পারিবারিক নাম মোহাম্মদ আবদুল জলিল। বরিশাল জেলার উজিরপুর থানায় জন্ম। পিতা জনাব আলী চৌধুরীর মৃত্যুর ৩মাস পরে উজিরপুর সদরেই অবস্থিত মামার বাড়ীতে জন্ম। শিশুকাল এবং কৈশোর মামদের পরম স্নেহেই কাটে। উজিরপুরের W.B. UNION INSTITUTION থেকে কৃতিত্বের সংগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এ সময়ে ‘পথের কাঙাল’ এবং ‘রীতি’ নামক দু’খানা উপন্যাস রচনা করেন। পরে পান্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৬১ সনে ‘Y’ Cadet স্কীমের অধীনে পশ্চিম পাকিস্তানের ‘মারী হিলস’(রাওয়ালপিন্ডি জেলায়) ভর্তি হন। কৃতিত্বের সংগে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীন্ন হন। ১৯৬৩ সনে পাকিস্তানী মিলিটারী একাডেমী কাকুলে সামরিক বাহিনীর অফিসার কাম ট্রেনিং- এ যোগদান করেন। ১৯৬৫ সনের সেপ্টেম্বর মাসে কমিশন প্রাপ্ত হয়ে ১২ নং ক্যাভালরী রেজিমেন্ট (ট্যাঙক বাহিনী) যোগদান করে
’৬৫ সনের যুদ্ধে অংশগ্রহন। যুদ্ধে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। যুদ্ধ বিরতির পরে ৬৬সনে পাকিস্তানের মুলতান শহরে ১ম ট্যাংক ডিভিশনে চলে আসেন। পাকিস্তান একাডেমী থেকে গ্রাজুয়েশন এবং পরবর্তীতে মুলতানে বসে পুনরায় গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী এবং জেনারেল হিসট্রিতে মাষ্টার ডিগ্রী অর্জন করেন। মুলতানে থাকাকালীন ট্যাংক ব্রিগেড এবং ট্যাংক ডিভিশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সনের ১০ই ফেব্রুয়ারী ১ মুসের ছুটি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন অসুস্থ মাতাকে দেখতে। সেই অবস্থায়ই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং বৃহত্তম সেক্টর নবম সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের পরে ভারতীয় সে
নাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের সম্পদ লুন্ঠনের প্রতিবাদ করায় বন্দী হন। তিনিই বাংলাদেশের সর্ব প্রথম রাজবন্দী। ৭২-এর সেপ্টেম্বরে মুক্তিলাভ করে ৩১ শে অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেন। তিনি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। ৭২ থেকে ৭৪-এর মার্চ পর্যন্ত শেখ মুজিবের দু:শাসন এবং ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম করেন। ১৭ই মার্চ ৭৪ আওয়ামী লীগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম পরিচালনা করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাড়ী ঘেরাও করেন। ওখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বন্দী হন। পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। মুক্তি পান ৮ই নভেম্বর ৭৫ সনে। ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের নেপথ্য অন্যতম নায়ক তিনি। ২৩ শে নভেম্বর ৭৫-এ পুনরায় জিয়া সরকারের হাতে বন্দী হন। তাঁর বিরুদ্ধে য়ড়যন্ত্র মামলা দাঁড় করানো হয়। ’৬৫ সনের যুদ্ধে অংশগ্রহন। যুদ্ধে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। যুদ্ধ বিরতির পরে ৬৬সনে পাকিস্তানের মুলতান শহরে ১ম ট্যাংক ডিভিশনে চলে আসেন। পাকিস্তান একাডেমী থেকে গ্রাজুয়েশন এবং পরবর্তীতে মুলতানে বসে পুনরায় গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী এবং জেনারেল হিসট্রিতে মাষ্টার ডিগ্রী অর্জন করেন। মুলতানে থাকাকালীন ট্যাংক ব্রিগেড এবং ট্যাংক ডিভিশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সনের ১০ই ফেব্রুয়ারী ১ মুসের ছুটি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন অসুস্থ মাতাকে দেখতে। সেই অবস্থায়ই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং বৃহত্তম সেক্টর নবম সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের পরে ভারতীয় সে
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্নেল আবু তাহের সহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী উসকিয়ে ক্ষমতা দখলের য়ড়যন্ত্র অভিযোগে গোপনে স্পেশাল মিলিটারী ট্রাইবুনালে বিচার শুরু হয়। ৭৬-এর ১৮ই জুলাই বিচারের রায়ে কর্নেল তাহের এবং তার ফাঁসির হুকুম হয়। সাথে সাথেই মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের কারণে জলিলের ফাঁসি মওকুফ হয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। ১৯৮০ সনের ২৬শে মার্চ গণ-আন্দোলনের দাবীতে তিনি মুক্তি পান। ১৯৮১ সনের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিন দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে(জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং কৃষক-শ্রমিক সমাজবাদী দল) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর পূর্বে ১৯৭৩ সনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সহ আরো ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিজয়ী ঘোষণা করার পরেও তাকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে পরাজিত ঘোষণা করা হয়। আদর্শগত পার্থক্যের কারণে ১৯৮৪ সনের ৩রা নভেম্বর তিনি জাসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৮৪ সনের ২০শে অক্টোবর তারিখে ইসলামী আন্দোলন হিসেবে ‘জাতীয় মুক্তি আন্দোলন’ ঘোষণা করেন। ২১শে অক্টোবর জনাব হাফেজ্জী হুজুর সহ ১১টি ইসলামী সংগঠন সহকারে ‘সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে দেশ ব্যাপী ইসলামী আন্দোলন শুরু করেন। বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে শরীক হওয়ার ফলে ৮৫ সনের জানুয়ারী মাসে ১ মাস গৃহ বন্দী ছিলেন। পুনরায় ৮৭ সনের ৩০শে ডিসেম্বর হ’তে ৮৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা কারাগারে বিশেষ আইনে নিরাপত্তা বন্দী হন। মেজর জলিল ‘সীমাহীন সমর’ ‘মার্কসবাদ’ এবং সূর্যোদয়’ সহ কয়েকটি ইংরেজী গ্রন্থেরও প্রণেতা। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহন করেছেন। ১৯৮১ সনের আগস্ট ত্রিপলতে, ১৫ই আগস্ট তারিখে লেবাননে, ৮৫ সনের আগস্টে লন্ডনের মুসলিম ইন্স্টিটিউটে, ৮৬ সনের এপ্রিল মাসে ত্রিপলীতে; ৮৬ সনের আগস্টে পুনরায় মুসলিম ইন্স্টিটিউট লন্ডনে এবং ৮৭-র নবেম্বরে তেহরান আন্তর্জাতিক ইসলামিক কনফারেন্সে যোগদান করেন।
গত ১৯৮৯ সনের ৬ই নভেম্বর তিনি একটি ব্যক্তিগত সফরে পাকিস্তান গমন করেন এবং ১১ই নভেম্বর ইসলামাবাদ পৌঁছেন। সেখানে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি হন এবং ১৯শে নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে এগারটায় ইন্তেকাল করেণ । তিনি কার্ডিও পালমোনারীতে আক্রন্ত হয়েলিলেন। তার মৃত্যূর খবর ঢাকায় পৌঁছার সাথে সাথে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার লশ ২২শে নবেম্বর ঢাকা পৌঁছলে দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজে জানাজার পরে মীরপুর নব প্রতিষ্ঠিত ‘জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা’ গোরস্তানে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়। উল্লেখ্য মেজর (অবঃ) জলিলই সে সৌভাগ্যবণ ব্যক্তি যার লাশ দাফনের মাধ্যমেই মীরপুরের মুক্তিযোদ্ধা গোরস্তানে সর্ব প্রথম লাশ দাফন শুরু হয়েছে।
মরহুম মেজর (অবঃ) এম,এ, জলিল মাতা, স্ত্রী ও দুটি কন্যা সন্তান রেখে গিয়েছেন।
ভূমিকা
শতাব্দী থেকে শতাব্দী বাংলাদেশের এই ভূখন্ডে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ তাদের স্ব স্ব ধর্ম-কর্ম, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠানসহ মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থান করে এসেছে। এই সহাবস্থানমূলক বসবাসের মাধ্যমে এদেশের মানুষ গড়ে তুলেছে সমৃদ্ধিশালী ঐতিহ্য। তবে যুগে যুগে এই ভূখন্ডের জনগণ বিদেশী শাসক-শোষকদের হাতে শোষিত, নিপীড়িত এবং লুন্ঠিত হয়েছে। বৃটিশ শাসক-শোষকের সুদীর্ঘ দুশো বছরের শোষণ এখনো অনেকের স্মৃতিতে দুঃস্বপ্নের মতই জেগে আছে। একইভাবে হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং জালেম জমিদারী প্রথার মাধ্যমেও নিষ্পেষিত হয়েছে এই ভূখন্ডের শান্তিপ্রিয় জনগণ। সর্বশেষে, ভারত বিভক্তি এবং তারই ফলশ্রুতিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে পাকিস্তান অর্জন।
বৃটিশ রচিত ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো বহাল রেখে পাকিস্তানের উঠতি পুঁজিবাদী গোষ্ঠী বিশেষ করে সামরিক এবং বেসামরিক আমলা গোষ্ঠী এই অঞ্চলের জনগণের উপর বিমাতাসুলভ আচরণ এবং শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে। যার ফলে এই অঞ্চল থেকে যায় অনগ্রসর, অবহেলিত এবং নিগৃহীত। নিগৃহীত জনগণের অভব-অনটন, হতাশা ওবিক্ষোভ ক্রমশই পুঞ্জীভূত হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ধুমায়িত হতে হতে ১৯৭১ সনে একটি প্রবল আগ্নেয়গিরির মতনই উদ্গীরণ ঘটে। এই উদ্গীরণই পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা সংগ্রাম হচ্ছে বাঙালী জাতির ধারাবাহিক মুক্তি আন্দোলনেরই একটি স্বতঃষ্ফুর্ত এবং সক্রিয় রূপ। যুগ যুগ ধরে বাঙালী জাতি দেশী-বিদেশী শাসক-শোষকের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নর ভাবে লড়াই করে এসেছে-কখনো করেছে সংঘবদ্ধ ভাবে, কখনো বিচ্ছিন্ন ভাবে। কিন্তু এই জাতির বিকাশের ইতিহাসে কোনকালেই সংগ্রামী জনগণ একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে যায়নি। নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের মধ্যে লালিত মুক্তিপাগল বাঙালী জাতি সর্বযুগেই শোষকদের করব রচনা করে এসেছে এবং আন্দোলনের ধারা রেখেছে অব্যাহত।
১৯৭১ সনের সমস্ত গণ-অভ্যুত্থান ছিল একটি যুগান্তকারী গৌরবময় অধ্যায়। এ অধ্যায় রচনা করতে অসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার শিকার হতে হয়েছেজ জাতিকে। প্রাণ দিয়েছে লক্ষ লক্ষ দামাল সন্তান, তাজা রক্ত ঝরেছে অঢেল, ইজ্জত নষ্ট হয়েছে অগণিত মা-বোনের। স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতা-মুক্তি। দেশে শত্রুমুক্ত হলে এদেশে কায়েম হবে একটি শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা। খাদ্য-বস্ত্রে দেশ হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি-শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটবে। গড়ে উঠবে স্বাধীন জাতির পুঁজি। মানুষের মান-সম্মান এবং জানমালের থাকবে নিশ্চিত নিরাপত্তা। দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে আইনের শাসন। মর্যাদার দিক থেকে সকল জনগণই হবে মর্যাদার অধিকারী, কর্তব্য এবং দায়িতবোধসম্পন্ন। বাঙালী জাতি বিশ্বের মানচিত্রে ঠাঁয় লাভ করবে একটি সুখী, স্বাধীন, সমৃদ্ধ সার্বভৌম জাতি হিসেবে। এ সবই তো ছিল সকলের আন্তরিক কামনা-বাসনা। কিন্তু স্বাধীনতা হাতের মুঠোয় পেয়েও যেন আমরা ঠিক পেলাম না।
আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা লাভের প্রায় ১৭ বছর পরেও আমাদের কোন অভাব দূর তো হলোই না, বরং যত দিন যাচ্ছে ততই যেন জাতি হিসেবে আমরা মর্যাদাহীন হয়ে পড়ছি, নিস্তেজ হয়ে পড়ছি। বুক ভরা আশা-স্বপ্ন আজ রূপান্তরিত হয়েছে গ্লানি ও হতাশায়। সম্মান, জাতীয়তাবোধ, মর্যদাবোধ, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ এ সব কিছুই যেন বিধ্বস্ত। এক কথায়, বিবেক আজ বিভ্রান্ত। সুবিধেবাদ এবং অযোগ্যতার মহড়ায় গোটা জাতি আজ নীরব নিশ্চল অসহায় যিম্মী।
আমাদের স্বাধীনতা যেন দেশের সম্পদ বেপরোয়া লুন্ঠনেরই উন্মত্ততা আজ বিদেশীরা নয়, আমরাই যেন আমাদের শত্রু। যে জাতির ললাট একদিন স্বাধীনতার লাল সূর্যে ঝিলমিলিয়ে উঠেছিল, সেই উদ্দীপ্ত ললাটই আজ কালিমার আবরণে অন্তরীণ এবং অভিশপ্ত।
এই অবাঞ্চিত অবস্থার জন্য কে বা কারা দায়ী? আজ সকলের বিরুদ্ধেই সকলের একঘেয়ে অভিযোগ। বিগত ১৭ বছরে যারাই শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, তারাই দেশ ও জাতিকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করেছে। দেশ ও জাতিকে নিজেদের ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত জমিদারী হিসেবে ব্যবহার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এ ব্যাপারে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের তো জুড়িই নেই। তবে কেউ যেন কারো চেয়ে কম নয়। লুন্ঠন আর দুর্নীতির নির্লজ্জ প্রতিযোগিতার মহড়াই চলেছে কেবল ।
ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতাচ্যূত শাসক মহল সমূহের অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের নাটক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর কাছে আ অপরাধী এবং আসামীদের চেহারা অত্যন্ত পরিষ্কার। দেশের দশ কোটি মানুষ অপরাধী কিম্বা আসামী নয়। সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া একটি জাতি কখনই আসামী হতে পারে না। আমাদের জনগণ জ্ঞানী-গুনী এবং সাহসী। তবে দোষ-ত্রুটি যে আমাদের মধ্যে মোটেও নেই তাও নয়। জাতিগত ভাবে আমাদের দোষত্রুটির খতিয়ান নেয়ার সময়ও আজ দ্বারপ্রান্তে। বিগত ১৭ বছরে বেশ কয়েকটি সরকার দেশ পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছে। কেউ নিয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে আর কেউবা নিয়েছে বন্দুকের মাধ্যমে।
কারচুপিমূলক নির্বাচন আর ষড়যন্ত্রমূলক বন্দুকের নলের মাধ্যমে অধিষ্ঠিত ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কেউই এদেশের জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়নি। মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরার শপথ নিলেও স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকে অদ্যাবধি প্রত্যেকটি সরকারই কার্যত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্মূল করার লক্ষেই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্যদিয়ে দোর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে জেগে ওঠা বাঙালী জাতির জাগ্রত বিবেক এবং শক্তিকে ভীতির চোখে দেখেছে, প্রীতির চোখে নয়। বিদেশী প্রভুরাও দেখেছে একই চোখে। শোষণ-জুলুমের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম পরিচালনা করার অগ্নিশপথপুষ্ট চেতনার নামই মুক্তি-যুদ্ধের চেতনা। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণ করা কিছু জমি, বাড়ী, টাকা-পয়সা, তাদের কিছু পদোন্নতি, গড়ে তোলা লাল ইটের কিছু স্তম্ভ। ব্যাস! মু্ক্তিযোদ্ধাদের চেতনা রক্ষাকারীদের জীবন ধন্য!এ ভাবে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের তথাকথিত চেতনা লালনকারীদের নাটক। এই জাতির উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতকে ব্যক্তি, দলীয় এবং গোষ্ঠীর স্বার্থে অতি নির্দয়ভাবে ঠেলে দিয়েছে বিলাসের পথে, ধ্বংসের পথে। গণ-মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বাসস্থান এ সবের কোন বিহিত না করেই শাসক গোষ্ঠী সমূহ আত্মমগ্ন রয়েছে নিজস্ব ভোগ-বিলাসে।
অন্নহীনের হাহাকার, বস্ত্রহীনের সলজ্জ চীৎকার, রুগ্নের আর্তনাদ, গৃহহীনের ফরিয়াদ এবং নিরক্ষরদের হা-হুতাশ কোন সরকারের কর্ণগোচর হয়নি। আজো হচ্ছে না। অথচ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে শাসক এবং তাদের দোসরকুলের। তাদের মিথ্যাচার এবং প্রতারণা জাতিকে ভীতিজনকভাবে করেছে কলুষিত। বিচারের নামে প্রহসন ন্যায়-নীতির কাঠামোকে ধসে দিয়েছে। এ সব কিছুর ফলেই একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনের ‘প্রাণকেন্দ্র’মরহুম জনাব শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতার ঘোষক বলে পরিচিত জনাব জিয়াউর রহমান উভয় রাষ্ট্র প্রধানই অস্বাভাবিক পরিণতির শিকার হয়েছেন। তারা তাদেরই সৃষ্ট সমস্যার আবর্তে লুপ্ত হয়েছেন। তাদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার প্রশ্ন না টেনে এ সত্যটি আজ নিদ্বিধায় আমাদের ভবিষ্যত বংমধরকে জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতাই উভয় নেতার অস্বাভাবিক তিরোধানের অন্যতম কারণ। তবে তাদের হত্যার বিচারের দাবীও উঠেছে। কিন্তু কে করবে আজ কার বিচার? এদেশে আজো তো কায়েম হয়নি বিচারের শাসন। তাই কে বা কারা রাষ্ট্র প্রধানদ্বয়কে খুন করেছে এবং এ খুনের বিচার হলো কি হলো না এ প্রশ্নটি অমীমাংসিতই থেকে যাবে যতদিন না এদেশে আইনের শাসন কায়েম হয়। কিন্তু “খুনের বিচার চাই” ‘রক্তের প্রতিশোধ চাই’ এই দৃষ্টি ভংগী নিয়ে যে ধাঁচের রাজনীতি জন্ম দেয়া হচ্ছে, সে রাজনীতি পারবে কি সমস্যা জর্জরিত দেশের দশ কোটি মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধান দিতে?
শাসক-শোষক এবং রাজনীতের প্রতি জনগণ আজ চায়তাদের মৌলিক সমস্যার সমাধান। ব্যক্তিপূজা জাতিকে মুক্তি প্রদান করে কিনা সে প্রশ্নটি আজ অতীব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে সৃষ্ট ‘মুজীব’ শুধূ মুজীবই ছিলেন না, ছিলেন ৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের উদ্দীপ্ত প্রতীক। ব্যক্তি মুজীবের তিরোধান প্রতীক মুজীবকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে পারবে না। যার যতটুকু প্রাপ্য তা আগামী দিনের ইতিহাসই নির্ধারণ করবে।
যে দেশে হাজারো মায়ের প্রাণপ্রিয় যুবক সন্তানেরা কেবল বস্তাবন্দী হয়ে খালে-বিলে-নদীতে ভেসেছে, যে দেশে বিনা বিচারে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর সিপাহীদেরকে রাতের আঁধারে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে, ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক বীর নায়ক-অধিনায়ককে, সে দেশে সত্যিকার বিচার ব্যবস্থা কায়েম হোক এটাই তো সকলর ঐকান্তিক কামনা। আইনের শাসনের আবর্তমানে গত দেড় যুগ ধরে এ জাতির রক্ত ঝরেই চলছে, সমান গতিতে চলছে নারীধর্ষণ-নির্যাতন। বিচার নেই, আছে শুধু হাহাকার-কান্ন। এই ন্যায় বিচারের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আজ প্রয়োজন সহসী দুর্বার গণ-জাগরণ। শোষণমুলক আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মাধ্যমে আইনে শাসন বলতে যা বুঝায় তা কেবল শাসক গোষ্ঠীর জন্যই আইন লংঘন এবং আইন অপপ্রয়োগ করার বেশুমার ক্ষমমতা। আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন জনগণকে প্রশাসনমুখী করে তুলে, প্রশাসন এ অবস্থায় কখনো জনমুখী হয় না। প্রশাসন জনশক্তির বিকাশ সাধনে ব্রতী নয়, জনশক্তিকে অসহায়ভাবে প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল করে তোলাই হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনের লক্ষ্য । ক্ষমতায় বসে কেবল ফরমান জারী করলেই প্রশাসনের চরিত্র গণমুখী হয়ে ওঠে না । আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক কাঠামোকে আঁকড়ে ধরে জনগণকে মুক্তির আশ্বাস দান জনগণের সংগে বিশ্বাসঘতকতারই শামিল। এ সত্যটি অনুধাবন করার মত জ্ঞান প্রত্যেকটি সরকারেরই ছিল, ছিল না শুধু এই প্রচলিত প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তন করে গণমুখী ব্যবস্থা প্রবর্তন করার সদিচ্ছা। তাই সত্য আজ দিবালোকের মতই পরিষ্কার যে, বিগত ১৭ বছরে গঠিত সরকার সমূহ সুপরিকল্পিত ভাবেই একটি স্বাধীন জাতিকে আত্মবিধ্বংসী পথে ঠেলে দিয়েছে। এ জাতির স্বপ্নিল ভবিষ্যতকে করে তুলেছে অনিশ্চিত ও অন্ধকার। তবে বিগত সরকার সমূহের ষড়যন্ত্র, অযোগ্যতা এবং ব্যর্থতার ইতিহাস দশ কোটি মানুষের এবং এ জাতির অনাগত ভবিষ্যতের ইতিহাস হতে পারে না। বিপুল সম্ভাবনাময এ জাতির ললাট স্থায়ী কলংকের ছাপ লেপন করে দেয়ার অধিকার কারো নেই এবং এমন অধিকার কাউকে দেয়াও যায় না। স্বাধীনতা-উত্তর শাসকদের ব্যর্থতার পাশাপাশি এসে যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের দুঃখজনক বিভক্তি, সুবিধাবাদ, সংকীর্ণতা এবং ষড়যন্ত্রের লজ্জাজনক অধ্যায়।
বিভিন্ন মতাবাদের বুলিতে আবদ্ধ দেশের রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ সার্বক্ষণিক জনগণের মধ্যে বিচরণ করলেও কার্যত কোন সংগঠনই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থের ঊর্ধে নয় বিধায় দেশ ও জাতিকে যুগোপযোগী দিক-নির্দেশনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রচলিত রাজনীতি বুলি সর্বস্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যর্থতা থেকে কোন সংগঠনই মুক্ত নয়। পুনঃ পুনঃ সামরিক শাসন প্রবর্তনের ফলে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক কাঠামো নতুন জীবন লাভ করেছে। অপরদিকে, রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ যেমন পড়েছে বিপাকে, তেমনিই শিকার হয়েছে বিভিন্ন প্রলোভনের। ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে বহু সংখ্যক নেতা ও কর্মী হারিয়েছে রাজনৈতিক চরিত্র। জনসেবা এবং প্রচলিত আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তনের শপথে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েও কার্যত তারা প্রচলিত কাঠামোর আওতায় বন্দী হয়ে পড়েছে। ধারাবাহিক আত্মনিবেদিত রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সার্বিক মুক্তির প্রশ্নটি জনগণের কাছে আজ অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
রাজনীতির এই দুঃখজনক পরিণতি দেশ ও জাতির জন্য সুখের খবর তো নয়ই, বরং ভয়াবহ অমঙ্গলের হাতছানি। এই অবস্থার কারণেই আজ জাতি সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সাহস ও বিবেক হারিয়ে ফেলেছে প্রায়। জুলুম, নির্যাতন, মেশিনগান, ট্যাংক যে জাতির যাত্রাপথকে করতে পারেনি রু্দ্ধ, সেই জাতিটিই আজ অপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে অসহায়ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া জাতিটিকে আজ মুখ বুঁজে সহ্য করতে হচ্ছে কতো অপবাদ ‘তালাবিহীন ঝুড়ি’, ‘মিসকিন দেশ’, ‘বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ’, আরো কতো কি। মুক্তিযুদ্ধে ঝরানো তাজা রক্তের বিনিময়ে এটাই কি ছিল এ জাতির প্রাপ্য? ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা যুদ্ধে কতো মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারাল, শহীদ হলো, পঙ্গু হলো, হলো নিখোঁজ তার যেমন নেই সঠিক কোন পরিসংখ্যান, তেমনি স্বাধীনতা-উত্তর বিগত ১৭ বছরে কতো শত সহস্র যোদ্ধা যে মিথ্যা খুন-চুরি-ডাকাতির অভিযোগে কারাগারে ধুঁকে ধুঁকু মরেছে, মরেছে অনাহারে, শিকার হয়েছে গুপ্ত ও প্রকাশ্য হত্যার, ঝুলেছে ফাঁসিকাষ্ঠে তারও নেই কোন হিসেব। যেন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এদেশের মানুষকে বিশেষ করে দামাল যুব শক্তিকে বেহিসাব নির্মূল করার ‘ব্লুপ্রিন্ট’ নিয়ে।
স্বাধীনতার পর থেকেই প্রত্যেকটি রাজনৈতিক সংগঠন মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের দাবীতে সোচ্ছার এবং প্রত্যেকটি সরকারের মুখেই তাদের পূণর্বাসনের প্রতিশ্রুতি ধ্বনিত হলেও মূলত মুক্তিযুদ্ধের নামে স্বাধীন বাংলাদেশে বিশেষ কিছু ব্যক্তি, শ্রেণী ও গোষ্ঠী সুপরিকল্পিত ভবে সর্বরকম সুযোগ-সুবিধা ভোগের মাধ্যমে নব্য ধণিক শ্রেণী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার প্রতিযোগিতায় বেপরোয়াভবে মত্ত। এদেরকে নাম ধরে চিহ্নিত না করলেও সমাজ দেহের প্রতি স্তরেই এদের কুৎসিত চেহারা আজ সুস্পষ্ট। জাতির বীর মুক্তিযোদ্ধারা আজ উপহাস, কৌতুক ও করুণার পাত্র। ভাবখানা এমন যেন মুক্তিযোদ্ধারা ছিল এক শ্রেণীর কামলা যাদের কাজ ছিল হানাদার বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়ে দেশীয় কিছু অসৎ সামরিক-বেসামরিক আমলা এবং ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিক এক শ্রেণীর রাজনীতিকদের হস্তে দেশের শাসনভার তুলে দেয়া। সবরকম মানবিক, সামাজিক এবং নৈতিক মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়েও তারাই হবে দেশের প্রভু এবং মুক্তিযোদ্ধারা থাকবে তাদেরই বাধ্যগত কামলা। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আজ একটা কথা পরিষ্কারভাবে জেনে রাখতে হবে যে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেয়া জাতির মুক্তিযোদ্ধারা করো দ্বারা পুনর্বাসিত হয় না, বরং মুক্তিযোদ্ধারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে তারাই সমাজের পুরাতন কাঠামো ভেঙে দিয়ে নতুন রাষ্ট্রীয় কাঠামো বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে সমাজের শোষিত- নিগৃহীত শ্রেণীসমূহকে পুনর্বাসন করে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রশ্নে ব্যাপারটি ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো। মুক্তিযোদ্ধাদের মুনর্বাসনের চীৎকার সদিচ্ছার চীৎকার নয়, এটাই হচ্ছে প্রকৃত পাওনাদারকে তার প্রাপ্য থেকে প্রতারণা করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। সমাজে পুনর্বাসন প্রয়োজন কাদের? সমাজের পঙ্গু, অনাথ, আতুর, বেকার, ভিক্ষুক, পতিতা ইত্যাদি অবহেলিত এবং অক্ষম শ্রেণীর প্রয়োজন পুনর্বাসন।
সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির জন্য বিজয় আনয়নকারী বীর যোদ্ধারা কোনদিনই পুনর্বাসনের পর্যায়ে পড়ে না । মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের সমতুল্য কোন বিনিময় নেই। তাদের গৌরবময় অম্লান ত্যাগে কেবল তারই পূনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেবে না, দেশ-জাতিও হবে পূণর্গঠিত। যে জাতির যোদ্ধারই পুনর্বাসনের স্তরে নেমে যায়, সে জাতির পুনর্গঠন তো দুরে থাক, তাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বই হয়ে পড়ে বিপন্ন। জাতির বীর যোদ্ধারাই যদি হয়ে পড়ে করুণার পাত্র, করে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন, সে জাতির সাধারণ জনগণের ভোগান্তি আর দুর্দশার যে কোন সীমাই থাকে না তা আজ আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করলেই স্পষ্ট অনুধাবন করা যায়। অথচ এই ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধই বাঙালী সত্তাকে বিশ্ববাসীর দরবারে নতুন আঙ্গিকে সুপরিচিত করেছে।
‘ভেতো’ এবং ‘ভীতু’ হিসেবে পরিচিত বাঙালী অতীতের সকল অপবাদ ঝেড়ে-মুছে ফেলে একটি সক্ষম যোদ্ধা জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। রক্তক্ষয়ী বীলত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ ও জাতি এই গৌরবের আসন অধিকার করেছে। এ গৌরবের অংশীদার সমগ্র জাতি। এ গৌরব কোন বিশেষ ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিম্বা কোন দল বিশেষের নয়। এমন একটি ঐতিহ্যময় গৌরবকে যখন কোন বিশেষ ব্যক্তি, গোষ্ঠ কিম্বা কোন রাজনৈতিক দল, কিম্বা মুক্তিযুদ্ধে সহকারী কোন দেশ বা জাতি নিজের একক কৃতিত্বের দাবীদার হয়, তখনই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ কেবল বিতর্কিত হয়ে ওঠে না, জনমনেও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জন্ম নেয় নানরূপ সংশয় এবং সন্দেহ। মূলত বাস্তবে ঘটেছেও তাই। মুক্তিযুদ্ধ উত্তরকালে তাদানীন্তন শাসক গোষ্ঠীর প্রতারণা, নিপীড়ন এবং শোষণমুখী শাসন, মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য কারী বলে কথিত প্রতিবেশী ভারতীয় শাসক গোষ্ঠীর বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ‘বিগ ব্রাদার’ সুলভ আধিপত্যবাদী আচরণ মুক্তি যুদ্ধের গৌরবকে কেবল ম্লানই করেনি, করেছে বিকৃত এবং কলংকিত। মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টরের সাবেক কমান্ডার হিসেবে বিগত ১৭ বছরে আমাকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার অকাল মৃত্যু, গুম ও খুন। নির্মূল ও বিরান হয়ে গেছে তাদের সাজানো পাতানো সংসার। স্বাধীনতা অর্জনের দাবীদার আওয়ামী লীগ এবং স্বাধীনতার ঘোষক বলে কথিত জিয়া সরকারের আমলেই সার্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতেই মুক্তিযোদ্ধারা হয়েছে নাজেহাল। মু্ক্তিযুদ্ধের পরে মুক্তিযোদ্ধারাই হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের চরম শত্রু। মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি একই হয়ে থাকে, তাহলে এই দুঃখ ও লজ্জাজনক বিভক্তি, শত্রুতা এবং নিধন প্রক্রিয়া কেন? তাহলে এই মুক্তিযুদ্ধের পেছনে আসল রহস্যটা কী? প্রাণপ্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ভাই-বোনেরা ও শ্রদ্ধেয় দেশবাসী আসুন না একটু তলিয়ে দেখি।
কৃতজ্ঞতা: বইটি লিখে দিয়েছেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম (চট্টগ্রাম)
অন্যান্য অধ্যায়-সমূহ
- দ্বিতীয় অধ্যায় : মুক্তিযুদ্ধপূর্ব তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান
- তৃতীয় অধ্যায় : সশস্ত্র গণ বিষ্ফোরণ, শেখ মুজীব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
- চতুর্থ অধ্যায় : মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রকৃত অবস্থা
- পঞ্চম অধ্যায় : ভারতে মুক্তিযু্দ্ধের ট্রেনিং শিবির
- ষষ্ঠ অধ্যায় : বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর পরিকল্পিত লুন্ঠন
- সপ্তম অধ্যায় : স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি ও ইসলাম
- অষ্টম অধ্যায় : আওয়ামী লীগের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির উৎস
কৃতজ্ঞতা: বইটি লিখে দিয়েছেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম (চট্টগ্রাম)
9 comments:
Maj Jalil was a true nationalist and decorated freedon fighter. his book is revealing with facts. Similarly I suggest to add two domains in this sight of another valient nationalist decorated freedom fighter to seek truth from facts. www.majordalimbubangla.com 9Bangla) & www.majordalimbu.com (English)
present younger generation who are beeing brain washed by Gobollian one sided Propaganda by the vested interested quarters and different political parties and their foreign masters must be exposed. Bangladesh did not get its independence as charity but it was hard earned at the sweat and blood of Bangladeshi people not by any one particular party. However, since from the day one till this date the usurpers of state power had betrayed the nation and seved their personal interest and their masters as lackeys. Bangladesh was not born to be a vassal state and it is the responsibility of the younger generation to safeguard its independence and sovereignity. We have all the potentiality to be a self respecting nation only thing we lack patriotic tested leadership not the bunch of liers. There should be scope in this wonderful site for posting articles
There should be scope in this wonderful site for posting articles
http://www.priyoboi.com/2007/05/blog-post_5978.html Find the user-forum here. anyone can post any type of article.
There should be scope in this wonderful site for posting articles
http://www.priyoboi.com/2007/05/blog-post_5978.html Find the user-forum here. anyone can post any type of article.
very good. we want lot of try in same.
Good job............
Good Article for Muslim world
তাফসীর হাদিস সহ পৃথিবীর সেরা সেরা ইসলামী চিন্তাবিদদের লেখা প্রায় দুইশত ইসলামী সাহিত্য ডাউনলোড ফ্রি
http://www.islambd.org
janar ace onek kichu
Please visit my site... www.bdinfolive.com