তাবলীগী জামাতের শুরু
তাবলীগী জামাতের শুরু ১৯২৬ সালে উত্তর ভারতের মেওয়াত নামক এলাকা থেকে। তাবলীগী জামাতের ধারণা,লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতি রচনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস। ইনি ছিলেন উত্তর ভারতের শাহরানপুরের মাযহারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন দেওবন্দ মাদ্রাসায়। এদিক দিয়ে বলা যায়,তাবলীগী জামাত হলো দেওবন্দী আন্দোলনের একটি শাখা। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানোর পর মুসলমানগণ শুধু শক্তিহীনই হয়নি,ধর্মীয়,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে প্রাণহীনও হয়ে পড়ে। লোপ পায় তাদের আত্মবিশ্বাস;চেপে বসে নিদারুন হতাশা,বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলা। অপর দিকে প্রাণশক্তির নবজোয়ার শুরু হয় হিন্দুদের মাঝে। ব্রিটিশ শাসকদের পার্টনার রূপে তারা শাসকশক্তির কাছাকাছি পৌঁছার সুয়োগ পায়,ফলে শিক্ষা,অর্থনীতি,রাজনীতি ও প্রশাসনে তারা দ্রুত এগিয়ে যায়। পায় নবশক্তি। হিন্দুরা তখন এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ে যে তাদের মাঝে প্রবলতর হয় মুসলমানদেরকে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার আগ্রহ। সে লক্ষ্যে হিন্দুদের মাঝে “শুদ্ধি” ও “সংগঠন” নামে দুটি আন্দোলন শুরু হয়। বিশেষ করে সেসব এলাকায় যেখানে ইসলামের শিক্ষা এবং সংস্কৃতি ততটা মজবুত ভিত্তি গড়ে তুলতে পারিনি। শুদ্ধি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ভারতীয়দের মাঝে হিন্দু ধর্মের পূণর্জাগরন এবং যারা অহিন্দু -বিশেষ করে যারা হিন্দুধর্ম থেকে ইসলাম কবুল করেছে তাদেরকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা। আর “সংগঠন” আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল হিন্দুদের মাঝে আত্মবিশ্বাস,আত্মশক্তি ও আভ্যন্তরীন বন্ধনকে আরো মজবুত করা। সে সময় ভারতের নানা অঞ্চলে এমন অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল যারা হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করেছিল বটে কিন্তু ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা লাভের তেমন সুযোগ তাদের জীবনে ঘটেনি,বরং হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির অনেক প্রথাই তাদের মাঝে রয়ে গিয়েছিল। মেওয়াতে মিওয়ো নামক এক রাজপুত সম্প্রদায় ছিল যাদের অনেকেই মুসলমান হয়েছিল। কিন্তু শুদ্ধি আন্দোলনের ফলে তাদের অনেকেই আবার হিন্দুধর্মে ফিরে যায়। এতে হিন্দুদের মাঝে আরো বেশী বেশী মুসলমানদের হিন্দু বানানোর ইচ্ছাটি আরো প্রকটতর হয়। মুসলমানদের জন্য এ ছিল বিপদজনক অবস্থা। সে সাথে চলছিল ইংরেজ পাদ্রীদের ব্যাপক তৎপরতা। ইংরেজদের হাতে রাজ্য হারানোর পর এবার ঘনিয়ে আসে ধর্ম হারানোর ভয়। হিন্দু ও খৃষ্টান হওয়া থেকে মুসলমানদের বাঁচানোর তাগিদেই মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস ১৯২৬ সালে হজ থেকে ফিরে আসার পর “তাহরিকে ঈমান” নামে এক আন্দোলন শুরু করেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে তিনি সে আন্দোলনকে মেওয়াত থেকে দিল্লির নিযামুদ্দীন এলাকায় স্থানান্তর করেন। তখন থেকে আজও দিল্লিই তাবলীগী জামাতের প্রাণকেন্দ্র। শুরুতে তাদের শ্লোগান ছিল,“আ্যায় মুসলমান, মুসলমান বনো” অর্থঃ “হে মুসলমানেরা মুসলমান হও”। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তাবলীগী জামাতের প্রসার ঘটে অতি দ্রুত,মাত্র ১৫ বছর পর ১৯৪১ সালের নভেম্বরে এজতেমায় যোগ দেয় ২৫ হাজারের বেশী লোক। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এ সংখ্যা ছিল অতি বিশাল। বর্তমানে তাবলীগী জামাতের কাজ বিশ্বের ১০০টিরও বেশী দেশে। ঢাকার বিশ্ব এজতেমাতে তিরিশ লাখের বেশী লোকের জমায়েত হয়। লক্ষ লক্ষ লোকের এজতেমা হয় ভারত,পাকিস্তান,মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের নানা দেশে।
বিচ্যুতি সিরাতুল মোস্তাকীম থেকে
কিন্তু প্রশ্ন হলো,তাবলীগী জামাত ইসলামের যে চিত্রটি পেশ করছে সেটি কি নবীজী (সাঃ)র ইসলাম? পবিত্র কোরআন কি এ ইসলামের শিক্ষা দেয়? যে কোন মুসলমানের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নবীজী (সাঃ) কীরূপ ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেছেন সেটি কোন বিজ্ঞ জনেরই অজানা থাকার কথা নয়। ইসলামের সে পরিচয়টি যেমন সহীহ হাদীসগ্রন্থে পাওয়া যায়,তেমনি বিষদভাবে বিদ্যমান ইতিহাস গ্রন্থেও। তাছাড়া আল্লাহতায়ালা কীরূপ ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা চায় সেটিও কারো দৃষ্টির আড়ালে নয়,পবিত্র কোরাআনে সে ইসলামও বিশুদ্ধ ভাবে সুরক্ষিত। পবিত্র কোরআন আজও সে একই কথা শোনায় যা শুনিয়েছিল নবীপাক(সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরামদের। ইসলামের নামে যত বিপ্লব,যত আন্দোলন এবং যত জামায়াতের উদ্ভব হবে তা কতটা সঠিক সেটির যথার্থতা বিচার হতে হবে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো,তাবলীগী জামাত নিয়ে সে বিচার কতটা হয়েছে? হয়ে থাকলে কতটা উত্তীর্ণ হয়েছে সে বিচারে? বস্তুত সে বিচার তেমন হয়নি। বরং অহরহ যা ঘটছে তা হলো, বিপুল সংখ্যক জনতা এ জামায়াতে শামিল হচ্ছে কোনরূপ বিচার-বিবেচনা না করেই। অনেকেই মনে করছে এটিই হলো নবীজী (সাঃ)র আমলের ইসলাম,এবং সে চেতনায় তাবলীগী জামায়াতের কাজে ও এজতেমায় যোগ দেয়াকে তারা অতিশয় ছওয়াবের কাজ মনে করছে।
আল কোরআনের ইসলামই হলো নবী করীম (সাঃ)এর ইসলাম। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, নবী করীম (সাঃ) ছিলেন আল কোরআনের জীবন্ত রূপ। মহান আল্লাহর রাসূল রূপে নবীজী(সাঃ)র উপর মূল দায়িত্বটি ছিল পবিত্র কোরআনের সে ইসলামকে মানুষের কাছে অবিকৃত অবস্থায় পৌঁছে দেয়া। ইসলামের যে চিত্রকে আল্লাহতায়ালা দেখতে চান নবীজী (সাঃ) সে চিত্রটিই নিজের কর্ম,আচরন এবং ইবাদতের মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন। নবীজী (সাঃ) সে কাজে সফলও হয়েছেন। এদিক দিয়ে নবীজী (সাঃ)র পূর্ণ সফলতার সার্টিফিকেট এসেছে মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। বিদায় হজে আরাফার ময়দানে সে সাক্ষ্য দিয়েছেন সমবেত সাহাবাগণও। মহান আল্লাহতায়ালা নবীজী (সাঃ)কে বলেছেন সমগ্র মানুষ জাতির জন্য উসওয়াতুন হাসানা তথা উত্তম আদর্শ। তাঁর চলার পথটি হলো একমাত্র সিরাতুল মোস্তাকীম। মুসলমানের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো,ধর্মের নামে অন্যদের পক্ষ থেকে যা কিছু পেশ করা হয় সেগুলিকে বিনাবিচারে কবুল করে নেয়া নয়,বরং নবীজী(সাঃ)র ইসলামের সাথে সেগুলোকে গভীর ভাবে মিলিয়ে দেখা। যা কিছু নবীজী (সাঃ)র সূন্নতের বিপরীত সেগুলোকে বর্জন করা এবং যা কিছু সূন্নতের অনুরূপ সেগুলোকে কবুল করা। মানুষের বুদ্ধিমত্তার চরম পরীক্ষাটি খাদ্য-পানীয়, জীবনসঙ্গি ও পোষাক-পরিচ্ছদ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে ঘটে না। এমনকি পশুও বোঝে কোনটি তার জন্য সুখাদ্য এবং কোথায় থাকতে আহারের সন্ধানে ছুটতে। সাইবেরিয়ার পাখিরা তাই বহু হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে আসে বাংলাদেশে। বরং জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি হয় পথচলার সঠিক পথটি বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে। কে পরকালে মহা পুরস্কারটি পাবে সে পরীক্ষার শুরুটি হয় সঠিক পথ বেছে নেওয়ার সে সামর্থ থেকে। অথচ এ ক্ষেত্রেই অধিকাংশ মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ভূলটি হয়। কোন মানুষই সজ্ঞানে পচা খাদ্য গ্রহণ করে না,অথচ ধর্মের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তিকে বহু পণ্ডিত ও পিএইচডি ধারীও বিনা বিচেচনায় গ্রহণ করে। চন্দ্র-সূর্য, মুর্তি, গরু-বাছুড়, শাপ-শকুন, নদ-নদী,পাহাড়-পর্বত, এমনকি পুলিঙ্গও যেভাবে কোটি কোটি মানুষের পুঁজা পায় –তা তো এ চিন্তাশূণ্যতা,অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির কারণে। একই কারণে সিরাতুল মোস্তাকীম থেকে যুগে যুগে ভয়ানক বিচ্যুতি ঘটেছে শুধু অতীতের নবীরাসূলদের উম্মতদের মাঝেই নয়, মুসলমানদের মাঝেও। আল্লাহর দ্বীন এবং তাঁর শরিয়তী বিধান মূলত সে কারণেই আজ মুসলিম দেশসমুহে পরাজিত ও অবহেলিত। এমন এক পরাজিত অবস্থায় ময়দানে নেমেছিল তাবলীগী জামাত। কিন্তু নবীজী(সাঃ) এবং তাঁর সহাবায়ে কেরাম যে সিরাতুল মোস্তাকীম দিয়ে পথ চলেছেন তাবলীগী জামাতের পথ তা থেকে যে বহু দূরে,সেটি ইতিহাসের যে কোন পাঠকের চোখেই ধরা পড়তে বাধ্য। তারা পথ গড়েছেন নিজেদের মনের মত করে,কোরআন-হাদীসের শিক্ষা এখানে গুরুত্ব পায়নি। ফলে রাসূলে পাক (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের জীবনে যে ভাবে কোরআনী জ্ঞান,হিযরত,জিহাদ,ইসলামী রাষ্ট্র,শরিয়তের প্রতিষ্টা ও শাহাদত এসেছিল তারা এ ধারে কাছেও নেই।
সিরাতুল মোস্তাকীম আবিস্কারের বিষয় নয়,বরং মহান আল্লাহর এটি দান। মূলতঃ এটিই তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ দান। দুখ-যাতনা, জুলুম-নর্যাতন এবং অসত্য-অবিচার মানব জাতির ইতিহাসে সব সময়ই ছিল।তা থেকে মুক্তির পথ আবিস্কারে মানব জাতির ইতিহাসে বহু নেতা,বহু দার্শনিক,বহু ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বহু ধ্যান, বহু গবেষণা এবং বহু প্রচেষ্ঠা করেছেন। বহু ধর্ম,বহু মতবাদ, বহু দর্শনও আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু সেগুলি শুধু বিচ্যুতি এবং বিপর্যয়ই বাড়িয়েছে। কিন্তু এ বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতির মাঝে ইসলামের পথটি দেখিয়েছেন খোদ আল্লাহতায়ালা। আল্লাহর সে পথনির্দেশটি ওহি রূপে বয়ে এনেছেন হযরত জিবরাইল (আঃ)। এটিই পবিত্র কোরআনের পথ। হযরত ইব্রাহীম, হযরত, মূসা, হযরত ঈসাসহ অতীতের সকল নবী-রাসূলের পথও ছিল এটি।এ পথটি সনাক্ত করা এবং সে পথে টিকে থাকার মধ্যেই ঘটে মানুষ জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। এ পথ খুঁজে পেতে যারা ব্যর্থ হয়, তাদের সকল প্রতিভা, প্রচেষ্টা ও ধর্মকর্ম -এমন কি এ জীবনে বাঁচাটাই ব্যর্থ হয়। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছেঃ “বল (হে মুহাম্মদ)! আমি কি তোমাদের বলে দিব,কর্মের দিক দিয়ে কে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত? তারা হলো সেসব ব্যক্তি যারা নিজেদের সকল প্রয়াস-প্রচেষ্ঠা নিঃশেষ করেছে নিজেদের পার্থিব জীবনের (সুখ-স্বাচ্ছন্দের)জন্য এবং মনে করে কর্মজীবনে তারা কত সফল!” –(সুরা কাহাফ, আয়াত ১০৩-১০৪)।
এ জীবনে সিরাতুল মোস্তাকীমটি পাওয়াটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। সে পথের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করাটিই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থণা। এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সে প্রার্থণাটি শিখেয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালা খোদ নিজে। তবে আল্লাহতায়ালার হিকমত শুধু এ দোয়াটি শেখানোর মধ্যে সীমিত নয়, সেটির পাঠকে বাধ্যতামূলকও করেছেন নামাযের প্রতি রাকাতে। প্রতি নামাযীকে তাই “ইহদিনাস সিরাতুল মোস্তাকীম” (“হে আল্লাহ! সিরাতুল মোস্তাকীমে পরিচালিত কর”) তেলাওয়াত করতে হয় প্রতি রাকাতে। মহান রাব্বুল আলামীনের শেখানো শ্রেষ্ঠ এ দোয়াটি ব্যক্তিকে তার জীবনের মূল এজেণ্ডা বলে দেয়। এভাবে আগ্রহ জন্মায় সে এজেণ্ডাটি নিয়ে বেঁচে থাকায়। এটি তখন চলার পথে কম্পাস রূপে কাজ করে এবং ধাবিত করে সফলতার দিকে – শুধু এ দুনিয়ায় নয়,আখেরাতেও।
বিচ্যুতির ভয় যেখানে তাকওয়া
সিরাতুল মোস্তাকীমের পথটি শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাত ও কালেমা পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সীমাবদ্ধ নয় মসজিদের চার দেয়ালের মাঝেও। বরং এ দীর্ঘ পথটি দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী মঞ্জিল থেকে জান্নাত অবধি বিস্তৃত। ঈমানদারের জীবনে সিরাতুল মোস্তাকীমের পথে পথচলাটি কালেমায়ে শাহাদাত পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয়, এর পর আসে নামায-রোযা ও হজ-যাকাত। আসে কোরআনের জ্ঞানলাভ, আসে হিজরত। আসে লাগাতর জিহাদ। আসে সে জিহাদে শ্রম, সময়, অর্থ ও রক্তের কোরবানী। সে জিহাদের পথ ধরে ঘটে ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা,আসে সে ইসলামী রাষ্ট্রে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। এগুলো হলো সিরাতুল মোস্তাকীমের বিভিন্ন পর্যায় ও বিভিন্ন মাইল ফলক। ইসলামের পথে পথচলা কতটা সঠিক হচ্ছে সেটি বিচারের জন্য প্রতিক্ষণে পথচারিকে সে মাইল ফলকগুলোকে কোরআনের সাথে মিলিয়ে দেখতে হয়। গাড়ি চালনায় চালককে যেমন প্রতিক্ষণ পথের দিকে চেয়ে গাড়ি চালাতে হয় তেমনি মু’মিন ব্যক্তিকে সারাক্ষণ নজর রাখতে হয় সিরাতুল মোস্তাকিমের দিকে। ঈমানদারের জীবনে বস্তুত সেটিই হলো প্রকৃত তাকওয়া। তাকওয়ার অর্থ ভয়। এখানে ভয় সিরাতুল মোস্তাকীম হারানোর। তবে সুরা ফাতেহাতে শুধু সিরাতুল মোস্তাকীমের জন্যই দোয়া করতে শেখানো হয়নি,শেখানো হয়েছে পথহারানো থেকে বাঁচার দোয়াও। বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতার পথ মানুষকে জাহান্নামে টানে,এবং সেটি আসে তাকওয়ার অভাবে। সিরাতুল মোস্তাকীমে উদাসীন ব্যক্তিটির কাছে তখন অর্থ না বুঝে কোরআন তেলাওয়াতও ধর্মকর্ম মনে হয়। অথচ কোন শিশুও অর্থ না বুঝে কোন বই পড়েনা।
সঠিক পথে চলা নিয়ে যার আগ্রহ নেই,তার কাছে কি রোড ম্যাপ বোঝার প্রয়োজন পড়ে? পবিত্র কোরআনের সাথে এমন উদ্ভট আচরণের কারণ এটাই। এমন মানুষ তো পথ চলে পীর,হুজুর,মুর্শেদ,মাওলানা, গুরু ও রাজনৈতিক নেতাদের বাতলানো পথ দিয়ে। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভরে গেছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে। ফলে তারা যে পথ বেয়ে চলছে সে পথে কোরআনী জ্ঞান নেই;নেই হিজরত,নেই জিহাদ এবং নেই ইসলামের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ। নবীজী (সাঃ) এবং তার সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ হলো সম্পূর্ণ এক ভিন্নতর জীবন। ফলে এ পথকে কি সিরাতুল মোস্তাকীম বলা যায়? সিরাতুল মোস্তাকীমে চলার সামর্থ একমাত্র সত্যিকার ঈমানদারগণেরই থাকে। সে সামর্থ যেমন কাফের ও মুনাফিকগণের থাকে না,তেমনি কোরআনে জ্ঞানে অজ্ঞদেরও থাকে না। কারণ কোরআন-হাদীসের জ্ঞান ছাড়া সে পথ চেনা যেমন অসম্ভব,তেমনি সে পথে টিকে থাকাও অসম্ভব। তাই ইসলামে শুধু নামায-রোযা ফরয নয়, ফরয জ্ঞানার্জনও। জ্ঞানার্জন,নামায-রোযা ও হজ-যাকাতের পাশাপাশি জানমালের কোরবানীও চায়। কিন্তু যে পথে কোরআনী জ্ঞান নেই,যে পথে ঘরবাড়ী ছেড়ে দেশত্যাগের কথা নেই,নেই ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং জিহাদ,নেই শরিয়তের প্রতিষ্ঠা এবং জানমালের কোরবানী -সে পথে মিথ্যাবাদী রাজনীতিবিদ,ঘুষখোর কর্মচারি,দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসী ব্যাক্তিরাও বিপুল সংখ্যায় হাজির হয়। তাই দেখা যায়,বাংলাদেশে আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠার পক্ষে ভোট দেয়া বা সে দাবী নিয়ে রাস্তায় নামার লোক না থাকলে কি হবে,তাবলীগী জামায়াতের এজতেমায় হাজির হয় ৩০-৪০ লাখ মানুষ।
সুস্থ্য-মানুষ মাত্রই চেতনায় একটি স্পষ্ট মানচিত্র ও রোডম্যাপ নিয়ে পথে নামে। পাগলের সেটি থাকে না বলেই সে পাগল। চলার পথ দেখেই বুঝা যায় সে মানুষের গন্তব্যটি কোন মুখি। নাস্তিক ও আস্তিক,কাফের ও মু’মিন, সেক্যুলারিস্ট ও ইসলামিস্টদের পথ চলা তাই একই পথে হয় না। তাছাড়া নিজ মনে যে শহরে যাওয়ার ভাবনা নেই,সে শহরের রাস্তা নিয়ে কেউ ভাবে না। কিন্তু তাবলীগী জামাত তো জান্নাতে যাওয়ার কথা বলে। ফলে সেখানে পৌছার রাস্তা নিয়ে চিন্তাভাবনাটিও তাদের কাছে গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তাদের অনুসৃত সে পথে সিরাতুল মোস্তাকীমের পরিচিত আলামতগুলো কোথায়? তাবলীগ জামাতের কর্মসূচীতে আছে গাশত, আছে চিল্লাহ, আছে ফাজায়েলে আমল থেকে পাঠ,আছে এজতেমা। আছে তাবলীগের নামে বিদেশ গমন। প্রশ্নহলো নবীজী (সাঃ)র ইসলামের কি এসব ছিল? তিনি কোথায় গাশত বা চিল্লাহতে বেরিয়েছিলেন? বেরুলে হাদীসে তার উদাহরণ কই? কোথায় তিনি দোয়ার এজতেমা বসিয়েছেন? নিজ দেশে কাফের শক্তির নির্মূল এবং ইসলামের পূর্ণ-বিজয়ের পূর্বে নবীজী (সাঃ) কখনই বিদেশে ইসলামের প্রচারে লোক পাঠাননি। অন্য দেশে যখন গিয়েছেন তখন গেছেন সেনাবাহিনী নিয়ে। লক্ষ্য ছিল,সে দেশে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী শক্তির নির্মূল এবং সত্যের পথ থেকে সকল প্রকার বাধা সরিয়ে দেয়া। সেটি নবুয়ত লাভের ১৮ বছর পর। অমুসলিম দেশে যাওয়ার আগে যেটি গুরুত্ব পেয়েছিল সেটি মুসলিম দেশে পরিপূর্ণ ইসলামী বিপ্লব। একমাত্র সেটি সমাধা হওয়ার পরই তিনি বিদেশের দিকে নজর দিয়েছেন। কিন্তু তাবলীগী নেতাগণ নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের সে নীতি থেকে কোন শিক্ষাই গ্রহণ করেনি। নিজ দেশের জনগণ দুর্বৃত্তি তথা নানারূপ পাপাচারে যখন বিশ্বরেকর্ড গড়ছে,তখন দেশের তাবলীগীগণ লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় বিশাল বিশাল জামাত নিয়ে যাচ্ছেন। যে বাতি তার নিজ ঘরে অন্ধকার সরাতে পারিনি,সেটি কি হাজার হাজার মাইল দূরের অন্য এক মহাদেশে বা দেশে আলো দিতে পারে? বিদেশীদের কাছে এটি কি বিদ্রুপ ও হাসির খোরাক রূপে গণ্য হয় না? নিজ দেশের মানুষের ধর্ম,ভাষা,সংস্কৃতি,দর্শন ও চারিত্রিক রোগের সাথে যেরূপ পরিচিতি,সেটি কি বিদেশীদের সাথে থাকে? ফলে নিজ দেশে দাওয়াতের সামর্থ কি অধিক থাকা স্বাভাবিক নয়? দূরের দেশে গিয়ে কি সেটি সম্ভব?
অপরিহার্য হলো মডেল চরিত্র
মানুষের সামনে দ্বীনকে তুলে ধরার বড় হাতিয়ার বয়ান বা বক্তৃতা নয়,সেটি আমল । নবীজী (সাঃ) বড় বড় এজেতেমা বা মহফিল করেননি। দীর্ঘ বক্তৃতাও দেননি। জোর দিয়েছেন আমলে। নবীজী (সাঃ)র হিকমত হলো,উত্তম চরিত্রের মানুষ গড়া এবং সে সাথে কোরআনী শিক্ষার উপর সমাজ গড়া। এ ভাবে সফল জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। সে সুন্দর ইসলামী সমাজ দেখে মানুষ তখন দলে দলে ইসলাম কবুল করে। এটাই তো ইতিহাসের শিক্ষা। মদীনের ন্যায় কয়েক হাজার মানুষের এক ক্ষুদ্র জনপদে ইসলামী রাষ্ট্র গড়া সেদিন তিরিশ-চল্লিশ লাখ নিয়ে বছর বছর এজতেমা করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণ্য হয়েছিল। এটিই ইসলামের তাবলীগ ও প্রতিষ্ঠার পথ। কোরআন শুধু আল্লাহর বিধান নিয়ে হাজির হয়নি,সে বিধানের সর্বশ্রেষ্ঠ মডেল নিয়েও হাজির হয়েছে। নবীজী (সাঃ) ও সাহাবাদের আমলে তো সেটাই ঘটেছিল। ফলে ইসলাম গ্রহণে সেদিন জোয়ার শুরু হয়েছিল। আজ সে বিধান আছে কিন্তু সে মডেল নাই। ফলে সে ইসলামের প্রতি সে জোয়ারও নাই। বরং শুরু হয়েছে ইসলাম থেকে দূরে সরার জোয়ার। আজকের মুসলমানদের এটিই সবচেয়ে দুর্বল দিক।
মুসলমানদের উপর আল্লাহর সাহায্য স্রেফ দোয়ার ডাকে আসে না। আসে আল্লাহর প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকীমটি সুন্দর ভাবে আঁকড়ে ধরার উপর ভিত্তি করে। ফলে দোয়ার বিশ্ব এজতেমায় ৩০-৪০ লাখের কান্নাকাটিতেও কোন বিজয় আসছে না, মুসলিম ভূমিতে কোন শান্তিও আসছে না। বরং আধিপত্য বাড়ছে কাফের, ফাসেক, মুশরিক, মুনাফিকসহ নানারূপ দুর্বৃত্তদের। অথচ এ দোয়ার মহফিলে চমক আনার জন্যই তাবলীগী জামাতের মহা আয়োজন, নবী (সাঃ) প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকীম আঁকড়ে ধরায় নয়। তাদের মধ্যে আরেক বিচ্যুতি ঘটেছে তাবলীগের কাজকে শুধু মুসলমানদের মাঝে সীমিত রাখায়। এটিও নবীজী (সাঃ)র সূন্নতের খেলাফ। ইসলাম শুধু মুসলমানদের ভালো মুসলমান বানানোর জন্য আসেনি, বরং এসেছে অমুসলমানদের মাঝে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার জন্যও। একাজে তারা আল্লাহর খলিফা। মুসলমান হওয়ার এ এক বিশাল দায়বদ্ধতা। রাজা দাহিরের অত্যাচারি শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিন্ধু দেশের স্থানীয় হিন্দুরা বসরার মুসলিম শাসকের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিল। মুসলিম সৈনিকেরা তাদের মূক্তি দিতে শুধু ওয়াজ-নসিহত পেশ করেনি,অর্থ,শ্রম,সময় ও রক্তের বিনিয়োগ করেছিল। ইসলামের প্রসার তো ঘটেছিল এভাবেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো,অমুসলমানদের প্রতি তাবলীগী জামায়াতের সে অঙ্গিকারটি কোথায়? বিনিয়োগটাই বা কি? তাদের ব্যস্ততা শুধু মুসলমানদের নামাযী বানানোর মাঝে। সেটিও কোরআনী জ্ঞানের প্রতি জোর না দিয়ে। অমুসলমানদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছানোর জন্য প্রচেষ্ঠা কই? প্রতিবেশী হিন্দু,বৌদ্ধ বা খৃষ্টানদের মহল্লায় কি তারা দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে কখনো গাশতে নামেন? অথচ নবীজী(সাঃ) ও সাহাবীগণ আজীবন কাফেরদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। তাদের সে মেহনতের বরকতেই মদিনা থেকে বহু হাজার মাইল দুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশীরা আজ মুসলিম। তাই প্রশ্ন,নবীজী(সাঃ)র সে মহান আমলটি তাদের কাছে গুরুত্ব হারালো কেন? আজ কি অমুসলমানদের সংখ্যা কম?
আগ্রহ নেই সিরাতুল মুস্তাকীম বুঝায়
মহান আল্লাহতায়ালা চান,ঈমানদারগণ তাঁর পবিত্র কোরআন বোঝায় আত্মনিয়োগ করুক। কারণ আল্লাহর এ কিতাবটি হলো এ জীবনে পথচলার একমাত্র রোড ম্যাপ। আল্লাহতায়ালা মানুষের কল্যাণ চান। আর সে কল্যাণ আসতে পারে এ রোডম্যাপের নির্ভূল অনুসরণের মধ্য দিয়ে। তাই এটি শুধু নিছক তেলাওয়াতের কিতাব নয়, গভীর অনুধাবনের কিতাবও। অর্থ না বোঝে তেলাওয়াত হলে কখনই সে কিতাবের অনুসরণ হয় না। অনুধাবনের আগ্রহ বাড়াতে মহান আল্লাহতায়ালা তাই “আফালাতাফাক্কারুন”,“আফালা তাদাব্বারুন” “আফালা তা’ক্বিলুন” সে প্রশ্নগুলো পব্ত্রি কোরআনে রেখেছেন। এর অর্থ হলো কোরআনকে নিয়ে তোমরা কেন চিন্তাভাবনা করোনা,কেন গভীর মননিবেশ করোনা, কেন বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগাও না? যে কোন কিতাবের ন্যায় কোরআনের অনুসরণের জন্যও চাই কোরআনের জ্ঞান। এ জ্ঞানার্জন ছাড়া অসম্ভব হলো হিদায়েত লাভ। তাই মুসলমান হওয়ার অর্থই হলো,কোরআন বোঝার সামর্থ অর্জন। এটি ঠিক, আরবী ভাষায় জ্ঞানশূণ্য ব্যক্তির সে সামর্থ থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু সে সামর্থ বাড়ানোর প্রচেষ্ঠা কই? সে লক্ষ্যে প্রচেষ্ঠা চালানো তো ফরজ। এটি পবিত্র ইবাদত। বুঝার সামর্থ নাই বলে শুধু তেলাওয়াত নিয়ে খুশি থাকা তো ফরজ আদায় না করার গুনাহ। হাশর দিনে কি এ গাফলতির হিসাব দিতে হবে না? সামর্থ বাড়াতে মিসর, ইরাক,সিরিয়া,লেবানন,মরক্কো,লিবি য়া,সূদান,তিউনিসিয়া,আলজিরিয়াসহ বহু অনারব দেশের মানুষ তাদের মাতৃভাষা ভূলে কোরআনের ভাষাকে গ্রহণ করেছিলেন।
কিন্তু তাবলীগী জামায়াতের কর্মীদের মাঝে সে সামর্থ অর্জনে আগ্রহ কই? কোরআন বোঝা আর ফাজায়েলে আমল থেকে পাঠ করা কি এক জিনিষ? কোরআনের বিকল্প একমাত্র কোরআনই। ফাজায়েলে আমল –এমন কি শুধু হাদীসের কিতাব পড়েও কোরআন বোঝার কাজ চলে না। মুসলমানদের মাঝে প্রায় দুইশত বছর যাবত একমাত্র কোরআন ছাড়া আর কোন কিতাবই ছিল না। হাদীসের কিতাব এসেছে এর অনেক পর। ফিকাহর কিতাব এসেছে আরো পরে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানগণ তখন একমাত্র কোরআন থেকেই হিদায়েত লাভ করতেন,একই সুরাকে তারা বার বার পড়তেন যতক্ষণ না সেটির পূর্ণ উপলদ্ধি ও জ্ঞান তাদের মধ্যে সৃষ্টি না হতো। নামাযের মধ্যে ও বাইরে এ কিতাব থেকে তেলাওয়াতে তারা দীর্ঘক্ষণ কাটিয়ে দিতেন। একে অপরের সাক্ষাতে তারা কোরআনের আয়াত শুনিয়ে দিতেন। আল্লাহর এ কিতাব তারা এত বেশী বেশী পড়তেন যে বিপুল সংখ্যক সাহাবা হাফেজে কোরআনে পরিনত হয়েছিলেন। পুরা কোরআনে হাফিজ না হলেও শত শত আয়াত মুখস্থ্য ছিল অধিকাংশ সাহাবার। মুসলিম ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষগুলো তৈরী হয়েছে বস্তুতঃ সে সময়েই। তাদের জীবনে নামায-রোযা,হজ-যাকাত যেমন ছিল,তেমনি ছিল অমুসলমানদের মাঝে দ্বীনের তাবলিগ।ছিল জিহাদ। ইসলামী শরিয়তি বিধান ছাড়া অন্য কোন বিধানের কথা তখন কল্পনাও করা যেত না। আজ কিতাবের সংখ্যা যেমন বেড়েছে,তেমনি বেড়েছে কোরআনের উপর তাফসিরের সংখ্যাও।বেড়েছে ফাজায়েলে আ’মালের ন্যায় নানা বইয়ের লাগাতর চর্চাও। কিন্তু সে সাথে বেড়েছে সিরাতুল মোস্তকীম থেকে ভয়ানক বিচ্যুতি। সে সময় ইসলামের বিজয় এসেছিল দেশে দেশে। আর আজ ইসলামী বিধান পরাজিত খোদ মুসলিম দেশগুলিতে। পবিত্র কোরআনের জ্ঞানলাভের বিষয়টি অবহেলিত হলে মুসলমানদের বিচ্যুতি ও পতন যে কতটা ভয়ংকর হয় আজকের মুসলমানগণ হলো তারই সর্বাধুনিক নমুনা। এমন বিচ্যুতির উদাহরণ দিতে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বনি ইসরাইলের কাহিনী বার বার তুলে ধরেছেন। কিন্তু আজ মুসলমানরা নিজেরাই বড় উদাহরন। অতীতে বহু মুসলিম ইতিহাসে বহু বিচ্যুতি ঘটেছে। কিন্তু এখন সে পুরনো বিচ্যুতির স্থলে আসছে নতুন বিচ্যুতি ও ভ্রষ্টতা। আর এরূপ নতুন ভ্রষ্টতা যখন বাজার পায়,তখন মুসলমানদের গৌরব বাড়ে না বরং পরাজয়ই গভীরতর হয়। তাবলীগী জামায়াতও তাই কোন নতুন বিজয় বা গৌরব আনতে পারিনি। অথচ বিশ্ব এজতেমায় প্রতিবছর লোকের সমাগম বেড়েই চলেছে। সেখানে হজের চেয়েও বেশী লোক জমায়েত হচ্ছে। কিন্তু তাতে কি বাংলাদেশে ইসলামের প্রতিষ্ঠা বেড়েছে? মুক্তি মেলেছে কি ৫ বার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বৃত্তকবলিত দেশের অমর্যাদা থেকে?
ঈমান বাড়লে আল্লাহর শরিয়তি বিধান প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্ঠাও শুরু হয়। উনানের আগুন আর তার উত্তাপ একসাথে বাড়ে। যেখানে উত্তাপ নাই সেখানে আগুণও যে নাই সেটি প্রমাণের জন্য গবেষণা লাগে না। ঈমানের সাথে তেমনি জিহাদ বাড়ে। ঈমান ও জিহাদ -একে অপরের অবিচ্ছেদ্দ অঙ্গ; ঈমান হলো বীজ,আর জিহাদ হলো তার বৃক্ষ। বৃক্ষের মাঝে বীজ যেমন একাকার তেমনি জিহাদের মাঝে ঈমানও একাকার। উভয়কে পৃথক করা অসম্ভব। এজন্যই ইসলামের আরকান গুলির মাঝে জিহাদকে পৃথক রুকন বা খুঁটি রুখে দেখানোর প্রয়োজন পড়েনি। সে জীবনে জিহাদ নাই, বুঝতে হবে সে জীবনে ঈমানও নাই। তাই নবীজী (সাঃ)র যুগে এমন কোন মুসলমান ছিল কি যার মধ্যে জিহাদ ছিল না? সে জিহাদে বহু হাজার সাহাবা জানমালের কোরবানী দিয়েছেন। মদিনার ন্যায় এক গ্রাম থেকে যতজন সাহাবা সেদিন শহীদ হয়েছেন বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ বিগত হাজার বছরেও তত শহীদ সৃষ্টি হয়নি। যারা জিহাদের ময়দানে সেদিন শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সেটি ঘটেছে মহান আল্লাহর ইচ্ছায়, শাহাদত লাভে তাদের প্রস্তুতির কমতির কারণে নয়। তাদের সে কোরবানীতে সেদিন মানব জাতির ইতিহাস পাল্টে গিয়েছিল। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের হাতে আজ অবধি ইসলামের কোন বিজয় না এলেও আরবের কয়েক হাজার মুসলমানদের হাতে বিশাল ভূ-ভাগ জুড়ে ইসলাম বিজয়ী হয়েছিল। তখন মুসলমানগণ পরিণত হয়েছিল বিশ্বশক্তিতে। শহিদগণ এবং যুদ্ধরত মোজাহিদগণই তো আল্লাহর সাহায্য নামিয়ে আনে। তখন তাদের সাথে জিহাদে যোগ দেয় ফেরেশতারা। নবীজী (সাঃ) বলেছেন,“আল্লাহর কাছে তাঁর একজন মু’মিন বান্দাহর অন্যায় ভাবে নিহত হওয়াটি সমগ্র পৃথিবী মুছে যাওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।” -(ইবনে মাজাহ)। আল্লাহতায়ালার কাছে তার পথে জিহাদরত মু’মিনরা যে কত প্রিয় এ হলো তার নমুনা। কিন্তু সমস্যা হলো, তাবলীগী জামাতের নেতাকর্মীগণ সাহাবাদের দীর্ঘ নামায-রোযা ও দোয়া-দরুদ নিয়ে বিষদ আলোচনা করলেও জিহাদ বিষয়ক কোরআনের আয়াত এবং নবীজীর হাদীস তেমন বলে না। সাহাবায়ে কেরামের জানমালের কোরবানীর ইতিহাস নিয়েও তেমন আলোচনা করে না।
সমস্যা ভিশনে
১৯২৬ সাল থেকে ২০১২ সাল –এ দীর্ঘ ৮৬ বছরে তাবলীগী জামায়াতের লক্ষ লক্ষ কর্মী বেড়েছে কিন্তু তাতে ইসলামের শক্তি কতটুকু বেড়েছে? ঢাকা,লাহোর বা দিল্লিতে তারা যেরূপ লক্ষ লক্ষ মানুষের এজতেমা হয় তা স্থানীয় কোন রাজনৈতিক দলই করতে পারে না। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলির যে ক্ষমতা, সে ক্ষমতা কি তাবলীগী জামায়াতের আাছে? রাজনৈতিক দলগুলো এত বড় বড় সভা না করতে পারলেও বহুদেশের রাজনীতি, ভুগোল ও সংস্কৃতি পাল্টিয়ে দিয়েছে। সাহাবাগণও পাল্টিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিশ্ব-মানচিত্রের বিরাট অংশের রাজনীতি,ধর্ম ও সংস্কৃতি। মানব সমাজে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হলো রাষ্ট্র;রাষ্ট্রের সহযোগীতা ছাড়া সমাজে কোন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনই সম্ভব নয়। নবীজী (সাঃ) তাই রাষ্ট্র ক্ষমতাকে নিজ হাতে নিয়েছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ),হযরত ওমর(রাঃ),হযরত ওসমান(রাঃ)এবং হযরত আলী(রাঃ)র ন্যায় মহান সাহাবীগণও রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাবলীগী জামাত রাষ্ট্রের সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে মানতে রাজী নন। তাদের কথা,মানুষ তাবলীগী জামায়াতে শামিল হলেই মুসলমানদের ঈমান ও একীন বেড়ে যাবে। রাষ্ট্রের সকল সমস্যার তখন সমাধান হবে। সমাজ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে তাবলীগী জামায়াতের নেতাকর্মীদের ধারণা যে কতটা অজ্ঞতাপ্রসূত এ হলো তার প্রমাণ।
তবে তাবলীগী জামায়াতের মূল সমস্যাটি নিছক কোরআনী জ্ঞান,নবীজী(সাঃ)সূন্নত,সাহাবা দের জীবন-ইতিহাস এবং সমাজ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে সীমিত নয়। সে সমস্যটি প্রকট তাদের ভিশনে। ভিশন হলো ভবিষ্যতের সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীকে কীরূপে দেখতে চায় তার এক মানসচিত্র।শয়তানী শক্তিও তেমন এক ভিশন নিয়ে রাজনীতি করে। রাজনীতির বিজয়ে তারা যুদ্ধ করে এবং প্রাণও দেয়। তাবলীগী জামাতের ভিশনে ইসলামী রাষ্ট্র যেমন নাই,তেমনি শরিয়তের প্রতিষ্ঠাও নাই। সে লক্ষ্য অর্জনে জ্ঞানার্জন ও সামর্থ-অর্জনের চেষ্টাও নাই। ফলে তাদের জীবনে কোরআনে নির্দেশিত জিহাদও নাই। তাদের চেতনাগত বিচ্যুতি এতটাই প্রকট যে, গাশত,চিল্লাহ এবং এজতেমায় যাওয়াকে তারা জিহাদ বলছে। অথচ তাবলীগ যেমন তাবলীগ, নামায যেমন নামায, তেমনি জিহাদ হলো জিহাদ। জিহাদের বিকল্প একমাত্র জিহাদই। একটির সাথে অপরটির মিশ্রণ চলে না। জিহাদে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে শুধু জান-মালের বিনিয়োগের বিষয়টি আসে না,প্রাণদানের বিষয়টিও আসে। আসে শত্রুর অস্ত্রের সামনে দাঁড়ানোর বিষয়টিও। যে কোন আমলের ন্যায় এখানেও আমলের মূল্যায়ন হয় ব্যক্তির নিয়ত থেকে। কথা হলো,কোন তাবলীগ কর্মী কি এমন নিয়েত নিয়ে কোন কালেও কি কোন শত্রুর সামনে দাঁড়িয়েছে? চেয়েছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ইসলামের পক্ষের শক্তির বিজয়? মুসলিম ভূমি আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে অধিকৃত। শরিয়তি বিধান গিয়ে পড়েছে আস্তাকুঁড়ে। আইন-আদালত, প্রশাসন,ব্যাংক,শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে চলছে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। কাশ্মীর, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, চেচনিয়াসহ নানা দেশে চলছে কাফের শক্তির অধিকৃতি থেকে মুক্তির জিহাদ। কিন্তু সে সব জিহাদে কি কোন তাবলীগী কর্মী যোগ দিয়েছে? এমনকি তাবলীগ জামায়াতের যখন জন্ম, ভারতভূমিতে তখন ছিল ঔপনিবেশিক কাফের শক্তির শাসন। সাধারণ মুসলমানগণও সেদিন সে শাসন থেকে মুক্তির জন্য লড়াই করেছে। সে লড়াইয়ে তাবলীগী জামাত কি কোন ভূমিকা রেখেছে? বরং সত্য হলো,ভূমিকা রাখা দূরে থাক,সেটি তাদের কাছে কোন গুরুত্বই পায়নি। এমন এক দায়িত্বশূণ্যতা থেকে জিহাদ নিয়েও তারা সম্পূর্ণ এক মনগড়া এক ব্যাখ্যা খাড়া করেছে। ফাজায়েলে আ’মাল কিতাবে ১২৬ পৃষ্ঠায় ভারতের এক আলেম হযরত মাওলানা ইদ্রিছ আনছারীর উর্দু কিতাব “মেরী নামায” হতে সংগৃহীত নামাজের কতিপয় অংশের ফজীলত বর্ণনা করতে গিয়ে ক্বেয়াম সম্বন্ধে বলা হয়েছে,“নামায সর্বশ্রেষ্ঠ জেহাদ”।
বিশ্ববাসী নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব অভিপ্রায় কি সেটি সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছে পবিত্র কোরআন। সেটি হলো,বিশ্বের সকল ধর্মের উপর ইসলামের বিজয়। এটিই হলো আল্লাহর ভিশন। সে ভিশনের সাথে একাত্ম হওয়াই মু’মিনের মিশন। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণ শুরু থেকেই আল্লাহর সে ভিশনকে নিজেদের ভিশন ও মিশন বানিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি কি গাশত,চিল্লাহ,এজতেমার মধ্য দিয়ে সম্ভব? সে ভিশন পূরণে হাজার হাজার সাহাবা শুধু অর্থ, শ্রম ও সময়ই দেননি,প্রাণও দিয়েছেন। নবীজী (সাঃ)নিজেও আহত হয়েছিলেন। কিন্তু সে চেতনা তাবলীগী জামাতের লোকদের মাঝে কই? তাবলীগ জামাত মানুষকে মূলতঃ নামাজের দিকে ডাকে। কিন্তু কোরআন বলে আল্লাহর দিকে ডাকতে। মাথা টানলে যেমন কান এমনিতেই আসে তেমনি আল্লাহর দিকে ডাকলে শুধু নামায আসে না, সকল প্রকার ইবাদতই আসে। আসে জিহাদও। ইসলামে প্রবেশের অর্থ পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“উদখুলু ফি সিলমে কাফ্ফা”। অর্থঃ প্রবেশ করো পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে। তাই তাবলীগের যথার্থ অর্থ শুধু নামাজের দিকে ডাকা নয়,ইসলামী রাষ্ট্র-সমাজ-সংস্কৃতি,বিচার-ব্ যবস্থা ও অর্থনীতির দিকে ডাকাও। এবং ইসলামের সে পরিপূর্ণ বিধান প্রতিষ্ঠায় জিহাদে ডাকাও।
অবহেলিত কোরআন
মসজিদে মসজিদে প্রতিদিন মাগরিব বা এশার নামায শেষে বসে তাবলীগী জামায়াতের বৈঠক। সে বৈঠকে পবিত্র কোরআন থেকে পাঠ হয় না। বরং “ফাজায়েলে আমাল” থেকে কিছু অংশ পড়ে শুনানো হয়। প্রশ্ন হলো, কোরআনের স্থলে ফাজায়েলে আমলের কেন এত গুরুত্ব? পবিত্র কোরআন হলো আল্লাহপাকের কালাম, দাওয়াতের যে শক্তি ও হিকমত সেখানে আছে তা কি কোন মানুষের কিতাবে থাকতে পারে? পবিত্র কোরআনের সে মহাশক্তিকে আল্লাহতায়ালা বর্ণনা দিয়েছেন এ ভাবে,“প্রকৃত মু’মিন তো তারাই যাদের অন্তর আল্লাহর নাম শোনার সাথে সাথে কেঁপে উঠে। এবং যখন তাঁর আয়াত পড়ে শোনানো হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। -(সুরা আনফাল, আয়াত ২)। হযরত উমরের ন্যায় হত্যাপাগল কঠোর মানুষটিও কোরআনের আয়াত পাঠ করতে শুনে আল্লাহরে ভয়ে শিহরে উঠেছেন। সে ভয় নিয়ে নবীজী (সাঃ)র কাছে ছুটে গেছেন এবং ইসলাম কবুল করেছেন। আর এমনটি শুধু হযরত উমরের ক্ষেত্রে ঘটেনি। বহু কঠোর হৃদয় কাফেরদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। এবং সেটি আজও ঘটছে। আজও যারা ইসলাম কবুল করছে তাদেরও কথা,তারা ইসলাম কবুল করেছে কোরআন পাঠের পর। আজকের মুসলমানগণ মেঘের ন্যায় ইসলামের সামনে দাঁড়িয়েছে,এবং আড়াল করেছে ইসলামের মূল পরিচয়কে। কিন্তু কোরআন তার বিশুদ্ধ রূপ নিয়ে বিদ্যমান। কোরআন নিজেই এক বিস্ময়কর মোজেজা। পৃথিবীর বুকে একমাত্র এই কোরআনই হলো মহান আল্লাহর নিজস্ব ভাষায় নিজের কথা। আল্লাহর সে কিতাবকে বাদ দিয়ে ফাজায়েলে আ’মালের গুরুত্ব দেয়া কি ঈমান-সম্মত? বিবেক-সম্মতই বা কি করে বলা যায়? নবীজীর আমলে এই একটি মাত্র কিতাব ছাড়া অন্য কোন গ্রন্থই ছিল না। হাদীস গ্রন্থ লেখা হয়েছে তো নবীজী (সাঃ)র ওফাতের প্রায় ২শত বছর পর। কোরআন বুঝার তাগিদে বহু দেশের মানুষ মাতৃভাষা পরিত্যাগ করে আরবী ভাষা শিখেছে।অথচ তাবলীগী জামাত তাদের বৈঠকে সে কোরআন থেকে ছবক নেয় না। ছবক নেয় একজন মানুষের লেখা বই থেকে। পবিত্র কোরআনের সাথে এর চেয়ে বড় অবহেলা আর কি হতে পারে?
জিহাদের মর্যাদা হনন
এ বিষয়টি আজ প্রমাণিত, হাদীসের নামে বহু হাজার মিথ্যা বা জাল হাদীস বিভিন্ন কিতাবে ঢুকানো হয়েছে। তবে কোনটি জাল হাদীস এবং কোনটি জাল হাদীস সে যাচাইয়ের মাধ্যম হলো পবিত্র কোরআন। যে বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে তার সাথে সাংঘর্ষিক কোন হাদীসই সহীহ হতে পারে না। অথচ তাবলীগী জামাতের প্রকাশিত “ফাজায়েলে আ’মাল”য়ে বহু হাদীস আছে যেগুলির সাথে পবিত্র কোরআনের কোন মিল নেই। কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে জিহাদকে মু’মিনের জীবনে অনিবার্য বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, শুধু ঈমান এনেছি এ কথা বললেই কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না। আল্লাহতায়ালা দেখতে চান কারা সে দাবীতে সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যুক। যেমন সুরা আনকাবুতে বলা হয়েছে, “মানুষ কি মনে করে যে, “আমরা ঈমান এনেছি একথা বললেই তাদের পরীক্ষা না করেই অব্যাহতি দেয়া হবে। আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী।” -(আয়াত ২-৩)। সুরা আল –ইমরানে বলা হয়েছে, “তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, যখন আল্লাহ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং কে ধৈর্যশীল তাহা এখনও প্রকাশ করেন নাই।” –(আয়াত ১৪২)। অর্থাৎ মু’মিনের ঈমানের প্রকৃত পরীক্ষাটি শুধু কালেমা পাঠে বা নামায-রোযা আদায়ে ঘটে না। সেটি ঘটে জিহাদে। পবিত্র কোরআনে সে অনিবার্য পরীক্ষার কথা বহুবার বলা হয়েছে। বহুবার বলা হয়েছে আল্লাহর পথে শহীদদের উচ্চ মর্যাদার কথা। শহীদদের মর্যাদাগুলো হলোঃ তাদের সমস্ত গুনাহগুলোকে মাফ করে দেয়া হবে। তারা বিনা বিচারে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তাদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা জীবিত এবং তারা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিকপ্রাপ্ত হন। অথচ শহীদদের মর্যাদা কমাতে গিয়ে ফাজায়েলে আ’’মাল পুস্তকের ৫২ পৃষ্ঠায় আবু হোরায়রা (রাঃ)র স্বপ্ন থেকে প্রাপ্ত একটি চিত্রের বর্ননা দেয়া হয়েছে। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, “কোন এক গোত্রে দুইজন সাহাবী (হবে দুইজন ব্যক্তি) একত্রে ইসলাম গ্রহণ করেন। তন্মধ্যে একজন জিহাদে শরীক হয়ে শহীদ হন। অপরজন এক বৎসর পর এন্তেকাল করেন। আমি স্বপ্নে দেখলাম,যিনি এক বৎসর পর এন্তেকাল করেন তিনি শহীদের আগেই জান্নাতে প্রবেশ করলেন। এতে আমি আশ্চার্যান্বিত হলাম ও হুজুর (ছঃ)এর নিকট ঘটনা প্রকাশ করলাম। অথবা অন্য কেউ হুজুরের নিকট প্রকাশ করেন। হুজুর (ছঃ) উত্তর করলেন,যে ব্যক্তি পরে মারা গেল তার পূণ্য কি তোমরা দেখতে পাওনা যে, কত বেশী পেয়ে গেল? পূর্ণ একটি রমজানের রোজা ও ছয় হাজার রাকাতের অধিক নামায তাহার আমল নামায় বৃদ্ধি পেয়ে গেল।” অন্য এক হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলা হয়েছে, “আবু দাউদ শরীফে অন্য দুইজন সাহাবীর কথা উল্লেখ আছে যাদের মৃত্যুর ব্যবধান ছিল মাত্র ৮ দিন,তবুও যিনি পরে এন্তকাল করেন,তিনিই প্রথমে বেহেস্তে প্রবেশ করেন।” তার প্রথমে বেহস্তে প্রবেশের কারণ রূপে তার ৮ দিনের নামাযকে চিহ্নিত করা হয়েছে। (উল্লেখ্য, ফাজায়েলে আমালের উদ্ধৃতিগুলোকে সাধু ভাষার স্থলে চলতিতে রূপান্তরীত করা হয়েছে)।
ফাজায়েলে আ’মালের উদ্ভট বয়ান
ফাজায়েলে আ’মালের মূল লেখক মাওলানা মাওলানা জাকারিয়া (রহঃ) এবং অনুবাদক মাওলানা ছাখাওয়াত উল্লাহ। কিতাবখানি তাবলীগী জামাত বাংলাদেশের আহলে শুরার বুজুর্গগণ কর্তৃক অনুমোদিত এবং তাবলীগী ফাউন্ডেশন ও তাবলীগী কতুবখানা, ৫০ বাংলাবাজার ঢাকা ১১০০ কর্তৃক প্রকাশিত (ফেব্রেয়ারী, ২০০৫ সংস্করন)। এ পুস্তকে ইসলামের কীরূপ চিত্র পেশ করা হয় এবং ধর্মের নামে পাঠককে কীরূপ কাজে উৎসাহ দেয়া হয় সেটির কিছু উদাহরন তুলে ধরা যাক।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “ফাযাক্কের বিল কোরআন”। অর্থাৎ কোরআনের সাহায্যে মানুষকে স্মরণ করাও। অর্থাৎ সাবধান করো। মহান আল্লাহতায়ালার ভাষায় পবিত্র কোরআন হলো,“হুদাল্লিল মুত্তাকীন” “সিরাতুল মোস্তাকীম” এবং “হাবলিল্লাহিল মাতিন”। বলা হয়েছে “মাই ইয়াতাছিম বিল্লাহ, ফাক্বাদ হুদিয়া ইলা সিরাতিম মোস্তাকীম” অর্থঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করলো সেই সিরাতুল মোস্তাকীম তখা সোজা পথে পরিচালিত হলো।” -(সুরা আল ইমরান¸আয়াত ১০১)। এরপরও কি এ বিষয়টি বুঝতে বাঁকী থাকে,কোরআন হলো মুসলমানের জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে। মুসলমানের ইবাদত, পরিবার,রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্কৃতি সবকিছু আবর্তিত হয় কোরআনকে কেন্দ্র করে। কিন্তু “ফাজায়েলে আমাল”য়ে আল্লাহ কি বললেন সেটির তেমন উল্লেখ নেই,বরং কোন হুজুর বা কোন সুফি কি বললেন সেটিরই ছড়াছড়ি। মানুষকে হুশিয়ার করা হচ্ছে সুফিদের বা হুজুরদের বক্তব্য শুনিয়ে। মানুষের কাছে কোরআনের নির্দেশ পৌছানোর গরজ এখানে সামান্যই। ফাজায়েলে আ’মালের ৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে “কারো যদি দ্বীনের একটি মাত্র কথাও জানা থাকে উহা অন্যের নিকট পৌছাতে হবে।” কিন্ত সেটি কার কথা? সেটি কি হুজুরদের কথা না আল্লাহর কথা? কিন্তু কথা হলো,মহান আল্লাহর কথা যদি জানা ও বোঝারই চেষ্টা না হয় তবে সে অন্যের কাছে সে তা পৌঁছাবে কি করে? অন্যদের কাছে পৌছানো দূরে থাক, মসজিদে মসজিদে নামায শেষে তাবলীগী জামায়াতের যে বৈঠক বসে সেখানেও কি কোরআন খুলে তার অর্থ বোঝার চেষ্টা করা হয়? সেখানে তো হুজুরদের বই প্রাধান্য পায়, আল্লাহর কিতাব নয়।
আল্লাহতায়ালার কাছে এটি প্রচণ্ড অপছন্দের যে, মানুষ তাঁর নাযিলকৃত কিতাবকে শুধু সওয়াবের উদ্দেশ্যে পড়বে,আর জীবনযাপন,ঘর-সংসার,ধর্মকর্ম,পো ষাক-পরিচ্ছদ,শিক্ষা-সংস্কৃতি,বি চার-আচার,অর্থনীতি, প্রশাসন, এমন কি দ্বীনের তাবলীগের ক্ষেত্রে নসিহত ও নির্দেশনা নিবে অন্য কোন কিতাব বা নেতা থেকে। নসিহতের জন্য তাবলীগী জামাত এখানে বেছে নিয়েছে “ফাজায়েলে আমাল”। এটি বস্তুত মহান আল্লাহর কিতাবের প্রতি চরম অবমাননা। এমন আচরণে রাব্বুল আলামীন কখনই খুশি হতে পারেন না। মহান আল্লাহ তাঁর ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছেন এভাবে, “তোমাদের নিকট কি কোন কিতাব আছে যা তোমরা পাঠ কর? তাতে কি তোমরা তাই পাও যা তোমরা পছন্দ কর?” –(সুরা কালাম, আয়াত ৩৭-৩৮)। তাবলীগী কর্মীগণ ফাজায়েলে আ’মাল থেকে বস্তুত সেটিই পায়,যা তাদের মন চায়। তারা পায়, তাবলীগী মিশন চালানোর নতুন প্রেরণা। কোরআন থেকে সেটি পায় না বলেই কোরআন নিয়ে তারা বৈঠক করে না,সে গ্রন্থ থেকে নসিহত লাভের চেষ্টাও করে না। কোরআন বাদ দিয়ে অন্য কিতাব থেকে নসিহত নেয়ায় যে প্রচণ্ড আগ্রহ বাড়বে সেটি কোরআন নাযিলের সময়ই মহান রাব্বুল আলামীন জানতেন। কারণ সেটি “আলেমুল গায়েব” মহান আল্লাহর অজানা থাকার কথাও নয়। অনুরূপ কিছু হলে সেটি যে আল্লাহতায়ালার ক্ষোভের কারণ হবে সেটিও তিনি পবিত্র কোরআনে গোপন রাখেননি। সুরা কালামের উপরুক্ত দুটি আয়াত হলো তার নমুনা।
“ফাজায়েলে আমল” বইতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে উত্তম যিকর হলো পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত যে কোন জিকর হইতে শ্রেষ্ঠ। -(পৃষ্ঠা ১৫৫)। একথাও বলা হয়েছে, শ্রেষ্ঠ তেলাওয়াত হলো কোরআন বুঝে তেলাওয়াত। পৃষ্ঠা ১৩৪য়ে একটি প্রশিদ্ধ হাদীসের উল্লেখও করা হয়েছে। হাদীসটি হযরত ওসমান (রাঃ)থেকে উদ্ধৃত। হুজুর পাক (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ, যিনি কোরআন শরীফ স্বয়ং শিখেয়েছেন এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছেন। ১৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণীত একটি হাদীস। যাতে বলা হয়েছে,“কোরআনে পারদর্শী তাহারা ঐসব ফেরেস্তাদের অন্তর্ভূক্ত যাহারা মহা পূর্ণবান এবং (আল্লাহর হুকুমে) লেখার কাজে লিপ্ত।” ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে তিরমিযী শরিফের একটি হাদীস। হাদীসটি হলো,“হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যার মধ্যে কোরআনের কোন শিক্ষা নাই সে ঘর বিরান সমতূল্য।” ১৮১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ হযরত আবু জর (রাঃ) বলেন, হুজুর পাক (ছঃ) এরশাদ করেন, হে আবু জর! তুমি যদি সকল বেলায় গিয়া কালামুল্লাহ শরীফ হইতে একটি আয়াতও শিক্ষা কর তবে একশত রাকাত নফল পড়া হইতেও উহা উত্তম। আর ঐসময় যদি এলেমের একটি অধ্যায় শিক্ষা কর, চাই উহার উপর আমল করা হউক বা না করা হোক তবে উহা হাজার রাকাত নফল পড়া হইতেও উত্তম।” কথা হলো তাবলীগী জামাত কি এর উপর বিশ্বাস করে? তাবলীগী জামাতের জোর তো ফাজায়েলে আলম শিক্ষার প্রতি। তারা নামায শেষের বৈঠকগুলোতে কখনও কি কোরআন হাতে নিয়ে তা থেকে পাঠ করে শুনায়? মুসলমানের শ্রেষ্ঠ কল্যাণ করার যদি কারো আগ্রহ থাকে তবে তার উচিত মুসলমানদের মাঝে কোরআন বোঝার সামর্থ সৃষ্টি করা। সে জন্য আরবী ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাবলীগী জামায়াতের লক্ষ লক্ষ লোক, কিনন্তু তাদের ক’জনের সে সামর্থ? সে সামর্থ বাড়ানো্রই বা উদ্যোগ কোথায়? আর সে সামর্থ বাড়লে কি দ্বীনের প্রতি মানুষকে ডাকার সামর্থ বাড়তো না? তারা যা বলে তা কি করে? অথচ পবিত্র কোরআন পাকে বলা হয়েছে, আল্লাহর কাছে বড়ই অপছন্দের হলো তোমার যা বলো তা করো না। -(সুরা সাফ)। “ফাজায়েলে আমল”য়ে বার বার আলেমদের সম্মান দেখানোর কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু সচারাচার দেখা যায়, বৈঠকে এমন একজনকে নসিহত পেশের জন্য খাড়া করে দেয় যিনি আলেম নন।
অবান্তর কেচ্ছা-কাহিনী
হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব তার জিহ্ববাতে। অর্থাৎ তার বিশ্বাসযোগ্যতা তার কথায়। তেমনি একটি বইয়ের বিশ্বাস যোগ্যতা তার তথ্য ও বক্তব্যের বিররণীতে। তাই বক্তাকে যেমন তার কথায় সত্যবাদী হতে হয় তেমনি লেখককে সত্যবাদী হতে হয় তার লিখনীতে। তাই আজগুবি তথ্যদিয়ে একটি বইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো যায় না। এদিক দিয়ে ফাজায়েলে আ’মালের কিছু বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে বিচার করা যাক। পুস্তকটির ১৭৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,“হযরত ওসমান (রাঃ) কোন কোন সময় বেতেরের একটি রাকাতে পুরা কোরআন শরীফ শেষ করিয়া ফেলতেন।” ১৭৭ তেই বলা হয়েছে, জনৈক শায়েক হানায়ী বলেন,“আমি একরাতে দুই খতম আরও দশ পারা কোরআন পড়েছি। যদি ইচ্ছা করতাম তৃতীয় খতমও শেষ করতে পারতাম।” মানছুর বিন জাযান চাশতের নামাজে এক খতম এবং জোহর হইতে আছর পর্যন্ত অন্য এক খতম করিতেন। বলা হয়েছে, “এবনুল কাতেব (রহঃ) দৈনিক আটবার কোরআন খতম করতেন।” কথা হলো, এমন দাবী কি বিশ্বাসযোগ্য? কোন সুস্থ্য মানুষ কি এমন কথা বিশ্বাস করেতে পারে? আর যদি এরূপ অসম্ভব কর্ম সম্ভবও হয় তবুও কি সেটি প্রশংসাযোগ্য? খোদ ফাজায়েলে আ’মালেরই ১৭৭-১৭৮ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে,“হুজুর পাক(সাঃ)বলেছেন,তিন দিনের কম সময়ে কোরআন খতম করলে চিন্তা-ফিকির করে পড়া যায় না।” এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, নবীজী (সাঃ)র কথার উপর যদি তাদের সামান্যতম শ্রদ্ধা থাকে তবে দৈনিক আটবার বা রাতে দুই বার খতমের কাহিনীকে এত গুরুত্ব দিয়ে প্রচার কেন? এতে কি নবীজী(সাঃ)র নসিহতের প্রতি অসম্মান ও অবাধ্যতা হয় না?
ফাজায়েলে আ’মালের ১০২ পৃষ্ঠাতে লেখা হয়েছে:“শেখ আব্দুল ওয়াহেদ (রহঃ) একজন বিখ্যাত ছুফী ছিলেন। তিনি বলেন “একদা রাত্রি বেলায় নিদ্রা বশতঃ আমার রাত্রিকালীন তাছবীহ ও অজিফা পড়তে পারলাম না। স্বপ্ন যোগে আমি সবুজ রং-এর রেশমী পোষাক পরিহিতা এক পরমা সুন্দরী বালিকাকে দেখলাম। আপাদমস্তক তার তাছবীহ পাঠে রত ছিল। সে আমাকে বললো আমাকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা কর,আমি তোমাকে লাভ করবার চেষ্টায় আছি। অতঃপর সে কয়েকটি হৃদয়গ্রাহী কবিতা পাঠ করলো। তারপর তিনি নিদ্রা হতে উঠে কছম করলেন যে, জীবনে তিনি আর কখনো ঘুমাবেন না। কথিত আছে, চল্লিশ বৎসর যাবৎ তিনি এশার অজু দ্বারা ফজরের নামায পড়েছেন।” কথা হলো, এমন উদ্ধৃতি থেকে কি প্রকাশ পেল? কোন মু’মিনের ইবাদতে এটি যথার্থ নিয়ত? মুসলমান নামায পড়ে কি বেহেশতের কোন রমনীকে খুশি করার জন্য? বা তাকে পাওয়ার জন্য? প্রশ্ন হলো, কোন মুসলমানের এমন আমল কি কখনো আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য হতে পারে? মুসলমানের নামায-রোযা,হজ-যাকাত,জীবন-মরণ এবং জিহাদ –সবকিছুর লক্ষ্য তো একমাত্র আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে। ঈমানদারের ইবাদত-বন্দেগীর নিয়ত কখনই বেহেশতের কোন রমনী পাওয়ার জন্য নয়। সেটি লক্ষ্য হলে কি সেটি ইবাদত রূপে গণ্য হয়? উক্ত সুফি চল্লিশ বছর যাবৎ এশার অজু দ্বারা ফজরের নামায পড়েছেন সেটিও কি কোন সুস্থ্য মানুষের আচরণ? সেটি কি বিশ্বাসযোগ্য? তার কি কোন বৈবাহিক জীবন ছিল না? ৪০ বছর ধরে কোন রাতেই কি এশা থেকে ফজর অবধি এ দীর্ঘ সময়ে পেশাব-পায়খানারও প্রয়োজন পড়েনি? আর এমন নফল ইবাদতে তিনি দ্বীনের কি মহান কল্যাণটি করেছেন? এটি কার সূন্নত? নবীজী (সাঃ) কি নিজেও কখনো এমনটি করেছেন বা অন্যদের এরূপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন? আরো প্রশ্ন হলো,সারা রাত ধরে নফল নামায পড়লে তিনি দিনে কি করেছেন? দিবাভাগ তিনি নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। ৪০ বছর এভাবে দিনে ঘুমালে তার রুজি-রোজগারের কি অবস্থা হয়েছে? রাত হলো বিশ্রামের,আর দিন হলো কর্মের। এটিই ফিতরাত। নবীজী ও সাহাবায়ে কেরাম দিবাভাগে যেমন রোজগারে নেমেছেন,তেমনি শত শত সৎকর্ম করেছেন। জিহাদও করেছেন। সারা রাত জাগলে দিনে কি কখনও কোন নেক আমালের ফুরসত পেয়েছিলেন? তাছাড়া জমিদার পুত্র না হলে নিশ্চয়ই তাকে জীবন বাঁচাতে ভিক্ষায় নামতে হয়েছে।
তাবলীগী জামায়াতের মাঝে অবান্তর ও উদ্ভট বক্তব্যের চর্চা যে কতটা প্রকট তার আরো কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। ফাজায়েলে আ’মালে ১০২ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ “শেখ আব্দুল ওয়াহেদ (রহঃ) একজন বিখ্যাত ছুফী ছিলেন। কথিত আছে তিনি চল্লিশ বৎসর যাবত তিনি এশার অজু দ্বারা ফজরের নামায পড়েছেন।” ১০৭ পৃষ্ঠায় এসেছেঃ “বাকী বিন মোখাল্লেদ (রহঃ) তাহাজ্জুদ ও বেতেরের তের রাকাত নামাজে কোরআন শরীফ খতম করতেন।” ১০৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেঃ “ছায়ীদ বিন মাছাইয়েব (রহঃ) পঞ্চাশ বৎসর যাবত ও আবুল মোতামের (রহঃ) চল্লিশ বৎসর যাবত একই অজু দ্বারা এশা ও ফজরের নামায পড়েছেন।” ১০৫ পৃষ্ঠায় এসেছেঃ “এক সৈয়দ সাহেব সম্বন্ধে বর্ণিত আছে,বার দিন পর্যন্ত একই অজুতে সমস্ত নামায আদায় করিয়াছেন এবং ক্রমাগত পনের বৎসর যাবত শোবার সুযোগ হয় নাই।” প্রশ্ন হলো,বার দিন একই অজুতে নামায! গাজাতে দম দিলেও মানুষ পুরাপুরি জ্ঞানশূণ্য হয় না। কিন্তু এখানে তো পুরাপুরি জ্ঞানশূণ্যতা! ধর্মশূণ্যতাও কি কম? বার দিন ধরে ঐ ব্যক্তির একবারও পায়খানা-প্রশ্রাবের প্রয়োজন পড়েনি? আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো, বছরের পর বছর ধরে মসজিদের মেঝেতে বহু মানুষের সামনে “ফাজায়েলে আমাল” এই বইটি পাঠ করা হয়। এতবড় অবান্তর কথা কি কারো নজরে পড়েনি? এখানে অন্ধত্ব চোখের নয়, বরং অন্তরের। তাই বার বার পড়ার পরও তাদের অন্ধ মন তা দেখতে পায়নি। উক্ত বইয়ের ১২১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “হজরত জয়নুল আবেদীন (রহঃ) দৈনিক এক হাজার রাকাত নামায পড়তেন। বাড়ীতে বা ছফরে কোন অবস্থায় তাহার ব্যতিক্রম হত না।” প্রশ্ন হলো প্রতি রাকাতে কমপক্ষে এক মিনিট সময় লাগলে এক হাজার রাকাত নামায পড়তে হলে ১৬ ঘন্টার বেশী সময় লাগার কথা। ২৪ ঘন্টা মধ্যে ১৬ ঘন্টা নামাজে কাটালে বাঁকী কাজকর্ম কখন করলেন?
উদ্ভট কথাবার্তার আরেক ফিরিস্তি বর্নিত হয়েছে ১২২ পৃষ্ঠায়। বলা হয়েছে,“হযরত ওয়ায়েছ করনী (রহঃ)বিখ্যাত বুজুর্গ ও তায়েবী ছিলেন। কোন কোন সময় সারা রাত্রি রুকুর হালাতে আবার কোন কোন সময় সিজদার অবস্থায় কাটাইয়া দিতেন।” কথা হলো, সারা রাত্র রুকু বা সিজদার হালতে থাকা কি আদৌ সম্ভব? ১২৪ পৃষ্ঠায় লিখিত হয়েছেঃ “বাহাজাতুন্নুফুছ গ্রন্থে বর্ণিত আছে, জনৈক বুজুর্গের সহিত এক ব্যক্তি সাক্ষাৎ করতে গেল। বুজুর্গ নামায শেষ করে নফলে লিপ্ত হলেন এবং আছর পর্যন্ত নফল পড়তে থাকেন। তারপর আছর পড়ে আবার জিকিরে মশগুল হলেন। আগন্তক বসে এন্তেজার করতে থাকে। তিনি মাগরিব পর্যন্ত জিকিরে মশগুল হন। তারপর এশা পড়িয়া ফজর পর্যন্ত জিকিরে কাটান। ফজরের নামাজান্তে জিকির ও অজিফা আদায় করতে করতে তাহার চোখে একটু তন্দ্রা আসলো। ক্ষণেক পরেই চক্ষু মলতে মলতে উঠে বসলেন এবং তওবা এস্তেগফার করতে করতে এ দোয়া পড়লেনঃ (অর্থ) “আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি ঐ চক্ষু হতে যাহ ঘুমিয়ে তৃপ্ত হয় না।” নবীজী (সাঃ) দ্বীনের সে সিরাতুল মোস্তাকীম দেখিয়ে গেছেন এবং যে পথে নবীজী (সাঃ) নিজেও চলেছেন, সে পথের কোথাও কি এমন বর্ণনা আছে? সূফীগণ ধর্ম-কর্মের নামে এরূপ পথ নিজেরা আবিস্কার করে নিয়েছেন। আর তাবলীগী জামাত সেগুলোকেই তাদের সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ফাজায়েলে আ’মাল যেন সে সিলেবাসেরই কিতাব। নবীজী (সাঃ)র হাদীস হলো,দ্বীনের ব্যাপারে প্রতিটি আবিস্কারই ফলো বিদয়াত।এবং বিদয়াতের পথ হলো মূলত জাহান্নামের পথ।
আল্লাহতায়ালার এজেণ্ডা ও তাবলীগী এজেণ্ডা
রাতে এরূপ নফল নামায পড়ায় ও জিকিরে প্রচুর সওয়াব আছে বটে, তবে না পড়লেও কোন গুনাহ নেই। বেশী বেশী সওয়াবের কাজে তো তখনই কল্যাণ যখন গুনাহর কাজ থেকে বাঁচার একটি ব্যবস্থা হয়। এবং গুনাহর কাজ থেকে বাঁচার রাস্তা হলো ফরয আদায়। এবং গুরুত্বপূর্ণ ফরয হলো সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর খলিফা রূপে দায়িত্বপালন। সেটি এক্বামতে দ্বীনের দায়িত্ব। একাজের মধ্যদিয়েই সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব। এক্বামতে দ্বীনের যে কোন প্রচেষ্টাই হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। জিহাদে আত্মনিয়োগের মধ্য দিয়েই ঈমানদারীর আসল পরীক্ষা হয়। ঈমানদারের দাবীতে মানুষ যে প্রচণ্ড ভণ্ড হতে পারে সে প্রমাণ তো প্রচুর। সে ভণ্ডরা নবীজী (সাঃ)র যুগে যেমন ছিল, আজও আছে। সে ভণ্ডামি ও ঈমানের নামে আত্ম-প্রবঞ্চনা দূর করতেই মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে প্রকৃত ঈমানদারের সংজ্ঞা ও মান ঠিক করে দিয়েছেন। মু’মিনের দায়িত্ব হলো সে সংজ্ঞা ও মানের সাথে নিজের কর্মকে মিলিয়ে দেখা। পবিত্র কোরআন হলো এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর দেয়া মিযান বা দাড়িপাল্লা -যা দিয়ে যে কোন ব্যক্তি তার ঈমানদারি ও কর্মের ওজন করতে পারে। প্রকৃত ঈমানদারের সংজ্ঞাটি বেঁধে দেয়া হয়েছে এভাবেঃ “একমাত্র তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে, এরপর আর সন্দেহ পোষন করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে, তারাই (ঈমানদারির ব্যাপারি) সত্যবাদী।–(সুরা হুজরাত, আয়াত ১৫)। উপরুক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর অটল বিশ্বাসকে মু’মিন হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ নয়। বরং শর্ত আরোপ করা হয়েছে,সে বিশ্বাসে কোন রূপ সংশয় রাখা যাবে না এবং বিশ্বাসের সাথে অবশ্যই জান ও মালের জিহাদ থাকতে হবে। নবীজী (সাঃ)র হাদীসে ইসলামের ৫টি খুঁটির কথা বলা হয়েছে। সে খুঁটিগুলির মাঝে ঈমান,নামায, রোযা, হজ ও যাকাত আছে,কিন্তু জিহাদ নেই। কিন্তু উপরের আয়াতে,প্রকৃত মু’মিন হওয়ার জন্য ঈমানের সাথে জিহাদের সংমিশ্রন ঘটানো হয়েছে। এভাবে ৫টি খুটিঁর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিটিকে ঈমান ও জিহাদের সম্মিলিত খুঁটি রূপে খাড়া করা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে অবশ্যই একটি দল থাকতে যারা মানুষকে ভাল কাজে ডাকবে এবং ন্যায় কাজের নির্দেশ দিবে এবং খারাপ কাজ থেকে রুখবে। (প্রকৃত পক্ষে)তারাই তো সফলকাম। -(সুরা আল ইমরান,আয়াত ১০৪)। তাই মুসলমানদের কাজ মানুষকে শুধু নামাযে ডাকা নয়, বরং নামাযের সাথে সকল প্রকার ভাল কাজে ডাকা। তাছাড়া জনগণকে নির্দেশ দিতে হবে সৎ কাজে এবং রুখতে হবে খারাপ কাজ থেকে। আল্লাহর দরবারে সফলকাম হওয়ার জন্য এগুলোকে অপরিহার্য বলা হয়েছে। কিন্তু যেখানে মানুষকে নির্দেশ দেয়া এবং তাদেরকে কোন কর্ম থেকে রুখবার প্রশ্ন এসে যায় সেখানে শক্তির প্রয়োজনীতাও দেখা দেয়। স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তগণ তাদের অধিকৃত দেশে কোন সৎকাজে কাজে আদেশ বা অন্যায় কর্ম রুখবার নির্দেশ দেয়ার অধিকার দেয়া দূরে থাক, সত্য প্রচারের সুযোগটুকু দিতেও তো রাজী নয়। নবীজী(সাঃ) তাঁর ১৩ বছরের মক্কার জীবনে কি সে সুযোগ পেয়েছিলেন? ন্যায় কাজে আদেশ এবং অন্যায় কাজ থেকে রুখবার সুযোগও পাননি। কারণ, সে জন্য তাঁর হাতে রাজনৈতিক শক্তি ছিল না। কিন্তু সেগুলি তিনি মদিনায় গিয়ে করতে পেরেছিলেন। কারণ সেখানে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান। একই কাজ তাঁর থেকে প্রাপ্ত অথোরিটির বলে সাহাবাগণও করতেনরই এমন অধিকার অন্যদের দেয় না। সেটি আইনগত অথোরিটির বিষয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা আরো বলেছেন,“তোমরাই হচ্ছো সবার মাঝে শ্রেষ্ঠ উম্মত; তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে সমগ্র মানব জাতির (কল্যাণের) জন্য; তোমরা ন্যায় কাজের হুকুম দিবে, অন্যায় থেকে মানুষকে রুখবে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করো।” –(সুরা আল ইমরান আয়াত ১১০)। উপরুক্ত আয়াতে সকল মানুষের মাঝে মুসলমানদের আল্লাহতায়ালা শ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে চিত্রিত করেছেন। সেটি তাদের বর্ণ,ভাষা বা ভৌগলিক কারণে নয়। বরং তাদের জীবনের মিশন, ভিশন, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মের কারণে। আর সেটি হলো,তারা বাঁচবে শুধু নিজেদের কল্যাণে নয়,সমগ্র বিশ্ববাসীর কল্যানে। বিশ্ববাসীর কল্যাণ সাধনের মাঝেই তাদের নিজেদের কল্যাণ। তাদেরকে তারা ন্যায় কাজের হুকুম দিবে ও অন্যায় থেকে রুখবে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করবে। অমুসলমানদেরকে দাওয়াতের গণ্ডির বাইরে রাখাটি তাই ঈমানদারি নয়। বরং সেটি হলে তা হবে মহান আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। নবীজী (সাঃ) আজীবন কাফেরদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, এভাবে উপরুক্ত আয়াতে ঘোষিত হুকুমের প্রয়োগ করে গেছেন। কিন্তু সেটি উপেক্ষিত হচ্ছে তাবলীগী জামাতের কাছে। উপেক্ষা করছে অধিকাংশ মুসলমানেরাও।
প্রয়োজন জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো
সমস্যা হলো,ন্যায়ের আদেশ এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ নিয়ে তাবলীগী জামাতের নেতাকর্মীদের মাথা ব্যাথা নেই। তাদের আনন্দ বরং দেশে দেশে গাশত,চিল্লাহ,ফাজায়েলে আ’মাল পাঠ এবং বড় বড় এজতেমা নিয়ে। ফলে দূর্নীতি ও দুষ্কর্মে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ন্যায় মুসলিম দেশগুলো পরিপূর্ণ হলে তা নিয়েও তাদের কোন দুশ্চিন্তা নেই। ১৯২৬ সালে ভারতে দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের হিন্দু হওয়া থেকে বাঁচাতে তাবলীগী জামাতের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু মুসলমানদের প্রয়োজন তো তার চেয়ে অনেক বেশী। সেটি নিছক হিন্দু হওয়া থেকে বাঁচা নয়, বরং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচা। হয়তো কিছু দোয়া-দরুদ শিখিয়ে বা গাশতে ও চিল্লাহ নামিয়ে অনেককেই হিন্দু হওয়া থেকে বাঁচানো যাবে। কিন্তু তা দিয়ে কি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো যাবে? হিন্দু হওয়া থেকে বাঁচা আর জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচা এক কথা নয়। আজকের ১৫০ কোটি মুসলমানের ক’জন হিন্দু হচ্ছে? তাদের সমস্যা তো পরিপূর্ণ মুসলমান না হওয়ায়। সমস্যা তো নবীজী (সাঃ)র সূন্নত মোতাবেক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করায়। সমস্যা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলে আত্মত্যাগী মোজাহিদ না হওয়ায়। আর এজন্য যা জরুরী তা হলো, কোরআনের জ্ঞানে নিজে আলোকিত হওয়া এবং সে সাথে অন্যদেরও আলোকিত করা। তাই মুসলমান শুধু অন্যদের নামাযে ডাকার জন্য বাঁচে না। লক্ষ্য শুধু নিজেদের নামায-রোযা-হজ-যাকাত আদায় বা গাশত,চিল্লাহ,কিতাব-পাঠ বা এজতেমায় অংশ নেয়াও নয়। বরং তারা যেমন নিজেরা জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচতে চায় তেমনি বিশ্ববাসীকেও বাঁচাতে চায়। একাজে তাদের অবলম্বন হলো পূর্ণ কোরআন।
আল্লাহতায়ালা চান,সকল প্রকার মিথ্যা,অন্যায় ও জুলুমের নির্মূল। চান তাঁর কোরআনী বিধানের বিশ্বব্যাপী বিজয়। একমাত্র এ বিধানটি বিজয়ী হলেই বিজয়ী হবে মানবতা। তখন প্রতিষ্ঠা পাবে বিশ্বশান্তি। মানব জাতির কল্যাণে কোরআনী বিধানের প্রতিষ্ঠা তাই মহান আল্লাহতায়ালার মূল এজেণ্ডা। সে বিজয় তিনি তাঁর কুদরত বলে নিমিষে সমাধা করতে পারতেন। হাজার হাজার মাইল ব্যাপী সুনামী যেমন আনতে পারেন,তেমনি ইসলামের বিজয়ও আনতে পারেন। কিন্তু তিনি চান, সে বিজয় আসুক মুসলমানদের হাত দিয়ে। এখানে ইস্যু ঈমানদারদের পরীক্ষা। আল্লাহর খলিফা রূপে মু’মিনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এখানেই। আল্লাহর চান,মু’মিনের মেধা,শ্রম,অর্থ ও প্রাণের বিনিয়োগ হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। জিহাদের মাধ্যমে মু’মিন মূলত আল্লাহর এজেণ্ডার সাথে একাত্ম হয়। ঈমানের সবচেয়ে চুড়ান্ত পরীক্ষাটি হয় এখানেই। পরক্ষা হয়,কে দুনিয়াবী সুখস্বাচ্ছন্দের জন্য বাঁচে আর কে পরকালের সফলতার জন্য বাঁচে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“হে ঈমানদারগণ! তোমদের কি হয়েছে যে তোমদেরকে যখন বলা হয় আল্লাহর রাস্তায় বের হও তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে মাটি আঁকড়ে থাক! তোমরা কি আখেরাতের বদলে দুনিয়ার জীবন নিয়েই পরিতুষ্ট? কিন্তু আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ায় ভোগের সামগ্রী তো অতি সামান্যই। -(সুরা তাওবাহ,আয়াত ৩৮)। আজকের মুসলমানদের দ্বারা এ দায়িত্ব পালিত হয়নি বলেই আল্লাহর দ্বীন আজ দেশে দেশে পরাজিত,এবং মুসলিম দেশগুলিতে বিজয়ের বেশে সমাসীন হলো শয়তানী বিধান।
সমস্যা ঈমানশূন্যতার
তাবলীগী জামাত সর্বদা ঈমান-এক্বীনের কথা বলে। এ দুটিকে মজবুত করার কথাও বলে। কিন্তু কতটুকু সফল হয়েছে এ লক্ষ্যে? সামনে অন্যায় ও জুলুম হতে দেখলে ঈমানদারের দায়িত্ব হলো সামর্থ থাকলে হাত দিয়ে সেটি রুখা। হাতে শক্তি না থাকলে সেটি মুখ দিয়ে নিষেধ করা। সে সামর্থটি না থাকলে সে অন্যায়কে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করা। আর এ ঘৃনাটুকু হলো সবচেয়ে কমজোর ঈমানের লক্ষণ। কিন্ত্র সমাজে ও রাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় অপরাধটি ব্যক্তির উপর রাহাজানি নয়,দোকানপাঠ বা গৃহের উপর ডাকাতিও নয়। বরং সেটি হলো রাষ্ট্রের উপর ডাকাতি। কোন দেশে এমন কি শত শত ব্যক্তি, গৃহ বা দোকানের উপর ডাকাতি হলেও তাতে জাতি ধ্বংস হয় না। এমন ডাকাতি তো সবদেশেই ঘটে। কিন্তু জাতীয় জীবনে ধ্বংস,পরাজয় ও অপমান নেমে আসে যখন দেশ অধিকৃত হয় রাজনৈতিক দস্যুদের হাতে। মুসলিম উম্মাহর আজকের দুর্দশা তো এমন ডাকাতদের কারণেই। তাদের কাছে রাজনীতি নিছক ছদ্দবেশী ভনিতা। তারা শুধু রাষ্ট্রীয় তহবিলের উপর ডাকাতি করে না,জনগণের পকেটেও হাতে দেয়। হাত দেয় বিদেশ থেকে প্রাপ্ত সাহায্যের অর্থের উপরও। এসব রাজনৈতীক দস্যুদের স্বৈরাচারি শাসন ও লুন্ঠনের ফলে ১৫০ কোটির অধিক মুসলমান আজ শক্তিহীন। ইসরাইলের ৪০ লাখ ইহুদীর যে শক্তি আছে সেটিও তাদের নেই। অতীতে এসব ডাকাতরাই লুটের সম্পদ দিয়ে তাজমহল,পিরামিড ও অসংখ্য প্রাসাদ গড়েছে। অধিকৃত মুসলিম ভূমিতে নিজেদের দখলদারি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তারা গড়ে তুলেছে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক অবকাঠামো।
মহান আল্লাহর শরিয়তি বিধানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় শত্রু হলো এসব রাজনৈতিক দস্যুরা;কারণ শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় তাদের স্বৈরাচারি সম্ভোগে যেমন ছেদ পড়ে,তেমনি তাদের হাতও কাটা পড়ে। সামর্থ থাকলে ঈমানদারের উপর ফরজ হলো,এ দুর্বৃত্ত ডাকাতদের সর্বশক্তি দিয়ে রুখা। তাদের কাজ শুধু রাতে দোয়া-দরুদ ও নফল নামায আদায় নয়,এসব ডাকাত তাড়ানোও। নবীজী (সা)র আমলে এসব ডাকাতরা বার বার মুসলিম ভূমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করেছে। বদর,ওহুদ, খন্দক, হুনায়ুনের যুদ্ধে তারা সর্বশক্তি নিয়ে হাজির হয়েছিল। সে আমলে মুসলমানদের সবচেয়ে বেশী অর্থ,শ্রম ও রক্তের ব্যয় ঘটেছে এ ডাকাতদের নির্মূল করতে। মু’মিনের দায়িত্ব,লড়াইয়ের শক্তি যদি না থাকে কথার সাহায্যে প্রতিবাদ করা। সে সামর্থ্যটুকুও না থাকলে তার উচিত এ ডাকাতদের মনেপ্রাণে ঘৃণা করা। হাদীসে পাকে বলা হয়েছে, এ ঘৃণাটুকু হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ম পর্যায়। ঘৃণা না থাকার অর্থ ঈমানশূন্যতা। তবে প্রশ্ন হলো, এসব রাজনৈতিক ডাকাতদের দলে ভিড়ে যারা তাদের পক্ষে লড়াই করে,বা তাদেরকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে তাদেরকে কি বলা যাবে? তাপমাত্র নীচে নামতে থাকলে সেটি শূণ্যে এসে থেমে যায় না, শূণ্যেরও নীচে নামতে পারে। তেমনি শূণ্যের নীচে নামতে পারে ঈমানও। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের ঘৃণা করার বদলে তাদেরকে যারা ভোট দিয়ে বিজয়ী করে তারা কি সে শ্রেণীর নয়?
উল্লাস দুষমনদের
প্রশ্ন হলো,মুসলিম ভূমির অধিকৃত অবস্থা ও আল্লাহর শরিয়তের পরাজয় নিয়ে তাবলীগী জামাতের নেতাকর্মীদের কি দুঃখ্যবোধ আছে? যে দস্যুদের হাতে মুসলিম ভূমি আজ অধিকৃত এবং যারা অসম্ভব করে রেখেছে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা -সে আগ্রাসী দস্যুদের বিরুদ্ধে কি তাদের কোন প্রতিবাদ আছে? মুসলমানদের আজকের বিশ্বজুড়া পরাজয়ই একমাত্র গ্লানি নয়, মুসলমানরা আজ লাশ হচ্ছে আফগানিস্তান, কাশ্মীর,ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে। দেশে দেশে মুসলিম রমনীরা ধর্ষিতাও হচ্ছে। এমন পরাজয় ও অপমানের মাঝে তারা কিসসা শুনাচ্ছেন কোন সুফি কত রাকাত নফল নামায পড়েছেন বা কতরাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন সেটির। অথচ মুসলিম ভূমি ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে অধিকৃত হলে এবং আল্লাহর শরিয়তী বিধান অপসারিত হলে মুসলমানদের উপর ফরজ হয়ে পড়ে সে ভূমি মূক্ত করায় এবং সেখানে শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়ে আত্মনিয়োগ করায়। ঈমানদারি শুধু আল্লাহর উপর বিশ্বাস নয়,তাঁর কোরআনী বিধানের ন্যায্যতা ও শ্রেষ্ঠতার উপর বিশ্বাসও। অপরদিকে কুফরি শুধু মুর্তিপুজা নয়। সেটি শুধু বিদ্রোহী শয়তানের আনুগত্যও নয়। বরং সেটি আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উপর প্রতিষ্ঠিত সকল নেতৃত্ব, শাসনতন্ত্র,আইন-আদালত,ব্যাংক-বী মা এবং শিক্ষা-সংস্কৃতিকে মেনে নেয়াও। নবীজীর আমলে ঈমানদারগণ শুধু কাফেরদেরই নির্মূল করেনি, বর্জন করেছিল তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক প্রথাকেই। তারা শুধু আল্লাহতায়ালা ও তাঁর কিতাব ও রাসূলকেই মেনে নেননি। মেনে নিয়েছিলেন তাঁর দেয়া শরিয়তি বিধানকেও। সে বিধানের প্রতিষ্ঠায় তাদেরকে জানমালের বিপুল কোরবানীও পেশ করতে হয়েছিল।
নবীজী (সাঃ)শুধু কোরআন পাঠ,নামায-রোযা,হজ-যাকাত,দান-ফিরোজ মাহবুব কামাল
24 comments:
এক কথায় অসাধারণ....
পরকথা... এত সুন্দরভাবে গুছিয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টি উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি হাজারো শুকরিয়া। আল্লাহ আপনার সহায় হোন এবং আপনি যে নিয়তে এখানে লেখা পোস্ট করেছেন তা যেন আল্লাহ তায়ালা পূরণ করেন। ...##_মো: হাবিব_##...
khankir pola bala hoisi ?
bai age tablig a jan.tarpor deken koran hadies onujay naki.
জি ভাই তাবলীগ জামাতে গেলাম এবং এ বিষয়ে যতটুকু পারি গবেষণা করলাম... কিন্তু তাদের মূল কর্মপদ্ধতির বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে কোথাও পেলাম না। যদি আপনার জানা থাকে, কোরআনের কোন আয়াতে এবং সহি হাদিসগুলোর কোন হাদিস তাবলীগ জামাতকে স্বমর্থন করে তাহলে অবশ্যই জানাবেন। কোরআনের কোন আয়াতে আপনাদের মনগড়া বানানো ৬ উসুলকে সমর্থন করে... কোন আয়াত নাযায়েজী গাস্ত ও চিল্লাকে সমর্থন করে তা জানাবেন। আর যদি না জানা থাকে তাহলে আবারো বিনয়ের সাথে অনুরোধ করবো.... ভাই শুধু একটি বারের জন্য হলেও পবিত্র কোরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনার নিজের ভাষায় অনুবাদ পড়ুন। তাহলে আপনি আপনার ভুলগুলো বুঝতে পারবেন। আমি বিশ্বাস করি আপনি পবিত্র কোরআনের সঠিক বুঝ থেকে দুরে আছেন। হয়তো ফাজায়েলে আমলের মতো কোন মানুষের লিখিত বইকেই আপনি পরকালের নাজাতের একমাত্র উপায় মনে করেন। আপনি কোরআনের হাফিজ কিম্বা আলেম হলেও বলতে বাধা নেই কোরআনের সঠিক জ্ঞান আপনি এখনও অর্জন করতে পারেন নাই। যদি পারেন উপরের গবেষণাধর্মী মূল্যবান লিখাটি আরো একবার পড়ুন এবং কোন আয়াতটি আপনি মানতে পারছেন না তা বিস্তারিত উল্লেখ করুন। কোন হাদিসটি আপনার হজম হচ্ছেনা তাও লিখুন। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এবং আপনার সমগোত্রীয় তাবলীগী ভাইদেরকে ইসলামের সঠিক পথে হেদায়েত দান করুন। আমীন... (মো: হাবিব)
Allah amader sokok mosolmander k hedayat dan koron..
jara mosolmander moddhe bibad sristi kore tader k age hedayat dan koron..
Dhormiyo gan papi der ke, jara doliya koroner maddome mosalmander moddhe dando sriti kortesi, tara e islamer besi khati kortese..
moslim 1 jati, 1 alllah e amader sob, 1 Rasul e amder anokaroniyo.
mosalmander modde bibrani sriti karider allah pak sasti dan koron.
Jamayati der moto dormiya gan pabi der kas theke allah amader sobaike hefazot koron.
সম্মানিত বুজুর্গি আনে মুরুব্বি... উপরে বাংলিশ ভাষায় কি লিখলেন..?? বয়ান না মেরে কোরআনের দেখানো পথে আসুন। ডিজিটাল যুগে এসেও জাহেলি যুগের মতো মুতাজিলা সম্প্রদায় হবেননা আশাকরি ইনশাআল্লাহ....। ফায়দা আর ফায়দার দুনিয়া (কাকরাইলের ঘুম ঘর)থেকে বের হয়ে পৃথিবী নামের পরীক্ষার ক্ষেত্রে নামুন আর পৃথিবীর বুকে কোরআনের নির্দেশিত আল্লাহর আইন ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় মনযোগী হন। কোরআনকে গবেষণা করুন এবং মুহাম্মদ (সঃ) এর দেখানো হাদিস অনুসরণ করে জীবনে সফলতা আনুন। ফাজায়েলের উদ্ভট কেচ্ছা (এবং কিছুকিছু বক্তব্য গাজাখুরে)রেখে সত্তিকারের সহি হাদিসগ্রন্থগুলি হজম করার চেষ্টা করুন। আর হ্যা.. আপনার দোয়া করার আগেই মুসলমানদের মধ্যে যারা বিভেদ সৃষ্টি করছে তাদের আল্লাহ তায়ালা ইতোমধ্যে শাস্তি দিচ্ছেন। চোখ থাকলে আপনার চারিপাশের পরিবেশের দিকে একটু চোখ বুলিয়ে দেখুন আমরা কত এবং কি পরিমাণ ফাসেকি এবং নাজায়েজি কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে। হজে না যেয়ে চিল্লায় বিদেশ সফর, পরিবার ও সামাজিক দায়িত্ব পালন না করে বৈরাগী সাধন করতে তল্পি-তল্পা কাধে নিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া (যা হিন্দুআনি মতবাদ), নিজে কোরআন হাদিসের সঠিক জ্ঞান অর্জন না করেও অপরকে একই পাপের দিকে ডাকা....আর কত উদাহরণ শুনবেন? তবে যারা বুঝে, জেনে-শুনে কোরআনের নিয়ম মেনে সঠিক মাত্রায় ও ব্যবস্থায় দ্বীন প্রচার করছে তারা অবশ্যই সঠিক পথে আছে এমনকি তাবলীগী অনেক ভাই আছে যারা সঠিক লাইনে থাকতে পারে। আপনারা আর কবে বড় হবেন ভাই ও বুজুর্গি আনে-কেরাম? আপনিতো সারা জীবন ক্লাস ফাইভে পড়তে পারেনা বা আপনার বয়স সারাজীবন ১০ বছর থাকতে পারে না। আপনাকে মাত্র একটি জীবন দান করা হয়েছে যার মেয়াদ অত্যান্ত সীমিত। ব্যালান্স শেষ হবার আগেই যা বলার বলে ফেলুন। আমি বয়ানটি বাদ মাগরিবের আগে দিয়ে ফেললাম বলে ক্ষমা করবেন!!! ইনশাআল্লাহ।... ## মোঃ হাবিব ##
কারো যদি তাবলীগ জামাত সম্পর্কে কিছু জানার থাকে তবে এই পোষ্টগুলোতে বলুন...........
http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29521027
http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29521382
http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29522415
In the name of Allah, Most Gracious, Most Merciful
Assalaamu `alaykum waRahmatullahi Wabarakatuh
How unfortunate it is that in matters related to our worldly affairs we are always looking for the experts of the field. If someone wants to put up a structure, he will look for an experienced architect, builder etc. He will not just call any Zaid or Bakr to draw his plans. On the contrary when it comes to matters of religion, everyone becomes their own specialist of the field despite him not knowing and understanding the very basics of Islamic law. They also pluck the courage of becoming arbiters and passing verdicts over the authorities of Islamic law. These were mountains of knowledge. They thoroughly understood shariah, Quran and Hadith before penning anything. They passed verdicts and interpreted Ahadith only after gathering the different variations of any Hadith. They also understood what is saheeh, hasan and da’eef and what are their implications. Where could it be used and where it could not be. These were masters of knowledge.
What fault there is in any book containing weak narrations, if the author did not take it upon himself that he will not mention any weak narrations? A study of the six famous books of Hadith will prove that they too contain some weak narrations. The vast majority of scholars accept weak narrations, especially when it is related to fadha’il. But unfortunately the modern day homemade, unbaked, microwave “scholars” through their sheer ignorance totally reject such narrations.
Those who like to know about originally what "Tabligh" actually is pls refer to the below link...
http://www.askimam.org/fatwa/fatwa.php?askid=02baa777b4211ddad49f0b5256de3934
To end thereof, one should not be misguided with all the false accusations on this jama’at, but rather look at how the Ummah has benefited through this jama’at. We should always supplicate to Allah Ta’ala to show us the right path and save us from the misguidance of Shaitan. Moreover, we should always bear in mind that the pious and the learned amongst the Ummah cannot be unanimous upon something that is false or not part of Islam, as Nabi (Sallallahu Alaihi Wasallam) has mentioned:
إن الله لا يجمع أمتي أو قال أمة محمد صلى الله عليه وسلم على ضلالة ويد الله مع الجماعة ومن شذ شذ إلى النار
Allah Ta’ala will not unite the Ummah of Muhammed (Sallallahu Alaihi Wasallam) upon misguidance. Allah’s help is with majority. Whoever deviates from them will be thrown into the fire of Jahannum.
Sunan Al Tirmizi Vol.2 Pg.39 (H.M. Sa’eed Company)
False accusations on Tabligh? Get a life. The author only shows the mistakes. Time thakte Quran r Sahih Hadith er dike firey asun sokole.
Imtiaz
তাবলীগ পুরাই ভন্ড দল।।।।
Time will say What was wright. More than million book had written against Islam, But all of them are 100% wrong.
তাবলীগ জামাত সম্পর্কে মাওলানা মওদুদী সাহেবের বক্তব্য..
http://www.facebook.com/media/set/?set=a.417654061598034.118111.100000603328604&type=3
তাদের বিশ্বাস দেখে আশ্চর্য হতে বাধ্য হলাম !!!
================================
আমার জীবনের একটি সত্য ও বাস্তব ঘটনা শেয়ার করছি। কয়েকদিন পূর্বে এক তাবলীগী ভাইকে বোঝাচ্ছিলাম কেন ও কিভাবে তারা ভুল পথে আছে। আর তাকে যেই না বলেছি যে, ফাজায়েলে আমলে অসংখ্য ভুলে ভরা হাদিস বিদ্যমান থাকতে পারে। অমনি তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন..!! তার ভাষায় হাজারো আলেম, মুফতি, হাফেজ বুজুর্গ, মুরুব্বি বছরের পর বছর ধরে এটি আমল করছে আর আপনি কিনা বলছেন যে এই গ্রন্থে ভুল রয়েছে..?? তিনি শপথ করে বললেন যে এতে কোন ভুল নেই। আমি তাকে শান্তভাবে বললাম যে, আমার জানা মতে পৃথিবীতে একমাত্র কোরআন নামক গ্রন্থেই কোন ভুল নেই যেটি কিনা মহান আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে। এ ছাড়া যদি আর কোন একটি সংকলন গ্রন্থে যদি ভুল না থাকে তাহলেতো সেটি কোরআনের সমকক্ষ হয়ে যাবে (নাউযুবিল্লাহ..)। তাই এ ধরণের কোন বই পৃথিবীতে থাকতে পারে না যেখানে আপনি নিশ্চিন্তে বলতে পারবেন যে এতে কোন ভুল নেই। ভুল থাকতেই পারে কারণ এগুলো মানুষের তৈরি। তখন তিনি মেজাজ মর্জি হারিয়ে যাতা বলতে শুরু করলেন। হায়রে তাবলীগী ভাই... এই আপনাদের বিশ্বাস..!!! আপনারাতো ফাজায়েলে আমলকে কোরআনের সমতুল্য ভাবতে শুরু করেছেন...!!!
ইসলামের সাথে সাংঘর্শিক বিষয়গুলো তুলে ধরা সব মুসলমানের দায়িত্ব। তাবলীগ ভাইরা যদি তাদের ভিন্ন আকিদা, শিক্ষা ও ভ্রান্ত আমলের বইগুলো অনুসরণ করা বাদ দিয়ে কোরআন ও সঠিক হাদিস অনুসরণ করে সে অনুযায়ী আমল ও মানুষকে দাওয়াত দিত,তাহলে মুসলমানদের অনেক বেশি উপকার হত! প্রতিদিন হাজারো অনৈতিক ও ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড ঘটে কিন্তু কোনদিন দেখি নাই তাদেরকে এ ব্যপারে কোন বিবৃতি দিতে কিম্বা জাতীয় কনফারেন্স করতে! এমনকি তাদেরকে এ ব্যপারে কোন ভূমিকা বা প্রতিরোধ করতে দেখি নাই। একজন সত্তিকার ও প্রকৃত মুসলমান কখনও অন্যায় বা জুলুম দেখে চুপ করে ঘরে বা মসজিদে বসে থাকতে পারে না। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে সিজদা করা, হুর-পরীর কোমর ও চোখের গল্প শুনে জান্নাত লাভ কিম্বা কয়েকজন খ্রিস্টান বা হিন্দুকে মুসলমান বানানোর জন্য ইসলামের আবির্ভাব হয়নি। ইসলামের মূল কাজ হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনের প্রতিটি স্তরে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যার ভিত্তি অবশ্যই হতে হবে আল কুরআনের নির্দেশিত বিধান।
এক Link এ ক্লিক করে দেখলাম এক মাথা মোটা তাবলীগী পন্ডিত এই কথাগুলো বলেছেন....
”কোরআন আমি নিজের খেয়াল খুশি মত বুঝতে চাই না, বরং উলামায়ে কিরাম এবং আউলিয়া কিরাম যেভাবে বুঝিয়েছেন সেভাবেই বুঝতে চাই। কারণ যারা নিজেদের মন মত কোরআন বুঝতে চায়, তাদের দ্বারা ইসলামের ক্ষতি ব্যতীত কোন লাভ হয়নি।”
আরে এই গাধাটা বলেকি!! আউলিয়া কিরাম যেভাবে বুষিয়েছেন সেভাবেই বুষতে চাই... এই কথার মানে কি?? পবিত্র কুরআনে বলা হচ্ছে, ”তোমরা কুরআন নিয়ে কেন গবেষণা করোনা? তোমাদের অন্তরে কি তালা পড়ে গেছে? (সুরা:মুহাম্মদ)। এখানেতো শুধু আউলিয়াদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন পড়তে বলেনি। সমস্ত মুসলিম জাতির উদ্দেশ্যে এই কথাগুলো বলা হয়েছে। যাদের সময় কোরআন নাজিল হয়েছিল সেই উম্মী ও বর্বর আরব জাতির মতো যারা অশিক্ষিত ও পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে তাদের আরো বেশী বেশী পড়তে বলা হচ্ছে। শুধু এ কোরআন মুহাম্মদ (সঃ) নিজে পড়ে বসে থাকেননি। সকল অশিক্ষিত ও অবুঝ সাহাবাদের মনে গেথে দিয়েছিলেন যেন তারা পথভ্রষ্ট না হয়। আর আমি বুঝতে পারিনা শুধু তাবলীগী কিছু বেকুব, উঠতি হুজুর কেন বলে যে কুরআন পড়লে ইসলামের ক্ষতি হবে।
আর আপনি কেনই বা খেয়াল খুশি মতো কুরআন বুঝতে যাবেন? বরং আমি তো বলবো অন্যের কথা মতো না বুঝে কোরআন জানলে সেটিই হয়তো আপনাকে বিপথে নিয়ে যেতে পারে (যা ইতোমধ্যে নিয়ে গেছে)। আপনার নিজের যতটুকু জ্ঞান আছে (যেহেতু আপনি কমিপউটার চালাতে পারেন) তা দিয়েই আল্লার শপথ করে বলছি আপনি অনেক সুন্দরভাবে কোরআন পড়তে ও বুঝতে পারবেন। হয়তো আপনি কোরআন গবেষণা করে এমন একটি ফরমুলা আবিষ্কার করলেন যা এর আগে কেও করেনি... যা দিয়ে ঘুনেধরা সারা দেশকে আরো বেশী করে সত্যের পথে পরিচালিত করা যাবে। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এবং আমাদের সকলকে কুরআন বোঝার তৈফিক দান করুন। আমীন।।
জনাব আপনি ঠিকই বলেছেন, শুধু হুরগনের গল্প, জান্নাত লাভ কিম্বা কয়েকজন খ্রিস্টান বা হিন্দুকে মুসলমান বানানোর জন্য ইসলামের আবির্ভাব হয়নি। ইসলামের মূল কাজ হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনের প্রতিটি স্তরে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যার ভিত্তি অবশ্যই হতে হবে আল কুরআনের নির্দেশিত বিধান।
আপনি এও বলেছেন প্রতিদিন হাজারো অনৈতিক ও ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড ঘটে কিন্তু কোনদিন দেখি নাই তাদেরকে এ ব্যপারে কোন বিবৃতি দিতে কিম্বা জাতীয় কনফারেন্স করতে! এমনকি তাদেরকে এ ব্যপারে কোন ভূমিকা বা প্রতিরোধ করতে দেখি নাই।
এখন আমি যা বলতে চাই, প্রতিরোধ/প্রতিবাদ বিভিন্ন রকম হতে পারে। সমসাময়িক ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিটিং-মিছিলও করা যায়, সেমিনারও করা যায়। আবার কোন নির্দিষ্ট ঘটনাকে উল্লেখ না করে বা সরাসরি আঘাত না করে পরোক্ষভাবেও প্রতিবাদ করে একটি বা কিছুসংখ্যক মানুষকে খারাপ পথ থেকে ফেরানো যায়। যেমনটি করছে বই পুস্তক, ম্যাগাজিন, মিডিয়া ইত্যাদি প্রকাশনা সমূহ। তারা নির্দিষ্ট কাউকে টার্গেট করে প্রতিবাদ করছেননা অথচ ঠিকই দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছেন। কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামাতকে আপনার বর্ণনা মোতাবেকই দাওয়াত পৌছাতে হবে তা আমার কাছে যুক্তিযু্ক্ত মনে হয়না। বিভিন্ন তপকার মানুষ তার স্ব-স্ব স্থানে নিজেদের অবস্থান অনুযায়ী দ্বীনের তাবলীগ করবেন। যেমনঃ মোয়াজ্জেন আযান এর মাধ্যমে, ঈমাম সাহেব খুতবার মাধ্যমে, মিডিয়া প্রযুক্তিগত প্রচারের মাধ্যমে, ওলামাগন বয়ান / ওয়াজ এর মাধ্যমে ইত্যাদি। তাবলীগ যেহেতু শিক্ষিত-অশিক্ষিত, মূর্খ্য-জ্ঞানী, ধনী-গরীব সবার এক সাথে সমাবেশ এবং সবার জন্য এক সাথে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এর ব্যবস্থা করেছে এবং সকল তপকার মানুষের জন্য এক সাথে তালিম এর ব্যবস্থা করেছে, তাই এখানে আপনার পদ্ধতি কার্যকর নয়। এখানে এমন একটি সহনীয় ব্যবস্থা করতে হয়েছে যা শিক্ষিত-অশিক্ষিত, মূর্খ্য-জ্ঞানী, ধনী-গরীব সকলের জন্য প্রাথমিকভাবে কার্যকরী। পরবর্তিতে শিক্ষিত ব্যক্তিটি বা জ্ঞানী ব্যক্তিটি তার অবস্থান অনুযায়ী জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য গবেষনা করবে। একজন অশিক্ষিত বা মূর্খ্য ব্যক্তিকে যদি আপনি মুসলিম শরিফ বা বোখারী শরিফ অধ্যয়ন করতে বলেন তবে কি তা অধিক মূর্খ্যতা হবেনা ?
হ্যাঁ আপনি ফাযায়েলে আমলের কিচ্ছা-কাহানীর কথা বলতে পারেন। গ্রামের একজন অশিক্ষিত-মূর্খ্য মানুষকে আপনি যদি বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে কোরআন-হাদিস এর বাণী তুলে ধরেন তবে কি তাকে তা সহজেই আকৃষ্ট করবেনা ? আমারাতো মিথ্যা কাহানী (গল্প-উপন্যাস) নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেই, শিক্ষিত হয়েও মিথ্যার প্রতি এতটাই আকৃষ্ট ও আবিষ্ট হই। আর ফাযায়েল আমলে যে সকল কাহানী বর্ননা করা আছে তার সকলই বহু পুর্বের অনেক খ্যাতি সম্পন্ন গ্রন্থে উল্লেখ আছে যা আপনি একটু পড়াশোনা করলেই জানতে পারবেন।
তাদের বিশ্বাস দেখে আশ্চর্য হতে বাধ্য হলাম !!!
================================
আমার জীবনের একটি সত্য ও বাস্তব ঘটনা শেয়ার করছি। কয়েকদিন পূর্বে এক তাবলীগী ভাইকে বোঝাচ্ছিলাম কেন ও কিভাবে তারা ভুল পথের বনসায় গাছ হয়ে আছে। আর তাকে যেই না বলেছি যে, ফাজায়েলে আমলেতো অসংখ্য ভুলে ভরা হাদিস বিদ্যমান আছে। অমনি তিনি সয়াবিন তেলে-বেগুনে-মরিচে জ্বলে উঠলেন..!! তার ভাষায় হাজারো আলেম, মুফতি, হাফেজ বুজুর্গ, মুরুব্বি বছরের পর বছর ধরে এটি আমল করছে আর আপনি কিনা বলছেন যে এই গ্রন্থে ভুল রয়েছে..?? এটি কিভাবে সম্ভব..?? তিনি শপথ করে বললেন যে এতে কোন ভুল নেই।
আমি তাকে শান্তভাবে বললাম যে, আমার জানা মতে পৃথিবীতে একমাত্র ‘কোরআন’ নামক গ্রন্থেই কোন ভুল নেই যেটি কিনা মহান আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে। এ ছাড়া যদি পৃথিবীতে আর কোন একটি সংকলন গ্রন্থে ভুল না থাকে তাহলেতো সেটি কোরআনের সমকক্ষ হয়ে যাবে (নাউযুবিল্লাহ..)। তাই এ ধরণের কোন বই পৃথিবীতে থাকতে পারে না যেখানে আপনি নিশ্চিন্তে বলতে পারবেন যে এতে কোন ভুল নেই। ভুল থাকতেই পারে কারণ এগুলো মানুষের তৈরি। আর মানুষের ভুল করা স্বাভাবিক। আপনারা তো মুহাম্মদ (সাঃ) এর ধর্ম অনুসরণ না করে জনাব ইলিয়াস নামক ব্যক্তির দেখানো পথ অনুসরণ করেন, যেমনটি ফকির লালনের অনুসারীরা তাদের গুরু লালনের দেখানো তরিকাকে অনুসরণ করে। তারা তাদের লালন সঙ্গীতকে সঠিক বলে মনে করে যদিও সাধারণ লোকেরা তাদের তরিকাকে অপছন্দ করে। তখন তিনি মেজাজ মর্জি হারিয়ে যাচ্ছে তাই বলতে শুরু করলেন। হায়রে তাবলীগী ভাই... এই আপনাদের বিশ্বাস..!!! আপনারা তো ফাজায়েলে আমলকে কোরআনের সমতুল্য ভাবতে শুরু করেছেন...!!!
তাবলীগ জামাতের তো লাখো লাখো অনুসারী রয়েছে
এত লোক থাকতেও কেন আপনারা তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে লিখছেন ??
ভাইজান পৃথিবীতে তো ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৬০০ কোটি অমুসলিম তাহলে আপনি কেন মুসলমান ধর্ম পালন করছেন...?? আজই গুডবাই জানিয়ে আপনার ধর্ম পাল্টে ফেলুন আর খ্রিস্টার্ন ধর্ম পালন করুন। না তা সম্ভব নয় কারণ পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি অমুসলিমরা সংখ্যায় যতই বেশী হোক না কেন তারা আল্লাহর কাছে ঘৃণীত।
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি? করলে দেখত, তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছে। তারা তাদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী এবং শক্তি ও কীর্তিতে অধিক প্রবল ছিল, অতঃপর তাদের কর্ম তাদেরকে কোন উপকার দেয়নি। (৪০ নং সুরা মুমিন আয়াত: ৮২)।
জাহিলিয়াতের কোন প্রকার মিশ্রণ ইসলাম বরদাশত করেনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
আর আমার এই পথ (ইসলাম) সরল সঠিক সুদৃঢ় পথ। তোমরা এরই অনুসরণ করো, ভিন্ন পথসমূহের অনুসরণ করোনা; করলে তোমাদেরকে তার (আল্লাহর) পথ থেকে বিছিন্ন করে ফেলবে। এ হলো তোমাদের জন্য আল্লাহর নির্দেশ, যাতে করে তোরা সতর্ক হও। (সুরা আনআম: আয়াত ১৫৩)
আল্লাহর পথ ইসলামের অনুসরণের জন্য তিনি কুরআনকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন-
আর এ কিতাব আমি নাজিল করেছি মহা কল্যাণময়। সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ করো এবং সাবধান হও। আশা করা যায় তোমাদের প্রতি রহম করা হবে। (সুরা আনআম , আয়াত ১১৫)
জেনে রাখো, সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম পথ ও পন্থা হলো মুহাম্মদের (স:) প্রদর্শিত পথ ও পন্থা। পক্ষান্তরে সর্ব নিকৃষ্ট কার্যক্রম হচ্ছে (দীনের মধ্যে) নবো উদ্ভাবিত কার্যক্রম (বিদায়াত)। আর প্রতিটি বিদায়াতই (নবো উদ্ভাবিত কার্যক্রম) সুস্পষ্ট গোমরাহী। - (সহি মুসলিম)।
আমাদের দেশে দীন ও শরিয়তের মধ্যে যেসব শিরক, বিদায়াত, হারাম ও যুলুম বিভিন্নভাবে প্রবেশ করেছে এবং একাকার হয়ে আছে, সে সম্পর্কে মুসলিম সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি অতীব জরুরী। তাই আসুন আমরা সকলে কোরআনকে গবেষণা করি এবং কোরআন ভিত্তিক জীবন যাপন করি।
আমরা তো এখানে শিখতে এসেছি...!!
কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা জানি যে, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো ধর্ম প্রচার করা। এটি এমন একটি কঠিন কাজ যে লক্ষ কোটি বছর ধরে মানুষকে হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা গুটি কয়েক যোগ্য নবী, রাসুল ও পয়গম্বর দুনিয়ার বুকে পাঠিয়েছেন। এমনকি এরা মানুষ হলেও এদের ছিল বিশেষ কিছু আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা (মুযিজা)। এরা ছিল সমসাময়িক যুগে সর্বশেষ্ঠ রাজা বাদশা জ্ঞানী ক্ষমতাশীল বা সাধারণ হলেও তারা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষভাবে সাহায্যপ্রাপ্ত দূত। কিন্তু আমরা শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত। আমাদের প্রত্যেকের উপরই দ্বীন প্রচারের গুরু দায়িত্ব অর্পিত। তাই আমাদেরকেও দ্বীন বা ধর্ম্ পালন করতে হলে আমাদের জানতে হবে ইসলামের নূনতম জ্ঞান যাতে করে আমাদের ইসলাম প্রচার কুরআন ও সহি হাদিসের আলোকে শুদ্ধ হয়।
এবার একটি বাস্তব ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। একবার একটি তাবলীগী জামাত দল আমার কাছে এসে আমার পরিচয় না জেনে এবং প্রাথমিক কোন সৌজন্যবোধ না দেখিয়ে তারা বিভিন্ন কেচ্ছা শুনিয়ে তাবলীগ জামাতের সাথে তাৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পড়তে বললেন। আমি তাদের মধ্যে যে সবার সামনে তাকে প্রশ্ন করলাম ভাই আপনি কি করেন? সে বললো যে,‘একটি পলিটেকনিক্যাল কলেজে পড়ছি।’ তাকে বললাম ভাই আপনিতো এই মূহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ করছেন অর্থাৎ আপনি ইসলাম প্রচার করছেন। আচ্ছা আপনি বলুনতো ইসলামের ফরজ ও ওয়াজিবের মধ্যে পার্থক্য কি? স্বাভাবিকভাবেই সেই ছেলেটি একটি কথাও মুখে বলতে পারলো না।এত বড় গুরু দায়িত্ব পালন করছেন আর ফরজ ওয়াজিবের মধ্যে পার্থক্য জানে না??
সে বললো ভাই আমরাতো এখানে শিখতে এসেছি তাই....। ভাইজান আপনারা আর কত শিখবেন? আর কত বড় হবেন? গত ১০০ বছর ধরে আপনারাতো শুধুই শিখছেন। এবার একটু না হয় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করুন। আপনিতো সারা জীবন ক্লাস ফাইভে পড়তে পারেনা না বা আপনার বয়স সারা জীবন ১০ বছর থাকতে পারে না। মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর গুটিকয়েক সাহাবীরা মাত্র ২৩ বছরে সর্বচ্চ বিজয় ছিনিয়ে আনলেন আর আপনারা লক্ষ লক্ষ তাবলীগী ভাই টঙ্গী ময়দানে জড়ো হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না?? আপনাকে মাত্র একটি জীবন দান করা হয়েছে যার মেয়াদ অত্যান্ত সীমিত। তাই জীবনের ব্যালান্স শেষ হবার আগেই যা বলার বলে ফেলুন। বয়ানটি আমি বাদ মাগরিবের আগে দিয়ে ফেললাম বলে ক্ষমা করবেন!!! ইনশাআল্লাহ।...
বুয়েটের হলে তাবলীগ জামাত : কিছু কথা
মাসুদুল হাসান, বুয়েট হল, ঢাকা।
তাবলীগ জামাত নামক দলটির সাথে কম-বেশি সবাই পরিচিত। তাদের কাজ হল মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যাওয়া। দেশের প্রায় সব জায়গাতেই ছড়িয়ে আছে তাবলীগ এর ভাইয়েরা যারা পরিবার পরিজন থেকে দূরে মসজিদ এ থেকে দাওয়াতের কাজ করে থাকেন।
বুয়েট এর হলগুলোতেও তাবলীগ এর ভাইয়েরা বেশ সক্রিয়। প্রায় ই তারা রুম এ রুম এ গিয়ে ছাত্রদেরকে দাওয়াত দিয়ে থাকেন। কিন্তু বুয়েট এর তাবলীগ এর এই দাওয়াত ঠিক ইসলাম এর দিকে না হয়ে অনেকটা যেন তাদের গ্রুপ অর্থাৎ তাবলীগে জয়েন করানোর জন্য দেয়া হচ্ছে। আমি বাকি সব জায়গার কথা জানি না, সেখানে কিভাবে দাওয়াত দেয়া হয়, কিন্তু আমাদের হল এ তাবলীগ জামাত এর দাওয়াতের চিত্র কিছুটা এমনই।
উদাহরণস্বরূপ দুইটি ঘটনা বলি। আমার এক বন্ধু তাবলীগের ভাই দেখলেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াত। সেই বন্ধু এক ওয়াক্ত নামাজ ও পড়ত না। একদিন তাবলীগ এর ভাইয়েরা তাকে রুম এ পেয়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে চাইল। তারা ভাল করেই জানেন যে আমার সেই বন্ধু নামাজ পড়ে না। কিন্তু তাকে নামাজ এর ব্যাপার এ একটা কথাও তারা বললেন না!! কিভাবে অন্য মানুষকে দাওয়াত দেয়া যায় সে ব্যাপার এ কথা বললেন। তারা প্রতিদিন বিকালে গাশত করেন (অন্যদের দাওয়াত দেয়া), সেই গাশত এ তাকে থাকতে বললেন এবং তাবলীগ এর অন্যান্য সেশন যেমন তালিম, বৃহস্পতিবার কাকরাইল যাওয়া এসব এর কথা বললেন। আমার প্রশ্ন, যার নিজের নামাজ ঠিক নাই, সে অন্য মানুষকে কি দাওয়াত দিবে? আর তাকে নামাজ ঠিক করতে না বলে এসব বলার অর্থই বা কি?
আমার পাশের রুমের আরেক ছেলে নিয়মিত হলের মসজিদ এ গিয়ে নামাজ পড়ত। তাবলীগের ভাইরা এরপর তাকে তাদের সেশনগুলোর দাওয়াত দিলেন। কিন্তু সে সেগুলোতে অংশ নিত না, নিজের মত নামাজ পড়ে চলে আসত। ভাইয়ারা নাছোড়বান্দা, তারা বারবার জোর করতে লাগলেন, সে তো মহা বিরক্ত। বড় ভাই, সরসরি কিছু বলতেও পারে না। ফলাফল, তাবলীগ এড়াতে সে মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দিল। এখন তার অবস্থা শুনবেন? সে শুক্রবার জুমআর নামাজ ও পড়ে না। কেউ মসজিদ এ নিয়মিত নামাজ পরলেই তাকে তাবলীগ এ জয়েন করানোর জন্য ভাইয়ারা উঠে পড়ে লাগেন। হলে ওঠার পর এরকম আরো অনেকের কথাই শুনেছি এবং নিজ চোখে দেখেছি, যারা আগে মসজিদ এ যেতেন, কিন্তু এখন নামাজ ছুটে গেছে অথবা রুম এ একাকী নামাজ পড়েন।
আমি নিজেও হলের তাবলীগের ভাইয়াদের উপর বিরক্ত। একদিন ক্লাস-প্রাকটিক্যাল শেষে বিকালে রুম এ ফিরলাম, তখন তারা কয়েকজন রুমে ঢুকলেন এবং কথা বলতে চাইলেন। আমি তাদের বললাম যে আমি ক্লাস করে আসছি, এখন ক্লান্ত। তারা বললেন যে মাত্র ৫ মিনিট কথা বলবেন। আমি তাদেরকে কিভাবে বোঝাব যে আপনারা এখন যত ভাল কথাই বলেন, তা আমার অন্তরে স্পর্শ করা তো দূরের কথা, মাথায় ই ঢুকবে না! তারা প্রায় ই কাকরাইল এ যেতে বলেন, পরীক্ষা শেষে ৭-১০ দিন এর জামাত এ যেতে বলেন। আমি বলে দিয়েছি যে আমার বাসায় সমস্যা আছে, আমি যেতে পারব না। তারপর ও তারা বিরক্ত করতে থাকেন। আমিও এখন মসজিদ ছেড়ে রুম এ নামাজ পরা শুরু করেছি। এরপর ও যদি আবার বিরক্ত করেন, তাহলে মুখের উপর খারাপ ব্যবহার করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
তাবলীগের কাজ যে মহৎ এতে কোন সন্দেহ নাই, মানুষকে আল্লাহর কথা, রাসূলের কথা বলা আমাদের সবার ই উচিত। মহানবী (সাঃ) নিজেই বলেছেন তাঁর কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে অবিবেচকের মত কিছু না করার জন্য তাবলীগের ভাইদের প্রতি অনুরোধ রইল। এতে মানুষ শুধু বিরক্ত ই হবে, আল্লাহর দিকে আসবে না।
মাওলানা ইলিয়াস প্রচলিত তাবলীগ সন্ন্যাসবাদের সমর্থক কিন্তু
মুহম্মদ (সঃ) এর প্রচলিত ধর্ম ব্যবস্থা সন্ন্যাসবাদ বিরোধী
তাবলীগতো সমর্থন করতেই হবে। তবে তা অবশ্যই হতে হবে হুজুর পাক (সঃ) এর প্রদর্শিত উপায়ে। মাওলানা ইলিয়াসের চিন্তাধারা কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী নয়।
আমি অবশ্যই তাবলীগের পক্ষে কিন্তু তা শরীয়তের খেলাফ হতে পারবেনা
তাবলীগের দুর্বল হাদীস নিয়ে অনেকেরই এলার্জি আছে...বিশেষ করে সৌদি আরব বা মিশরে যারা কোরান-হাদীসের উপর পড়াশোনা করেন। সৌদি প্রবাসী এক বিজ্ঞ লোকের সাথে এই নিয়ে আমার বিস্তর আলোচনা হয়েছিল...মূল কথা ছিল দাওয়াতের জন্য রাসুল বাতলানো পদ্ধতি কি? সেটা বাদ দিয়ে মাওলানা ইলিয়াসের স্বপ্নে পাওয়া পদ্ধতি কেন অনুরসরণ করতে হবে?
তবলীগ হচ্ছে সর্বোচ্চ মর্জাদার ধর্মাচার। মহাম্মদ(সা: ) এর পরে কোন নবী নাই, তাই যারা তাবলিগের কাজ করবে তাদের সবাইকে নবীদের পরেই মর্যাদা দেয়া হবে। তাবলীগ কারা করেছেন? আরম্ভ করেছেন আবু-বকর(রা: ), মদিনায় প্রচণ্ড বিশ্রিঙ্খলার মধ্যেও তিনি মহাম্মদ(সা: ) এর পাঠানো দীনের কাফেলা দীনের পথে ফেরত পাঠান। ওমর(রা: ) করেছেন। আমাদের অঞ্চলে, শাহ জালাল(র: ), বায়েজীদ বোস্তামী(র: ), শাহ মাখদুম(র: ) আরও অনেক আউলিয়া-কেরাম। এখন তারা কিভাবে তাবলীগ করতেন? উপরে যাদের কথা বলা হয়েছে তারা এবং অন্য সকল ঐতিহাসিক ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের মানুষদের শুধু নামাজের ডাক দেন নাই বরং একই সাথে ইসলামিক আইনও চালু করেছিলেন। এটাই হচ্ছে হাজার বছর ধরে প্রচলিত তাবলীগ পদ্ধতী।
আজকের তাবলীগ জামাত কি করে? তারা আপনাকে বলবে আসেন তাবলীগে বের হই, এবং অন্যদের তাবলীগে আসার দাওয়াত দেই। তারা কোনভাবেই সামাজিক বা রাজনৈতিক বিষয়ে কোন বক্তব্য দেবা না। আপনি হয়তো বলবেন একটা একটা করে আরম্ভ করতে হবে, প্রথমে নামাজ। আপনার মনে রাখা উচিৎ আজকের তাবলীগ জামাত শুধু মুসলমানদের দাওয়াত দেয়, যারা সামাজিক বা রাজনৈতিক কারনে নামাজ পরে না। সামাজিক বা রাজনৈতিক ভাবে ইসলানিক আইন প্রতিষ্ঠা পেলে তারা এমনিতেই নামাজ পড়বে। আবু বকর(রা: ) সৈন্য পাঠিয়ে মুসলমানদের কাছ থেকে যাকাৎ আদায় করেছেন, তিনি নামাজ না পড়ার জন্য কাওকে প্রেফতার করেছিলেন বলে আমার জানা নাই। আজকের তাবলীগ জামাত কখনও যাকাতের কথা বলতে শুনেছেন? তাবলীগ যারা করে তাদের ব্যক্তিগত ( যাকাত, আমলে-সলেহ) খোজ কি তাবলীগ জামাত নেয়? আজকের তাবলীগ জামাত তাবলীগের লোকদেখানো অংশটা করে, ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠার কোন চেষ্টাই করে না। কোরানে আল্লাহ-তায়ালা বলেছেন,"তাহলে কি তোমরা কিছু অংশ মান আর কিছু অংশ অস্বিকার কর?"
ফাযায়েলে আমল বইয়ের নিচের কাহিনীটি একটি শিরক। ঐ কাহিনীতে বিশ্বাস স্থাপনকারী শিরক এ পতিত হয় যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়,এই তথ্যটি আব্দুল্লাহ আরিফ মুসলিম নামক এক ভাই লক্ষ লক্ষ মুসলিম ভাইকে জানিয়ে সতর্ক করেছেন, এই জন্য আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। কাহিনীটি নিম্নরূপঃ
(১) শায়েখ আবুল খায়ের বলেন, একবার মদীনা মোনাওয়ারায় হাজির হইয়া পাঁচ দিন পর্যন্ত আমাকে উপবাস থাকতে হয়। খাওয়ার জন্য কিছুই না পেয়ে অবশেষে আমি হুজুর এবং শায়ইখানের কবরের মধ্যে সালাম পড়িয়া আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল। আমি আজ রাতে আপনার মেহমান হবো। এই কথা আরজ করে মিম্বর শরীফের নিকট গিয়ে আমি শুইয়া পড়লাম। স্বপ্নে দেখি, হুজুরে পাক (সাঃ) তাশরীফ এনেছেন। ডানে হযরত আবু বকর, বাম দিকে হজরত ওমর এবং সামনে হজরত আলী রাঃ। হযরত আলী রাঃ আমাকে ডেকে বলেন, এই দেখ, হুজুর সাঃ তাশরীফ এনেছেন। আমি উঠা মাত্রই মহানবী সাঃ আমাকে একটা রুটি দিলেন, আমি অর্ধেক খেয়ে ফেলি। তারপর যখন আমার চোখ খুলিল তখন আমার হাতে বাকী অর্ধেক ছিল (রুটি অবশিষ্টাংশ)। সূত্রঃ ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৬ পৃষ্ঠা।
সম্মানিত মুসলিম ভাইগণ!
=> আল্লাহকে ছেড়ে মৃতু্র পর নবীর মাজারে গিয়ে খাদ্যের প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক নয় কি?
=> মৃতুর পর নবী কবরে থেকেও খাওয়াতে পারেন এ আক্বিদাহ পোষন করা শিরক নয় কি?
=> এই রকম শিরকী আকিদাহ কি মানুষকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়, নাকি জাহান্নামের দিকে?
অথচ মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন,
ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। (সূরা হুদ-৬)
ফাযায়েলে আমল বইয়ের এই কাহিনীটি একটি শিরক যেটি তাবলীগ জামাত বিশ্বাস করে এবং বইটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে সেটি প্রচার করে, তাবলীগ জামাত শিরক ধারন করে শিরক প্রচার করে। শিরক থেকে সবাই সাবধান। কারণ আমরা কুরআন থেকে স্পষ্টভাবে জানি যে, হাজারো আমল করার পরও যদি একটি কুফরী করার মতো বড় পাপ কাজ করা যায় তাহলে ঐ আমল - আমলকারীর কোনই কাজে আসবে না। শিরক সম্পর্কে পরবর্তী আলোচনাটি পড়ুন।
আমাদের আগে শিরক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আল্লাহ শিরক সম্পর্কে কোরআন বলেছেন-
=> আল্লাহ শিরক এর গুনাহ মাফ করেন না। (সূরা নিসা-৪:৪৮)
=> শিরক সম্বন্ধে মহানবী সাঃ কে বাদ দিয়ে ১৮ জন নবীর নাম উচ্চারণ করে বলেছেন, তারা যদি শিরক করতো আল্লাহর সাথে তাহলে তাদের আমলগুলো বরবাদ হয়ে যেতো। (সূরা আনআম -৮৮)
=> (হে নবী) যদি তুমি আল্লাহর সাথে শিরক করো তোমার আমলও বাতিল এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে। নবীকেও ছাড় দেওয়া হয় নাই। (সূরা যুমার-৬৫)
=> সর্বশেষ যারা শিরক করে তাদের জন্য জান্নাত হারাম করে দেওয়া হইছে। (সূরা মায়িদাহ-৫:৭২)
জেনে নিলাম শিরক এর কুফল। নবী মোহাম্মদ সাঃ যদি শিরক করেন তাহলে উনার আমলই যদি বাতিল হয়ে যায় তবে আমাদের আমল কি টিকে থাকবে। আমরা যত বড় আমলদারই হই না কেন? যতবড় আলেমই হই না কেন? যদি শিরক করি সব আমল বাতিল। ফাজাযেলে আমল পড়লে অনেক আমল শিখা যায়। কিন্তু যদি শিরকও করি আমলও করি। তাহলে সেই আমলের কোন মূল্য নাই আল্লাহর নিকট। সত্য সঠিক অল্প আমলই যথেষ্ট। কারণ-
আল্লাহর নিকট এখলাসপূর্ণ শিরকমুক্ত ইবাদাতই গ্রহণযোগ্য। (সূরা যুমার-৩)
কি কি বিষয় তাবলীগ বা প্রচার করবো আমরা? আল্লাহ আমাদের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবীর উম্মত করেছেন এবং আমাদের জানিয়েছেন কি কি বিষয় তাবলীগ বা প্রচার করতে হবে।
হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। সূরা মায়িদাহ-৬৭
এখানে যা অবতীর্ণ হয়েছে বলতে কোরআন ও সহীহ হাদিসকে বুঝানো হয়েছে পৃথিবীর সকল আলেমদের মতে। এছাড়াও সূরা আরাফ এ বলা হয়েছে-
অনুসরণ কর যা তোমার প্রতি নাজিল হইছে তোমার রবের পক্ষ থেকে। অনুসরণ করো না আউলিয়াদের (আলিম, বুজুর্গ, পন্ডিত ইত্যাদি)।সুরা আরাফ-৩
যদি নবী কোরআন বাদ দিয়ে অন্তর বা মনের বা খেয়ালখুশির অনুসরণ করতেন তাহলে কি হত?
এমনিভাবেই আমি এ কোরআনকে আরবী ভাষায় নির্দেশরূপে অবতীর্ণ করেছি। যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান পৌঁছার পর, তবে আল্লাহর (আজাব) কবল থেকে আপনার না কোন সাহায্যকারী আছে এবং না কোন রক্ষাকারী। সূরা রা'দ-১৩
হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা, চিন্তা করেন মহান আল্লাহ তায়ালা নবীকে কতবড় হুমকি দিয়েছেন। যদি মনো বাসনা বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন তো আল্লাহর আজাব উনাকেও ঘিরে ধরবে।
======================================================================
এবার আসি সেই বহুল প্রতিক্ষিত ফাযায়েলে আমল এ। ফাজায়েলে হজ্জ নামক বইটিতে নবী প্রেমের বিভিন্ন কাহিনী শিরোনামে একটি অধ্যায় আছে। যেখানে মহান আল্লাহ আমাদের বলেছেন কোরআন ও সহীহ হাদিসের তাবলীগ বা প্রচার করতে অথচ ফাজায়েলে হজ্জ বইটিতে তাবলীগ করা হইতেছে নবী প্রেমের কাহিনী। দেখেন কোন শিরক আছে কি না?
কাহিনীসমূহ নিম্নরূপঃ
(১) শায়েখ আবুল খায়ের বলেন, একবার মদীনা মোনাওয়ারায় হাজির হইয়া পাঁচ দিন পর্যন্ত আমাকে উপবাস থাকতে হয়। খাওয়ার জন্য কিছুই না পেয়ে অবশেষে আমি হুজুর এবং শায়ইখানের কবরের মধ্যে সালাম পড়িয়া আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল- আমি আজ রাতে আপনার মেহমান হবো। এই কথা আরজ করে মিম্বর শরীফের নিকট গিয়ে আমি শুইয়া পড়লাম। স্বপ্নে দেখি, হুজুরে পাক (সাঃ) তাশরীফ এনেছেন। ডানে হযরত আবু বকর, বাম দিকে হজরত ওমর এবং সামনে হজরত আলী রাঃ। হযরত আলী রাঃ আমাকে ডেকে বলেন, এই দেখ, হুজুর সাঃ তাশরীফ এনেছেন। আমি উঠা মাত্রই মহানবী সাঃ আমাকে একটা রুটি দিলেন, আমি অর্ধেক খেয়ে ফেলি। তারপর যখন আমার চোখ খুলিল তখন আমার হাতে বাকী অর্ধেক ছিল (রুটি অবশিষ্টাংশ)।সূত্রঃ ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৬ পৃষ্ঠা।
সম্মানিত মুসলিম ভাইগণ!
=> আল্লাহকে ছেড়ে মৃতু্র পর নবীর মাজারে গিয়ে খাদ্যের প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক নয় কি?
=> মৃতুর পর নবী কবরে থেকেও খাওয়াতে পারেন এ আক্বিদাহ পোষন করা শিরক নয় কি?
=> এই রকম শিরকী আকিদাহ কি মানুষকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়, নাকি জাহান্নামের দিকে?
অথচ মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন, ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। (সূরা হুদ-৬)
এখান থেকেই সূফীদের শিরকী আক্বিদাহ "কেউ ফেরে না খালি হাতে, খাজা বাবার দরবার হতে" টাইপের গান শুরু হইছে। নবীর রওজায় যদি গিয়ে রুটি পাওয়া যায়। তবে ওলী আউলিয়ার মাজারে কেন চুইংগাম পাওয়া যাবে না। এই কাহিনী নিশ্চিত নিশ্চিত ভাবে মানুষকে শিরক ও মাজার মুখি করার শিক্ষা দেয়।
এখানে একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় তুলে ধরতে চাই।কিছু তাবলীগী মাথা মোটা ভাই আছেন তারা বলেন যে, সমাজে অনেক লোক আছে যাদের দুনিয়াবী হিসাব ও পরীক্ষা তুলনামূলক কম দিতে হয়। যেমন: মসজিদের ইমামগণ ও মাদ্রাসায় শিক্ষাদানরত হুজুর। তারা হাটে-মাঠে-ঘাটে-বাজারে ও বিভিন্ন ফিতনা-ফ্যাসাদ এলাকায় তাদের পেশাগত কারণে কম গমন করে। তারা জীবনের বেশিরভাগ সময়ই মসজিদে ও মাদ্রাসায় অবস্থান করে।অর্থাৎ তাদের জান্নাতে গমন করা খুব সহজ।যে কারণেই কথাগুলো উপস্থাপন করা হোক না কেন কোরআনের আলোকে বিষয়টি মোটেই এরকম নয়।প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে পরীক্ষা দিতে হয়। অর্থাৎ তাকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্যপারে অবশ্যই নিবেদিত হতে হবে যা আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার গন্তব্য নির্ধারণ করবে।সে যেই মুরুব্বিয়ানে কেরামই হোক না কেন এ ব্যপারে কোন ব্যক্তিকেই সামান্যতম ছাড় দেওয়া হবে না। আসুন এ ব্যপারে পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো দেখে নিই।
তারা কি মনে করেছে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ একথা বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে আর পরীক্ষা হবেনা অথচ তাদের পূর্ববর্তীগণকে আমি পরীক্ষা নিয়েছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেবেন তাদেরকে, যারা (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী, এবং জেনে নিবেন তাদেরকে যারা (ঈমানের দাবীতে) মিথ্যাবাদী। সূরা-আনকাবুত ২-৩
পৃথিবীস্থ সব কিছুকে আমরা এর শোভা বানিয়ে দিয়েছি মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্য যে, আমলের দিক থেকে তাদের মধ্যে কে উত্তম? সূরা কাহাফ-৭
যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ?
সূরা মূলক-২
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। সূরা বাক্বর-১৫৫
আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
সূরা আম্বিয়া-৩৫
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের জেহাদকারীদেরকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থান সমূহ যাচাই করি। সূরা মুহাম্মদ-৩১
আর আমি তাদেরকে বিভক্ত করে দিয়েছি দেশময় বিভিন্ন শ্রেনীতে, তাদের মধ্যে কিছু রয়েছে ভাল আর কিছু রয়েছে অন্য রকম! তাছাড়া আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি ভাল ও মন্দের মাধ্যমে যাতে তারা ফিরে আসে। সূরা আরাফ-১৬৮