলে পড়ে দ্বীনী শিক্ষা-দীক্ষার বিলুপ্তি ঘটবে। কেউ-ই নামায পড়বে না, রোযা রাখবে না। মানুষের অন্তর থেকে কোরআন উঠিয়ে নেয়া হবে। বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি বলবে- বাপ-দাদাকে “আমরা -“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-” পড়তে শুনেছি, তাই আমরাও পড়ছি।
হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- অধিক পুরাতন হওয়ার ফলে কাপড়ের রঙ যেমন মিটে যায়, তেমনি ইসলাম-ও এক সময় মিটে যাবে। নামায কি, রোযা কি, হজ্ব কি, সাদাকা কি..- কেউ জানবে না। এক রাত্রিতে কোরআন উঠিয়ে নেয়া হবে। কোন আয়াত পৃথিবীতে থাকবে না। বয়োবৃদ্ধ মুষ্টিমেয় কিছু মুসলমান বাকী থাকবে। বলবে- বাপ-দাদাকে আমরা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলতে শুনেছি, তাই আমরাও বলছি।-”
হুযায়ফা রা. এর হাদিস শুনে আশপাশের সবার মধ্যে হৈ-চৈ পড়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন- হে হুযায়ফা! নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত জানে না, তাহলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দিয়ে কি হবে? হুযায়ফা তার কথা এড়িয়ে গেলেন। কয়েকবার জিজ্ঞেস করা হল। প্রতিবারই এড়িয়ে গেলেন। তৃতীয়বার বললেন- ওহে! পারলে ওদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও!!” (ইবনে মাজা)
নিদর্শনটি এখনো অপ্রকাশিত। ইসলাম ধর্ম -আল-হামদুলিল্লাহ- দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। মানুষ দলে দলে ইসলামের দিকে আসতে শুরু করেছে।
((আবশ্যক নয় যে, প্রতিটি মুসলিম দেশে-ই এমনটি ঘটবে; বরং যে সকল দেশে মুসলমানদের সংখ্যা খুব কম। মুসলিম বিশ্বের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। ফেতনার আধিক্য এবং কালের ঘুর্ণিপাকে তাদের মধ্যে এমন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। _অনুবাদক))

(১২২)
কাবা ঘরের দিকে যুদ্ধ করতে আসা বাহিনী মাটির নিচে ধ্বসে যাবে
কা’বা ঘরে আশ্রয় নেয়া ইমাম মাহদীকে হত্যা করতে কোন এক মুসলিম রাষ্ট্র থেকে বিশাল বাহিনী প্রেরণ করা হবে। আল্লাহ পাক বাহিনীর সকল সদস্যকে মাটির নিচে ধ্বসে দেবেন। নিয়ত অনুযায়ী সবার পুনরুত্থান হবে।
উবাইদুল্লাহ কিবতীয়্যা বলেন- হারেস, আব্দুল্লাহ বিন সাফওয়ান এবং আমি -তিনজন মিলে উম্মুল মুমেনীন উম্মে ছালামা রা.এর কাছে গেলাম। উভয়ে তাঁকে ধ্বসিত বাহিনী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। ঐ সময় হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এবং খলীফা আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রা.এর মধ্যে প্রচণ্ড সংঘাত চলছিল। হাজ্জাজের আগ্রাসণ ঠেকাতে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর তখন কা’বা ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। উম্মে ছালামা রা. বলতে লাগলেন- নবী করীম সা. বলেছেন- “একজন আশ্রিত -কা’বা ঘরে আশ্রয় নেবে। তাকে হত্যার জন্যে বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। “বায়দা” প্রান্তরে পৌঁছা মাত্রই সম্পূর্ণ বাহিনী মাটির নিচে ধ্বসে দেয়া হবে। আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসূল! যাদেরকে জোরপূর্বক বাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে, তাদের কি দশা হবে? নবীজী বললেন- সবাইকে-ই ধ্বসে দেয়া হবে। হাশরে -নিয়ত অনুযায়ী সবার পুনরুত্থান হবে।-” (মুসলিম)
“সৎ সংশ্রবে স্বর্গে বাস, অসৎ সংশ্রবে সর্বনাশ-” স্বতঃসিদ্ধ একটি প্রবাদ। বায়দা প্রান্তরে তখন যারাই উপস্থিত থাকবে -বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হোক বা না হোক- সমুলে ধ্বসে দেয়া হবে। হাশরের ময়দানে অন্তরিচ্ছা অনুযায়ী সবার হিসাব হবে।
অন্যান্য বর্ণনার ধারাবাহিকতায় বুঝা যায় যে, কা’বা ঘরে আশ্রিত ব্যক্তিটি ইমাম মাহদী হবেন। নাম তার- মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ। বাহিনী ধ্বংস করে আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করবেন।
উম্মুল মুমেনীন আয়েশা রা. বলেন- একদা নবী করীম সা. নিদ্রাবস্থায় কেমন যেন করছিলেন। (জাগ্রত হওয়ার পর) জিজ্ঞেস করলাম- এমন করছিলেন কেন হে আল্লাহর রাসূল? বললেন- “খুব-ই আশ্চর্যের বিষয়- আমার উম্মতের কিছু লোক কা’বা ঘরে আশ্রিত কুরায়শী ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। বায়দা প্রান্তরে পৌঁছা মাত্র সবাইকে মাটির নিচে ধ্বসে দেয়া হবে। আমরা বললাম- পথে তো অনেক মানুষের সমাগম থাকে!! নবীজী বললেন- হ্যাঁ..! দর্শক, অপারগ এবং পথিক সকলকেই একত্রে ধ্বসে দেয়া হবে। তবে অন্তরিচ্ছা অনুযায়ী আল্লাহ তাদের পুনরুত্থান করবেন।-” (মুসলিম)
ইমাম মাহদী সংক্রান্ত আলোচনায় পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত বিবরণ আসবে ইনশাল্লাহ।

(১২৩)
আল্লাহর ঘরের দিকে মানুষের হজ্ব ত্যাগ
শেষ জমানায় ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং ফেতনার আধিক্যের দরুন এমন পরিস্থিতি আসবে, যখন হজ্ব বা উমরাহ করতে কেউ-ই মক্কায় আসবে না। কা’বা ঘর বিরান পড়ে থাকবে।
আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না কা’বা ঘরের দিকে মানুষের হজ্ব বন্ধ হয়ে যায়।” (মুস্তাদরাকে হাকিম)
নিদর্শনটি অনেক বিলম্বে ঘটবে। কারণ, ইয়াজূজ-মাজূজের পর-ও হজ্বের কথা হাদিসের দ্বারা প্রমাণিত আছে।
আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “ইয়াজূজ-মাজূজ ধ্বংস পরবর্তী সময়ে-ও কা’বা ঘরে মানুষ হজ্ব করতে আসবে।-” (বুখারী)
হতে পারে- যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং অধিক সংঘাতের ফলে সাময়ীকভাবে মানুষের হজ্বে আসা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সংঘাত শেষ হতে-ই পুনরায় হজ্ব পালন শুরু হয়ে যাবে।

(১২৪)
কতিপয় আরব গোত্র -মূর্তি পূজায় পুনঃ প্রত্যাবর্তন
ইসলাম-পূর্ব মূর্খতা-যুগে আরব উপদ্বীপ -শিরক ও মূর্তিপূজার কেন্দ্রস্থল রূপে প্রসিদ্ধ ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’লা নবী মুহাম্মদ সা.কে প্রেরণ করে আরবদেরকে সঠিক পথের দিশা দেন। মূর্তি পূজার অবসান ঘটিয়ে একত্মবাদের দিকে নিয়ে আসেন।
কিন্তু কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে একদল আরব পুনরায় মূর্তিপূজায় ফিরে যাবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না দাউছ গোত্রীয় মহিলাদের নিতম্বগুলো ‘-যিলখালাসা’-র আশপাশে আন্দোলিত হতে থাকবে।
যিল খালাসা হচ্ছে মূর্খতা যুগে দাউস গোত্রে পূজ্য বৃহৎ মূর্তির নাম।
অর্থাৎ মূর্তির সম্মানার্থে তারা মূর্তির পাশে প্রদক্ষিণ করবে।
উল্লেখ্য- আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দাউছ গোত্রের বসবাস।

(১২৫)
কুরায়েশ বংশের বিলুপ্তি
আরবের অতি প্রসিদ্ধ গোত্রগুলোর অন্যতম কুরায়েশ। ফিহর বিন মালেক বিন নযর বিন কিনানা’র পরবর্তী বংশধরকে এ নামে ডাকা হয়। আরবীতে কুরায়েশ মানে ব্যবসা। পেশায় তারা ব্যবসায়ী ছিল বলে তাদেরকে কুরায়েশ বলা হত।
কুরায়েশের প্রসিদ্ধ শাখাগুলো হচ্ছেঃ
(১) বনু হারেস বিন ফিহর
(২) বনু জুযাইমা
(৩) বনু আয়েযা
(৪) বনু লুআই বিন গালিব
(৫) বনু আমের বিন লুআই
(৬) বনু আদী বিন কা’ব বিন লুআই
(৭) বনু মাখযূম
(৮) বনু তামীম বিন মুররাহ
(৯) বনু যুহরা বিন কিলাব
(১০) বনু আছাদ বিন আব্দুল উয্যা
(১১) বনু আব্দিদ্দার
(১২) বনু নওফেল
(১৩) বনু আব্দিল মুত্তালিব
(১৪) বনু উমাইয়া
(১৫) বনু হাশিম ইত্যাদি
ইসলাম-পরবর্তী যুগে তারা আর-ও বিস্তৃত হয়ে পড়ে। মূল বসতি আরব উপদ্বীপে হলেও ইসলাম প্রচারে তারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে গোত্রটি সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কুরায়েশ বংশ দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে মানুষ প্রাচীন পাদুকা দেখে বলতে থাকবে- এটা হয়ত কুরায়েশী পাদুকা!”

(১২৬)
জনৈক হাবশীর হাতে কা’বা ঘর ধ্বংস
কেয়ামতের অতি পূর্বমুহূর্তে মুসলমানদের ঐতিহাসিক কেবলা -কা’বা ঘর ধ্বংস হয়ে যাবে। যিস সুওয়াইকাতাইন (সরু নলা বিশিষ্ট) এক হাবশী -কাবাঘরকে খণ্ড খণ্ড করে ভেঙ্গে দেবে। ভেতরের সব সৌন্দর্য বের করে নিয়ে যাবে।
আব্দুল্লাহ বিন আমরিবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “হাবশীদেরকে আগেভাবে কিছু করতে যেয়ো না। কারণ, (যিস সুওয়াইকাতাইন) হাবশী ব্যক্তি-ই কা’বা ঘর ধ্বংস করে রত্ন-ভাণ্ডার নিয়ে যাবে।-” (আবু দাউদ)
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মনে হচ্ছে- আমি যেন সেই কালো কুৎসিত-টাকে দেখতে পাচ্ছি- সে কা’বা ঘরকে খণ্ড খণ্ড করে ভেঙ্গে দিচ্ছে।-” (বুখারী)
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “হাবশী (যিস সুওয়াইকাতাইন) কা’বার বিনাশ ঘটাবে। চাদর সরিয়ে সকল রত্ন-ভাণ্ডার লুট করবে। মনে হচ্ছে- আমি যেন সেই কেশহীন শীর্ণ কুৎসিত-টাকে দেখতে পাচ্ছি- সে কুঠার-বেলচা দিয়ে পাথর ভেঙ্গে দিচ্ছে।-” (মুসনাদে আহমদ)
প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে- মক্কা নগরীকে আল্লাহ নিরাপদ ঘোষণা করার পর-ও বাইতুল্লাহ-র বিনাশ কি করে সম্ভব?!! আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেছেন- “তারা কি ভেবে দেখে না যে, আমি একে (মক্কা) নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়েছি।-” (সুরা আনকাবূত-৬৭)
অন্যত্র বলেছেন- “আর যে ব্যক্তি মসজিদে হারামে অন্যায়ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব।-” (সূরা হজ্ব-২৫)
পৌত্তলিকদের দখলে থাকা সত্তেও আসহাবে ফীলের আক্রমণ থেকে আল্লাহ কা’বাকে রক্ষা করেছিলেন। তাহলে মুসলমানদের কেবলা হওয়া সত্তেও কেন কা’বা ধ্বংস হয়ে যাবে?!!
উত্তরঃ
প্রথমতঃ আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী কা’বা ঘর কেয়ামতের অতি পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়স্থল রূপেই থাকবে। উপরোক্ত আয়াতে কেয়ামত অবধি সুরক্ষিত থাকার কোন ইঙ্গিত ব্যক্ত হয়নি; বরং শুধু কোরআন নাযিলের সময় কা’বা ঘর নিরাপদ থাকার কথা বলা হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ কা’বা ঘরের নিরাপত্তা ভঙ্গের সংবাদটি স্বয়ং নবী করীম সা.-ই শুনিয়ে গেছেন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কা’বার রুকন ও মাক্বামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে এক ব্যক্তির (ইমাম মাহদী) বায়আত নেয়া হবে। স্থানীয় লোকেরাই কা’বা ঘরের সম্মান নষ্ট করে নিরাপত্তাহীন করে তুলবে। এমনটি হয়ে গেলে আরবদের ধ্বংস কাছিয়ে যাবে। অতঃপর হাবশীরা এসে কা’বা ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিলে পরবর্তীতে আর কেউ তা নির্মাণ করতে পারবে না। হাবশীরা-ই কা’বা-র রত্ন-ভাণ্ডার লুট করবে।-” (মুসনাদে আহমদ)
পৌত্তলিকরা কা’বা ঘরকে সম্মানের চোখে দেখত। সেখানে কখনো কোন রক্তপাত ঘটতে দিত না। তাই আল্লাহ পাক-ও অভিশপ্ত আবরাহা‘র হস্তি বাহিনী থেকে কা’বাকে রক্ষা করেছিলেন।
শেষ জমানায় স্থানীয়রা কা’বা ঘরে রক্তপাত শুরু করলে আল্লাহ পাক হাবশীদেরকে তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেবেন।

(১২৭)
মুমিনের রূহ কব্জা করতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুবাতাস প্রেরণ
দাজ্জালের মৃত্যু, ঈসা আ.-এর শাসন অতঃপর মৃত্যু এসকল বৃহৎ নিদর্শন প্রকাশের পর কেয়ামত অতি সন্নিকটে এসে যাবে। মুমিনদেরকে কেয়ামতের ভয়াবহ শাস্তি থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহ পাক এক প্রকার সুবাতাস প্রেরণ করবেন, গায়ে স্পর্শের সাথে সাথে সকল মুমিন শান্তিদায়ক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। অতঃপর সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিদের উপর মহা প্রলয় আবর্তিত হবে।
নাওয়াছ বিন ছামআন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা নবী করীম সা. -দাজ্জাল ও তৎপর-বর্তী নিদর্শনাবলী আলোচনার পর বলতে লাগলেন- “... অতঃপর আল্লাহ এক প্রকার সুবাতাস প্রেরণ করবেন। বাহুমূলের নিচে স্পর্শিত হয়ে সকল মুমিনের রূহ কব্জা করে নেবে। অতঃপর পৃথিবীতে শুধু সর্বনিকৃষ্ট ও পথে ঘাটে ভ্যবিচারে অভ্যস্ত লোকেরা বেঁচে থাকবে। তাদের উপর-ই মহা-প্রলয় আবর্তিত হবে।-” (বুখারী-মুসলিম)
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “... অতঃপর শামের দিক থেকে আল্লাহ এক প্রকার শীতল হাওয়া প্রেরণ করবেন, অণু পরিমান ঈমানবাহী ব্যক্তির প্রাণকেও সে কব্জা করে নেবে। তোমাদের কেহ যদি সেদিন পাহাড়ের গহীন গুহায় অবস্থান কর, তবে শীতল হাওয়া সেখানেও তোমাদের খোঁজে বের করে রূহ কব্জা করে নেবে।-” (মুসলিম)
ঈসা বিন মারয়াম আ.-এর ইন্তেকালের পর উপরোক্ত শীতল হওয়া প্রেরিত হবে।

(১২৮)
মক্কা নগরীর বিল্ডিংগুলো পাহাড়সম উঁচু করে নির্মাণ
নবীযুগে মক্কা নগরীতে বসতি সংখ্যা খুব-ই স্বল্প ছিল। বাড়ীঘর ছিল বিক্ষিপ্ত। কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে মক্কার ভবনগুলো পাহাড়সম উঁচু করে নির্মিত হবে।
ইবনে আবী শাইবা’র বর্ণনায় ইয়া-’লা বিন আতা- আপন পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন- আমি আব্দুল্লাহ বিন আমর রা.-এর বাহনের লাগাম ধরে দাড়িয়ে ছিলাম। তিনি বলতে লাগলেন- ঐ সময় তোমাদের কি হবে, যখন তোমরা কা’বা ঘর ধ্বংস করে দেবে, একটি প্রস্তর খণ্ড-ও অবশিষ্ট রাখবে না!! তারা বলল- সেদিন কি আমরা ইসলাম ধর্মে থাকব? বললেন- হ্যাঁ.. তোমরা মুসলমান থাকবে। অতঃপর আরো সুন্দর করে নির্মাণ করা হবে। যখন দেখতে পাবে, মক্কা নগরীতে মাটি চিরে পার্শ্বকূপ (নলকূপ/পানি চলাচলের আধুনিক পাপ লাইন ব্যবস্থা) নির্মিত হচ্ছে এবং ভবনগুলো পাহাড়সম উঁচু হয়ে গেছে, (মনে রেখো!) তখন মহা বিপদাপদ কাছিয়ে গেছে।-” (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)
বর্তমানে জমজমের পানি সরবরাহ সহজ করণে মাটি খুরে সেখানে অসংখ্য পানির পাপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে।

(১২৯)
পরবর্তী লোকজন পূর্ববর্তীদেরকে গালমন্দ করবে
শেষ জমানায় মুসলিম সমাজে সীমাতিরিক্ত হারে বিদাত-কুসংস্কার প্রকাশের ফলে লোকেরা সাহাবায়ে কেরাম/তাবেয়ীনকে গালমন্দ করবে। মনে করবে, পূর্ববর্তীগণ ভুল পথে ছিল, আমরা-ই সঠিক পথে আছি।
যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছেঃ
নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না আমার পরবর্তী উম্মত পূর্বপুরুষদেরকে গালমন্দ করবে, অভিশাপ দেবে।-”

(১৩০)
আধুনিক যানবাহন
শেষ জমানায় আধুনিক যানবাহন আবিস্কৃত হওয়ার বিষয়টি একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, “দোকানপাট নিকটবর্তী হয়ে যাবে”। অনেক উলামায়ে কেরাম এর মাধ্যমে আধুনিক যানবাহন উদ্দেশ্য করেছেন। দ্রুতগামী গাড়ী আবিস্কারের ফলে দূরের মার্কেটগুলো-ও তখন কাছের মনে হবে।
সহীহ ইবনে হিব্বান-এ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সা. বলেছেন- “আমার শেষ উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা প্রদীপের মত কিছু যানবাহনে উঠে ভ্রমণ করবে। এগুলো নিয়ে তারা মসজিদের সামনে অবতীর্ণ হবে। তাদের মহিলারা বস্ত্রবাহী নগ্নদেহ বিশিষ্ট হবে।-”
উপরোক্ত হাদিসে নবী করীম সা. অদেখা আরোহণ বস্তুর কথা বলেছেন। মনে হচ্ছে- এর মাধ্যমে উনি বর্তমান কালের আধুনিক যানবাহনের দিকে-ই ইঙ্গিত করেছেন।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম