শহীদ শাহাবুদ্দিন (রাবি-০৬.০২.২০১৫)

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সাইন্স মাস্টার্সের  ছাত্র শাহাবুদ্দিনকে এভাবে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে পুলিশ। ঠান্ডা মাথায় পা থেতলে দেয়া হয়। দুই পায়ে গুলি করা হয়। নির্মম ও বর্বর নির্যাতন করে ভাইটিকে হত্যা করে পুলিশ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাটাখালি বাজারে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শিবির নেতা শাহাবুদ্দিন শহীদ হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের তথ্য সম্পাদক ও ক্রপ সায়েন্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে কাটাখালি বাজারে শিবিরের তথ্য সম্পাদক শাহাবুদ্দিন, বিনোদপুর মেস শাখার সভাপতি মফিজুর রহমান ও শহীদ হবিবুর রহমান হল সভাপতি হাবিবুর রহমান মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় কাটাখালি পৌরসভার সামনে থেকে তাদেরকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় মতিহার থানা পুলিশ। পরে পুলিশ তাদেরকে আটক করার কথা অস্বীকার করে। রাত আড়াইটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে শাহাবুদ্দিন ভাইকে মৃত ও বাকি দুইজনকে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভর্তি করে পুলিশ।



অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তিন শিবির নেতাকে গভীর রাতে হত্যার উদ্দেশ্যে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে পুলিশ। 






 
রাবি শিবিরের তথ্য সম্পাদক শহীদ সাহাবুদ্দিন ভাই ২২ জানুয়ারী তার ফেবু স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন
 

"বেরিয়েছে যেই কাফেলা ফিরবেনা সে কোন দিন,
হয়তো বিজয় হবে নয়তো তার ফিরবে কফিন"
 

আদর্শ প্রতিষ্টায় জীবন দিয়ে তিনি তার কমিটমেন্ট রক্ষা করে গেলেন। আর আমাদের জন্য হয়ে গেলেন প্রেরনার বাতিঘর। যার আলোয় একদিন আলোকিত হবে গুটা বাংলাদেশ।


পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন প্রায় পাগল হয়ে গেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্সে মাস্টার্সে পড়ুয়া নিহত মেধাবী ছাত্রশিবির নেতা শাহাব উদ্দিনের বাবা, মা ও তিন বোন। ছেলের জানাযা পূর্ব সমাবেশে শাহাব উদ্দিনের পিতা রফিকুল্লাহ চিৎকার করতে করতে বলেছেন, ইয়া আল্লাহ আমার ছেলে যদি কোন অপরাধ করে থাকে তুমি তার বিচার কর, আর যদি আমার ছেলে অপরাধ না করে থাকে তাহলে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর যারা তাকে গুলী করে হত্যা করেছে তাদের উপযুক্ত বিচার কর। আমি তোমার দরবারে এর ন্যায় বিচারের প্রার্থনা করছি। নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের নিহত ছাত্রনেতা শাহাব উদ্দিনের বাড়ির পাশে অনুষ্ঠিত শনিবার রাতের বিশাল জানাযা পূর্ব সমাবেশে স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্রশিবির নেতা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বক্তব্যের পর নিহত মেধাবী ছাত্রশিবির নেতা শাহাব উদ্দিনের বাবার এমন বক্তব্যে উপস্থিত সকলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শনিবার দুপুরে তাদের বাড়ি গেলে তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, তারা মনে করতেন আর কয়েকদিন পর শাহাব উদ্দিনের লেখা পড়া শেষ। পড়ালেখা শেষে দরিদ্র কৃষক বাবার একমাত্র ছেলে পরিবারের দায়িত্ব নিবে, ভালো কোন চাকরি করবে। সংসারের অভাব অনটন টানা পোড়েন দূর হবে। কিন্তু তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার সামনে থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা শাহাব উদ্দিনকে তার দুই বন্ধুসহ আটক করে।

পরে শুক্রবার সকালে তারা জানতে পারেন শাহাব উদ্দিনেরা তিন বন্ধুই গুলীবিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে শাহাব উদ্দিন মারা গেছে বাকী দুজন আটক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে লাশ এনে দেখতে পান লাশের দুই পা একেবারে থেঁতলে মাংস খসে খসে পড়ছে, ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে দুই হাঁটু ও পায়ের গিড়া। নির্মম নির্যাতনের পর পা ও বুকে গুলী করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। শাহাব উদ্দিনের বাবা এ সময় জানতে চান আমার ছেলে কি অপরাধ করেছে বা দেশের কোন অপকর্মের সাথে জড়িত ছেলের হত্যাকারীদের তা প্রকাশ করার জন্যও তিনি দাবি জানান।

শাহাব উদ্দিনের তিন বোন রহিমা, রেবেকা ও রেহেনা খাতুন জানায়, তাদের একমাত্র ভাই ছিল বড় আদরের ধন। তাকে এই বয়সে এমন নির্মমভাবে পিটিয়ে থেতলে হত্যা করা হয়েছে ভাবলে সকলে এক সাথে মরে যেতে ইচ্ছে করে। তারাও এর ন্যায় বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

শাহাব উদ্দিনের গ্রাম ছাতনীর বেশির ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এ গ্রামের কোন মানুষের শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। সে কোন খারাপ কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে গ্রামের মানুষ এমনটা বিশ্বাসও করে না। তবে তারা জানে শাহাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে হঠাৎ নামাযী হয়ে ওঠে। পরে তারা জানতে পারে সে ছাত্রশিবির করে। 


আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের সাথে দুর্বৃত্তদের গুলিবিনিময়ের সময় ক্রসফায়ারে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহাবুদ্দিনের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহের ছবিটা বেশ কিছুক্ষণ দেখলাম।

মৃত্যুর আগে তার উপর পুলিশের চালানো নির্যাতনের বিষয়টা এ ছবি থেকে কিছুটা অনুমান করা যায়। মৃতদেহের কথা বলার ক্ষমতা নেই। কিন্তু তার ছবি কথা বলছে। শিয়াল বা কুকুর যেভাবে মৃতদেহ খুবলে খায়, শাহাবুদ্দিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওভাবে চামড়া মাংস হাড্ডি পর্যন্ত খামচে আঁচিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। ট্রাকের নিচে পড়ে মারা যাওয়া মৃতদেহ দেখেছি। কিন্তু এতটা ভাঙ্গাচোরা হয়ে যায়নি সে মৃতদেহ তার উপর দিয়ে ভারী ট্রাক চলে যাওয়ার পরও। 

শাহাবুদ্দিনের হাত পা বেঁকে অস্বাভাবিকভাবে সম্পূর্ণ এলোমেলো হয়ে আছে। মানুষের শরীর হাঁড় গুলো জোড়া থাকার কারণে দৈর্ঘ্যে প্রলম্বিত হয়ে থাকে। শাহাবুদ্দিনের শরীর যেন দুইদিকে ছড়িয়ে গেছে। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে ঘিরে কৃষ্ণপদ রায় এবং উত্তম কুমারদের বিভৎস আনন্দ-উৎসব নিঃসন্দেহে বড় ভয়ংকর ছিলো। তার শরীরের হাড্ডিগুলো ভেঙ্গে ফেলে ইচ্ছামতো মেরে ভেঙ্গে শেষপর্যন্ত মারা যাওয়ার পর চামড়ার আবরণে দলামোচড়া করে তারা ফেলে গেছে হাসপাতালের মর্গে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতেও কি নাৎসীরা এতোটা নির্মম নির্যাতন করে মারতো? একাত্তর সালে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কি এতোটা ভয়ংকর ছিলো? অথবা দুনিয়ার যত স্বৈরাচারের নাম শোনা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে, টর্চার ক্যাম্পগুলোতে এরকম বিভৎস নির্যাতন হয়? মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে থাকা সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষের শরীরকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে মাত্র কয়েকঘন্টার ভেতরে এরকম বানিয়ে দেয়া যায়? কোন ছবিতে তো এমন আর দেখা যায়নি। বাংলাদেশের র‍্যাব পুলিশের গর্বিত সদস্যবৃন্দ কতৃক পৃথিবীর সব অমানবিক নির্যাতনের নজিরকে হারিয়ে দিয়ে বিজয়ী হওয়ার চ্যাম্পিয়ন'স ট্রফি শাহাবুদ্দিনের এই ভাঙাচোরা মৃতদেহের ছবি।

গুলি করে মেরে ফেললেই তো হতো। ইন-ফ্যাক্ট প্রতিদিন বহু মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে। লাশের পরিচয়ও মিলছে না। বেওয়ারিশ। তার সাথে এই নির্যাতন যোগ করার কারণ কি? সম্ভবত তারা মনে করছে এই নির্যাতনের উদাহরণ দেখে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা, বিরোধী দলের কর্মীরা ভয়ে পিছু হটবে। আসলেই কি তাই? নির্যাতন চালিয়ে কি মানুষের স্বাধীনতার দাবীকে দমন করা যায়?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা র‍্যাব পুলিশকে বলেছিলেন যা প্রয়োজন তাই করতে, দায়িত্ব তার। শাহাবুদ্দিনের মৃতদেহ দেখে বুঝা যায় প্রয়োজনীয় কাজগুলো কি এবং কেমন। এই ভাঙাচোরা গুড়ো গুড়ো হয়ে যাওয়া এবং পশুর মতো শরীরের এখানে ওখানে খাবলে খেয়ে নেয়া বিকৃত মৃতদেহের দায়িত্ব নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গতকাল এক মন্ত্রীর ফেইসবুক পেইজে তার স্নেহময়ী ছবি দেয়া হয়েছে, সাদা চামড়ার নাতিকে কোলে নিয়ে।
আশা করি শাহাবুদ্দিনের জননী নিজের ছেলের ভাঙাচোরা লাশের ছবিটা না দেখে বরং সেই ভাঙচুরের দায়িত্ব নেয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাতি কোলে স্নেহময়ী ছবি দেখে শোক ভুলে আছেন। -Aman Abduhu



পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরন করলেন রাবি শিবিরের তথ্য সম্পাদক মেধাবী ছাত্রনেতা শহীদ শাহাবুদ্দিন ভাই

রাজশাহী নগরীর কাটাখালি পৌরসভার সামনে ৫ই ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্র রাবি শিবিরের তথ্য সম্পাদক সাহাবুদ্দিন, হবিবুর হল সভাপতি হাবিব ও বিনোদপুর মেস সভাপতি মফিজকে আটক করে মতিহার থানা ও ডিবি পুলিশ। এরপর গুলিবিদ্ধ্ব অবস্থায় রাত ২ টায় তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাস্পাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার শাহাবুদ্দিন ভাইকে মৃত ঘোষনা করে। হাবিব ভাই ও মফিজ ভাই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বর্তমানে রামেক হাস্পাতালে চিকিতসাধীন রয়েছে।



কাল রাত ১০ টার (৫/০২/২০১৫) সময় যখন শুনলাম শাহাবুদ্দিন, হাবিব আর মফিজের গ্রেফতারের কথা, তখন মনে মনে শুধু একটা সন্দেহ দানা বাধছিল,হয় আল্লাহ তুমি তাদের মুক্ত করে দাও, না হলে তুলনামূলক ভালো কিছুর ব্যবস্থা কর। রাত ৩.৩০ টার সময় একটা ফোন আসল আমাদের গ্রেফতার হওয়া তিন ভাইয়ের মধ্যে একজন শাহাদাতবরণ করেছেন। খবরটা মোটেও বিশ্বাস হচ্ছিল না, তখন আমার পাশে থাকা ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম তথ্যসূত্রটা বিশ্বস্ত কিনা?? তিনি বললেন, ধৈর্য ধরেন আর দুয়া করেন। ফজরের নামাজের সময় যখন উঠলাম তখন আমার পাশে ভাইটি হঠাৎ কেঁদে বলল, আমাদের মফিজ ভাই আর নেই!!! এ কথা শোনার পর বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে কনফার্ম হলাম প্রিয় ভাই শাহাবুদ্দিন শাহাদাতবরণ করেছেন। গতকাল দুপুরে শাহাবুদ্দিন ভাইয়ের সাথে কথা বললাম, ভাই আমার সদস্য সম্মেলনের টাকাটা পুরোপুরি দিতে পারছিনা। উনি রাজি হলেন, আর আমাকে বললেন আপনাকে যে কাজটা দিয়েছিলাম তার কী অবস্থা, আমি বললাম ভাই আমি দ্রুত কাজটা করে ফেলব ইনশাআল্লাহ। কাজের জন্য তার দেয়া পেনড্রাইভটা এখন শুধুই স্মৃতি?? সেই কাজটা ছিল, ক্রসফায়ারে শহীদ নূরুল ইসলাম শাহীন ভাইয়ের নিহত হওয়ার পত্রিকা কাটিংগুলো স্ক্যান ইমেজ করে জাতি্র সামনে তুলে ধরা, আমার দায়িত্ব ছিল হারিয়ে যাওয়া স্ক্যান driver টা ম্যানেজ করে পেনড্রাইভে করে তাকে দিয়ে আসা। তা হয়ত আর তাকে দেয়া হবে না।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম