ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখনো কোনো কামল মুজাদ্দিদের আবির্ভাব ঘটেনি। হযরত উমন ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) এ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি সফলকাম হতে পারেননি। তাঁর পর যত মুজাদ্দিদ জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকে কোন একটি বিশেষ বিভাগে অথবা একাধিক বিভাগে কাজ করেছেন,কামেল মুজাদ্দিদের স্থান এখনো শূন্য আছে। কিন্তু বিবেক -বুদ্ধি, মানব-প্রকৃতি ও বিশ্ব পরিস্থিতি এমনি একজন নেতার জন্ম দাবী করে। তিনি এ যুগে অথবা যুগের হাজারো আবর্তনের পর জন্মলাভ করতে পারেন। তাঁরই নাম ইমামুল মেহদী। নবী করিম (সঃ) হাদীসে তারই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎবাণী করেছেন।২
আমি বলতে পারি না সনদের দিক দিয়ে হাদীসটি কোন পর্যায়ের। কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে হাদীসটি এ সম্পর্কে বর্ণিত অন্যান্য সকল হাদীসের সংগে সামঞ্জস্যশীল। এ হাদীসটিতে ইতিহাসের পাঁচটি পর্যায়ের দিকে ইশারা করা হয়েছে। তার মধ্য তিনটি পর্যায় অতিক্রম হয়ে গেছে এবং চতুর্থ পর্যায়টি বর্তমানে চলছে।শেষের যে পঞ্চম পর্যায়টি সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বানী করা হয়েছে, সমস্ত আলামত এ কথা ঘোষণা করেছে যে, মানুসের ইতিহাস দ্রুত সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে। মানুষের গড়া সমস্ত মতবাদের পরীক্ষা হয়ে গেছ এবং তা ভীষণভাবে ব্যর্থও হয়েছে।বর্তমানে ক্লান্ত -পরিশ্রান্ত মানুষের ইসলামের দিকে অগ্রসর হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
আজকাল অনেকেই অজ্ঞতাবশতঃ এ নামটি শুনেই নাসিকা কুঞ্চন করে থাকেন। তাদের অভিযোগ ভবিষ্যতে আগমনকারী ‘মর্দে কামেল’ এর প্রতীক্ষায় অজ্ঞ-অশিক্ষিত মুসলমানদের কর্মশক্তি জড়ত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। তাই তাদের মতে যে সত্যের ভূল অর্থ গ্রহণ করে অশিক্ষিত লোকেরা নিষ্কর্মা হয়ে যায় তার আদপে সত্য হওয়াই উচিত নয়। উপরন্তু তারা এও বলেন যে, প্রত্যেকটি ধর্মবিশ্বাসী জাতির মধ্যে কোনো না কোনো অদৃশ্যলোক হতে আগমনকারী ব্যক্তি সম্পর্কিত বিশ্বাসের অস্তিত্ব আছে। কাজেই এটি নিছক একটি ভ্রান্ত ধারণা। কিন্তু আমি বুঝিনা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফার (সঃ) ন্যায় অন্যান্য নবীগণও যদি নিজেদের জাতিদেরকে এ সু-সংবাদ দিয়ে গিয়ে থাকেন যে, মানব জাতির পার্থিব জীবন শেষ হবার আগে ইসলাম একবার সমগ্র পৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হবে এবং মানুষের রচিত সমস্ত ইজমের ব্যর্থতার পর অবশেষে বিপর্যস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ খোদার রচিত এই ইজমের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে এবং খোদার এ দার মানুষ এমন এক বিরাট ও মহান নেতার বদৌলতে লাভ করবে, যিনি নবীদের পদ্ধতিতে কাজ করে ইসলামকে তার নির্ভুল আকৃতিতে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করবেন,তাহলে তাতে ভ্রান্ত ধারণার অবকাশ কোথায়? সম্ভবতঃ নবীদের বাণী থেকে পৃথক হয়ে এ বিষয়টি দুনিয়ায় বিভিন্ন জাতির মধ্যে ছড়িযে পড়েছে। এবং অজ্ঞতার কারণে মানুষ তাকে তার আসল ধ্যান ধারণা থেকে বিচ্যুত করে ভ্রান্ত ধারণার আবরণে জড়িয়ে ফেলেছে।
(২) যদিও ভবিষ্যৎ বাণীগুলো মুসলিম,তিরমিযি, ইবনে মাজা, মুসতাদরাক প্রভৃতি কিতাবসমুহের বহুস্থানে উল্লেখিত হয়েছে, তবুও ইমাম শাতবী (র) ‘মাওয়াফিকাত’ কিতাবে এবং মাওলানা ইসমাঈল শহীদ (র) তাঁর ‘মানসবে ইমামত’ কিতাবে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন এখানে তার উল্লেখ লাভজনক হবেঃ
“তোমাদের দ্বীনের আরম্ভ নবুয়াত ও রহমতের মাধ্যমের এবং তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ চান। অতঃপর মহান আল্লাহ তা উঠিয়ে নেবেন। তারপর নবুয়াতের পদ্ধতিতে খিলাফত পরিচালিত হবে যতদিন আল্লাহ চান। অতঃপর আল্লাহ তাও উঠিয়ে নিবেন”।
তারপর শুরু হবে দৃষ্ট রাজতন্ত্রের জামানা এবং যতদিন আল্লাহ চাইবেন তা প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তারপর আল্লাহ তাও উঠিয়ে নিবেন।
অতঃপর জুলুমতন্ত্র শুরু হবে এবং তাও আল্লাহ যতদিন চাইবেন ততদিন থাকবে অতঃপর আল্লাহ তাও উঠিয়ে নেবেন।
অতঃপর আবার নবুয়াতের পদ্ধতিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। নবীর সুন্নত অনুযায়ী তা মানুষের মধ্যে কাজ করে যাবে। এবং ইসলাম পৃথিবীতে তার কদম শক্তিশালী করবে। সে সরকারের ওপর আকাশবাসী ও দুনিয়াবাসী সবাই খুশী থাকবে। আকাশ মুক্ত হৃদয়ে তার বরকত বর্ষণ করবে এবং পৃথিবী তার পেটের সমস্ত গুপ্ত সম্পদ উদগীরণ করে দেবে।
অধ্যায় ০৩ : কামেল বা আদর্শ মুজাদ্দিদ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: