মহাপ্রলয় : পর্ব-০৭ (মাহদী)

(১৩১)
ইমাম মাহদীর আবির্ভাব
শেষ জমানায় ফেতনার আধিক্য ঘটবে, অন্যায়-অত্যাচার মানুষের স্বভাবে পরিণত হবে, দুর্বল সবলকে গ্রাস করে নেবে, সমাজে অনিষ্ট ব্যক্তিদের কর্তৃত্ব থাকবে। এতদসত্তেও মুমিনগণ প্রভাতের নতুন রবির আশায় বুক বেঁধে থাকবেন, যা জুলুম-অত্যাচারের সকল আঁধারকে ভেদ করে প্রতিটি মুসলিমের ঘরে গিয়ে পৌঁছবে। মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ (ইমাম মাহদী)র মাধ্যমে আল্লাহ পাক মুসলমানদের ঐক্যতাকে পুনরায় ফিরিয়ে দেবেন। আবারো মুসলমান এক কালেমার পতাকা তলে জড়ো হয়ে বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হবে। বিশ্বজুড়ে ইসলামের জয়গান বেজে উঠবে।
o ইমাম মাহদীর পরিচয়
o প্রকাশের নেপথ্য
o প্রকাশ-স্থল
o তবে কি জন্ম হয়ে গেছে?
o তিনি কি করবেন?
o কারা তাঁর সহযোগী?

“ইমাম মাহদী-” নামটি শুনার সাথে সাথে এ রকম হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে থাকে। নিম্নে খুব-ই সংক্ষিপ্ত আকারে এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছিঃ
নাম ও পরিচিত
মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হাসানী। বংশ পরম্পরা হাসান বিন আলী রা. পর্যন্ত পৌঁছবে।
ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “পৃথিবীর জীবন সায়াহ্নে যদি একটি মাত্র দিন অবশিষ্ট থাকে, তবে সে-ই দিনটিকে আল্লাহ দীর্ঘ করে আমার পরিবারস্থ একজন ব্যক্তিকে প্রেরণ করে ছাড়বেন, তার নাম আমার নাম এবং তার পিতার নাম আমার পিতার নাম সদৃশ হবে।-” (তিরমিযী, আবু দাউদ)
প্রকাশের নেপথ্য
শেষ জমানায় সংঘাত যখন ব্যাপক আকার ধারণ করবে, অবিচার যখন স্বভাবে রূপান্তরিত হবে, ন্যায় নিষ্ঠা সোনার হরিণে পরিণত হবে, মুসলিম সমাজে অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, ভ্যবিচার ও পাপাচার ছেয়ে যাবে, ঠিক তখন-ই আল্লাহ পাক একজন সৎ নিষ্ঠাবান ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটাবেন। তাঁর হাতে আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদীকে পুনর্সংশোধিত করবেন। আহলে সুন্নাত মুসলমানদের কাছে তিনি “ইমাম মাহদী” নামে পরিচিত হবেন। ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গকারী একদল নিষ্ঠাবান মর্দে-মুজাহিদ তাঁর সহযোগী হবেন। শত্রুদের বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধে তিনি মুমিন মুজাহিদীনের নেতৃত্ব দেবেন। বিশ্ব মুসলিমের একক সেনাপতি রূপে তিনি প্রসিদ্ধ হবেন।

বৈশিষ্ট্য
আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মাহদী আমার বংশধর। উজ্জল ললাট ও নত নাসিকা বিশিষ্ট। ন্যায় নিষ্ঠায় পৃথিবী ভরে দেবে, ঠিক যেমন ইতিপূর্বে অত্যাচার-অবিচারে ভরে গিয়েছিল। সাত বৎসর রাজত্ব করবে।-” (আবু দাউদ)
উজ্জল ললাট- অর্থাৎ মাথার অগ্রভাগ চুল শূন্য ও সুপরিসর।
নত নাসিকা- অর্থাৎ দীর্ঘ নাক। অগ্রভাগ কিছুটা সরু এবং মধ্যভাগ কিছুটা স্ফীত, একেবারে চ্যাপটে নয়।
পূর্ণ নাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল হাসানী। ঠিক নবীজীর নামের মত।
হাসান বংশীয় হওয়ার রহস্যঃ
পিতা আলী রা.-এর শাহাদাতের পর হাসান রা. যখন খলীফা হন, তখন মুসলিম বিশ্বে খলীফা দু’জন হয়ে গিয়েছিল”
(১) হেজায এবং ইরাকে হাসান রা.।
(২) শাম ও আশপাশের এলাকাগুলোতে মুআবিয়া বিন আবি সুফিয়ান রা.।
ছয় মাস শাসনকার্য পরিচালনার পর পার্থিব কোন উদ্দেশ্য ছাড়া-ই হাসান রা. সম্পূর্ণ খিলাফত মুআবিয়া রা.কে দিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে এক শাসকের অধীনে মুসলমান একতাবদ্ধ হয়ে যায়। মুমিনদের পারস্পরিক রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। হাদিসে আছে- “আল্লাহর জন্য যে ব্যক্তি কোন কিছু ত্যাগ করল, আল্লাহ তাকে এবং তার বংশধরকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করবেন।-”
রাজত্বকাল
সাত বৎসর তিনি মুসলমানদের নেতৃত্ব দেবেন। ন্যায় নিষ্ঠায় পৃথিবী ভরে দেবেন, ঠিক যেমন পূর্বে অন্যায়-অবিচারে ভরে গিয়েছিল। তাঁর রাজত্বকালে মুসলিম বিশ্ব সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে পূর্ণ হয়ে উঠবে। ভূ-পৃষ্ঠ সকল গচ্ছিত খনিজ সম্পদ প্রকাশ করে দেবে। আকাশ ফসলভরা বৃষ্টি বর্ষণ করবে। বে-হিসাব মানুষের মাঝে তিনি ধন সম্পদ বন্টন করবেন।
প্রকাশস্থল
প্রাচ্য থেকে আত্মপ্রকাশ করবেন। একা নয়; প্রাচ্যের একদল নিষ্ঠাবান মুজাহিদ-ও তাঁর সাথে থাকবে। দ্বীনের ঝাণ্ডা বুকে নিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে।
প্রকাশকাল
মুসলিম বিশ্বে অধিক সংঘাত-কালে তিনজন খলীফা-সন্তান কা’বা ঘরের কর্তৃত্ব নিয়ে যুদ্ধে লেগে যাবে। কেউ-ই সফল হবে না। তখন-ই মক্কায় ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে। দ্রুত মানুষের মাঝে সংবাদ ছড়িয়ে পড়বে। সকলেই কা’বা ঘরের সামনে তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করবে।
ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “তোমাদের রত্ন-ভাণ্ডারের কাছে তিনজন খলীফা-সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কেউ-ই দখলে সফল হবে না। প্রাচ্য থেকে তখন একদল কালো ঝাণ্ডাবাহী লোকের আবির্ভাব হবে। তারা এসে তোমাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করবে।” ছাওবান বলেন- অতঃপর নবীজী কি যেন বললেন, আমার ঠিক স্মরণ নেই। এরপর নবীজী বললেন- “যখন তোমরা তা দেখতে পাবে, তখন তাঁর কাছে এসে বায়আত হয়ে যেয়ো! যদিও তা করতে তোমাদের হামাগুড়ি দিয়ে বরফের পাহাড় পাড়ি দিতে হয়..!!” (ইবনে মাজা)
খলীফা-সন্তানঃ অর্থাৎ তিনজন সেনাপতি। সবাই বাদশা’র সন্তান হবে। পিতার রাজত্বের দোহাই দিয়ে সবাই ক্ষমতার দাবী করবে।
রত্ন-ভাণ্ডারঃ কা’বা ঘরের নিচে প্রোথিত রত্ন-ও উদ্দেশ্য হতে পারে। নিছক রাজত্ব-ও উদ্দেশ্য হতে পারে। কারো কারো মতে- রত্ন বলতে এখানে ফুরাত নদীর উম্মোচিত স্বর্ণ-পর্বত উদ্দেশ্য।
মাহদীর মক্কায় আত্মপ্রকাশ এবং প্রাচ্য (খোরাছান) থেকে কালো ঝাণ্ডাবাহী মুজাহিদীনের আগমন কি করে সম্ভব..?!! আর ঝাণ্ডা কালো হওয়ার মধ্যেই বা কি রহস্য..?!!
ইবনে কাছীর রহ. বলেন- “মাহদীকে প্রাচ্যের নিষ্ঠাবান একটি দলের মাধ্যমে শক্তিশালী করা হবে। তারা মাহদীকে সহায়তা করবে এবং মাহদীর রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। তাদের পতাকা-ও কালো বর্ণের হবে। এটা গাম্ভীর্যের প্রতীক। কারণ, নবী করীম সা.এর পতাকা-ও কালো ছিল। নাম ছিল- عُقاب (উকাব)।
আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “আমার শেষ উম্মতের মাঝে মাহদী প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তাদের উপর কল্যাণের বারিধারা বর্ষণ করবেন। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে গচ্ছিত সকল খনিজ সম্পদ উন্মোচিত হবে। ধন সম্পদের সুসম বন্টন নিশ্চিত করবে। গবাদিপশু বৃদ্ধি পাবে। মুসলমানদের হারানো মর্যাদা ফিরে আসবে। সাত বা আট বছর সে রাজত্ব করবে।- ” (মুস্তাদরাকে হাকিম)
অপর বর্ণনায়- “তার মৃত্যুর পর আর কোন কল্যাণ থাকবে না”।-” (মুসনাদে আহমদ)
বুঝা গেল- মাহদীর মৃত্যুর পর পুনরায় ফেতনা ও সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে।
বিন বায রহ. বলেন- “মাহদী প্রকাশের বিষয়টি স্বতঃসিদ্ধ। এ ব্যাপারে নবী করীম সা. থেকে প্রচুর হাদিস প্রমাণিত রয়েছে। একাধিক সাহাবী থেকে পরস্পর বর্ণনাসূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর অপার রহমতে তিনি শেষ জমানার ইমাম হবেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। অন্যায়-অবিচার দমন করবেন। শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হবেন। তার আত্মপ্রকাশে উম্মতের মধ্যে জিহাদের চেতনা ফিরে আসবে। সকলেই এক কালেমার পতাকাতলে একত্রিত হয়ে যাবে।
মাহদী সংক্রান্ত হাদিস
ইমাম মাহদীর ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলো দু’ভাগে বিভক্তঃ
১) যে সকল হাদিসে সরাসরি মাহদীর বর্ণনা এসেছে
২) যে সকল হাদিসে শুধু তাঁর গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে
মাহদীর ব্যাপারে প্রায় অর্ধশত হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিছু সহীহ, কিছু হাছান আর কিছু যায়ীফ। প্রায় আঠারটি’র মত আছার (সাহাবাদের বাণী) বর্ণিত হয়েছে।
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ছাফারিনী, সিদ্দীক হাসান খান এবং হাফেয আবেরী- মাহদী সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে পৌনঃপুনিকতার (تواتر) স্তরে উন্নীত করেছেন।
১) আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “আমার শেষ উম্মতের মাঝে মাহদী প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তাদের উপর কল্যাণের বারিধারা বর্ষণ করবেন। ভূ-পৃষ্ঠ গচ্ছিত সকল খনিজ সম্পদ উম্মোচন করে দেবে। ধন সম্পদের সুসম বন্টন নিশ্চিত করবে। গবাদিপশু বৃদ্ধি পাবে। মুসলমানদের হারানো মর্যাদা ফিরে আসবে। সাত বা আট বছর তাঁর রাজত্ব হবে।-” (মুস্তাদরাকে হাকিম)
২) আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “আমি তোমাদেরকে মাহদী’র সুসংবাদ দিচ্ছি। ভূ-কম্পন ও মানুষের বিভেদকালে তার আগমন ঘটবে। ন্যায়-নিষ্ঠায় পৃথিবী ভরে দেবে, ঠিক যেমন অন্যায়-অবিচারে ভরে গিয়েছিল। আসমান-জমিনের অধিবাসীগণ তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। ধন সম্পদের সুসম বন্টন নিশ্চিত করবে। ‘সুসম কি?’ জিজ্ঞেস করা হলে বললেন- ‘সমানভাবে-’। আল্লাহ ন্যায়ের মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মদীকে পূর্ণ করে দেবেন। এমনকি একজন ঘোষক ঘোষণা করবে- ‘কারো কি সম্পদের প্রয়োজন আছে?’ একজন দাড়িয়ে বলবে- দায়িত্বশীলকে বলো- মাহদী আমাকে সম্পদ দিতে বলেছে! দায়িত্বশীল বলবে- যা পার উঠাও! আঁচল ভরে স্বর্ণ-রৌপ্য উঠানোর সময় লজ্জিত হয়ে বলবে- আমি নিজেকে সবার চেয়ে শক্তিশালী মনে করতাম, কিন্তু আজ এগুলো বহন করতে অপারগ হয়ে গেছি। এ কথা বলে সবকিছু আবার দায়িত্বশীলকে ফিরিয়ে দিতে চাইলে দায়িত্বশীল বলবে- এখানে প্রদত্ত মাল ফেরৎ নেয়া হয় না। এভাবেই মাহদীর রাজত্ব সাত, আট বা নয় বছর পর্যন্ত থাকবে। মাহদীর পর জীবনে আর কোন কল্যাণ থাকবে না।-”
৩) আলী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মাহদী আমার বংশধর। এক রাত্রিতে আল্লাহ পাক তাকে নেতৃত্বের যোগ্য বানিয়ে দেবেন।”
বুঝা গেল- ইমাম মাহদী (মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ) নিজেও জানবেন না যে, হাদিসে উল্লেখিত ব্যক্তিটি তিনি-ই। আগেভাগে গিয়ে খিলাফত-ও কামনা করবেন না। নম্রতাবসত নিজেকে তিনি নেতৃত্বের অযোগ্য মনে করবেন। আর তাই প্রবল অনিচ্ছা সত্তেও মানুষ জোর করে তার হাতে বায়আত হয়ে যাবে।
মাহদী কোন পাপী বা পথভ্রষ্ট হবেন না। বরং শরীয়ত বিষয়ে একজন সুপরিপক্ব ব্যক্তি হবেন। মানুষকে হালাল হারাম শিখাবেন। বিচারব্যবস্থাকে শরীয়তমতে ঢেলে সাজাবেন। শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রধান সেনাপতির ভূমিকা পালন করবেন।
তিনি-ই প্রতীক্ষিত মাহদী- এক রাত্রিতে আল্লাহ পাক তা জানিয়ে দিয়ে নেতৃত্বের সার্বিক যোগ্যতা তাকে প্রদান করবেন।
৪) উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মাহদী আমার বংশে ফাতেমার সন্তানদের মধ্যে হবে।-” (আবু দাউদ)
৫) জাবের রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মরিয়ম-তনয় ঈসা আসমান হতে অবতরণ করবেন। মুসলমানদের সেনা-প্রধান মাহদী তাকে স্বাগত জানিয়ে বলবে- আসুন! নামাযের ইমামতি করুন! ঈসা বলবেন- না! (বরং তুমি-ই ইমামতি করো!) তোমাদের একজন অপরজনের নেতা। এই উম্মতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এ এক মহা সম্মান।-”
বুঝা গেল- মাহদীর সময়েই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। অতঃপর দাজ্জালকে হত্যা করতে আসমান থেকে ঈসা বিন মারিয়াম আ. অবতরণ করবেন। ইমাম মাহদী-ই তখন মুসলিম সেনাপ্রধান থাকবেন। ঈসা আ. এবং অন্য সকল মুমিন ইমাম মাহদীর পেছনে ফজরের নামায আদায় করবেন।
৬) আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মরিয়ম-তনয় ঈসা -যার পেছনে নামায আদায় করবেন, সে আমার উম্মতের-ই একজন সদস্য।-”
অর্থাৎ মাহদী নামাযের ইমামতি করবেন। মুসল্লীদের কাতারে ঈসা আ. শামিল থাকবেন।
৭) ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “পৃথিবীর জীবন সায়াহ্নে যদি একটি মাত্র দিন অবশিষ্ট থাকে, তবে সে দিনটিকে আল্লাহ দীর্ঘ করে আমার পরিবারস্থ একজন ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন। তার নাম আমার নাম এবং তার পিতার নাম আমার পিতার নাম সদৃশ হবে।-” (তিরমিযী, আবু দাউদ)
সুতরাং শিয়া সম্প্রদায়ের দাবী সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, মুহাম্মাদ বিন হাছান আসকারীকে তারা মাহদী মনে করে থাকে।
৮) যির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না আমার সম-নামী এক নিষ্ঠাবান ব্যক্তি মুসলমানদের নেতা হবে।-” (মুসনাদে আহমদ)
৯) আলী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “পৃথিবীর জীবন সায়াহ্নে যদি একটি মাত্র দিন অবশিষ্ট থাকে, তবে সে দিনটিকে আল্লাহ দীর্ঘ করে আমার পরিবারস্থ একজন ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন। ন্যায়-নিষ্ঠায় সে বিশ্বকে ভরে দেবে, ঠিক যেমন অন্যায়-অবিচারে ভরে গিয়েছিল।-”
উপরোক্ত হাদিসসমূহে নাম ও গুণাগুণ সহ স্পষ্টরূপে মাহদীর কথা আলোচিত হয়েছে।
আরো যে সকল হাদিস মাহদীর প্রতি পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করেঃ
১০) জাবের রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “অচিরেই ইরাকবাসীর কাছে খাদ্যদ্রব্য ও রৌপ্যমুদ্রা সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হবে। আমরা বললাম- কাদের পক্ষ থেকে এরকম করা হবে? উত্তরে বললেন- অনারব।” অতঃপর বললেন- “অচিরেই শামবাসীর কাছে খাদ্যদ্রব্য ও স্বর্ণমুদ্রা সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হবে। কাদের পক্ষ থেকে করা হবে- প্রশ্নের উত্তরে বললেন- রোমক (খৃষ্টান)।” কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন- “আমার শেষ উম্মতের মাঝে একজন খলীফার আবির্ভাব ঘটবে, বে-হিসাব মানুষের মাঝে সে সম্পদ বিলি করবে।-”
বর্ণনাকারী -আবু নাযরা ও আবুল আলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন- “আপনারা কি উমর বিন আব্দুল আজীজ রহ.কে সেই খলীফা মনে করেন? তারা বললেন- না!!” (মুসলিম)
১১) উম্মুল মুমেনীন আয়েশা রা. বলেন- একদা নবী করীম সা. নিদ্রাবস্থায় কেমন যেন করছিলেন। (জাগ্রত হওয়ার পর) জিজ্ঞেস করলাম- এমন করছিলেন কেন হে আল্লাহর রাসূল? বললেন- “খুব-ই আশ্চর্যের বিষয়- আমার উম্মতের কিছু লোক কা’বা ঘরে আশ্রিত কুরায়শী ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। বায়দা প্রান্তরে পৌঁছা মাত্র সবাইকে মাটির নিচে ধ্বসে দেয়া হবে। আমরা বললাম- পথে তো অনেক মানুষের সমাগম থাকে!! নবীজী বললেন- হ্যাঁ..! দর্শক, অপারগ এবং পথিক সকলকেই একত্রে ধ্বসে দেয়া হবে। তবে অন্তরিচ্ছা অনুযায়ী আল্লাহ পাক তাদের পুনরুত্থান করবেন।-” (মুসলিম)
অর্থাৎ মাহদীকে হত্যা করতে আসা সেই নামধারী মুসলিম বাহিনীকে আল্লাহ বায়দা প্রান্তরে ধ্বসে দেবেন। তবে কেয়ামতের দিন নিয়তনুযায়ী সবাইকে উঠানো হবে। সৎ নিয়তের দরুন কেউ জান্নাতে যাবে, অসৎ নিয়তে কেউ জাহান্নামে যাবে।
১২) আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কা’বার রুকন ও মাক্বামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে এক ব্যক্তির (ইমাম মাহদী) বায়আত নেয়া হবে। স্থানীয় লোকেরা-ই কা’বা ঘরের সম্মান নষ্ট করে নিরাপত্তাহীন করে তুলবে। আরবদের বিনাশ তখন কাছিয়ে যাবে। অতঃপর হাবশীরা এসে কা’বা ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিলে পরবর্তীতে আর কেউ তা নির্মাণ করতে পারবে না। হাবশীরা-ই কা’বার রত্ন-ভাণ্ডার লুট করবে।-” (মুসনাদে আহমদ)
১৩) আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কেমন হবে- যখন তোমাদের মাঝে মরিয়ম-তনয় ঈসা অবতরণ করে তোমাদের-ই একজনের পেছনে ফজরের নামায আদায় করবেন..?!!” (বুখারী)
অন্য বর্ণনা থেকে পরিস্কার বুঝা যায় যে, মাহদী-ই (আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ) ঈসা আ.-এর ইমামতি করবেন।
১৪) জাবের রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “আমার উম্মতের একদল মুজাহিদ কেয়ামত পর্যন্ত শত্রুদের উপর বিজয়ী থাকবে। এক পর্যায়ে মরিয়ম-তনয় ঈসা আসমান হতে অবতরণ করলে তাদের সেনাপতি বলবে- আসনু! নামাযের ইমামতি করুন! ঈসা বলবেন- না! তোমাদের একজন অপরজনের নেতা (তুমি-ই ইমামতি করো!) আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতের জন্য এ এক বিরাট সম্মান!!” (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
উল্লেখ্য-
মাহদীর পেছনে ঈসা আ. নামায পড়েছেন বলে মাহদী শ্রেষ্ঠ হয়ে যাননি। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে নবী করীম সা.-ও আবু বকরের পেছনে নামায পড়েছেন। আব্দুর রহমান বিন আওফ রা.-এর পেছনে-ও নবীজী নামায পড়েছেন। উম্মতে মুহাম্মদীর একজন সদস্যের পেছনে নামায আদায়ের মাধ্যমে উনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, শেষনবী মুহাম্মদ সা.-এর আদর্শের অনুসারী হিসেবে তিনি পৃথিবীতে এসেছেন; নবী হিসেবে নয়। নামায শেষে ঈসা আ. সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন আর মাহদী তাঁর সেনাদলের একজন সদস্য হয়ে যাবেন।
১৫) জাবের বিন ছামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা আলীকে নিয়ে আমি নবী করীম সা.এর দরবারে উপস্থিত হলাম। তিনি তখন বলছিলেন- “পৃথিবী সমাপ্তির পূর্বে অবশ্যই বারজন নিষ্ঠাবান খলীফা অতিবাহিত হবেন।” অতঃপর কি যেন বললেন- ঠিক বুঝিনি! আব্বুকে জিজ্ঞেস করলে- “সবাই কুরায়েশ বংশের-” বললেন।-” (মুসলিম)
ইবনে কাছীর রহ. বলেন- “বুঝা গেল- মুসলমানদের খলীফা হিসেবে বারজন নিষ্ঠাপূর্ণ ব্যক্তির আগমন ঘটবে। তবে শিয়া সম্প্রদায়ের ধারণাকৃত বারজন নয়; কারণ, তাদের অধিকাংশের-ই খেলাফত সংক্রান্ত কোন কর্তৃত্ব ছিল না। পক্ষান্তরে প্রকৃত বারজন খলীফা সবাই কুরায়েশ বংশীয় হবেন এবং মুসলমানদের একচ্ছত্র নেতা হিসেবে সবাই আভিভূত হবেন।-” (তাফছীরে ইবনে কাছীর)
১৬) উম্মুল মুমেনীন হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “কা’বা ঘরে আশ্রিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনীর আগমন হবে। বায়দা প্রান্তরে পৌঁছা মাত্র বাহিনীর মধ্যভাগ ধ্বসে দেয়া হবে। সম্মুখ ভাগ পেছন ভাগের সেনাদেরকে ডাকাডাকি করতে থাকবে। পরক্ষণেই সম্পূর্ণ বাহিনীকে ধ্বসে দেয়া হবে। ফলে সংবাদ বাহক (একজন) ছাড়া আর কেউ নিস্তার পাবে না।-” (মুসলিম)
প্রাণ নিয়ে ফিরে এসে মানুষকে সে ধ্বসিত বাহিনীর খবর শুনাবে।
১৭) উম্মুল মুমেনীন উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র বিরোধ সৃষ্টি হবে। মদীনার একজন লোক তখন পালিয়ে মক্কায় চলে আসবে। মক্কার লোকেরা তাকে খুঁজে বের করে অনিচ্ছা সত্তেও রুকন এবং মাক্কামে ইবরাহীমের মাঝামাঝি স্থানে বায়আত গ্রহণ করবে। বায়আতের খবর শুনে শামের দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। মক্কা-মদীনার মাঝামাঝি বায়দা প্রান্তরে তাদেরকে মাটির নিচে ধ্বসে দেয়া হবে। বাহিনী ধ্বসের সংবাদ শুনে শাম ও ইরাকের শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ মক্কায় এসে রুকন ও মাক্কামে ইবরাহীমের মাঝামাঝিতে তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করবে। অতঃপর বনু কালব সম্বন্ধিয় এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। শামের দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে। মক্কার নবউত্থিত মুসলিম বাহিনী তাদের উপর বিজয়ী হয়ে প্রচুর যুদ্ধ-লব্ধ সম্পদ অর্জন করবে। সেদিন বনু কালবের সর্বনাশ ঘটবে। যে বনু কালব থেকে অর্জিত সম্পদ প্রত্যক্ষ করেনি, সে-ই প্রকৃত বঞ্চিত। অতঃপর মানুষের মাঝে তিনি সম্পদ বন্টন করবেন। নববী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটাবেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ইসলাম সেদিন ভূ-পৃষ্ঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। সাত বৎসর এভাবে রাজত্ব করে তিনি ইন্তেকাল করবেন, মুসলমানগণ তার জানাযায় শরীক হবে।” (আবু দাউদ)
অপর বর্ণনায়- “নয় বৎসর”।
বায়দা হচ্ছে মক্কা এবং মদীনার মাঝামাঝি এক বৃহৎ মরুস্থল।
প্রায় ত্রিশোর্ধ-জন সাহাবী থেকে মাহদী সংক্রান্ত হাদিস বর্ণিত হয়েছে। প্রখ্যাত হাদিস গবেষকগণ শক্তিশালী বর্ণনাসূত্রে এগুলো বর্ণনা করেছেন। আহলে সুন্নাত সকল উলামা -মাহদী প্রকাশের বিষয়ে একমত।
এ যাবৎ ভূয়া মাহদী দাবীদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকাঃ
ইতিহাস অধ্যয়নে জানা যায়- কালের পরিভ্রমণ, অন্যায়-অবিচারের ছড়াছড়ি এবং জালেম বাদশাহদের আবির্ভাবের পাশাপাশি এমন কিছু ব্যক্তির-ও আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, যারা নিজেকে যুগের মাহদী বলে দাবী করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। তন্মধ্যেঃ
১) শিয়া (রাফেযী) সম্প্রদায় মনে করে- তাদের-ও একজন মাহদী আসবে। তিনি হবেন বার ইমামের সর্বশেষ ইমাম। নাম- মুহাম্মদ বিন হাসান আসকারী। হাসান রা. নয়; বরং হুসাইন রা.-এর সন্তানদের একজন হবেন। (আল্লাহ সকল আহলে বাইতের প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন)
তাদের বিশ্বাসঃ
o ২৬০ হিজরী সনে তিনি ছামারা’র ভূগর্ভস্থ কক্ষে প্রবেশ করেছেন।
o প্রবেশকালে তার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। অদ্যাবধি তিনি সেখানে জীবিত আছেন। শেষ জমানায় সেখান থেকে বের হয়ে তিনি মাহদীরূপে আবির্ভূত হবেন।
o তারা বিশ্বাস করে যে, তিনি শহরে-বন্দরে ঘুরে নিয়মিত মানুষের খোঁজখবর নেন। কেউ তাকে দেখতে পায় না।

কোন দলিল বা যুক্তি ছাড়াই যুগ যুগ ধরে তারা এ বিশ্বাস লালন করে আসছে। জ্ঞানী মাত্রই ভ্রান্ত এ বিশ্বাসকে চরম বোকামী বলে মেনে নেবেন। আল্লাহর শাশ্বত বিধান হচ্ছে যে, মানুষ দুনিয়াতে আসবে, নির্ধারিত জীবন পার হলে ইন্তেকাল করে বরযখে চলে যাবে। নবীদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নবী-রাসূলদেরকে আল্লাহ মৃত্যু দিয়েছেন, অথচ শিয়াদের মাহদীকে হাজার বছর ধরে ভূগর্ভস্থ কক্ষে বাঁচিয়ে রেখেছেন... এমন বিশ্বাস নিছক নির্বুদ্ধিতা বৈ কিছু নয়।
এত বছর পর্যন্ত কেন তিনি অন্ধকার কুঠিরে আত্মগোপন করবেন?! বর্তমান সময়ে উম্মতে মুহাম্মদী মহা-পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে। চারিদিকে বিপদাপদ ভর করছে!! কেন বের হচ্ছেন না?! কেন মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছেন না?!
ইবনে কাছীর রহ. বলেন- “প্রকৃত মাহদী প্রাচ্য থেকে আত্মপ্রকাশ করবেন। ছামারা’র ভূগর্ভস্থ কক্ষ থেকে নয়। যেমনটি রাফেযী সম্প্রদায় মনে করে থাকে। তাদের এ বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, অযৌক্তিক এবং শয়তানের প্ররোচনা বৈ কিছু নয়। কোরআন, হাদিস এমনকি সাহাবাদের থেকেও এ ব্যাপারে কোন বাণী প্রমাণিত হয়নি।”
২) প্রথম যুগের মহা-প্রতারক আব্দুল্লাহ বিন সাবা দাবী করেছিল যে, আলী বিন আবি তালিব রা. হচ্ছেন ইমাম মাহদী। শেষ জমানায় তিনি দুনিয়াতে আবার ফিরে আসবেন।
৩) প্রসিদ্ধ মিথ্যুক মুখতার বিন উবাইদ সাকাফী দাবী করত যে, মুহাম্মদ বিন হানাফিয়্যা (মৃত্যু-৮১ হিঃ) হচ্ছেন ইমাম মাহদী। মুহাম্মদ বিন হানাফিয়্যা হচ্ছেন আলী রা. এর পুত্র। বনী হানীফা গোত্রীয় মাতা খাওলা বিনতে জা’ফর এর দিকে সম্বন্ধ করে তাঁকে ‘বিন হানাফিয়্যা’ বলা হত।
৪) আলী রা.-এর এক কৃতদাস ছিল কীছান। তার নামানুসারে কীছানী শিয়া সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। তারা মুহাম্মদ বিন হানাফিয়্যাকে সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী মনে করে। তাদের ধারণানুযায়ী- আব্দুল্লাহ বিন মুআবিয়া বিন আব্দুল্লাহ বিন জা’ফর বিন আবি তালিব হচ্ছেন ইমাম মাহদী।
৫) হাসান রা.-এর পৌত্র মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ। তাঁর উপনাম ছিল ذو النفس الزكية (পবিত্র আত্মা-বাহক)। ১৪৫ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন। অত্যন্ত খোদাভীরু এবং অধিক ইবাদতকারী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। শ্রদ্ধার আতিশয্যে কিছু লোক তাঁকে মাহদী বলে মনে করতে থাকে। জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি ও তাঁর অনুসারীবৃন্দ খড়গহস্ত ছিলেন। আব্বাসী শাসকগণ প্রায় দশ হাজার যোদ্ধা সমন্বিত বাহিনী পাঠিয়ে তাকে হত্যা করে দেয়।
৬) ভূয়া মাহদীত্ব দাবীদারদের অন্যতম হচ্ছে উবাইদুল্লাহ বিন মাইমূন কাদ্দাহ। ৩২৫ হিজরীতে ইন্তেকাল করে। তার পিতামহ ছিল ইহুদী। ৩১৭ হিজরীতে মুসলমানদেরকে হত্যা করে হজরে আসওয়াদ ছিনতাইকারী ক্বরাম্তী শিয়া সম্প্রদায়ের প্রধান হিসেবে সে পরিচিত। ইসলামের প্রতি তারা ইহুদী-খৃষ্টানদের থেকেও বেশি কুফুরী পোষণ করত।
পরবর্তীতে তার সন্তানেরা ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়। হেজায, মিসর ও শামে তারা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। প্রতারণা করে তারা নিজেদেরকে ফাতেমা রা.এর সন্তান বলে দাবী করতে থাকে। পরবর্তীতে তারা -ফাতেমিয়্যীন নামে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে।
শাফেয়ী মতাদর্শের বিচারব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে কবর ও মাজারপূজা প্রচলন করে। তাদের কারণে ইসলামের ইতিহাসে অনেক সংঘাতপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়েছে।
ক্বরাম্তী সম্প্রদায় -বাহ্যিক মুসলমান দাবী করলেও মূলত নাস্তিক। অগ্নিপূজারক ও তারকা পূজারীদের সাথে অনেকাংশে তাদের মিল পাওয়া যায়।
ইবনে কাছীর রহ. বলেন- “ফাতেমীদের মোট শাসনকাল ছিল ২৮০ বছর। উবাইদুল্লাহ কাদ্দাহ নিজেকে মাহদী দাবী করে ‘মাহদীয়া’ শহর নির্মাণ করেছিল।
৭) মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বরবরী ওরফে -ইবনে তূমরুত। ৫১৪ হিজরীতে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথমে নিজেকে হাসান বিন আলী রা.এর বংশধর বলে পরিচয় দেয়। কর্তৃত্বের অধিকারী ছিল বলে মানুষকে প্রতারিত করতে সে নানান কৌশল অবলম্বন করত। ভূয়া কেরামতী দেখিয়ে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করত। একবার কিছু অনুসারীকে কবরে লুকিয়ে রেখে মানুষদের জড়ো করে সে বলতে থাকে- ওহে মৃত কবরবাসী! আমাকে উত্তর দাও! কবর থেকে আওয়াজ ভেসে আসে“ -“আপনি হচ্ছেন নিষ্পাপ মাহদী.. আপনি... আপনি...” । লোকজন পরীক্ষার জন্য কবরের নিকটে গেলে মাটি ধ্বসে তার অনুসারীদের মৃত্যু হয়।
৮) আহমদ বিন আব্দুল্লাহ সূদানী (মৃত্যু-১৩০২হিঃ/১৮৮৫ইং)। সূদানে খোদাভক্ত সূফী-প্রধান হিসেবে পরিচিত ছিল। ৩৮ বৎসর বয়সে সে মাহদীত্ব দাবী করলে নেতৃস্থানীয় ও গোত্রপ্রধানরা তাকে সব ধরনের সহায়তা করে। সে -যে তার মাহদীত্বে অস্বীকার করল, সে আল্লাহ ও রাসূলকে অস্বীকার করল- দাবী করত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মোক্ষম ভূমিকা পালন করলেও ইতিহাস তাকে মাহদী বলে স্বীকৃতি দেয়নি।
৯) মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ ক্বাহতানী। সৌদি আরবের রিয়াদে আত্মপ্রকাশ করে। স্বপ্নযুগে মাহদীত্ব পেয়েছে বলে দাবী করলে একদল লোক তার হাতে বায়আত গ্রহণ করে। ১৪০০হিঃ/১৯৮০ইং সনে মসজিদে হারামে তাকে অবরোধ করা হয়। হত্যার মধ্য দিয়ে অবরোধের সমাপ্তি ঘটে। ঘটনাটি “-ফেতনায়ে হারাম”- নামে প্রসিদ্ধ।
প্রকৃত ইমাম মাহদী যাচাইয়ে করণীয়ঃ
নবী করীম সা. থেকে এ ব্যাপারে অনেকগুলো হাদিস বিশুদ্ধ বর্ণনাসূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ঝট করে মাহদীত্ব দাবী করলেই তাকে মাহদী বলে মেনে নেয়া হবে না। নবী করীম সা.-এর সাথে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি নিদর্শন জুড়ে দিয়েছেন। এ সকল নিদর্শন যথাযথ প্রমাণিত হলে বিনা দ্বিধায় তাকে আমরা ইমাম মাহদী বলে মেনে নেবঃ
১) প্রকৃত ইমাম মাহদী কখনো মাহদীত্বের দাবী করবে না। বায়আতের জন্য মানুষকে ডাকবে না। বরং মানুষ তাকে খুজে বের করে জোরপূর্বক বায়আত নেবে।
২) নবী করীম সা.-এর নামের সাথে সম্পূর্ণ মিল থাকবে (মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ)।
৩) তাঁর বংশ-সূত্র হাসান বিন আলী রা.-এর সাথে গিয়ে মিলবে।
৪) হাদিসে বর্ণিত দৈহিক গুণাগুণের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে (উজ্জল ললাট, সরু নাসিকা..)।
৫) প্রকাশকালে প্রেক্ষাপট নিম্নরূপ হবেঃ
o জনৈক খলীফার মৃত্যু নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হবে।
o পাপাচার-অবিচারে ভূ-পৃষ্ঠ ভরে যাবে।
o তিন রাজপুত্র -কর্তৃত্ব নিয়ে লড়াই করতে থাকবে।
o ইমাম মাহদী সৎ, নিষ্ঠাবান ও খোদাভীরু হবেন। শরীয়ত সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী হবেন।
o মক্কায় আত্মপ্রকাশ করবেন। রুকন এবং মাক্বামে ইবরাহীমের মাঝামাঝি স্থানে বায়আত নেবেন।
o মাহদীকে হত্যার জন্য শামের দিক থেকে বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। মক্কা-মদীনার মাঝামাঝি বায়দা মরুস্থলে সম্পূর্ণ বাহিনী মাটির নিচে ধ্বসে যাবে।

ভূয়া মাহদীদের আবির্ভাব কেন?
ইতিহাস অধ্যয়নে জানা যায় যে,
o নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতার লোভে কেউ কেউ মাহদীত্বের দাবী তুলেছে। যেমন, উবাইদুল্লাহ কাদ্দাহ, ইবনে তুমরূত। অথচ বর্ণিত কোন নিদর্শন তাদের মধ্যে ছিল না।
o অতি খোদাপ্রেমিক হওয়ায় মানুষ তাকে মাহদী মনে করেছে। যেমন, মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ (পবিত্র আত্মার অধিকারী)। তাঁর অনেক অনুসারী ছিল। পরে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি মাহদী নন।
o কারো কারো ক্ষেত্রে স্বপ্ন-দর্শনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে মানুষ তাকে মাহদী মনে করতে শুরু করেছে। যেমন, মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ ক্বাহতানী।

স্বপ্ন নিয়ে দু’টি কথা
নির্দিষ্ট কোন স্বপ্নের উপর শরীয়তের বিধি-বিধান নির্ভরশীল নয়।
বিচারক শারীক বিন আব্দুল্লাহ -খলীফার দরবারে উপস্থিত হয়ে খলীফাকে রাগান্বিত দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন- কি হয়েছে আপনার হে আমীরুল মুমেনীন? খলীফা বললেন- গতরাতে স্বপ্নে দেখেছি- তুমি আমার বিছানায় আরোহণ করেছ। ব্যাখ্যাকার -তুমি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে- স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিল। তখন শারীক বলতে লাগলেন- হে আমীরুল মুমেনীন! স্বপ্নটি নবী ইবরাহীম আ.-এর স্বপ্ন নয় আর ব্যাখ্যাটি-ও নবী ইউসূফ আ.-এর ব্যাখ্যা নয়!!
ব্যক্তিগত স্বপ্ন যদি এরকম ভুল ও খণ্ডিত হতে পারে, তবে সমগ্র মুসলমানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দর্শিত স্বপ্ন-ও ভুল ও খণ্ডিত হতে পারে।

স্বপ্নে পুত্রকে জবাই করছে দেখে বাস্তবেই পুত্রকে জবাই করে দিল এক পিতাঃ
পত্রিকায় সংবাদটি দৃষ্টিগোচর হয়েছিল- আফ্রিকায় জনৈক পিতা একরাতে স্বপ্নে তার ছেলেকে জবাই করতে দেখে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক-ই ছেলেকে সে জবাই করে দেয়। সে ভেবেছিল, ছেলের স্থলে দুম্বা জবাই হবে। যেমনটি ইবরাহীম আ.-এর পুত্র যবেহ-র ক্ষেত্রে হয়েছিল।
গণ্ডমূর্খ এ ব্যক্তিকে জবাইয়ের কারণ জিজ্ঞেস করা হলে বলতে থাকে, নবী ইবরাহীম আ.-এর সুন্নত পালনার্থে আমি তা করেছি। কারণ, ইবরাহীম আ. যখন স্বপ্নে পুত্র ইসমাঈল আ.কে জবাই করতে দেখেন, তখন বলেছিলেন-
“হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন! আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।-” (সূরা সাফফাত ১০১-১০৭)
সাধারণের স্বপ্নকে নবীর স্বপ্নতুল্য মনে করা গণ্ডমূর্খতা ও নেহায়েত বোকামি। স্বপ্ন যদি উত্তম হয়, তবে আল্লাহর প্রশংসা ও সুসংবাদ গ্রহণ করা উচিত। মিথ্যা হলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করা উচিত- ইনশাল্লাহ কোন ক্ষতি হবে না।

মূলনীতি
যে ব্যক্তি নিজেকে মাহদী বলে দাবী করল, অথচ উপরোক্ত গুণাবলী তার মধ্যে পাওয়া যায়নি, দাজ্জাল-ও তার জীবদ্দশায় আবির্ভূত হয়নি- সে মিথ্যুক। যে ব্যক্তি নিজেকে ঈসা বিন মারিয়াম দাবী করল, অথচ তার পূর্বে দাজ্জাল প্রকাশ পায়নি, সেও মিথ্যুক।

নিরপেক্ষ বিবেচনার দাবী
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কাছে ইমাম মাহদী নিছক মুসলমানদের একজন ইমাম ও ন্যায়পরায়ণ শাসক; এর বেশি কিছু নয়।

মাহদীর আবির্ভাব প্রত্যাখ্যান
ক) ইবনে খালদূন
মাহদী বিষয়ে বর্ণিত হাদিসগুলোর সমীক্ষা করে ইবনে খালদূন লিখেন- “আমার জানামতে মাহদী সংক্রান্ত প্রায় সকল হাদিস-ই সমালোচনাযুক্ত”।
খ) মুহাম্মদ রশীদ রেজা
তিনি লিখেন- “মাহদী সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে পারস্পরিক অসঙ্গতি লক্ষ করা গেছে। সবগুলোতে সামঞ্জস্য বিধান দুস্কর। প্রত্যাখ্যানকারীদের সংখ্যা-ও কম নয়। বুখারী-মুসলিমে-ও মাহদী সংক্রান্ত হাদিস বর্ণিত হয়নি। অনেক মনীষী মাহদী বিষয়ের হাদিসগুলোকে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন।”
গ) আহমদ আমিন
তিনি লিখেন- “মাহদী সংক্রান্ত হাদিস উপকথা বৈ কিছু নয়। মুসলিম সমাজে তদ্দরুন অনেক ভয়াবহ কুপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।”
ঘ) আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আলে-মাহমূদ
তিনি লিখেন- “মাহদীত্বের দাবী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিস্কার মিথ্যা এবং অপবিশ্বাস। এগুলো রূপকথা বৈ কিছু নয়। পরিকল্পিত এই হাদিসগুলো সন্ত্রাসের মদদে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে।”
ঙ) মুহাম্মদ ফরীদ ওয়াজদী
মাহদী’ বিষয়ে কোন হাদিস বর্ণিত হয়নি। সকল গবেষক নবী করীম সা.কে এত্থেকে পবিত্র ঘোষণা করেছেন। মিথ্যা, রূপকথা, ইতিহাস বিকৃতি ও অতিশয় বাড়াবাড়ি নিয়ে এ সকল জাল হাদিস রচিত হয়েছে। ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে কতিপয় নামধারী প্রবক্তার বরাতে এগুলোর প্রসারণ ঘটেছে।
তাদের যুক্তিঃ
১) কোরআনে কারীমে এ সম্পর্কে কিছুই বর্ণিত হয়নি। মাহদীর বিষয়টি সত্য হলে অবশ্যই কোরআনে কারীমে তার বিবরণ থাকত!!?
উত্তরঃ কোরআনে কারীমে কেয়ামতের সকল নিদর্শন বর্ণিত হয়নি। দাজ্জালের কথা কোরআনে উল্লেখ হয়নি, ভূমিধ্বসের কথা উল্লেখ হয়নি; এ সবই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ পাক নবীজীর ব্যাপারে বলেছেন- “আর তিনি প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে কোন কথা বলেন না”। নবী করীম সা. বলেছেন- “আমাকে কোরআন ও তদসদৃশ বস্তু (হাদিস) দেয়া হয়েছে”। সুতরাং বিশুদ্ধ বর্ণনাসূত্রে কোন হাদিস বর্ণিত হলে অবশ্যই তা গ্রাহ্য হবে।
২) মাহদী সংক্রান্ত হাদিস বুখারী-মুসলিমে কেন উল্লেখ হয়নি?
উত্তরঃ একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, বুখারী এবং মুসলিমে সকল বিশুদ্ধ হাদিসের উল্লেখ হয়নি। ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. ব্যতীত আর-ও অনেক হাদিস বিশারদ আছেন। তাছাড়া বর্ণনা-সূত্র যাচাই করার বহু মূলনীতি আছে, সেগুলোর বিচারে কোন হাদিস বিশুদ্ধতার গণ্ডিতে পড়লে সহীহাইনে অনুল্লেখ হলেও সেগুলো গ্রহণযোগ্য হবে। বুখারী-মুসলিমে সরাসরি না এলেও গুণাগুণ সম্বলিত হাদিস ঠিক-ই এসেছে।
৩) মিথ্যুকের জন্য কেন আমরা দরজা খোলা রাখব?!!
উত্তরঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে যাচাই করলে দরজা খোলা থাকার প্রশ্নই আসে না। কারণ, মাহদী’র দৈহিক গঠন ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের বিচারে তা শুধু একক ব্যক্তিত্বের উপরই প্রযোজ্য হয়। আর তিনিই হবেন শেষ জমানার ইমাম মাহদী।

পরিশেষে...
মাহদী আবির্ভাবের দোহাই দিয়ে দাওয়াত ও জিহাদে অবহেলা করা মৃত্যু ডেকে আনার নামান্তরঃ
ফেতনা-ফ্যাসাদ, অশ্লীলতা, অতিশয় সংঘাত ও কল্যাণের দাওয়াত হ্রাস পাওয়ার ফলে অধিকাংশ মুসলমানের অন্তরে আজ নৈরাশ্যতার কালো ছায়া ভর করেছে। অনেকেই ইমাম মাহদীর অপেক্ষায় প্রহর গুণতে শুরু করেছেন।
কেউ দাওয়াত ও জিহাদ ছেড়ে বসে পড়েছেন, কেউ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ত্যাগ করেছেন, কেউ ইলমে দ্বীন অন্বেষন ও প্রচার-প্রসার ছেড়ে ঘরের কোণায় আশ্রয় নিয়েছেন। মনে মনে ভাবছেন যে, সময় কাছিয়ে গেছে। অল্পদিনের ভেতরেই ইমাম মাহদী প্রকাশ পাবে।
o মাহদীর আত্মপ্রকাশ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি।
o ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ ও চূড়ান্ত বিজয়।
o রোমক (খৃষ্টান)দের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধ ও চূড়ান্ত বিজয়... ইত্যাদি।
বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো মুমিনের জন্য সুসংবাদ এবং মনোবল বৃদ্ধির সহায়ক; এর বেশি কিছু নয়।
সবসময় আমাদেরকে শরীয়ত মতেই চলতে হবে। ইসলামের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে, মুসলমানদের ভূমিগুলো শত্রুমুক্ত করতে হবে, জিহাদের বিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে, ইসলামের পতাকা উড্ডীন করতে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। ঐশী সাহায্যের আশায় ছাতক পাখি হয়ে বসে থাকলে চলবে না।
ইহুদীদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করতে সকল মুসলমানকে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। মুসলিম ভূ-খণ্ড থেকে দখলদার খৃষ্টান বাহিনী বিতাড়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইমাম মাহদীর অপেক্ষায় লাঞ্ছিত অপদস্থ হয়ে বসে না থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে ইসলামের মদদে জান-মাল ব্যয় করতে হবে।
অতঃপর যে কোন মুহূর্তে মাহদী প্রকাশ হলে আমরা তার সাহায্যে এগিয়ে যাব।

1 comments:

নামহীন বলেছেন...

শেষ জমানা......কতদূর ???
http://thelasthoursmail.blogspot.com/

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম