আজও তুরস্কের অনেক পিতামাতা তাদের আদরের সন্তানের নাম 'মুহাম্মাদ ফাতেহ' রেখে থাকেন।কেননা এ নামটি ইসলামী ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।উসমানী খিলাফতের সপ্তম খলীফা সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রহ) ছিলেন একজন মুজাহিদ সুলতান ,যাঁর মাধ্যমে নবী করিম (সাঃ) এর এর একটি ভবিষ্যতবাণী সত্য হয়েছে।হযরত বিশর বিন সুহাইম(রাঃ) থেকে সে ভবিষ্যত বাণীটি বর্ণিত হয়েছে-
لتفتحن القسطنطنية فلنعم الأمير أميرها ولنعم الجيش ذلك الجيش
"নিশ্চয়ই তোমরা কন্সট্যান্টিপোল বিজয় করবে।তার আমীর উত্তম আমীর হবে এবং সেই বাহিনী উৎকৃষ্টতম সেনাবাহিনী হবে।"(মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৫, হাদীস : ১৮৯৫৭; মুসতাদরাকে হাকেম ৫/৬০৩, হাদীস : ৮৩৪৯; মুজামে কাবীর, তাবারানী, হাদীস : ১২১৬)
মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের রাজধানী কন্সট্যান্টিপোল জয় করেন।
১৬ই মুহরম ৮৫৫ হিজরী মোতাবেক ১৮ ফেব্রুয়ারী ১৪৪৫ খৃস্টাব্দে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রহ) উসমানী খিলাফতের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন।তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর,কিন্তু অসম সাহস,অতুলনীয় প্রজ্ঞা, নিপুণ রণকৌশল ও গভীর ঈমানী জযবায় অল্প সময়েই তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের ছাড়িয়ে যান।
তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি খিলাফত পরিচালনা করেন।তাঁর শাসনামলে যেমন ইসলামের বিজয়াভিজানে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছিল তেমনি সকল শ্রেণীর ও ধর্মের মানুষ ন্যায়বিচার, জান-মালের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় ও মানবিক অধিকার লাভ করেছিল।প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল ইসলামী শাসনব্যবস্থার সুফল।
সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রহ) এর শাসনামল বিভিন্ন দিক থেকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।তবে যা তাঁকে উম্মাহর হৃদয়ে অমর করে রেখেছে তা হলো কন্সট্যান্টিপোল বিজয়।
ধর্মীয়,রাজনৈতিক ও ভৌগলিক দিক থেকে কন্সট্যান্টিপোল ছিল পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর।খৃস্টীয় তৃতীয় শতক থেকেই তা ছিল বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নগরী।কন্সট্যান্টিপোল নগরীর তিন দিকে জল, একদিকে স্থল।পশ্চিমে বসফরাস প্রণালী,দক্ষিণে গোল্ডেন হর্ণ ও উত্তরে মারমারা উপসাগর।তাই ভৌগলিক দিক অবস্থানের কারণে একে তখন বিশ্বের সুরক্ষিত নগরীগুলোর মধ্যে গণ্য করা হত।এছাড়া নগরীর প্রতিরক্ষাব্যাবস্থাও ছিল অতুন্ত শক্তিশালী। গোটা নগরীর চারপাশে ছিল একাধিক দুর্ভেদ্য প্রাচীর ও সার্বক্ষণিক সশস্ত্র প্রহরা।এসব কারণে কন্সট্যান্টিপোল ছিল সে বিচারে এক অজেয় দুর্গ।এখানে মনে রাখতে হবে যে, সে যুগটা মিসাইল ও যুদ্ধবিমানের যুগ ছল না। তাই উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলোই তখন নগরীর সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট ছিল।
কন্সট্যান্টিপোল জয়ের জন্য সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রহ) তৎকালীন বিশ্বের সর্বাধুনিক রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের সবচেয়ে দূর পাল্লার কামান তিনিই তৈরি করেছিলেন।
প্রস্তুস্তি সমাপ্ত করার পর তিনি অভিযান আরম্ভ করেন।তার স্থল বাহিনী নগরীর পূর্ব দিকে অবস্থান নিল এবং নৌবাহিনীর জাহাজগুলো বসফরাস প্রণালীতে ছড়িয়ে পড়ল।কিন্তু বসফরাস প্রণালী থেকে 'গোল্ডেন হর্ণে' প্রবেশ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।কেননা গোল্ডেন হর্নের মুখ শিকল দ্বারা বন্ধ করা দেওয়া হয়েছিল এবং বাইজেন্টাইন রণতরীগুলো সেখানে অবস্থান নিয়ে গোলা নিক্ষেপ করছিল।
প্রচন্ড যুদ্ধের পরও উসমানী নৌবহর গোল্ডেন হর্ন পদানত করতে সক্ষম হল না।অন্যদিকে বন্দর সুরক্ষিত থাকায় বাইজেন্টাইন বাহিনী তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল পূর্বদিকে,সুলতানের স্থল বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য।তাই তাদের শক্তিকে বিভক্ত করার জন্য এবং দুই দিক থেকে একযোগে আক্রমণ করার জন্য উসমানী নৌবহরের গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করা ছিল অপরিহার্য। প্রায় দুই সপ্তাহ অবিরাম যুদ্ধের পরও নৌপথে বিজয়ের কোন লক্ষণ দেখা গেল না।অবশেষে সুওলতান মুহাম্মাদ ফতেহ এমন এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে একমাত্র বিরল ও বিস্ময়কর হয়ে আছে।পাশ্চাত্যের কট্টর ঐতিহাসিকরা পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ না করে পারেনি। গিবনের মত ঐতিহাহিকও একে 'মিরাকল' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সুলতান ফাতেহ (রহ),মুজাহিদদের আদেশ দিলেন রণতরীগুলো ডাঙ্গায় তুলে দশ মাইল পথ অতিক্রম করে গোল্ডেন হর্নে নামাতে হবে, এই দীর্ঘ পথ পুরোটাই ছিল পাহাড়ী উঁচুনিচু ভূমি। এর উপর দিয়ে সত্তরটি রণতরী টেনে নেয়া ছিল এককথায় অসম্ভব।কিন্তু সুলতান ফাতেহ এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন।
পুরো পথে কাঠের পাঠাতন বিছানো জল, তাতে চর্বি মাখিয়ে পিচ্ছিল করা হল এবং এর উপর দিয়ে রণতরীগুলো টেনে নিয়ে যাওয়া হল।এভাবে টিলা ও পাহাড়ের উপর দিয়ে রাতের মধ্যে সত্তরটি রণতরী তিনি গোল্ডেন হর্ণে প্রবেশ করাতে সক্ষম হলেন।
সত্তরটি জাহাজের এই মিছিল সারারাত্রি মশালের আলোতে ভ্রমণ করেত থাকে। বাইজেণ্টাইন সৈন্যরা কন্সট্যান্টিপোলের প্রাচীর থেকে বসফরাসের পশ্চিম তীরে মশালের দৌড়াদৌড়ি লক্ষ্য করে।কিন্তু অন্ধকারের কারণে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি।অবশেষে ভোরের অয়ালো যখন রহস্যের পর্দা উন্মোচন করে দেয়,ততক্ষণে মুহাম্মাদ ফাতেহের সত্তরটি রণতরী ও ভারী তোপখানা গোল্ডেন হর্নের উপরাংশে পৌঁছে গেছে। গোল্ডেন হর্নের মুখে প্রহরারত বাইজেন্টাইন নৌ সেনারা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দেখল যে, উছমানী রণতরীগুলো মৃত্যুদূতের মতো তাদের পিছন দিক থেকে ধেয়ে আসছে। এই ঘটনা ত্থেকে একটি প্রবাদ তৈরি হলঃ"যখন পানির জাহাজ ডাঙ্গায় চলবে তখন বুঝবে কন্সট্যান্টিপোলের পতন অত্যাসন্ন।"
চূড়ান্ত আক্রমণের আগে সুওলতান মুহাম্মাস ফাতেহ(রহ) বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সট্যান্টিনকে নগরী সমর্পণের পয়গাম পাঠালেন এবং নগরবাসীর জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলেন, কিন্তু সম্রাট তা গ্রহণ করলেন না।এবার সুলতান চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেন।
ঐতিহাহিকগণ লেখেন,আক্রমণের আগে সুলতান ফাতেহ(রহ) বাহিনীর অধিনায়কদের তলব করে সকল মুজাহিদিকে এই পয়গাম পৌঁছে দেওয়ার আদেশ করলেন যে,কন্সট্যান্টিপোলের বিজয় সম্পন্ন হলে রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর একটি ভবিষ্যত বাণী সত্য হবে এবং তাঁর একটি মুজিজা প্রকাশিত হবে। অতএব কারো মাধ্যমে যেন শরীয়াতের কোন বিধান লঙ্গিত না হয়।গীর্জা ও উপসানালয়গুলোর যেন অসম্মান না করা হয়,পাদ্রী,মহিলা,শিশু এবং অক্ষম লোকদের যেন কোন ধরনের কষ্ট না দেওয়া হয়...।।'
৮৫৭ হিজরীর ২০ জুমাদাল উলার রজনী মুজাহিদগণ দুয়া ও ইবাদাতের মধ্যে অতিবাহিত করেন। ফজরের নামাজের পর সুলতান চূড়ান্ত আক্রমণের আদেশ দিলেন এবং ঘোষণা করলেন যে ,"ইনশাআল্লাহ আমরা যোহরের নামাজ সেন্ট সুফিয়ার গীর্জায় আদায় করব।"
দ্বিপ্রহর পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে ভীষণ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলতে থাকে।কিন্তু বাইজেন্টান বাহিনী অসাধারণ বীরত্বে একটি সৈন্যও শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। অবশেষে সুওলতান তার বিশেষ বাহিনী ইয়ানাচারী বাহিনীকে সাথে করে সেন্ট রোমান্স এর ফটকএর দিকে অগ্রসর হন। ইয়ানাচারী বাহিনীর প্রধান আগা হাসান তার ত্রিশ জন বীর সঙ্গীকে সাথে করে প্রাচীরের উপর আরোহণ করেন।হাসান ও তার আঠার সাথীকে প্রাচীর থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। তারা শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।অবশিষ্ট বারোজন প্রাচীরের উপর দৃঢ় অবস্থান করতে সক্ষম হন।তারপর উসমানী বাহিনীর অন্যান্য দলও একের পর এক প্রাচীরে আরোহণ করতে সক্ষম হন। এমনিভাবে কন্সট্যান্টিপোলের প্রাচীরে চন্দ্রখচিত লাল পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়।
বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সট্যান্টিন এতক্ষণ বীরত্বের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিল।কিন্তু সে তার কিছু অসাধারণ বীর যোদ্ধার সাহস হারানোর পর নিরাশ হয়ে পড়ে।সে উচ্চস্বরে বলে-"এমন কোন খৃস্টান নেই কি, যে আমাকে খুন করবে।"
কিন্তু তার আহ্বানে সাড়া না পেয়ে সে রোম সম্রাট(কায়সারদের) বিশেষ পোশাক খুলে দূরে নিক্ষেপ করে,উসমানী সেনাবাহিনীর উন্মত্ত তরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করে সত্যিকার সৈনিকের মত বীরত্বের সাথে লড়তে লড়তে নিহত হয়।তার মৃত্যতে ১১০০ বছরের বাইজেন্টানের সেই রোম সম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে ,যার সূচনা হয়েছিল প্রথম কন্সট্যান্টিনের হাতে এবং বিলুপ্তও হল আরেক কন্সট্যান্টিনের হাতে । তারপর থেকে কায়সায় উপাধিই ইতিহাসের উপখ্যানে পরিণত হয়ে যায়। এভাবে ইহ-পরকালের সর্দার মহানবী(সাঃ) এর এই বাণী সত্যে প্রমাণিত হয়-"কায়সারের ধ্বংসের পর আর কোন কায়সার জন্ম নিবে না।"
আল্লাহ তাআলা তাঁর মুজাহিদ বান্দার কথাকে সত্য করেছেন।জোহরের সময় সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রহ) বিজয়ীর বেশে কন্সট্যান্টিপোল নগরীতে প্রবেশ করেন। ইংরেজী তারিখ হিসাবে দিনটি ছিল ২৯ মে ১৪৫৩ ঈ.।সেন্ট রোমান্সের উপর(বর্তমান নাম TOP KOPY) উসমানী পতাকা উড়ছিল। সুলতান ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে সিদজায় পড়ে গেলেন।
নগরীর অধিকাংশ খৃস্টান সেন্ট সোফিয়ায় আশ্র্য় নিয়েছিল।সুলতান তাদেরকে অভয় দিলেন এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা দান করলেন।
এরপর আযান দেওয়া হল।সাড়ে এগারো শত বছর যাবৎ যেখানে 'তিন খোদা'র উপাসনা হচ্ছিল সেখানে আজ তাওহীদের ধ্বনি উচ্চারিত হল।সকল ছবি ও মূর্তি সরিয়ে ফেলা হল।মুসলিম বাহিনী জোহরের নামাজ সেন্ট সোফিয়ায় আদায় করল।
সুলতান ফাতেহ(রহ) একে মসজিদে পরিণত করার ফরমান জারি করলেন। কেননা প্রথমত কন্সট্যান্টিপোলের সম্রাট আত্মসমর্পণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল তাই সুলতান এই গীর্জাকে পূর্বাবস্থায় বহাল রাখতে বাধ্য ছিল না। তদুপরি এটি ছিল অর্থডক্স খ্রিস্টানদের কেন্দ্রীয় গীর্জা ।তাই এর সাথে বহু কুসংস্কার ও অলৌকিকতার বিশ্বাস জড়িত হয়েছিল। এই কুসংস্কারের মূলোৎপাটন প্রয়োজন ছিল।
কন্সট্যান্টিপোল বিজয়ের পর সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রহ) নগরীর খৃস্টন অধিবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করলেন এবং তাদেরকে তাদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেন।
কন্সট্যান্টিপোল বিজয়ের এই ঘটনার পর কন্সট্যান্টিপোল যা বর্তমানে ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত উসমানী খিলাফতের রাজধানীর রূপ লাভ করে এবং বহু শতাব্দী পর্যন্ত আলমে ইসলামীর মধ্যে তার বিশেষ গুরুত্ব ছিল।
তথ্যসূত্র-
১) জাহানে দিদাহ- শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী (দা বা)
২) Encyclopedia of Islam
৩) wikipedia
৪) ইসলামের ইতিহাস
৫) Encyclopedia of World History
৬) History of Decline & Fall of Roman Empire and History of Christianity- Edward Gibbon
৭)মাসিক আল-কাউসার
লিখেছেন : ব্লগার অগ্রপথিক
7 comments:
সবখানে সবাই আছে বলেছেন: কি কারনে কন্সটান্টিনপোল আক্রমন করা হয়েছিল?
লেখক বলেছেন: রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগেই রোম সম্রাজ্যের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ শুরু হয়। অতঃপর সাহাবীদের যুগে তৎকালীন দুই পরাশক্তি সাসানী(পারস্য ) সম্রাজ্য এবং রোমান সম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। সাসানীরা পুরোপুরি ধ্বংশ হয়ে গেলেও রোমান সম্রাজ্য কন্সট্যন্টিপোলে গিয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে মুসলামানদের সাথে তাদের যুদ্ধ চলতে থাকে,শেষ পর্যন্ত সুলতান ফতেহ মুহাম্মাদের মাধ্যমে তাদের চূড়ান্ত পরাজয় হয়।
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ চমৎকার তথ্য সম্মৃদ্ধ পোস্টের জন্য।
এই সকল ইতিহাস থেকে কি মনে হয় যে মুসলমানদের একমাত্র মেহনত হওয়া উচিত নিজের নফসের ইসলাহা? বা এইসব যুদ্ধের বিজয় কি শুধুমাত্র আধ্যাত্তিক শক্তির বলেই হয়েছিল নাকি তখনকার মুসলমানরা সমসাময়ীক জ্ঞান বিজ্ঞান রাজনীতি অর্থনীতি ভুগোল যুদ্ধবিদ্যা ইত্যাদিতেও বিশ্বের নেতৃত্বে ছিল? যদি তাই হয় তাহলে আজকে যারা সবকিছু ছেড়ে শুধুমাত্র নিজের নফসের বিরুদ্ধে জেহাদকেই একমাত্র কর্মসুচি বলে প্রচার করে এবং সেদিকেই মেহনত করার আহ্বান জানায় তাদের ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
নফসের ইসলাহা বা ঈমানের দৃঢ়তা নি:সন্দেহে প্রয়োজন - এটা মেনে নিয়েই আমি জানতে চাচ্ছি - কেউ যদি শুধুমাত্র এই কাজেই বছরের পর বছর এমনকি প্রজন্মের পর প্রজন্ম পার করে দেয় তাহলে সে ঐসব বিষয়ে বিশ্ব নেতৃত্বে কিভাবে পৌছাবে? বা ইসলামের স্বর্ণযুগের মুসলমানগন যদি শুধুমাত্র নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করেই জীবন পার করে দিতেন তাহলে ইসলামের ইতিহাস এতটা সম্মৃদ্ধ ও গৌরবের হত কি না?
লেখক বলেছেন: আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন বুঝেছি, আমি কিছু বলতে চাই না,শুধু এতটুকু বলব একটু ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করুন দেখবেন, ইতিহাসে যারা মহান মুজাহিদ ছিলেন,তারা সকলেই কোন না কোন শায়খের তত্বাবধানে ছিলেন, এমনকি এই উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী যুদ্ধে অগ্রগামী ছিলেন তারা সকলেই ছিলেন এই পথের পথিক। এমনকি এই যুগের জিহাদের ঝাণ্ডা যারা আজো উড্ডীন রেখেছেন তাদের বেশিরভাগই এই পথের পথিক,যেমন- আফগানিস্তানে মোল্লা মোহাম্মাদ উমর,কাশ্মীরের আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ মাওলানা মাসউদ আজহার, শায়খ আবদুল্লাহ আযযাম(রহ) , দাগেস্তানের মুজাহিদরা তো পুরোপুরি এই লাইনের, আর নাই বললাম।
এখন সবার পক্ষে যেমন জিহাদে যাওয়া সম্ভব না, তেমনি এই অযুহাতে ইসলাহে নফস থেকে দূরে থাকাও বোকামী। এখন কেউ যদি ইসলাহে নফস করে অন্যান্য কাজ থেকে দূরে থাকে এটা তার নিজের দোষ।
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ উত্তর দেয়ার জন্য
আপনি যাদের নাম বল্লেন তারা সবাই বিদেশী - তাই তাদের সম্পর্কে খুব বেশী জানা বা তাদের আন্দোলনে শরিক হওয়া বাংলাদেশে থেকে আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বাংলাদেশে কি এমন কেউ আছে যে আপনার দৃস্টিতে ঐ ধরনের সহিহ জিহাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন? যদি ভারত অধ্যুসিত কাশ্মিরে বা আমেরিকার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে জিহাদী আন্দোলন সম্ভব হয় তাহলে বাংলাদেশে কেন নয়?
কেউ নিজে থেকে সব কাজ বাদ দিয়ে ইসলাহ নিয়ে পরে থাকলে অবশ্বই সেটা তার দোষ - কোন সন্দেহ নাই - কিন্তু যদি একটা পুরো দল এইভাবে শুধুমাত্র ইসলাহ নিয়ে থাকতেই উৎসাহিত করে এবং এটাকেই জিহাদে আকব বলে প্রচার করে বা ঐধরনের জিহাদী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তাই অস্বীকার করে - তবে তাদের ব্যাপারে আপনি কী বলবেন??
হ্যা সবার পক্ষে জিহাদে যাওয়া সম্ভব নয় - কিন্তু কিছু মানুষের পক্ষেতো সম্ভব -বাংলাদেশে কি সেই স্বল্প সংখ্যক যোগ্য মানুষও নাই? এতদিনের ইসলাহী মেহনতেও কি কেউ যোগ্য হয়ে ওঠেনি?? অথবা বাংলাদেশের শায়েখগন কি তাদের তত্বাবধানে থাকা লোকদের ঐরকম মুজাহিদ হওয়ার বা জিহাদী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন না - যেমনটা আপনি ইতিহাসে দেখতে বল্লেন??
লেখক বলেছেন: বাংলাদেশে জিহাদ বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন, তা বুঝলাম না। আপনি বাংলা ভাইদের মতো মুসলমানদের হত্যা করাকেই জিহাদ বুঝাতে চেয়েছেন। আপনি যদি তা বুঝাতে চান ,তাহলে আমি তা সমর্থন করি না। আর আপনি যদি চান ক্ষমতা দখল, তাহলে আমি বলব ক্ষমতা দখলের জন্য ইসলাম আসেনি। আর যেখানে অধিকাংশ মুসলমান ঠিক মত নামযই পড়ে না,সেখানে ইসলাম কায়েম করা কি শুধু বললেই চলবে কিংবা যাদের নিজ জীবনে ইসলামের চর্চা নেই আপনার কি মনে হয় ,তারা ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম পালন করবে,এর সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ হলো পাকিস্তান। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় তৎকালীন মুসলিম লীগের নেতারা বলেছিল যে,তারা ইসলামী আইন মত দেশ চালাবে,কিন্তু অনেক আলেমই তখন বলেছিল, যাদের নিজ জীবনেই ইসলাম নেই তাদের মাধ্যমে এই কথার বাস্তবায়ন কখনই হবে না। এর সত্যায়ণ তো তখনকার মানুষ নিজ চোখেই দেখেছে।
হ্যাঁ, বাংলাদেশে যদি কখনো জিহাদ ফরয হওয়ার মতো পরিবেশ হয়,তখন দেখা যাবে,কারা এই পথে অগ্রগামী থাকে।আর আপনার তো কিছুটা হলেও জানার কথা ,যে সব বাংলাদেশী ভাইয়েরা পৃথিবীর ভিবিন্ন দেশে জিহাদে শরীক হয়েছেন,তাদের বেশীরভাগই এই পথের পথিক। আপনি একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, আর যদি তাও বিশ্বাস না হয়,তাহলে দয়া করে হযরত হাফেজ্জী হুজুর(রহ) এর কবরের পাশে একটু ঘুরে আসুন,তার কররের পাশে তারি কমবয়স্ক নাতীর কবর আপনি দেখতে পারবেন, একটু কষ্ট করে জেনে নিয়েন উনি কোথায় শহীদ হয়েছে।
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: ভাই আপনি জিহাদ ও মুসলিম ইতিহাসের গৌরব গাঁথা নিয়ে এত বড় পোস্ট দেয়ার পরও যদি বলেন জিহাদ কী তাই বুঝেন না তাহলে আর কী বলার থাকে? জিহাদ কি তা মুহাম্মদ(স.) ও সাহাবী(রা.) গন তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন - নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু নাই।
যাই হোক আপনি অন্তত একটা বিষয় স্বীকার করলেন যে বাংলাদেশে আপনার দৃস্টিতে কোন জিহাদ জারি নাই। কোন দিন জিহাদের পরিবেশ তৈরী হলে তখন দেখা যাবে কারা অগ্রগামী থাকে। আপনাকে ধন্যবাদ যে আপনি অন্তত কোন এক দিন জিহাদের আশা রাখেন। অন্যদেরমত নফসের ইসলাহাকেই জিহাদ হিসেবে বর্ননা করে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন না।
এখন তাহলে প্রশ্ন এসে যাচ্ছে - বাংলাদেশে জিহাদের পরিবেশ কেন নাই? কবে, কিভাবে জিহাদের পরিবেশ তৈরী হবে? আপনি বলছেন যাদের নিজেদের জীবনে ইসলাম নাই তারা ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম পালন করতে পারবে না - খুবই সত্য কথা। কিন্তু যাদেরকে আপনি ইসলাম পালনকারী হিসেবে চেনেন তারা কেন ক্ষমতায় গিয়ে রাস্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠার চেস্টা করছেন না? না কি এতদিন মেহনত করার পরও তাদের জীবনেও ইসলাম আসেনি?
আর দেশের সকল মানুষের মধ্যে ইসলাম এনে তারপর রাস্ট্রের কথা চিন্তা করতে হবে এই যদি মুলনীতি হয় - তাহলে এই পোস্টেই আপনি যে কন্সট্যান্টিপোল বিজযের কাহিনী বর্ণনা করলেন সেখানে কি ঐ অঞ্চলের সকল মানুষের জীবনে আগে ইসলাম এসেছিল না কি বীর মুজাহিদ সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রহ) আগেই যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে রাস্ট্রীয় ব্যাবস্থায় ইসলামী বিধান কায়েম করেছিলেন?? যে মদীনায় প্রথম ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেখানকার সকল মানুষ কি আগেই ইসলাম গ্রহন করেছিল - না কি বহু ইহুদী ও বেদুইন গোত্রের লোকদের ইসলামের বাইরে রেখেই মদীনা সনদের মাধ্যমে শুধুমাত্র শান্তিপুর্ণ সহঅবস্থানের শর্তেই ইসলামী রাস্ট্রের কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছিল??
আপনি যেহেতু ইসলামের ইতিহাস নিয়ে লিখছেন তাই আপনার কাছে এ'ব্যাপারে অন্যদের থেকে শোনা কথার পরিবর্তে তথ্য সম্মৃদ্ধ ও সুচিন্তিত উত্তর আশা করছি। আমার কেন জানি মনে হয় - আমরা সবাই কোন না কোন দিক দিয়ে খুব বড় কোন ভুলের মধ্যে আছি - এ'জন্যই বর্তমান সমাজে এত মুসলমান, মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা, ওয়াজ, তাবলীগ, ইসলামী রাজনীতি - ইত্যাদী ইত্যাদি থাকার পরও সমাজ দ্রুত থেকে দ্রুততর গতিতে কেবল অধ:পতনের দিকেই ছুটে চলেছে। মারাত্মক কোন ভুল ছাড়া এটা কিভাবে সম্ভব?? অথচ বদরের প্রান্তরে মাত্র ৩১৩ জন মানুষ বিশ্বের ইতিহাসের গতিধারা বদলে দিয়েছিলেন, ইখতিয়ার উদ্দিনের নেতৃত্বে মাত্র ১৭ জন মুজাহিদ বাংলার প্রতিষ্ঠিত রাজ শক্তি লক্ষণ সেনকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। আর আজকে আমরা লক্ষ লক্ষ মানুষ দ্বীনের জন্য বিভিন্ন দলে কাজ করছি - কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। যদি এতগুলি দলের মধ্যে কোন একটা দলও সঠিক পথে থাকত তাহলেও তো সমাজের চেহারা বদলে যাওয়ার কথা - কারণ কোন দলেইতো লাখের নিচে মানুষ নাই - তাই না??
লেখক বলেছেন: ভাই আপনি বাংলাদেশে কিভাবে জিহাদ করা উচিৎ তা একটু বুঝিয়ে দিলে ভালো হতো। বাংলাদেশ কি 'দারুল হরব' না 'দারুল হরব' না হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষের সাথে কি ধরনের জিহাদ করা উচিৎ।
আর বাংলাদেশে কি জিহাদে ইক্বদামী (আক্রমণাত্মক ) জিহাদ করা হবে নাকি আক্রান্ত হলে দিফায়ী (রক্ষণাত্মক) জিহাদ করতে হবে। ইতিহাসের যে মহান বীরেরা যারা ইক্বদামী জিহাদ করেছেন ,তারা মুসলিম দেশে আক্রমণ করেছিলেন নাকি কুফরী রাষ্ট্রতে।
আর আপনার যদি ধারণা হয় যারা নফসের ইসলাহকে জিহাদে আকবর বলে তারা আসল জিহাদের আগ্রহী নয়,তাহলে নিচের উদৃতিটি দেখুন-
"আজকাল সাধারণভাবে মানুষের ধারণা এই যে,কাফেরের সাথে লড়াই করা জিহাদে আসগর ( ছোট জিহাদ) এবং নফসের মুজাহাদা(কুপ্রবৃত্তির দমন ও আত্মশুদ্ধি) জিহাদে আকবর (বড় জিহাদ) । যেন তারা নিভৃতে নফসের মুজাহাদায় নিমগ্ন হওয়া থেকে কাফেরদের সাথে লড়াই করাকে সকল ক্ষেত্রেই নিম্নমানের মনে করে।
এই ধারণা ঠিক নয় বরং বাস্তব কথা হল, কাফেরদের সাথে লড়াই করা ইখলাস শূন্য হলে বাস্তবিকই তা নফসের মুজাহাদা থেকে নিম্নস্তরের কাজ। এই ধরণের লড়াইকে জিহাদে আসগর এবং বিপরীতে নফসের মুজাহাদাকে জিহাদে আকবর বলা হয়েছে।
কিন্তু কাফেরদের সাথে লড়াই যদি ইখলাসপূর্ণ হয় তবে এই লড়াইকে জিহাদে আসগর বলা গাইরে মুহাকক্বিক(অগভীর জ্ঞানের অধিকারী) সুফীদের বাড়াবাড়ি এবং এই লড়াই অবশ্যই জিহাদে আকবর এবং তা নিভৃতে নফসের মুজাহাদায় নিমগ্ন হওয়া থেকে উত্তম। কেননা যে লরাই ইখলাসপূর্ণ হবে তাতে নফসের মুজাহাদাও বিদ্যমান থাকবে।সুতরাং তাতে উভয় জিহাদের ফজীলতই একত্রিত হচ্ছে ।(হাকীমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানভী (রহ) রচিত'আল ইফাযাতুল ইয়াওমিয়্যাহ খঃ৪,হিসসাঃ৫ পৃঃ৮২,মালফুয,১০৪১)
এখন কেউ যদি তাবলীগের কাজিকেই 'জিহাদ' বলে ,কেউ তাযকিয়াকে জিহাদ বলে,পারিভাষিক অর্থে তা জিহাদ,কিন্তু কখনোই তা আসল জিহাদের সমান হবে না। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টা বরং ইলেকশনে অংশগ্রহন কারাকেউ জিহাদ বলছেন। কারো কারো থেকেও তো এও বোঝা যায় যে, পাশ্চাত্য রাজনীতির অন্ধ অনুসরণ ও জিহাদের শামিল। আল্লাহ পানাহ!
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: দু:খিত, হায়াতুস সাহাবা আমার সংগ্রহে নাই। সম্ভব হলে সংগ্রহ করে দেখব। আপনিতো গ্রন্থটি পড়েছেন সেখানে কি উল্লেখিত প্রশ্নগুলির জবাব আছে? থাকলে সংক্ষেপে উত্তরগুলি দিয়ে দিলে ভাল হয়।
আর একটা বিষয় আপনার সাথে শেয়ার করতে চাই। অনেক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার এক বড় ভাইএর সাথে পরিচয় ছিল যিনি তাবলীগের পথে বেশ অগ্রসর ছিলেন। জিহাদ বা রাস্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ওনার কাছ থেকে একটা বক্তব্য শুনেছিলাম যা এখনও মনে আছে (কারণ আমি বিষয়টা নিয়ে পরে অনেক ভেবেছি)। উনি বলতেন - আল্লাহর ওয়াদা হচ্ছে ইমানদারদের রাস্ট্র ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু তার জন্য ঈমান ঠিক হতে হবে - অনেকটা অংক দৌড়েরমত। অংক দৌড়ে যাদের অংক ঠিক হয় তাদের মধ্য থেকে যে প্রথমে আসে সেই বিজয়ী হয়। আর কার অংক ঠিক না হলে ভুল অংকসহ যে আগে আসবে সেই জিতবে। বর্তমানে ইমানী অংকে কেউ সঠিক নাই তাই দুনিয়ার জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিচারেই জয় পরাজয় হচ্ছে। কিন্তু যখন কার ইমানী অংক সঠিক হবে তখন দুনিয়ার কোন প্রযুক্তি/যুদ্ধবিদ্যা ছাড়াই আল্লাহর সাহায্যে মুসলমানরা বিজয়ী হবে। তাই মুসলমানদের একমাত্র কাজ ইমান ঠিক করা - তাবলীগ জামাত সেটাই করছে। ঈমান ঠিক হলে আল্লাহর সাহায্যেই যখন বিজয় আসবে তথন আলাদা ভাবে জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি চর্চার প্রয়োজন কি?
আপনি কি মনে করেন এই মনভাব তাবলীগের মৌলিক দর্শন - না কি ঐ বড় ভাই এর নিজস্ব চিন্তা?
লেখক বলেছেন: আমি কোন আলেম বা মুফতি নই তাই আপনার প্রশ্নগুলো আমাকে না করে কোন মুফতিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হতো।কারণ ফতোয়া দেওয়ার অধিকার একমাত্র মুফতির।
আর আমার মনে হয় আপনার বড় ভাই যা বলেছে এটা তার নিজস্ব অভিমত।কারণ আপনি খেয়াল করলে দেখতে পাবেন তাবলীগের অনেক ভাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে জড়িত আছে। আর যেখানে যুদ্ধ-সরঞ্জামাদী নিজেদের সাধ্যমত সংগ্রহ করা এবং তৈরী করা,যাতে কুফরী শক্তির সাথে লড়াইয়ে টিকে থাকা যায় যা প্রত্যেক মুওলিম রাষ্ট্রের উপর ফরয সেখানে তা থেকে বাধা দেওয়ার তো কোন কারণ থাকতে পারে না। তবে অবশ্যই আল্লাহর নুসরত এবং সাহায্য ঈমানের উপরই নির্ভরশীল, তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানে উতকর্ষের পাশাপাশি সবার আগে ঈমানকে শক্তিশালী করা উচিৎ।
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ পরামর্শের জন্য
কিন্তু আমি যে প্রশ্নগুলি করেছি তা কি ফতেয়ার বিষয়?
আর মুফতিগনের মধ্যে কি কোন বিষয়ে ঐক্যমত আছে?
না নাই - আপনি যে ধারার মুফতির কাছে যাবেন সেই ধারার ফতোয়াই পাবেন। আর আমার প্রশ্নগুলি মোটেই ফতোয়ার বিষয় নয় বরং একটি ইসলামী সংগঠনের নীতিমালার বিষয়। আপনি যেহেতু ঐ সংগঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাই আপনাকে প্রশ্ন করেছি - উত্তর যদি না জানেন তাহলে উর্ধতন দ্বায়িত্বশীলের সাথে কথা বলে জেনে নিতে পারেন।
আমার সেই সুযোগ থাকলে আমি অবশ্বই প্রশ্ন করতাম - না জেনে না বুঝে কোন সংগঠনের অন্ধ আনুগত্য সমর্থনযোগ্য নয়। ইসলামের ইতিহাসে দেখবেন সাহাবা(রা.)গন নবী মুহাম্মদ(স.)কেও প্রচুর প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে তাবলীগের স্থানীয় ব্যাক্তিদের কোন প্রশ্ন করলেই বলেন সময় লাগান তাহলেই বুঝতে পারবেন - তিনদিন সময় দেয়ার পর বলেন চিল্লাদেন। সম্ভবত এক চিল্লার পর বলবেন তিন চিল্লা দিতে - তাই চিল্লা আর দেয়া হয় নি!!
যে বড় ভাই এর কথা বলছিলাম ওনার সাথে এখন আর যোগাযোগ নাই। তবে আপনি যেহেতু বলছেন কথাগুলো তাবলীগের মৌলিক দর্শন নয় বরং ওনার ব্যাক্তিগত অভিমত - তাই ও নিয়ে আর কিছু বলছি না। তবে অনেক চিন্তা ভাবনার পর আমার কাছে মনে হয়েছে তাবলীগের মধ্যে জিহাদ বা অন্যায়ের প্রতিরোধ বা রাস্ট্র ব্যাবস্থা সম্পর্কে যে ব্যাপক নিরবতা/নিষ্কৃয়তা কাজ করে তার পিছনে এইধরনের অদৃস্টবাদী দর্শনের ভুমিকা থাকতে পারে। তারা প্রায়ই বলে - 'আমরা শেষ জমানার কমজোর মুসলমান, আমাদের পক্ষে এতকিছু করা সম্ভবন নয় - যা হবার তা আল্লাহর তরফ থেকেই হবে' ইত্যাদি। অথচ এদেরই দেখা যায় নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে, ডাক্তারী ইঞ্জিনিয়ারিং, বিসিএস ইত্যাদি প্রবল প্রতিযোগীতামুলক পরিবেশে উত্তরনের সময় আর কমযোজ থাকেন না। জিবিকার প্রয়োজনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করেও আল্লাহর দ্বীনের প্রচার বা অন্যায় অপরাধ প্রতিরোধের ব্যাপারে একেবারেই কমযোর দুর্বল ইমানদার বলে পাশ কাটানোর চেস্টা খুবই দৃস্টিকটু লাগে।
যাইহোক, আপনার সাথে আলোচনা করে ভাল লাগল। আশা করি আপনি কোন দল/মতের অন্ধ অনুসারী না হয়ে মুক্ত বিবেকে কোরআন হাদীস ও ইসলামী ইতিহাস ঐতিহ্যের চর্চা ও গবেষণা অব্যাহত রাখবেন। আল্লাহ আমাদের প্রতিটি কল্যানকর প্রচেস্টা কবুল করুন - আমীন।