ইমাম গাজ্জালীর (র) দেড়শো বছর পর হিজরী সপ্তম শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র) জন্মগ্রহণ ১৩করেন। তখন তাতারীদের হামলায় সিন্ধু নদ থেকে নিয়ে ফোরাত নদীর তীরভূমি পর্যন্ত বিশাল ভুখণ্ডে মুসলিম জাতি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল । এখন তারা সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল । অনবরত পঞ্চাশ বছরের এই পরাজয়,নিরবচ্ছিন্ন আতংক, অশান্তি ও বিশৃংখলাপূর্ন অবস্থা এবং বিদ্যা,সভ্যতা-সংস্কৃতির কেন্দ্রসমূহের ধ্বংস মুসলমানদেরকে অবনতির অতল গহবরে নামিয়ে দিয়েছিল্ ইমাম গাজ্জালীও তাদের মধ্যে এতটা অবনতি প্রত্যক্ষ করেননি ।নয়া তাতারী আক্রমণকারীরা যদিও ইসলাম কবুল করছিল কিন্তু জাহেলীয়াতের ব্যাপারে এ শাসকগণ এদের পূর্ববর্তী তুর্কী শাসকদের চাইতে কয়েক পদ অগ্রসর ছিল। তাদের প্রভাবাধীনে এসে জনগণ, আলেম সমাজ, মাশায়েখ ,ফকিহ ও কাজীগণের নৈতিক চরিত্র আরো বেশী অধঃপতিত হতে থাকে১৪। অন্ধ অনুসৃতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তার ফলে বিভিন্ন ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র ভিত্তিক মযহাবসমূহ যেন স্বতন্ত্র দ্বীনে পরিনত হয় । ১৫ইজতিহাদ গোনাহে পরিণত হয়। (১৩) ৬৬১ হিজরীতে (১২৬২ খৃঃ) জন্মগ্রহণ করেন এবং ইন্তেকাল করেন ৭২৮ হিজরীতে (১৩২৭ খৃঃ) (১৪)তৎকালীন আলেম সমাজের অবস্থা এতই শোচনীয় ছিল যে, হালাকু খান বাগদাদ দখল করার পর আলেমদের নিকট ন্যায়পরায়ণ কাফের সুলতান ও জালেম মুসলিম সুলতানের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে ফতোয়া তলব করলে আলেম সমাজ নির্বিবাদে ফতোয়া দিয়ে বসেন যে, ন্যায়পরায়ণ কাফের সুলতান জালেম মুসলিম সুলতানের চাইতে শ্রেষ্ঠ। তৎকালীন সমাজ নায়কদের অবন্থা ছিলঃ তাতারীদের ধ্বংস অভিযান থেকে মুসলমানদের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একমাত্র মিসর ও সিরিয়া নিষ্কৃতি লাভ করেছিল। এ রাষ্ট্রদ্বয়ের আইন-কানুন দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। এক, ব্যক্তি সম্পর্কিত আইন। এর কার্য ক্ষেত্র ছিল কেবল বিবাহ তালাক মিরাছ প্রভৃতি ধর্মীয় ব্যাপারে সীমাবদ্ধ। এসব ব্যাপারে শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা হতো। দুই, রাষ্ট্রিয় আইন। এ আইন দেওয়ানী ও দেশের সমস্ত ব্যবস্থার ওপর কার্যকরী ছিল। এর ভিত্তি স্থাপিত ছিল পুরোপুরি চেংগিজী নিয়ম পদ্ধতির ওপর । উপরন্ত দেশে শরিয়তের যতটুকুন ব্যক্তি সম্পর্কিত আইনের প্রচলন ছিল তা ছিল শুধুমাত্র জনগণের জন্যে। আর শাসক সমাজ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ব্যাপারেও শরিয়তে মুহাম্মদীর পরিবর্তে চেংগিজী আইনের আনুগত্য করতো। তাদের অনৈসলামী দৃষ্টিভংগি সম্পর্কে শুধু এতটুকুন বলাই যথেষ্ট যে, মেকরিজির বর্ণনা মতে তারা নিজেদের রাষ্ট্রসীমার মধ্যে বেশ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপক অনুমতি দান করেছিল। পতিতাদের ওপর তারা কর ধার্য করেছিল এবং সেই কর বাবদ যাবতীয় অর্থ ইসলামী রাস্ট্রের কোষাগারে জমা হতো। ইবনে তাইমিয়ার সমকালীন আলেম ও সুফীগণের অধিকাংশই এইসব সরকারের বৃত্তিভোগী ছিল। আল্লাহর দ্বীনের এই মজলুম অবস্থা তাদের মনে মুহুর্তের জন্যেও ভাবান্তর সৃষ্টি করেনি। তবে যখন ইবনে তাইমিয়া অবস্থার সংশোধনে অগ্রসর হলেন তখন আচানক তাদের ইসলামী জোশ জেগে উঠলো এবং ফতোয়া দিতে শুরু করলো যে, এ ব্যক্তি নিজে গোমরাহ এবং মানুষকে গোমরাহ করছে। এ ব্যক্তি খোদার দেহ আছে বলে বিশ্বাস করে । এ ব্যক্তি পূর্ববর্তীদের পথ হতে বিচ্যুত হয়ে গেছে। এ ব্যক্তি তাসাউফ ও তাসাউফ পন্থিদের শত্রু। এ ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরাম ও ইমামগণের সমালোচনা করে। এ ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে নতুন নতুন বিষয় উদ্ভবন করছে। এর পেছনে নামাজ পড়া জায়েয নয় এবং এর সমস্ত কিতাব জ্বালিয়ে দেওয়া উচিত। (১৫)এ পরিস্থিতি উপলব্ধি করার জন্যেও শুধু একটি নমুনা যথেষ্ট। দামেস্ক একটি মাদ্রাসার (মাদ্রাসায়ে রাওয়াছিয়া) প্রতিষ্ঠাতা নিজের ওয়াকফনামায় লিখে রেখেছিলেন যে, এ মাদ্রাসায় ঈসায়ী, ইহুদী ও হাম্বলীরা ভর্তি হতে পারবে না। এ থেকেই আন্দাজ করা যেতে পারে যে, ফিকাহ ও কালামের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যার ফলে একজন শাফেয়ী ও আশয়ারী (কালাম শাস্ত্রের জনৈক ইমাম আবুল হাসান আশয়ারীর সমর্থক) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের অনুসারীদেরকে ইহুদী ও ঈসায়ীদের সাথে শামীল করতে দ্বিধা করতেন না। বেদআত ও পৌরানিক বিষয়াবলী শরীয়তের বিধানে পরিণত হয়। কোরআন ও সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরা অমার্জনীয় গোনাহ বলে বিবেচিত হয় । তৎকালে অশিক্ষিত ও গোমরাহ জনসাধারণ, দুনিয়া পূজারী বা সংকীর্ণমনা আলেম সমাজ ও মূর্খ জালেম শাসক শ্রেণীর ত্রয়ী সম্মিলন এমন জোরদার ফৌজদারী হয়ে ওঠে যে, এই এই সম্মিলিত জোটের বিরুদ্ধে কারুর সংস্কার ও সংশোধনের প্রোগ্রাম নিয়ে অগ্রসর হওয়া কসাইর ছুরির নীচে নিজের গলা বাড়িয়ে দেয়ার চাইতে কিছু কম ছিল না ।এ কারণেই যদিও তখন নির্ভুল চিন্তার অধিকারী, ব্যাপক দৃষ্টিসম্পন্ন ও সত্য উপলব্ধিকারী ওলামার অভাব ছিল না। এবং হকের পথে অগ্রসর সত্যানুসারী ও আসল সুফীর সংখ্যাও যথেষ্ট ছিল, কিন্তু এসব সত্ত্বেও সেই অন্ধকার যুগে সংস্কারের ঝাণ্ডা বুলন্দ করার সাহস একজন মাত্র আল্লাহর বান্দার হয়েছিল।
ইবনে তাইমিয়া (র) কোরআনে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। এমনকি হাফেজ যাহবী (র) সাক্ষ্য দেন যে,--------তাফসীরে তো ইবনে তাইমিয়া (র) বিপুল জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি হাদীসের ইমাম ছিলেন। এমন কি বলা হয়---------------------- (যে হাদীসটি ইবনে তাইমিয়া জানেন না, সেটি আদতে হাদীসই নয়)। ফিকাহ শাস্ত্রে তাঁর জ্ঞান এত গভীর ছিল যে, নিঃসন্দেহে তিনি স্বতন্ত্র মুজতাহিদের মর্যাদা লাভ করেন। যুক্তি শাস্ত্র ও কালাম শাস্ত্রে নিজেদের গভীর জ্ঞান সম্পর্কে যাঁদের গর্ব ছিল তাঁরাও তাঁর নিকট শিশুবৎ গণ্য হতেন। ইহুদী ও খৃষ্টানদের সাহিত্য , তাদের ধর্মীয় সম্প্রদায়সমূহের বিরোধ সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টি এতই প্রখর ছিল যে, গোল্ড জিহারের মতে যে ব্যক্তি তাওরাতে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে আলোচনা করতে চায় তাকে অবশ্যি ইবনে তাইমিয়া গবেষণার মুখাপেক্ষী হতে হবে। এসব গভীর তত্ত্বজ্ঞানের সাথে সাথে তাঁর সাহস ও হিম্মতেরও তুলনা ছিল না। সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কখনো কোনো বৃহত্তর শক্তিকে তিনি ভয় করেননি। এমন কি এ জন্যে বহুবার তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়ে এবং অবশেষে কারাগারেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ জন্যে ইমাম গাজ্জালীর (র) পরিত্যাক্ত কাজকে তিনি অধিকতর নিপুণতার সাথে অগ্রবর্তী করতে সক্ষম হন।
ইবনে তাইমিয়ার (র) সংস্কারমূলক কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত সার হলোঃ
১।তিনি ইমাম গাজ্জালীর চাইতেও অনেক বেশী কঠোর ও তীব্রভাবে গ্রীক যুক্তি ও দর্শন শাস্ত্রের সমালোচনা করেন এবং তার দুর্বলতাসমূহ এমনভাবে প্রকাশ করেন যার ফলে যক্তি ও বুদ্ধির ক্ষেত্রে তার আধিপত্য চিরকালের জন্যে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ইমামদ্বয়ের সমালোচনার প্রভাব কেবল প্রাচ্য দেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং তা পাশ্চাত্যেও পৌঁছে। কাজেই ইউরোপে এরিষ্টটলের যুক্তিবাদিতা ও খ্রষ্টান ভাষ্যকারগণের গ্রীক প্রভাবিত দার্শনিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সমালোচানার আওয়াজ ওঠে ইমাম ইবনে তাইমিয়ার আড়াইশ বছর পর।
২।ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস, হুকুম -আহকাম ও আইন-কানুনের সমর্থনে তিনি এমন জোরদার যুক্তি প্রমাণের অবতারণা করেন যা ইমাম গাজ্জালীর যুক্তি-প্রমাণের চাইতেও বেশী বুদ্ধিগ্রাহ্য ছিল এবং ইসলামের সত্যিকার প্রাণশক্তির ধারক হবার দিক দিয়েও তাঁর থেকে অনেক বেশী অগ্রবর্তী ছিল। ইমাম গাজ্জালীর (র) বর্ণনাও যুক্তি নির্ণয়ের ওপর পারিভাষিক যুক্তি শাস্ত্রের বিপুল প্রভাব ছিল।ইবেন তাইমিয়া (র) এ পথ পরিহার করে সাধারণ জ্ঞানের ওপর বর্ণনা প্রকাশ ভংগী ও যুক্তি প্রদর্শনের ভিত্তিস্থাপন করেন। এটিই অধিকতর স্বাভাবিক অধিকতর প্রভাবশালী এবং কোরআন ও সুন্নতের অধিকতর নিকটবর্তী ছিল। এ নতুন পথটি পূর্ববর্তী পথগুলি থেকে সম্পর্ণ ভিন্নতর ছিল। যাঁরা দ্বীনের ধারক ও বাহক ছিলেন তাঁরা কেবলমাত্র শরিয়তের নির্দেশাবলী উদ্ধৃত করতেন সেগুলো বুঝতে পারতেন না। আর যাঁরা কালাম শাস্ত্রের গোলক ধাঁধায় আটকে পড়েছিলেন, তাঁরা দর্শন শাস্ত্রের কচকচি ও পারিভাষিক যুক্তি শাস্ত্রের মাধ্যমে বুঝবার চেষ্টা করার কারণে কোরআন ও সুন্নতের উচ্চতর প্রাণবস্তুকে কমবেশী হারিয়ে ফেলেছিলেন। ইবনে তাইমিয়া (র) ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস ও শরিয়তের নির্দেশাবলীকে তার আসল প্রাণবস্তুসহ পুরোপুরি বিবৃত করেন। অতঃপর সেগুলো বুঝবার জন্যে এমন সোজা ও স্বাভাবিক পস্থা অবলম্বন করেন, যার সম্মুখে মাথানত করা ছাড়া বুদ্ধির জন্যে দ্বিতীয় কোনো পথ ছিল না। ইমামের এই মহান কার্যের প্রশংসা করতে গিয়ে হাদীসের ইমাম আল্লামা যাহাবী বলেনঃ
---------------------------------------
অর্থাৎ ইবনে তাইমিয়া নির্ভেজাল সুন্নত ও পূর্ববর্তীগণের পদ্ধতি সমর্থন করেন এবং এর সমর্থনে এমন সব যুক্তি প্রমাণ ও এমন পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করেন যার দিকে ইতিপূর্বে কারুর দৃষ্টিই পড়েনি।
৩।তিনি শুধু অন্ধ অনুসৃতির প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হননি বরং ইসলামের প্রথম যুগের মুজাহিদগণের অনুসৃত পথে ইজতিহাদ করেও দেখিয়ে দেন।তিনি কোরআন সুন্নাহ ও সাহাবাদের জীবন থেকে সরাসরি প্রমাণ সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন ফিকাহ ভিত্তিক মযহাবের মতবিরোধের স্বাধীন ও ন্যায় ভিত্তিক পর্যালোচনা করে অসংখ্য বিষয়ের অবতারণা করেন। এর ফলে ইজতিহাদের পথ নতুনভাবে আবিস্কৃত হয় এবং লোকেরা ইজতিহাদ শক্তির ব্যবহার পদ্ধতি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। এই সংগে তিনি ও তাঁর মহান শাগরিদ ইবনে কাইয়েম শরিয়তের হিকমত এবং নবী করিমের (স) আইন প্রণয়ন পদ্ধতির ওপর এমন সূক্ষা গবেষণা কার্য সম্পাদান করেন যে, তার দৃষ্টান্ত শরিয়তের ইতি পূর্বেকার সাহিত্যে বিরল। তাঁদের পর যাঁরা ইজতিহাদ করেছেন তাঁদের জন্যে এ সাহিত্য উত্তম পথ-প্রদর্শকের কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও করতে থাকবে।
৪।তিনি বেদআত, মুশরিকী রসম রেওয়াজ এবং আকিদা-বিশ্বাস ও নৈতিক ভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করেন। এই জন্যে তিনি কঠিন বিপদের সম্মুখিন হন। ইসলামের পরিষ্কার ঝরণা ধারায় এ পর্যন্ত যতগুলো অস্বচ্ছ স্রোতের মিশ্রণ ঘটেছিল ইমাম ইবনে তাইমিয়া তার কোনো একটিকেও নিষ্কৃতি দেননি। তাদের প্রত্যেকটির বিরুদ্ধে তিনি কঠোর সংগ্রাম চালান এবং প্রত্যেকটিকে ছেঁটে বের করে দিয়ে নির্জলা ইসলামের পদ্ধতিকে পৃথকভাবে দুনিয়ার সম্মুখে পেশ করেন।এই সমালোচনা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে তিনি কারুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেননি। বিরাট খ্যাতিমান ও কীর্তিমান পুরুষ -যাদের খ্যাতি ও কীর্তির ডংকা সমগ্র মুসলিম দুনিয়ায় বাজতো যাঁদের নাম শুনে মানুষের মাথা নত হয়ে আসতো তাঁরাও ইবনে তাইমিয়ার সমালোচনা থেকে রেহাই পাননি। এমন অনেক কার্য ও পদ্ধতি যা, শতাব্দীর পর শতাব্দী থেকে ধর্মীয় রূপ পরিগ্রহ করেছিল , যাদের বৈধতা বরং মুস্তাহাব হওয়ার স্বপক্ষে যুক্তিপ্রমাণ তৈরী করা হয়েছিল, এবং হকপরস্ত আলেম সমাজও যে ব্যাপারে দুর্বলতা প্রদর্শন করেছিলেন, ইমাম ইবনে তাইমিয়া সেগুলোকে পুরোপুরি ইসলাম বিরোধী হিসেবে পরিগণিত করেন এবং জোরেশোরে তাদের বিরোধিতা করেন। এই মুক্ত ও সত্য কথনের কারণে দুনিয়ার একটি বিপুল বিরাট অংশ তাঁর শত্রুতে পরিণত হয় এবং তাদের শত্রুতার জের আজো চলে আসছে। তাঁর সমকালীন লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে তাঁকে একাধিকবার কারাগারে পাঠান, আর পরবর্তীগণ তাঁর বিরুদ্ধে কুফরী ও গোমরাহির ফতোয়া প্রদান করে নিজেদের কলিজা ঠাণ্ডা করেন।কিন্তু নির্ভেজাল ও সত্যিকার ইসলামের আনুগত্যের যে শিংগা তিনি ফুঁকেছিলেন তার বদৌলতে সমগ্র দুনিয়ায় একটি স্থায়ী আলোড়ন সৃষ্টি হয়-তার প্রতিধ্বনি আজও শ্রুত হচ্ছে। এই সংস্কারমূলক কার্যাবলীর সাথে সাথে তিনি তাতারীদের বর্বরতা ও পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে অন্ত্রধারণ করে সংগ্রাম ক্ষেত্রেও অবতীর্ন হন। তৎকালে মিসর ও সিরিয়া এই সয়লাবের আওতাভুক্ত ছিল। ইমাম ইবনে তাইমিয়া সেখানকার সাধারণ মুসলমান ও বিত্তশালীদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলেন এবং তাদেরকে তাতারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ করেন। তাঁর সমকালীন লোকেরা সাক্ষ্য দেয় যে, মুসলমানেরা তাতারীদের ভয়ে এতই সন্ত্রস্ত থাকতো যে, তাদের নাম শুনেই কেঁপে উঠতো এবং তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হতে ভয় করতো । কিন্তু ইবনে তাইমিয়া তাদের মধ্যে জেহাদের আগুন প্রজ্জ্বলিত করে তাদের সুপ্ত বীরত্বকে জাগ্রত করেন।তবুও একথা সত্য যে, তিনি এমন কোন রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হননি, যার ফলে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিপ্লব সূচিত হতো এবং কর্তৃত্বের চাবিকাঠি জাহেলিয়াতের রাষ্ট্র হাত থেকে ইসলামের হাতে স্থানান্তরিত হতো।
অধ্যায় ১২ : ইবনে তাইমিয়া(র)
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: