গণচীন আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহ্ত্তম দেশ। চীনের আয়তন প্রায় এক কোটি বর্গ কিলোমিটার। দেশটিতে রয়েছে ৫৬টি গোত্র বা জাতিগত সম্প্রদায়।
চীনে ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল হিজরি প্রথম শতকে। " তং " রাজবংশের শাসনামলে সিক্ল রোড আর সমুদ্র-পথে আরব ও ইরানি মুসলমানরা এসেছিল এই দেশে। তারা চীনের সাথে মুসলিম বিশ্বের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন ও যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। চীনের ৫৬টি গোত্র বা জাতির মধ্যে ১২টি গোত্র বা জাতি মুসলমান। এ জাতিগুলো হল, উইঘর তুর্কি, কাজাক, কিরঘিজ, উজবেক, তাতার, সালার, তাজিক, দুং শাইয়ং, বাওয়ান ও খুয়ি। অবশ্য চীনের অন্য জাতিগুলোর মধ্যেও মুসলমান রয়েছে, তবে তাদের সংখ্যা খুব কম। যেমন, মোঙ্গল, তিব্বতি, দাই ও বাই গোত্রের মধ্যে অল্প সংখ্যক মুসলমান রয়েছে। চীনের বেশির ভাগ মুসলমান বসবাস করেন স্বায়ত্তশাসিত "
সিন কিয়াং", "চিং হাই" ও "গানসু" প্রদেশে। আর খুয়ি গোত্রের মুসলমানরা গোটা চীনের প্রায় সব অঞ্চলেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। খুয়ি গোত্র চীনের মুসলিম গোত্রগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ।
চীনে ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল হিজরি প্রথম শতকে। " তং " রাজবংশের শাসনামলে সিক্ল রোড আর সমুদ্র-পথে আরব ও ইরানি মুসলমানরা এসেছিল এই দেশে। তারা চীনের সাথে মুসলিম বিশ্বের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন ও যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। চীনের ৫৬টি গোত্র বা জাতির মধ্যে ১২টি গোত্র বা জাতি মুসলমান। এ জাতিগুলো হল, উইঘর তুর্কি, কাজাক, কিরঘিজ, উজবেক, তাতার, সালার, তাজিক, দুং শাইয়ং, বাওয়ান ও খুয়ি। অবশ্য চীনের অন্য জাতিগুলোর মধ্যেও মুসলমান রয়েছে, তবে তাদের সংখ্যা খুব কম। যেমন, মোঙ্গল, তিব্বতি, দাই ও বাই গোত্রের মধ্যে অল্প সংখ্যক মুসলমান রয়েছে। চীনের বেশির ভাগ মুসলমান বসবাস করেন স্বায়ত্তশাসিত "
সিন কিয়াং", "চিং হাই" ও "গানসু" প্রদেশে। আর খুয়ি গোত্রের মুসলমানরা গোটা চীনের প্রায় সব অঞ্চলেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। খুয়ি গোত্র চীনের মুসলিম গোত্রগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ।
১৯৫৩ সালে চীনা মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্থা ইসলামী সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় নিজেদের তৎপরতাকে লক্ষ্যপূর্ণ ও সুশৃঙ্ক্ষল করার উদ্দেশ্যে। সংস্থাটির উদ্যোগে বেইজিংয়ে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কোরআন কলেজ।
গণচীনে রয়েছে ৪০ হাজার মসজিদ। এসব মসজিদ ভৌগলিক, ঐতিহাসিক ও শিল্প নৈপুন্যের দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্রময়। চীনে ৫৩ হাজার ইমাম নামাজের জামায়াতের ইমামতি করেন। সেই প্রথম থেকেই চীনের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে মুসলমানরা। মুসলমানরাই চীনে জ্যোতির্বিদ্যা প্রথমবারের মত নিয়ে এসেছিল এবং তারা এ শাস্ত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। মুসলমানরা এখনও চীনের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রেখেছেন। ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও চীনে, বিশেষ করে দেশটির বৃহত্তম হান গোত্রের মধ্যে ইসলামে দীক্ষিতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অন্য অনেক অমুসলিম দেশের মত চীনের মুসলমানরাও অনেক সমস্যা ও সংকট মোকাবেলা করছে। চীনের মুসলমানদের অবস্থা সম্পর্কে বহির্বিশ্বে খুব কম তথ্যই প্রচারিত হয়। আর এ থেকেই বোঝা যায় চীন সরকার দেশটির মুসলমানদের ওপর কত কঠিন অবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ধর্মীয় বা আদর্শিক মতপার্থক্য নয় বরং মূলতঃ চীনা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, বৈষম্য ও অবিচারের ফলেই চীন সরকারের সাথে মুসলমানদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে এবং এসবের বিরুদ্ধে চীনা মুসলমানরা বার বার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
২০০৯ সালের জুলাই মাসে চীনের সিংকিয়াং প্রদেশে যে সহিংসতা হয়েছিল তাকে বাহ্যিক দিক থেকে বর্ণবাদী হানদের সাথে উইঘর মুসলমানদের জাতিগত সংঘাত বলে মনে করা হয়। কিন্তু আসলে চীন সরকারের ইসলাম-বিদ্বেষী নীতির মধ্যেই ওই সহিংসতার শেকড় বিস্তৃত হয়েছিল। বহু বছর ধরেই বেইজিং ইসলাম-বিদ্বেষী নীতি প্রয়োগ করে এসেছে দেশটির মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে।
চীনের কেন্দ্রীয় সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের অজুহাতে দেশটির জনগণের, বিশেষ করে মুসলমানদের ধর্মীয় চিন্তাধারা ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। উইঘর মুসলমানরা বেইজিং-এর ব্যাপক বৈষম্যের শিকার। যেমন, ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে সিংকিয়াং-এর ৯৩৮ টি মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হয়।
চীনের মুসলমানরা ইসলামী সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নাগরিক অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত। গত কয়েক বছরে মুসলিম অধ্যুষিত সিংকিয়াং প্রদেশে জ্বালানী তেল উৎপাদন দুই গুণ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও সেখানকার মুসলমানরা এই আয় থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
সিংকিয়াং প্রদেশের মুসলমানদের প্রতি চীনা হান গোত্রের সহিংস আচরণও দেশটির মুসলমানদের একটি বড় সমস্যা। তবে এ অঞ্চলের মুসলমানরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে তা হল, সিংকিয়াং-এ মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিলুপ্ত করার জন্য সেখানে হানদেরকে অভিবাসিত করা। গত শতকের ৫০-এর দশকে সিংকিয়াং প্রদেশে হানরা ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। কিন্তু চীন সরকার অন্য প্রদেশগুলো থেকে হানদেরকে এ প্রদেশে এনে বিপুল সংখ্যায় বসতি গড়তে দেয়ায় তাদের সংখ্যা সেখানে এখন ৪০ শতাংশ।
১৯৯০ সাল থেকে উইঘর মুসলমানরা সিংকিয়াং প্রদেশে প্রতিবাদ জোরদার করতে থাকে। এ অবস্থায় বেইজিং সেখানে হানদের অভিবাসনের কাজও ত্বরান্বিত করে এবং কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সেখানকার ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।
বেইজিংয়ের ইসলাম-বিদ্বেষী নীতির কারণে সিংকিয়াং প্রদেশের মুসলমানরা ব্যাপক অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হয়েছে। বেইজিংয়ের বিশেষ কিছু নীতির কারণে এ অঞ্চলে হানরা অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ক্রমেই বিস্তার করে চলেছে এবং উইঘররা ক্রমেই দরিদ্র হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারী সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারের পুঁজি-বিনিয়োগের বেশির ভাগই হানরা ভোগ করছে।
সিংকিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যা দুই কোটিরও বেশি। জনসংখ্যার বেশিরভাগই তুর্কি উইঘর। এখানকার প্রধান শহরের নাম উরুমচি। এ প্রদেশের প্রাচীন রেশম-পথ বা সিল্ক রোডে রয়েছে ঐতিহাসিক ও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর কাশগড়। সিংকিয়াং প্রদেশটি সীমান্তবর্তী প্রদেশ হওয়ায় চীনের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর প্রদেশ। চীনের বেশির ভাগ গ্যাস ও তেল রয়েছে এ প্রদেশেই। গত তিন দশকে এ প্রদেশ থেকে চীনের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৬ ০০০ কোটি ডলার। চীনের মুসলমানরা ইসলামী সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নাগরিক অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত। গত কয়েক বছরে মুসলিম অধ্যুষিত সিংকিয়াং প্রদেশে জ্বালানী তেল উৎপাদন দুই গুণ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও সেখানকার মুসলমানরা এই আয় থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
সিংকিয়াং প্রদেশের মুসলমানদের প্রতি চীনা হান গোত্রের সহিংস আচরণও দেশটির মুসলমানদের একটি বড় সমস্যা। তবে এ অঞ্চলের মুসলমানরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে তা হল, সিংকিয়াং-এ মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিলুপ্ত করার জন্য সেখানে হানদেরকে অভিবাসিত করা। গত শতকের ৫০-এর দশকে সিংকিয়াং প্রদেশে হানরা ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। কিন্তু চীন সরকার অন্য প্রদেশগুলো থেকে হানদেরকে এ প্রদেশে এনে বিপুল সংখ্যায় বসতি গড়তে দেয়ায় তাদের সংখ্যা সেখানে এখন ৪০ শতাংশ।
১৯৯০ সাল থেকে উইঘর মুসলমানরা সিংকিয়াং প্রদেশে প্রতিবাদ জোরদার করতে থাকে। এ অবস্থায় বেইজিং সেখানে হানদের অভিবাসনের কাজও ত্বরান্বিত করে এবং কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সেখানকার ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।
বেইজিংয়ের ইসলাম-বিদ্বেষী নীতির কারণে সিংকিয়াং প্রদেশের মুসলমানরা ব্যাপক অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হয়েছে। বেইজিংয়ের বিশেষ কিছু নীতির কারণে এ অঞ্চলে হানরা অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ক্রমেই বিস্তার করে চলেছে এবং উইঘররা ক্রমেই দরিদ্র হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারী সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারের পুঁজি-বিনিয়োগের বেশির ভাগই হানরা ভোগ করছে।
২০০৯ সালে সিংকিয়াং প্রদেশের উরুমচি শহরে বর্ণবাদী হানদের হাতে দুজন উইঘর মুসলমান নিহত হলে এ ঘটনার ব্যাপারে সরকারের নিস্ক্রিয়তার প্রতিবাদে জুলাই মাসের ৫ তারিখে ব্যাপক গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। উইঘরদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালায় বর্ণবাদী হানরা। মুসলমানদের বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো ও এমনকি মসজিদও হানদের হামলার শিকার হয়। এরপর সহিংসতা আরো ব্যাপক আকার ধারণ করে যে সারা বিশ্বের দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ হয়। চীনের একজন সরকারি কর্মকর্তা এ গোলযোগকে কমিউনিস্ট শাসনামলের বৃহত্তম গোলযোগ বলে মন্তব্য করেন। চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা শিনহুয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী সহিংসতায় ১৮০ জন নিহত ও ৮০ জন আহত হয়। তবে স্থানীয় অধিবাসীরা জানায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৮০০'রও বেশি এবং আহত হয়েছিল অন্ততঃ ২০০০ জন। চীন সরকার মুসলমানদেরকেই অপরাধী হিসেবে তুলে ধরার জন্য প্রচার করে যে উইঘর মুসলমানরা ছুরি, ইট ও লাঠি নিয়ে বাজারসহ গণ-প্রতিষ্ঠানগুলোয় হামলা চালায় এবং পথচারী ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বেইজিং এটাও প্রচার করে যে উইঘররা সিংকিয়াংয়ের অন্য শহরগুলোতেও সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে এবং নিহতদের বেশিরভাগই হান গোত্রের।
কিন্তু উইঘররা বলেছে, চীনের পুলিশই তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি বর্ষণ করে সহিংসতা শুরু করেছিল, মুসলমানরা নয়। উইঘররা ছুরি ও লাঠির মত শীতল অস্ত্র ব্যবহার করেছিল বলে বেইজিং যে দাবি প্রচার করছে তাও সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং হানরাই মুসলমানদের বাজারসহ দোকানপাটে হামলা চালায় এবং মজলুম উইঘর মুসলমানদের ওপর পুলিশের অভিযানে সহায়তা করার জন্য ছুরি ও মুগুর নিয়ে উরুমচি শহরের দিকে রওনা হয়। ২০০৯ সালের দশই জুলাই পুলিশ সিংকিয়াংয়ের সবগুলো মসজিদ দখল করে নেয় ও জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হতে দেয়নি।
সোর্স : bangla.irib.ir
0 comments: