ভারতের ভূমিকা
পাকিস্তানের চির দুশমন ভারতের সম্প্রসারণবাদী কংগ্রেস সরকার এ মহাসুযোগ গ্রহণ করল। প্রবাসী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে কোলকাতায় প্রতিষ্ঠিত করা হলো। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের গেরিলা ট্রেনিং দেয়া, তাদেরকে অস্ত্র ও গ্রেনেড দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে পাঠাবার ব্যবস্থা করা, রেডিও যোগে প্রবাসী সরকারের বক্তব্য বাংলাদেশের ভেতরে প্রচার করা ইত্যাদি সবই ভারত সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ ও সহযোগিতা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বয়ং বহু দেশ সফর করে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন যোগানোর চেষ্টা করেন। নি:সন্দেহে এ সবই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু ভারত সরকার তার স্বার্থেই এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে সবাই স্বীকার করতে বাধ্য।
ভারত বিরোধীদের পেরেশানী
পাকিস্তান আন্দোলনের সময় থেকে যারা ভারতীয় কংগ্রেসের আচরণ লক্ষ্য করে এসেছে, পাকিস্তান কায়েম হবার পর ভারতের নেহেরু সরকার হায়দ্রাবাদ ও কাশ্মীর নিয়ে যে হিংস্র খেলা দেখিয়েছেন, মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমিকে পংগু করার জন্য যত রকম প্রচেষ্টা ভারতের পক্ষ থেকে হয়েছে, পূর্ব বাংলার সীমান্ত নিয়ে ভারত বার বার যে ধোঁকাবাজি করেছে, সর্বোপরি ফারাক্কা বাঁদ দিয়ে গংগার পানি আটকে রেখে উত্তরবংগকে মরুভূমি বানাবার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে এদেশের কোন সচেতন মুসলিমের পক্ষে ভারত সরকার এদেশের বন্দু মনে করা কিছুতেই সম্ভব ছিল না।
যেসব রাজনৈতিক দল ও নেতা ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাবের দরুন আতংকগ্রস্ত ছিল, তারা মহা-সংকটে পড়ে গেল। তারা সংগত কারণেই আশাংকা করল যে, বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সাহায্য করে বারত একদিকে মুসলমাদের উপর ভারত মাতাকে বিভক্ত করার প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে, কোলকাতার একাকালের অর্থনৈতিক পশ্চাদভূমি বাংলাদেশ অঞ্চলকে পুনরায় হাতের মুঠোয় আনার মহাসুযোগ গ্রহণ করছে। এ অবস্থায় ভারতের নেতৃত্বে ও সাহায্য বাংলাদেশ কায়েম হলে ভারতের আধিপত্য থেকে আত্মরক্ষার কোন উপায় হয়তো থাকবে না। বাংলাদেশের চারদিকে ভারতের যে অবস্থান তাতে এ আশাংকাই স্বাভাবিক ছিল।
বিশেষ করে ভারতের সংখ্যালুঘু মুসলিমদের উপর যে হিংস্র আচরণ অব্যাহতভাবে চলছিল, তাতে প্রত্যেক সচেতন মুসলিমদের অন্তরেই পেরেশানী সৃষ্টি হলো। ভারেতর সম্প্রসারণবাদী মনোভাব সম্পর্কে ওয়াকিফহাল কারো পক্ষে আতংকগ্রস্ত না হয়ে উপায় ছিল না।
0 comments: