বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষানীতির রূপরেখা

অনুবন্ধ

অনেক প্রতিভা দিয়ে মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এ প্রতিভাকে যতো বেশি কাজে লাগানো যায়, ততোই তা বিকশিত হয়। মানুষ তার প্রতিভাকে বিকশিত করে দুনিয়া পরিচালনা করে। মানব জীবনের যোতোটি বিভাগ আছে তার সর্বক্ষেত্রই মানুষ নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভা অনুযায়ী নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।

মানুষ সৃষ্টির সাথে সাথে তার মধ্যে আবার দুটি প্রবৃত্তি ও প্রবণতা দিয়া দেয়া হয়েছে। একটি ভালো আরেকটি মন্দ। আর সে তার প্রবৃত্তি ও প্রবণতা অনুযায়ীই তার প্রতিভা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে থাকে। প্রবণতা যেটা তার মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে দেখা দেয়, তার যোগ্যতাও সেদিকই বিস্তার লাভ করে।

এমতবস্থায় তার মন্দ প্রবণতাকে বিজিত এবং ভালো প্রবণতাকে বিজয়ী করার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে যমীন ও যমীনের অধিবাসীরা বিপর্যয়ের হাত থেকেই কিছুতেই রক্ষা পেতে পারেনা। আর এ জন্যই প্রতিটি দেশে এমন একটি সুপরিকল্পিত আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, যা তার সর্বপর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে সৎ প্রবণতা অনুযায়ী দৃষ্টিভংগি ও মন মানসিকতার দিক থেকে একটি মজবুত অট্রালিকায় পরিণত করবে। বস্তুত একটি আদর্শ জাতির সর্বপ্রকার শিক্ষার লক্ষ্য হবে একটি। যে কোন বিভাগের শিক্ষা তার শিক্ষার্থীকে একই লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত ও ধাবিত করবে। ব্যাপক বিস্তৃত কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করেও যেন তাদের সকলের মন হয় এক, চিন্তা হয় অভিন্ন। একই জনবসতি যে লোকগুলো বাস করে, তাদের আকীদা বিশ্বাস, দৃষ্টিভংগি, মন মানসিকতা ওচিন্তাচেতনা যদি এক না হয়, তবে তারা এক জাতীয় হতে পারেনা। শিক্ষা থেকেই সৃষ্টি হয় নেতৃত্বের। শিক্ষা যদি হয় লক্ষ্যহীন, তবে সে জাতির নেতৃত্বও লক্ষ্যহীনই হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে জাতির উপর নেমে আসে বিরামহীন বিপর্যয়।

আমাদের দেশের কথাই ধরা যাক। মুসলিম আমলের পর বৃটিশ শাসনামলে সম্রাজ্যবাদীরা এ দেশের নাগরিকদের লক্ষ্যহীন করে দেয়ার জন্যে চাপিয়ে দেয় লক্ষ্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা। অবশেষে সম্রাজ্যবাদীরা বিদায় নিলেও তাদের চক্রান্ত অনুযায়ী লক্ষ্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থায় গড়ে উঠে এ দেশীয় লক্ষ্যহীন ব্যক্তিত্ব। বার বার ভূখণ্ডের স্বাধীনতা লাভ করলেও আমরা আজ পর্যন্ত একটি একমুখী আদর্শবাদী শিক্ষা ব্যবস্থার সাক্ষাত লাভ করতে পারিনি। যার ফলে জাতীয় পর্যায়ে চরম অস্থিরতা জাতিকে অবিরাম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

লক্ষ্যহীন এ শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের আকীদা বিশ্বাস, মন মানসিকতা, চিন্তা ও দৃষ্টিভংগিকে বিভিন্নমুখী স্রোতে প্রবাহিত করে। এ শিক্ষা উদার নয়, সংকীর্ণ। এ শিক্ষায় ব্যক্তিগত চিন্তার ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ও সর্ব মানবিক চিন্তা করার অবকাশ খুবই কম। এ শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের আকীদা বিশ্বাস ওচিন্তা মানসিকতার ভিত নেড়ে দিয়ে তাদের আত্মপ্রত্যয়হীন করে দিচ্ছে। মহৎ লক্ষ্যে পৌঁছার ধ্যান ধারণা তাদের আত্মপ্রত্যয়হীন করে দিচ্ছে। মহৎ লক্ষ্যে পৌঁছার ধ্যান ধারণা তাদের মধ্যে বাকি রাখছেনা। তাদের অসৎ প্রবণতাকে দমন ও সৎ প্রবণতাকে বিজয়ী ও বিকশিত করে তোলার সুষ্ঠু ব্যবস্থা এতে নেই।

এ শিক্ষা ব্যবস্থা এতই মারাত্মক যে তা একই আকীদা বিশ্বাসের অধিকারী জনগোষ্ঠীর সন্তানদের মধ্যে আকীদা বিশ্বাসের বিভিন্নতা সৃষ্টি করে দেয়। আকীদা বিশ্বাসের এ বিভিন্নতার কারণে বিদ্যাপীঠগুলোতে তারা পরষ্পরের বিরুদ্ধে প্রায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আমাদের উচ্চ শিক্ষাংগনগুলোতে আদর্শিক দ্বন্দ্ব এতই প্রকট যে, এ জন্যে অহরহ সংঘর্ষ লেগে আছে। কারো কারো মতে শিক্ষার প্রস্তুতির চাইতে সংঘর্ষের প্রস্তুতিতেই শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ সময় কাটে। ফলে সেশনজট লেগেই আছে।

বলাবাহুল্য এ ছাত্ররাই আবার শিক্ষক হয়। তাই, আমাদের ছাত্র শিক্ষক সকলের জীবনই লক্ষ্যহীন, লক্ষ পথের অনুসারী। মোট কথা দেউলিয়া শিক্ষা ব্যবস্থার কবলে পড়ে আমাদের উচ্চ শিক্ষাংগনগুলোতে আজ এমন চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে যে, চিন্তাশীলরা জাতির ভবিষ্যত সম্পর্কে আতংকিত।

এ শিক্ষাই উৎপাদন করে আমাদের দেশের কর্ণধারদের। এ দুষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের জাতীয় তথা সর্বক্ষেত্রের নেতৃত্বের কাঠামোকে গিতপথে প্রবাহিত। জাতীয় নেতৃত্ব সৃষ্টির পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে আসছে শুধুমাত্র লক্ষ্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থার কবলে পড়ে জাতি আজ সর্বক্ষেত্রে বিক্ষুদ্ধ সংকটকাল অতিক্রম করছে। জাতিকে এখন বাঁচানো প্রয়োজন। তাকে এখন ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন।

তাই প্রয়োজন একটি পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থার, একটি আদর্শিক শিক্ষা ব্যবস্থার। যে শিক্ষা ব্যবস্থা হবে ইসলামী আদর্শের অনাবিল সংস্কৃতির বাহক। যে শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের অন্তর্গত আকীদা বিশ্বাসকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে। তাদের মন মানসিকতাকে এক করে তুলবে। তাদের চিন্তাচেতনার গতিকে প্রবাহিত করবে অভিন্ন স্রোতে। যে শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের সৎপ্রবণতাকে দমন করবে নিরুৎসাহিত। তাদের মনকে করবে উদার। যে শিক্ষা ব্যবস্থা হবে তাদের জীবনবোধ উৎসারিত সংস্কৃতির বাহন এবং তাদেরকে তাদের জীবন লক্ষ্যে পৌঁছাবার সিঁড়ি। জীবনের যে ক্ষেত্রেই তারা কর্মরত থাকুকনা কেন তাদের জীবন লক্ষ্যকে করবে এক। তাদের পরিণত করবে একই চিন্তার অধিকারী একটি শক্তিশালী জাতিতে।

বলাবাহুল্য, বৃটিশ সম্রাজ্যবাদের গোলামে পরিণত হবার পূর্বে এ দেশবাসীর হাতে এমনি একটি শিক্ষা ব্যবস্থাই ছিলো। সে শিক্ষা ব্যবস্থার সৃষ্ট নেতৃত্ব গোটা ভারত বর্ষকে সুনিপণভাবে শাসন করেছে। আর তা হচ্ছে ইসলাম ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা।

বস্তুতপক্ষে কেবলমাত্র ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাই নাগরিকদের মধ্যে উপরোক্ত বৈশিষ্টসমূহ সর্বোত্তমভাবে সৃষ্টি করতে সক্ষম।

ইসলামী শিক্ষার ব্যাপারে কেউ কেউ আপত্তি তুলতে পারেন। কিন্তু এ আপত্তিও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং লক্ষ্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থারই ফলশ্রুতি।

তাই আমাদের জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করে একটি আদর্শ মানব সমাজে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজন অবিলম্বে এখানে ইসলামের ভিত্তিতে একটি পরিকল্পিত আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।১







0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম