গোড়ায় গলদঃ রসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে স্বীয় জন্ম তারিখ সম্পর্কে কোন বিবরণ পাওয়া যায়না। তাঁর জীবনীকার দের মধ্যে তিনি কবে জন্ম গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকের মতে তার জন্মদিন হল ১২ রবিউল আউয়াল। আবার অনেকের মতে ৯ রবিউল আউয়াল। কিন্তু আসলে কোনটা ঠিক?
সহীহ হাদীস নির্ভর বিশুদ্ধতম সীরাতগ্রন্থ হল ‘আর-রাহীক আল-মাখতূম’। রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিবস সম্পর্কে এ গ্রন্থে বলা হয়েছে - “রসুলুল্লাহ (সাঃ) ৫৭১ খৃস্টাব্দে ৯ রবিউল আউয়াল মোতাবেক ২০ এপ্রিল সোমবার প্রত্যুষে জন্ম গ্রহণ করেন।” এ যুগের প্রখ্যাত আলিম মুহাম্মাদ সুলাইমান আল-মানসূর ও মিশরের প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমূদ পাশা নিখুঁতভাবে প্রমাণ করেন যে কবে রসুলুল্লাহ (সাঃ) জন্মেছিলেন। সহীহ মুসলিমে রসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই বলেছেন তার জন্ম সোমবার দিন হয়েছে। মাহমূদ পাশা গবেষণা ও হিসাব করে দেখিয়েছেন যে, ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে ১২ রবিউল আউয়াল তারিখের দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার। আর সোমবার ছিল ৯ রবিউল আউয়াল। মাহমূদ পাশার গবেষণার এ ফল প্রকাশিত হওয়ার পর সকল স্কলাররা তা গ্রহণ করেন এবং এখনোবধি কেউ তার প্রমাণ খণ্ডন করতে পারেননি। অতএব রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিবস হল ৯ রবিউল আউয়াল।১
সর্বসম্মতভাবে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যু দিবস হল ১২ রবিউল আউয়াল। যে দিনটিতে আমাদের প্রিয় নবীর জন্মোৎসব পালন করা হয় সে দিনটি মূলত তাঁর মৃত্যু দিবস। মুসলিম হিসেবে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ মুহাম্মাদ (সাঃ)। তাঁর প্রস্থানের দিনটিকে আমরা ঈদ অর্থাৎ উৎসবের দিন হিসেবে পালন করব এটা প্রকারান্তরে বোঝায় যে তাঁর মৃত্যুতে আমরা আনন্দিত। তাই এদিনটি ঈদ হিসেবে পালন করা খুব বড় ধরণের বেয়াদবি।
জঘন্য পাপ - বিদআতঃ ইসলাম ধর্মে পাপ হিসেবে শির্কের সাথে সাথে যার স্থান তার নাম বিদআত। বিদআত মানে এমন কোন ইবাদাত যা রসুলুল্লাহ (সাঃ) দ্বারা নির্দেশিত নয়। মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ্বাস যে আল্লাহ সর্বকালের সর্বসেরা মানুষ হিসেবে মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ কে বেছে নিয়েছিলেন তার ধর্ম ইসলাম প্রচারের জন্য। এবং মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছিলেন। মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তাকে অনুসরণ করা। এখন আমরা যদি কোন নতুন ইবাদাত বা আমল প্রবর্তন করি তবে তাঁর অর্থ যে রসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেননি এবং আমরা রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চেয়ে বেশি আল্লাহভীরু দেখে এই নতুন ইবাদাত করলাম। অথচ ক্বুরানে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেন - “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।”২ ইসলামের পরিপুর্ণতার পরে তাতে কোন কিছু যোগ বা পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই।
রসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও বলে গেছেন - “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম” ৩
ঈদে-মিলাদুন্নবির এই প্রথাটি ক্বুরান অথবা সহিহ সুন্নাহ বা কোন সাহাবিদের আমল থেকে প্রমাণিত নয়। ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, “এ কাজটি পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিগণ করেননি অথচ এ কাজ জায়িয থাকলে সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে তা পালন করার কার্যকারণ বিদ্যমান ছিল এবং পালন করতে বিশেষ কোন বাধাও ছিল না। যদি এটা শুধু কল্যাণের কাজই হতো তাহলে আমাদের চেয়ে তারাই এ কাজটি বেশী করতেন। কেননা তারা আমাদের চেয়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম-কে বেশী সম্মান করতেন ও ভালবাসতেন এবং কল্যাণের কাজে তারা ছিলেন বেশী আগ্রহী” ৪
আমরা রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে অনুসরণ করব - অর্থাৎ তিনি যা করেছেন আমরা তাই করার চেষ্টা করব। আমরা তাঁর আগে আগেও চলবনা, তাঁর পথ ছেড়ে অন্য পথেও চলবনা। বিদআত পাপ হিসেবে এত ভয়াবহ কারণ মানুষ ভাবে সে ভাল কাজ করছে পক্ষান্তরে সে আল্লাহর রসুলের আমলে পরিবর্তন বা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে অপমান করে। অন্যান্য পাপের জন্য মানুষ অনুতপ্ত হয় ও ক্ষমা চায়, কিন্তু বিদআতকে যেহেতু মানুষ পাপ হিসেবেই চিহ্নিত করতে পারেনা তাই এর জন্য সে ক্ষমাও চায়না।
জন্মদিনঃ পূর্ববর্তী নবীদের আনীত সব ধর্মগুলোরই Corruption pattern যদি আমরা লক্ষ করি তাহলে একটা মিল খুঁজে পাব। যেমন হিন্দুরা মুর্তিকে আল্লাহর স্থানে বসিয়েছে, খ্রিষ্টানরা ঈসা ও মারিয়াম (আঃ) কে আল্লাহর আসন দিয়েছে, মুসলিমরা কবর/পীর কে আল্লাহর প্রাপ্য মর্যাদা দিয়েছে। আবার হিন্দুরা কৃষ্ণের জন্মদিনকে জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করে, খ্রিষ্টানরা আল্লাহর দেয়া উৎসব বাদ দিয়ে ঈসা (আঃ) এর তথাকথিত জন্মদিনকে বড়দিন হিসেবে উদযাপন করে। এজন্য মুহাম্মদ (সাঃ) প্রবর্তিত ইসলামের একটি মূলনীতি হল - ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিধর্মীদের বিশেষত ইহুদী-খ্রিষ্টানদের বিরোধিতা করা। যারা সকল ঈদের বড় ঈদ হিসেবে মিলাদুন্নবি পালন করে তারা খ্রিষ্টানদের অনুকরণে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন। এর পরের ধাপ হবে ঈদুল আযহা আর ঈদুল ফিতর বাদ হয়ে যাওয়া।
রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে ভালবাসা মানে তাকে অনুসরণ করা, তাঁর অবাধ্যতা না করা। তাই আমাদের কর্তব্য মিলাদ বা ঈদে-মিলাদুন্নবি থেকে নিজেরা বেঁচে থাকা এবং আমাদের প্রিয়জনদের এসব বিদআত থেকে সাবধান করা।
রাইটার :
Sharif Abu Hayat Opu
ঈদে মিলাদুন্নবি - একটি জঘন্য প্রথা
☼→
ব্লগ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: