হাদিসে হজরত আবুজর গিফারি হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল সাঃ তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন,
হজরত আদম আঃ কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করত, আল্লাহর কাছে হাজিরা দিত এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত।
‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়’মাতা, লাকা ওয়াল মুলক, লাশারিকা, লাকা লাব্বাইক।’ এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকল। এরপর হজরত শিষ আঃ কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করলেন। দিন দিন একাত্মবাদের সংখ্যা বাড়তে থাকল। এরপর কাবা শরিফ নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করেন হজরত ইব্রাহীম আঃ। হজরত ইব্রাহীম আঃ হজরত ইসমাঈল আঃ-কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করেন। হজরত ইব্রাহীম আঃ কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ করো। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো, আমাদের হজের রীতি-নীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন। যিনি তাদের কাছে তোমাদের আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চই তুমি মহাপরাক্রমশালী।’ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হজরত ইব্রাহীম আঃ ও হজরত ইসমাঈল আঃ-এর বংশ হতে হজরত মুহম্মদ সাঃ-কে শেষ নবী ও রাসূল হিসেবে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, এরপর কয়েক শ’ বছর গত হলো। পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করল আমালিকা সম্প্রদায়। তারপর আরো শ’ শ’ বছর কিংবা হাজার হাজার বছর পরে কাবাঘর সংস্কার করল মক্কার জুরহাস সম্প্রদায়। আরবের অর্থাৎ মক্কায় যেসব গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তি ছিল, তাদের দায়িত্ব থাকত কাবা শরিফ রক্ষণাবেক্ষণের। এ দায়িত্ব পালনকে তারা সম্মানিত ও গর্বের মনে করত। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হলো। কাবা শরিফ ও কাবাঘরকে সংস্কার করলেন মোজার সম্প্রদায়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। এ কোরাইশ বংশেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ ৫৭০ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন। কোরাইশরা কাবা শরিফ সংস্কারের পর হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়।
শুধু কাবাঘরের চার পাশে অবস্থিত মসজিদে হারামের পরিবর্ধন,সংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বর্তমানে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরিফের মোতোয়াল্লির দায়িত্বে থাকেন। ভৌগোলিক দিক দিয়ে মক্কা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত।
মক্কা নগরীর পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের মধ্যস্থানে হওয়ায় মহান আল্লাহ কাবাঘর মক্কাতেই স্থাপন করেন। পবিত্র হজ পালন করতে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরিফে গমন করেন। জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে মূল হজ অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আজহার দিন। এ দিন কোরবানি দিতে হয়। যা হজরত ইব্রাহীম আঃ-এর ও হজরত ইসমাঈল আঃ-এ স্মৃতি বহন করে চলছে হাজার হাজার বছর ধরে।
জমজম কূপও ঠিক তেমনি হজরত ইসমাঈল আঃ ও তাঁর মা বিবি হাজেরা আঃ-এর স্মৃতি বহন করে চলছে। এ জমজম কূপ মহান আল্লাহর কুদরতের অপরূপ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। হজ মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র কাবাঘর হেফাজতের মালিক মহান আল্লাহ নিজে। বিশ্ব মুসলমানদের মিলন মেলা ঘটে হজের মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরিফে।
বিভিন্ন সময়ে কাবা ঘরের দৃশ্যঃ
১। উপরের গিলাপ ছাড়া কাবা ঘরের ছবিঃ
২। কাবা ঘরের ভিতরের আর্কিটেকচার ডিজাইনঃ
৫। কাবাঘরে গিলাপ পরানোর দৃশ্যঃ
৬। পুরানো সময়ের কাবাঘরের ছবিঃ
৮।নতুন মাকাম এ ইব্রাহিমঃ
৯। মাকাম এ ইব্রাহিমের ভেতরে সংরক্ষিত ইব্রাহিম আঃ এর পায়ের ছাপঃ
লেখক :সোহাগহোসেন
0 comments: